পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২০টি দর্শনীয় স্থান
ভ্রমণ পিপাসু :- উত্তরে পাহাড় এবং দক্ষিণে সাগর, এরকম ধরণের বৈশিষ্ট্য আমাদের দেশে আর কোনো রাজ্যে হয়তো পাবেন না। উত্তরে যেমন আছে পাহাড়ি দার্জিলিং জেলা তেমনি একদম সর্ব দক্ষিণে আছে সমুদ্র ঘেঁষা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। এই জেলায় পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একমাত্র জেলা যেখানে আপনারা সমুদ্র সৈকত পাবেন, একটা নয় অনেক গুলোই। আজকের ব্লগে আমি সমুদ্র ঘেঁষা এই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সেরা ২০ দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলোচনা করবো, মোটামোটি এই জেলার প্রায় সমস্ত ভ্রমন স্পটকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আর এর বাইরেও কোনো জায়গা যদি বাদ গিয়ে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি এই জেলার ইতিহাসকে একটু জেনে রাখা ভালো। এই জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান শহর হল তমলুক যা প্রাচীন কালে তাম্রলিপ্ত নামে পরিচিত ছিল। স্থানীয় লোককাহিনী অনুসারে তাম্রলিপ্ত নামটি মায়ুরা-ধজা (ময়ূর) রাজবংশের রাজা তাম্রধ্বজা (যার অর্থ তামা পতাকা / প্রতীক রাজা) থেকে এসেছিল। এই তাম্রলিপ্তের ইতিহাস বহু পুরোনো প্রাচীনকাল থেকেই এই তাম্রলিপ্ত একটি সমৃদ্ধ বন্দর ছিল তখন মেদিনীপুরের নাম অস্তিত্বে আসে নি। মৌর্য যুগ তার পূর্ব থেকে গুপ্ত, সুলতানী মুঘল যুগ হয়ে ব্রিটিশ আমল ধীরে ধীরে এই তাম্রলিপ্ত বন্দরে অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও বিপ্লবী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে পরিনত। এই জেলা থেকে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এসেছে - তার মধ্যে দুজন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল এবং মাতঙ্গিনী হাজরার নাম আমরা সকলেই জানি।
স্বাধীনতার পর ভারতের অন্যতম বৃহত্তম জেলা ছিল আমাদের রাজ্যের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ২০০২ সালে মেদিনীপুর জেলাকে ভেঙে পূর্ব ও পশ্চিম দুটি জেলার সৃষ্টি করা হয়। যা বর্তমানে ২৩ টি ব্লক নিয়ে গঠিত এবং সদর শহর হল তমলুক। আসুন এবার আমরা এক এক করে জেনে নি এই জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান, সাথে আমি এই জায়গা গুলো সম্পর্কে সমস্ত তথ্য এবং আপনারা কেমন করে এই জায়গা গুলো ঘুরে আসতে পারবেন এই ব্লগে তা বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করে দেবো। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাদেও আমাদের রাজ্যের বাকি জেলা গুলো ভ্রমনস্থান নিয়ে পৃথক পৃথক ব্লগ আছে আপনারা, আপনাদের পছন্দ জেলা গুলোর ব্লগ গুলো দেখে নিতে পারেন।
১. তমলুক রাজবাড়ি :- স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান তমলুক রাজবাড়ী। ১৯০৫ থেকে শুরু হওয়ার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আইন অমান্য আন্দোলন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে তমলুক রাজবাড়ি ও রাজবাড়ির সদস্যদের। তমলুকের ইতিহাস কিন্তু খুবই প্রাচীন। মহাভারতের যুগ থেকে শুরু করে মধ্যযুগের তাম্রলিপ্ত বন্দর শহর হয়ে আজকের তমলুক।
তমলুক শহরের পাশাপাশি তমলুক রাজবাড়ির ও ইতিহাস বহু প্রাচীন, মহাভারতের সময় থেকে যে রাজবাড়ির অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায় তার বর্তমানে অবস্থা খুবই সঙ্গিন, যদিও বর্তমানে এই রাজবাড়িটির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। শোনা যায় তাম্রলিপ্ত ময়ূর বংশীও রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ রায় ১৮৩৭ সালে রাজবাড়িটি তৈরি করার কাজ শুরু করেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে যে লবন সত্যাগ্রহ হয়েছিলো তাতে প্রতক্ষ্য অংশগ্রহণ করেছিলেন এই রাজবাড়ির সদস্যরা, এমনকি লবন সত্যাগ্রহের জন্য তমলুক শহরে যে মিছিলটি বের হয়েছিলো সেটা এই রাজবাড়ির গেট থেকেই শুরু হয়েছিলো, ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্বয়ং একবার এই বাড়িতে এসেছিলাম।
এই রাজবাড়িতে আপনি খুবই সহজেই ট্রেনে চলে আসতে পারবেন। হাওড়া থেকে হলদিয়া লোকাল ধরে তমলুক স্টেশনে নেমে একটা টোটো করে চলে আসুন এখানে, এছাড়াও আপনারা মেদিনীপুর লোকাল দিয়ে মেচেদা স্টেশনে নেমে বাসে চলে আসতে পারেন এই রাজবাড়িতে।
২. বর্গভীমা মন্দির :- কলকাতা শহরের খুব কাছেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুকে অবস্থিত এই সতীপিঠ। পৌরাণিক মতে এখানে দেবীর পায়ের নূপুর পড়ছিল। এই বর্গভীমা মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা কপালিনী।
আপনি কলকাতা বা হাওড়া থেকে বাস বা লোকাল ট্রেন করে সোজা চলে আসতে পারেন তমলুকে। তারপর স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে টোটো ধরে এই মন্দিরে চলে আসতে পারেন।
৩. ময়নাগড় :- পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় যদি কোনোদিন ঘুরতে আসার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে এই জায়গাটিকে কিন্তু কোনো ভাবেই বাদ একেবারেই দিবেন না। জায়গাটি হল ময়নাগড় An Island Within an Island বা দ্বীপের মধ্যে দ্বীপ, সেটা নিয়ে পড়ে আসছি। ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, এবং ধর্মীয় সবদিক থেকেই এই ময়নাগড় জায়গাটির সম্পর্ক আছে, এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গাটি। মঙ্গলকাব্য ধর্মমঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র লাউসেনের রাজপ্রাসাদ ছিল এই ময়নাগড়ের ভেতরে, এছাড়াও এখানে আছে কয়েকশো বছরের পুরোনো দুটি মন্দির।
এই ময়নাগড় জায়গাটি এক অদ্ভূত জায়গা, এরকম জায়গা আমাদের রাজ্যে হয়তো আর কোথাও পাবেন না। দুটি পরীখা দ্বারা ঘেরা এই জায়গাটি, হয়তো বাইরের শত্রু হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই এই ব্যবস্থা। পরিখা দুটি হল মাকড়দহ ও কালিদহ। মাকড়দহ আপনি পায়ে হেঁটেই যেতে পারবেন রাস্তা করা আছে কিন্তু কালিদহ পার করে ময়নাগড় দ্বীপে পৌঁছতে আপনাকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। আপনি মাঝির সাথে কথা বলে পুরো কালিদহ খালটি একবার ঘুরে নিতে পারেন, চারদিকেই অনেকে নারকেল গাছের সারি দেখতে পাবেন অনেকটা কেরালার আলেপ্পির ব্যাকওয়াটারস্ মত ফিল হবে আপনাদের। এরপর আপনারা ময়নাগড়ে যেতে পারেন, রাজবাড়ির খুবই সামান্য অংশই এখানে এখন অবশিষ্ট আছে তাছাড়া এখানে প্রায় ৪০০ - ৫০০ বছরের পুরনো দুটি মন্দির দেখতে পাবেন একটি শ্যামসুন্দর জিউ এর মন্দির এবং দ্বিতীয়টি লোকেশ্বর শিব মন্দির।
মেদিনীপুর জেলায় এরকম অনেক গড় আপনারা দেখতে পাবেন যেখানে রাজা বা জমিদাররা তাদের রাজত্ব চালাতো, ময়নাগড় ও তেমনি একটি, কিন্তু বাকি জায়গা গুলো থেকে একদমই ভিন্ন। ব্রিটিশরা প্রথম বিদেশী হিসেবে এই ময়নাগড়ে প্রবেশ করেছিলো। আপনি যদি এখানে আসতে চান তাহলে রাসের সময়ে এখানে আসার চেষ্টা করবেন, রাস কিন্তু খুব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। অন্য সময় আসলে একদমই ভিড়ভাড় থাকে না, এবং আপনাকে নৌকা রিজার্ভ করে তারপর ময়নাগড়ে পৌঁছতে হবে।
এবার আসি আপনি এখানে আসবেন কেমন করে অনেক ভাবেই এখানে আসা যায়। জায়গাটি সদর শহর তমলুক থেকে প্রায় ২০ কি.মি দূরে ময়না ব্লকে অন্তর্গত। আপনি তমলুক পর্যন্ত ট্রেনে সেখানে থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিমতৌড়ি এখানে আসতে পারেন। অথবা আপনারা লোকাল ট্রেনে মেচেদাতে নেমে, মেচেদা থেকে বাসে নিমতৌড়ি, তারপর নিমতৌড়ি থেকে টোটো বা ছোটগাড়ি করে এই ময়নাগড়ে।
৪. মহিষাদল রাজবাড়ি :- তমলুক রাজবাড়ির পর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দ্বিতীয় যে রাজবাড়িটি থেকে আপনারা ঘুরে যেতে পারেন সেটা হলো মহিষাদল রাজবাড়ি। মহিষাদল নামকরনের পেছনে এই এলাকার আকৃতি মহিষাকৃতি অনেকে বলে থাকে, আবার কারো কারো মতে এই পুরো এলাকায় মাহিষ্যদের প্রাধান্য ছিল এরকম নামকরণ হয়েছে I এর মধ্যে কোনটা সঠিক সেটা বলা কঠিন।
মহিষাদল রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জনার্দন উপাধ্যায় তিনি ১৬০০ শতকে ব্যাবসার জন্য মহিষাদলের উপকন্ঠে গেঁওখালিতে আসেন, তিনি সেই সময়কার এখনকার রাজা কল্যাণ রায় চৌধুরী থেকে জমিদারি কিনে এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়কার মোগল সম্রাট আকবরের খুবই প্রিয় পাত্র ছিলেন জনার্দন উপাধ্যায়। এই বংশেরর নন্দলাল উপাধ্যায়ের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তার মেয়ে ও জামাই এর ছেলে গুরুপ্রসাদ গর্গ রাজা হোন এবং এরপর থেকে গর্গদের রাজত্ব শুরু হয়।
মহিষাদল রাজবাড়ির প্রবেশমুল্য ১০ টাকা, এই টিকিটের বিনিময়ে আপনি একতলা পর্যন্ত রাজবাড়ির সংগ্রহশালা দেখতে পারবেন। রাজ বাড়ির বাকি অংশ হোটেলে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে এখানে আপনি চাইলেই খুবই এলাহি ভাবে থাকতে পারেন। রাজবাড়ির সংগ্রহশালাটিও আপনাদের খুবই ভালো লাগবে। হাওড়া থেকে এই রাজবাড়ির দূরত্ব ১০৬ কি.মি, সবচেয়ে ভালো হবে আপনি হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেন ধরে মহিষাদলে চলে আসুন। এছাড়াও অপনারা সহজে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রায়চক, ডায়মন্ড হারবার বা হাওড়ার গাদিয়ারা থেকে ফেরি যোগে গেঁওখালিতে এসে মহিষাদল চলে আসতে পারেন।
৫. ক্ষীরাই :- বাংলার ফুলের উপত্যকা :- আমাদের রাজ্যের প্রায় অনেক জায়গায় বিরাট এলাকা জুড়ে ফুলের চাষ হয়ে থাকে, কিন্তু সৌন্দর্য ও জনপ্রিয়তার বিচারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরাই এর ধারে কাছে কিন্তু কেউ নেই। নদিয়া জেলার রানাঘাটের কাছে চাপড়া গ্রামে কিন্তু এরকমই ফুলের চাষ হয়ে থাকে তাও আবার ক্ষীরাই থেকে বেশী এলাকা জুড়ে কিন্তু এই জায়গাটি ক্ষীরাই এর মতো এতটা জনপ্রিয় না। ক্ষীরাই তে ফুলের আরো বেশি পাবেন, সেটা অন্য কোথাও আর পাবেন না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার কাছে কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত ক্ষীরাই (Kshirai) একটি স্বপ্নের গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি ছোট্ট স্টেশন। গ্রামটির প্রকৃত নাম কিন্তু দোকন্দা, কিন্তু ক্ষীরাই স্টেশনের জন্য নামটা ক্ষীরাই হয়ে গেছে।
এখানে আসার পর সত্যি আপনাদের দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। একবার আসলে দ্বিতীয়বার অবশ্যই আসার ইচ্ছা করবে। পুরো কাঁসাই বা কংশাবতী নদীর দুধারে দেখতে পাবেন বিভিন্ন ধরণের খালি ফুলের গাছ আর ফুলের গাছ। বিঘার পর বিঘা জমিতে ফুটে আছে হরেক রকমের রঙ-বেরঙের ফুল। এতো রকম ফুলের চাষ এবং তার বিচিত্র রূপ, কখন ২-৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাবে বুঝতে পারবেন না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এমনিতেই অনেক জায়গাতেই এরকম ধরনের অনেকটা একজন জুড়ে ফুলের চাষ হয়ে থাকে কিন্তু ক্ষীরাই এর মতো এতটা না।
ক্ষীরাই স্টেশনে নেমে প্ল্যাটফর্মের পিছনের দিকের রাস্তা ধরে সোজা হাঁটতে হবে প্রায় দেড় কিলোমিটার। কোনো পাকা রাস্তা নেই আছে লাল মাটির কাচা রাস্তা। রেল লাইনের ধার বরাবর ও আপনি হেঁটে যেতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাদের ট্রেনের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারন এটা মেন লাইন একটু পর পরই ট্রেন আসতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে সামনেই কাঁসাই নদীর ব্রিজ পাবেন, তারপরই পৌঁছে যাবেন ফুলের স্বর্গরাজ্যে। এই ক্ষীরাইকে সেই কারণে বাংলার ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স হিসেবেও ডাকা হয়।
এখানে আসলে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানে আসার চেষ্টা করবেন তার পরে আসলে খুব একটা ভালো ফুল পাবেন না। আর সাথে সাথে খুব সকাল সকাল আসলে ভালো হয়। হাওড়া থেকে মেদিনীপুর বা খরগপুর লোকাল ধরে ক্ষীরাই স্টেশনে নামতে হবে সময় লাগবে ২ ঘন্টা, পাঁশকুড়ার পড়েই স্টেশনই হল এই ক্ষীরাই। শীতের সময়ে কিন্তু এখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয় বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোতে এটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
৬. দ্বিতীয় তাঁরাপিঠ :- তাঁরাপিঠের নামতো আমরা সকলেই জানি। ৫১ সতীপিঠের অন্যতম বীরভূমের এই মন্দির। এই তাঁরাপিঠ মন্দিরের আদলেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার চকগোপালপুর গ্রামে আরো একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে যাকে দ্বিতীয় তাঁরাপিঠ বা নতুন মন্দির নামে পরিচিত, এই পয়েন্টে সেই মন্দিরের তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
এই মন্দিরটি একদমই গ্রাম্য পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে চারিদিকে সবুজ এবং চাষের জমি দিয়ে ঘেরা একটা সুন্দর পরিবেশে। তাই এই জেলায় আসলে পাঁশকুড়ার খুবই কাছে অবস্থিত এই তারা মায়ের মন্দির থেকে চাইলেই ঘুরে যেতে পারেন, মায়ের দর্শনের সাথে সাথে জায়গাটি ও বেশ ভালোই লাগবে। এবার আসি আসবেন কেমন করে - প্রথমত আপনি কলকাতার দিক থেকে আসেন তাহলে হাওড়া থেকে লোকাল ধরে পাঁশকুড়াতে নামতে hhe, স্টেশনের উল্টো দিকেই আছে বাস স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে ঘাটাল লাইনের যেকোনো বাসে উঠে পড়ুন, আপনাদের নামতে হবে যশোরা কালিবাজার মোড়ে ভাড়া ২০ টাকা, শেখান বা দিকে যেতে হবে টোটো বা ট্রেকার করে যেতে হবে বা দিকে চকগোপালপুরে, দূরত্ব মোটামোটি ৫ কি.মি এখানেই এই মন্দিরটি অবস্থিত ।
৭. কাজলাগড় রাজবাড়ি :- পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর ১ ব্লকের অন্তর্গত বাজকূল মোড়ের কাছেই অবস্থিত আরো একটি অচেনা, অজানা জায়গা - কাজলাগড় রাজবাড়ি, জায়গাটি সম্পর্কে অনেকে হয়তো জানেন না। মেদিনীপুরের সুজামুঠা বংশের রাজাদের অধীনে ছিল এই রাজবাড়ি, এই বংশের রাজা মহেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে নতুন করে এই রাজবাড়ি নির্মাণ ও ভেতরে মন্দির ও নির্মাণ করা হয়।
প্রায় কয়েকশো বছরের পুরনো এই রাজবাড়ির বর্তমান অবস্থা খুবই জরাজির্ণ। বট ও অশশ্থ গাছে ছেয়ে গেছে পুরো রাজবাড়ি চত্বর। কাজলা কালিমার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই রাজবাড়ি নির্মাণ হয়েছিলো বলে এর নাম কাজলাগড় রাজবাড়ি।
আপনি এখানে যদি আসতে যদি আসতে চান তাহলে ট্রেন বা সড়কপথে দু ভাবেই আসতে পারেন এখানে। ট্রেনে আসলে দিঘার যেকোনো ট্রেন ধরে আপনাদের নামতে হবে দেশপ্রাণ স্টেশনে আর সড়কপথে আসতে চাইলে নন্দকুমার মোড় থেকে দিঘা বা কাঁথিগামী রাস্তা দিয়ে যেতে হবে বাজকূলে, এই বাজকূল মোড় থেকেই বাম দিকে যেতে হবে ভগবানপুর BDO অফিস, BDO অফিসের ঠিক পেছনেই আছে এই রাজবাড়িটি সামনে থেকে দেখে আপনাদের মনে হবে না এখানে একটি রাজবাড়ি আছে, BDO অফিসের পেছনে গেলেই দেখতে পাবেন এটিকে, প্রবেশ মুল্য মাত্র ৫ টাকা।
৮. পঁচেতগড় রাজবাড়ি :- পঁচেতগড় রাজবাড়ি, এই রাজবাড়িটির নাম হয়তো আপনারা অনেক শোনেনি কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের এই ৩৫০ বছরের পুরনো রাজবাড়িটি এখনো পুরনো গৌরব ও আভিজাত্য বজায় রেখে এখনো দাঁড়িয়ে আছে, আরো একটা আকর্ষনীয় ব্যাপার হলো এই রাজবাড়িতে এখনো রাজ বাড়ির বংশধরেরা বসবাস করছে, এবং আপনি চাইলেও একদিনের জন্য এই রাজ বাড়িতে থাকতেও পারেন।
এই জমিদারি যার হাত দিয়ে শুরু হয় বলা যায় বা এই রাজবাড়ির নাম নিলে যার নামটা সবার আগে আসে তিনি হলেন মুরারিমোহন দাস মহাপাত্র, তিনি ছিলেন ওড়িশার পুরীর অধিবাসী। ষোড়শ শতকে ঔরঙ্গজেবের আমলে তিনি তার সভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন, তিনি তার পারদর্শীতার সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে খুশি করেন, যার ফলস্বরূপ ঔরঙ্গজেব তাকে পটাশপুর পরগনার প্রদান করেন। সেই মুরারিমোহন দাস মহাপাত্রের পঞ্চম প্রজন্ম এখনো এই বাড়িতে বসবাস করছেন। এই রাজবাড়িতে রাজ বাড়ির ইস্টদেবতা কেশবরায় জিউ এক অসাধারন মন্দির আছে এছাড়াও আছে ঝুলন মন্দির, দুর্গা পূজার সময়ে এখানেই দুর্গা পূজা করা হয়ে থাকে।
এবার আসি আপনারা এখানে আসবেন কেমন করে জায়গাটি পটাশপুর ও এগরার ঠিক মাঝে অবস্থিত। পটাশপুর থেকে যে রাস্তাটি এগরা বা দিঘার দিকে গেছে সেই রাস্তায় পড়বে পঁচেত মোড় সেই মোড় থেকে বাঁ দিকে কিছুটা গেলেই এই পঁচেতগড় রাজবাড়ি। ট্রেনে আসতে চাইলে আপনাকে কাঁথিতে নামতে হবে তারপর এগরা হয়ে এই রাজবাড়িতে আসতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যদি দিঘা ঘুরতে আসেন তাহলে দিঘা ঘুরার সাথে সাথে এই পঁচেতগড় রাজবাড়ি এবং কাজলাগড় রাজবাড়ি দুটি ও একসাথে দেখে ফেলতে পারেন দুটি দিঘার আসে পাশেই অবস্থিত, সমুদ্রের সাথে সাথে ইতিহাসের হাতছানি ও কিছুটা পেয়ে যাবেন আলাদা একটা এক্সপেরিয়েন্স হবে।
৯. দিঘা :- ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালির "দিপুদা" ভ্রমণের লিস্টে দিঘা হল তার মধ্যে একটি। দিঘা বাঙ্গালির কাছে অন্যতম প্রিয় একটা জায়গা। এখানে বেড়াতে যাওয়ার জন্য যাতায়াত, থাকার জায়গা, ছুটি ম্যানেজ সবই সহজে হয়ে যায়। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, বাঙালি পর্যটকদের কাছে দিঘা এক দারুণ ভরসা। হাতে দুই দিন থাকলেই দিঘা ঘোরা যায়। সকালে ভ্রমণ আর বিকেলে সমুদ্রের ধারে বসে প্রকৃতির রূপ দর্শন। আর সবচেয়ে বড় কথা দিঘা ঘুরতে পারেন একেবারে নিজের বাজেটের মধ্যে। হাজার দুয়েক টাকা পকেটে থাকলেই দিঘা ঘুরে নেওয়া যায় অনায়াসে। বাজেট সামান্য বাড়ালে তো বিলাস বহুল ভ্রমণ হয়ে যায়। প্রায় ৭ কি.মি দীর্ঘ দিঘা দিঘার সমুদ্র সৈকত বাড়তে বাড়তে এখন নিউ দিঘা পর্যন্ত চলে গিয়েছে। দিঘাতে আসলে দুটি সমুদ্র সৈকত পাবেন একটি - ওল্ড দিঘা এবং একটি নিউ দিঘা। এছাড়াও দিঘাতে বেড়াতে আসলে যে জায়গা গুলো ঘুরে নিতে পারেন সেগুলো হলো -
১. অমরাবতী পার্ক :- দিঘা যুব আবাসনের পাশেই রয়েছে অমরাবতী পার্ক। টিকিট মাত্র ১০ টাকা। দিঘা গেলে এই পার্কে অবশ্যই যান। পার্কটি বেশ সুন্দর। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। অমরাবতী পার্কের মাঝখানে রয়েছে একটি ছোটো হ্রদ। পার্কজুড়ে রয়েছে প্রচুর ফুলের গাছ। পার্কে রয়েছে রোপওয়ে।
২. দিঘা মোহনা:- দিঘার অন্যতম দর্শণীয় স্থান হল মোহনা৷ দিঘা থেকে মিনিট ২০-র হাঁটা পথে পৌঁছে যেতে পারেন দিঘার মোহনায়। চম্পা নদী ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমস্থল এটি। স্থানটি খুব সুন্দর। বিশেষ করে ভোর বেলা এই জায়গাটির সৌন্দর্য অসাধারণ। সন্ধ্যা এখানে সূর্যাস্ত দেখতেও দারুণ লাগবে। সকালে এই স্থান একটি ব্যস্ত মাছের বাজার।
৩. দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র :- দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই বিজ্ঞান কেন্দ্র খোলা থাকে। এর প্রবেশ মূল্য ২৫ টাকা। এখানকার মূল আকর্ষণগুলি হল জীবন বিজ্ঞান, প্রতিফলনের গ্যালারি, 3D থিয়েটার, আলো এবং শব্দ সহ জুরাসিক পার্ক, জাতীয় বিজ্ঞান শিবির এবং বিজ্ঞান পার্ক। এছাড়াও বিজ্ঞান কেন্দ্রের অসংখ্য কার্যকলাপও দর্শককে মুগ্ধ করে।
৪. দিঘা অ্যাকোরিয়াম :- অমরাবতী থেকে দশ মিনিট দূরে রয়েছে দিঘা অ্যাকোরিয়াম। যেখানে সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বেশ সুন্দর একটি দর্শনীয় স্থান এখানে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। কোনও প্রবেশ মূল্য নেই। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই অ্যাকোরিয়াম খোলা থাকে।
৫. ঢেউসাগর :- দিঘায় আসা পর্যটকদের বিনোদনের ২০১৯ সালে উদ্বোধন হয়েছে এই ঢেউসাগর বিনোদন পার্কটি। নিউ দিঘা সমুদ্র সৈকতের খুবই কাছে এই পার্কটি অবস্থিত, যা দিঘার মানচিত্রে নতুন পালক। আপনি নিউ দিঘা সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ মিনিট পায়ে এই ঢেউসাগর পার্কে চলে আসতে পারেন। পার্কটি সমুদ্রের একদম ধারে অবস্থিত, এবং সমুদ্র থেকে অনেকটা উচুতে, তাই এখান থেকে আপনি অনেকটা দূরের সমুদ্রের ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। টিকিট মুল্য ১০ টাকা আর ভেতরে আছে ছোটো থেকে বড় সমস্ত বয়সিদের জন্য বিনোদনের অনেক কিছু। এখান আসলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন বিকেলে আসার তাহলে দিন ও রাত দুটি ভিউই উপভোগ করতে পারবেন, এবং সেটাই সবচেয়ে বেটার হবে।
৬. নেচার ট্রেইল :- আমাদের দেশ তথা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হারিয়ে যাওয়া সব পশু-পাখি, গাছপালা দেখা ও তার সম্বন্ধে জানার সুযোগ করে দিতে দিঘায় গড়ে উঠছে ‘পায়ে পায়ে প্রকৃতি দর্শন’ (Nature trial)। নিউ দিঘার যাত্রানালায় এই পার্কটি গড়ে উঠেছে। খুবই শীঘ্রই এই পার্ক সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
৭. তালসিরি সি বীচ:- এই স্থানটি লাল কাঁকড়ার জন্য বিখ্যাত। এখানে অবশ্যই যাবেন। নিউ দীঘা থেকে মাত্র ৮ কিমি রাস্তা।
১০. বিচিত্রপুর :- আপনারা দিঘা ঘুরতে এসে পার্শ্ববর্তী উড়িষ্যা রাজ্যের কিছু সুন্দর জায়গা যদি ঘুরতে যেতে চান তার তাহলে এই বিচিত্রপুর জায়গাটি বেস্ট জায়গা হবে, দিঘা যেহেতু একদমই উড়িষ্যা বর্ডার এলাকায় তাই দিঘা থেকেই এই বেশ কয়েকটি জায়গায় আপনারা চাইলেই যেতে পারেন। দিঘার ভিড়ভাড় ও কোলাহল থেকে দূরে একদম শান্ত নির্জন পরিবেশে অনেকটা সময় কাটাতে চাইলে এক জায়গাটি একদমই আদর্শ। বিচিত্রপুর এসে এখানকার বৈচিত্র্য আপনাকে অভিভূত করে দেবে। দুদিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সারি, ছোটো বড় অনেক খাড়ি, আর মধ্যেই স্পিড বোটে করে ভ্রমণ, লাল কাঁকড়া, সুবর্ণরেখা নদীর মোহনা, ঝাউবন, নির্জন দ্বীপ, সব মিলে যেনো এক বৈচিত্র্যময় জায়গা এই বিচিত্রপুর।
দিঘা থেকে বিচিত্রপুর এর দূরত্ব ১৫ কি.মি আর যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। আপনি দিঘা থেকে দরদাম করে ৮০০-১০০০ মধ্যে একটা অটো রিজার্ভ করে খুবই সহজে চলে আসতে পারেন এখানে আর আসার সময়ে অবশ্যই জোয়ারের টাইমটা দেখে আসবেন নাহলে বোটিং করতে পারবেন না। বোটিং জন্য দু ধরনের বোট আছে ৬ সিট - ১২০০ এবং ৮ সীট ১৪০০ টাকা, কম বেশি হতেও পারে। বোট আপনাকে একেবারে সুবর্ণরেখা নদীর মোহনা পর্যন্ত নিয়ে যাবে অনেকটা সুন্দরবনের ফিল আসবে এখানে আসলে।
১১. চন্দনেশ্বর মন্দির :- আপনারা দিঘা ঘুরতে এসে পার্শ্ববর্তী উড়িষ্যা রাজ্যের কিছু সুন্দর জায়গা যদি ঘুরতে চান তার মধ্যে একটি হলো এই চন্দনেশ্বর মন্দির, এটি দিঘার একদমই কাছে, বিচিত্রপুর যাওয়ার পথে এই মন্দিরটি পড়বে, আপনি যদি অটো রিজার্ভ করে বিচিত্রপুর যেতে চান তাহলে যাওয়ার বা আসার পথে এই মন্দিরটি দেখে নিতে পারেন, ভিড় একদমই কম থাকে, মন্দিরে প্রবেশ, পূজা, জুতো রাখা এবং গাড়ি পার্কিং জন্য কিছু টাকা ওনাদের দিতে হবে, এটুকুই। বিচিত্রপুর না গেলেও শুধু এই মন্দিরটা থেকেও ঘুরে যেতে পারেন।
১২. উদয়পুর :- দিঘা ঘুরতে এসে দিঘার পাশাপাশি এই উদয়পুর সমুদ্রসৈকতে যদি না আসেন তাহলে ভালো একটা জায়গা কিন্তু আপনার মিস করবেন। দিঘা থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে এই উদয়পুর সমুদ্র সৈকতটি অবস্থিত। আরো একটা কথা বলে রাখি এই উদয়পুর সমুদ্র সৈকতটি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশ্যা দুটি রাজ্যের মধ্যেই আছে। আপনি দিঘা সমুদ্র ধার বরাবর হেঁটে বা বাইকে সোজা চলে আসতে পারেন এই বিচে যা কিনা দুটি রাজ্যের মধ্যেই বিস্তৃত।
১৩. মন্দারমনি : - দিঘার পাশাপাশি কোলকাতা থেকে সমুদ্র সৈকতে উইকএন্ড এ ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা মন্দারমণি। মাত্র ৪ ঘন্টার মধ্যে খুব সহজেই মন্দারমণি সি বিচ পৌঁছানো যায়। মাছভাজা, কাঁকড়া খেতে খেতে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত সমুদ্র স্নান, দেখতে দেখতে ২ দিন কিভাবে কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না।
দিঘাকে যদি এভয়েড করতে চান দিঘার ভিড়ভাড় ও কোলাহলকে দূরে সরিয়ে আরো লাক্সারি ভাবে এক থেকে দুটো দিন কাটাতে চান তাহলে এই মন্দারমনি আপনাদের জন্য বেস্ট হবে। মন্দারমনির প্রধান আকর্ষন হলো এখানকার বিভিন্ন ধরণের রিসর্ট। এখানে মিডিয়াম থেকে লাক্সারি দু ধরনের রিসর্ট পেয়ে যাবেন, যেখানে সমস্ত ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবেন যার একটু বড় ডিমান্ড হল সুইমিং পুল। আর রিসর্ট গুলো থেকে সুন্দর এত কাছে যে আপনি
রিসোর্টে বসেই সাগরের অনুভূতি নিতে পারবেন। এই মন্দারমনি থেকে আপনারা আবার আসে পাশেই অবস্থিত কিছু সমুদ্র সৈকতেও চাইলে যেতে পারেন যেমন তাজপুর, শঙ্করপুর প্রভৃতি। এছাড়াও এখান থেকে আপনারা বগুরান জলপাই, লাল কাঁকড়া বিচ, কপালকুণ্ডলা মন্দির, দরিয়াপুর লাইট হাউস প্রভৃতি জায়গা ও ঘুরতে যেতে পারেন। মন্দারমনির নিকটবর্তী স্টেশন ও শহর হল কাঁথি। সড়কপথে আসলে আপনি কলকাতা থেকে মন্দারমনির সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিমি, এবং সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। কাঁথি থেকে চাউলখোলা হয়ে মন্দারমণি কাঁথি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাসে চাউলখোলা। চাউলখোলা থেকে মাত্র ১২ কিমি রাস্তা। চাউলখোলা থেকে অটো ভাড়া করলেই পৌঁছে যাবেন মন্দারমণি। একজনের ভাড়া লাগে ৩০ টাকার মতো।
১৪. শঙ্করপুর :- দিঘা থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার পূর্বে এই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আরো আবিষ্কার হল শঙ্করপুর। এটি মুলত একটি মৎস্য বন্দর কিন্তু পর্যটকদের আগমন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শঙ্করপুর এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। এখানে এখন হোটেল, ট্যুরিস্ট লজ এবং অনান্য অনেক সুযোগ সুবিধা এখানে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও অন্যান্য থাকার ব্যবস্থা যেমন ফিশারি বিভাগের গেস্ট হাউস এবং বেনফিশের অধীনে বিভিন্ন লজ এবং আবাসন পেয়ে যাবেন এখানে।
যদি ভিড়ভাট্টা আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে আদর্শ গন্তব্য শঙ্করপুর। সমুদ্রের স্বাদ পাবেন, আবার দিঘার মতো এতো মানুষের সমাগম হৈ-হল্লা এখানে নেই। কলকাতা থেকে এখানে আসতে হলে আপনাকে প্রথমত দিঘা বা রামনগর পৌঁছতে হবে, তারপর দিঘা-কাঁথি রোড হয়ে পৌঁছতে হবে রামনগর সেখান থেকে আসতে হবে এখানে, সেই জন্য আপনি গাড়ি বা অটো ভাড়া করে নিতে পারেন। ধর্মতলা থেকে আপনি এই শঙ্করপুর আসার জন্য বাস ও পেয়ে যাবেন। আপনাকে দিঘার রামনগরে নেমে পড়তে হবে।
১৫. তাজপুর :- দিঘা, শঙ্করপুর এবং মন্দারমনির পর এই পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সমুদ্র সৈকতটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখনও নির্জনতা ধরে রেখেছে তাজপুর। তবে কত দিন ধরে রাখতে পারবে সেটা বলা যাবে না, দিঘার মত পরিণত হতেও পারে, যতই নাম ছড়িয়ে পড়ছে তাজপুরের ততই গজিয়ে উঠছে হোটেল।
দিঘা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বালিসাই। সেখান থেকে এই তাজপুরের দূরত্ব ৩ কিমি। ওই ৩ কিমি পথে কোনও বসতি নেই। চোখে পড়বে লবন তৈরির প্রকল্প। সমুদ্রের জল ঘিরে রেখে কী ভাবে লবন তৈরি হয় দেখা যাবে। এটি মন্দারমণি ও শঙ্করপুর এর মাঝে অবস্থিত। পর্যটন কেন্দ্রটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পর্যটন মহলে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাজপুরে পর্যটনের প্রসার ও একটি সমুদ্র বন্দর নির্মানের পরিকল্পনা নিয়েছে।
১৬. জুনপুট :- পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা থেকে ৪০ কি.মি দূরে এবং কাঁথি থেকে প্রায় ১০ কি.মি দূরে দেশপ্রাণ ব্লকের অন্তর্গত জুনপুট একটি মৎস্যবন্দর ও সমুদ্র সৈকত। তার পাশাপাশি এই জুনপুট আরো একটি কারণে আমাদের কাছে পরিচিত সেটা হলো এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র আছে। যেটা সম্পর্কে আমরা অনেকই প্রায় জানি না। ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য আদর্শ বেলাভূমি। যেহেতু দিঘা o মন্দারমনি থেকে এই জায়গাটি খুব একটা দূরে না তাই আপনি এই দুটি জায়গা থেকেও এখানে চলে আসতে পারেন। জুনপুট লাগোয়া আর একটি সৈকত বাঁকিপুট যেটা জুনপুট থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এখানে দেখার মত পাবেন ঝাউবন, অনেক ধরণের পাখি, এবং লাল কাঁকড়া। থাকার জন্য সরকারি মৎস্য দফতরের গেস্ট হাউস এবং কিছু বেসরকারি হোটেল, রিসর্ট পেয়ে যাবেন। নিকটবর্তী স্টেশন হলো কাঁথি।
১৭. চাঁদপুর সমুদ্র সৈকত :- শঙ্করপুর থেকে তাজপুর যাওয়ার পথে ঠিক মাঝে এই চাঁদপুর সমুদ্র সৈকতটি অবস্থিত। এটি শঙ্করপুর থেকে ২ কি.মি এবং তাজপুর থেকে ২ কি.মি দূরে দুটি জায়গার ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে এটি অবস্থিত। আপনি শঙ্করপুর ও তাজপুর দেখার পাশাপাশি এই জায়গাটি ও একসাথে দেখে নিতে পারেন, এখানেও থাকার কোনো অসুবিধা নেই, বিভিন্ন বেসরকারি গেস্ট হাউস ও হোটেল এখানে পেয়ে যাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন