ভ্রমন পিপাসু :- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উচ্চতায় পূর্বঘাট পর্বত দিয়ে ঘেরা দারিংবাড়ি ওড়িশার একটি সুন্দর হিল স্টেশন। মনোরম আবহাওয়া, পাইন গাছ, কফি বাগান, সুন্দর সুন্দর সব ঝর্না, জঙ্গল, নদী এবং চমৎকার সব উপত্যকায় পরিপূর্ণ এই দারিংবাড়ি, যা "ওড়িশার কাশ্মীর" হিসাবে পরিচিত। যদিও এ তুলনাটি আমার যথাযত বলে মনে হয়না, কোনো এক বছরে এখানে শীতকালে নাকি বরফ পড়েছিল তাই এই তুলনা করা হয়।
শীতকালে এখনকার তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায় দারিংবাড়ি জায়গাটি কেবল সবুজ ঘন বনই নেই সেই বনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় এবং এই হিল স্টেশন সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল দিক হল যে আপনি সারা বছর জুড়েই এখানে বেড়াতে আসতে পারবেন।
ওড়িশা তার সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত এবং গোপালপুরও এর ব্যতিক্রম নয়। গোপালপুর দক্ষিণ উড়িষ্যার গঞ্জাম জেলার অন্তর্গত একটি সৈকত শহর, গোপালপুর ভারতের অন্যতম পরিচ্ছন্ন সৈকত হওয়ার জন্যও বিখ্যাত। উপকূল থেকে পূর্বে সূর্যোদয়ের সুন্দর দৃশ্য এবং বঙ্গোপসাগরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপভোগ করতে হলে আপনাকে এখানে অবশ্যই আসতে হবে।
#দারিংবাড়ি_আসার_আদর্শ_সময় :- উড়িষ্যার কাশ্মীর নামে পরিচিত এই হিল স্টেশনে আপনি চাইলে সারাবছরই আসতে পারবেন, সেটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি, তবে এখানে আসার প্ল্যান থাকলে বা করলে গরমকাল টা বাদ দিয়ে আসলে আমার মতে উচিত হবে, এই সময় বাদে আপনি সারাবছরই এখানে অনায়াসে চলে আসতে পারেন।
অক্টোবর থেকে মার্চ এই দারিংবাড়ির পিক সিজন, এই সময় প্রচুর পরিমাণে ট্যুরিস্ট এখানে এসে থাকে। শীতকালে এখানে চারিদিকে মেঘের ভেলা, প্রচুর ঠান্ডা মিলিয়ে একটা মায়াবী পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন, আর বর্ষাকালে আসলে আলাদা অনুভূতি দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন, ঝর্না ও নদীগুলোও এই সময়ে জলে পরিপূর্ণ থাকে, তার পাশাপাশি চারিদিকে সবুজের সমারোহ, বেশ ভালোই লাগবে, তাই গরমকে একটু সহ্য করতে পারলে আমি বলবো বর্ষাকালে আসুন। আর আপনারা যদি দারিংবাড়ির সাথে গোপালপুর-রম্ভা ঘোরার প্ল্যান থাকে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসা উচিৎ, আর গোলাপপুরের বিচে কচ্ছপ প্রজনন দেখতে চাইলে আপনাকে মার্চ এপ্রিল মাসে আসতে হবে। এবার আপনাকেই স্থির করতে হবে আপনি কোনো সময়ে আসতে চান।
#দারিংবাড়িতে_কি_বরফ_পড়ে?
শীতকালে দারিংবাড়ির তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড স্পর্শ করে যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, দারিংবাড়িতে একবার তুষারপাত হয়েছিল। এর আগেও হয়তো এক দুবার হয়েছিল, যাইহোক, নিয়মিতভাবে এখানে কিন্তু ভারী তুষারপাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়না, তাই এটা অবশ্যই আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।
#দারিংবাড়ির_প্রধান_প্রধান_দর্শনীয়_স্থান :-
১ . #হিল_ভিউ_পয়েন্ট:- দারিংবাড়ির একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান এটি, পর্যটকরা দারিংবাড়ি আসলে এখানে থেকে আশেপাশের খুবই দারুণ 360-ডিগ্রি ভিউ উপভোগ করতে পারেন। এই পাহাড়ের উপরে একটি পার্ক ও আছে যেখানে দুটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে।
২. #মিদুবান্দা_জলপ্রপাত :- দারিংবাড়ির একটি সুন্দর জলপ্রপাত এই মিডুবান্দা জলপ্রপাত। দারিংবাড়ি থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান শুধু আপনাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে এই জলপ্রপাতের গোড়ায় পৌঁছতে হলে আপনাকে প্রায় ১৮১টি সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে।
৩. #কফি_বাগান :- এই এলাকার জলবায়ু ও মাটি কফি চাষের জন্য একদমই উপযুক্ত তাই দারিংবাড়িতে আসলে বেশ কয়েকটা কফির বাগান আপনারা দেখতে পাবেন, এবং সেই বাগান গুলো থেকে কফি চাষ থেকে তৈরির পুরো পদ্ধতি দেখতে পাবেন।
৪. #লাভার্স পয়েন্ট:- এটি মূলত দারিংবাদির একটি পিকনিক স্পট। এই সুন্দর জায়গাটি দারিংবাদি থেকে ১৩ কিমি দূরে এবং খুবই মনোরম একটি জায়গা। পাথুরে ঢাল হয়ে ছোটো নদীর ধারা বয়ে চলছে, জলের কলকল শব্দ এবং চার পাশের ভিউ যা দেখে আপনি প্রেমে পড়ে যেতে বাধ্য, সেই জন্যই নাম হয়েছে লাভার্স পয়েন্ট।
৫. #ইমু_প্রজনন_কেন্দ্র :- দারিংবাড়ি কাছাকাছি আরো একটি ইউনিক ঘোরার জায়গা হলো এই ইমু প্রজনন কেন্দ্র, বা ইমু পার্ক, এখানে আসলে আপনারা হারিয়ে যাওয়া দূর্লভ ইমু পাখী দেখতে পাবেন।
৬.#খাসাদা_জলপ্রপাত :- খাসাদা জলপ্রপাতটি রেশম শহর বেরহামপুর থেকে প্রায় 95 কিলোমিটার দূরে এবং রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে 169 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
৭. #হারাভাঙ্গি_বাঁধ :- হারিভাঙ্গি বাঁধটি দারিংবাড়ি থেকে 84 কিমি দূরে ব্রহ্মপুর যাওয়ার পথে উড়িষ্যার গজপতি জেলায় অবস্থিত, বাঁধটি তার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
৮. #তারা_তারিণী_মন্দির :- এই তারা তারিণী মন্দির ব্রহ্মপুর শহর থেকে ২৮ কিমি দূরে কুমারী পাহাড়ে চূড়ায় গঞ্জাম জেলায় অবস্থিত। এটি আমাদের দেশের চারটি প্রধান আদি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। তারা এবং তারিণী দুই যমজ দেবী যাদের এখানে পূজা করা হয়। এই মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।
৯. #টাম্পারা_লেক :- উড়িষ্যার বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদগুলির মধ্যে একটি এই টাম্পারা লেক। এটি একটি বিশাল হ্রদ। লেকটি ব্রহ্মপুর থেকে 30 কিমি দূরে ছত্রপুরে এই মনোরম লেকটি অবস্থিত। ব্রহ্মপুত্র বা গোপালপুর থেকে রম্ভা যাওয়ার পথে পড়বে এই লেকটি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে আপনি আপনার বন্ধু, পরিবার বা প্রিয়জনদের সাথে কিছু ভালো সময় কাটাতে চাইলে অবশ্যই এখানে আসতে পারেন।
১০. #রম্ভা :- দক্ষিণ চিল্কার একটি ছোট্ট শহর হল রম্ভা, উড়িষ্যার গঞ্জাম জেলায় অবস্থিত। আপনি ব্রহ্মপুর থেকে খুবই সহজে এখানে চলে আসতে পারবেন। এখানে বোটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি করেন পারবেন, থাকার জন্য সুন্দর সুন্দর কটেজ ও পেয়ে যাবেন।
#কত_দিনের_ট্যুর_প্ল্যান_করবেন :- আপনারা চাইলে নিজেদের পছন্দ মত, ২, ৩, ৪ দিনের প্ল্যান করতে পারেন এই দারিংবাড়ি ও গোপালপুর ট্যুরের জন্য।
#২_রাত_৩_দিনের_প্ল্যান :- সবচেয়ে কম এই দু রাত তিন দিনের প্ল্যানে যে সব জায়গা কভার করতে পারবেন : - সুরদা বাঁধ, নেচার পার্ক, হিল ভিউ পার্ক, সানসেট পয়েন্ট, কফি প্ল্যান্টেশন, মান্দাসরু গর্জ, পাইন ফরেস্ট, ডলুরি নদী, ইমু ফার্ম, মিডুবান্দা জলপ্রপাত এবং আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান এবং গন্তব্য যা পথে পড়বে।
৩ রাত ৪ দিনের প্ল্যান যদি করতে চান তাহলে আগের জায়গা গুলোর সাথে জিরাং মনাস্ট্রি, খাসাদা জলপ্রপাত, তপ্তপানি হট স্প্রিংস, গোপালপুর সৈকত,
এছাড়াও এই প্ল্যানটা একটু চেঞ্জ করে একটি অন্য দিকে গোপালপুর হয়ে রম্ভা ও যেতে পারেন একদিনের জন্য।
#ট্যুর_প্ল্যান :- এবার আসি দিন অনুযায়ী ৩ রাত ৪ দিনের দারিংবাড়ি ও গোপালপুর ট্যুর প্ল্যান নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক, আপনারা চাইলে একদিন কমিয়েও দিতে পারেন...
#প্রথম_দিন :- ধরে নিলাম আপনারা ব্রহ্মপুর স্টেশন পৌঁছে গিয়েছেন, আপনারা ট্রেনগুলো এমন ভাবেই বুক করবেন যাতে ভোরে আমাদের ব্রহ্মপুর স্টেশনে পৌঁছে দেবে, নাহলে আগেরদিন সন্ধ্যা বা বিকেলের মধ্যে পৌঁছে গিয়ে একটা রাত ব্রহ্মপুরে হোটেলে থাকতে পারেন, গাড়ির ড্রাইভার সাথে কথা বলে রাখলেই ড্রাইভার স্টেশনে পৌঁছে যাবে। সবার আগে আপনাদের ব্রেক ফাস্টটা অবশ্যই করে নিতে হবে, ড্রাইভারকে বললেই কোনো একটা ভালো দোকানে দাঁড় করিয়ে দেবে।
স্টেশন থেকে দারিংবাড়ির দূরত্ব - ১২০ কি.মি যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা, কিন্তু যাওয়ার পথে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান দেখতে দেখতে আপনারা দারিংবাড়ি পৌঁছোবেন। যাওয়ার পথে প্রথমেই দেখে নেবেন সুরাডার খুন্তেশ্বরী মাতার মন্দির, খুবই প্রাচীন এবং জাগ্রত একটি মন্দির, পাশেই আছে সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির, এই মন্দিরটিও দেখার মতো এখানে একসাথে অনেকগুলো শিবলিঙ্গ দেখতে পাবেন, এর পাশাপাশি পাশেই অবস্থিত সুরাডা ড্যামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, এই জন্য বিজু পট্টনায়েক নামে একটি Watch Tower তৈরি করা হয়েছে, এই watch tower থেকে পুরো এরিয়ার 360 ডিগ্রি ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। এরপর এখান থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে আরো একটা স্পট চাইলে আপনারা দেখে নিতে পারেন সেটা হল - হুলু হুলা গাঁদা, এটা আসলে একটি একটি ছোট্ট খরস্রোতা নদীর ধারা যা নিচে নেমে আসছে দেখতেও বেশ সুন্দর, পাশেই আছে একটি পার্কও, এটা দেখে নিয়ে সোজা একেবারে চলে আসুন দারিংবাড়ির হোটেল, হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে, হোটেল থেকেই লাঞ্চ করে নিয়ে কিছুটা রেস্ট নিন, এরপর বিকেলে গাড়ি করে আবার বেরিয়ে পড়ুন দারিংবাড়ির লোকালের দুটো স্পট দেখতে একটি হল - প্রজাপতি উদ্যান, দ্বিতীয় সানসেট পয়েন্ট। সানসেট পয়েন্ট থেকে সানসেটটা উপভোগ করে আবার হোটেলে ফিরে চলে আসুন, রাতে হোটেলে বললে উনারা বারবিকিউ চিকেনের ব্যবস্থা করে দেবে,এরপর রাতের ডিনার, এভাবেই দারিংবাড়ি ট্যুরের প্রথম দিনের ইতি ঘটবে।
#দ্বিতীয়_দিন :- দারিংবাড়ি ভ্রমণের দ্বিতীয় দিনে আপনারা দারিংবাড়ির লোকাল আসেপাশের স্পট গুলো দেখে নেবেন, দারিংবাড়ির আসে পাশে কিন্তু এরিকম প্রচুর দেখার মত স্পট আছে সারাদিনে যতোগুলো পাবেন করে নেবেন সেটা ড্রাইভারে সাথে আগেই কথা বলে রাখবেন..
প্রথমেই চলে আসুন মান্দাসরু ভ্যালিতে এই মান্দাসরু তে কিন্তু দেখার মত অনেক গুলো জায়গা আছে - প্রথমেই দেখে নেবেন মান্দাসরু জলপ্রপাত ও ভিউ পয়েন্ট, দুটো জায়গাতেই আপনাদের ট্রেক করে নামতে হবে, রাস্তা কিন্তু খুব একটা বেশি না, এরপরেই চলে আসুন মান্দাসরু ট্যুরিস্ট প্লেসে এখান থেকে 20 টাকার টিকিট কেটে ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখে নিন ম্যাগনেটিক হিল, ভিতরে কিন্তু খাওয়ার ও ফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা আছে আপনারা চাইলে দুপুরের লাঞ্চ এখান থেকে করে নিতে পারেন,
মান্দাসরু দেখে সোজা এরপরে চলে আসুন লাভার্স পয়েন্টে এটা দেখে নিয়ে চলে আসুন দারিংবাড়িতে এরপর একে একে দেখে নিন পাইন ফরেস্ট, এমু পার্ক, কফি গার্ডেন এবং গোলমরিচের বাগান এবং নেচার পার্ক। এই জায়গা গুলো দারিংবাড়ি শহরের খুবই আশপাশেই অবস্থিত। এই স্পট গুলো দেখে নিয়ে ফিরে চলে আসুন হোটেল এবং আপনাদের দ্বিতীয় দিনের পরিসমাপ্তি।
#তৃতীয়_দিন :- তৃতীয় দিন আপনাদের প্ল্যানে থাকবে হোটেল থেকে চেকআউট করে দারিংবাড়িকে বিদায় জানিয়ে ব্রহ্মপুর অথবা গোপালপুর চলে আসা, আসার পথে দেখে নেবেন বেশ আকর্ষনীয় ট্যুরিস্ট স্পট। এই তৃতীয় দিনটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং হবে আপনাদের জন্য।
তাই সকাল সকাল হোটেল ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন, প্রথমেই দেখে নিন মিদুবান্দা ওয়াটারফলস্, দারিংবাড়ির সুন্দর ওয়াটারফলস্ গুলোর মধ্যে একটি, ৬০ টাকার পার্কিং দিয়ে আপনাদের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে, তবে এত সহজে আপনি এই ফলসের দেখা পাবেন না, তার জন্য আপনাদের প্রায় ১৭০ সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে হবে, এরপর পথে যেতে যেতে দেখে নিন হরভাঙ্গি ড্যাম ও লেক, চারিদিকে ছোটো বড় টিলা ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই লেকটির রূপ আপনাদের মুগ্ধ করে দেবে, বর্ষাকালে তো এর সৌন্দর্য আরো ফুটে ওঠে। এই ড্যামটি দেখে চলে আসুন এই এলাকার সবচেয়ে সুন্দর ওয়াটারফলস্ খাসাদা ফলস্ দেখতে, আপনি যদি দারিংবাড়ির এসে থাকেন আর খাসাদা ফলসে না যান তাহলে অনেক কিছুই মিস করে যাবেন। এই দারিংবাড়ি থেকে খাসাদা ফলসের দূরত্ব কিন্তু অনেকটাই প্রায় ১১৫ কি.মি। এই সুন্দর ঝর্নাটিতে আপনি চাইলে স্নান ও করতে পারেন, তবে এর আসল রূপ দেখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে আসতে বর্ষাতে। এরপর চলে আসুন উড়িষ্যার মিনি তিব্বত হিসেবে পরিচিত জিরাং, তিব্বত থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষের বসবাস এই জিরাং এ তাদের উদ্যোগে এখানে বেশ কিছু মঠও গড়ে উঠেছে এখানে তাই একে মিনি তিব্বত বলা হয়। দলাই লামাও এখানে এসেছিলেন মনাস্ট্রির উদ্বোধনে, এখানে দেখার মত বেশ কয়েকটি জায়গা আছে, যতটা পারবেন তাড়াতাড়ি জায়গা গুলো দেখে নিতে, তাহলে সন্ধ্যার আগে সব স্পট গুলো ভালো ভাবে দেখে নিয়ে গোপালপুর চলে আসতে পারবেন।
এই জিরাং জায়গাটি দেখে চলা শুরু করুন ব্রহ্মপুরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে দেখে নিন আজকের লাস্ট স্পট তপ্তপানি। এখানে দেখার মত আছে তপ্তপানি মন্দির, হট স্প্রিং এবং ডিয়ার পার্ক। ডিয়ার পার্কে চাইলে না ও যেতে পারেন, এরপর একেবারে একেবারে সোজা চলে আসুন ব্রহ্মপুর হয়ে গোপালপুরে আর হাতে যদি সময় থাকে তাহলে ব্রহ্মপুরের তারা তারিনি মন্দিরটি দেখে নিতে পারেন ড্রাইভারকে রিকোয়েস্ট করে নাহলে প্রথম দিনই দারিংবাড়ি যাওয়ার পথে দেখে নিতে পারেন, গোপালপুরে কিন্তু যাওয়ার আগে অবশ্যই হোটেল বুক করে রাখবেন, কারণ পৌঁছতে পৌঁছতে অনেকটা রাত হয়ে যেতে পারে তাই হোটেল পেতে অসুবিধা হতে পারে, আজকের রাতটা আপনাদের গোপালপুরের হোটেলেই স্টে করতে হবে।
#চতুর্থ_দিন :- চতুর্থ দিন অর্থাৎ এই ট্যুরের শেষ দিন শুরু হচ্ছে গোপালপুর থেকে, আজকের দিনে আপনারা গোপালপুর সি বিচ ছাড়াও আসে পাশের ২, ৩ টা জায়গা দেখে নেবেন, কোন কোন জায়গা দেখবেন আসুন দেখে নি..
ভোরে ঘুম থেকে উঠেই হোটেল থেকে সোজা চলে আসুন বিচে কারণ বিচ এই সময়ে একদম ফাঁকাই থাকে তাই অনেকটা সময়ে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে কাটিয়ে আবার হোটেল এসে স্নান ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ুন সাইটসিং এর উদ্দেশ্যে। গোপালপুর থেকে একটা ছোটো ৪ সিটার গাড়ি অথবা অটো রিজার্ভ করে নেবেন সারাদিনের জন্য যে তিনটি জায়গা সাইটসিং জন্য রাখবেন এক - টেম্পারা লেক, রম্ভা, এবং তারাতারিনী মন্দির। প্রথমেই চলে আসুন টাম্পারা লেকে গোপালপুর থেকে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৪৫ মিনিট এখানে এসে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করুন, চাইলে এখানে বোটিং ও করতে পারেন, পার হেড - ১০০ টাকা কিন্তু আপনাদের যদি রম্ভাতে গিয়ে বোটিং করার প্ল্যান থাকে তাহলে এখানে করার কোনো দরকার নেই, পাশে একটা পার্কও আছে। টাম্পারা লেক থেকে এবার চলে আসুন রম্ভাতে, দক্ষিণ চিল্কা লেক এক্সফ্লোর করতে চাইলে আপনাকে রম্ভাতেই আসতে হবে। টাম্পারা লেক থেকে রম্ভা যেতে হলে আপনাদের গঞ্জাম হয়ে যেতে হবে, যাওয়ার পথে গঞ্জামের বিশ্বনাথ মন্দিরটি দেখে নিতে পারেন, খুবই ভালো লাগবে জায়গাটি, রম্ভা পৌঁছতে প্রায় একই সময় ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে, এখানে এসে ভিউ উপভোগ করা ছাড়া যেটা একদম মাস্ট করা উচিৎ সেটা হল এখানে চিল্কা লেকে বোটিং যদিও এখানে ডলফিন দেখার কোনো সুযোগ না থাকলেও চারপাশের পরিবেশ বেশ ভালোই লাগবে, লেকের মাঝে আছে ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড, কারণ ব্রিটিশ এখানে এসে ব্রেকফাস্ট করতো লেকের সাথে লাগানো আছে ঘন্টাশিলা মন্দির, ১ ঘন্টার এই লেকে বোটিং খুব একটা খারাপ লাগবে না।
২০০ টাকার কেটে পায়ে হেঁটে আপনাদের বোটিং স্টার্টিং পয়েন্ট অর্থাৎ জেটি পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। চিল্কা বোটিং করে এবার চলে আসুন মা তারাতারিনী মন্দিরে দর্শনে। তারাতারিনী মন্দিরটি কিন্তু একদম পাহাড়ের উপরে অবস্থিত, তাই এখানে যেতে হলে আপনাদের রোপওয়ে করেই যেতে হবে, ৬৫ টাকার টিকিট কেটে রোপওয়ে করে পাহাড়ে ওপরের উঠতে হবে, পুরো পাহাড় জুড়েই রয়েছে মন্দির এরিয়াটি। ওপর থেকে চারদিকের সুন্দর একটা ভিউ দেখতে পাবেন। এর সাথেই আপনাদের গোপালপুরের সাইটসিং এর ইতি ঘটলো এবার গাড়িতে সোজা চলে আসুন গোপালপুর বিচে এখানে এসে সানসেটটা দারুণ ভাবে উপভোগ করুন এরপর আপনাদের যদি রাতে ট্রেন থাকে অটো করে ব্রহ্মপুর স্টেশনে চলে আসুন আর ট্রেন যদি পরের দিন থাকে তাহলে হোটেলে ফিরে চলে আসুন, এবং সুন্দর সুখকর স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসুন।
দারিংবাড়ি হোটেল - দারিংবাড়ির কিছু ভালো হোটেল ও তার Contact নাম্বার নিচে আমাদের সুবিধার্থে দিয়ে দিলাম
১. Hotel Hill Top - 63719 72044
২. Hotel Utopia - 70082 40548
৩. The Snow Creek - 98530 35553
৪. Hotel Royal Plaza Homestay - 7653913627
৫. hotel Padma - 79781 66733
গোপালপুর হোটেল :-
১. Hotel Mermaid - 9874220857/7873798007
২. Hotel sea view resort - 9831083999
৩. Hotel ocean inn - 9438325454
৪. Hotel kalinga - 9861450803
হোটেল ফাইনাল বুকিং করার আগে ভালো করে যাচাই করে রিভিউ দেখেই তবে বুক করবেন, যাতে পরবর্তীতে অসুবিধার সম্মুখীন না হন।
#গাড়ি_বুকিং :- আপনারা যদি দারিংবাড়ি আসার প্ল্যান করে থাকেন, তাহলে আপনারা ব্রহ্মপুর স্টেশনে নেমেই ১ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে বাইরে বেরিয়েই প্রচুর গাড়ি আপনারা পেয়ে যাবেন, ড্রাইভারের সাথে কথা বলে ৩ দিনের জন্য বুকিং করে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনারা যে হোটেল বুকিং করবেন তাদের সাথে কথা বললেই তারা গাড়ি ব্রহ্মপুর স্টেশনে পাঠিয়ে দেবে। এছাড়াও আপনারা হোটেল থেকে ৩ দিনের প্যাকেজ বুকিং করে নিতে পারেন, তাহলে আর কোনো ঝামেলাই থাকবে না। এর বাইরেও আমি কিছু ড্রাইভার কনট্যাক্ট নাম্বার নিচে দিয়ে দিলাম আপনারা কথা বলে বুকিং করে নিতে পারেন...
১. Nilmani - 7735896738, 9937428709
২. Pintu Sahu..( Sahu Travels)
Contact No... 8249266201
9090017046
৩. Daringbadi Car Driver No - 6291 417620
#খরচা :- এবার আসি প্রধান বিষয় সেটা হল খরচাতে, আপনারা যদি প্যাকেজ ট্যুর বুক করেন তাহলে তো কোনো কথাই নেই, আর যদি সেটা না করে থাকেন আর আপনারা যদি দুজনে ঘুরতে আসেন তাহলে ২ রাত ৩ দিনের জন্য ব্রহ্মপুর থেকে ব্রহ্মপুর আমাদের জন প্রতি - ৮ হাজার টাকা খরচা হয়ে যাবে, আর আপনারা যদি আরো একদিন গোপালপুরের জন্য বাড়াতে চান তাহলে জন প্রতি আরো ২ হাজারের মতো এক্সট্রা লেগে যাবে। তবে এই ক্ষেতে দুজনের জায়গায় যদি ৪ জন তাহলে কিন্তু খরচা টা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন