ভ্রমণ পিপাসু :- ঊনকোটি ত্রিপুরার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি, যা পাহাড় কেটে তৈরি করা বিভিন্ন দেবদেবীর ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত, যা এক কথায় গোটা দেশের মধ্যে এক অনবদ্য নিদর্শন। UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সম্ভাব্য লিস্টেও কিন্তু এই ঊনকোটি স্থান পেয়েছে। এই ঊনকোটি কথার অর্থ কোটি থেকে ১ কম। ঐতিহাসিকদের মতে, ঊনকোটির রঘুনন্দন পাহাড়ের এই অভিনব ভাস্কর্য গুলি তৈরী করা হয়েছিল অষ্টম বা নবম শতাব্দীতে। ১৯৮০ সালের দিকে ASI এর পক্ষ থেকে ভাস্কর্য গুলোকে উদ্ধার করে, এর সংস্কার সাধন করা হয়। ঊনকোটির মুর্তিগুলি নিয়ে একাধিক কাহিনি প্রচলিত আছে, তার মধ্যে দুটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
Unakoti, Tripura |
পুরান অনুসারে এই ঊনকোটি নামের উৎপত্তির পেছনে আছে এক কাহিনী পুরানের এই নামকরণের কাহিনীতে কথিত আছে যে কালু কামার নামে একজন স্থাপত্যকার ছিলেন, সেই সাথে তিনি ছিলেন দেবী পার্বতীর ভক্ত । একবার দেবী-মহাদেবের সাথে কৈলাসে যাচ্ছিলেন তখন কালু কামার বায়না ধরলেন তাকে যেন তাদের সঙ্গে নেন। তখন মহাদেব উনার উপর শর্ত আরোপ করে বলেন উনি যেতে পারেন তবে তার জন্য তাকে এক রাত্রির মধ্যে এককোটি দেবদেবীর মূর্তি তৈরী করে দিতে হবে। কিন্তু কালু কামার এককোটি থেকে একটি কম মানে ঊনকোটি টি মূর্তি তৈরী করে দিতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয় কাহিনী - কিংবদন্তি অনুসারে দেবাদিদেব মহাদেব একবার দেবতাদের নিয়ে ত্রিপুরার উপর দিয়ে বারানসী যাচ্ছিলেন। মহাদেবকে নিয়ে দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কোটি। সন্ধ্যে নামার পর রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয় এই রঘুনন্দন পাহাড়ে। পথপরিশ্রমে ক্লান্ত দেবতারা গভীর নিদ্রায় অচেতন হলেন। পরেরদিন সূর্যোদয় হওয়ার আগে সবার বারানসীর উদ্দেশে যাত্রা করার কথা, কিন্তু মহাদেব ছাড়া অন্য কোনো দেবতাদের নিদ্রাভঙ্গ হল না। মহাদেব বিরক্ত হয়ে একাই বারানসীর উদ্দেশে রওনা দিলেন। গভীর নিদ্রায় সমাধিস্থ দেবতাদের কালনিদ্রা আর ভাঙ্গল না এবং তারা অনন্তকালের জন্য পাথর হয়ে রইলেন। এই দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কম কোটি তাই ঊনকোটি। সেই থেকেই এই রঘুনন্দন পাহাড় হয়ে গেল শৈবতীর্থ ঊনকোটি।
এক ঊনকোটি ফ্লাইট, রেল বা সড়কপথে তিন ভাবেই আসা যায় এটির অবস্থান ঊনকোটি জেলার সদর শহর কৈলাশহর থেকে ৮ কিমি দূরে। ফ্লাইটে আসতে চাইলে কৈলাশহরে এয়ারপোর্ট আছে। আর আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে নিকটবর্তী স্টেশন হলো কুমারঘাট বা ধর্মনগর স্টেশন, আগরতলা থেকে এই লাইনে দিনে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করে, আর আপনি গৌহাটি/ শিলচরের দিক থেকেও আসতে পারেন, তাহলে নিকটবর্তী স্টেশন হবে ধর্মনগর। কুমারঘাট/ ধর্মনগর থেকে কৈলশহরের দূরত্ব ২৫-২৬ কি.মি, যার জন্য আপনি ছোট গাড়ি বা বাস পেয়ে যাবেন। আর কৈলাশহর থেকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত ঊনকোটি পৌঁছতে ছোট অনেক গাড়ি আছে।
আর আপনি যদি সড়কপথে আসতে চান তাহলে আগরতলা থেকে নিয়মিত বাস পেয়ে যাবেন সরাসরি এই কৈলশহরে আসার জন্য।
ধন্যবাদ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন