Nadia District, Top 30 Tourist Spot / নদিয়া জেলার সেরা ৩০টি দর্শনীয় স্থান ।

 - : নদীয়া জেলা :-

 ভ্রমণ পিপাসু:-  ভ্রমণ পিপাসুর জেলা সিরিজে আজকের পর্বে আলোচনা করবো নদিয়া জেলা নিয়ে। এই ব্লগে থাকছে নদিয়া জেলার সেরা ৪০ টি দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে কিছু জায়গা আপনাদের একদমই চিরপরিচিত এবং কিছু জায়গা একদমই অজানা, এই জেলার মোটামোটি সমস্ত ভ্রমন স্পটই এই ব্লগে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলার ট্যুরিস্ট স্পটগুলো জেলা ভিত্তিক এক এক করে তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমার এই ওয়েবসাইটে, বাকি জেলা গুলো না দেখে থাকলে অবশ্যই দেখে নেবেন আমি নিচে লিঙ্ক দিয়ে দেবো।


এই নদিয়া জেলায় আপনি যেমন পাবেন প্রচুর ঐতিহাসিক স্থান, কিছু মসজিদ, রাজবাড়ি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কিছু স্থান, আর পাবেন প্রচুর মন্দির, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এটি বাংলার ইতিহাসে মহান ভক্ত এবং গৌড়ীও বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান। এই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান হওয়ার কারণেই নদিয়া আজ বিশ্বের মানচিত্রে পরিচিত হয়েছে।

১৭৮৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ঐতিহাসিক অঞ্চল হিসেবে নদিয়া জেলার আত্মপ্রকাশ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী নামক একজন জনৈক ব্যক্তির মতানুসারে, ভাগীরথীর তীরে চরভূমিতে একজন তান্ত্রিক ন'টি প্রদীপ জ্বালিয়ে তন্ত্র সাধনা করতেন। দূর থেকে এই জায়গাটিকে দেখে লোকে ন'দিয়ার চর বলতেন, সেই থেকেই লোকমুখে প্রচলিত হয় এই 'নদিয়া' নামটি। ইংরেজ আমলে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ আগস্ট কিয়দংশ বাদে নদিয়া পুনরায় ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবিভক্ত নদিয়া জেলা কৃষ্ণনগর সদর, রাণাঘাট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এই পাঁচটি মহকুমায় বিভক্ত ছিল। দেশভাগের পরে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এই তিনটি মহকুমা তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়াজেলা হিসেবে পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত হয়। আর কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট সাবডিভিশন নিয়ে নদিয়া জেলা গঠিত হয়।

চলুন এবার এক এক করে নদিয়া জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো সম্বন্ধে এক এক করে জেনে নি, তার সাথে এই জায়গা গুলোতে কেমন করে আসবে, কেমন করে ঘুরবেন সমস্ত কিছুই তুলে ধরবো।

১,কৃষ্ণনগর :- শুরুটা করি নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগর দিয়ে। কৃষ্ণনগর হল জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত জেলা সদর। কৃষ্ণনগরের নামকরণ করা হয়েছে রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের (1728-1782) নামে। তার আমলেই বাংলায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা হয়। কৃষ্ণনগর ছিল বিশিষ্ট কবি, সুরকার ও নাট্যকার জন্মস্থান। দ্বিজেন্দ্র লাল রায় (1863 – 1913) জন্মস্থান বাংলা সাহিত্যে যাঁর অবদান উল্লেখ করার দরকার নেই। এবার দেখে নি কৃষ্ণনগরে আসলে কি কি দ্রষ্টব্য স্থান আপনারা পাবেন -

১. কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি :- রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়ের রাজত্বকালে এখানে এই রাজবাড়িটি নির্মিত হয়। যদিও অতীত গৌরবের অবশিষ্টাংশগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং এর ভিতরের দেয়ালে খোদাই করা চমৎকার স্থানগুলির একটি জীর্ণ কাঠামো আজ বিদ্যমান রয়েছে। এই রাজবাড়িতে সারা বছর আপনারা ঢুকতে পাবেন না, কারণ রাজবাড়িতে এখনো রাজ পরিবারে বংশরা বসবাস করছে, আপনি কেবল একমাত্র দুর্গাপূজা ও জগদ্ধাত্রী পূজার সময়েই এই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন, তাও আবার একটা অংশে মাত্র। অন্য সময়ে আসলে আপনাকে বাইরে থেকে দেখেই চলে যেতে হবে। স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ড থেকে টোটো করে খুব সহজেই এখানে চলে আসতে পারবেন।


২. মাটির পুতুলের জন্য বিখ্যাত - ঘুর্নি :- কৃষ্ণনগরের নাম এক বাক্যে সবাই চেনে এই মাটির পুতুলের জন্য। যার খ্যাতি রাজ্য ছাড়িয়ে জগৎজোড়া। কৃষ্ণনগরের ঘূর্নি এলাকা এই মাটির পুতুল তৈরির প্রধান কেন্দ্র। কৃষ্ণনগরের জগদ্বিখ্যাত মাটির পুতুলগুলো এখানে তৈরি ও বিক্রি হয় । পাশাপাশি সার দেওয়া পরপর দোকান, সেখানে বসেই কারিগর তৈরি করছেন ও বিক্রি করছেন । ছাঁচের পাশাপাশি এখানে শুধু হাত ও নানারকম ছোটখাটো ছুরি চিমটে দিয়ে পরপর পুতুল তৈরি হয়ে চলেছে । দুর্গা, গণেশ, রাধাকৃষ্ণ, কালী, চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে সাঁওতাল দম্পতি, গ্রামের ছেলে-বুড়ো, সব্জী বিক্রেতা, কামার, কুমোর সবার মুর্তিই তৈরি হয় । মাটির গয়নাও পাওয়া যায় । মাটির পুতুলের পাশাপাশি এখানে স্টিল, স্টোন ও ফাইবারের বিভিন্ন মূর্তি ও তৈরি হচ্ছে। গেলে এখানে অবশ্যই বাড়ির জন্য নিয়ে আসতে পারেন।


গোপাল ভাঁড়ের বাড়ি :- কৃষ্ণনগর যেমন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কৃষ্ণনগর তেমনি মাটির পুতুলের ও কৃষ্ণনগর। এর পাশাপাশি কৃষ্ণনগরের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছে আরো একটি নাম গোপাল ভাঁড়। তাঁর আসল নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মনরঞ্জনকারী এবং সৎ ও বুদ্ধিমান একজন মানুষ। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় নবরত্ন সভাসদের একজন ছিলেন তিনি।


গোপাল ভাঁড় কে নিয়ে অনেক গল্প কথা প্রচলিত, এর পাশাপাশি অনেক গবেষনাও হয়েছে ।গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে অনেক বিতর্ক ও চলে আসছে, সেদিকে না গিয়ে পয়েন্টে ফিরে আসি সেটা হলো গোপাল ভাঁড়ের বাড়ি, মনে করা হয় তার বাড়ি এই কৃষ্ণনগরেই ছিল, কিন্তু কোথায় সেটা কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারেনা, অনেকে আছে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তও করছে তাই সেদিকে না যাওয়াই ভালো।

৩. সরভাজা ও সরপুরিয়া :- কৃষ্ণনগরে বেড়াতে আসবেন আর এখানকার সরভাজা, সরপুরিয়া খাবেন না এটা হতে পারে। কৃষ্ণনগরের অনন্তহরি মিত্র লেনে অবস্থিত অধর চন্দ্র দাসের ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই দোকান। অধর দাস ছিলেন সরভাজা, সরপুরিয়ার আবিষ্কর্তা। এখানে কিন্তু পাশাপাশি দুটো দোকান আছে একটি পুরনো এবং একটু নতুন, পুরনো দোকানটি কিন্তু অধর চন্দ্র দাসের প্রতিষ্ঠিত আদি দোকান, এখানে সরভাজা - ৬০০ এবং সরপুরিয়া ৫০০ টাকা কেজি।


কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা :- কৃষ্ণনগরে বেড়াতে আসলে সবচেয়ে আদর্শ সময় কিন্তু এই জগদ্ধাত্রী পূজার সময়েই। এই সময়ে আসলে জগদ্ধাত্রী পূজা দেখার পাশাপাশি কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাজবাড়ির পূজা ও দেখার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। জগদ্ধাত্রী পূজা এখন বিভিন্ন জায়গায় হলেও এই রাজবাড়ি থেকেই কিন্তু এর সূত্রপাত হয়েছিলো, সূচনা করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। এই পূজা সূচনার সাথে ও কিন্তু এক বিরাট ইতিহাস জড়িয়ে আছে - কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মতে ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে এই পূজার সূচনা করেন তিনি নাকি তৎকালীন মুর্শিদাবাদের নবাব আলিবর্দীর আমলে মহাবদজং তাকে বন্দি করার কারণে দুর্গা পূজা করতে পারেন নি এবং দুর্গা পূজার পর ছাড়া পেলে স্বপ্নাদেশে পরের মাসের অর্থাৎ কার্তিক শুক্লা নবমীতে এই পূজার প্রচলন করেন। সময়কাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও অনুমানিক সূচনাকাল সর্বপ্রথম কৃষ্ণনগর। এর পর চন্দননগর বা অন্যান্য স্থানে জগদ্ধাত্রীপূজার সূচনা হয়।

কৃষ্ণনগর চার্চ এবং কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ :- কৃষ্ণনগরে যদি আসেন এই দুটি জায়গা থেকেও আপনারা ঘুরে যেতে পারেন জায়গা দুটি হল কৃষ্ণনগর চার্চ এবং কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ। ঐতিহাসিক দিক থেকে দুটি জায়গায় বিশেষ গুরুত্ব সম্পন্ন।

কৃষ্ণনগর সিদ্ধেশ্বরী কালিমন্দির :- কৃষ্ণনগরের প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দির। কিন্তু দেখে আপনাদের এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন না, মন্দিরের সংস্কারের কারণে। কৃষ্ণনগর আসলে অবশ্যই এই মন্দির থেকে ঘুরে যাবেন যার অবস্থান কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোডে। 


কৃষ্ণনগরের রাজঘাট দিঘী :- কৃষ্ণনগর যারা বাইরে থেকে বেড়াতে আসেন তাদের কাছে এই জায়গাটি একদমই নতুন একটা জায়গা। স্থানীয় মানুষের কাছে জায়গাটি রাজঘাট হিসেবে পরিচিত, ঘাটের সামনেই আছে জলাশয় বা পরীখা যেটা রাজদিঘী নামে পরিচিত, যা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন জলঙ্গীর একটি শাখা অঞ্জনার তীরে। 


শিবনিবাস :- কৃষ্ণনগর শহর থেকে প্রায় ২২ কি.মি দূরে মাজদিয়ার কাছে অবস্থিত শিবনিবাস। এই শিবনিবাস কিন্তু এই জেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা হয়ে ছিল, কারণ এই শিবনিবাসেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার রাজধানী কৃষ্ণনগর থেকে স্থানান্তরিত করেছিলেন, বর্গী আক্রমণের ভয়ে। তিন দিক দিয়ে চূর্ণী নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এই জায়গাটি বেশ সুরক্ষিত ছিল। এখানে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের উদ্যোগে ১০৮টি শিব মন্দির নির্মিত হয়। যার মধ্যে তিনটি এখন অবশিষ্ট আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিবনিবাস শিবমন্দিরটি যা রাজ রাজেশ্বর মন্দির নামে পরিচিত, যেখানে আছে পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম শিবলিঙ্গ।


রাজ রাজেশ্বর মন্দিরের পূর্ব দিকে আছে আরো একটি মন্দির যার নাম রাজ্ঞীশ্বর মন্দির। এই মন্দিরের ও একটি ৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি শিবলিঙ্গ আছে। এই দুটি মন্দিরই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার দুই স্ত্রীর জন্য নির্মাণ করেছিলেন। এর পাশেই আছে আরো একটি রাম সীতার মন্দির। এই শিবনিবাসে আসা খুবই সহজ, আপনি গেঁদে লোকাল ধরে মাজদিয়াতে নেমে টোটো ধরে এখানে চলে আসুন, অথবা কৃষ্ণনগর নেমেও টোটো বা গাড়ি করে এখানে পৌঁছে যেতে পারেন।

জমশেরপুরের বাগচী জমিদারবাড়ি :- নদিয়া জেলার একদম উত্তরে মুর্শিদাবাদ জেলার খুবই কাছে অবস্থিত নদিয়া জেলার আরো একটি অজানা অফবিট জায়গা, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের "বল্লভপুরের রূপকথার" শুটি হয়েছিলো এখানেই।জায়গাটি হলো নদিয়া জেলার করিমপুর ব্লকের জমশেরপুর গ্রামের বাগচী জমিদারবাড়ি। এই বাড়িটি হলো "কাজলা দিদি" খ্যাত কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচীর জন্মভিটে। এখানে দুটো জমিদারবাড়ি আছে একটা নতুন একটা পুরনো আরো কিছু স্থাপত্য, মন্দির এখানে আসতে দেখা যাবে।বাদল সরকারের নাটক বল্লভপুরের রূপকথা অনুকরণে সিনেমা বল্লভপুরের রূপকথার শুটিং এখানেই হয়েছিলো।


যাবেন কি ভাবে - এই জায়গাটি নদিয়া জেলার করিমপুরে অবস্থিত। আপনি এখানে আসতে চাইলে বাইক, নিজস্ব গাড়ি বা বাসে আসতে পারবেন। বাসে আসলে বহরমপুর বা কৃষ্ণনগর দুটি শহর থেকেই বাস পেয়ে যাবেন। বহরমপুর থেকে বাসে আসলে ডোমকল, জলঙ্গী হয়ে করিমপুরের কিছু আগেই এই জমশেরপুর গ্রাম পড়বে। সময় দু ঘন্টার কিছু বেশী লাগবে। একইরকম ভাবে কৃষ্ণনগর থেকে তেহট্ট হয়ে আসতে প্রায় একই সময় লাগবে।

পলাশী :- সদর শহর কৃষ্ণনগর থেকে প্রায় ৫০ কি.মি দূরে কালিগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত ঐতিহাসিক স্থান পলাশী যা ভাগীরথী নদী ও ৩৪ নং জাতীয় সড়কের একদম পাশে অবস্থিত। পলাশী নিয়ে খুব একটা বেশি কিছু বলার হয়তো একদমই দরকার পড়বে না, কম, বেশি আমরা প্রায় সকলেই জানি।


১৭৫৭ সালের ২৩ এ জুন পলাশীর আমবাগানের এক খণ্ড যুদ্ধে কয়েকজনের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার নবাব সিরাজদৌল্লা পরাজিত হোন, মীরমদন মোহনলাল সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেন, বাংলায় শুরু হয় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। NH-৩৪ এর মোড়ে নেমে পলাশীর দিকে যাওয়ার মুখেই পেয়ে যাবেন নবনির্মিত পলাশী ওয়ার মেমোরিয়াল, এখান থেকেই টোটো করে আপনাকে যেতে পলাশী মনুমেন্টের দিকে এখানে একটি মনুমেন্ট আর সিরাজদৌল্লার মূর্তি ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। চাইলেই আসতে পারেন ভারতবর্ষের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবশ্যই যাওয়া উচিত। আপনি কৃষ্ণনগর বা বহরমপুর যেকোনো দিক থেকে NH - ৩৪ ধরে এখানে চলে আসতে পারেন । এছাড়া শিয়ালদহ থেকে ট্রেনেও পলাশী স্টেশনে এই জায়গাটিতে আসতে পারবেন।

বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য :- কৃষ্ণনগর থেকে ২২ কি.মি উত্তরে জাতীয় সড়ক ৩৪ এর একদম পাশে প্রায় ৬৭ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য, যা নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়া ব্লকের অন্তর্গত। ১৯৮০ সালে এটিকে সরকারি অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছিলো। 


এখানকার প্রধান আকর্ষন হলো বেঙ্গল ফক্স, সজারু, কমন ল্যাঙ্গুরের বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে রয়েছে প্যারাকিট, ভারতীয় কোকিল, বারবেট এবং অন্যান্য ছোট পাখি এবং পাইথন। অনেক ধরনের গাছ এবং ছোট কুমির, সাধারণত ঘড়িয়াল নামে পরিচিত। এছাড়াও এখানে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামে নামাঙ্কিত প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র আছে।

এখানে আসতে হলে আপনি রেল বা সড়কপথ দুটি হয়েই আসতে পারেন, ট্রেনে আসলে চাইলে শিয়ালদা থেকে লালগোলার ট্রেন ধরে নামতে হবে বেথুয়াডহরী স্টেশনে, সড়কপথ আসতে চাইলে জাতীয় সড়ক ধরে আসুন জাতীয় সড়কের একদম পাশেই এই অভয়ারণ্যটি অবস্থিত।

দর্শনা-গেঁদে বর্ডার :- নদিয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত প্রান্তিক শহর গেঁদে উল্টে দিকেই আছে বাংলাদেশের খুলনা ডিভিশনের চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনপুর উপজেলার জয়নগর-দর্শনা। ২০০২ সালে এই বর্ডারটি ওপেন হয়েছিলো। এই লাইন  যাত্রীদের জন্য যাওয়ার কোনো পারমিশন নেই পণ্যবাহী যানবাহন কেবলমাত্র এই রুট দিয়ে যায়।


এই বর্ডার হয়ে একটি ট্রেন লাইনও আছে যে পথ দিয়েই দু দেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে। সেই অর্থে গেঁদে এই এলাকায় ভারতের শেষ স্টেশন। শিয়ালদা থেকে গেঁদে পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলাচল করে তাই খুবই সহজে গেঁদে চলে আসতে পারবেন। আর বাংলাদেশীদের ও গেঁদে বর্ডার হয়ে খুবই সহজে ও কম খরচে কলকাতা আসতে পারেন।

নবদ্বীপ ও মায়াপুর ভ্রমণ :- নদিয়া জেলার ভ্রমণের প্রধান আকর্ষন হলো এই নবদ্বীপ ও মায়াপুর। ভাগীরথী ও জলঙ্গী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মায়াপুর এবং তার উল্টোদিকেই নদীর ওপর পারে অবস্থিত নবদ্বীপ। বৈষ্ণব তীর্থ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দুটি শহরকেই যময শহরও বলা যেতে পারে।

এর মধ্যে নবদ্বীপ অনেকে পুরনো ও ঐতিহাসিক শহর। সেন রাজা লক্ষন সেনের আমলে এই নবদ্বীপই ছিল গৌড় তথা বাংলার রাজধানী, তখন তাকে লক্ষনাবতী ও বাংলার অক্সফোর্ড বলা হতো। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক ভক্তি সাধক চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান এই নবদ্বীপেই। তার তুলনায় মায়াপুরের ইতিহাস খুব বেশী দিনের না। মায়াপুর পূর্বে জনবিরল একটি এলাকা ছিল, কয়েকটি মুসলিম মৎসজীবি সম্প্রদায়ের বাস ছিল এখানে, এই জায়গাটিকেপূর্বে মিয়াঁপুর বলা হতো, পরবর্তীতে এর নাম হয়ে যায় মায়াপুর। ১৯৭২ সাল থেকে আধুনিক মায়াপুরের যাত্রা শুরু হয়, ISKCON মন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। অভয়াচরন দে এখানে ISKCON মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন, তার পর ৫০ বছরের মধ্যে এই ISKCON কে কেন্দ্র করেই মায়াপুর গোটা পৃথিবীতে নবদ্বীপ থেকে কয়েক গুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।


মায়াপুরের প্রধান আকর্ষনই হচ্ছে এই ISKCON মন্দির যা চন্দ্রোদয় মন্দির নামে পরিচিত। এখানেই ISKCON এর উদ্যোগে পৃথিবীর বৃহত্তম মন্দির বেদিক প্ল্যানেটরিয়ামের কাজ এখনো চলছে। এছাড়াও আছে অসংখ্য মঠ মন্দির আশ্রম। অপরদিকে নবদ্বীপে আপনি পেয়ে যাবেন প্রায় ১৫০ ওপরে মন্দির আছে প্রধান আকর্ষন চৈতন্যদেবের জন্মস্থান। চলুন এবার নবদ্বীপ ও মায়াপুর দ্রষ্টব্য স্থান গুলো এক এক করে দেখেনি।

১. শ্রী শ্রী কেশবজি মঠ :- নবদ্বীপের এটি সবথেকে প্রসিদ্ধ এবং সুবিশাল মঠ। এখানে একটি মিউজিয়াম আছে, যেখানে শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলার বিভিন্ন আঙ্গিকে। মূর্তি দেখা যায়।

২. জল মন্দির: - এই মন্দিরটি জলাশয় এর মাঝখানে অবস্থিত এবং এখানে প্রচুর হরিণ দেখতে পাওয়া যায়।

৩. মনিপুর রাজবাড়ি :- এই রাজবাড়িতে এখনও মনিপুর বংশধরেরা আসেন এবং গৌরাঙ্গের বিগ্রহ দেখতে পাওয়া যায়।

৪. জগন্নাথ মিশ্রের বাড়ি :- এটি শ্রী গৌরাঙ্গের জন্মস্থান। এছাড়াও এখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য একটি কাছে সুতো বাঁধা হয়।

 ৫. পোড়ামা তলা মন্দির : - এইখানে মা কালীর মূর্তি পূজিত হতে দেখা যায়।নামকরণের ইতিহাসের পিছনে জানা যায় কোনও এক সময় এই মায়ের মূর্তি বজ্রপাতের ফলে পুড়ে গিয়েছিল, তারপর থেকে এখানকার নাম এইরূপ হয়।

৬. বুড়ো শিব মন্দির :- এটি নবদ্বীপের সবচেয়ে প্রাচীনতম শিব মন্দির। 

৭. নরহরি শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য সেবা মিশন : - এখানে বিশ্বের সবথেকে বড় ৬০ ফুট উচ্চতার নিমাই-এর মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও এখানে আরো প্রচুর মন্দির রয়েছে, পুরসভার তথ্য অনুযায়ী ১৮৬টির বেশি মন্দির নবদ্বীপে অবস্থিত। যা দেখতে পায় ২, ৩ দিন সময় লেগে যাবে। এখানকার বেশিরভাগ মন্দির ও মঠ দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে তাই এটা দেখেই এখানে আসবেন, একটা টোটো সারাদিনের জন্য রিজার্ভ করে নিলে ভালো ২০০ - ৩০০ টাকা ভাড়া নিতে পারে। 

এবার আসি মায়াপুরের কথায়... 

১ ইস্কন মন্দির :- এটি সবথেকে বড় বৈদিক মন্দির এবং মায়াপুরে পর্যটক আসার প্রধান আকর্ষন। যার টানে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক এখানে এসে থাকে। এই মন্দির টি প্রকৃত নাম চন্দ্রোদয় মন্দির, মন্দিরের চূড়ায় সোনার পাতে মোড়া এবং স্টেনলেস স্টিলে তৈরি করা একটি সুদর্শন চক্র অবস্থিত। যার উচ্চতা ২৩ ফুট এবং ওজন প্রায় দেড় টন। এই চক্রটি তৈরি হয়েছে রাশিয়াতে। খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। 

এছাড়াও ইসকন মন্দিরে রয়েছে প্রভুপাদ-এর সমাধি। শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মস্থান হিসেবে মায়াপুর 'চন্দ্রোদয় মন্দির' নির্মাণ করেন সন্ত বিনোদ ঠাকুর। চন্দ্রোদয় মন্দিরে গোপিনী পরিবেষ্টিত শ্যাম-রাইয়ের মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও এখানে ছেলেদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য রয়েছে বৈদিক একাডেমি। পর্যটকদের জন্য এখানে ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা রয়েছে এবং কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানে এখানে বিভিন্ন ভবনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পর্যটকদের থাকার জন্য। এছাড়াও পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের এসি এবং নন এসি থাকার ব্যবস্থা।

ভক্ত চাঁদ কাজীর সমাধি :- মায়াপুর থেকে প্রায় ৪ কি.মি দূরে একদম বামনপুকুর বাজারে রাস্তার একদম ধারেই অবস্থিত ভক্ত চাঁদ কাজীর সমাধি। ভক্ত চাঁদ গাজীর আসল নাম মৌলানা সিরাজউদ্দীন, তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের শাসক এবং সুলতান হুসেন শাহের শিক্ষক। তিনি প্রবল ভাবে শ্রী চৈতন্যদেবের বিরোধী ছিলেন কিন্তু তিনি কি করে চৈতন্যদেবের বিরোধী থেকে ভক্ত চাঁদকাজী হয়ে উঠলেন তার জন্য একটু ইতিহাসে দিকে যেতে হবে।


চাঁদকাজী যেহেতু চৈতন্যদেবের বিরোধী ছিলেন তাই চৈতন্যদেবের নাম সংকীর্তনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন, সংকীর্তনের খোল পর্যন্ত ভেঙে দেন। কিন্তু এই বাধা নিষেধ অমান্য করেই চৈতন্যদেবে দলবল নিয়ে বামুনপুকুরে চাঁদ কাজীর সমাধির দিকে অগ্রসর হোন, একদম তার বাড়িতে প্রবেশ করে যান, তারপর দুজনের মধ্যে এক তুমুল তর্কাতর্কি, আলোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তর্ক যুদ্ধে তিনি চৈতন্যদেবের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হোন, এবং চৈতন্যদেবের প্রধান ভক্তে পরিনত হোন। 

তার মৃত্যুর পর তিনি চৈতন্যদেব তাকে বামুনপুকুরে বাজারের কাছে সমাধিস্থ করেন এবং তার সমাধির ওপরে একটি গোলকচাঁপা ফুল গাছ রোপন করেন, প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই গাছটি এখনো প্রতিদিন ফুল দিয়ে যাচ্ছে। পাশেই অবস্থিত একটি নিমগাছ আছে যা চৈতন্যদেবের প্রতীক এবং গোলকচাঁপা গাছটি ভক্ত চাঁদগাজীর প্রতীক। এই সমাধিস্থলটি মায়াপুর চৈতন্যমঠ কতৃক পরিচালিত।

আপনি মায়াপুরে আসলে টোটো ভাড়া করে খুবই সহজে এখানে চলে আসতে পারেন । আপনি যদি কৃষ্ণনগরের দিক থেকে সড়কপথে এখানে আসতে তাহলে NH-৩৪ এর চৌগাছা হাঁসডাঙ্গা বা ধুবুলিয়াতে নেমে টোটো করে এখানে আসতে পারেন। এছাড়াও নবদ্বীপ থেকে মায়াপুরের বাস ধরেও সরাসরি এখানে আসতে পারবেন। লোকাল ট্রেনে আসলে ধুবুলিয়াতে বা কৃষ্ণনগরে নামতে হবে।


 বল্লাল ঢিপি :- মায়াপুর থেকে প্রায় ৪ কি.মি দূরে বামনপুকুরে অবস্থিত এই বল্লাল ঢিপি। 1980-এর দশকের গোড়ার দিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া দ্বারা এখানে খনন কাজ শুরু হয়েছিল, এটি প্রায় 13,000 বর্গমিটার জুড়ে একটি অনন্য কাঠামোগত কমপ্লেক্স প্রকাশ করেছিল। মিটার 9 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি ঢিপির চারপাশে কেন্দ্রীভূত করা।

বামুনপুকুর বাজারে অর্থাৎ ভক্ত চাঁদকাজীর সমাধিস্থল থেকে পাঁচমিনিট উত্তর-পশ্চিম দিকে হাঁটলেই দেখা যাবে সুপ্রসিদ্ধ বল্লাল ঢিপি। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, বল্লাল ঢিপির পার্শ্বস্থ একটি গোরস্থান রয়েছে। আর এই ঢিপির নীচে বল্লাল সেনের আমলে নির্মিত প্রাসাদ ছিল বলে অনুমান করা হয়। তবে বর্তমানে এটি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন অনুসারে সংরক্ষিত করা হয়েছে। বল্লাল ঢিপি লম্বায় প্রায় চারশো ফুট ও উচ্চতায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ ফুট। দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের মত দেখায়। ঢিপিটি সবুজ ঘাসে মোড়া, আর চারিদিক ঘেরা রয়েছে কাঁটাতার দিয়ে। বল্লাল সেনের রচিত "অদ্ভুদসাগর" উল্লেখ অনুসারে অনুমান করা হয় যে, বল্লাল ঢিপির প্রাচীনত্ব আটশো বছরের বেশি। আবার অনেকে এটিকে প্রপিতামহ সামন্ত সেনের প্রাসাদের ধংসস্তুপ বলে মনে করেন। তবে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের মতে বল্লাল ঢিপি সামন্ত সেনের পৌত্র বিজয় সেনের প্রাসাদ।


যাই হোক না কেন, নদীয়ার বামুনপুকুরে এই রাজ প্রাসাদের ধংসস্তূপটি বল্লাল ঢিপি নামেই খ্যাত। এটি পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নক্ষেত্র নামে পরিচিত। আপনি মায়াপুরে আসলে টোটো ভাড়া করে খুবই সহজে এখানে চলে আসতে পারেন । আপনি যদি কৃষ্ণনগরের দিক থেকে সড়কপথে এখানে আসতে তাহলে NH-৩৪ এর চৌগাছা হাঁসডাঙ্গা বা ধুবুলিয়াতে নেমে টোটো করে এখানে আসতে পারেন। লোকাল ট্রেনে আসলে ধুবুলিয়াতে বা কৃষ্ণনগরে নামতে হবে।

রানাঘাট :- নদীয়া জেলায় অবস্থিত শিয়ালদহ - কৃষ্ণনগর মেন লাইনের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন ও শহর এই রানাঘাট । রানাঘাট বললেই হয়ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে সরু রাস্তায় টোটোর জ্যামে নাভিশ্বাস ওঠা এক ঘিঞ্জি ছোট শহরের ,. কিন্তু এর বাইরেও রানাঘাট শহরকেন্দ্রিক ও শহরসংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু মনমুগ্ধকর স্থান। সেইরকমই কিছু স্থানের নাম এবং তাদের সম্পর্কে কিছু ইনফরমেশন আপনাদের এই পয়েন্টে দিচ্ছি -

১. নিস্তারিনী মন্দির ।

২. দেবগ্রাম ফরেস্ট ।

৩. রাজবল্লভ মন্দির।

৪. কুপার্স কালিবাড়ি।

৫. বেগোপাড়া চার্চ।

6. হবিবপুরের ইস্কন মন্দির ।

৭. ভাগীরথীর পারে মুকুন্দপুরের মন্দির।

৮. পাল চৌধুরী বাড়ির আটচালা শিব মন্দির।

৯. ধানতলার শঙ্করপুর ফরেস্ট।

১০. সন্ন্যাসীবাগান মঠ।



আপনি একদিনের জন্য এসে এই জায়গা গুলো ঘুরে নিতে পারেন, সব জায়গা তো আর একবারে দেখা সম্ভব না, লিস্ট থেকে পছন্দ মত জায়গা গুলো বেছে নিয়ে ঘুরে ফেলুন কিছু জায়গা একটি দূরে দূরে ও আছে। রানাঘাটের আসলে কিন্তু রানাঘাটের বিখ্যাত মিষ্টান্ন পান্তুয়া খেতে ভুলবেন না, এই পান্তুয়ার খ্যাতি কিন্তু গোটা রাজ্য জুড়েই আছে, পান্তুয়া খেলে অবশ্যই সেটা পান্তুয়ার আবিষ্কর্তা জগু ময়রার দোকান থেকে খাবেন, রানাঘাট স্টেশন থেকে বেরিয়েই একদম বাঁ দিকে। আর দুপুরের খাওয়ার জন্য আদর্শ হিন্দু হোটেল অবশ্যই ট্রাই করতে পারেন।

ফুলের উপত্যকা চাপড়া :- নদিয়া জেলার রানাঘাট শহর থেকে প্রায় ৭ কি.মি দূরে অবস্থিত এই চাপড়া গ্রাম। এই গ্রাম বিখ্যাত তার বাহারি রকমের ফুলের চাষের জন্য, একে দ্বিতীয় ক্ষীরাইও বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের যে কয়েকটি জায়গা ফুলের চাষের জন্য বিখ্যাত, এই চাপড়া তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এখানে আসলে কিন্তু আপনি ক্ষীরাই থেকে আরো বেশি ভ্যারাইটির ফুল পাবেন আর চাষের এলাকাটাও আরো বিরাট জায়গা জুড়ে।


তাই শীত পড়লে অবশ্যই ঘুরে আসুন এই জায়গাটি থেকে, ক্ষীরাই এর মতো এতো ভিড়ভাড় ও পাবেন না এখানে। লোকাল ধরে রানাঘাট স্টেশনে নেমে একটা টোটো রিজার্ভ করে নিন নাহলে আসার সময়ে সমস্যায়ও পড়তে পারেন ভাড়া ২০০ - ২৫০ বেশী একদমই দিতে যাবেন না। স্টেশন থেকে ৭ কি.মি মতো দূরত্ব, এখানে আসলে অবশ্যই আপনাদের ভালোই লাগবে এটা বলে দিতে পারি।

দেবগ্রাম ফরেস্ট :- রানাঘাট শহরেই খুব কাছেই অবস্থিত এই দেবগ্রাম ফরেস্ট। একদমই নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে হলে আসতেই পারেন এই ফরেস্টে, একদমই আলাদা ধরনের অনুভূতি হবে, এবং আমাদের রাজ্যের বাকি ফরেস্ট গুলো থেকে একটু হলেও ভিন্ন লাগবে, ফরেস্টের মাঝেই একটা লেক টাইপের একটা বড় পুকুর আছে, যা এই ফরেস্টের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে।

আপনি রানাঘাট থেকেও আসতে পারেন অথবা দুটি স্টেশন পরে গাংনাপুরে নেমেও আরো তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসতে পারবেন।

শান্তিপুর :- কলকাতা শহর থেকে প্রায় ১০০ কি.মি উত্তরে নদীয়া জেলার একটি শহর এই শান্তিপুর। বৈষ্ণব সংস্কৃতির কেন্দ্র এই শান্তিপুর ও আসে পাশের অঞ্চলে বহু প্রাচীনকাল থেকেই বহু তাঁতকল ছিলো যা থেকেই জন্ম নেয় জগৎ বিখ্যাত শান্তিপুরি তাঁত।বৈষ্ণব সংস্কৃতির কেন্দ্র হওয়ায় এখানে পেয়ে যাবেন দেখার মতো প্রচুর মন্দির। তবে শান্তিপুর যে কারণে বিখ্যাত সেটা হলো শান্তিপুরের রাস উৎসব এবং শান্তিপুরের গোপাল পূজা। রাস উৎসবের কথা সবাই জানলেও এই গোপাল পূজার কথা কিন্তু অনেকেই জানে না, কিন্তু এই শান্তিপুরেই অনেক ধুমধামের সাথে গোপাল ঠাকুরের বড় বড় মূর্তি গড়ে এই পূজা করা হয়ে থাকে। তাই আসলে এখানে এই দুই টাইমে ই আসলে ভালো, অন্য সময়ে আসলে আপনি ভিড় একটু কম পাবেন এটাই একটা ভালো দিক।


শান্তিপুরে একদিনের জন্য ঘুরতে আসলে কোন কোন জায়গা গুলো দেখে নিতে পারেন আসুন জেনে নি - ১ বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী বাড়ি - দেবকীনন্দন গোস্বামী এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাকালে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন অদ্বৈত্য মহাপ্রভু।

২. রাধা শ্যাম চাঁদ মন্দির।

৩. তোপখানা মসজিদ।

৪. সিদ্ধেশ্বরী কালিবাড়ি ।

৫. ছোটো গোস্বামী বাড়ি ।

৬. বড় গোস্বামী বাড়ি, এখান থেকে চাইলে দুপুরে ভোগ ও খেতে পারেন, আগে থেকে ফোন করে বুক করতে হবে।


৭. অদ্বৈত্য পাট।

৮. গোঁকুলচাঁদ বাড়ি।

৯. ব্রাহ্মসমাজ বাড়ি।

১০. শান্তিপুর সংগ্রহশালা।


ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দিক থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা শহর তাও সে তুলনায় এই শহরে আসা পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম, আসুন একবারের জন্য ঘুরে যান এই শহর থেকে, আর রাস বা গোপাল পূজার সময়ে এখানে আসলে আপনাদের আরো ভালো লাগবে।


কৃত্তিবাস ওঝাঁর জন্মস্থান, ফুলিয়া :- নদিয়া জেলার শান্তিপুরের কাছেই অবস্থিত ছোট্ট শহর ফুলিয়া যা বিখ্যাত তার তাঁতের শাড়ির জন্য যা GI ট্যাগও পেয়েছে। এই ফুলিয়াতেই জন্ম নিয়েছিলের রামায়ণের বাংলা অনুবাদক শ্রী কৃত্তিবাস ওঝাঁ তিনি এই ফুলিয়ার এক বট গাছের নিচে বসে তিনি এই কাজটি করেছিলেন। গৌড়েশ্বর গনেশনারায়ণ ভাদুড়ি বা রাজা গণেশের পৃষ্ঠপোষণায় তিনি বাল্মীকি রামায়ণের সহজবোধ্য বাংলা পদ্যানুবাদ করেছিলেন।

এই ফুলিয়াতে আসলে কবি কৃত্তিবাস ওঝাঁর সাথে সম্পর্কিত ২, ৩ টি জায়গা আপনারা ঘুরে নিতে পারেন।

১. কবি কৃত্তিবাস ওঝাঁর জন্মস্থান ও জন্মভিটে।

২. কিছু দূরেই আছে কৃত্তিবাস স্মৃতি মন্দির, ভেতরে একটি বট গাছও আছে যেখানে বসে তিনি রামায়ণ অনুবাদ করেছিলেন।

৩, এছাড়াও আছে কৃত্তিবাস কূপ।

বীরনগরের জোড়-বাংলা মন্দির :- জোড় বাংলা মন্দির আমাদের রাজ্যে বহু জায়গায় থাকলেও আমরা প্রধানত জানি বিষ্ণুপুরের জোড় বাংলা মন্দিরের কথা। এরকম জোড় বাংলা মন্দির আমি মুর্শিদাবাদ ও পুরুলিয়াতে ও দেখেছি। সেরকমই আরো একটি জোড়বাংলা মন্দির আছে নদিয়া জেলার বীরনগরে।এটি রাধা কৃষ্ণের মন্দির এবং নদিয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন মন্দির গুলোর মধ্যে একটি । ১৬৯৪ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রামেশ্বর মিত্র, মন্দিরে টেরাকোটার কাজ ও দেখতে পাবেন।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন