- : হাওড়া জেলার ২০টি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান :-
ভ্রমণ পিপাসু :- ভ্রমণ পিপাসু আগের পর্বে আমি আলোচনা করেছিলাম হুগলি জেলার ৫০ টি দর্শনীয় স্থান, কোথায় অবস্থিত, কেমন করে পৌঁছোবেন সমস্ত details, এই পর্বে আলোচনা করবো পূর্বতন হুগলি জেলার অংশ হাওড়া জেলা নিয়ে। হাওড়া জেলার জন্ম হয় ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি হুগলি জেলার দক্ষিণ অংশ নিয়ে।
ভ্রমণ পিপাসুর এই সাইটে আমি পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবগুলো জেলার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান গুলি নিয়ে আলোচনা করবো আজকের এই পর্বে থাকছে আমাদের রাজ্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ হাওড়া জেলা। হাওড়া জেলার প্রায় ২০টি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল এই ব্লগে তুলে ধরবো তার সাথে সাথে থাকবে সমস্ত ইনফরমেশন। আপনি একবার দুবারে এসে হাওড়ার এই জায়গা গুলোকে কভার করতে পারবেন না, তার জন্য আপনাকে মোটামোটি তিন থেকে চার বার তো আসতেই হবে। চলুন তাহলে এক এক করে আলোচনা করা যাক হাওড়া জেলার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান গুলো।
হাওড়ার নতুন মন্দির বা নয়া মন্দির/বঙ্গেশ্বর মহাদেব মন্দির:- কলকাতা খুব কাছেই এবং হাওড়া স্টেশন থেকে মাত্র ৩ কি.মি দূরে অবস্থিত এই মন্দির। এই মন্দিরের ও একটা বিশেষত্ব আছে সেটা নিয়ে আমি আসছি তার আগে মন্দিরটি নিয়ে আপনাদের একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়ে দি। মন্দিরটি হাওড়ার সালকিয়ার বাঁধাঘাটের কাছে অবস্থিত, উল্টোদিকেই আছে কলকাতার আহিরীটোলা ঘাট। পুরনো যে মন্দিরটি আছে সেটা উদ্বোধন করেছিলেন ১৯৫৩ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের হাত দিয়ে শিবরাত্রির দিন। মন্দিরটির আসল নাম শেঠ বংশীধর জালান স্মৃতি মন্দির। সেই পুরোনো মন্দিরটিকেই সংস্কার করে বেশ কিছু বছর আগে আবার নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে, বর্তমানে এই মন্দিরটিকে নতুন মন্দির/নয়া মন্দির বা বঙ্গেশ্বর মহাদেব মন্দির নামেও ডাকা হয়।
Naya Mandir, Howrah. |
এবার আসি মন্দিরের প্রধান আকর্ষনে। এই মন্দিরের ভিতরে অনেক দেবদেবীর মন্দির থাকলেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত ১২ টি মন্দির। আপনি যদি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ একসাথে দর্শন করতে চান তাহলে চলে আসুন এই মন্দিরে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের রেপ্লিকা এখানে গড়ে তোলা হয়েছে খুবই সুন্দর ভাবে এবং মন্দিরের ভেতরে আছে শিবলিঙ্গ যেগুলোতে নিত্য পূজা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই মন্দিরের আরো একটি বিশেষত্ব হল মন্দিরটিতে একদম গঙ্গার ধার বরাবর তৈরী করা হয়েছে ৪১ ফিট উচু দেবাধিদেব মহাদেবের এক অসাধারন মূর্তি। এই মূর্তির উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ৪১ ফিট উচু শিবের এই মূর্তি কিন্তু গোটা পূর্ব ভারতের উচ্চতম শিবের মূর্তি।
এবার আসি আমরা কেমন করে যাবেন এই মন্দিরে আপনি এই মন্দির হাওড়া থেকেও যেতে পারেন আবার কলকাতা থেকেও আসতে পারেন। কলকাতা থেকে দুভাবে আসতে পারেন এখানে প্রথমত বাসে করে হাওড়া তারপর টোটো ও অটো করে এই মন্দির। বাঁধাঘাটের নতুন মন্দির যাবো বললেই হবে দূরত্ব মাত্র ৩-৪ কি.মি আবার বাস ও পেয়ে যাবেন। বাসের ঝামেলা না নিতে চাইলে কলকাতার আহিরীটোলা ঘাটে আসুন তারপর লঞ্চ করে চলে আসুন উল্টো দিকের বাঁধাঘাট ভাড়া মাত্র ৭ টাকা এরপর ঘাট থেকে একটু এগিয়েই টোটো পেয়ে যাবেন, এই ঘাট থেকে দূরত্ব ১ থেকে দেড় কি.মি রাস্তা, আপনারা তা হেঁটেও চলে আসতে পারেন। এবার বাকিটা আপনার পছন্দ।
পুকুরিয়া সালাসার ধাম :- এখন আমি যে মন্দিরটি নিয়ে কথা বলবো সেটা হলো পুকুড়িয়া সালাসার ধাম। এটি হাওড়ার জেলার কোনার কাছে পুকুড়িয়াতে অবস্থিত। এটি কিন্তু একটি হনুমান মন্দির, এবং এই মন্দিরে অবস্থিত হনুমানজীর মূর্তির একটি বিশেষত্ব আছে সেটা নিয়ে আমি পরে বলছি। তার আগে এই মন্দির নিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের জানিয়ে রাখি।
হাওড়ার কোনাতে অবস্থিত এই মন্দির এই মন্দিরের আগে সালাসার কথাটি দেখতে নিশ্চয় পাচ্ছেন, এটি কিন্তু একটি জায়গার নাম। এই সালাসার জায়গাটি রাজস্থানের চুরু জেলায় অবস্থিত, সেখানেই আছে সালাসার বালাজী মন্দির। এই হনুমান মন্দিরের অনুকরণেই হাওড়ার এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে ২০১৮ সালে। এই মন্দির নির্মাণে ও ব্যাবহার হয়েছে রাজস্থানী লাল বেলে পাথরের। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী এবং চোখ জুড়ানো কারুকাজে সজ্জিত এই মন্দির আপনাদের কিন্তু বেশ ভালোই লাগবে। এবার আসি মন্দিরের অবস্থিত হনুমানজির মূর্তি নিয়ে। এই মন্দিরে অবস্থিত হনুমানের বিগ্রহটি কিন্তু রাজস্থানের সালাসার ধামের অনুকরণে তৈরি, আর বিশেষত্ব টি হলো এই হনুমানজীর মূর্তির কিন্তু গোফ দাঁড়ি আছে, এরকম গোফ দাঁড়ি যুক্ত মূর্তি কিন্তু গোটা দেশে একদমই কম পাবেন।
Pukuria Salasar Dham. |
এবার আসা যাক এখানে আপনারা কেমন করে পৌঁছোবেন-আপনারা যদি কলকাতার দিক থেকে আসতে চান তাহলে বাসে আসতে চাইলে ধর্মতলা থেকে ডোমজুরের বাস ধরে সলপ হাইরোড স্টপেজে নামতে হবে সেখান থেকে ১০ মিনিট এই মন্দির। আপনি চাইলে হাওড়া থেকেও প্রচুর বাস পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে আসেন তাহলে আপনাকে নামতে হবে পুকুরিয়া স্টপেজে। ট্রেনে আসতে যদি চান তাহলে হাওড়া থেকে আমতা লোকাল ধরে নামতে হবে কোনা স্টেশনে, এরপর স্টেশন থেকে টোটো ধরে চলে আসুন এই মন্দিরে।
রেল মিউজিয়াম, হাওড়া :- হাওড়া স্টেশনেই অবস্থিত ভারতীয় রেলের এই মিউজিয়ামটি হাওড়া জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মাত্র ১০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে ভারতীয় রেলের সেই ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যাবহ্রত বিভিন্ন দুঃস্পাপ্য ও হেরিটেজ মর্যাদা প্রাপ্ত রেল ইঞ্জিন, লোকমোটিভ আরো বহু কিছু এখানে দেখতে পাবেন। এর পাশাপাশি ভারতীয় রেলের দুঃস্পাপ্য সব ছবি ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ঘটনা খুবই ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
Rail Museum, Howrah. |
হাওড়া রেল স্টেশনের একদম পাশেই গঙ্গার ধারে এই মিউজিয়ামটি গড়ে তোলা হয়েছে। সপ্তাহে সোমবার বাদে প্রতিদিনই সকাল ১০.৩০ টা থেকে বিকাল ৫. ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
ভারতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন :- হাওড়া জেলার আরো একটি প্রসিদ্ধ ভ্রমণ স্থান, যার খ্যাতি দেশ ছাড়া বিদেশেও আছে। আমি কথা বলছি বোটানিক্যাল গার্ডেন-আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন, যা আগে ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন নামে পরিচিত ছিল। বোটানিক্যাল গার্ডেন টি হাওড়ার শিবপুরে অবস্থিত। এটি সাধারণত কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত । উদ্যান টি বিভিন্ন ধরণের বিরল উদ্ভিদ এবং ১২০০০ এরও বেশি নমুনার মোট সংগ্রহ প্রদর্শন করে। ২৭৩ একর এই উদ্যানটি ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (BSI) অধীনে।
Botanical Garden, Howrah. |
১৭৮৮ সালে কর্নেল কিড এই উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৮৭ সালে বাগানের সূচনা ৩১০ একর জমি নিয়ে। পরে ৪০ একর জমি— যা কিড সাহেবের সম্পত্তি ছিল— দিয়ে দেওয়া হয় বিশপ’স কলেজকে। সে কলেজ আর নেই। সেই জমিতে এখন ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান, শিবপুর (পূর্বের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি)। আঠারো শতকে বিশ্বের কোনও বাগান এমন বিশাল পরিধি নিয়ে জন্ম নেয়নি। এমনকি ১৮৪০ সালের আগে বিলেতের বিখ্যাত ‘কিউ গার্ডেনস’ ছিল মাত্র এগারো একর জমি নিয়ে। কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেন বিশ্বের বৃহত্তম গার্ডেনের শিরোপা পরে ছিল বহু বছর ধরে। ভারতে কোম্পানির আমলে এটা দ্বিতীয় প্রাচীনতম বাগান ।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য বস্তু হল বিশাল বটবৃক্ষ নামে একটি ২৫০ বছরের প্রাচীন বটগাছ। গাছটির পরিধি ৩৩০ মিটার। বর্তমানে এই সুবিশাল বটগাছটি দেড় একর জমির উপর শত শত ঝুরি নিয়ে বিরাজমান।
বেলুর মঠ :- হাওড়া জেলার সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রসিদ্ধ পর্যটনস্থলের মধ্যে এই বেলুর মঠ সবার প্রথমের সারিতে থাকবে এই বেলুর মঠ, যা কিনা রামকৃষ্ণ মিশনের সদর দপ্তর। এই বেলুর মঠ হাওড়া জেলায় অবস্থিত, এর ঠিক উল্টো দিকেই আছে দক্ষিণেশ্বর মা ভবতারিনী মন্দির, যার জন্য ফেরীর ব্যবস্থা আছে। বেশিরভাগ পর্যটকেরাই বেলুরে আসলে তার সাথে সাথে দক্ষিণেশ্বর মন্দির ও দর্শন করে যান, যেহেতু দক্ষিণেশ্বর মন্দিরটি উত্তর ২৪ পরগনায় অবস্থিত সেহেতু এটা নিয়ে ওই জেলার পোস্টে আলোচনা করবো।
Belur Muth. |
১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ এই মঠের প্রতিষ্ঠা করেন, পরবর্তীকালে তা রামকৃষ্ণ মিশনের সদর দফতরে পরিণত হয়।
বেলুড় মঠ মন্দিরের সময়গুলি নিম্নরূপ:-
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর: সকাল 6:00 AM থেকে 11:30 AM এবং 4:00 PM থেকে 7:00 PM
অক্টোবর থেকে মার্চ: 6:30 AM থেকে 11:30 AM এবং 3:30 PM থেকে 6:00 PM
রামকৃষ্ণ মিউজিয়াম (মঙ্গলবার থেকে রবিবার) দেখার সময়গুলি হল:
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর: সকাল 8:30 AM থেকে 11:30 AM এবং 4:00 PM থেকে 6:00 PM
অক্টোবর থেকে মার্চ: 8:30 AM থেকে 11:30 AM এবং 3:30 PM থেকেশ 5:30 PM.
আন্দুল রাজবাড়ি :- আমাদের বাংলাতেই লুকিয়ে রয়েছে এমন অসংখ্য রাজবাড়ি। সেইসব অট্টালিকাদের খোঁজ কি রাখি আমরা? কয়েকটি চেনা পরিচিত রাজবাড়ি বা জমিদারবাড়ির বাইরে খুব একটা অচেনা রাজবাড়ির খোঁজ হয়তো আমরা রাখি না। সেরকম একটি মোটামোটি অপরিচিত রাজবাড়ির খোঁজ এখন আপনাদের দেবো, হাওড়া জেলার মানুষের কাছে এই রাজবাড়ি পরিচিত নাম হলেও জেলার বাইরের মানুষের কাছে এই বাড়ি এখনো তেমন ভাবে পরিচিতি লাভ করেনি। কলকাতা থেকে মাত্র কিছুক্ষণের রাস্তা হাওড়ার ইতিহাস মাখা মফস্সল আন্দুল। শহরটা ঘুরলেই চারপাশে দেখতে পাবেন অলিগলি পথ, বহু পুরোনো বাড়ি, আরও কত কী।সেইসময় আন্দুল রাজবাড়ির আদপকায়দাই ছিল অন্যরকম। ‘সাহেব-বিবি-গুলাম’ ছাড়াও শুটিং হয়েছে আরও বহু হিন্দি-বাংলা সিনেমার। অনেক পরে আন্দুল রাজবাড়ি হেরিটেজ বিল্ডিং-এর মর্যাদা পেয়েছে।
Andul Rajbari |
আন্দুল রাজবাড়ির ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই রাজবাড়িটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা রাজ নারায়ণ বাহাদুর। আর আন্দুল রাজ পরিবারের সৃষ্টি হয় রামলোচন রায়ের হাত ধরে। তিনি ছিলেন লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান। পরে ওয়ারেন হেস্টিংসেরও দেওয়ান হন। ওই সময়েই তিনি প্রভূত ধনম্পত্তির অধিকারী হন।
এই রাজবাড়ি ছাড়াও আন্দুলে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা রয়েছে। যেমন-, রাজবাড়ির অন্নপূর্ণা মন্দির, ঝোড়হাট হরিসভা গৃহ, শঙ্করী মন্দির, কুণ্ডু চৌধুরী বাড়ি, পঞ্চানন্দ মন্দির, সাধক ভৈরবীর গুহা ইত্যাদি। আন্দুল আপনি বাইরোড বা ট্রেন দুটিতেই আসতে পারেন। ট্রেনে আসলে মেদিনীপুর, পাঁশকুড়া লোকাল ধরে নেমে পড়ুন আন্দুল স্টেশনে তারপর টোটো ধরে চলে আসুন এই রাজবাড়ি।
শরৎচন্দ্রের কুঠি, দেউলটি :- হাওড়া জেলার রুপনারায়নের তীরে অবস্থিত সুন্দর একটি গ্রাম দেউলটি। এই দেউলটি গ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরো পরিচিতি পেয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। এই দেউলটি গ্রামেই শরৎচন্দ্র প্রায় ১৩ বছর অতিবাহিত করেছিলেন। এখানেই আছে তার একটি কুঠি। যা শরৎ কুঠি নামে পরিচিত। এই কুঠিতে বসে অনেক ছোটো গল্প, উপন্যাস রচনা করেছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'দেবদাস’, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘দেনাপাওনা’, ‘দত্তা’, ‘নিষ্কৃতি’-র মতো জনপ্রিয় উপন্যাস এবং ‘মহেশ’, ‘রামের সুমতি’-র মতো বিখ্যাত ছোটোগল্প। রুপনারায়নের বন্যাতে এই নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো পরে সরকারি উদ্যোগে এর সংস্কার করা হয়।
Deulti |
এই বাড়িতে শরৎচন্দ্রের ব্যাবহ্রত বিভিন্ন সামগ্রী পর্যটকদের জন্য রাখা আছে। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন এই বাড়িটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই একদিনের জন্য অবশ্যই এই সুন্দর শান্ত নিরিবিলি জায়গাটি থেকে ঘুরে যেতে পারেন, পর্যটনের জন্য এখানে বেশ কিছু হোটেল খুলে গেছে বর্তমানে, এখানে আসার উপরি রুপনারায়নের সৌন্দর্য এবং অসাধারণ সূর্যাস্ত। কলকাতা থেকে মাত্র ৬০ কি.মি দূরে এখানে আসাও খুবই সহজ। আপনি এখানে খুব সহজে যদি আসতে চান তাহলে সবচেয়ে বেস্ট হবে লোকাল ট্রেন, দেউলটিতে স্টেশন ও আছে আপনি হাওড়া থেকে মেদিনীপুর, খরগপুর, বা পাঁশকুড়া লোকাল ধরে নামতে হবে এই দেউলটিতে।
মল্লিক ঘাট ফুলের মার্কেট :- হাওড়া স্টেশনের একদম কাছেই অবস্থিত মল্লিক ঘাট। এই মল্লিক ঘাটেই বসে এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের মার্কেট। হাওড়া ব্রিজের ওপরে থেকে এই ফুলের মার্কেট টিকে দেখতে কি দারুন যে লাগে সেটা বলে বোঝানো কঠিন। কিন্তু তার জন্য আপনাকে আসতে হবে খুব সকাল সকাল, খুব সকাল সকাল না আসলে এত বিভিন্ন রকমের ফুলের সমারোহ সেটা দেখতে পাবেন না।
Mullick Ghat. |
প্রায় ১৭০ বছরের ওপরে হয়ে গেলো এই মার্কেট এখনো সমান তালে চলছে। খুব ভোর থেকেই কলকাতার আসেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে পাইকারি ফুল বিক্রেতারা তাদের ফুলের সম্ভার নিয়ে হাজির হয়ে যায়। তার কেনার জন্য পাইকারি ও খুচরো ক্রেতারাও ভিড় করে, তাই জমজমাট এই বাজার দেখতে হলে আপনাকে ৫ টা থেকে ৬ টার মধ্যে চলে আসতে হবে এখানে। হাওড়া স্টেশন থেকে এখানে আসা খুবই সহজ, স্টেশন থেকে বেরিয়েই ব্রিজ ক্রস করেই হাতের ডান দিকে মেন বাজার আর কলকাতার যেকোনো জায়গা থেকে হাওড়া স্টেশনের বাস ধরে ব্রিজের আগেই নেমে পড়তে হবে।
আমতা-জয়পুর ভ্রমণ :- এই পয়েন্টে আলোচনা করবো হাওড়া জেলার ঐতিহ্যের ডিপো বলে পরিচিত জয়পুর গ্রাম থেকে। এই গ্রামটি আমতার অন্তর্গত। এই জয়পুর গ্রামে আছে দেখার মত প্রচুর পুরনো নতুন মন্দির। আপনারা যদি আমতা এসে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে দেখতে হবে আমতার সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিচিত - ১. মেলাই চন্ডীমাতার মন্দির, হাত পা বিহীন মায়ের অপরূপ রূপ সত্যি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এরপর চলে আসুন টোটো করে জয়পুর গ্রাম, এবং টোটো রিজার্ভ করে দেখে নিন পুরো এই গ্রাম।
২. প্রথমেই দেখে নেবেন ২০০ বছরের পুরনো রাধা কৃষ্ণের মন্দির। মন্দিরের সামনেই আছে একটি সিংহদুয়ার।
৩.অনাদি বাবা জ্বলেশ্বর মন্দির :- শ্রাবণ মাস ও শিব রাত্রির সময়ে এখানে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।
৪. লক্ষী জনার্দন মন্দির :- রায় পরিবারের প্রতিষ্ঠিত কয়েকশো বছরের পুরনো লক্ষী জনার্দন মন্দির, প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কালিদাস রায়।
৫. শ্রীধর জিউ মন্দির :- এরপর দেখে নিন দাস পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শ্রীধর জিউ মন্দির । এটি একটি টেরাকোটার মন্দির।
৬. মহাপ্রভু মন্দির ও রাসমঞ্চ।
৭. বাগ পরিবারের মনসা মন্দির।
৮. জয়পুরের মন্ডল বাড়ির প্রতিষ্ঠিত অনেক গুলো মন্দির।
৯. মতিলাল ধর্ম ঠাকুরের মন্দির।
আমতা পৌঁছতে হলে আপনাকে হাওড়া থেকে আমতা লোকাল ধরে এখানে আসতে হবে। তাছাড়া সড়কপথে আসতে হলে চেন্নাই রোড ধরে রানীহাটি বাজার, উলুবেড়িয়া বা বাগনান থেকে আমতা চলে আসতে পারেন।
সাঁতরাগাছি লেক :- হাওড়া জেলার পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য যদি বলা যায় তাহলে একটাই নাম উঠে আসে সেটা হলো সাত্রাগাছি লেক। হাওড়ার সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে একেবারে পায়ে হাঁটা দুরত্বে অবস্থিত এই লেক।
শীত পড়লেই বিভিন্ন ধরনের দেশী বিদেশী পরিযায়ী পাখিদের বাস হয়ে ওঠে এই লেক। যা দেখতে দূর দুরান্ত থেকে পাখিপ্রেমি, ফটোগ্রাফার, সাধারণ পর্যটকেরা ছুটে আসে এখানে, তাই নেক্সট শীতে অবশ্যই ঘুরে যেতে পারেন এই লেক থেকে। স্টেশন থেকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে পায়ে হেঁটেই এখানে চলে আসতে পারেন।
Satragachi Lake |
বেনাপুর পিকনিক স্পট :- কলকাতার কাছাকাছি হাওড়া জেলার মধ্যে সেরা কয়েকটি পিকনিক স্পট যদি থেকে থাকে তাহলে এই বেনাপুর কিন্তু সবার প্রথমের দিকে থাকবে। কলকাতা থেকে খুব একটা বেশি দূরে না আসতেও সময় অনেকটা কম লাগে, জায়গাটি হলো বাগনানের রুপনারায়ন নদীর তীরবর্তী বেনাপুর। এটি আসলে একটি চর। জায়গাটিকে মিনি দিঘা হিসেবেও ডাকা হয়, বাগনান ও আসেপাশের লোকেদের কাছে এই জায়গাটি পরিচিত হলেও বাইরেও কাছে এত টাও পরিচিত জায়গা না।
Benapur |
এটি যেহেতু একটি চর তাই বর্ষাকালকে Avoid করেই এখানে আসা উচিৎ। পিকনিক করতে চাইলে শীতে আসুন। পিকনিক করতে না আসলেও এমনি ঘুরার জন্য বা বিকেলের টাইমটা নির্জন স্থানে কাটানোর জন্য এই জায়গাটা বেস্ট আর জায়গাটিও দারুণ, বর্ষাকালের আগে আগে এখানে আসলে একেবারে দেখতে পাবেন সবুজ গালিচা। দেখতে ভারী সুন্দর লাগে আর ফটোগ্রাফি করার জন্য একদমই আদর্শ এই স্পট।
আসবেন কি ভাবে, হাওড়া থেকে লোকাল ধরে বাগনান স্টেশন তার পর টোটো রিজার্ভ করে বা দিকে চলে আসুন ৫, ৬ কি.মি। বাইরোড আসতে চাইলে কলকাতা থেকে দিল্লী রোড ধরে চলে আসুন বাগনান তারপর এখানে থেকে বেনাপুর।
গড়চুমূক পিকনিক স্পট :- হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া ব্লকের অন্তর্গত গড়চুমূক ট্যুরিস্ট স্পট তার সাথে সাথে এটি একটি পিকনিক স্পটও। গড়চুমূক সেই জায়গা যেখানে দামোদর নদ হুগলি নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
Garchumuk. |
গড়চুমূকের ৫৮ নং গেট সবচেয়ে পপুলার বলতে গেলে এই জায়গাটিই এখানকার আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ প্রকল্প ও বিদ্যুৎ। এছাড়া এই ৫৮ নং গেটের কাছেই গড়ে তোলা হয়েছে রাজ্য সরকারের গড়চুমূক পর্যটনকেন্দ্র আর এখানেই যাবেন ডিয়ার পার্কও। এছাড়াও নদীর ধারে সুন্দর প্রকৃতও উপভোগ করতে পারেন।
গড়চুমূক পর্যটনকেন্দ্র উলুবেড়িয়া থেকে মাত্র ১৫ কি.মি দূরে অবস্থিত। এখানে ঢোকার প্রবেশ মূল্য - ১৫ টাকা। ভেতরে পার্কিং আছে সব ধরণের গাড়ির জন্য। ছোটো বাচ্চা থেকে বড় সবারই ভালো লাগবে এখানে আসলে। আপনি এখানে আসতে চাইলে হাওড়া থেকে লোকাল ধরে উলুবেড়িয়া তারপর ছোট গাড়ি বা টোটো করে এই গড়চুমূক।
গাদিয়ারা :- কলকাতা থেকে একদিনে ঘুরে আসার জন্য আরো একটি আদর্শ জায়গা হলো এই গাদিয়ারা। এটি হাওড়া জেলার শ্যামপুর ব্লকের অন্তর্গত হুগলি ও রূপনারায়ন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। জায়গাটি এমনিতে হাওড়া জেলায় অবস্থিত হলেও এখান থেকেই খুব সহজেই চলে যেতে পারেন পার্শ্ববর্তী তিনটি জেলায়। গাদিয়ারার একদিকে আছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা এবং অন্য দিকে আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা, বলতে গেলে তিনটি জেলার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই গাদিয়ারা। গাদিয়ারা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলার গেঁওখালি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার নূরপুরের ফেরি যোগাযোগ ব্যাবস্থা আছে।
Gadiara |
পর্যটনের বিকাশের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গাদিয়ারাকে কিন্তু সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে থাকতে চাইলে থাকতেও পারেন একটা দিন, সরকারি ও বেসরকারি গেস্ট হাউস আছে এখানে, পিকনিক করতে চাইলেও এখানে করতে পারেন। এবার আসি এখানে আসবেন কেমন করে, কলকাতা বা হাওড়া থেকে বাসে এখানে চলে আসতে পারেন, দু ঘন্টা সময় লাগে বাসে। এছাড়াও নূরপুর পর্যন্ত বাসে এসে ফেরিতে চলে আসতে পারেন গাদিয়ারা। এবার আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে লোকাল ধরে নামতে হবে বাগনান স্টেশন তারপর ছোটো গাড়ি বা টোটোতে চলে আসুন এই গাদিয়ারা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন