উত্তরবঙ্গের সেরা ১০ টি মন্দির। Top 10 Must Visited Temple in North Bengal

 -:উত্তরবঙ্গের জেলাভিত্তিক কিছু বিখ্যাত মন্দির:- 

ভ্রমণ পিপাসু :- উত্তরবঙ্গ মানেই আমরা একবাক্যে বলে দিতে পারি পাহাড়, জঙ্গল, নদনদীর এক মিশ্রণ, যার টানে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এই উত্তরবঙ্গের বেড়াতে আসে, আর একটু ফ্রেশ অক্সিজেন নিয়ে যায়। তরাই, ডুয়ার্স, দার্জিলিং এর পাহাড় বাদেও এখানে কিন্তু আরো অনেক কিছুই আছে। আমরা হয়তো এটা সকলেই জানি যে উত্তরবঙ্গ গঠিত ৮টি জেলা নিয়ে, শুরু হয় মালদা দিয়ে তারপর উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিংপঙ, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, এবং আলিপুরদুয়ার।


এই ব্লগে উত্তরবঙ্গের একদমই একটি আলাদা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, এবং কিছু তথ্য তুলে ধরবো। আজ যেটা নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হলো উত্তরবঙ্গের কিছু বিখ্যাত মন্দির। বিষয়টি একদমই আনকমন এবং এটা নিয়ে লেখালেখি এবং ব্লগ খুবই কম থাকায়, এই বিষয়টি নিয়ে লেখার ইচ্ছা লাগলো, তার ওপরে মন্দির নিয়ে একটা আলাদা টান আমার আছে। চলুন তাহলে ব্লগটি শুরু করি, এখানে উল্লেখিত মন্দির গুলো নিয়ে অনেকেই হয়তো জানেন, কিন্তু তার বাইরেও এরকম অনেক মন্দির খোঁজ আপনারা পাবেন, যেগুলো সম্পর্কে হয়তো আপনারা আগে শোনেন নি। তাই ব্লগটি পড়ার পর, আবার কোনোবার যদি উত্তরবঙ্গে আসার প্ল্যান করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে উত্তরবঙ্গের পাহাড়, জঙ্গলের পাশাপাশি এই লিস্টের কিছু মন্দির আপনারা অবশ্যই রাখতে পারেন, আপনাদের প্ল্যানে।

জহুরা কালি মন্দির :-তিনশো বছরের পুরোনো মালদার প্রাচীন জহুরা কালী মন্দির যেখানে পুজো দিলেই ভক্তদের মনস্কামনা হয় পূরণ, এমনটাই বিশ্বাস এই মন্দিরের পুণ্যার্থীদের। যার টানে দূর দূরান্ত থেকে পূর্নাথীরা ছুটে আসে এই মন্দিরে হমালদা জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত ও জাগ্রত মন্দিরের সবচেয়ে অগ্রগন্য এই মন্দির, এটি আসলে একটি চন্ডী মন্দির। 


এই মন্দিরের প্রাচীনত্ব ৩০০ বছর বলা হলেও স্থানীয়দের মতে এই মন্দিরের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের ও বেশী পুরনো। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বলে মনে করা হয়। আরো একটি মতে প্রায় ৩০০ বছর আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত ব্রাহ্মণ তিবাড়ী পরিবার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর সূচনা করেন, বংশানুক্রমিক ভাবে এই পরিবারের বংশধরেরাই এখন এই মন্দিরের পূজার কাজ করে চলছে। এখানে কোনো মূর্তি পুজো হয়না, এখানে মায়ের মুখোস তৈরি করে পুজো করা হয়, যে মুখোস মালদা শহরেরই একটি পরিবার বংশানুক্রমিকভাবে করে চলছে।


এই মন্দিরটির অবস্থান মালদা বা ইংরেজবাজার শহর থেকে মাত্র ৮-৯ কিমি দূরে বাংলাদেশ বর্ডার লাগোয়া রায়পুর গ্রামের আমবাগানের মাঝে, মন্দির থেকে জায়গাটির নাম পরিচিত হয়েছে জহুরাতলা নামে। দেশভাগের পূর্বে ওপার থেকেও প্রচুর মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে আসতো। 

এই  মন্দিরের পুজোর কিছু নিয়ম রীতি আছে, প্রথমত এই মন্দিরে মায়ের মুখোস গড়ে পুজো করা হয় সেটা আমি আগে বললাম।

দ্বিতীয়ত সব কালি পূজাই রাতের বেলায় সম্পণ্য হলেও এই জহুরা কালি পূজা কিন্তু একদম উল্টো পথে হেঁটে দিনের বেলায় হয়ে থাকে। এবং পুজো কেবলমাত্র মঙ্গল ও শনিবারেই হয়ে থাকে, তাই মায়ের দর্শন পেতে হলে আপনাকে এই দুদিনের মধ্যেই আসতে হবে। এমনিতেই সারাবছর পুজো হলেও বৈশাখ মাসে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। সেইজন্য পুজো উপলক্ষে বৈশাখ মাসে এই দুদিন এখানে বিরাট মেলাও বসে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এই সময়ে ।

এখানে আসা খুবই সহজ আপনারা যদি কয়েকজনের গ্রুপে আসতে চান তাহলে মালদা শহর থেকে একটা টোটো রিজার্ভ করে নিয়ে সহজে চলে আসতে পারেন। দুরত্ব মাত্র ৮ কি.মি। বাইক নিয়ে বা পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে আসতে চাইলে মালদা শহর থেকে বিপিন ঘোষ রোড ধরে এখানে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ৩০ মিনিট। এই জহুরা কালি মন্দিরের পাশেই কিছুদূরে আরো একটি প্রাচীন মন্দির আছে যেটি একটি সূর্য মন্দির, অনেকে একে প্রাচীন জহুরা কালি মন্দির হিসেবেও মনে করে থাকে। আসলে অবশ্যই এই মন্দিরটিও দর্শন করে যাবেন।

রামকেলি মন্দির, গৌড় :- প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো মালদা জেলার রামকেলি নাম অনেকেই হয়তো শুনেছেন। বৈষ্ণবদের গুপ্ত বৃন্দাবন হিসেবে পরিচিত এই রামকেলি মন্দিরে স্বয়ং চৈতন্যদেব এসেছিলেন এবং তার পদযুগলের চিহ্ন এখনো এখানকার একটি মন্দিরে রাখা আছ। তাই মালদা ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে অবশ্যই আপনাদের একবার এই রামকেলি ধাম দর্শন করে যাওয়া উচিৎ। তবে আলাদা ভাবে শুধু এই মন্দির দেখতে আসার কোনো প্রয়োজন নেই আপনারা গৌড় ভ্রমনে সাথে সাথে এই মন্দিরটিও একসাথে দেখে ফেলতে পারবেন।

রামকেলির ইতিহাস ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো । ইতিহাসে জানা গেছে চৈতন্য মহাপ্রভু নীলচল যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময়ে ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই জুন জৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিন তৎকালীন বাংলার রাজধানী এই গৌড়ের রামকেলিতে পদার্পন করেছিলেন, এবং একটি তমাল গাছের নিচে বসে ৩ দিন জাবত ধ্যান করেছিলেন, এখানেই শ্রী । চৈতন্যদেবের আগমনের খবর তখন যায় বাংলার নবাব আলাউদ্দিন হুসেন শাহ( বাংলার আকবর) এর কাছে। গৌড় ছিলো তখন গোটা বাংলা-বিহার-ওড়িশারার রাজধানী। চৈতন্যদেবের আগমনের খবরেই তার রাজসভার দুজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দবিরখাস ও সাকির মল্লিক কে চৈতন্যদেবের কাছে পাঠান। এই দবির খাস ও সাকির মল্লিকই পরবর্তীকালে চৈতন্যদেবের কাছ থেকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা লাভ করে রূপ গোস্বামী এবং সনাতন গোস্বামী নামে পরিচিতি লাভ করেন। চৈতন্যদেবের আগমন উপলক্ষে এখানে প্রতি বছর জৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিন থেকে বিরাট রামকেলির মেলা বসে। 

বাবা রামদেব মন্দির :- উত্তর দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মন্দির গুলোর মধ্যে একটি এই কানকির রামদেব বাবা মন্দির। রামদেব বাবা পশ্চিমী রাজস্থানের এক লোকদেবতা। তার মন্দির রাজস্থান, গুজরাট এই সমস্ত এলাকায় থাকলেও আমাদের এদিকে অর্থাৎ পূর্ব ভারতের দিকে খুবই কম আছে। শুনেছি কলকাতায় একটা মন্দির আছে। আর একটি এই কানকির মন্দির। কানকি উত্তর দিনাজপুর জেলার ৩১ নং জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী চাকুলিয়া ব্লকের অন্তর্গত বর্ধিঞ্চু একটি পঞ্চায়েত। জাতীয় সড়কের একদম পাশেই অবস্থিত এই মন্দির। একে কানকি ধাম হিসেবেও ডাকা হয়।


লোকগাথা অনুসারে বাবা রামদেবের জন্ম পশ্চিম রাজস্থানের একটি ছোটো রাজ্যের কাশমের গ্রামে রাজা আজমাল এবং রানী নৈনাদেবীর ঘরে। প্রথমে রাজা আজমালের কোনো সন্তান ছিল না, তারপর তারা দ্বারকা মন্দিরে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে তাদের ঘরে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছিলো সেইজন্য তাকে শ্রী কৃষ্ণ অবতার হিসেবেও ডাকা হয়। তাকে নিয়ে অনেক লোকগাথা, কল্পকথা প্রচলিত আছে। বাবা রামদেব ট্রাস্ট এবং তার ভক্তদের অর্থে এই বিশাল মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিলো। মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যে মূল মন্দিরটি ছাড়াও আরও কিছু মন্দির থাকার জন্য রুম, প্রাসাদের ব্যবস্থা আরও অনেক কিছু আছে। মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলে আপনাদের স্বর্ণ মন্দিরের মত অনুভব হবে। অনেকটা সময় এখানে কাটাতে পারবেন।

কেমন করে যাবেন : - আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে শিলিগুড়ি কলকাতা রুটের যেকোনো ট্রেন ধরে আপনাকে নামতে হবে বিহারের কিশানগঞ্জ স্টেশন বা ডালখোলা স্টেশনে। কিশানগঞ্জ বা ডালখোলা থেকে গাড়ি বা অটো পেয়ে যাবেন এখানে আসার জন্য। কিশানগঞ্জ স্টেশন থেকে মাত্র ১৫ কি.মি দূরে কানকি। কানকিতে ও একটি স্টেশন আছে কিন্তু সব ট্রেন দাঁড়ায় না। আপনি যদি বাসে আসতে চান তাহলে সরাসরি কানকি বাস স্ট্যান্ডে নেমে যেতে পারবেন। মন্দির সেখান থেকে মাত্র ১০০ মিটার। 

বোল্লা কালি মন্দির :- দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহর থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত বোল্লা গ্রাম। এই গ্রামেই প্রতি বছর রাসপূর্ণিমার পরবর্তী প্রথম শুক্রবারে সারম্বরে ও শ্রদ্ধার সাথে শ্রী শ্রী বোল্লা রক্ষাকালি মায়ের পুজো করা হয়। 

 দক্ষিণ দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের প্রসিদ্ধ বোল্লা কালীমন্দির। বালুরঘাট-মালদা মহাসড়কের ওপরে অবস্থিত এই বোল্লা গ্রাম । কয়েকশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই রক্ষা কালী মায়ের পুজো।। কথিত আছে মুরারীমোহন চৌধুরী (তান্ত্রিক) স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মায়ের শিলামুর্তি খুঁজে পান এবং পুজো শুরু করেন (মতান্তরে এক মহিলা বসন্তকুমারী) সেই সময় এই চত্বর জঙ্গলাকীর্ণ ছিল।। পরবর্তীকালে কোনো এক সময়ে গ্রামে মড়ক দেখা দেয়, এরপর গ্রামবাসি মায়ের মন্দিরে মানত করে, মানত করার কয়েকদিনের মধ্যেই আশ্চর্য্যজনক ভাবে মড়ক একদমই কমে যায়। তখন থেকে প্রতি বছর জৈষ্ঠ মাসের ফলহারিণী অমবস্যা তিথিতে মায়ের পুজো হয়ে থাকতো। 


আজকে আমরা যে বোল্লা মায়ের পুজো দেখতে পাই ১৯২০ সাল থেকে এই পূজার সূত্রপাত। প্রথম দিকে পূজা এত যাকঁজমক ছিলো না। পূজা উপলক্ষে এখানে এক বিরাট মেলার আসর বসে যা উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ মেলা। 

এই পূজার সূত্রপাত নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে তার মধ্যে বেশী প্রচলিত যেটি সেটা অনুযায়ী বোল্লা অঞ্চলে স্বাধীনতার আগে থেকেই প্রতি শুক্রবারে হাট বসতো সেরকমই একটা শুক্রবারে গ্রাম্য বিবাদে একজন খুন হয়ে যায় তার ফলে সেই খুনের আসামী হিসাবে গ্রামেরই 30,40 জন মানুষকে পুলিশ গ্রেফতার করে। (আবার কারো কারো মতে গ্রামের জমিদার বল্লভ মুখোপাধ্যায় ব্রিটিশ পুলিসের হাতে গ্রেফতার হোন, যার থেকে বোল্লা নামটি এসেছে) সেই সময়ে খুনের সাজা ছিলো ফাঁসি, সেই জন্য গ্রামের লোকেরা স্থানীয় এই সোয়া হাতের কালী মন্দিরে মানত করে।কোর্টের রায়ের পর দেখা যায় গ্রামের সমস্ত বাসিন্দারাই বেকসুর খালাস পেয়েছে. রায়ের পর গ্রামে শুরু হয়ে যায় আনন্দ উৎসব।এর পর তারা ঠিক করে ওই কালী মন্দিরে তারা প্রতি বছর মায়ের পুজার আয়োজন করবে সাড়ে সাত হাতের মাতৃমূর্তির। সেই বছর থেকে রাস পূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে হয়ে আসছে বোল্লা কালির রক্ষামায়ের পূজা। বর্তমানে প্রায় 14 কেজি সোনার গহনায় সজ্জিত করা হয় মায়ের প্রতিমা।


তপনের রাধাগোবিন্দ মন্দির :- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আরো একটি মন্দিরের সন্ধান দিচ্ছি যে মন্দিরটি সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না, কিন্তু মন্দিরটি ভারী সুন্দর এবং দেখার মত। মন্দিরটি হল তপনের রাধাগোবিন্দ মন্দির।


দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলার তপন ব্লকের যে জায়গাটি সবচেয়ে বিখ্যাত, এবং যার টানে মানুষ এখানে এসে থাকে সেটা হলো তপন দিঘী, মহাভারতের আমলের এই দিঘির এখন বর্তমানে সংস্কারের কাজ চলছে। এই দিঘির একদম পাশেই এই মন্দিরটি অবস্থিত।যখন আপনারা তপনে আসবেন তখন শুধু শুধু তো এই মজে যাওয়া দীঘি দেখার জন্য শুধু শুধু আসবেন না, সেইজন্য তপন দীঘির পাশেই এই বৃহৎ রাধা গোবিন্দ মন্দিরটি অবশ্যই দেখে যেতে পারেন। যদিও এর নির্মাণ কাজ এখনো পুরোপুরি সম্পূর্ন হয়নি, তা সত্বেও বলবো এখানে আসলে আপনাদের খারাপ লাগবে না, খুবই সুন্দর এই মন্দিরটি। রথ যাত্রা উপলক্ষে এখানে বিরাট মেলার আসর বসে যা পুরো দুই দিনাজপুর জেলার মধ্যে বৃহত্তম। আসলে পাশে রাখা রথ তিনটিও দেখতে পাবেন। আপনি বালুরঘাট বা গঙ্গারামপুর যেকোনো জায়গা থেকেই এখানে আসতে পারবেন দু জায়গা থেকেই এখানে আসা খুবই সহজ।

জল্পেশ মন্দির :- উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম মন্দিরের নাম যদি নেওয়া যায় তাহলে সবার প্রথম সারিতে থাকবে জলপাইগুড়ি জেলার এই জল্পেশ মন্দির, পুরাণেও এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ আছে, যদিও সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। এর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম এবং বৃহৎ মেলা বসে এই জল্পেশ মন্দির প্রাঙ্গণেই যার টানে শুধু দেশ নয় পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান থেকেও পূর্নাথী এখানে এসে থাকে।

এই জল্পেশ মন্দিরের অবস্থান জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি শহর থেকে মাত্র ৭-৮ কি.মি দূরে। আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে জলপাইগুড়ি রোড, ময়নাগুড়ি রোড বা নিউ ময়নাগুড়ি যেকোনো একটি স্টেশনে নেমে বাস, ছোটো গাড়ি বা টোটো রিজার্ভ করে খুব সহজে এখানে চলে আসতে পারেন।


এই জল্পেশ মন্দিরের ইতিহাস বহু পুরনো। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা নিয়ে বহু কথা প্রচলিত আছে। মনে করা হয় ১৫২৪ সালে কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের পিতা বিশ্ব সিংহ জল্পেশ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন । পরবর্তীকাল তিনি ১৫৬৩ সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। আবার ১০০ বছর পর রাজা প্রাণ নারায়ণ ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।এরপর কোচবিহারের রাজা লক্ষ্মী নারায়নের রাজত্বকালে কোচ রাজবংশের বশ্যতা অস্বীকার করার পর ১৬২১ খ্রিস্টাব্দে মহীদেব রায়কত তার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কোচরাজাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে অস্বীকার করেন। এরপর থেকে মন্দিরটি বৈকুণ্ঠপুরের রায়কতদের তত্ত্বাবধানে ছিল। ১৮৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজা জগেন্দ্র দেব রায়কতের স্ত্রী রানী জগদেশ্বরী দেবী এর পুনপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জল্পেশ মন্দিরকে কেন্দ্র করে শিবরাত্রিতে এখানে বিরাট মেলা বসে। জল্পেশ মন্দিরের শিবরাত্রির মেলা খুবই বিখ্যাত। শিবরাত্রি ছাড়াও শ্রাবণ মাসেও এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরে অবস্থিত শিবলিঙ্গ হল জললিঙ্গ। অর্থাৎ শিবলিঙ্গ এখানে গর্তের মধ্যে অবস্থিত। যাকে অনাদিও বলা হয়।যেটা আপনাদের অবশ্যই একবার দর্শন করা উচিৎ।

ভ্রামরিদেবী মন্দির :- আমাদের রাজ্যে ৫১ সতীপিঠের মধ্যে প্রায় ১৩টি পিঠ বা মন্দির অবস্থিত, তার মধ্যে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত একমাত্র সতীপিঠ হল এই ত্রিস্রোতা মা ভ্রামরিদেবী মন্দির, যা অবস্থিত জলপাইগুড়ি জেলায়। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৮ কি.মি দূরে ধূপগুড়ি ব্লকের অন্তর্গত শালবাড়ি, বোদাগঞ্জে। এখানে দেবীর বাম পা পতিত হয়েছিলো। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা ভ্রামরি। আমাদের রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত মা সতীর যে ১৩ টি মন্দির নিয়ে একটি পৃথক ব্লগ আছে সেটি অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন নিচে লিঙ্ক থাকলো... 

এখানে আসতে হলে আপনি জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি যেকোন জায়গা থেকেই আসতে পারেন। গাড়ি রিজার্ভ করে নিলে খুব ভালো হয় বাইক থাকলে আরো ভালো। Njp স্টেশনে নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে এই জায়গাটি দেখে নিতে পারেন। দেবী মন্দিরের পৌঁছানোর রাস্তাটি চলে গেছে বৈকুন্ঠপুর ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে দুদিকে শাল সেগুনের গাছের সারি। মন্দিরের প্রবেশপথের কিছু আগেই আছে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা, তাই আপনারা যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসতে চান তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না।

স্বামীনাথের মন্দির, উত্তর দিনাজপুর :- উত্তর দিনাজপুর আরো একটি প্রাচীন মন্দির হল ইটাহার ব্লকের হাসুয়ার স্বামীনাথের মন্দির। যে মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে বহু ইতিহাস ও মাহাত্ম্য এবং যে মন্দিরকে কেন্দ্র করে আয়োজন হয় এই জেলার বৃহত্তম স্বামীনাথের মেলা।

ভূপালপূর জমিদারবাড়ির জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরীর মা দুর্গাময়ী চৌধুরী তার স্বর্গীয় শ্বাশুরীর পদ্মাবতী দেবীর শুভ সংকল্প অনুসারে 1321 বঙ্গাব্দে 25 শে বৈশাখ ইংরেজির 1914 সালে স্বামীনাথের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন হাসুয়া নামক স্থানে কারন এখানেই এই মূর্তিটি পাওয়া যায়। দুর্গাময়ী চৌধুরী তার স্বর্গীয় শ্বাশুরীর উদ্দেশ্যে এক কবিতা লিখেছিলেন, কবিতাটি মন্দিরের কালো পাথরের গায়ে খোদাই করা আছে। জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী স্বামীনাথের স্বপ্নাদেশ পেয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন তার পুজো শুরু করেন। এই দিন জমিদার বাড়ির বংশধরেরা হাসুয়ায় গিয়ে স্বামীনাথ ও সীতাকে স্বর্ণলঙ্কারে ভূসিত করেন। তারপরই মন্দিরে পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এই দিনে মন্দিরে বিশেষ পূজার ব্যবস্থা করা হয়। তাই এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পূজা চলতে থাকে। মেলার দিন থেকে জমিদারবাড়ির বংশধরেরা প্রায় সবাই এখানে উপস্থিত থাকে। মন্দিরের কারুকাজ একদম দেখার মত। বর্তমানে মন্দিরের সেবাইত শিবপ্রসাদ রায়চৌধুরী, তার উদ্যোগে মন্দিরে নিত্য পূজাপাট করা হয়।

স্বামীনাথের মন্দিরের ভিতরে যে কালো কোষ্টিপাথরের যে মূর্তিটি বিদ্যমান সেটি আসলে বিষ্ণুমূর্তি। মন্দিরের ভিতরে যতো গুলো মূর্তি আছে তারমধ্যে এই মূর্তিটি সবচেয়ে সুন্দর। তাই এই মূর্তিটি মন্দিরের একদম মাঝখানে অবস্থিত। মূর্তিটির উচ্চতা সাড়ে চারফুট, চওড়ায় দুই ফুট। রূপার বালা পরিহিত, চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম। কপালে সোনার টিপ, গলাতে সোনার হার, পরনে শুভ্র বসন। মাঝে মধ্যে ঘি মাখনের জন্য মূর্তিটি খুব উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করেছে। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মূর্তি টিকে রূপালি অলঙ্কার দ্বারা সজ্জিত করে তোলা হয়। মূর্তিটি সাতদিন এভাবেই থাকে। এই সময়ে ভক্তবৃন্দ মূর্তিটির পা-দুখানি দেখতে পায়। বছরের অন্যদিন গুলিতে সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে। কেবলমাত্র মুখটি বেরিয়ে থাকে। মন্দিরের পাশেই আছে জোড়া শিব মন্দির। কথিত আছে নাকি যে স্বামীনাথের শিব বেলতলার নিচে মাটি থেকেই উঠে এসেছে। জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী উদ্যোগেই ওখানে শিব মন্দির নির্মাণ করা হয়। শিবরাত্রির দিন এখানে প্রচুর ভিড় হয়। স্বামীনাথের মন্দিরে স্বামীনাথের মূর্তিটি ছাড়াও আরও কিছু মূর্তি দেখতে পাবেন, যেমন কালোপাথরের মনসা,রাধা কৃষ্ণ, গণেশ, একুশটি সালগ্রাম শিলা, জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা মূর্তি দেখা যায়।

মালবাজার হনুমান মন্দির :- উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের মালবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই হনুমান মন্দির। এই মন্দিরটি হনুমান মন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও মন্দিরটির প্রকৃত নাম শিবোহম বালাজী মন্দির।খুবই সুন্দর অসাধারণ কারুকাজে সজ্জিত এই মন্দির, যারা ডুয়ার্সে বেড়াতে আসবেন তারা অবশ্যই এই মন্দিরটি থেকে ঘুরে যাবেন।


মালবাজার ক্যালটেক্স মোড়ের একদম কাছেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। কিন্তু মন্দিরের ভিতরে ফটোগ্রাফি একদমই Allow না, ভেতরের চোখধাঁধানো কাজ যা আপনাকে সত্যি অবাক করে দেবে।

কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির :- কোচবিহারের রাসমেলা ও মদনমোহন মন্দিরের নাম শোনেন নি এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব মুস্কিল, তাই এই মন্দির নিয়ে বিস্তারিত লেখার খুব একটা প্রয়োজন পড়বে না। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম মেলা কোচবিহারের রাসমেলা ও রাস উৎসব এই মদনমোহন বাড়ি কে কেন্দ্র করেন সূচনা হয়।


কোচবিহার শহরের একদম প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মদনমোহন বাড়ি বা মদনমোহন মন্দির। ১৮৮৫ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে কোচবিহারের মহারাজা মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ দ্বারা নির্মিত এই মন্দির।১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে হরেন্দ্রনারায়ণের প্রপৌত্র মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে, কোচবিহারের বৈরাগী দীঘির পাড়ে বর্তমান চারচালা আকৃতির মদনমোহন মন্দিরটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়। ওই বছরেরই একুশে মার্চ নবনির্মিত মন্দিরে রাজপরিবারের কূলদেবতার বিগ্রহ সহ অন্যান্য দেবদেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মন্দিরের মোট পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। একেক কক্ষে একেক দেবীর বিগ্রহ। পূর্ব প্রান্তে জয়তারা। পশ্চিম প্রান্তে কালী বিগ্রহ। আরেক পাশে ভবানী বিগ্রহ। অন্য দিকে নাটমন্দির। নাটমন্দিরে দুর্গাপুজো হয়। মন্দির স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় রাস পূর্ণিমার দিন থেকে মেলার প্রচলন হয় যা কিনা আজ পর্যন্ত চলে আসছে। তবে মাঝের এই দীর্ঘ সময়ে এই মেলা সম্পর্কিত নানান রকম ঘটনার সাক্ষ্য বহন করতে হয়েছে কোচবিহার শহরকে। দেবতাদের মধ্যে রয়েছে প্রভু মদন মোহন, মা কালী, মা তারা এবং মা ভবানী। প্রতি বছর এই মদনমোহন বাড়ি থেকে রাসচক্র ঘুরিয়ে কোচবিহারের মহারাজারা রাস উৎসব মেলার সূচনা করতেন, যেই প্রথা চলে আসছিল ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত। ১৯৬৯ সাল অর্থাৎ শেষ স্বাধীন মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের সময় পর্যন্ত এই নিয়মেই চলছিল রাসমেলার উদ্বোধন। ১৯৬৯ এর পর রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যুর পর এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন কোচবিহারের জেলার জেলাশাসক তিনিই এখন শ্রী শ্রী মদনমোহন মন্দির দেবোত্তর ট্রাস্টের সভাপতি।

শিলিগুড়ি ISKCON মন্দির :- International Society For Krishna Consciousness বা ISKCON যার যাত্রা শুরু হয়েছিলো আমেরিকার ভার্জিনিয়া থেকে আচার্য প্রভুপাদের হাত দিয়ে। এই ISKCON এর সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ ওপরে শাখা আছে, তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হল শিলিগুড়ির এই ISKCON মন্দির। এই মন্দির শুধু উত্তরবঙ্গ নয় গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় সেন্টার। ১৮৯৮ সালে শিলিগুড়ির বর্তমান ৪১ নাম্বার ওয়ার্ডের গীতালপাড়াতে ISKCON রোডের ধারে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় যার নাম রাধা মাধব সুন্দর মন্দির। 


উত্তরবঙ্গে আসলে আপনাদের Wishlist এ অবশ্যই এই মন্দিরটিকে রাখার চেষ্টা করবেন। মন্দির তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়ার পাশাপাশি আমাদের দেশের ঐতিহ্যের অপূর্ব সংমিশ্রন লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরের ভিতরে রাধাকৃষ্ণ, চৈতন্যদেবের যেসব অসাধারণ চিত্রগুলো আপনারা দেখতে পাবেন সেগুলো রাশিয়ান কোনো এক আর্টিস্টের করা। এর পাশাপাশি এখানে থাকার এবং প্রসাদ খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে। এই মন্দির সপ্তাহে প্রতিদিনই খোলা থাকে সকাল ৮.৩০ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৮.৩০ পর্যন্ত। এখানে পৌঁছানো খুবই সহজ আপনি বাস স্ট্যান্ড বা স্টেশন যেকোনো জায়গা থেকে অটো বা টোটো করে এই মন্দিরে চলে আসতে পারেন।

জয়ন্তী মহাকাল মন্দির :- ডুয়ার্সের আকর্ষনীয় দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম ভারত - ভূটান সীমান্তে অবস্থিত প্রায় কয়েকশো বছরের পুরনো জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খুবই পবিত্র এই মন্দিরে পৌঁছতে হলে আপনাকে প্রায় ৭ কি.মি পথ পায়ে হেঁটে অনেক কাঠগর পেরিয়ে গুহার ভেতরে অবস্থিত বাবা মহাকালের দর্শন পেতে পারবেন তাই উত্তরবঙ্গের সেরা মন্দির গুলোর লিস্টে এই মহাকাল মন্দির অবশ্যই থাকার যোগ্য।


জয়ন্তীতে মহাকালের দুটো মন্দির আছে একটি ছোটো মহাকাল এবং দ্বিতীয়টি আরো দূরে একদম বর্ডারের ভেতরে অবস্থিত বড় মহাকাল। জয়ন্তী থেকে বড় মহাকালের দুরত্ব ৭ কি.মি। জয়ন্তী থেকে বক্সা টাইগার রিজার্ভের গেটে নেমে টিকিট কেটে তারপর মহাকালের রাস্তার দিকে যেতে হবে। মহাকাল স্টার্টিং পয়েন্ট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য অনেক গাড়ি পেয়ে যাবেন ভাড়া কিন্তু এদের বেশি। আপনি কম খরচে যেতে চাইলে আলিপুরদুয়ার NBSTC বাস স্ট্যান্ড থেকে এই মহাকাল যাওয়ার বাসে চলে আসতে পারেন। শিব রাত্রির সময়ে আসলে এখানে মেলা ও বসে তখন কোনো টিকিট চার্জ লাগে না।

ছোট মহাকাল খুব সহজেই পৌঁছানো যায় অনেকে আছে যারা ছোটো মহাকাল দর্শন করেই ফিরে চলে যান, কিন্তু আসল Adventure হলো বড় মহাকাল যাওয়ার, এটাকে ট্রেকের সাথে সাথে আপনারা হাইকিং ও বলতে পারেন। বড় মহাকাল পৌঁছতে রাস্তা বলতে কিছুই নেই। রাস্তা বলতে আছে বড় বড় পাথরের ওপরে ওপরে বাঁশের তৈরি সাঁকো, এবং সিড়ি। এগুলো পারে করে মহাকাল গুহায় পৌঁছতে হলে আপনাকে প্রায় ২০০ পাথরের সিড়ি পেরোতে হবে যা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার কিন্তু এই যাত্রা যথেষ্ট অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ এবং আপনাদের দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। তাই ডুয়ার্স আসলে অবশ্যই এই মহাকাল মন্দির থেকে ঘুরে যেতে পারেন, সত্যি আলাদা একটা Experience হবে। আসলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন শিবরাত্রির সময়ে আসার এই সময়ে রাস্তা মেরামত করে বাঁশের সাঁকো নতুন ভাবে নির্মিত হয় তাই এই সময়ে আসাই সবচেয়ে বেস্ট।

দার্জিলিং মহাকাল মন্দির :- দার্জিলিং এর একদম কেন্দ্রস্থল ম্যালের একদম পাশেই অবস্থিত মহাকাল মন্দির নিয়ে খুব একটা বেশি লেখার হয়তো দরকার পড়বে না। আর যারা যারা দার্জিলিং এ বেড়াতে আসেন তারা এই মহাকাল মন্দির অবশ্যই ভিজিট করে থাকেন। একদিকে এই মন্দিরে পৌঁছানো খুবই সহজ দ্বিতীয়ত এই মন্দিরের প্রাচীনত্ব ও মাহাত্ম্য, এই দুই এর কারণে এই মন্দির দার্জিলিং এর টপ ডেসটিনেসনে মধ্যে একটি।


১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে দুর্জয় লিং জিং নামে একজন লামার উদ্যোগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মন্দিরটি প্রধানত ভগবান শিবের মন্দির তবে এখানে মহাদেবের সাথে মা কালী, হনুমান, গণেশ ও ভগবান বুদ্ধও পূজিত হন। এই মন্দিরটিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের মানুষেরাই প্রার্থনা করতে আসেন।১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দুর্জয় লিং জিং দ্বারা নির্মিত হলেও পরবর্তীকালে গোর্খা সেনার আক্রমণে এই গুম্ফা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, তবে ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। ম্যাল রোডের চৌরাস্তার পিছনে ‘মহাকাল মার্কেটে’র পাশ দিয়ে গিয়ে কিছুটা চড়াই রাস্তায় উঠলেই এই মহাকাল মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া যায়।

হনুমান মন্দির কার্শিয়াং এবং কালিংপঙ :- এই ব্লগের সব শেষে আলোচনা করবো পাহাড়ের দুটো হনুমান মন্দির নিয়ে একটি কার্শিয়াং এবং দ্বিতীয়টি কালিংপঙ এর। দুটো মন্দিরেরই প্রধান আকর্ষন হলো হনুমানজীর বিরাট মূর্তি।

প্রথমে আসি কালিংপঙ এর হনুমান মন্দির নিয়ে, মন্দিরটি কালিংপঙ শহর থেকে মাত্র ৭ কি.মি দূরে ডেলো পাহাড়ের খুব কাছে অবস্থিত। ২০০৪ সালে কর্মা ওয়াংচুক দ্বারা এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়। এখানে আছে হনুমানের ৩০ ফিট উচু এক বিরাট মূর্তি। কালিংপঙ থেকে ডেলো পার্ক দেখে ফেরার পথে এই মন্দির টি দর্শন করে আবার কালিংপঙ ফিরে আসতে পারবেন।


কার্শিয়াং অবস্থিত হনুমান মন্দিরটি, খুব অল্প দিনেই কার্শিয়াং এর জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে। কার্শিয়াং ভিউ পয়েন্টের পাশেই এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে, এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণই হল প্রায় ৪০ ফিট উচু হনুমানের এক বিশাল মূর্তি। যারা যারা এখন দার্জিলিং বা কার্শিয়াং এ আসছেন তাদের বেশিরভাগই এই মন্দিরে একবার করে ঘুরে যাচ্ছেন এক এখানকার সুন্দর ভিউ এবং হনুমানজীর মূর্তি সাথে ছবি ও সেলফি তোলার বাসনা। তাই আপনারা যদি দার্জিলিং বা কার্শিয়াং এ আসার প্ল্যান করতে চলেছেন তাহলে এই সুন্দর জায়গাটি থেকে নিশ্চয়ই ঘুরে যাবেন।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন