Top 10 Offbeat Places Of Rajasthan. রাজস্থানের সেরা ১০ টি অফবিট জায়গা থেকে ঘুরে আসুন।

Top 10 Offbeat Places Of Rajasthan

ভ্রমণ পিপাসু:- ভ্রমণ পিপাসুর এই ব্লগে আজকের বিষয়বস্তু হচ্ছে রাজস্থান, কিন্তু একটু অন্যভাবে। রাজস্থানের বাধাধরা কয়েকটা জায়গা বাদে একদমই ইউনিক কয়েকটি জায়গা তুলে ধরবো এই ব্লগে। ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালির কাছে রাজস্থান বরাবরই প্রিয় একটি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত, তারপর সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা সিনেমার শুটিং জয়সলমের ফোর্টে হওয়ার পর থেকেই এর পরিমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।  এই ব্লগে কিন্তু রাজস্থানের একদমই অফবিট কয়েকটি জায়গা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, এই জায়গা গুলোতে সচরাচর কেউ যায়না, গেলেও সেই পরিমাম খুবই কম তাই, পরিচিত রাজস্থানকে বাদ দিয়ে একদমই নতুন, অজানা রাজস্থানের সংস্পর্শ পেতে হলে এই ব্লগটি অবশ্যই আপনাদের পড়তে হবে।

এই ব্লগে আমি আলোচনা করবো রাজস্থানের একদমই ১০ টি অফবিট জায়গা। যার সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নয়, তাই আপনারা যদি রাজস্থান যাওয়ার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে এই লিস্ট থেকে কিছু জায়গা অবশ্যই ঘুরে আসুন।

১.ভরতপুরের কেওলাদেও/ ঘানা জাতীয় উদ্যান :- রাজস্থান আপনারা ঘুরতে যান কিসের জন্য এক তো থর মরুভূমি, এছাড়া বিভিন্ন বড় বড় রাজাদের প্যালেস, যা রাজস্থানের ছোটো বড় যেকোনো শহরেই পেয়ে যাবেন, এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। এর বাইরেও আপনারা যদি একদমই ভিন্ন একটি জায়গা উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আসতেই হবে কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্ক বা ঘানা পাখিরালয়ে।পাখির সংখ্যা এবং আয়তনের হিসেবে এটিই এশিয়ার বৃহত্তম পাখিরালয়( উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাস দ্বিতীয় স্থানে), তার সাথে সাথে এটি কিন্তু UNESCO স্বীকৃত WORLD HERITAGE SITE হিসাবেও স্থান পেয়েছে। আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমি বা পশুপাখি প্রেমী হয়ে থাকেন এবং এর পাশাপাশি এক আলাদা রাজস্থানকে যদি উপলব্ধি করতে চান তাহলে এই জায়গার শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে একটা দিন আপনাদের অবশ্যই কাটানো উচিত।


এই কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্কের অবস্থান উত্তর রাজস্থানের উত্তর প্রদেশ বর্ডার লাগোয়া ঐতিহাসিক শহর ভরতপুরে। স্থানীয় লোকেরা একে ঘানা পক্ষীনিবাস হিসেবেও ডাকে। এই পক্ষীনিবাস তৈরির ইতিহাস প্রায় ২৫০ বছরেরও বেশী পুরনো। এর সাথে জড়িয়ে আছে ভরতপুরের তৎকালীন শাসক মহারাজা সুরজমলের। সেই সময়ে এই এলাকা রাজা ও রাজ পরিবারের সদস্যদের শিকার করার জায়গা ছিলো, তারপর আসে ব্রিটিশরা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এই জায়গাটাকে রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে এবং ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যান এবং ১৯৭৬ সালে রামসার সাইটের মর্যাদা পায়। প্রায় ৩৬৬ ধরণের পরিযায়ী পাখি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির জীব জন্তু এখানে দেখতে পাবেন। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করার পর আপনি পায়ে হেঁটে অথবা রিকশা বা সাইকেল ভাড়া করে নিতে পারেন কয়েক ঘণ্টার জন্য। এটা দেখে আপনি পাশেই অবস্থিত ভরতপুরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখে ফেলতে পারেন।

এখানে আসার ব্যাপারে জানিয়ে রাখি আপনি উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহর বা মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র বা জয়পুর থেকেও গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার গাড়ি বা বাসে এখানে চলে আসতে পারেন। তবে আগরা থেকে খুবই কম সময় লাগে আমরাও এই আগ্রা থেকেই এখানে এসেছিলাম।

২ রাজস্থানের সাদা মরুভূমি-কিশনগড় :- রাজস্থানের আরো একটি খুবই সুন্দর একদমই অফবিট জায়গার সন্ধান এবার আপনাদের দেবো। রাজস্থানের লালবালির মরুভূমি তো সবাই দেখেছেন কিন্তু রাজস্থানের সাদা মরুভূমির কথা কি শুনেছেন? সেই জায়গা সম্পর্কেই এখন আপনাদের বলবো যে জায়গা ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। জায়গাটি হল রাজস্থানের আজমীরের কাছে কিশনগড়, আর জায়গাটি কিন্তু কোনো মরুভূমি নয়, জায়গাটি হলো মার্বেল ডাম্পিং গ্রাউন্ড, যা কিশানগড় মার্বেল অ্যাসোসিয়েশনের আন্ডারে অবস্থিত একটি জায়গা। মার্বেল কাটার পর যে ডাস্ট গুলো পড়ে থাকে সেগুলোকে এখানে এনে এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়, বছরের পর বছর এই জায়গায় এই মার্বেলের ডাস্ট গুলো জমা হতে হতে এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে, এবং কিছু জায়গায় নীল জলের ছোটো ছোটো লেকও তৈরি হয়েছে, যা এই জায়গাটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। এবার হয়তো জায়গাটি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা অনেকটা ক্লিয়ার হয়েছে। 


রাজধানী জয়পুর থেকে প্রায় ৮০ কি.মি দূরে এবং আজমের শহর থেকে প্রায় ৪০ কি.মি দূরে অবস্থিত এই কিশনগড় শহর, যেখানেই অবস্থিত কিশনগড় মার্বেল অ্যাসোসিয়েশন। বহু Bollywood মুভি থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, হরিয়ানার বিভিন্ন মুভি,সিরিয়ালের শুটিং কিন্তু এখানে হয়ে গেছে, জায়গাটি এত সুন্দর, যার জন্য জায়গাটিকে রাজস্থানের শিমলা-মানালি, সুইজারল্যান্ড বা মুনল্যান্ডের সাথে তুলনা করা হয়, যার টানে প্রচুর মানুষ এখানে ফটোগ্রাফি এবং প্রিওয়েডিং করার জন্য ছুটে আসে।


এই ডাম্পিং ইয়ার্ডের পৌঁছতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম কিশানগড় মার্বেল অ্যাসোসিয়েশন পৌঁছতে হবে। অফিস থেকে আপনাদের পারমিট সংগ্রহ করতে হবে যার জন্য কোনো টাকা লাগবে না, কিন্তু আপনার সাথে যদি ক্যামেরা বা ড্রোন থাকে তবে তার জন্য কিছু টাকা জমা করতে হবে। ফটোগ্রাফি বা ফটোশুটের জন্য কিন্তু আপনাদের পারমিশন নিতে হবে, নাহলে কিন্তু জরিমানা হতে পারে। পারমিশন অফিস থেকে প্রায় এক কি.মি দূরে আছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সেখানে পারমিট দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবেন ভিতরে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা আছে, গাড়ি পার্কিং করে বাকি পথ আপনাকে পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হবে, তারপর বাকিটা আপনাদের ওপর আপনারা যেমন ভাবে এনজয় করতে চান। মোবাইল দিয়ে ছবি, ভিডিও করার কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু ক্যামেরা আনলে অবশ্যই ওখানে শুনে পারমিশন করে তারপরেই আসবেন। আপনি এখানে জয়পুরের দিক থেকেও আসতে পারেন অথবা আজমের স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করেও এখানে চলে আসতে পারেন। আসলে কিন্তু খুবই সুন্দর লাগবে, জায়গাটি কিন্তু একদমই অভিনভ।

৩. চম্বলের বিহড় সাফারি :- চম্বল এবং চম্বলের ডাকুর নাম শোনেন নি এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব মুস্কিল। কত ডকুমেন্টারি কত সিনেমা হয়ে গেছে এই চম্বলের ডাকুকে নিয়ে। তবে সেই ছোঁয়া যদি একবার অনুভব করতে চান তাহলে আপনাকে আসতে হবে পশ্চিম রাজস্থানের ঢোলপুরে। চম্বল নদী উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, চম্বল নির্দিষ্ট কোন একটি এলাকা না তিনটি রাজ্যের কিছু কিছু এলাকা নিয়ে এই চম্বল এলাকা গঠিত। চম্বল নদী এবং বায়ুর ক্ষয়ের ফলে দুপাশে এইরকম ভূমিরুপ গুলোর সৃষ্টি হয়েছে, যা আপনারা আমাদের রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার গনগনিতে গেলেও কিছুটা দেখতে পাবেন, কিন্তু চম্বল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে সেটা দেখা যায়, আর এই জায়গা গুলোই ছিল ডাকুদের লুকিয়ে থাকার আদর্শ স্থান। তাই ৮০ ও ৯০ দশকে এই এলাকায় এই ডাকুদের খুবই উৎপাত ছিল, যা এখন একদমই নাই বললেই চলে, এই জায়গা গুলো এখন পর্যটনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।


ভিন্ন একদমই অফবিট রাজস্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে আপনাকে আসতে হবে রাজস্থানের ঢোলপুরে, এখানে চম্বল নদীতে নৌকা বিহার এবং তার পাশাপাশি, পাশেই বিহড়ে সাফারির মজা উপভোগ করতে পারবেন। এখানে চম্বল নদী দুটি রাজ্যের মধ্যে বর্ডার হিসেবে কাজ করছে, নদীর ওপরে ব্রিজ ক্রস করেই আপনি পৌঁছে যাবেন মধ্যপ্রদেশ। এই জায়গা গুলোতে বাইরে থেকে লোক কিন্তু খুবই কম আসে তাই আপনারা অবশ্যই একবার এখানে এসে দেখতে পারেন, সরকারি উদ্যোগে এখানে এখন পর্যটনের বিকাশের জন্য বহু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আপনি রাজস্থানের জয়পুর, উত্তর প্রদেশের আগ্রা কিংবা মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র ঘুরে নিয়ে বাইরোড এই ঢোলপুর চলে আসতে পারেন রাস্তা খুবই ভালো, আর বাস ও আছে। আমরাও গোয়ালিয়র ফোর্ট ঘুরে নিয়ে বাসে এই ঢোলপুর পৌঁছেছিলাম কিন্তু সময়ের অভাবের জন্য আমরা সাফারি থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছিলাম।

৪.সম্বর লেক :- রাজস্থানের রাজধানী শহর জয়পুর থেকে মাত্র ৮০ কি.মি দূরে অবস্থিত একটি অসাধারন সুন্দর জায়গার সন্ধান এখন আপনাদের দেবো, যে জায়গাটি সম্পর্কে হয়তো আপনারা ভূগোল বইতে পড়েছেন, এখনো পর্যন্ত ট্যুরিস্টদের খুব একটা আনাগোনা এখানে হয়নি তাই রাজস্থান আসলে অবশ্যই একবার এই সম্বর নমস্কার লেক থেকে ঘুরে যেতেই পারেন।


আপনারা PK সিনেমা হয়তো অনেকেই দেখেছেন, সেই সিনেমায় আমীর খান রেল লাইনের মাঝে রেডিও নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই স্যুট টা কিন্তু এই সম্বর লেকের মাঝে অবস্থিত রেল লাইনেই হয়েছিলো, যে রেললাইন ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিলো লবন বা নুন নিয়ে আসার জন্য, এই PK ছাড়াও পহেলী, রামলীলা প্রভৃতি বহু Bollywood সিনেমার শুটিং কিন্তু এখানে হয়েছিলো। এই সম্বর লেক কিন্তু Bollywood প্রযোজকদের কাছে খুবই পছন্দের গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে, কিন্তু সাধারন পর্যটকদের কাছে কিন্তু জায়গাটি এখনো পর্যন্ত জনপ্রিয় হয়নি।

ভারতের নুন উৎপাদনের প্রায় ১০% উৎপাদিত হয় এই লেক থেকেই। আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ নুন উৎপাদন কেন্দ্র হল গুজরাটের কচ্ছের রন ভিডিও লিঙ্ক নিচে থাকলো... 

ব্রিটিশ আমলে এখানে উৎপাদিত নুন পরিবহনের জন্য একটি মিটার গেজ রেল লাইন স্থাপিত হয়েছিলো যা এখনো চলে আসছে। তাছাড়া এখন এখানে পর্যটকদের উৎসাহিত করার জন্য একটা একটি টয় ট্রেনেও চালু করা হয়েছে যা আপনাকে পুরো সম্বর লেকের সফর করিয়ে দেবে। তবে সম্বর লেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, যার টানে আপনি এখানে আসবেন সেটা হলো ফ্লেমিংগো, এই ফ্লেমিংগো পাখিটি দেশের খুব কম জায়গায় দেখা যায়, সম্বর লেক তারমধ্যে একটি, তবে এটি দেখার জন্য আপনাকে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসতে হবে। যদিও রাজস্থানের প্রচন্ড গরমের কারণে এই সময়ই সবচেয়ে উপযুক্ত। শীতে আপনি এখানে আসলে নুন তৈরির পুরো পদ্ধতি খুব সামনে থেকে দেখতে পাবেন। তবে এখানে সারা বছরই আসা যায় বছরের বিভিন্ন সময় এই লেক বিভিন্নরকম।


এখানে থাকার ব্যবস্থা বলতে খুব একটা বেশি নেই, 4,5 টি প্রপার্টি এখানে পেয়ে যাবেন। আর এখানে যদি রাত্রিযাপন করেন তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত কিন্তু একদমই মিস করবেন না, আর নিজস্ব গাড়ি বা বাইক নিয়ে আসলে খুবই ভালো, ভাড়া করে গাড়ি ও নিয়ে আসতে পারেন, কারণ একদমই ফাঁকা, শান্ত এই এলাকায় গাড়ি চালিয়ে খুবই মজা পাবেন এটা বলতে পারি। এই জায়গা টি জয়পুর থেকে মাত্র ৮০ কি.মি দূরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। জয়পুর থেকে এখানে আসার জন্য আপনারা বাস ও পেয়ে যাবেন।

৫. লোঙ্গেওয়ালা ভারত - পাক বর্ডার :- আমরা তো রাজস্থান বেড়াতে আসলে কোনো মতেই জয়সলমীরকে বাদ দেইনা। কারণ জয়সলমীরকে বাদ দেওয়া মানেই রাজস্থান সফরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্পট থর মরুভূমি এবং সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লার শুটিং স্পট জয়সলমীর ফোর্ট বাদ চলে যাওয়া। জয়সলমীরে সকল বাঙালি আসলেও জয়সলমীর থেকে ১২০ কি.মি দূরে লোঙ্গেওয়ালা বর্ডার না দেখেই কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটক ফিরে যাই, তার একটি কারণ হতে পারে একটু জায়গাটির গুরুত্ব এবং বিরাট ইতিহাস সম্বন্ধে অজানা থেকে যাওয়া।


বর্ডার সিনেমা দেখেনি এমন ব্যক্তি কি সত্যি পাওয়া যাবে? ব্যক্তিগতভাবে এই সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখা আমার প্রথম সিনেমা। এই বর্ডার সিনেমা যে যুদ্ধের ওপর বেস করে তৈরি করা হয়েছিলো, সেই ১৯৭১ সালের লোঙ্গেওয়ালার যুদ্ধ যেখানে হয়েছিলো, সেই লোঙ্গেওয়ালা বর্ডারের কথাই আমি বলছি। যে যুদ্ধে মেজর কুলদীপ সিং চাঁদপুরীর নেতৃত্বে মাত্র ১২০ জন সেনা, পাকিস্তানের এত বড়ো ট্যাঙ্ক বাহিনীকে আটকে দিয়েছিলো, এই যুদ্ধে ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো অত্যধিক। আপনি যদি এখনো এই লোঙ্গেওয়ালা বর্ডারে আসেন তাহলে পাকিস্তানি ধংসপ্রাপ্ত অনেক গুলো ট্যাঙ্ক, গাড়ি, যুদ্ধের সরঞ্জাম দেখতে পাবেন তাছাড়া ভারতীয় সৈন্যদেরও ব্যবহার সরঞ্জাম, যুদ্ধের প্রস্তুতির বিভিন্ন বিষয়গুলো, দেখতে পাবেন। এখন এখানে একটা সুন্দর মিউজিয়াম খুলে দিয়েছে বিএসএফ পক্ষ থেকে, সেখানে অবশ্যই আপনাদের একবার যাওয়া উচিত। এছাড়াও এই লোঙ্গেওয়ালা বর্ডার থেকে কয়েক কি.মি দূরেই আছে তনোট মাতা মন্দির, সেটাও অবশ্যই দেখে তবেই ফিরে যাবেন, এই মন্দিরের মহিমা হল ১৯৭১ যুদ্ধে পাকিস্তানী কয়েকশো বোমা নিক্ষেপ করলেও বর্ডার লাগোয়া এই মন্দিরে একটিও বোমা পড়েনি, এই মন্দির ও এখন ট্যুরিস্ট প্লেস হয়ে গেছে।

আপনি জয়সলমীর থেকে একটি গাড়ি রিজার্ভ করে ১২০ কি.মি ধীরে অবস্থিত এই লোঙ্গেওয়ালা এবং তনোট মাতা মন্দির ঘুরে আবার জয়সলমীর ফিরে চলে আসতে পারবেন, একদিনের জন্য খুবই ভালো একটা ট্যুর হবে, এটা হলফ করে বলতে পারি,তবে আপনাকে খুব সকাল সকাল বের হতে হবে, পথে রামগড় নামে একটি জায়গায় সকালের ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরের লাঞ্চ করে নিতে পারবেন।

৬. নাথদ্বারা শিবমূর্তি ( বিশ্বাস স্বরুপম্) :- রাজস্থানের পর্যটনের মানচিত্রে একটি নবতম সংযোজন হল উদয়পুরের কাছে নাথদ্বারাতে অবস্থিত বিশ্বের উচ্চতম শিব মূর্তি( বিশ্বাস স্বরূপম্) যার উচ্চতা ৩৭৯ ফিট। গতবছর ই উদ্বোধন হওয়ার এই মূর্তি কিন্তু এখনো পর্যটটদের কাছে জনপ্রিয় হয়নি, তাই আপনারা রাজস্থানের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই জায়গাটিকে প্ল্যানে রাখার চেষ্টা করবেন।


রাজস্থানের রাজসমন্দ জেলায় অবস্থিত এই ৩৭৯ ফিট উচু এই শিব মূর্তি তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর, কাজ সম্পূর্ন হওয়ার পর এটি ভারতের এখন দ্বিতীয় উচ্চতম মূর্তি। এখানে আসতে হলে সবচেয়ে নিকটবর্তী শহর হল উদয়পুর। উদয়পুর থেকে ৪৫ কি.মি দূরে অবস্থিত এই বিশ্বাস স্বরুপম্। বেস সুন্দর এই মূর্তিটি একদমই আলাদা ধরনের, আপনি চাইলে মূর্তিটির ওপরেও উঠতে পারবেন, অবশ্যই আপনাদের এই জায়গাটি ভালো লাগবে।

৭.হলদিঘাট :- নামটা হয়তো অনেকেই ইতিহাস বইতে পড়েছেন। এটাই হলো সেই ইতিহাস প্রসিদ্ধ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের হলদিঘাটের যুদ্ধস্থল। যে ভীষন যুদ্ধ হয়েছিলো মেবারের মহারানা প্রতাপের ছোট্ট সেনাবাহিনীর সাথে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি ও জয়পুর রাজ মানসিং এর। আর হলদিঘাট কথাটি এসেছে এখানকার প্রাকৃতিক গঠন ও রং থেকে। পুরো এই ঘাঁটির রং একদমই হলদে, আর ঘাঁটি মধ্যে দিয়ে গিয়েছে একটি রাস্তা। ঘাঁটির উচু পাহাড়ি এলাকায় রানা প্রতাপ ও তার সেনাবাহিনী অবস্থান ছিলো, সেই সুবিধা তিনি পেয়েছিলেন।


 এই হলদীঘাটের যুদ্ধের জয় পরাজয় সঠিকভাবে নির্ধারিত না হলেও, এই যুদ্ধে মহারানা প্রতাপ ও তার ছোট্ট সেনাবাহিনী খুবই বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলো, এবং এই যুদ্ধে রানা প্রতাপের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু তার ঘোড়া চেতক নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে মহারানা প্রতাপের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। পাশেই ঘোড়া চেতকের একটি সমাধিও আছে যেটিও এখনকার একটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটি।


রাজস্থানের উদয়পুর শহর থেকে ৪৬ কি.মি দূরে এবং নাথদ্বারা থেকে মাত্র ১৭ কি.মি দূরে এই হলদীঘাট, আপনি চাইলে যেকোনো দিক থেকেই এখানে আসতে পারেন আপনাদের প্ল্যান অনুযায়ী। এখন এই ঘাটের বা পাসের চেহারা অনেকই বদলে গেছে, বর্তমান পিচের রাস্তাও নির্মাণ হয়ে গেছে। আর এখানে আসলে গাড়ি রিজার্ভ করে অবশ্যই আসবেন সেটাই সবচেয়ে বেস্ট হবে। এখানে এসে যেসব জায়গা গুলো আপনারা দেখবেন - খামনোর গ্রামে আছে রক্ত তলাই ঝিল, মহারানা প্রতাপ মিউজিয়াম, চেতক সমাধি, মহারানা প্রতাপের গুহা, যর্নেশ্বর মহাদেব কুয়াঁ এই সমস্ত কিছু। কিন্তু সবার আগে আপনারা এই মিউজিয়ামটি থেকে ঘুরে আসবেন, তার কারণ হল মিউজিয়াম এই যুদ্ধ সম্পর্কে যে সুন্দর বিবরণ পাবেন, তারপর জায়গা গুলো বুঝতে আপনাদের খুবই সুবিধা হবে।

৮.পুস্কর মেলা :- রাজস্থানের আজমের শহর থেকে মাত্র ১১ কি.মি দূরে পুস্কর শহর, যা পুস্কর লেক কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই পুস্করেই অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র ব্রহ্মাজীর মন্দির। এই পুস্করেই প্রতিবছর কার্তিক মাসে কার্তিক পূর্ণিমার সময় অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর বৃহত্তম উটের মেলা যা পুস্কর মেলা বা কার্তিক পূর্ণিমার মেলা বা উটের মেলা হিসেবেও পরিচিত।

রাজস্থান আজমির থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পুষ্কর। তিন দিকে আরাবল্লী পাহাড়ে ঘেরা এ স্থানটি খুবই জনপ্রিয় দেশ ও বিদেশে। আর এখানেই হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় উটের মেলা। যা দেখার জন্য দেশ ছাড়াও বিদেশ থেকেও বহু ট্যুরিস্ট এখানে এসে থাকে। মেলা শুরু হয় কার্তিক পূর্ণিমার কয়েকদিন আগে থেকে এবং কার্তিক পূর্ণিমার দিন গিয়ে এই মেলা শেষ হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উট ব্যবসায়ীরা তাদের উট গুলোকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে এই মেলায় নিয়ে আসে, কয়েক হাজার উটের সমাবেশ হয় এই মেলায়। উটের বিভিন্ন খেলা থেকে শুরু হয় উটের দৌড় প্রভৃতি হয়ে থাকে মেলাতে আসা পর্যটটদের মনোরঞ্জনের ব্যাবস্থার জন্য। তাই এই মেলায় আসতে চাইলে অবশ্যই দিন তারিখ দেখে এখানে আসতে হবে এখানে আসলে কিন্তু একটা আলাদা অভিজ্ঞতা আপনাদের হবে, তার সাথে পুস্কর লেক এবং ব্রহ্মার মন্দির তো আছেই তাছাড়া ও লেকের চারপাশে এরকম প্রচুর মন্দির আপনারা পেয়ে যাবেন।


এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১১ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। আজমের শহর থেকে মাত্র ১১, ১২ কি.মি দূরে এই পুস্কর আপনি আজমের স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ডে নেমে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসেও এখানে খুবই সহজে চলে আসতে পারবেন।

৯.বিষ্ণই ভিলেজ জোধপুর :- জোধপুর শহরের খুব কাছেই অবস্থিত এই বিষ্ণই সম্প্রদায়ের ভিলেজ, যে ভিলেজ সর্বপ্রথম খবরের শিরোনামে এসেছিল ১৯৯৮ সালে সালমান খান যখন এই গ্রামে এক লুপ্তপ্রায় কৃষ্ণসার হরিণ / Black buck এর শিকার করেছিলো, তারপর বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষেরা এর বিরুদ্ধে কেস করে আর এই গ্রাম চলে আসে লাইমলাইটে।


রাজস্থানের যোধপুর শহর থেকে মাত্র ২০ কি.মি দূরে লুনী নদীর একদম পাশেই অবস্থিত এই বিষ্ণই গ্রাম। বিশ ধরণের নিয়ম তারা মেনে চলে বলে এই সম্প্রদায়কে বিষ্ণই বলা হয়ে থাকে। তারা অনেক নিয়ম নীতি মেনে চলে এবং একদমই প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে ভালোবাসে, তারা যেমন একদিনে বৃক্ষছেদনের কঠোরভাবে, তেমনি জঙ্গলের পশু পাখিদের নিজেদের একজন মনে করে। সেই কারণেই রাজস্থানের এই এলাকায় লুপ্তপ্রায় কৃষ্ণসার হরিণ এখনো দেখতে পাবেন। ১৯৯৮ সালে সালমান খান 'হাম সাথ সাথ হ্যাঁ' সিনেমার শুটিং করতে এসেছিলেন, সেই সময়েই শুটিং এর ফাঁকে তিনি একটি কৃষ্ণসার হরিণের শিকার করেছিলেন, যে মামলা এখনো চলে আসছে।


এই গ্রামটিকেই এখন পর্যটকদের জন্য সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। যদিও এখানে পর্যটক খুব কমই আসে। কিছু কিছু সুন্দর সুন্দর গ্রাম্য পরিবেশের কটেজ ও তৈরি হয়েছে। এই গ্রামে আসলে আপনি বিষ্ণই সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা খুব সামনে থেকে উপলব্ধি করতে পারবেন। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লুপ্তপ্রায় কৃষ্ণসার হরিণ/ Black buck কে দেখার সৌভাগ্য। তাই চলে আসুন এই সুযোগ মিস করবেন না, আপনারা সকলেই যোধপুর আসলে ও মেহেরানগড় ফোর্ট দেখেই ফিরে চলে যান, কিন্তু এত কাছে এই সুন্দর সাজানো গ্রাম টা মিস করে যান। তাই এবার থেকে যারা প্ল্যান করছেন রাজস্থান আসার তারা কিন্তু এই গ্রামটিকে আপনাদের প্ল্যানে অবশ্যই যুক্ত করতে পারেন। আপনারা যেকোনো উপায়ে যোধপুর এসে একটা ছোটো গাড়ি সারাদিনের জন্য হায়ার করে গ্রামটি থেকে ঘুরে আবার যোধপুর ফিরে যেতে পারেন আর ইচ্ছা করলে এখানে থাকতেও পারেন।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন