জলপাইগুড়ি জেলার সেরা ১০ টি জনপ্রিয় স্থান
ভ্রমণ পিপাসু :- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জেলা জলপাইগুড়ি। কি নেই এই জেলায়, পাহাড়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চল, বিভিন্ন খরস্রোতা নদী, জঙ্গল, চা বাগান, বন্য জীবজন্তু, পশুপাখি, প্রকৃতি যেনো উজাড় করে দিয়েছে এই জেলার ওপরে। জেলা সদর থেকে যেদিকেই যান না কেনো প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। যার টানে গোটা রাজ্য থেকেই পর্যটকেরা এই জেলার বিশেষ করে ডুয়ার্স এলাকায় ছুটে আছে।এই জেলার উত্তরে আছে কালিংপঙ জেলা ও ভুটান, দক্ষিণে আছে কোচবিহার জেলা ও বাংলাদেশ, পূর্বে আছে আলিপুরদুয়ার জেলা এবং কোচবিহার জেলা , এবং পশ্চিমে আছে দার্জিলিং জেলা। আজকের এই ব্লগে জলপাইগুড়ি জেলার সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান নিয়ে আলোচনা করবো।
এই জলপাইগুড়ি জেলা পূর্বে এক বৃহৎ জেলা ছিল। ২০১৪ সালের ২৫শে জুন রাজ্য সরকারে পক্ষ থেকে এই জেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে পূর্বের অংশ নিয়ে নতুন আলিপুরদুয়ার জেলার সৃষ্টি করা হয়েছে, তারফলে ডুয়ার্সের অনেকটা অংশ এই আলিপুরদুয়ার জেলায় চলে যায়। এই জেলার দুটি মহকুমা একটু জলপাইগুড়ি সদর এবং উত্তরের ব্লক গুলোকে নিয়ে মালবাজার মহকুমা। ভ্রমণ পিপাসুর জেলা ভিত্তিক সিরিজে আজকে এই জেলার ১০ টি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান এক এক করে তুলে ধরবো, তার মধ্যে যেমনটি থাকবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর কয়েকটি স্থান তার পাশাপাশি থাকবে এই জেলার কয়েকটি বিখ্যাত প্রাচীন মন্দির। এই জেলায় কিন্তু বেশ কয়েকটি বিখ্যাত, প্রাচীন মন্দির আছে যেগুলো সবগুলোই তুলে ধরা হবে এই পোস্টে, আর আমাদের রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলা ধরে দর্শনীয় স্থান গুলো তুলে ধরা হচ্ছে, না দেখে থাকলে ওয়েবসাইটের হোমে গিয়ে অবশ্যই দেখে আসতে পারেন, আপনাদের নিজেদের পছন্দমত জেলা অনুযায়ী।
জল্পেশ মন্দির :- উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম মন্দিরের নাম যদি নেওয়া যায় তাহলে সবার প্রথম সারিতে থাকবে জলপাইগুড়ি জেলার এই জল্পেশ মন্দির, পুরাণেও এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ আছে, যদিও সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। এর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম এবং বৃহৎ মেলা বসে এই জল্পেশ মন্দির প্রাঙ্গণেই যার টানে শুধু দেশ নয় পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান থেকেও পূর্নাথী এখানে এসে থাকে।
এই জল্পেশ মন্দিরের অবস্থান জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি শহর থেকে মাত্র ৭-৮ কি.মি দূরে। আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে জলপাইগুড়ি রোড, ময়নাগুড়ি রোড বা নিউ ময়নাগুড়ি যেকোনো একটি স্টেশনে নেমে বাস, ছোটো গাড়ি বা টোটো রিজার্ভ করে খুব সহজে এখানে চলে আসতে পারেন।
দেবী চৌধুরানী মন্দির :- জলপাইগুড়ি জেলার সদর শহর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি দূরে বেলাকোবার কাছে শিকারপুরের চা বাগানের মাঝে অবস্থিত এই প্রাচীন দেবী চৌধুরানীর মন্দির। এটি মুলত একটি কালি মন্দির, কিন্তু কালি মূর্তি ছাড়াও এখানে দেবী চৌধুরানী ও তার গুরু ভবানী পাঠকের মূর্তির পূজা করা হয়। বর্তমানে এই এলাকা চা বাগান দিয়ে ঘেরা থাকলেও পূর্বে এই এলাকা ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ২০১৮ সালে কাঠের তৈরি এই মন্দিরে আগুন লেগে যায়, তখন মন্দির ছাড়াও দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠকের কাঠের মূর্তি গুলো ও পুড়ে যায়। বর্তমানে নতুন রূপে মন্দির ও মূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে।
এই মন্দিরটি তৈরী করেছিলেন বৈকুণ্ঠপুরের তৎকালীন জমিদার দর্পদেব রায়কর। পূর্বে এই মন্দিরটি সন্ন্যাসী বাবার মন্দির হিসেবে পরিচিত ছিল এবং গভীর বন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস দেবী চৌধুরানী, এখানে আসলে আপনার স্পষ্ট ধারণা হবে যে, দেবী চৌধুরানী একটি ঊপন্যাসিক চরিত্র না প্রকৃতই একটি বাস্তব ও ঐতিহাসিক চরিত্র। ঊনবিংশ শতকে বাংলা জুড়ে দেখা দিয়েছিলো সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ, এই বিদ্রোহের প্রধান দুই নেতা ছিলেন ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী। বঙ্কিমচন্দ্র তার উপন্যাস এই বিদ্রোহের ওপরেই রচনা করেছিলেন। দেবী চৌধুরানীর আসল নাম হলো দেবী জয়দুর্গা চৌধুরানী এবং তার স্বামীর নাম নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী, তিনি তার স্বামী দ্বারা পরিত্যক্ত হলে তিনি তার গুরু ভবানী পাঠকের কাছে আশ্রয় লাভ করেন, এবং বিদ্রোহের অংশগ্রহণ করে নেতৃত্ব দেন। তার ধনীদের কাছ থেকে ধন সম্পদ লুঠ করে তা গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। কোনো ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে তার এই মন্দিরে মা কালির পূজা দিয়ে তারপর যেতেন। তাই এই মন্দির রানী ভবানীর কালি মন্দির নামে পরিচিতি লাভ করে।
এই মন্দিরে আপনি আসতে চাইলে শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি যেকোনো একটি শহর থেকেই আসতে পারেন, তবে এই মন্দিরে আসার নিকটবর্তী স্টেশন হলো বেলাকোবা, এই স্টেশনে নেমে টোটো বা অটো ধরে এই মন্দিরে খুবই সহজে চলে আসতে পারেন।
জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি :- জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যেই আরো একটি নিরিবিলি সুন্দর ঘোরার জায়গা হলো এই জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি। যদি ও এই রাজবাড়ির ভগ্নপ্রায় অবস্থা। সেই কারণে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এবং জলপাইগুড়ি পৌরসভার পক্ষ থেকে এর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে এ ছাড়াও আরো উন্নয়নমূলক কাজ ও হয়েছে, পর্যটনের বিকাশের জন্য, যেমন তার মধ্যে রাজবাড়ি, রাজবাড়ি গেট, দুর্গামন্দির, রাজবাড়ি দিঘীর সংস্কার, এবং এর পাশাপাশি অনেক সৌন্দর্যায়নের কাজ ও হয়েছে।
জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি যাওয়ার আগে তার একটু ইতিহাস আমাদের আগে জেনে রাখলে ভালো। আমি খুবই সংক্ষেপে কিছু ইনফরমেশন শেয়ার করছি। জলপাইগুড়ির এই রাজবাড়ি ছিল বৈকুণ্ঠপুর রাজ এস্টেটের একটি অধীন। রাজবাড়ির শেষ রাজা ছিলেন প্রসন্নদেব রায়কত। তিনি এক সময় রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন।রাজবাড়ির ভিতরে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। শুধু দুর্গাপুজোর সময় রাজবাড়ির ভিতর থেকে রাজার মুকুট, অস্ত্র সহ অন্য কিছু সামগ্রী বাইরে আনা হয়। সেসব রাখা হয় দেবী দুর্গার সামনে। তখনই সাধারণ মানুষ রাজবাড়ি নিয়ে তাদের কিছু কৌতুহল মেটায়। এই বৈকুণ্ঠপুর রাজাদের পদবি ছিল রায়কত। এটা ছিল কোচবিহার রাজবংশেরই একটি শাখা। তাঁদের প্রথম রাজধানী ছিল তিস্তা নদীর কাছে সুবর্ণপুরে।বৈকুণ্ঠপুরের রাজা দর্পদেব রায়কত ১৭১০ বা ১৭১১ সালে বৈকুন্ঠপুরের রাজধানী(সুবর্ণপুর বা জঙ্গল) তিস্তা নদীর কাছে বর্তমান জলপাইগুড়ি শহরে স্থানান্তর করেন। ১৮৯০ সালে জলপাইগুড়িতে রাজবাড়ি তৈরি হয়। আর জলপাইগুড়ির সিংহদুয়ার তৈরি হয় ১৯১১ সালে। ইংরেজদের রাজা পঞ্চম জর্জের অভিষেক ঘিরে তৈরি হয় সিংহদুয়ার। বর্তমান রাজবাড়ি ছাড়াও রাজবাড়ি দীঘি পাশের কালী মন্দির, মনসা মন্দির, শিব মন্দির আছে।
গরুমারা জাতীয় উদ্যান :- জলপাইগুড়ি জেলার হিমালয়ের একদম পাদদেশে মূর্তি ও রায়ডাক নদীর ধারে এই গরুমারা জাতীয় উদ্যানটি অবস্থিত। প্রায় ৮০ স্কোয়ার কি.মি বিস্তৃত এই জাতীয় উদ্যানের প্রধান আকর্ষন হলো একশৃঙ্গ গন্ডার। এই একশৃঙ্গ গন্ডার ছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরণের জীবজন্তু পশুপাখি এখানে দেখতে পাবেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এশিয়াটিক হাতি, হরিণ, বুনো-শুয়োর, পাখিদের মধ্যে হর্ণবিল বিভিন্ন ধরণের বিষধর সাপ প্রভৃতি।
এই গরুমারা জাতীয় উদ্যানের ইতিহাস বহু পুরোনো ১৮৯৫ সালে এই এরিয়াটিকে Protected Area হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, ১৯৪৯ সালে Wildlife Sanctuary, এবং ১৯৯২ সালে ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে ঘোষনা করা হয়। লাটাগুড়ি শহর এই জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। এই জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে লাটাগুড়ি শহর ঘেঁষে ন্যাওড়া নদী প্রবাহিত। এই নদীকে ঘিরে রয়েছে ন্যাওড়া চা বাগান। আপনারা গরুমারাতে আসলে অবশ্যই জঙ্গল সাফারিটা করার চেষ্টা করবেন, গাড়ি করে জঙ্গল সাফারির আলাদা একটা অভিজ্ঞতা হবে। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন ভারতের সমস্ত জাতীয় উদ্যানই ১৫ জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
গজলডোবা ব্যারেজ :- জলপাইগুড়ি জেলার আরো একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল এই গজলডোবা ব্যারেজ। ১৯৯৮ সালে জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবাতে তিস্তা নদীর ওপরে এই ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে, যা তিস্তা প্রজেক্টের একটি অংশ। তিস্তা প্রকল্পের মাধ্যমে তিস্তার জল আটকে সেচ খালের মাধ্যমে উত্তর বঙ্গের জেলা গুলোতে কৃষিকাজের জন্য জলের সরবরাহ করা। গজলডোবাতে এই ব্যারেজ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশে জলের সরবরাহ কমে যাওয়ায়, বাংলাদেশ এই তিস্তা প্রকল্পের বিরোধীতা করেছে।
গজলডোবাতে এই ব্যারেজ নির্মাণের ফল এই জায়গাটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে আসার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল বা বর্ষার পরবর্তী সময় এবং শীতকালে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল গজলডোবা ব্যারেজের জলে নৌকা বিহার, এবং ভাগ্য ভালো থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেতে পারেন। আর শীতকালে বিভিন্ন ধরণের পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। যার টানে শীত পড়লেই বিভিন্ন পাখি প্রেমী থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার এবং সাধারন পর্যটকেরা ভিড় করে, বর্ষাকালে আসলে জলপাইগুড়ির বিখ্যাত তিস্তা নদীর বোরলি মাছ ভাজা খেতে ভুলবেন না, ব্যারেজ লাগোয়া প্রচুর দোকান এখানে এখন গড়ে উঠেছে সেইসব দোকান গুলোতে বোরলি মাছ ভাজা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ভাজা, খাওয়ার পেয়ে যাবেন, যেগুলো এখন এই গজলডোবাতে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন। আপনি শিলিগুড়ি বা NJP স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে এই গজলডোবা এবং এই জেলার আসে পাশের আরো কয়েকটি জায়গা একদিনে ঘুরে ফেলতে পারেন, শিলিগুড়ি থেকে যার দূরত্ব ৩৫ কি.মি।
ভ্রামরিদেবী মন্দির :- আমাদের রাজ্যে ৫১ সতীপিঠের মধ্যে প্রায় ১৩টি পিঠ বা মন্দির অবস্থিত, তার মধ্যে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত একমাত্র সতীপিঠ হল এই ত্রিস্রোতা মা ভ্রামরিদেবী মন্দির, যা অবস্থিত জলপাইগুড়ি জেলায়। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৮ কি.মি দূরে ধূপগুড়ি ব্লকের অন্তর্গত শালবাড়ি, বোদাগঞ্জে। এখানে দেবীর বাম পা পতিত হয়েছিলো। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা ভ্রামরি। আমাদের রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত মা সতীর যে ১৩ টি মন্দির নিয়ে একটি পৃথক ব্লগ আছে সেটি অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন নিচে লিঙ্ক থাকলো...
এখানে আসতে হলে আপনি জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি যেকোন জায়গা থেকেই আসতে পারেন। গাড়ি রিজার্ভ করে নিলে খুব ভালো হয় বাইক থাকলে আরো ভালো। Njp স্টেশনে নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে এই জায়গাটি দেখে নিতে পারেন। দেবী মন্দিরের পৌঁছানোর রাস্তাটি চলে গেছে বৈকুন্ঠপুর ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে দুদিকে শাল সেগুনের গাছের সারি। মন্দিরের প্রবেশপথের কিছু আগেই আছে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা, তাই আপনারা যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসতে চান তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না।
জটিলেশ্বর মন্দির :- জলপাইগুড়ি জেলার প্রাচীন মন্দিরের যেকটি নিদর্শন, তার মধ্যে অন্যতম হলো এই জটিলেশ্বর মন্দির। মনে করা হয় এই মন্দির গুপ্ত যুগের সময়কার যদিও এই অধিকাংশই বর্তমানে বিধ্বস্ত।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির ব্লকের এক সুপ্রাচীন মন্দির হল পূর্ব ডহর গ্রামে অবস্থিত জটিলেশ্বর শিবমন্দির। একটি টিলার উপরে অবস্থিত মন্দিরটির চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন আকারের অলংকৃত প্রস্তরখন্ড। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত পাথরের মূল মন্দিরটির উপরে ইঁট গেঁথে বর্তমান শিখর মন্দিরটির রূপ দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে পাথরে খোদাই করা দ্বারপাল, গণেশ, নটরাজ ও অন্যান্য দেব-দেবীর ক্ষয়িত মূর্তি এখনও দেখতে পাওয়া যায়।
মন্দিরটি কে, কবে নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। কারও মতে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল গুপ্ত যুগে, কারও দাবি মন্দিরটি পাল যুগের। কিংবদন্তী অনুযায়ী অবশ্য মন্দিরটি আরও প্রাচীন, একেবারে পৌরাণিক আমলের। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনায় জানা গিয়েছে মন্দিরটি নবম শতাব্দীতে নির্মিত। অর্থাৎ, নিশ্চিতভাবে হাজার বছরেরও অনেক আগে মন্দিরটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
চাপড়ামারি জাতীয় উদ্যান :- চাপড়ামারি জাতীয় উদ্যান, জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যানের একদম পাশেই অবস্থিত, মাঝে যদি মূর্তি নদী না থাকতো তাহলে দুটো একটি জাতীয় উদ্যান ই হতো। মূর্তি নদী গরুমারা ও চাপড়ামারিকে পৃথক করেছে। এই অভয়ারণ্য টি একদম মূর্তি ও জলঢাকা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। মূর্তি কে এই অভয়ারণ্যের প্রবেশদ্বার বলা যায়।
১৯৭৬ সালে এটি অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।লাটাগুড়ি থেকে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। এবং এই অভয়ারণ্যের মোট আয়তন ৯৬০ হেক্টর। এখানে আসলেও আপনি জঙ্গল সাফারি করতে পারবেন। চাপড়ামারির জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছে NJP - আলিপুরদুয়ার রেল লাইন,চাপড়ামারিতে একটি রেল স্টেশনও আছে।
মূর্তি :- মূর্তি নদীর তীরবর্তী জলপাইগুড়ি তথা ডুয়ার্সের একটি সুন্দর ও জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান এই মূর্তি। ছোট্ট একটি শহর মূর্তি নদীর থেকেই এই নামটি এসেছে। জায়গাটি গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক ও চাপড়ামারির একদম মিডলে অবস্থিত। এই দুটি জায়গা ঘুরে নিয়ে আপনি চাইলে মূর্তিতে এসে রাতটা থাকতেও পারেন। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল এই মূর্তি নদী, জল বাড়লে এই খরশ্রোতা নদীর রূপ দেখার জন্য প্রচুর পর্যটক এখানে এসে থাকে। মূর্তি থেকে আপনি চাইলে আরো কয়েকটি জায়গা ঘুরে আসতে পারেন, যেমন বিন্দু, ঝালং, জলঢাকা, সামসিং এই জায়গা গুলো খুব একটা দূরে অবস্থিত না।
মূর্তিতে থাকার জন্য সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন ধরণের কটেজ, বাংলো, হোটেল পেয়ে যাবেন, নদীর একদমই ধারে অবস্থিত হওয়ায় ভিউটাও অসাধারন পাবেন। শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এই জায়গা গুলো দেখে ফেলতে পারেন, NJP থেকে এর দূরত্ব ৮০ কি.মি। এছাড়াও আপনি চালসা বা জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমেও বাসে মূর্তি চলে আসতে পারেন।
মালবাজার হনুমান মন্দির :- উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই হনুমান মন্দির। এই মন্দিরটি হনুমান মন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও মন্দিরটির প্রকৃত নাম শিবোহম বালাজী মন্দির।খুবই সুন্দর অসাধারণ কারুকাজে সজ্জিত এই মন্দির, যারা ডুয়ার্সে বেড়াতে আসবেন তারা অবশ্যই এই মন্দিরটি থেকে ঘুরে যাবেন।
মালবাজার ক্যালটেক্স মোড়ের একদম কাছেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। কিন্তু মন্দিরের ভিতরে ফটোগ্রাফি একদমই Allow না, ভেতরের চোখধাঁধানো কাজ যা আপনাকে সত্যি অবাক করে দেবে।
সামসিং, চালসা, মেটেলি :- শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৮৫ কি.মি দূরে এবং জলপাইগুড়ি শহর থেকে প্রায় ৬৫ কি.মি দূরে অবস্থিত চা বাগান দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম এই সামসিং। সামসিং চা বাগানই এখনকার প্রধান আকর্ষন, এছাড়াও পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মূর্তি নদী।
সামসিং এর পাশাপাশি এই জেলার আরো দুটি এরকমই সুন্দর জায়গা চালসা, মেটেলি এই জায়গা গুলোতে বড় বড় সুন্দর সুন্দর চায়ের বাগান আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন