South 24 Pargana Best 25 Tourist Spot /দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সেরা ২৫ টি দর্শনীয় স্থান ।

 দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সেরা ২৫ টি দর্শনীয় স্থান


ভ্রমণ পিপাসু :- ভ্রমণ পিপাসু জেলা সিরিজে আজকে আলোচনা করবো পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম জেলা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা নিয়ে। আয়তনে এই জেলা গোটা ভারতের মধ্যে ষষ্ঠ। আজকে এই ব্লগে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সেরা ৩০ জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো। এত বড় এই জেলার প্রায় সবকটি স্পটকেই তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তবে তা সত্ত্বেও কিছু যদি বাদ পড়ে যায়, অবশ্যই সেটা আপনারা কমেন্ট করে জানাবেন আমি সেটা অ্যাড করে দেবো।

পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ১৯৮৩ সালে ডা. অশোক মিত্র কমিটি এই জেলাকে বিভাজনের সুপারিশ করেন। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১ মার্চ ১৯৮৬ সালে চব্বিশ পরগনা জেলাটিকে দ্বিখণ্ডিত করে ওই জেলার দক্ষিণাংশকে নিয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা স্থাপন করা হয়। জেলা সদর করা হয় আলিপুরকে । যদি ইতিহাস ঘাটা যায়, তাহলে দেখা যাবে এই জেলার ইতিহাস কিন্তু বহু পুরোনো মোঘল আমলে এই এলাকা বারোভুঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের অধিকারে ছিল, বারোভুঁইয়াদের পতন ঘটলে এই অঞ্চল সরাসরি মোগল শাসনাধীনে আসে। পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর বাংলার নবাব হলে তিনি আমিরপুর, আকবরপুর, আজিমাবাদের মত চব্বিশটি পরগনার জমিদারি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যৌতুক হিসেবে প্রদান করে, তখন থেকেই জায়গাটির নাম চব্বিশ পরগনা নামে পরিচিত হয়ে আসছে।১৭৫৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লর্ড ক্লাইভকে এই ২৪টি পরগনা ব্যক্তিগত জায়গীর হিসাবে দেয়। এই সময়ে সুন্দরবনের এক বিস্তৃত অংশ ২৪ পরগনার মধ্যে ছিল না। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম জঙ্গল কেটে সুন্দরবন অঞ্চলে বসতি ও চাষ শুরু হয়। ১৭৭৪ সালে লর্ড ক্লাইভের মৃত্যুর পর এই অঞ্চলটি আবার কোম্পানির হাতে চলে আসে। লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলবৎ করার পর পরগনা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

 ব্রিটিশ শাসনামলে এই চব্বিশ পরগনা জেলা, প্রশাসনিক কারণে অনেকবার ভাগ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে যশোর জেলার বনগাঁ মহকুমা এই জেলার সাথে যুক্ত করা হয়, এবং এই জেলার সুন্দরবনের অনেকটা অংশ বাংলাদেশের খুলনা ও বাঘেরহাটের সাথে যুক্ত করা হয়, এবং তার ফলেই বর্তমান দুই চব্বিশ পরগনা বর্তমান রূপ তৈরি হয়।

 ১. সুন্দরবন :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার দক্ষিণে পুরো অঞ্চল জুড়েই আছে সুন্দরবন, তার মধ্যেও কিছু অংশে মনুষ্যবসতি আছে, বাফার এবং কোর এরিয়ার সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত। আবার পুরো সুন্দরবনের মাত্র ৪০% এলাকা আমাদের রাজ্যে বাকি ৬০% বাংলাদেশে মধ্যে পড়ছে। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে বাকি অংশ আমাদের রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায়। এই সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির ছাড়াও অসংখ্য পশুপাখি এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য।


এই জেলার সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে আপনি দেশের মধ্যে যতো গুলো জাতীয় উদ্যান আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে ঘুরে আসতে পারবেন। সুন্দরবন আপনারা বিভিন্ন ভাবে ঘুরতে পারেন সবচেয়ে জনপ্রিয় যেটা সেটা দু রাত তিন দিনের প্যাকেজ ট্যুর, যদিও এই প্যাকেজ ঘোরার থেকে খাওয়ার পরিমাণই বেশি থাকে, যদিও আপনারা এই প্যাকেজ ট্যুর ছাড়াও আপনারা নিজেদের মতো ট্যুর করতে পারেন, থাকার জন্য অনেকে সরাসরি, বে সরকারি গেস্ট হাউস পেয়ে যাবেন, এখানে কিন্তু ঘোরার জায়গার কোনো অভাব নেই।


দু রাত তিন দিনের এই সুন্দরবন ট্যুর প্যাকেজ শুরু হবে ক্যানিং এর কাছে অবস্থিত সোনাখালি ঘাট থেকে এখানে দুটি ঘাট আছ একটি সোনাখালি এবং দ্বিতীয়টি গদখালি, প্রথমদিন আপনাদের নিয়ে যাওয়া হবে -

১. গদখালির কাছে হোগল, কর্তাল ও বিদ্যাধরী নদীর মিলনস্থলে।

২. গোসাবার - হ্যামিলটন সাহেবের বাংলো এবং বেকন বাংলো।

৩. পাখিরালয় - সানসেট পয়েন্ট ও এখানে রাত্রিবাস।


দ্বিতীয় দিন আপনাদের পাখিরালয় থেকে সর্ব প্রথম নিয়ে যাওয়া হবে -

১. সজনেখালি ক্যাম্প, এখানে পারমিট করা ছাড়াও দেখার মত আছে - ওয়াচ টাওয়ার, ম্যানগ্রোভ ইন্টারপিটেসন সেন্টার এবং কুমির পার্ক।

২. কোর এরিয়া, সুন্দরবনের কোর এরিয়াতে দেখার মত জায়গা গুলো হলো - সুধণ্যখালি ক্যাম্প এবং দোঁবাকি ক্যাম্প।

তৃতীয় দিন আপনাদের সুন্দরবন ভ্রমনের শেষদিন এই তৃতীয় দিনে ব্রেকফাস্ট করে আপনাদের নিয়ে যাওয়া হবে ঝড়খালি এখানে আছে বাঘের rescue center। লোকালয় থেকে উদ্ধার হওয়ার কিছু বাঘ এখানে রাখা থাকে। তারপর লাঞ্চ করিয়ে লঞ্চ আপনাকে পৌঁছে দেবে সোনাখালি ঘাটে।

পুরো ভ্রমণ পরিকল্পনা ও সুন্দরবন সফরের সমস্ত তথ্য জানতে চাইলে আমার লেখা ব্লগটি আপনাদের পড়তেই হবে, সমস্ত খুঁটিনাটি বিস্তারিত ভাবে পেয়ে যাবেন, লিঙ্ক থাকলো 👇




২. বকখালি :- বকখালি হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকে অন্তর্গত একটি খুবই চির পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র ।বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এখানকার সমুদ্র সৈকত লালকাঁকড়ার জন্যে বিখ্যাত, নির্জনতাপ্রিয় ভ্রমণ পিপাসুরা বকখালি পছন্দ করেন। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরস্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার, (১৯০৩-১৯০৮), বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, এই স্থানটিকে "আবিষ্কার" করার জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

বকখালি থেকে কাছে পিঠে আরো কিছু সুন্দর স্পট আছে ঘোরার জন্য যেমন - জম্বুদ্বীপ এবং লোথিয়ান দ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, হেনরি আইল্যান্ড, ফ্রেডরিকস আইল্যান্ড। বকখালিতে থাকার কোনো অসুবিধা নেই প্রচুর হোটেল ও রিসর্ট এখানে পেয়ে যাবেন। এখানে আসতে হলে আপনি শিয়ালদহ থেকে লোকাল ধরে নামতে হবে নামখানা তারপর গাড়িতে হাতানিয়া দোয়ানিয়া ব্রিজ পেরিয়ে আসতে হবে এই বকখালিতে। এছাড়াও আপনি সড়কপথে ও সরাসরি এখানে চলে আসতে পারবেন।


বকখালি বাসস্ট্যান্ডের পিছনে বনবিভাগের পার্ক। ঢুকলেই ম্যানগ্রোভ নার্সারি। সুন্দরবনে নানা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের চারা তৈরি হয়। আছে একটি কুমির প্রকল্প, ছোট আকারেই। কচ্ছপ প্রজননের জন্যও রয়েছে একটি জলাশয়। বেশকিছু হরিণ রয়েছে এখানে। তারপর বনকর্মীদের বাড়ি। আশেপাশে জঙ্গল। বেশিরভাগই ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। সুন্দরী, গরান, হেঁতাল, কাঁকড়া– সব গাছের নাম। চলে যেতে পারেন একটু ভেতরে। চোখে পড়তে পারে হরিণ, বাঁদর, বুনো শুয়োর। আর হঠাৎ হঠাৎ পাখি। 

৩. হেনরি আইল্যান্ড :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বকখালি সমুদ্র সৈকতের কাছেই অবস্থিত এই হেনরি আইল্যান্ড, আপনারা বকখালি ঘুরতে আসলে এই হেনরি আইল্যান্ড ও একসাথে ঘুরে নিতে পারবেন।


এখানে দেখার মত আছে সমুদ্র সৈকত, দ্বীপের চারপাশ, মৎস্য চাষ কেন্দ্র,ম্যানগ্রোভ অরন্য ঝাউবন এবং শীতকালে আসলে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি দেখতে পাবেন। এই হেনরি আইল্যান্ড থাকার জন্য রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতরের দুটি গেস্ট হাউস আছে ।


৪. ফ্রেজারগঞ্জ :- বকখালি থেকে মাত্র ২ কি.মি দূরে আরো একটি নির্জন, নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত এবং পর্যটনস্থল অবস্থিত যেটি হল ফ্রেজারগঞ্জ, ব্রিটিশ আমল থেকেই এই পর্যটনস্থলটি চলে আসছে। এটি মূলত একটি মৎস্য বন্দর, সরকারি সংস্থা বেনফিশের এখানে একটি হারবার আছে।


ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজার গড়ে তুলেছিলেন এই সৈকতাবাস। তাঁর নামানুসারেই পূর্বতন নারায়ণতলার নতুন নামকরণ হয়। ফ্রেজারের বাংলোটি সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে গেলেও সাহেবি আমলের বাংলোর ধ্বংসাবশেষগুলো আজও অতীতের স্মৃতি বহন করে। এখান থেকে নৌকো ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জম্বুদ্বীপ, লোথিয়ান আইল্যান্ড থেকে।এখানে আসার নিকটবর্তী রেলস্টেশন নামখানা। কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে সরাসরি বকখালি পৌঁছনো যায়। বকখালি যাওয়ার রাস্তাতেই কিছু আগেই এই ফ্রেজারগঞ্জ। হাতানিয়া - দোয়ানিয়া নদীতে এখন ব্রিজ হয়ে যাওয়ায় এখন এইসব জায়গা যেমন বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, মৌসুনি আইল্যান্ড, হেনরি আইল্যান্ড আসা অনেক সহজ হয়ে গেছে।


৫. জম্বুদ্বীপ ও লোথিয়ান দ্বীপ :- ফ্রেজারগঞ্জের ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপ জম্বু। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলও। দ্বীপের মোট আয়তন ১৯৫০ হেক্টর। দ্বীপটিকে বেড় দিয়ে রয়েছে সাদা বালির তট। কাজু বাদামের জঙ্গল রয়েছে এই দ্বীপে। আর জম্বুদ্বীপ যাওয়ার পথেই কিছু আগেই পড়বে এই লোথিয়ান দ্বীপ, এই দুটি দ্বীপই জনশূন্য অর্থাৎ মনুষ্যবসতি নেই। ২০০০ সাল পর্যন্ত মৎস্যজীবিদের এই দুটি দ্বীপে যাওয়ার পারমিশন ছিল, তারা আসতো মাছ শুকতো, ২০০১ সালের পর থেকে এখানে আসা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। 


জম্বু দ্বীপে থাকবার কোনও বন্দোবস্ত নেই। তবে বেড়িয়ে আসা যায় মোটর বোটে চড়ে। যাত্রার ব্যবস্থা রয়েছে ফ্রেজারগঞ্জ থেকে। মোটর বোট প্রথমে এডওয়ার্ড ক্রিক (খাঁড়ি) ধরে এগোবে খানিকটা। খাঁড়ির দু-ধারে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের জঙ্গল। এরপর সমুদ্রপথে নৌযাত্রা। ৩০-৪০ মিনিটের রোমাঞ্চকর জলযাত্রা মনে রাখার মতো। যাওয়ার পথে বাঁদিকে, দূরে একটা ছোট্ট দ্বীপ নজরে আসবে। ওটা সুন্দরবনের লোথিয়ান দ্বীপ।



৬. সাগরদ্বীপ :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম দ্বীপ এই সাগরদ্বীপ। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি গঙ্গা ব-দ্বীপের অংশ। দ্বীপটির আয়োতন ৩০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি। দ্বীপটি মুড়িগঙ্গা নদী দ্বারা মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এর পশ্চিমে রয়েছে হুগলি নদী উত্তর ও পূর্বে রয়েছে মুড়িগঙ্গা নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সাগরদ্বীপ আমাদের কাছে পরিচিত মকর সংক্রান্তির সময়ে অনুষ্ঠিত গঙ্গাসাগরের মেলার জন্য যা আমাদের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা( কুম্ভ মেলার পর)।


সাগরদ্বীপটি ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু তীর্থস্থান কেন্দ্রগুলির একটি। প্রতি বছর ভারতবর্ষের তীর্থযাত্রীরা মকর সংক্রান্তিতে ( জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে ) গঙ্গা এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পবিত্র স্নানের জন্য সাগরদ্বীপে একত্রিত হয়। গঙ্গা সাগরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও পবিত্র স্থান হল কপিল মুনির আশ্রম যার একটা পৌরাণিক মাহাত্ম্যও আছে। প্রাচীন কপিল মুনির আশ্রম বর্তমানে আধুনিক রূপ ধারণ করেছে।


আপনি সাগরদ্বীপে সারাবছরই যেতে পারেন, তবে মকর সংক্রান্তির মেলার সময়ে অত্যধিক ভিড় হয়। তখন চারিদিকে সাজো সাজো রব, এখানে দেখার মত কপিল মুনির আশ্রম ছাড়াও আছে আরো মন্দির আশ্রম আছে এখানে দেখার মত, এগুলো ছাড়াও সাগর সৈকত ও সাগর লাইট হাউস এগুলো থেকে ভাল ভিউ উপভোগ করতে পারবেন।


আপনি এখানে বাসে ও ট্রেনে দু ভাবেই আসতে পারেন, প্রথমত আপনাকে কাকদ্বীপে পৌঁছতে হবে, তারপর কাকদ্বীপ ঘাট থেকে ফেরিতে যেতে হবে সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটে, কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে কপিলমুনি আশ্রম আসার জন্য গাড়ি/বাস পেয়ে যাবেন, ১ ঘণ্টার মত সময় লাগবে। কলকাতার ধর্মতলা ও বাবুঘাট থেকে কাকদ্বীপের বাস পেয়ে যাবেন। মেলার সময়ে বাবুঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে মেলার উদ্দেশ্যে।


৭. মৌসুনি আইল্যান্ড :- সপ্তাহের শেষে কাজের ক্লান্তি দূর করার ১, ২ দিনের জন্য কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হলে বেশ ভালো লাগে। সেরকমই একটি সুন্দর জায়গা হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের অন্তর্গত মৌসুনি আইল্যান্ড বা মৌসুনি দ্বীপ। কিন্তু মৌসুনি আইল্যান্ডের যে প্রধান আকর্ষন ছিল, সেটা হল নির্জনতা সেটা অনেকটাই এখন আর নেই। এত ক্যাম্প এবং এত হারে পর্যটক এখানে আসছে যে আগের যে মৌসুনি আইল্যান্ড সেটা হারিয়েই গেছে। 


একদিন ছুটি কাটানোর জন্য মৌসুনি দ্বীপ কলকাতার কাছে একটি জনপ্রিয় ডেস্টিনেশনে পরিণত হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে এই জায়গাটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মৌসুনি দ্বীপ যার জন্য পরিচিত সেটা হলো এখানকার সব সুন্দর সুন্দর ক্যাম্প, এই ক্যাম্প গুলো একদিনের প্যাকেজ ট্যুরের বিনিময়ে আপনাদের থাকা, খাওয়ার ও বিনোদনের সমস্ত ব্যবস্থাই করে দেবে, এর পাশাপাশি উপরি পাওনা সামনে অতল সাগর তো আছেই। গুগল, ফেসবুকে সার্চ করলেই আপনারা এরকম প্রচুর ক্যাম্পের নাম ও নাম্বার পেয়ে যাবেন। প্রতিটি ক্যাম্পেই কটেজ এবং তাবু দুধরনের ব্যাবস্থা আছে। 

এবার আসি আপনার এই মৌসুনি আইল্যান্ডে কেমন করে পৌঁছোবেন - লোকাল ট্রেনে যদি আসতে চান তাহলে আপনাদের আসতে হবে নামখানা স্টেশনে, শিয়ালদা থেকে অনেক ট্রেন পেয়ে যাবেন। বাকি পথ আপনাদের নামখানাতে গাড়িতে বা টোটো ভাড়া করে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া ব্রিজ পার করে পৌঁছতে হবে হুজুতের ঘাট, এই ঘাট থেকে সামনে অবস্থিত চেনাই নদী অতিক্রম করলেই আপনি মৌসুনি আইল্যান্ডে পৌঁছে যাবেন। ছোট্ট নদী ৭ টাকা মাত্র ভাড়া। ওপারে গিয়ে ও আবার আপনাকে টোটো ভাড়া করতে হবে যা আপনাকে পৌঁছে দেবে আপনাদের ক্যাম্পে। কলকাতা থেকে বাসে ও আসতে পারেন একই ভাবে নামখানা নেমে এখানে আসতে হবে।


৮. পৈলান স্বামীনারায়ন মন্দির :- কলকাতার আসে পাশে অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীর কোনো মন্দির যদি থেকে থাকে তাহলে এই মন্দিরটি সবার প্রথমের সারিতে থাকবে, আমি এখন কথা বলছি কলকাতার কাছে পৈলানের স্বামীনারায়ণ মন্দির নিয়ে। এই মন্দিরটি পৈলান মন্দির হিসেবে বেশী পরিচিত হলেও এটির অবস্থান পৈলান থেকে কিছুটা এগিয়ে ভাষা নামক স্থানে একবারে ডায়মন্ডহারবার রোডের ধারে। কলকাতা এবং আসে পাশের সবচেয়ে বৃহৎ এই মন্দির তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর। ২০১৪ সালে এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়, এবং এই মন্দির তৈরিতে ব্যবহার হয় রাজস্থানের লাল বেলে পাথরের। কথিত আছে যে, ভগবান স্বামীনারায়ণ (১৭৮১-১৮৩০) একসময় নীলকান্ত বর্ণি রূপে বঙ্গোপসাগরে সাগর দ্বীপে পবিত্র তীর্থভূমি কপিলমুনির আশ্রম দর্শনের জন্য এই স্থান অতিক্রম করে যান। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি প্রমুখ স্বামী মহারাজ পরিকল্পিত এবং সংস্থা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।



প্রায় ২০০ একর এলাকা জুড়ে এই বৃহৎ মন্দির টি গড়ে তোলা হয়েছে।মন্দিরের গায়ে অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি এবং সূক্ষ্য কারুকাজ। এত নিখুঁত কাজ যুক্ত মন্দির এদিকে একদমই দেখা যায় না । মন্দিরে দুটি ভাগ একটি ওপরে এবং একটি নিচে, নিচে মন্দিরের প্রধান অংশে একদমই ছবি ও ভিডিও করার কোনো অনুমতি নেই, শুধু একবার বলবো একবার এসে খালি আপনারা দেখে, মন্দিরের নিচের অংশটি সত্যই দেখার মত, সেটা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পাবেনন না। মন্দিরের ভেতরে পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে তাই নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে কোনো অসুবিধাই হবে না, তাছাড়া বুকস্টল থেকে শুরু করে, পুজো সামগ্রীর দোকান এবং একটি পুরোপুরি বিরাট ভেজ রেস্টুরেন্ট আছে, আপনারা চাইলে আমরা মত এখানে থেকে ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ টাও করে নিতে পারবেন।


BAPS Swaminarayan এদের মূল সংস্থা, যার পুরো কথাটি হলো Bochasanwasi Akshar Purushottam Swaminarayan Sanstha, Bochasan হল গুজরাটের ছোট্ট একটি শহর, যেই শহর থেকেই ১৯০৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সংস্থার। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাস্ত্রী মহারাজ, এছাড়াও প্রমুখ স্বামী মহারাজ, যোগীজী মহারাজ এদের নেতৃত্বে সংস্থা আরো পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এদের প্রধান কার্যালয় দিল্লীর অক্ষরধাম মন্দির। এছাড়াও আহমেদাবাদ স্বামীনারায়ন মন্দির থেকেও এদের কাজ পরিচালিত হয়। দেশ বিদেশ মিলিয়ে এই সংস্থার মন্দিরের সংখ্যা প্রায় ১১০০ ওপরে। দেশ বিদেশে এদের প্রচুর ভক্ত যাদের টাকায় এই বিশাল দামী দামী পাথরের ভব্য মন্দির গুলি গড়ে উঠছে। মন্দিরের ভেতরে প্রচুর দেব দেবীর মূর্তি ও মন্দির আপনারা দেখতে পাবেন।


আপনারা যদি এই মন্দিরে ট্রেনে আসতে চান তাহলে নিকটবর্তী স্টেশন হলো মাঝেরহাট। স্টেশন থেকে বেরিয়ে ওভার ব্রিজ পার করে ডায়মন্ড হারবার রোডের ওপরে চলে আসতে হবে, এই রাস্তাতেই ডায়মন্ড হারবার, রায়চক, নূরপুর গামি বাসে উঠে পৈলান মন্দির বললেই নামিয়ে দেবে। অথবা আপনি বাসে আসতে চাইলে শিয়ালদা বা ধর্মতলা থেকে এই রুটের যেকোনো বাসে উঠে পড়ুন। এই বাস গুলো না পেলে জোকা পর্যন্ত এসে জোকা থেকে অটো পেয়ে যাবেন এখানে আসার ।মেট্রো পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে জোকা পর্যন্ত মেট্রোতেই আসতে পারবেন। মন্দিরের খোলা ও বন্ধের সময় বাকি মন্দির গুলির মতই সকাল ৬টি থেকে ১২ টা এবং বিকেল ৪ টা থেকে ৯ টা। ঘুরে একবারের জন্য কথা দিচ্ছি অসাধারণ লাগবে।



৯. সুভাষগ্রাম :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুর ব্লক ও রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার অন্তর্গত একটি ছোট্ট জনপদ হল এই সুভাষগ্রাম, যার পূর্বনাম ছিল কোদালিয়া, কিন্তু বর্তমানে এই জায়গাটিকে সুভাষগ্রাম নামে ডাকা হয়, সুভাষগ্রাম নামেই গ্রামটি জনপ্রিয়, তার প্রধান কারন হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃকবাড়ি বা পৈতৃক ভিটা হল এই সুভাষ গ্রাম বা কোদালিয়া। তার শৈশবের অনেকে। তিনি তার শৈশবের অনেকগুলো বছর কাটিয়েছিলেন এই সুভাষগ্রামের বাড়িতে, এই জায়গাটি সম্পর্কে কিন্তু অনেকেই প্রায় জানেন না, নেতাজির জীবনের সাথে সম্পর্ক যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গা।


এই জায়গাটি কেবলমাত্র নেতাজীর সাথে সম্পর্কযুক্ত না, বাংলার নবজাগরনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ, রামনারায়ণ তর্কালঙ্কার ও শিবনাথ শাস্ত্রীর জন্ম এই শহরে।অবশ্য সেই সময় এই শহর গ্রাম হিসাবে পরিচিত ছিল। আপনারা চাইলেই খুব সহজে এই গ্রামটি থেকে ঘুরে যেতে পারেন, নেতাজির বাসভবনটিকে এখন সংস্কার করে মিউজিয়ামের মত করে গড়ে তোলা হয়েছে, নেতাজির জীবনের সাথে যুক্ত অনেক কিছু এবং তার শৈশবে কাটানো কিছু স্মৃতি এখানে সুন্দর ভাবে যত্নসহকারে রাখা আছে। তবে এই মিউজিয়ামটি খোলা হয় কেবলমাত্র দুটি দিনে একটি ২৩ জানুয়ারি এবং ১৫ আগস্ট তাই আপনি এখানে আসতে চাইলে অবশ্যই এই দুটি দিনে এখানে আসার চেষ্টা করবেন। শিয়ালদা থেকে কাকদ্বীপ, নামখানা বা ডায়মন্ড হারবার লোকাল ধরে সুভাষগ্রাম স্টেশনে নেমে টোটো করে এখানে আসতে হবে, সোনারপুরের পরের স্টেশনই এই সুভাষগ্রাম।


১০. ক্যানিং সাহেবের বাংলো :- সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ক্যানিং শহর। এই ক্যানিং নামটি এসেছে ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল এবং প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং এর নামে। এই ক্যানিং এই তিনি একটি বাংলো গড়ে তোলেন যা ক্যানিং সাহেবের বাংলো নামে পরিচিত।


গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং এর প্রিয় জায়গা ছিল এই ক্যানিং তিনি এখানে প্রায়ই আসতেন তিনি এখানে একটা বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন, যদি ও সেটা আর হয়ে ওঠেনি, ক্যানিং সাহেবের থাকার জন্য এখানে একটা বসতবাড়ি ছিল, সেই জরাজীর্ণ বাড়িটি বর্তমানে হেরিটেজ কমিশন থেকে হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কার করা শুরু করেছে। আপনারা যদি সুন্দরবন ঘুরতে আসেন তাহলে যাওয়ার পথে এই বাংলোটি অবশ্যই দেখে যাবেন। ক্যানিং স্টেশন থেকে পায় হাঁটা দূরত্বে।


১১. বাওয়ালী রাজবাড়ি :- বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর রাজবাড়ি/ জমিদারবাড়ি, অতীত গৌরব ও প্রাচুর্জ হারিয়ে এইসব বেশীরভাগ জমিদারবাড়ি গুলোর অবস্থা একদমই জরাজির্ণ ও সঙ্গিন। তার মধ্যেই কিছু কিছু এরকম রাজবাড়ি/ জমিদারবাড়ি এখনো একটা ভালো অবস্থায় আছে যেগুলো থেকে আপনারা অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন একদিনের জন্য, সেরকমই একটা জমিদারবাড়ি হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাওয়ালী রাজবাড়ি। ইতিহাস, সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যকে একসাথে উপভোগ করতে হলে আপনাকে আসতেই এই এখানে। বলিউড সিনেমা দেবদাস, বুলবুল, পরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাংলা সিরিয়ালের শুটিং স্পট এই রাজবাড়ি এখন বর্তমানে লাক্সারি হোটেলে পরিণত হয়েছে। কলকাতা থেকে প্রায় ৪০ কি.মি দূরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বজবজের উত্তর বাওয়াল গ্রামে এই জমিদারবাড়িটি অবস্থিত। একদিনে থাকার জন্য কিন্তু একদম বেস্ট অপশন তার পাশাপাশি রাজকীয় আথিথেয়তা।



এই রাজবাড়ির ইতিহাস নিয়ে যদি আলোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে এই রাজবাড়ির ইতিহাস বহু পুরনো, মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। আকবরের সময়ে তার সেনাপতি মান সিং এর একজন বিশ্বস্ত সেনাপতি শোভারাম রায় কে উত্তরপ্রদেশ থেকে এই এলাকায় পাঠান এক কৃষক বিদ্রোহ দমন করার জন্য, এবং তিনি শক্ত হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করেন যার ফলস্বরূপ সম্রাট আকবর তাকে ৩০০০০ হাজার একর জমি প্রদান করেন। সুন্দরবন হতে অনতিদূরে ২৪ পরগনায় নিজেদের স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। ততদিনে এই বংশ মণ্ডল জমিদার বংশ বা মণ্ডল রাজ পরিবার হিসেবে পরিচিত। ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তায় এবং তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে তাঁরা ক্রমে পরাক্রমশালী হয়ে ওঠেন।

মণ্ডল পরিবারের স্থাপত্যকর্মের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন বাওয়ালি রাজবাড়ির বয়স আজ প্রায় ২৫০ বছর। স্বাধীনতার পরে নানা কারণে রাজবাড়ি অনাদরে এবং পরিচর্যার অভাবে ভগ্নপ্রায় হতে থাকে। ২০০৯ সালে অজয় রাওলা নামে একজন শিল্পপতি এই জমিদারবাড়িকে কিনে নেন এবং তারপর থেকে শুরু হয় এর সংস্কার বর্তমানে এটি একটি বিলাস বহুল পোপার্টিতে পরিণত হয়েছে। 


এখানে চাইলে আপনি এক রাতের জন্য থাকতেও পারেন অথবা একদিনের ডে ট্যুর ও করতে পারেন, বিভিন্ন রকম বিভিন্ন ভাড়ার রুম পেয়ে যাবেন। আসলে অবশ্যই অনলাইন বুকিং করে আসবেন। 

দুজনের জন্যে একদিন একরাতের ভাড়া মোটামুটি এইরকম :

ক্ল্যাসিক হেরিটেজ রুম - ৮৫০০/-

জমিদারী সুইট - ১২,৫০০/-

রয়াল সুইট - ১৭,৫০০/-

ডাকবাংলো - ২১,৫০০/- (দুটি ঘর, ৬ জনের জন্যে)

নতুন বাড়ি - ১০,০০০/-

কলকাতা শহর থেকে গাড়ি করে চলে আসাই সবথেকে সুবিধের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্ভুক্ত বজবজের কাছে উত্তর বাওয়ালি গ্রামে অবস্থিত রাজবাড়ি বাওয়ালি। গাড়ি করে কলকাতা থেকে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ট্রেনে আসতে চাইলে আপনাকে লোকাল ট্রেন ধরে বজবজ স্টেশনে নামতে হবে তারপর গাড়ি করে এই রাজবাড়িতে পৌঁছতে হবে।



১২. জটার দেউল :- দেউল বা রেখ দেউল ধাঁচে তৈরি মন্দির গুলো এমনিতেও আমাদের দেশে খুব কমই অবশিষ্ট আছে। এই মন্দির গুলো ওড়িষ্যা স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, সেরকমই একটি মন্দিরের নিদর্শন দেখতে পাবেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবনের রায়দিঘিতে। রায়দিঘি শহর থেকে কিছুটা দূরে মণি নদী তীরবর্তী অঞ্চলে খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে এই ইট দিয়ে এই মন্দিরের নির্মাণ হয়। জটাধারী মানে শিব, তাই, স্থানীয়রা এটিকে শিবমন্দির মনে করেই পূজা-অর্চনা করে আসছেন। তবে ৩২ মিটার উঁচু সেই প্রাচীন মিনার পাল যুগেই তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়।


পোড়ামাটির সেই সৌধ নিয়ে হাজারো গল্প লোকমুখে চলে আসছে। শোনা যায়, দেউলের আশেপাশের মাটি খুঁড়ে শুঙ্গ, কুষাণ এমনকি পর্তুগিজ যুগের মুদ্রা এবং দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। পাল যুগে বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়ের সময় থেকে নাথযোগীদের আবির্ভাব, সেই বিস্তীর্ণ সময়ের সাক্ষ্য দিয়ে চলে জটার দেউল। আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ১৭৫ অব্দে রাজা জয়চন্দ্র জটার দেউল তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। পরে পর্তুগীজ-মগ জলদস্যুরা সেটিকে ওয়াচটাওয়ার হিসাবে ব্যবহার করত।

২০১১ সালের শেষ দিকে জটার দেউলের সামনের অবতল ঢিবিটিতে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তরফে খনন কার্য শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে একটি ইটের কাঠামো আত্মপ্রকাশ করে। আগে মনে করা হত দেউল সংলগ্ন কোনও নাটমন্দির বা জগমোহন ছিল না। কিন্তু কাঠামোটি আবিষ্কারের পর সেই ধারনা ভুল প্রমানিত হয়। এমনিতেও আরো অনেক আগেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে এই জটার দেউল সংলগ্ন অঞ্চল থেকে ব্রোঞ্জের তৈরি মহাকাল, বটুক ভৈরব, জম্ভল, ষড়ক্ষরী লোকেশ্বর, পোড়া মাটির তারা মূর্তি সহ তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।

প্রতিবছর ২রা বৈশাখ মন্দিরের কাছে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং ঘোডদৌড়ের আয়োজন করা হয়। এখানে আসার ব্যাপারে আপনাদের বলি আপনারা বাসে আসলে সরাসরি বাসে রায়দিঘি এসে টোটো ভাড়া করে এই জটার দেউলে চলে আসতে পারেন, ট্রেনে আসতে চাইলে শিয়ালদহ থেকে লক্ষিকান্তপুর লোকাল ধরে মথুরাপুর রোড স্টেশনে নেমে গাড়ি করে রায়দিঘি বা সোজা এখানে চলে আসতে পারেন ।


১৩. জয়নগরের মোয়া :- জয়নগরের মোয়া, নামটা শুনলেই জিভে জল চলে আসে যে কোনও বাঙালির। দেশের যে কোনও প্রান্তের বাঙালি, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যাঁর নাড়ির যোগ, এক নামেই সে চিনে নিতে পারে এই সুস্বাদু মিষ্টি কে। অরিজিনাল মোয়া যদি কেউ নিতে চান তাহলে আসতে হবে জয়নগর ও বহড়ু তে, আমিও গিয়েছিলাম এই দুটি জায়গা তেই।


  এই মোয়ার সাথে জয়নগর নামটি যুক্ত থাকলেও আদতে এই মোয়া কিন্তু #বহড়ুর মোয়া। এই মোয়ার উৎপত্তি জয়নগরে নয় জয়নগরেরই একটি গ্রাম বহড়ু তে। বহড়ু গ্রামেরই যামিনি বুড়োর হাত ধরে প্রথম তৈরি হয় এই মোয়া। তিনি একদিন তার নিজের জমির কনকচূড় ধানের খই এর সাথে নলেন গুড় মিশিয়ে এক মণ্ড বানিয়ে পাড়ার এক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেন যার স্বাদ সকলের খুবই পছন্দ হয় আর এইভাবেই যামিনি বুড়োর হাত দিয়ে প্রথমবারের জন্য জন্ম নেয় জয়নগরের মোয়া বহড়ুতে, পরবর্তীতে জয়নগর নামটি যুক্ত হয়ে যায় কারণ জয়নগর ছিলো সবচেয়ে বড় শহর এবং বাণিজ্য এবং বিক্রয়কেন্দ্র। 2015 তে এই মোয়া GI ট্যাগ ও পেয়েছে।

     

জয়নগরের মোয়ার প্রধান উপকরণ হলো কনকচূড় ধানের খই, খাঁটি নলেন গুড় খোয়া খির, গাওয়া ঘি, কাজু, কিসমিস,এলাচ গুড়ো,পেস্তা। তার মধ্যে প্রধান কনকচূড় ধানের খই, এবং খাঁটি নলেন গুড় যেটা জয়নগরের আসে পাশে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলায় খুব ভালো ভাবে পাওয়া যায়, যার জন্যই এই মোয়া এতটা সুস্বাদু হয়।


  

  বহরু'র সবচেয়ে জনপ্রিয় যে দোকানটি সেটা হলো সেটি শ্যাম সুন্দর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এই দোকানের খ্যাতি বাইরেও, প্রচুর নামী দামী মানুষেরা এই দোকানের মোয়ার প্রশংসা করে গেছেন। দাদাগিরি থেকে দিদি নাম্বার 1 অনুষ্ঠানেও এই দোকানের মোয়া গিয়েছে। আর জয়নগরের সবচেয়ে পুরোনো যে দোকান সেটা হলো শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার যাকে একডাকে সবাই বুচকি বাবুর দোকান বলেই চেনে, বুচকি বাবু বা পূর্ণচন্দ্র ঘোষের হাত দিয়েই সর্বপ্রথম জয়নগরের মোয়ার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু যাই বলুক এই মোয়ার প্রধান কেন্দ্র কিন্তু বহড়ুই। বহড়ুর মোয়াই বাইরে জয়নগরের মোয়ার নামে বিক্রি হয়।


১৪. ভগবতপুর কুমির প্রকল্প :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমা ব্লকের অন্তর্গত ভগবতপুর কুমির প্রকল্প যা সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান তথা আমাদের রাজ্যের মধ্যে প্রথম কুমির প্রকল্প। ১৯৭৬ সালে পাথরপ্রতিমা থেকে প্রায় ১০ কি.মি দূরে সপ্তমুখী নদীর তীরে এই প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়।


এই প্রকল্পে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে কুমির প্রজনন ও তার সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের যত্ন নেওয়া হয় এখানে আসলে ডিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের নোনা জলের কুমির দেখতে পাবেন। এখানে ঢোকার টিকিট মুল্য ১০ টাকা। এবার আসি আপনি এখানে কেমন করে আসবেন, প্রথমত আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে আপনাকে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নামখানা লোকাল ধরে নামতে হবে কাকদ্বীপে তারপর বাস ধরে আসতে হবে পাথরপ্রতিমা, এবার এখান থেকে ছোটো ম্যাজিক গাড়ি ধরে পৌঁছতে হবে ভগবতপুর। আপনি কলকাতা থেকে সরাসরি বাসে পাথরপ্রতিমা এসেও একই ভাবে এই ভগবতপুর কুমির প্রকল্পে চলে আসতে পারে।


১৫. সুভাষগ্রাম :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুর ব্লক ও রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার অন্তর্গত একটি ছোট্ট জনপদ হল এই সুভাষগ্রাম, যার পূর্বনাম ছিল কোদালিয়া, কিন্তু বর্তমানে এই জায়গাটিকে সুভাষগ্রাম নামে ডাকা হয়, সুভাষগ্রাম নামেই গ্রামটি জনপ্রিয়, তার প্রধান কারন হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃকবাড়ি বা পৈতৃক ভিটা হল এই সুভাষ গ্রাম বা কোদালিয়া। তার শৈশবের অনেকে। তিনি তার শৈশবের অনেকগুলো বছর কাটিয়েছিলেন এই সুভাষগ্রামের বাড়িতে, এই জায়গাটি সম্পর্কে কিন্তু অনেকেই প্রায় জানেন না, নেতাজির জীবনের সাথে সম্পর্ক যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গা।


এই জায়গাটি কেবলমাত্র নেতাজীর সাথে সম্পর্কযুক্ত না, বাংলার নবজাগরনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ, রামনারায়ণ তর্কালঙ্কার ও শিবনাথ শাস্ত্রীর জন্ম এই শহরে।অবশ্য সেই সময় এই শহর গ্রাম হিসাবে পরিচিত ছিল। আপনারা চাইলেই খুব সহজে এই গ্রামটি থেকে ঘুরে যেতে পারেন, নেতাজির বাসভবনটিকে এখন সংস্কার করে মিউজিয়ামের মত করে গড়ে তোলা হয়েছে, নেতাজির জীবনের সাথে যুক্ত অনেক কিছু এবং তার শৈশবে কাটানো কিছু স্মৃতি এখানে সুন্দর ভাবে যত্নসহকারে রাখা আছে। তবে এই মিউজিয়ামটি খোলা হয় কেবলমাত্র দুটি দিনে একটি ২৩ জানুয়ারি এবং ১৫ আগস্ট তাই আপনি এখানে আসতে চাইলে অবশ্যই এই দুটি দিনে এখানে আসার চেষ্টা করবেন। শিয়ালদা থেকে কাকদ্বীপ, নামখানা বা ডায়মন্ড হারবার লোকাল ধরে সুভাষগ্রাম স্টেশনে নেমে টোটো করে এখানে আসতে হবে, সোনারপুরের পরের স্টেশনই এই সুভাষগ্রাম।

১৬. রায়চক :- এই জেলার হুগলি নদীর তীরবর্তী সুন্দরতম জায়গা গুলোর মধ্যে একটি হল রায়চক। এই এলাকায় হুগলি নদী যথেষ্টই চওড়া। রায়চকের হুগলি নদীর রিভার সাইডে বসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আপনাদের টাইম যে কখন কেটে যাবে সেটা টেরই পাবেন না। এই রায়চকে আপনি বিভিন্ন রিভার সাইড উচ্চ মানের হোটেলও পেয়ে যাবেন, যেগুলো টানেই পর্যটকেরা এই রায়চকে এসে থাকে, আপনি এগুলা তে না থাকতে চাইলেও

হুগলি নদীর রূপ, চারপাশের ভিউ এবং সন্ধ্যার অসাধারণ সূর্যাস্ত দেখে আবার ফেরৎ চলে যেতে পারেন। কলকাতা থেকে সরাসরি রায়চকের বাস পেয়ে যাবেন, ধর্মতলা ও শিয়ালদহ থেকে। ট্রেনে আসতে চাইলে ডায়মন্ড হারবারে নেমে বাই রোড এখানে চলে আসতে পারেন, অথবা ফেরিতেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কুকড়াহাটি বা গেঁওখালি অথবা হাওড়া জেলার গাদিয়ারা থেকেও এখানে চলে আসতে পারেন।


১৭. নূরপুর :- রায়চক থেকে খানিকটা এগিয়েই পড়বে নূরপুর, তিন জেলার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই জায়গাটি এই জেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কারণ আপনি এই নূরপুর ফেরিঘাট থেকেই হাওড়া জেলার গাদিয়ারা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গেঁওখালিতে যেতে পারবেন। এখানে বেশিরভাগ মানুষ ফেরিযোগে নদী পারাপার করার জন্য এসে থাকে, আপনি চাইলেও ঘুরতে আসতে পারেন, হুগলি নদীর ধারের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে। রায়চক বা ডায়মন্ড হারবার আসলে তিন জেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী এই নূরপুর থেকে।

১৮. কোমাগাতামারু বজবজ :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ছোট্ট শহর বজবজে কিন্তু আপনারা চাইলেই একদিনের জন্য ঘুরে যেতে পারেন, বজবজ ও আশেপাশে ৩, ৪ টি দারুণ, জায়গা ও ঐতিহাসিক স্থান আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা প্রায় অনেকেই জানি না, কলকাতা থেকে খুব একটা দূরে না, যাওয়া ও আসার কিন্তু খুব একটা অসুবিধা নেই, এই বজবজ একদিনের একটা ভালো ট্যুর হবে।

এবার আসি বজবজে আপনারা কি কি জায়গা ঘুরতে পারবেন -

১. কোমাগাতামারু শহিদগঞ্জ :- বজবজে আসলে যে জায়গাটি আপনাদের অবশ্যই দেখতে হবে সেটা হলো কোমাগাতামারু শহিদগঞ্জ, যার নামে বজবজ স্টেশনের নামকরণ ও করা হয়েছে।

এই কোমাগাতামারু সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের একটি ইতিহাসে যেতে হবে, কোমাগাতামারু হল একটা জাপানি জাহাজ যার মালিক ছিলেন একদিন পাঞ্জাবি শিখ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯১৪ সালে হংকং থেকে ৩৭৬ জন শিখকে এই জাহাজ করে কানাডা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, কিন্তু কানাডার ভ্যান্কুভার পোর্ট থেকে তাদের নামার পারমিশন দেয়নি সরকারে পক্ষ থেকে ২ মাস ভ্যান্কুভারে আটকে থাকার পর তাদের আবার ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন এই জাহাজ কলকাতার কাছে বজবজে এসে নোঙ্গর করে, কিন্তু সেই সময়ে ব্রিটিশ সরকার এই জাহাজের এতজন যাত্রীদের দেশের মাটিতে নামার অনুমতি দেয়নি, কারণ সেই সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং বিপ্লবী আন্দোলন জোর কদমে চলছিলো। তারফলে পুলিসের সাথে তাদের খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় এবং প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী এতে শহীদ হোন, তাদের স্মৃতিতেই এই শহীদ বেদী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু হাত দিয়ে উদ্বোধন করা হয়, বজবজের স্টেশনের নাম ও দেখতে পাবেন এই কোমাগাতামারুর নামে করা হয়েছে।

২. দ্বিতীয়টি আপনারা বজবজ পুরনো রেল স্টেশন থেকে ঘুরে আসতে পারেন, স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্মসভা থেকে ভারতে ফিরে আসার সময়ে বজবজে এসেই জাহাজে নেমেছিলেন তারপর এই স্টেশন থেকেই কলকাতা ফিরে গিয়েছিলাম, এই স্টেশনে এখন ট্রেন চলাচল করে না। কিন্তু স্টেশনটি কিন্তু খুবই ঐতিহাসিক।

৩. বজবজে এসে আরো একটা জিনিস করতে পারেন সেটা হলো হুগলী নদীর রিভার সাইড থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

৪. বজবজ থেকে কাছে পিঠে আরো দুটি জায়গা হলো পুজালির অছিপুর চাইনিজ মন্দির এবং বাওয়ালী রাজবাড়ি


১৯. অছিপুর চাইনিজ মন্দির :- কলকাতা থেকে মাত্র ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে এখানেই প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন বাংলায় প্রথম চিনা ব্যবসায়ী টং অ্যাচিউ। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলার পুজালী শহরের কাছে অবস্থিত অছিপুর এই অছিপুরেই হুগলি নদী থেকে কিছুটা দূরে প্রথম চিনা ব্যবসায়ী টং অ্যাচিউ এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো দেশের প্রথম চীনা মন্দির।

১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে বজবজের দক্ষিনে নদীতীরে আসলো এক চীনা জাহাজ সেখান থেকে নামলেন টং অ্যাচিউ । তার উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজদের সঙ্গে বাণিজ্য করবে , ইংরেজরা রাজি হল এবং লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস 560 বিঘা ফসলি জমি অছি কে দান করেছিলেন । অছি বা অ্যাচিউ সেখানেই তৈরি করলেন তার চিনিরকল। এই অ্যাচিউ নামটা স্থানীয়দের উচ্চারণের ফলে অছি হয়ে যায় আর জায়গাটির নাম ও হয়ে যায় অছিপুর। যাইহোক টং অ্যাচিউ চিন থেকে প্রচুর মানুষকে নিয়ে আসলেন এখানে কাজ করার জন্য। এই অছি বা অ্যাচিউ সাহেব বজবজের সাড়ে 6 মাইল দক্ষিনে পূজালির কাছে অছিপুরে প্যাকম প্যাকমির( খুদা, খুদির) সেখানে আজও মন্দির তৈরী করেন । এই মূর্তি গুলো তারা চীন থেকেই নিয়ে আসছিলেন। যাই হোক বেশ কিছু বছর চলার পর অ্যাচিউ সাহেব মারা যান তার পরে এখানে থাকা চীনা নাগরিকদের উপর দুর্যোগ নেমে আসে, এর পর তারা ধীরে কলকাতায় চলে যেতে থাকে। তারফলে মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজারে গড়ে ওঠে চিনা কলোনি।

ফেব্রুয়ারি মাসে চীনা নববর্ষ পালিত হওয়ার দুইদিন আগে থেকেই কলকাতার চীনারা এই অছিপুরের অভিমুখে আসতে থাকে। লাল টকটকে, অর্ধবৃত্তাকার সমাধিস্থলে (আচিউয়ের সমাধি বলেই সবার বিশ্বাস) ফুল-ধূপ দেন ওঁরা, প্রার্থনা করেন খোদা-খুদির মন্দিরে। আচিউয়ের নিয়ে আসা দুই দেবমূর্তি, লোকমুখে তাঁরাই খুদা-খুদি। মন্দিরের পেছনেই দক্ষিণ রায়ের একটি মন্দির যেহেতু এখান থেকে সুন্দরবন খুব একটা দূরে না, তাই একবার হলেও আপনি অছিপুরের এই মন্দির থেকে ঘুরে যেতে পারেন। লোকাল ট্রেন ধরে বজবজে নেমে তারপর গাড়িতে এখানে পৌঁছতে হবে ।

২০. ঘুটিয়ারি শরীফ :- কলকাতা থেকে ক্যানিং লাইনের ছোট্ট একটি জনপদ হল এই ঘুটিয়ারি শরীফ। যেটি মূলত তৈরি হয়েছে ঘুটিয়ারি শরীফ মাজারের জন্য। পীর গাজি মুবারক আলি সাহেব ঘুটিয়ারি শরিফকে এনে দিয়েছেন তীর্থস্থানের তালিকায়। তারই মাজার আছে এই ঘুটিয়ারি শরীফে।


গাজী সাহেবকে নিয়ে অনেক গল্প কথা প্রচলিত আছে - তিনি নাকি হিংস্র বাঘকেও বস করতে পারতেন এই এলাকা যেহেতু সুন্দরবনের কাছাকাছি তাই বাঘের অস্তিত্ব এদিকে ভালই ছিল, এছাড়াও বলা হয় তিনি নাকি নিজের প্রান বিসর্জন দিয়ে বৃষ্টি এনে এই এলাকাকে একবার খরার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর এই জায়গাটি একটি মাজার গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রতি বছর এখানে বিরাট মেলা বসে। প্রতি বছর গাজি সাহেবের মৃত্যুদিন ৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় পীরের মেলা। চলে এক মাস ধরে। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ৪-৫ লাখ লোক আসেন মেলায়। কত ফকির-দরবেশ-বাউল আসেন সেই মেলায়। সে এক মহামিলনের মেলা। মুসলিম-হিন্দুর মিলন মেলা। শিয়ালদা থেকে ক্যানিং লাইনের, ক্যানিং এর একটি স্টেশন আগেই এই ঘুটিয়ারি শরীফ স্টেশন। স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে ৫ হাটলেই এই মাজার।


২১. বারুইপুর রাজবাড়ি/ বারুইপুর চৌধুরী বাড়ি :- বারুইপুর শহরের মধ্যেই আপনারা দেখার মত দুটো ঐতিহাসিক জায়গা পেয়ে যাবেন একটি বারুইপুর রাজবাড়ি এবং দ্বিতীয়টি বারুইপুর চৌধুরী বাড়ি।


প্রত্যক্ষভাবে রাজবাড়ীটিকে দেখতে আর ৫ টা সামান্য রাজবাড়ীর মতন হলেও রাজবাড়িটি সামান্য নয়, কারণ শোনা যায় এই রাজবাড়িটি সন্ধ্যের পর মায়াবী আকার ধারণ করে।শ্রী অমিয় কৃষ্ণ রায় চৌধুরী, হলেন এই রাজবাড়ির বর্তমান মালিক। এনার পূর্বপুরুষ ছিলেন রাজবল্লভ রায়চৌধুরী। প্রকৃতপক্ষে রাজবল্লভ রায়চৌধুরীর আমলে তৈরি হয়েছিল এই বারুইপুরে রাজবাড়িটি বর্তমানে রাজবাড়িটি রয়েছে জনসম্পদ বিভাগ দপ্তরের অধীনে। তৎকালীন সময়ে এই রাজবাড়ীতে পালন করা হতো বাঙ্গালীদের প্রতিটা পূজা-পার্বণ। রথযাত্রা থেকে দুর্গাপুজো কিছুই বাদ যেত না। 

আর দ্বিতীয় যেটি আছে রাজবাড়ির কুঠিবাড়ি বা চৌধুরী কুঠিবাড়ি যেটি বারুইপুর NIC মাঠের ঠিক পেছনেই অবস্থিত। কিন্তু এই কুঠিবাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার কোনো অপশন নেই, একমাত্র বাড়ির পুজো মন্ডপটি দেখতে পাবেন।


২২. গড়িয়া জমিদারবাড়ি :- কলকাতার কাছে এই জেলার আরো একটি ঐতিহাসিক মনুমেন্ট গড়িয়া জমিদারবাড়ি। দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায়ের নাম মনে আছে কারোর? এক সময়ের বাংলা চলচিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা। যাঁর অভিনীত চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি আর দেনা পাওনা বাঙালীর মনে আলাদা জায়গা করে রেখেছিল। তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন এই বাড়ির সদস্য। এই পরিবারের মূল জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গৌরীকান্ত বন্দোপাধ্যায়।


বর্তমানে সাউথ গড়িয়া বন্দোপাধ্যায় পরিবারের জমিদারি-একটি জয়েন্ট এস্টেট। মূল জমিদারি দুটি অংশে ভাগ হয়ে গেছে। একটি অংশ মূল রাজবাড়ির সঙ্গে যুক্ত। আরেকটি অংশ, এই বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে বাঁ দিকে একটি বাড়ি, যেটিকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একটি কারখানার মতন, আসলে সেটি গড়িয়া রাজবাড়ির দুর্গা দালান, যেখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে গত ৩৫০ বছর ধরে। এছাড়াও প্রতি বছর, জাঁকজমক সহকারে দোলযাত্রার উৎসব পালন হয়। এই বাড়িতে রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত রাধাগোবিন্দ জীউ এবং তাঁর দেবোত্তর এস্টেট ট্রাস্টের অনুদানে নানান আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপ চলে সারাবছর এখানে। বর্তমানে এই ট্রাস্টের হেড শ্রী কনক বন্দোপাধ্যায়।


২৩. পারুলিয়া জমিদারবাড়ি :- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আরো একটি ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি সেটা হলো পারুলিয়া জমিদারবাড়ি। যেটি অবস্থিত এই জেলার ডায়মন্ড হারবার শহরের খুব কাছেই । সরিষা থেকে ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পথেই পারুলিয়া মোড় থেকে ডান দিকে কিছুদূর গেলেই এই জমিদারবাড়ি।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন