কলকাতা ও আসেপাশের সেরা ৭ টি অসাধারণ মন্দির, যেখানে অবশ্যই একবার যাওয়া উচিৎ

- :কলকাতার এবং আসে পাশের সাতটি মন্দির :-


ভ্রমণ পিপাসু :- আমাদের রাজ্যের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর সুন্দর সুন্দর সব মন্দির, এর মধ্যে এমন অনেক মন্দির আছে যা যেগুলো সম্বন্ধে অনেকেই ঠিক জানি না। সেই উদ্দেশেই আজ এই ব্লগে আমি কলকাতা শহর এবং শহরের আসে পাশের কিছু আকর্ষণীয় ও বিশেষ কিছু মন্দিরের খোঁজ দেবো, যে মন্দির গুলো কিন্তু অনেকটাই প্রচারের অভাবে অজানা থেকে গেছে এবং এর মধ্যে কিছু মন্দির বর্তমানে সোসাল মিডিয়ার কল্যাণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।


আমি আজ কলকাতা ও আসে পাশের ৭ টি মন্দির নিয়ে আলোচনা করবো, এর সাতটি মন্দির কিন্তু প্রত্যেকটি, প্রত্যেকটি থেকে ভিন্ন এবং প্রতিটির একটা আলাদা দিক ও বিশেষত্ব আছে, সেটা আপনারা পুরো ব্লগটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। আর এই প্রতিটি মন্দিরই আপনারা কলকাতা খুব কাছে হওয়ার কারণেই একদিনে দেখেই ফিরে আসতে পারবেন। এই ব্লগে মন্দির গুলো নিয়ে সমস্ত তথ্য পুন্খানুপুন্খ ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাতে থাকবে মন্দিরের অবস্থান, কোন সময়ে খোলা থাকে, পুজো এবং ভোগ সমন্ধিও ব্যাপার কেমন করে পৌঁছতে পারবেন এইসব। অনেকে আছেন যারা এই মন্দির গুলো ঘুরে এসেছেন তাদের তো সমস্ত কিছু জানাই, তারা তাদের অভিজ্ঞতা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন, চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে ব্লগটি শুরু করি -

হাওড়ার নতুন মন্দির বা নয়া মন্দির :- কলকাতা খুব কাছেই এবং হাওড়া স্টেশন থেকে মাত্র ৩ কি.মি দূরে অবস্থিত এই মন্দির। আমি প্রথমেই বলেছিলেন এই ব্লগে আমার দেওয়া মন্দির গুলো প্রতিটিই একটি অন্যের থেকে একদমই পৃথক, সবগুলো মন্দিরেই এলাদা একটা বিশেষত্ব আছে। এই মন্দিরের ও একটা বিশেষত্ব আছে সেটা নিয়ে আমি আসছি তার আগে মন্দিরটি নিয়ে আপনাদের একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়ে দি। মন্দিরটি হাওড়ার সালকিয়ার বাঁধাঘাটের কাছে অবস্থিত, উল্টোদিকেই আছে কলকাতার আহিরীটোলা ঘাট। পুরনো যে মন্দিরটি আছে সেটা উদ্বোধন করেছিলেন ১৯৫৩ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের হাত দিয়ে শিবরাত্রির দিন। মন্দিরটির আসল নাম শেঠ বংশীধর জালান স্মৃতি মন্দির। সেই পুরোনো মন্দিরটিকেই সংস্কার করে বেশ কিছু বছর আগে আবার নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে, বর্তমানে এই মন্দিরটিকে নতুন মন্দির/নয়া মন্দির বা বঙ্গেশ্বর মহাদেব মন্দির নামেও ডাকা হয়।

Howrah Bandha Ghat. 

এবার আসি মন্দিরের প্রধান আকর্ষনে। প্রথমত মন্দিরটি যেহেতু হুগলি নদীর একদম পাশেই অবস্থিত তাই এখনকার ভিউ টাও যথেষ্ঠ সুন্দর। এই মন্দিরের ভিতরে অনেক দেবদেবীর মন্দির থাকলেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত ১২ টি মন্দির। আপনি যদি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ একসাথে দর্শন করতে চান তাহলে চলে আসুন এই মন্দিরে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের রেপ্লিকা এখানে গড়ে তোলা হয়েছে খুবই সুন্দর ভাবে এবং মন্দিরের ভেতরে আছে শিবলিঙ্গ যেগুলোতে নিত্য পূজা হয়ে থাকে।

Salkia, Howrah. 

এছাড়াও এই মন্দিরের আরো একটি বিশেষত্ব হল মন্দিরটিতে একদম গঙ্গার ধার বরাবর তৈরী করা হয়েছে ৪১ ফিট উচু দেবাধিদেব মহাদেবের এক অসাধারন মূর্তি। এই মূর্তির উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ৪১ ফিট উচু শিবের এই মূর্তি কিন্তু গোটা পূর্ব ভারতের উচ্চতম শিবের মূর্তি। আপনি যখন লঞ্চ করে বাঁধাঘাটে আসবেন তখন দূর থেকেই এই মন্দির ও মূর্তিটির এক অপরূপ ভিউ দূর থেকে দেখতে পাবেন। খুবই সুন্দর ভাবে গোছানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত নিরিবিলি একটা জায়গা এই মন্দিরটি, বিকেল করে এখানে এসে অবশ্যই ঘুরে যেতে পারেন কথা দিচ্ছি নিরাশ হবেন না।

এবার আসি আমরা কেমন করে যাবেন এই মন্দিরে আপনি এই মন্দির হাওড়া থেকেও যেতে পারেন আবার কলকাতা থেকেও আসতে পারেন। কলকাতা থেকে দুভাবে আসতে পারেন এখানে প্রথমত বাসে করে হাওড়া তারপর টোটো ও অটো করে এই মন্দির। বাঁধাঘাটের নতুন মন্দির যাবো বললেই হবে দূরত্ব মাত্র ৩-৪ কি.মি আবার বাস ও পেয়ে যাবেন। বাসের ঝামেলা না নিতে চাইলে কলকাতার আহিরীটোলা ঘাটে আসুন তারপর লঞ্চ করে চলে আসুন উল্টো দিকের বাঁধাঘাট ভাড়া মাত্র ৭ টাকা এরপর ঘাট থেকে একটু এগিয়েই টোটো পেয়ে যাবেন, এই ঘাট থেকে দূরত্ব ১ থেকে দেড় কি.মি রাস্তা, আপনারা তা হেঁটেও চলে আসতে পারেন। এবার বাকিটা আপনার পছন্দ।

এই মন্দির সপ্তাহের প্রতি দিনই খোলা থাকে, কিন্তু খোলা ও বন্ধের টাইম আছে। সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এই মন্দির খোলা থাকে আবার 2nd হাফে ৩.৩০ পর রাত ৯টা পর্যন্ত এই মন্দির খোলা থাকে সর্বসাধারনের জন্য।

নিউ টাউনের শ্রী রাম মন্দির :- এবার দ্বিতীয় যে মন্দিরটা নিয়ে কথা বলবো সেটা একদমই কলকাতা শহরের মধ্যেই অবস্থিত। আমি কথা বলছি কলকাতার নিউটাউনের ইকোপার্কের পেছনে অবস্থিত শ্রী রাম মন্দিরের। এমনিতে তো আমাদের রাজ্য জুড়ে এরকম প্রচুর মন্দির আছে কিন্তু এই মন্দিরটি বাকি মন্দির গুলো থেকে একটু পৃথক। ১৯৭২ সালে প্রমথেশ্বর জি তার পিতার উদ্দেশ্যে এই মন্দির নির্মাণ করেন। ১৯৭২ থেকে ২০২৩ অনেক কিছুই পাল্টে গেছে এই মন্দিরের এবং তার ফলে বেশ আকর্ষণীয় হয়েছে এই মন্দিরটি কিন্তু মন্দিরটি প্রচারের আলো থেকে অনেকটা বাইরেই থেকে গেছে, এতো সুন্দর একটি মন্দির আপনাদের অবশ্যই একবার যাওয়া উচিৎ।

Shree Ram Mandir Kolkata. 

এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষনই হচ্ছে ১৫১ ফিট উচু হনুমান জির বিশাল মূর্তি, যে মূর্তি একাধারে গোটা পূর্ব ভারতের উচ্চতম মূর্তি। একটি বিল্ডিং এর ওপরের এই মূর্তিটিকে স্থাপন করা হয়েছে। এই মূর্তিটিই এই রাম মন্দিরকে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। অনেক দূর থেকে এই সুউচ্চ মূর্তিটিকে দেখা যায়। মন্দিরে প্রবেশের সাথে সাথেই রামায়ণ তথা বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর ও বিভিন্ন আকর্ষনীয় মূর্তি দেখতে পাবেন, পুরো মন্দির জুড়েই অজস্র রাম নাম লেখা চোখে পড়বে যা একটা আলাদা মাত্রা দেয় এই মন্দিরটিকে। মূল মন্দিরের ভেতরে অনেক গুলোই মন্দির আছে তবে প্রধান মন্দির টি হলো রাম সীতার মন্দির এছাড়াও আছে একটি অসাধারণ কাচের মন্দির। মন্দিরের ভিতরে আরো কিছু মূর্তি, মন্দিরের নির্মাণ কাজ চলছে, আরো এক দুবছরের মধ্যেই এগুলোর কাজ সম্পূর্ন হয়ে যাবে।

New Town, Kolkata. 

এখানে আসবেন কেমন করে প্রথমত এখানে আসা একদমই কঠিন কাজ নয়। নিউটাউনের ইকোপার্ক সবচেয়ে বড় ল্যান্ডমার্ক, ইকোপার্কের একদম পেছনেই এই মন্দির টি অবস্থিত। আপনি যেকোনো জায়গা থেকে ইকোপার্কের বাস ধরে চলে আসুন গেট নাম্বার ৪ এর সামনে। এরপর উল্টে দিকে এসে পশ্চিম দিক অর্থাৎ ৫ নাম্বার গেটের দিকে এই মন্দিরটি পড়বে আপনি যেকোন টোটোওয়ালাকে রাম মন্দির বললেই পৌঁছে দেবে। মন্দিরের গেট সামনে প্রচুর দোকান আছে সেখান আপনারা পুজো সামগ্রী কিনে নিয়ে পুজো ও দিতে পারেন। মন্দির খোলা থাকে সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা আবার বিকেল ৩ টে থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।

খিদিরপুরের জগন্নাথ মন্দির :- প্রত্যেক বাঙালির স্বপ্ন থাকে জীবনে একবারের জন্য পুরি গিয়ে জগন্নাথ দেবের দর্শন করার। পুরি কিন্তু বাঙ্গালির কাছে 2nd হোম। বহুবার পুরি গিয়েছে এরকম প্রচুর মানুষ আপনারা পেয়ে যাবেন। কিন্তু এমন অনেক মানুষ পেয়ে যাবেন যাদের এখনো বিভিন্ন কারনে পুরি যাওয়া হয়ে ওঠেনি, তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই, এখন ঘরের কাছেই পুরির জগন্নাথ মন্দিরের ছোয়া পেতে পারেন, সেইজন্য আপনাদের চলে আসতে হবে একদম কলকাতা শহরের মধ্যেই খিদিরপুরের জগন্নাথ মন্দিরে। আমার ব্লগের তৃতীয় মন্দির এটিই। একদম পুরির মন্দিরের আদলে তৈরি, এবং পুজো থেকে শুরু করে ভোগ সমস্ত কিছুই পুরির জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই করা হয়ে থাকে। তাই এই মন্দিরকে নিশ্চিত ভাবে মিনি পুরি জগন্নাথ মন্দির বলা যেতেই পারে।

Jagannath Temple Kolkata. 

এমনিতে তো জগন্নাথ মন্দির আমাদের রাজ্যে অনেকই আছে কিন্তু খিদিরপুরের এই মন্দিরটি একদমই পুরির মন্দিরের আদলে বাইরে থেকে আনা শিলা দিয়ে তৈরী। মন্দিরের নিয়ম নীতি, পূজার্চনা সমস্ত কিছুই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিয়ম মেনে করা হয়। তাই আপনার যদি এখনো পর্যন্ত পুরী না যাওয়া হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কলকাতার এই মন্দির থেকে একবার ঘুরে যেতে পারেন। মন্দিরের বিগ্রহ জগন্নাথ, বলভদ্র, শুভদ্রা এখানে পুরীর মন্দিরের মত নিম কাঠ দিয়ে তৈরী এবং ভোগ খাওয়ার জন্য পুরীর মত আনন্দবাজার নামে একটু ভোগ ঘর আছে, এখানে আপনি বসে খুবই শান্তির সাথে ভোগ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে ভোগ খেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে অগ্রিম বুকিং করে যেতে হবে নিচের নাম্বার গুলি থেকে - 7003300947/9830110767

Near Khidirpur Trum Dipot /Khidirpur Station 

এখানে আপনারা চাইলে যেকোনো উপায়ে পৌঁছতে পারেন ট্রেনে আসলে খিদিরপুর স্টেশনে নেমেই একদম পাশেই এই মন্দিরটি, বাসে আসলে ট্রাম ডিপোর সামনে নেমে উল্টো দিকের রাস্তার বরাবর ৮-১০ মিনিট হাঁটতে হবে অথবা টোটো ও পেয়ে যাবেন। মন্দিরে খোলার টাইমিং হলো সকাল 6 টা থেকে দুপুর ১ টা এবং বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।

পৈলান স্বামীনারায়ন মন্দির :- কলকাতার আসে পাশে অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীর কোনো মন্দির যদি থেকে থাকে তাহলে এই মন্দিরটি সবার প্রথমের সারিতে থাকবে, আমি এখন কথা বলছি কলকাতার কাছে পৈলানের স্বামীনারায়ণ মন্দির নিয়ে। এই মন্দিরটি পৈলান মন্দির হিসেবে বেশী পরিচিত হলেও এটির অবস্থান পৈলান থেকে কিছুটা এগিয়ে ভাষা নামক স্থানে একবারে ডায়মন্ডহারবার রোডের ধারে। কলকাতা এবং আসে পাশের সবচেয়ে বৃহৎ এই মন্দির তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর। ২০১৪ সালে এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়, এবং এই মন্দির তৈরিতে ব্যবহার হয় রাজস্থানের লাল বেলে পাথরের। কথিত আছে যে, ভগবান স্বামীনারায়ণ (১৭৮১-১৮৩০) একসময় নীলকান্ত বর্ণি রূপে বঙ্গোপসাগরে সাগর দ্বীপে পবিত্র তীর্থভূমি কপিলমুনির আশ্রম দর্শনের জন্য এই স্থান অতিক্রম করে যান। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি প্রমুখ স্বামী মহারাজ পরিকল্পিত এবং সংস্থা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।

Swaminarayan Temple. 

প্রায় ২০০ একর এলাকা জুড়ে এই বৃহৎ মন্দির টি গড়ে তোলা হয়েছে।মন্দিরের গায়ে অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি এবং সূক্ষ্য কারুকাজ। এত নিখুঁত কাজ যুক্ত মন্দির এদিকে একদমই দেখা যায় না । মন্দিরে দুটি ভাগ একটি ওপরে এবং একটি নিচে, নিচে মন্দিরের প্রধান অংশে একদমই ছবি ও ভিডিও করার কোনো অনুমতি নেই, শুধু একবার বলবো একবার এসে খালি আপনারা দেখে, মন্দিরের নিচের অংশটি সত্যই দেখার মত, সেটা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পাবেনন না। মন্দিরের ভেতরে পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে তাই নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে কোনো অসুবিধাই হবে না, তাছাড়া বুকস্টল থেকে শুরু করে, পুজো সামগ্রীর দোকান এবং একটি পুরোপুরি বিরাট ভেজ রেস্টুরেন্ট আছে, আপনারা চাইলে আমরা মত এখানে থেকে ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ টাও করে নিতে পারবেন।

BAPS Swaminarayan এদের মূল সংস্থা, যার পুরো কথাটি হলো Bochasanwasi Akshar Purushottam Swaminarayan Sanstha, Bochasan হল গুজরাটের ছোট্ট একটি শহর, যেই শহর থেকেই ১৯০৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সংস্থার। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাস্ত্রী মহারাজ, এছাড়াও প্রমুখ স্বামী মহারাজ, যোগীজী মহারাজ এদের নেতৃত্বে সংস্থা আরো পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এদের প্রধান কার্যালয় দিল্লীর অক্ষরধাম মন্দির। এছাড়াও আহমেদাবাদ স্বামীনারায়ন মন্দির থেকেও এদের কাজ পরিচালিত হয়। দেশ বিদেশ মিলিয়ে এই সংস্থার মন্দিরের সংখ্যা প্রায় ১১০০ ওপরে। দেশ বিদেশে এদের প্রচুর ভক্ত যাদের টাকায় এই বিশাল দামী দামী পাথরের ভব্য মন্দির গুলি গড়ে উঠছে। মন্দিরের ভেতরে প্রচুর দেব দেবীর মূর্তি ও মন্দির আপনারা দেখতে পাবেন।

Bhasa Near Pailan, Kolkata. 

আপনারা যদি এই মন্দিরে ট্রেনে আসতে চান তাহলে নিকটবর্তী স্টেশন হলো মাঝেরহাট। স্টেশন থেকে বেরিয়ে ওভার ব্রিজ পার করে ডায়মন্ড হারবার রোডের ওপরে চলে আসতে হবে, এই রাস্তাতেই ডায়মন্ড হারবার, রায়চক, নূরপুর গামি বাসে উঠে পৈলান মন্দির বললেই নামিয়ে দেবে। অথবা আপনি বাসে আসতে চাইলে শিয়ালদা বা ধর্মতলা থেকে এই রুটের যেকোনো বাসে উঠে পড়ুন। এই বাস গুলো না পেলে জোকা পর্যন্ত এসে জোকা থেকে অটো পেয়ে যাবেন এখানে আসার ।মেট্রো পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে জোকা পর্যন্ত মেট্রোতেই আসতে পারবেন। মন্দিরের খোলা ও বন্ধের সময় বাকি মন্দির গুলির মতই সকাল ৬টি থেকে ১২ টা এবং বিকেল ৪ টা থেকে ৯ টা। ঘুরে একবারের জন্য কথা দিচ্ছি অসাধারণ লাগবে।

জোড়াসাঁকোর বৈকুন্ঠনাথ মন্দির :- দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের প্রতি আকর্ষন নেই এরকম মানুষ খুবই কমই পাওয়া যাবে। কারণ দক্ষিণ ভারতের মন্দির গুলির গঠন, ভাস্কর্য, প্রাচীনত্ব আমাদের কাছে একটা আলাদা আকর্ষনের সৃষ্টি করে। আমি এই ব্লগটির প্রথমেই বলেছিলেন যে আমি যে মন্দির গুলোর সন্ধান এই ব্লগে দেবো, সে সব গুলিই একটি অপরটি থেকে একদমই পৃথক, সবগুলো মন্দিরেরই একটা আলাদা বিশেষত্ব আছে। সেই সূত্রেই আমি নিয়ে এসেছি এই মন্দিরটির খোঁজ। খোদ কলকাতা দক্ষিণ ভারতীয় মন্দির?? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকোতে আছে দক্ষিণ ভারতের এক অপরূপ মন্দির যার নাম বৈকুন্ঠনাথ মন্দির। কলকাতায় বসে যদি দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের স্বাদ নিতে চান এবং তার পাশাপাশি আপনার যদি দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের প্রতি আকর্ষন থেকে থাকে তাহলে চলে আসুন কলকাতা গিরিশ পার্কের কাছে এই মন্দিরে। বৈকুন্ঠ নাম থেকেই সকলেই আন্দাজ করে নিয়েছেন যে এটি একটি বিষ্ণু মন্দির।

South Indian Temple Jorasako. 

অনেক দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের ন্যায় এই মন্দিরটি সাদা মার্বেল এবং বেলে পাথর দিয়ে তৈরী। মন্দিরের প্রবেশের আগেই দেখতে পাবেন দক্ষিণ ভারতীয় মন্দির রীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য একটা বড় গেট যাকে দক্ষিণের ভাষায় গোপুরম্ বলে। দক্ষিণ ভারতে গেলে এরকম বিশাল বিশাল গোপুরম্ দেখতে পাবেন, সেটা অনেকেই হয়তো দেখছেন এবং গোপুরম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার পরই মন্দিরের সামনে দেখতে পাবেন একটি বড় স্বর্ণদন্ড। মন্দিরের ভিতরে আছে কষ্টি পাথরের বৈকুন্ঠনাথের এক অপরূপ মূর্তি বিরাজমান আছে তার দুই স্ত্রী শ্রীদেবী ও ভূদেবীর সাথে। মন্দিরের দেওয়ালে দেখতে পাবেন বিষ্ণুর দশাবতার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর অপূর্ব সব ভাস্কর্য। দক্ষিণ ভারতের পণ্ডিতের দ্বারাই এখানে সমস্ত পূজার্চনা হয়ে থাকে। 

Main Temple. 

এবার আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি এখানে আসবেন কেমন করে অনেকে হয়তো জানেন এই মন্দিরে আসার রুট আর যারা জানেন না এটা তাদের জন্য। সবচেয়ে ভালো হবে এখানে মেট্রোতে আসা। গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনে নেমেই গিরিশ পার্ক মোড় থেকে বিবেকানন্দ রোড বরাবর গণেশ টকিজের দিকে প্রায় সাত থেকে আটশো মিটার গেলেই এই মন্দির পেয়ে যাবেন। বাসে আসলে গিরিশ পার্ক স্টপেজে নেমে এই রুট ফলো করে চলে আসতে পারেন। আর সবার শেষে বলেদিই মন্দিরের খোলার টাইম, মন্দির খোলে ভোর ৫.৩০ থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত। আবার 2nd হাফে মন্দির খোলে বিকেল ৪.৩০ এ এবং খোলা থাকে রাত ৯ পর্যন্ত।

উত্তর কলকাতার পার্শ্বনাথ মন্দির / পরেশনাথ মন্দির :- কলকাতা এবং তার আসেপাশের কোনো সুন্দর মন্দিরের যদি লিস্ট করা যায় তাহলে এই মন্দিরটি সবার প্রথমের দিকে থাকবে, এতো সুন্দর এই মন্দির, সত্যি সামনে থেকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। মন্দিরটি হল উত্তর কলকাতার মানিকতলার কাছে গৌরীবাড়িতে রাই বদ্রীদাস লেনে অবস্থিত পার্শ্বনাথ জৈন মন্দির বা পরেশনাথ মন্দির। মন্দিরটির প্রকৃত নাম কিন্তু পার্শ্বনাথ মন্দির কিন্তু সকলে এই মন্দিরকে পরেশনাথ মন্দির হিসেবে ডাকে এবং চেনে। জৈনদের ২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ কে উৎসর্গীত এই মন্দির। পার্শ্বনাথের নামই অপভ্রংশ হয়ে হয়তো পরেশনাথ হয়েছে। ১৮৬৭ সালে রায় বদ্রীদাস বাহাদুর মোকিম নামে একজন জৈন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির কিন্তু একক কোনো একটি মন্দির না এটি হল ৩,৪ টি মন্দিরের সমষ্টি। 

Parswanath Jain Temple Kolkata. 

রং বেরঙ এর কাচ,মার্বেল বিভিন্ন ডিজাইনের মোজাইক টাইলস্ স্বেত পাথর দিয়ে তৈরী এই মন্দির এক কথায় অনবদ্য। পুরো এলাকা জুড়ে আছে জৈনদের চারটি মন্দির - সেগুলো হলো - শীতলনাথজী মন্দির

দাদাওয়ারী-কুশলজী মন্দির 

চন্দ্রপ্রভু মন্দির

মহাবীর মন্দির।

তাই এখানে আসলে অবশ্যই চারটি মন্দির ই দেখে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে ঢোকার পরই দেখতে পাবেন সুসজ্জিত বাগান। যার মধ্যে বিভিন্ন দামী পাথর দিয়ে সাজানো পুরো এলাকা এবং বিভিন্ন মূর্তি তার পাশাপাশি আছে বসার জায়গা। এই মন্দির কমপ্লেক্সে দুটো মন্দির আছে একটি শীতলনাথজী মন্দির এবং দ্বিতীয়টি পার্শ্বনাথ মন্দির। এই চারটি মন্দিরের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর মন্দিরটি হল শীতলনাথজী মন্দির, বাইরে থেকে এই মন্দিরটি যতোটাই সুন্দর ভেতরের সৌন্দর্য তার থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি। বাকি মন্দির গুলোও খুব পাশাপাশিই আছে।

Near Gouribari, Manicktala, North Kolkata. 

বদ্রীদাস বাহাদুর নিজের ভাগ্যের সন্ধানে লখনৌ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। স্বর্ণ ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ রোজগার করেন শেঠ বদ্রীদাস। গভর্নর জেনারেল লর্ড মেয়ো তাকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করেন এবং তাকে মোকিম নিযুক্ত করেন। তিনি খুবই ধর্মপ্রাণ ও দানশীল মানুষ ছিলেন। ১৮৬৭ সালে উত্তর কলকাতার এই এলাকায় তিনি এই মন্দির নির্মাণ করেন এবং মন্দিরের ভেতরে একটি বড় পুকুর খনন করেন যাতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়া আছে। তার মৃত্যুর পর আরো নবরূপে নতুন নতুন কিছু মন্দির গড়ে উঠেছে এই এলাকায়।

এখানে আসতে হলে আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে বিধাননগর রোড স্টেশনে নেমে শোভাবাজার গামী যেকোনো অটোতে উঠে নেমে পড়ুন গৌরীবাড়িতে, ওভার ব্রিজের শেষ মাথাতে নেমে বা দিকে ৫ মিনিট হাটলেই আপনি পৌঁছে যাবেন এখানে। আর মেট্রোতে আসলে শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে উঠে পড়ুন উল্টোডাঙ্গার অটোতে এবং নেমে পড়ুন ওভার ব্রিজ শুরু হওয়ার আগে গৌরীবাড়ি স্টপেজে। বাসে ও আসতে পারেন একদম সরাসরি গৌরীবাড়ি। 

টাইমিং - সকাল ৬.৩০ - ১২ টা, বিকেল ৩. ৩০ - সন্ধ্যা ৭ টা।

পুকুড়িয়া সালাসার ধাম :- এবার যে মন্দির টার সন্ধান আপনাদের আমি দেবো সেটা কলকাতা শহর থেকে একটু বাইরে, কিন্তু খুব একটা দূরে না, আপনি কলকাতা শহর থেকে দিনে দিনেই কোথাও যদি ঘুরে আসতে চান তাহলে আপনাদের জন্য বেস্ট হবে। এখন আমি যে মন্দিরটি নিয়ে কথা বলবো সেটা হলো পুকুড়িয়া সালাসার ধাম। এটি হাওড়ার জেলার কোনার কাছে পুকুড়িয়াতে অবস্থিত। এটি কিন্তু একটি হনুমান মন্দির, এবং এই মন্দিরে অবস্থিত হনুমানজীর মূর্তির একটি বিশেষত্ব আছে সেটা নিয়ে আমি পরে বলছি। তার আগে এই মন্দির নিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের জানিয়ে রাখি।

Salasar Dham, Pukuria, Near Kona Howrah. 

হাওড়ার কোনাতে অবস্থিত এই মন্দির এই মন্দিরের আগে সালাসার কথাটি দেখতে নিশ্চয় পাচ্ছেন, এটি কিন্তু একটি জায়গার নাম। এই সালাসার জায়গাটি রাজস্থানের চুরু জেলায় অবস্থিত, সেখানেই আছে সালাসার বালাজী মন্দির। এই হনুমান মন্দিরের অনুকরণেই হাওড়ার এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে ২০১৮ সালে। এই মন্দির নির্মাণে ও ব্যাবহার হয়েছে রাজস্থানী লাল বেলে পাথরের। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী এবং চোখ জুড়ানো কারুকাজে সজ্জিত এই মন্দির আপনাদের কিন্তু বেশ ভালোই লাগবে। এবার আসি মন্দিরের অবস্থিত হনুমানজির মূর্তি নিয়ে। এই মন্দিরে অবস্থিত হনুমানের বিগ্রহটি কিন্তু রাজস্থানের সালাসার ধামের অনুকরণে তৈরি, আর বিশেষত্ব টি হলো এই হনুমানজীর মূর্তির কিন্তু গোফ দাঁড়ি আছে, এরকম গোফ দাঁড়ি যুক্ত মূর্তি কিন্তু গোটা দেশে একদমই কম পাবেন। মন্দিরের ওপরে এবং নিচে দুটি মন্দির আছে, মন্দিরে হনুমানজি ছাড়াও রাম সীতা, রাধা কৃষ্ণ, এবং গণেশের মূর্তি আছে। মন্দিরের ভিতরে কিন্তু ছবি ও ভিডিও করার জন্য পারমিশনের প্রয়োজন আছে।

Salasar Dham. 

এবার আসা যাক এখানে আপনারা কেমন করে পৌঁছোবেন-আপনারা যদি কলকাতার দিক থেকে আসতে চান তাহলে বাসে আসতে চাইলে ধর্মতলা থেকে ডোমজুরের বাস ধরে সলপ হাইরোড স্টপেজে নামতে হবে সেখান থেকে ১০ মিনিট এই মন্দির। আপনি চাইলে হাওড়া থেকেও প্রচুর বাস পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে আসেন তাহলে আপনাকে নামতে হবে পুকুরিয়া স্টপেজে। ট্রেনে আসতে যদি চান তাহলে হাওড়া থেকে আমতা লোকাল ধরে নামতে হবে কোনা স্টেশনে, এরপর স্টেশন থেকে টোটো ধরে চলে আসুন এই মন্দিরে। 

আসা করছি আপনাদের সমস্ত তথ্য দিতে পারলাম এর বাইরেও কিছু জানার বা মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট বা মেল করতে পারেন।

ধন্যবাদ।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন