পূর্ব বর্ধমান জেলার ৪০ টি দর্শনীয় স্থান। Purba Bardhaman District 40 Tourist Places

 পূর্ব বর্ধমান জেলার ৪০ টি দর্শনীয় স্থান 

 ভ্রমণ পিপাসু :- বৈচিত্র্যময় পূর্ব বর্ধমান জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান থাকছে আজকের পর্বে। ৭ এপ্রিল ২০১৭ সাল থেকে বৃহত্তর বর্ধমান জেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি শিল্প প্রধান পশ্চিম বর্ধমান জেলা আর, কৃষি প্রধান পূর্ব বর্ধমান জেলা। আজকের ব্লগটি এই কৃষি প্রধান পূর্ব বর্ধমান জেলাকে নিয়ে।





কালনা ১০৮ মন্দির :- গোটা ভারতবর্ষ বা গোটা বিশ্বজুড়ে যদি খোঁজ করা হয় তাহলে দুটি ১০৮ শিবমন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে, এবং আচার্যজনক ভাবে এই দুটি ১০৮ শিবমন্দিরই অবস্থিত আমাদের রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলায়, এবং এই দুটি মন্দিরের নির্মাণের সাথে বর্ধমান রাজবাড়ি যুক্ত ছিলো। যার মধ্যে একটি অন্যতম বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনার ১০৮ শিবমন্দির



কালনা শহরের রাজবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণের ঠিক উল্টোদিকে অবস্থিত কালনা ১০৮ শিবমন্দির যা নব কৈলাস মন্দির হিসেবে পরিচিত। ১৮০৯ সালে আটচালা বিশিষ্ট এই মন্দিরগুলিকে প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমান রাজবাড়ির রাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর। মন্দিরের গঠনশৈলী যদি বলতে চান তাহলে দেখা যাবে মন্দিরটি অদ্ভুত ভাবে এক জ্যামিতিক বিন্যাসে তৈরি করা হয়েছে তাও প্রায় ২০০ বছর আগে, যা দেখে সত্যি অবাক লাগে। মন্দিরটি ২টি বৃত্তের আকারে বিন্যস্ত। বহিবৃত্তে আছে ৭৪টি শিব মন্দির এবং অন্তবৃত্তে আছে ৩৪ টি মন্দির। এবং মন্দির গুলির মাঝে অবস্থিত একটি বড় কুয়ো। কালনা ১০৮ মন্দির নিয়ে আমার লেখা একটি সম্পূর্ন ব্লগ আছে যেটা আপনারা পড়ে নিতে পারেন নিচে লিঙ্ক থাকলো...


বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দির :- আমি আগেই বলেছিলাম গোটা ভারতবর্ষ বা গোটা বিশ্বজুড়ে যদি খোঁজ করা হয় তাহলে দুটি ১০৮ শিবমন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে, এবং আচার্যজনক ভাবে এই দুটি ১০৮ শিবমন্দিরই অবস্থিত আমাদের রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলায়, এবং এই দুটি মন্দিরের নির্মাণের সাথে বর্ধমান রাজবাড়ি যুক্ত ছিলো। একটি অবস্থিত বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনা শহরে এবং অপরটি বর্ধমান শহরের কাছেই নবাবহাটে। এই দুটি শিব মন্দিরের খ্যাতি কিন্তু ভারত জুড়ে, আমাদের রাজ্যের পাশাপাশি বাইরের রাজ্যে থেকেও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে এই দুই মন্দিরে।



বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দিরটি বর্ধমানের নবাবহাট বাস স্ট্যান্ডে একদম পাশেই অবস্থিত এবং বর্ধমান স্টেশন থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত ।বর্ধমান এর মহারানি কৃষ্ণ কুমারি দেবী এক স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৭৮৮ সালে এই মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই মন্দির কে ১০৮ শিব মন্দির বলা হলেও আদতে এখানে আছে ১০৯ টি শিব মন্দির। ১০৮ টি পাশাপাশি সারিবদ্ধ ভাবে এবং একটি মন্দির একদম আলাদা জায়গা তৈরি ।মন্দির গুলোকে ওপরে থেকে দেখলে জপমালার মত দেখতে মনে হয়।

বর্ধমান ১০৮ শিবমন্দির নিয়ে আরো আমার লেখা একটি ব্লগ আছে যেটায় সম্পূর্ন details আপনারা পেয়ে যাবেন দুটি ১০৮ মন্দির নিয়ে...


কালনা রাজবাড়ি মন্দির সমষ্টি :- কালনা শহরের ১০৮ মন্দিরের ঠিক উল্টো দিকেই আছে কালনা রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ি চত্বরের মধ্যেই আছে বর্ধমান রাজাদের তৈরি অনেক গুলো মন্দির, আপনারা স্টেশন থেকে টোটো ভাড়া করে এসে এক এক করে মন্দির গুলো ঘুরে ফেলতে পারেন, একদিনের জন্য ভালো একটা ট্যুর হবে এই অম্বিকা কালনা। আসুন জেনে নি এই রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে কি কি মন্দির আপনারা দেখতে পাবেন....

১. গোপালজী মন্দির ।

২. লালজী মন্দির।

৩. প্রতাপেশ্বর মন্দির।

৪. রাসমঞ্চ।

৫. গিরিগোর্বধন মন্দির ।

৬. রূপেশ্বর মন্দির।

৭. কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দির।

৮. বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির।




কালনা নিয়ে আমার একটা সম্পূর্ন ব্লগ আছে যাতে কালনার সমস্ত মন্দির বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা আছে ব্লগটি পড়ে নিতে পারেন......

বর্ধমান শহর ট্যুর :- পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলা সদর হল এই বর্ধমান, যা একাধারে জেলার প্রধান ও সবচেয়ে বড় শহর। এই শহর থেকেই জেলার নামটি হয়েছে বর্ধমান। এই বর্ধমান শহরের ইতিহাস কিন্তু খুবই প্রাচীন, সেই তুর্ক- আফগান যুগ থেকে মুঘল হয়ে ব্রিটিশ আমল। তার সাথে সাথে বর্ধমানের সাথে আস্টে পিস্টে জড়িয়ে আছে বর্ধমান রাজা। তাই ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ন এই শহরের মধ্যে অবস্থিত কিছু প্রধান প্রধান আকর্ষন গুলো এই পয়েন্টে তুলে ধরবো। সারাদিন ঘোরার জন্য এই শহরে কিন্তু অনেক জায়গায় আছে, যেগুলো আপনারা এক বা দু দিনে দেখে নিতে পারেন....

১. বর্ধমান রাজবাড়ি :- বর্ধমানের মহারাজ তেজচাঁদের দত্তকপুত্র রাজা মহাতাবচাঁদের উদ্যোগে এই রাজবাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে এই রাজবাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়। মহারাজ মহাতাবচাঁদ তৈরি করেছিলেন বলে এই রাজবাড়ির নাম মহাতাব মঞ্জিল। তখন এটি ছিল বর্ধমান রাজের প্রধান বাসভবন। এখান থেকেই শাসনকাজ বিচার ব্যবস্থা পরিচালিত হত। বর্ধমানের এই রাজবাড়ি থেকে মহাতাবচাঁদ, আফতাবচাঁদ, বিজয়চাঁদ ও উদয়চাঁদ - এই চার রাজা রাজত্ব পরিচালনা করেছেন। 




১৯৫২ সালে ভারত সরকার জমিদারি উচ্ছেদ আইন আনেন। তার ফলে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে। বিশাল রাজত্ব সরকারের হাতে চলে যায়। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির উদ্দেশ্যে বর্ধমানের শহরের রাজবাড়িটি চেয়ে নেন, ১৯৬০ সাল থেকে এই রাজবাড়ি থেকেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। এই রাজবাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও রাজবাড়ির গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে পাঠভবন রয়েছে। যাবতীয় পড়াশোনা হয় গোলাপবাগে। উপাচার্যের অফিস সহ প্রশাসনিক কাজকর্ম হয় রাজবাড়ি থেকে। বর্ধমান স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ড থেকে টোটো করে খুব সহজেই এখানে চলে আসতে পারেন।

২. খাজা আনোয়ার বেড় (নবাব বাড়ি) :- খাজা আনোয়ার বেড় নবাব বাড়ি বর্ধমানের দক্ষিণ অংশের দিকে অবস্থিত এবং প্রায় তিনশত বছরের পুরানো। এই নির্মাণটি চারদিকে উঁচু দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত এবং এই ভবনের স্থাপত্য শৈলীটি ইন্দো-সিরিয়ান স্থাপত্যের নিখুঁত মিশ্রণ। বিল্ডিংয়ের ভিতরে একটি উইন্ড-হলের বা হাওয়াঘর এর মাঝখানে একটি গভীর পুকুর রয়েছে।


৩. গোলাপবাগ :- বর্ধমানের গোলাপবাগ বা গোলাপের বাগান, একটি প্রিয় পর্যটন স্থান। এটি ১৮৮৩ সালে রাজা বিজয় চাঁদ মাহাতাব প্রতিষ্ঠিত বোটানিকাল এবং প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কিত উদ্যান। বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডালটন হুকার এখানে এসে ১২৮ ধরণের গাছ তালিকাভুক্ত করেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্সে ক্লাসও নেয়।

৪. ঝুলন্ত রেলওয়ে ওভার ব্রিজ :- ২০১৯ সাল সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা হওয়া এই সেতুটি বর্তমানে বর্ধমান শহরের একটু দর্শনীয় স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১৯০ মিটার কেবল দ্বারা স্থিত এই রেল ব্রিজটি প্রায় ৩০ মিটার প্রশস্থ।

৫. কৃষ্ণসার পার্ক :- ১৬৯১ সালে, তৎকালীন বর্ধমান রাজা, কৃষ্ণসায়রে প্রায় ৩৩ একর জমিতে একটি বিশাল কৃত্রিম হ্রদ নির্মাণ করেছিলেন। এটি সেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য সহ একটি জনপ্রিয় উদ্যান। পার্কের কেন্দ্রে একটি বিশাল হ্রদ রয়েছে যা চারদিকে গাছ দ্বারা বেষ্টিত যা নিজেই একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা এবং সেরা জায়গা যেখান থেকে কেউ আপনাকে ঘিরে থাকা হ্রদ থেকে শীতল বাতাসের সাথে দর্শনীয় ভিস্তাতে নিয়ে যেতে পারে।


৬. রমনাবাগান:- এটি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। পার্কে হরিণের সংখ্যার জন্য বিখ্যাত। এলাকাটি প্রায় ১৪ হেক্টর। চিতাবাঘ, ভাল্লুক, কুমির, দাগযুক্ত হরিণ বাদে কিছু ধরণের পাখিও সেখানে রাখা হয়েছে। এটি বন বিভাগ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।


৭. বর্ধমান ১০৮ শিবমন্দির :- সিউড়ি রোডে নবাবহাট বাস টার্মিনাসের কাছে প্রশস্ত শিব মন্দিরটি অবস্থিত। ১৭৮৮ সালে এটি নির্মাণ করেছিলেন মহারাজা তিলোকচন্দের স্ত্রী মহারাণী বিষ্ণান কুমারী । ১০৮ টি মন্দিরের একটি আয়তক্ষেত্রাকার মালা হিসাবে সুরক্ষিত রয়েছে।


৮. কঙ্কালেশ্বরী মন্দির :- এই মন্দিরটি পূর্ব বর্ধমানের দ্বিতীয় নবরত্ন মন্দির। বর্ধমান শহরের কাঞ্চন নগরে অবস্থিত। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে দামোদরের পাশের নদীতে মন্দিরের কালী প্রতিমাটি পাওয়া গিয়েছিল। মন্দিরে নয়টি শৃঙ্গ রয়েছে যার ফলে “নবরত্ন মন্দির” নামে পরিচিত। 

৯. সর্বমঙ্গলা মন্দির :- ১৭০২ সালে মহারাজা কীর্তিচাঁদ দ্বারা সর্বমঙ্গলা মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল, যেটি বর্ধমানের ডিএন সরকার রোডে অবস্থিত। মাতা সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি প্রায় ১০০০ বছর পুরনো। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরত্ন মন্দির।


১০.কার্জন গেট :- মহারাজা শ্রী বিজয় চাঁদ মহাতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে, বর্ধমানের মহারাজা ১৯০৩ সালে জিটি রোড এবং বিসি রোডের সংযোগস্থলে এই বিশাল তোরণটি তৈরি করেছিলেন। ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় তোরণটি “কার্জন গেট” নামকরণ হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী যুগে, এর নামকরণ করা হয়েছিল “বিজয় তোরণ”।


 ১১. শের আফগানের সমাধি :- শের আফগানের সমাধিটি রাজবাটির নিকটে পীর বাহারমের পাশে অবস্থিত। ১৬১০ সালে বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি মারাত্মক যুদ্ধের ফলে কুতুবউদ্দিন খান এবং শের আফগান নিহত হয়েছিলেন। সমাধিগুলি বর্ধমান রাজ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এখন এটি এএসআই দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।


 মা মঙ্গলচন্ডী মন্দির :- এমনিতে বর্ধমান জেলায় আছে আপনারা পেয়ে যাবেন ৫১ সতীপিঠ হিসেবে পরিচিত মায়ের ৪টি মন্দির, যার মধ্যে একটি হল বর্ধমান জেলায় মঙ্গলকোটে অবস্থিত মা মঙ্গলচন্ডী মন্দির। এটি মঙ্গলকোট ব্লকের কোগ্রামে, একদম অজয় ও কুনুর নদীর সঙ্গমস্থলের পাশে। এখানে দেবী সতীর ডান কব্জি পতিত হয়েছিলো। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা মঙ্গলচণ্ডীকা।


এখানে আসার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম যেকোনো ভাবে বর্ধমান বা কাটোয়াতে আসতে হবে। কাটোয়া থেকে দূরত্ব একটু কম। কাটোয়া বা বর্ধমান থেকে আপনাকে পৌঁছতে হবে বাসে মঙ্গলকোটে। তারপর টোটো করে আপনাকে পৌঁছতে হবে কোগ্রামে এই মন্দিরে যা একদম অজয় নদীর তীরে।

সাত দেউল :- বাংলার মন্দির গুলোতে মূলত চার ধরনের রীতি লক্ষ্য করা যায়, চালা, রত্ন, দালান, এবং রেখ, এই রেখ এর কতগুলো ভাগ আছে তার মধ্যে একটি হল রেখ দেউল যা উড়িষ্যার শৈলী থেকে প্রভাবিত। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে দশম শতকের মধ্যে বাংলায় দেউল শিল্পরীতির বিকাশ ঘটে। রাড়বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এবং পশ্চিমের জঙ্গলমহলের জেলা গুলোতে এই দেউল শিল্পরীতির বিভিন্ন নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়, যা প্রধানত উড়িষ্যার রেখ দেউল শিল্পরীতি থেকে প্রভাবিত, তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল বর্ধমান মেমারির অন্তর্গত আঝাপুরের এই সাত দেউল।


সাত দেউল প্রাচীন বাংলার জৈন কৃষ্টির এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। উড়িষ্যার রেখ দেউল শিল্পরীতি বিন্যস্ত এই দেউল ইট দ্বারা নির্মিত, মন্দিরের প্রধান বিশেষত্ব হল চার দিকে বাকানো সুউচ্চ টাওয়ার এবং মন্দিরের প্রবেশদ্বারে রয়েছে ধনুকাকৃতি গেট। মনে করা হয় পাল যুগের রাজা শালিবাহন এই দেউল নির্মাণ করেছিলেন। এখানে আসা খুবই সহজ, হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে বর্ধমান মেন লাইন দিয়ে মেমারি স্টেশনে অথবা কর্ড লাইন ধরে মশাগ্রামে নেমে টোটো ধরে আসতে হবে।

ভালকি মাচান :- ভালকি জঙ্গল, এখানে আছে কয়েকটি মাত্র পরিবারের বাস, একদমই শান্ত নিরিবিলি একটা পরিবেশ। ভল্লু রাজা এখানে মাচা তৈরি করে নিয়মিত শিকারে আসতেন, যা থেকেই এই নামকরণ হয়েছে, এখানেই আছে ভল্লু বা ভালকি রাজার তৈরী পোড়া ইটের এক দুর্গ যা ভালকি মাচান নামে পরিচিত কার মতে এটি একটি টাওয়ার, বর্গী আক্রমণের জন্য এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছিলো। 


হাওড়া থেকে বোলপুরগামী প্রায় সব ট্রেনই গুসকরা স্টেশন ছুঁয়ে যায়। গুসকরা থেকে ভালকি মাত্র ২২ কিমি রাস্তা। স্টেশন থেকে ভাড়া গাড়ি। সড়কপথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানের পারাজ থেকে ডান দিকে অভিরামপুর হয়ে সোজা ভালকি মাচান। পারাজ থেকে মাত্র ১৬ কিমি। ভালকির জঙ্গলে থাকার জন্য মাত্র একটিই হোটেল। নাম ‘অরণ্যসুন্দরী’। পাকা রাস্তার কাছাকাছি। তাই চাইলেই আসতে পারেন।

যোগাদ্যা শক্তিপীঠ :- পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা সতীপিঠটি অবস্থিত ।এখানে দেবীর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙুল পড়েছিলো। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা যোগাদ্যা।


এই যোগাদ্যা মন্দিরটি কাটোয়া মহকুমার মঙ্গলকোট ব্লকের ক্ষীরগ্রামে অন্তর্গত । এখানে পৌঁছতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম যেকোনো ভাবে বর্ধমান বা কাটোয়াতে আসতে হবে। তারপর বাস বা ট্রেন এখানে চলে আসতে পারেন। বর্ধমান কাটোয়া লোকাল লাইনে কৈচর হল্ট স্টেশনে নেমে খুব সহজে এখানে চলে আসতে পারবেন।

বহুলা সতীপিঠ :- বর্ধমান জেলায় অবস্থিত মা সতীর আরো একটি মন্দির বহুলা সতীপিঠ, যা পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম ব্লকে অন্তর্গত। এখানে মা সতীর বাম হাত পড়েছিলো। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা বহুলা বা বেহুলা।


এখানে পৌঁছোনোর জন্য আপনাকে পৌঁছোতে হবে সর্বপ্রথম কাটোয়া জংশন স্টেশন। কাটোয়া আসার জন্য লোকাল ট্রেন বা বাস পেয়ে যাবেন। কাটোয়া নেমে আপনাকে বাসে যেতে হবে অথবা লোকাল ট্রেন ধরে পাচুন্ডী স্টেশন নেমে এখানে চলে আসতে পারেন, দূরত্ব মাত্র ৩ কি.মি।

অট্টহাস ৫১ সতীপিঠ :- পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের নিরোল গ্রামের কাছে দক্ষিণডিহিতে অবস্থিত এই অট্টহাস ৫১ সতীপিঠ মন্দির। এর উত্তরে ঈশাণী নদী ও কিছুটা দূরে শ্মশান ।এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পীঠ।মন্দিরের কাছেই কিছু পিকনিক স্পট ।জঙ্গলঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ এখানে।এখানে দেবী ফুল্লরা ও ভৈরব বিশ্বেশ ।এখানে দেবীর দন্তুরা চামুণ্ডা মূর্তি ।এখানে দেবীকে অধরেশ্বরী নামে পূজা করা হয়।


এই মন্দিরের পৌঁছতে হলে আপনাকে প্রথমত লোকাল ট্রেনে পৌঁছতে হবে কাটোয়া। তারপর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে নিরল স্টপেজ, সেখান থেকে টোটো রিজার্ভ করে দক্ষিণডিহির এই অট্টহাস মন্দিরে।

নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল :- পূর্ব বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপের কাছে অবস্থিত নতুনগ্রাম, ছোট্টো এই গ্রামটি বিখ্যাত তার কাঠের পুতুলের জন্য। বিশেষ করে কাঠের পেঁচা যা খ্যাতি রাজ্য দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। UNESCO পর্যন্ত ও যা কাঠের পেঁচাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নতুনগ্রামের কাঠের পেঁচা বিশ্ববন্দিত হলেও এই পেঁচা ছাড়াও নানা ধরনের দেবদেবীর দারু মূর্তি তৈরী হয়। মূলত এই মূর্তিগুলো গামার কাঠের তৈরী করা হয়। 


নতুনগ্রামে বসবাস কয়েকটি সূত্রধর পরিবারের, তারাই বংশ পরম্পরা ধরে এই বিভিন্ন ধরণের কাঠের পুতুল তৈরী করে যাচ্ছে এই পরিবারগুলো প্রথমে পাথর খোদাইয়ের কাজ করতেন। বর্ধমানের রাজার পৃষ্ঠপেকতায় পাথর খোদাইয়ের বেশ রমরমা থাকলেও পরে বর্ধমানের রাজার পতন হলে কারিগরেরা অসুবিধায় পরেন। তখন তারা পাথর খোদাইয়ের শিল্প ছেড়ে কাঠের পুতুল তৈরি করা শুরু করে। 

বর্তমানে UNESCO এবং রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে এবং সহযোগিতায় এই শিল্পের আরো শ্রীবৃদ্ধির জন্য ক্লাস্টার এবং হাব গড়ে তোলা হয়েছে, এবং জানুয়ারি মাসে গ্রামে পর্যটকদের উৎসাহিত করার জন্য ফেস্টের ও আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের রাজ্যের যেকোনো ছোটো বড় মেলাতেই আপনারা নতুনগ্রামের এই কাঠের পুতুল গুলো দেখতে পাবেন। এখানে আসা খুবই সহজ, জায়গাটি কালনা ও কাটোয়ার ঠিক মাঝে অগ্রদ্বীপে অবস্থিত, কাটোয়া লোকাল ধরে অগ্রদ্বীপে নেমে, তারপর টোটো করে এই গ্রাম পৌঁছতে হবে।

চুপির চর :- আমদের রাজ্যের পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য বলাই যেতে পারে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ব্লকের অন্তর্গত এই কাষ্ঠশালী পাখীরালয় যার আরেক নাম চুপির চর। ভাগীরথী নদী এই জায়গায় এসে অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদ সৃষ্টি করেছে যার ফলে এখানে এই চরের সৃষ্টি হয়েছে। আর শীত পড়ার সাথে সাথেই এই চর এলাকায় প্রচুর পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা হয়। যার টানে পর্যটন থেকে শুরু করে পাখি বিশেষজ্ঞ এবং ফটোগ্রাফারদের আনাগোনা প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে, বেশ কিছুদিন আগেও এই জায়গাটি এতটা জনপ্রিয় ছিল না কিন্তু স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে বর্তমানে এই জায়গা শীতে Most Popular Destination এ পরিণত হয়েছে।


আপনি যদি পাখি প্রেমী বা ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসেন তাহলে আসতেই পারেন এই চুপির চরে, এখানে আসা একদমই কঠিন কাজ না, কাটোয়া লোকাল ধরে আপনাকে নামতে হবে পূর্বস্থলী স্টেশনে, যা নবদ্বীপের ঠিক একটা স্টেশনের পরেই তারপর টোটো করে এখানে পৌঁছতে হবে। পাখি ভালো ভাবে পেতে হলে আপনাকে খুবই সকাল সকাল এখানে অবশ্যই পৌঁছে যেতে হবে, তারপর একটি ভাড়া করে ঘুরে নিন আপনার মনের মত। চুপির চরে আসা কয়েকটি বিখ্যাত পরিযায়ী পাখি গুলি হল - Red Chrested Pochard, Lesser Wishling Duck, Grey Headed Shamphan.

গঙ্গাটিকুরী জমিদারবাড়ি:- মুর্শিদাবাদের বর্ডার লাগোয়া দ্বিতীয় জমিদারবাড়িটি হলো এই গঙ্গাটিকুরী জমিদারবাড়ি বা রাজবাড়ি। এটির অবস্থান পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম-2 ব্লকের অন্তর্গত গঙ্গাটিকুরী গ্রাম। এই গ্রামের রাস্তার এপার পূর্ব বর্ধমান এবং ওপার মুর্শিদাবাদ জেলা। এই বাড়ি সাহিত্যিক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈত্রিক বাড়ি। এই বাড়িতে এখনো তার বংশধরেরা বাস করছে, দুর্গাপূজার সময়ে এখানে ধুমধাম করে দুর্গাপুজাও পালন করা হয়।


গঙ্গাটিকুরী জমিদারবাড়িটি কাটোয়ার খুবই কাছে অবস্থিত। কাটোয়া থেকে এখানে আসার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো লোকাল ট্রেন, কাটোয়া থেকে আজিমগঞ্জ লোকাল ধরে গঙ্গাটিকুরী স্টেশনে নামতে হবে তারপর টোটো করে ১০ মিনিটের রাস্তা এই জমিদারবাড়ি।

দরিয়াপুরের ডোকরা শিল্প :- পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত দরিয়াপুর গ্রাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় অনেক গুলো পরিবার সুদূর ছত্রিশগড়ের বস্তার থেকে কাজের সন্ধানে এই গ্রামে এসেছিলেন। বর্তমানে প্রায় ২৫টি পরিবার প্রায় ৫০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এই সুন্দর হাতের কাজ করে চলেছে, যাকে বলা হয় ডোকরা শিল্প। ডোকরা শিল্প হল গলানো পিতলকে ছাঁচের মধ্যে ঢেলে বিভিন্ন ডিজাইনের মূর্তি গড়ে তোলা। এই ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত বাঁকুড়ার বিকনা গ্রাম, এই বিকনা গ্রাম ছাড়াও গুসকরা কাছে অবস্থিত এই দরিয়াপুর গ্রামেও যথেষ্ট খ্যাতি আছে। এই শিল্প GI ট্যাগ ও পেয়েছে ।


বর্তমানে এখানে একটি Craft সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে খুবই সুন্দর ভাবে এখানে এসে আপনারা ডোকরার বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি সামনা সামনি যেমন দেখতে পাবেন তেমনি নিজের মনের মত বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম আপনারা কিনেও নিতে পারবেন। এই জায়গাটি গুসকরা শহর থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত আপনি ট্রেন বা বাসে গুসকরা পৌঁছে একটা টোটো ভাড়া করে এখানে সহজেই চলে আসতে পারবেন।

চোংদার বাড়ি, গুসকরা :- গুসকরা শহরের একদম মাঝে অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন এই চোংদার জমিদারবাড়ি। হরিশচন্দ্র চোংদার এবং গিরিশচন্দ্র চোংদার নামে দুই ভাই হাত ধরে এই জমিদারি সূচনা হয়, বর্ধমানের রাজার তারা সহযোগিতায় জমিদারিত্ব পান। তারপর যথারীতি শুরু হয় দুর্গাপুজো। এখনো সেই রীতি মেনে দুর্গাপূজা চলে আসছে।


প্রায় কয়েকশো বছর হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এই দুর্গাপূজার Traditional ও আভিজাত্য বজায় রেখেছে। এই চোংদার পরিবারের আসল পদবী ছিল কিন্তু চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে এই জমিদারবাড়ির বংশধর সোমনাথেশ্বর চোংদার। গুসকরার ডোকরা শিল্প কেন্দ্র দেখা ছাড়াও এই জমিদারবাড়িটিও একটা আকর্ষন।

পান্ডু রাজার ঢিপি :- পূর্ব বর্ধমান জেলার আয়ুশগ্রাম-2 ব্লকের অন্তর্গত পাণ্ডুক নামক এলাকায় আছে পান্ডু রাজার ঢিপি বলে একটি ঐতিহাসিক স্থান। মনে করা হয় মহাভারতের পাণ্ডু রাজার ঢিপি এটা।


এই জায়গাটি খনন এবং প্রথমবারের জন্য খুঁজে পেয়েছিলেন ডক্টর পরেশ চন্দ্র দাস গুপ্ত ও তার টিম। স্বাধীনতার পর এটি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম স্থান যাকে খনন করে বের করা হয়েছিলো। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই জায়গাটিকে সংরক্ষিত করে রেখেছে। ভেদিয়া আয়ুশগ্রাম বা গুসকরা তিনটি জায়গা থেকেই এখানে আসা যাবে।

চকদিঘী রাজবাড়ি :- এই জেলার জামালপুরের কাছে চকদিঘীতে আছে সিংহ রায় পরিবারের জমিদার বাড়ি। প্রায় ৩৫০ বছর আগে লাল সিংহ এখানে জমিদারর পত্তন করেন,পরবর্তীতে এই পরিবার সিংহ রায় উপাধি লাভ করেছিলেন। এখানে বেশ কয়েকটি দেখার জায়গা রয়েছে যেমন - ১. বাগানবাড়ি।

২. বড়বাড়ি।

৩. ভেরিবাড়ি ।

৪. মনিরাম বাটি জমিদারবাড়ি। 

৪. রানী মহল ।

৫. জল মহল। 

সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে সিনেমার অনেক অংশ এই বাড়িতেই শুটিং হয়েছিলো। এছাড়াও তানসেনের তানপুরা, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখন খেতে আসেন নি, দেবের গোলন্দাজ সিনেমারও শুটিং হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যাসাগর, লর্ড কার্জন, সালমান রুসদী, সত্যজিৎ রায় প্রভৃতি মহান মানুষদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়িতে। 


বৈদ্যপুর :- পূর্ব বর্ধমানের বৈদ্যপুর । গুরাপ এবং অম্বিকা কালনার মধ্যবর্তী কলকাতা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৮০ কিলোমিটার (প্রায় দুই ঘণ্টা) দূরে বৈদ্যপুর গ্রামের ল্যান্ডস্কেপে বহু প্রাচীন প্রাসাদ, ঝাড়ু দেওয়া দুর্গা দালান এবং ঐতিহাসিক মন্দিরগুলি এখনও আধিপত্য বিস্তার করে। এখানে দেখার মত পেয়ে যাবেন জোড়া দেউল, নন্দী বাড়ির পুজো দালান, পঞ্চরত্ন বিশিষ্ট টেরাকোটার মন্দির, নন্দীদের বৈঠকখানা, রাসমঞ্চ, কাছারীবাড়ি ।


মীরহাটের পুজো বাড়ি :- পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার খুব কাছে বৈদ্যপুর লাগোয়া গ্রাম মীরহাট গ্রাম। এই গ্রামেই আছে ঐতিহ্যশালী প্রাচীন পুজো বাড়ি । ১২৬৬ বঙ্গাব্দে দে চৌধুরী বংশের পরিবারের উদ্যোগে তৈরি করা হয়। 


শক্তিগড়ের ল্যাংচা :- পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান নিয়ে তো অনেক আলোচনা করলাম এখন এমন একটি জায়গার কথা বলবো যে জায়গাটি রাজ্য তথা গোটা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একটি খাওয়ারের জন্য বিশেষ করে বলতে গেলে একটি মিষ্টান্নের জন্য নামটা সকলেই প্রায় জানেন শক্তিগড়ের ল্যাংচা। শুধু বর্ধমান বা রাঢ়বঙ্গ নয়, শক্তিগড়ের ল্যাংচার স্বাদে মজেছেন কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যবাসী। ভিন রাজ্যেও নিয়মিত পাড়ি জমাচ্ছে শক্তিগড়ের ল্যাংচা। সেই ল্যাংচা তৈরির পেছনে একটা সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। সেটা জানেন কী? আসুন সেটা একটু জেনে নি....

কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার বিয়ে হয়েছে বর্ধমানে রাজকুমারের সঙ্গে। অন্ত:সত্ত্বা হলেন রাজকুমারী। খুশির হাওয়া রাজবাড়িতে। কিন্তু শুরু হল অন্য এক বিপত্তি। কোনও খাবারেই রুচি নেই রাজকন্যার। একদিন যায়, দু-দিন যায়, রাজবৈদ্য, কবিরাজদের পথ্য বদল হয়, কিন্তু রুচি ফেরে না। চিন্তা বাড়তে থাকে রাজা রানি সহ সকলেরএকদিন দেখা দিল আশার আলো।


রানিমাকে রাজকন্যা একদিন বললেন, কৃষ্ণনগরে রসে ডোবানো এক ধরনের ভাজা কালো রংয়ের মিষ্টি খেয়েছিলো সে। সেই মিষ্টি মিললে মুখের অরুচি কাটতে পারে। কিন্তু কি সেই মিষ্টি, কে তার কারিগর কিছুই জানে না সে। তবে যে ময়রার কাছে সে ওই মিষ্টি খেয়েছিল সেই ময়রার একটি পা খোঁড়া, তাই সে একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে। রাজকন্যার মুখে এই কথা শোনামাত্র রাজা তখনই কৃষ্ণনগরের লোক পাঠালেন। অবশেষে খোঁজ মিলল সেই ময়রার। খুঁড়িয়ে বা লেংচে হাঁটার জন্য তাকে সবাই ডাকতো ল্যাংচা ময়রা বলে। রাজার আদেশে সেই ময়রা তখন রাজকন্যাকে ঘিয়ে ভাজা রসে ডোবানো কালো রংয়ের একটু লম্বাটে অপূর্ব স্বাদের সেই মিষ্টি খাওয়ালো। সেই মিষ্টি খেয়ে রাজকন্যার এতদিনের অরুচি দূর হলো। রাজবাড়ির সবার মুখে হাসি ফুটলো। ল্যাংচা ময়রার নামেই সেই মিষ্টির নাম রাখা হল ল্যাংচা। ময়রাকে প্রচুর ভূসম্পত্তি ও উপহার দিলেন মহারাজ। সেই ময়রা বর্ধমানের শক্তিগড়ে নতুন বসতি গড়ে তুললেন। ল্যাংচা ময়রার তৈরি লাংচার সুনাম তখন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। দিনে দিনে বিখ্যাত হল শক্তিগড়ের ল্যাংচা।

সেই ছোট্ট শক্তিগড় কিন্তু এখন এই ল্যাংচার জন্য বর্তমানে এক বড় শহর, ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, ল্যাংচা হাব থেকে শুরু করে রাস্তার দুধারে সারি সারি ল্যাংচার দোকান যা মানুষকে বেশি মাত্রায় আকর্ষন করে। বাইরোড বা ট্রেন দু পথেই আপনারা এই শক্তিগড়ে চলে আসতে পারবেন।


ধন্যবাদ ব্লগটি পড়ার জন্য 🙏🙏🙏



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন