ভ্রমন পিপাসু:- ভ্রমন পিপাসুর জেলা সিরিজে আজকে আলোচনা করবো পশ্চিমবঙ্গের ২২ তম জেলা হিসেবে পরিচিত ঝাড়গ্রাম জেলা নিয়ে। ঝাড়গ্রাম কিন্তু আমাদের রাজ্যের নবীনতম জেলা গুলোর মধ্যে একটি, যা পূর্বে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অংশ ছিল। ২০১৭ সালের ৪ঠা এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল এলাকা গুলোকে নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন করা হয়।
ঝাড়গ্রাম জেলা কিছু বছর আগেও সন্ত্রাস ও মাওবাদী আন্দোলনে মুক্তাঞ্চল ছিল। বর্তমানে আজ সবকিছুই নির্মূল হয়ে শান্তি ফিরে এসেছে। ঝাড়গ্রামে কিন্তু দেখার মত দারুণ দারুণ অনেক জায়গাই আছে, কিন্তু মাওবাদী এলাকা হওয়ার জন্য এই জেলায় তেমন কোনো পর্যটক আসতো না, কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় মানুষের সহযগীতায় এবং সরকারি উদ্যোগে পুরনো পর্যটনস্থলগুলোর নতুনরূপে সংস্কার এবং নতুন নতুন কিছু পর্যটনস্থল খুলে দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন কটেজ ও গেস্ট হাউস ও নির্মাণ করা হয়েছে। আজকের এই ব্লগে এই ঝাড়গ্রাম জেলার সেরা ২৫ টি দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলোচনা করবো, তার সাথে সেই সব জায়গা গুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো এবং আপনারা কেমন করে খুবই সহজে এই জায়গাগুলো ঘুরে নিতে পারবেন, সে সম্পর্কেও ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। এই ঝাড়গ্রাম জেলা বাদেও আমাদের রাজ্যের বাকি জেলা গুলো নিয়েও আলাদা আলাদা ব্লগ আছে সেগুলো আপনারা দেখে নিতে পারেন। চলুন তাহলে এক এক করে শুরু করি....
১. ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি :- অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম শহরের মধ্যে ভ্রমণের জন্য আকর্ষনীয় ও পরিচিত জায়গা যদি বলতে চান তাহলে একবাক্যে বলা যেতে পারে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির নাম। আপনারা অনেকে হয়তো জানেন না ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির বংশধরেরা কিন্তু রাজস্থানের রাজপুতানা থেকে আগত। রাজা সর্বেশ্বর সিং ছিলেন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।
রাজা সর্বেশ্বর সিং ছিলেন মোগল সম্রাট আকবরের আমলে মানসিং এর একজন অধস্থন সেনাপতি। তিনি ১৫৭৪ খ্রী আমেরের রাজা মান সিংহ মুঘলরাজ্ আকবরের আদেশে বাংলা জয় করতে এসেছিলেন। রাজা সর্বেশ্বর সিং রাজপূত সামরিক বাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনীর সহায়তায় জঙ্গলখণ্ড আক্রমণ করেছিলেন ও মাল রাজাকে পরাস্ত করে মল্লদেব উপাধি ধারণ এবং ঝাড়গ্রাম নামে তার রাজধানী স্থাপন করেন। মোঘল সেনাপতি মানসিং ও এখানে বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত করেছিলেন তারপর সর্বেশ্বর সিং এর হাতে পুরো দায়িত্ব দিয়ে তিনি আগ্রা ফিরে যান, এভাবেই সূচনা হয় ঝাড়গ্রাম রাজবংশের।
বর্তমানে যে অতি সুন্দর রাজবাড়িটি দেখতে পান এর কাজ শুরু হয় ১৯২২ খ্রি রাজা নরসিংহ মল্লদেব মহাশয়ের সময়কালে ও সম্পাদন হয় ১৯৩১ খ্রি। এই বাড়িটিতে এখন কিন্তু এই রাজ পরিবারের বংশধরেরা থাকেন এবং এটিকে এখন হোটেলে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে থাকা, খাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের রাজকীয় ব্যবস্থা থাকছে। আপনি অনলাইনে বুক করে চলে আসতে পারেন, তবে বুকিং ছাড়া ভেতরে ঢোকার পারমিশন সচরাচর দেয়না, অনেক অনুরোধ করার পর আমি ঢুকতে পেরেছিলাম, স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ড থেকে একটা টোটো ভাড়া করে এখানে খুব সহজেই চলে আসতে পারেন।
২. আল্পনার গ্রাম - খোয়াবগাঁ :- ঝাড়গ্রামের পর্যটন মানচিত্রে নবতম সংযোজন হল এই আল্পনার গ্রাম - খোয়াবগাঁ। গ্রামটির প্রকৃত নাম কিন্তু লালবাজার, ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র ৫ - ৬ কি.মি দূরে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা লালমাটি বেস্টিত ছোট্ট, সুন্দর সাজানো একটি গ্রাম এই লালবাজার।
চিত্রকলার কারুকার্জে ঝাড়গ্রামের খোয়াবগাঁ যেনো এক রূপকথার দেশ। গ্রামে বসবাস ১৩ টি লোধা পরিবারের এবং মাত্র ৭৬ জন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষের, আর এই ১৩ পরিবারের বাড়িতে গেলেই দেখতে পাবেন তাদের দেওয়ালে গ্রামবাসীরা সুন্দর সুন্দর সব আল্পনা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে, যার টানেই পর্যটকেরা এখানে ছুটে আসছে, আর এই গ্রামের চিত্রকে একদম বদলে দেওয়ার পেছনে যাদের হাত আছে তারা হল কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি। এই চালচিত্র অ্যাকাডেমি এই গ্রামের যুবক যুবতিদের চিত্রকলার প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের হাত দিয়েই ফুটিয়ে তুলছেন অসাধারণ সব চিত্রকলা, গল্প, কাহিনী। প্রতিবছর দীপাবলির পর থেকে নতুন আল্পনা দেওয়ার কাজ শুরু হয় যা চলে প্রায় এক মাস ধরে, এই কাজে তাদের কলকাতা থেকে আগত কিছু শিল্পীরাও সহায়তা করে।
এবার আসি আপনারা কেমন করে এখানে আসবেন, বলতে গেলে জঙ্গল দিয়ে যেহেতু ঘেরা গ্রামটি, তাই গ্রামটিতে যাওয়া একটু হলেও কঠিন কাজ। গুগল ম্যাপে ভরসায় একদম আগাবেন না, ট্রেনে বা বাসে আসলে স্ট্যান্ড থেকেই একটা টোটো রিজার্ভ করে নেবেন, বলবেন লালবাজার, খোয়াবগাঁ যাবো আপনাকে পৌঁছে দেবে, আর নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন বলে দেবে। রেল গেট পেরিয়ে সৎ সংঘ আশ্রমের ঠিক আগে বাঁ দিকে মোড়ামের রাস্তা, তারপর কাজু বাদামের বাগান আর শাল জঙ্গল পেরিয়ে এখানে পৌঁছতে হবে, গ্রামের ঢোকার মুখে নিয়মাবলীর বোর্ড দেওয়া আছে তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা সেটা হলো ভেতরে ফটো ও ভিডিওগ্রাফির কোনো অনুমতি নেই, কিন্তু আপনি কিছু অর্থ সাহায্য গ্রামের ফান্ডে দিয়ে ছবি বা ভিডিও করতে পারেন। এই আল্পনার কারণে গ্রামের হাল ও অর্থনীতি একদমই পাল্টে গেছে এখন গ্রামবাসীদের ভালোই রোজগার হচ্ছে আর তাদের ছেলে মেয়েরাও দিন মজুরি না খেটে হাতের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে। আর ভালো মত গ্রামটি দেখতে চাইলে আমার করা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন -
৩. চিল্কিগড় রাজবাড়ি :- ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে ডুলুং নদী এবং কনকদূর্গা মন্দিরের অনতিদূরত্বে জামবনী ব্লকের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হল চিল্কিগড় রাজবাড়ী। বর্তমানে সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত না হলেও সর্বত্র অবহেলা ও অযত্নের ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো, বেশ বড় এই রাজবাড়ীটি। এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামবনীর রাজা গোপিনাথ সিংহ। তার মৃত্যুর চিল্কিগড়ের রাজা হোন তার জামাই রাজা জগন্নাথ (সিংহ) দেও ধবলদেব।
রাজবাড়ী প্রবেশের আগেই চোখে পড়বে বড় তোরণদ্বার, তারপর ঢুকেই দেখতে পাবেন একটা উন্মুক্ত প্রান্তর, বাঁদিক একটা প্রাচীন বৃহৎ অশ্বত্থ গাছ, তিনটি মন্দির, পরিত্যক্ত সার্ভেন্ট কোয়ার্টার ও আউটহাউস এবং ডাইনে মূল রাজপ্রাসাদ। রাজবাড়ির মুল প্রাসাদে এখনো বংশধরেরা বসবাস করে, তাই সেখানে যাওয়া একদমই নিষেধ। মুঘল এবং ব্রিটিশ মিলিত স্থাপত্যশৈলীতে এই দ্বিতল বিশিষ্ট এই রাজবাড়িটি নির্মিত। ঝাড়গ্রাম থেকে জামবনী যাওয়ার রাস্তায় জামবনী পেরিয়েই কিছুদূর গেলেই প্রথমে পড়বে কনকদূর্গা মন্দির তারপর ডুলুং নদী ক্রস করে কিছুদূর গেলেই এই রাজবাড়ি ।
৪. চিল্কিগড়ের কনকদূর্গা মন্দির :- প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশী পুরনো ঝাড়গ্রাম ট্যুরিসমের ক্ষেত্রে আরো একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান চিল্কিগড়ের কনকদূর্গা মন্দির। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি দূরে জামবনী ব্লকের অন্তর্গত চিল্কিগড়ের ডুলুং নদী তীরবর্তী কনক অরণ্যের মাঝে এই প্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত।
এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন জামবনীর মহারাজা গোপিনাথ সিংহ ।কথিত আছে রাজা গোপীনাথ স্বপ্নে এক মাতৃ মূর্তির দর্শন করে, এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন| এটা শোনা যায় যে রাজবংশের সময়ে নরবলি একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিল। নরবলি বন্ধ হয়ে পাঠাবলি শুরু হয়, যতক্ষণ না বলির রক্ত ডুলুং নদীতে পৌছাতো ততক্ষন বলি চলতেই থাকতো। কনক দুর্গা মন্দির পরিদর্শন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়। কনক অরণ্যের মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরটি, নির্জন পরিবেশ পশুপাখির ডাক সত্যি একটা আলাদা অনুভূতি দেয়।
৫. লালগড় ও রামগড় রাজবাড়ি :- একসময়ের অশান্ত জঙ্গলমহলে এখন ফিরে এসেছে শান্তির বাতাবরন। তাই ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় ধীরে ধীরে বাড়ছে পর্যটকদের আগমন, সেরকমই একটি জায়গা হলো জঙ্গলমহলের লালগড়, এই লালগড়ের প্রধান আকর্ষন লালগড় রাজবাড়িও পার্শ্ববর্তী রামগড় রাজবাড়ি এবং আরো কিছু প্রাচীন মন্দির। লালগড়ের পাশেই আছে রামগড়, এই রামগড়েও একটা রাজবাড়ি আছে এবং রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন মন্দির, দুটো রাজবাড়ির মধ্যেই গভীর সম্পর্ক আছে সেটা নিয়েই এখন আলোচনা করবো।
জনস্রুতি অনুসারে বাংলার নবাব আলীর্বদীর খাঁ এর আমলে উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া থেকে পুরী যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন দুই ভাই যাদের নাম রাম সিং এবং লাল সিং। কোন কারণে তারা জঙ্গলমহলের এই এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করে। তাদের নাম থেকেই জায়গা দুটির নাম হয় রামগড় এবং লালগড়। এবং ধীরে ধীরে তারা জমিদার পত্তন করেন। একদা রাজা রাম সিং একটি সিংহের শিকার করেছিলেন, সেইজন্য আলীর্বদী খাঁ তাকে সিংহসাহস রায় উপাধি দেন এবং লাল সিং তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন বলে তাকে সাহস রায় উপাধি দেন, সেই উপাধি এখনো চলে আসছে।
লালগড় রাজবাড়ির চত্বরেই রয়েছে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো ‘রাধামোহন জিউ’য়ের মন্দিরটি, মন্দিরটি বিষ্ণুপুরি জোড়বাংলা শৈলীতে নির্মিত। এছাড়াও আছে লালগড়ের সর্বমঙ্গলার পরিত্যক্ত মন্দির, এছাড়াও আছে কানাইলাল, শ্রীমতী মন্দির, এবং রাজবাড়ির দুর্গা মন্দির। রাজবাড়ির শেষ রাজা ছিলেন বিজয়নারায়ণ সাহসরায়ের , তার পৌত্র দর্পনারায়ণ সাহসরায় বর্তমানে এই মন্দির গুলো দেখাশোনার দায়িত্বে আছে।
লালগড় থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে রামগড়েও আছে একটি পরিত্যক্ত রাজবাড়ি, এবং কুলদেবতা কালাচাঁদ জিউয়ের মন্দির। এছাড়াও রামগড় জুড়ে আছে বুড়ো শিবের মন্দির, শীতলা মন্দির ,এবং রাধেশ্যাম মন্দির। আপনি লালগড় বা রামগড় দুদিক থেকেই আসতে পারেন এক মেদিনীপুর হয়ে দুই ভাদুতলা মোড় থেকে পীরাকাটা হয়ে এছাড়াও আরো অনেক রাস্তা আছে।
৬. জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক :- বৈচিত্র্যে ঘেরা অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম শহরের আরো একটি আকর্ষন বলতে পারেন ঝাড়গ্রাম মিনি জু যা বর্তমানে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের পরিণত করা হয়েছে। এর যাত্রা শুরু হয় ঝাড়গ্রাম মিনি জু হিসেবে ১৯৮০ সালে তারপর বেশ কিছু পরিবর্তন করে ২০০৫ সালে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে পরিনত করা হয়। বর্তমানে ১৬ টি আলাদা স্পিসিসের ১৮৭ টি স্তন্যপায়ী, ১২ টি আলাদা স্পিসিসের ১৫৩ টি সরিসৃপ এবং ১৮ টি আলাদা স্পিসিসের ৭৪ টি পাখির বাস ৩৩ একর জঙ্গলের উপর গড়ে ওঠা এই জ্যুলজিকাল পার্কে।
৯. বেলপাহাড়ি সার্কিট :- কলকাতার আসেপাশে এরকমই অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে যেগুলো থেকে ২ বা ৩ দিনের জন্য খুবই সুন্দরভাবে ঘুরে আসা যায়। সেরকমই এরকম একটা জায়গা হলো বেলপাহাড়ি। বেলপাহাড়ি ঝাড়গ্রামের বিনপুর ব্লকের অন্তর্গত একটু গ্রাম। এটি একটি গ্রাম হলেও এর আশপাশের এলাকা গুলোকে একসাথে বেলপাহাড়ি সার্কিট বলে এখানে দেখার মত আছে অনেক গুলো জায়গা, যেগুলোকে কভার করতে আপনার প্রায় ২ দিন তো লাগবেই, চাইলে আপনি ৩ দিনও দিতে পারেন। এখানে পর্যটক আসার প্রধান সিজন হল শীতকালের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কিন্তু এখানকার প্রধান আকর্ষন ঝর্ণাগুলো ও পাহাড় গুলো সৌন্দর্য নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে বর্ষাকালে এসময় গরমটাও অনেকটা কমে যায় আর এলাকার সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যায়।
এবার আসি বেলপাহাড়ির দর্শনীয় স্থানে -
১. গদ্রাসিনী পাহাড় :- গদ্রাসিনী পাহাড় বেলপাহাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার এবং ঝাড়গ্রাম থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।গদ্রাসিনী পাহাড়ের নীচে অবস্থিত গদ্রাসিনী আশ্রম। নীরব পরিবেশে সময় কাটাতে এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধান করতে অনেক অঞ্চলের মানুষ এখানে আসেন। প্রতি বছর, অঘ্রায়ন মাসে বিপুল সংখ্যক আধ্যাত্মিক সাধক এই স্থানটি পরিদর্শন করেন।
২. খান্দারানি লেক :- বেলপাহাড়ির খান্দারানি হ্রদ ঝাড়গ্রামের কাছে সবচেয়ে মনোরম স্থানগুলির মধ্যে একটি।ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত এই লেকে আসলে আপনারা নিশ্চিন্তে এক থেকে দুঘন্টা কাটাতে পারবেন। লেকের চারপাশের পরিবেশ নিরিবিলি, এবং লেক ঘিরে আছে সবুজ গাছপালা এবং পর্বতমালা, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই ।
৩. ঘাঘরা জলপ্রপাত :- বেলপাহাড়ির আরো একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল ঘাঘরা জলপ্রপাত। বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জলপ্রপাত হল এক মনোরম গন্তব্য। "ঘাগরা" নামটি "গাগরা" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ জলে ভরা একটি কলসী, গিরিখাতের আকৃতির কারণে কলসীর মতো। জলপ্রপাতটি কালো পাথরের একটি গিরিখাতের মধ্য দিয়ে গেছে, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে।
ঘাগরা জলপ্রপাত বন্য সবুজ এবং পাথুরে পাদদেশের মধ্যে অবস্থিত, যা দর্শনার্থীদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি আশ্চর্যজনক দৃশ্য প্রদান করে। গ্রামীণ পরিবেশ, রহস্যময় ঝোপ, এবং অত্যধিক শিলা স্থানটির অবর্ণনীয় আভাকে বাড়িয়ে তোলে। বর্ষাকালে, ঘাগরা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, যা অবিলম্বে পিকনিক করতে এবং মিলিত হওয়ার জন্য আসা লোকদের আকর্ষণ করে।
৪. তারাফেনি ব্যারেজ :- বেলপাহাড়িতে অবস্থিত তারাফেনি ব্যারেজ দর্শনার্থীদের দেখার জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান। এটি বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় 5 কিমি দূরে অবস্থিত। এই ব্যারেজের প্রধান আকর্ষন হলো এখানকার নদীর স্রোত যা দেখে সত্যি আপনি অবাক হয়ে যাবেন। এই ব্যারেজ কিন্তু এই পুরো বেলপাহাড়ি এলাকার পানীয় জলের প্রধান উৎস।
৫. কাঙ্কেরঝোড় :- কাঁকড়াঝোর ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬৫ কি.মি দূরে এবং ২৩ কি.মি দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি। যারা যারা জঙ্গল ভালোবাসেন তাদের কাছে এই জায়গাটি একটা স্বর্গরাজ্য। প্রায় ৯০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা ।বিভিন্ন ধরণের গাছ যেমন - শাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ আকাশমনী প্রভৃতি এখানে দেখতে পাবেন । ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড় এবং জঙ্গলের সাথে এই জঙ্গলের যোগাযোগ আছে, তাই বিহীন প্রাণী বিশেষ করে হাতি দলমা থেকে কাঁকড়াঝোরে চলে আসে, ওড়িশা রাজ্য ও এখান থেকে খুবই কাছেই। এখানে আসলে জঙ্গলের সাথে সাথে পুরনো মন্দির, আদিবাসী মানুষ, তাদের সংস্কৃতি খুবই সামনে থেকে অনুভব করতে পারবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন