-: পঞ্চ কৈলাস যাত্রা :-
ভ্রমণ পিপাসু :- দেবাধিদেব মহাদেব যে জায়গায় সাক্ষাত বসবাস করতেন, সেই জায়গা হলো কৈলাস পর্বত। সেই জন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই কৈলাস পর্বতের আলাদা একটি মাহাত্ম্য আছে। মনে করা হয় এই জগতে একটি নয় আছে পাঁচটি কৈলাস পর্বত যাদের একত্রে পঞ্চ কৈলাস বলা হয়ে থাকে।
পঞ্চ কৈলাস - যার মধ্যে প্রথমেই নাম আসে কৈলাস মানস সরোবরের। এছাড়া আছে আদি কৈলাস, কিন্নর কৈলাস, শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাস, মণিমহেশ কৈলাস। এই পাঁচটি পর্বতই পৌরাণিক মত অনুযায়ী খুবই পবিত্র। ভগবান শিবের নিজস্ব বাসস্থান হিসেবে আমার মানস সরোবরের কৈলাস পর্বতের কথা আমরা অনেকে জানালেও বাকি আরো যে চারটি কৈলাস পর্বত আছে, সে সম্পর্কে আমরা কিন্তু অনেকেই জানি না। এই পঞ্চ কৈলাসই দেবাধিদেব মহাদেবের আধ্যাত্মিকতা, ধ্যান এবং পাশাপশি সাক্ষাত মহাদেবের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হয়, সেইজন্য দেশ বিদেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা এই পঞ্চ কৈলাসের পাঁচটি শৃঙ্গ প্রতি বছর এসে থাকে যাকে পঞ্চকৈলাস যাত্রা ও বলা হয়ে থাকে, তবে সবগুলো একবারে তো দর্শন করা সম্ভব নয়, এই ব্লগে এই পঞ্চকৈলাস সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হবে, এবং আপনি কেমন করে এই যাত্রা করতে পারবেন সেই বিষয়ও তুলে ধরবো আসা করি আপনাদের ব্লগটি ভালই লাগবে।
কোথায় অবস্থিত এই পঞ্চকৈলাস :- পঞ্চ কৈলাসের মধ্যে প্রথম কৈলাস পর্বত যেটি বর্তমানে হিমালয়ের উত্তরে মানস সরোবরের নিকটে অবস্থিত। যা চীন অধিকৃত তিব্বতে অবস্থিত। বাকি যে চারটি কৈলাস পর্বত আছে সেগুলো ভারতেই অবস্থিত। এরমধ্যে আদি কৈলাস উত্তরাখন্ড রাজ্যের একদম উত্তরের চীন-নেপাল বর্ডারে কালাপানির খুব কাছেই অবস্থিত। বাকি তিনটি কৈলাস পর্বতই দেবভূমি হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত, এর মধ্যে কিন্নর কৈলাস হিমাচলের কিন্নর শহরের খুব কাছেই কিন্নর ভ্যালিতে। শ্রীখন্ড মহাদেব কুল্লু জেলার কুল্লু ভ্যালির মধ্যে অনুষ্ঠিত গ্রেট হিমালয় ন্যাশনাল পার্কে এবং মনমহেশ হিমাচলের ছাম্বা জেলায় অবস্থিত ।
মনিমহেশ কৈলাস :- দেবভূমি হিমাচল প্রদেশের ছাম্বা জেলার অবস্থিত কৈলাস পর্বত যা বাবা মহাদেবের পূর্নস্থল এবং হিন্দু তীর্থযাত্রীদের কাছে পূর্নভূমি, এবং হিমাচলের অন্যতম সেরা ট্রেকিং রুটের মধ্যে অন্যতম। লোকাল মানুষের বিশ্বাস যে স্বয়ং মহাদেব এই পর্বতের সৃষ্টি করেছিলেন দেবী পার্বতীকে বিবাহ করার পর, এরকমই আরো বিশ্বাস এবং মিথ জড়িত আছে এই পর্বতের সাথে। ৫৬০০ মিটার বা ১৮৫৪৭ উচ্চতা বিশিষ্ট এই পর্বতশৃঙ্গকে এখনো কিন্তু কেউই সঠিকভাবে জয় করতে পারেনি। এই পর্বতশৃঙ্গের সামনেই আছে মনিমহেশ লেক, যেটিও ট্রেকারদের কাছে খুবই প্রিয় ট্রেক রুট।
Manimahesh Kailash |
মনি কথার অর্থ হলো - Jewel of the Crown 👑 এবং মহেশ কথার অর্থ - Lord Shivaঅর্থাৎ এর পুরো কথাটি হলো - Jewel of the Crown of Lord Shiva এই পর্বতটি যেহেতু ছাম্বা জেলায় অবস্থিত যেহেতু এই পর্বতটিকে ছাম্বা কৈলাসও বলা হয়ে থাকে। হিমাচল প্রদেশ লোকাল অধিবাসীদের কাছে বিশেষ করে গাদ্দি ট্রাইবদের কাছে এই পর্বত এবং লেক এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের মাঝামাঝিতে পূর্ণিমার সময়ে লোকাল গাদ্দি আদিবাসীদের দ্বারা এখানে এক বিরাট মেলাও বসে, যা পর্যটকদের আকর্ষনের প্রধান একটি কারণ। হিমাচলের ছাম্বা জেলার ভারমোর নামক একটি ছোট্ট শহর যা এই মনিমহেশ কৈলাস পর্বতের সবচেয়ে নিকটবর্তী শহর। এই ভারমোর থেকেই ট্রেক রুট শুরু হয়ে হাডসার, ধানচো হয়ে মনিমহেশ লেকে, দূরত্ব ২৬ কি.মি। লেক থেকে এই মনিমহেশ পর্বতের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আপনি ট্রেক করে না যেতে চাইলেও হেলিকপ্টারে এই পুরো যাত্রা মাত্র ৭ থেকে ৮ মিনিটে করে নিতে পারবেন। মনিমহেশ লেকের ঠিক ১ কি.মি আগেই আছে গৌরীকুন্ড, পূর্নাথীরা এই এই গৌরীকুন্ডের জলে ডুব দিয়ে এই যাত্রায় অগ্রসর হয়। হিমাচল প্রদেশ সরকার বিশেষ করে ছাম্বা জেলা প্রশাসন এই যাত্রার আয়োজন করে থাকে, আপনি details এ বুকিং সম্বন্ধিও ব্যাপারের জন্য নিচের লিঙ্ক সমস্ত তথ্য জেনে নিতে পারেন -
শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাস :- হিমাচল প্রদেশের কুল্লু জেলার কুল্লু ভ্যালিতে গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্কের ভেতরে এই শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাস পর্বতটি অবস্থিত। হিমাচল প্রদেশ একমাত্র এই জাতীয় উদ্যানই UNESCO থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে। ভগবান শিবের সঙ্গে জড়িত যে সমস্ত জায়গা গুলো আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম যাত্রা এই শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাস যাত্রা, এই যাত্রায় আপনাকে ১৮৫৭০ ফিট উচ্চতায় ট্রেক করে যেতে হয় যা, অমরনাথ, কেদারনাথ, মানস সরোবরের থেকেও অনেকটা বেশি উচ্চতায়, এবং এই যাত্রাপথে অনেকটাই দূর্গম পথ অতিক্রম করে তবেই শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাসে পৌঁছানো যায়, এখানে ৭২ ফিট উঁচু পাথরের শিলাখন্ড দ্বারা সৃষ্টি একটি শিবলিঙ্গ আছ যা অনেক দূর থেকে দেখা যায়।
শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাস/ Srikhand Mahadeb Kailash |
স্থানীয় মান্যতা অনুসারে এখানে ভগবান বিষ্ণু এখানে ভস্মাসুরকে নৃত্যের মাধ্যমে ভস্মে পরিণত করেছিলেন। এখানে পৌঁছতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম পৌঁছতে হবে শিমলা, শিমলা থেকে রামপুর এবং রামপুর থেকে নিরমন্ড এই নিরমন্ড থেকেই আপনাদের যাত্রা শুরু হবে ট্রেক করে, পুরো ট্রেক রুট প্রায় ৩৫ কি.মি। নিরমন্ড থেকে বাগিপুল ও জাও হয়ে পৌঁছে যাবেন শ্রীখন্ড মহাদেব কৈলাসে, দেবাধিদেব মহাদেবের বাসস্থানে। শেষ ১২ কি.মি রাস্তা একদমই খাড়া, সেইজন্য খুবই সাবধানে পেরোতে হয় এই রাস্তাটুকু, সেই কারণেই এই ট্রেক সবচেয়ে কঠিনতম ট্রেক গুলোর মধ্যে একটি, প্রতি বছর জুলাই মাস থেকে এই যাত্রা শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলে।
কিন্নর কৈলাস :- হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলার কিন্নর পর্বতমালার ওপরে অবস্থিত এই পর্বত যা মহাদেবের সঙ্গে জড়িত পঞ্চ কৈলাসের মধ্যে একটি। এক হিন্দু দেবী কিন্নের যার বাসভূমী ছিল এই পর্বত তার নাম অনুসারে এই পর্বতের নাম হয় কিন্নর।
Kinner Kailas |
আদি কৈলাস :- ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের কুমায়ুন মণ্ডলের একদম সর্ব উত্তরের জেলা পিথোরাগড়ের কালাপানির খুব কাছেই অবস্থিত এই এই আদি কৈলাস। এর পূর্ব দিকে আছে কালি নদী এবং নেপাল বর্ডার। এবং উত্তরের লিপুলেখ পাস এবং চীনা বর্ডার। মোটামোটি বলতে পারা যায়, চীন, নেপাল ও ভারতের বর্ডারের খুব কাছেই এই আদি কৈলাস পর্বতটি অবস্থিত। কৈলাস মানস সরোবরের যাত্রা রুটেই এই আদি কৈলাস পর্বতটি অবস্থিত।
আদি কৈলাস যাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পবিত্র যাত্রা হিসেবে গণ্য হয়। এই যাত্রার পুরো ব্যাবস্থাপনা করে থাকে KMVN (KUMAYUN MANDAL VIKAS NIGAM) এই যাত্রায় আপনি ওম পর্বত দর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবেন তাছাড়া আরো কিছু দর্শনীয় স্থান এই যাত্রায় আছে, যা বিস্তারিত ভাবে পেয়ে যাবেন আমার লেখা আদি কৈলাস যাত্রা নিয়ে এই ব্লগে নিচে লিঙ্ক থাকছে দেখে নেবেন। এছাড়াও এই পারমিট ছাড়াও সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবেন এই ব্লগে-
-আদি কৈলাস ও ওম পর্বত যাত্রার বিস্তারিত তথ্য
কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা :- পঞ্চ কৈলাসের প্রথম কৈলাস হল এই কৈলাস মানস সরোবর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পঞ্চ কৈলাসের মধ্যে এই যাত্রা সবচেয়ে পূন্যের কাজ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই কৈলাস মানস সরোবরই পঞ্চকৈলাসের মধ্যে একমাত্র কৈলাস পর্বত যা আমাদের দেশের বাইরে অবস্থিত। তাই আমদের দেশের তীর্থযাত্রীদের এই কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে যথেষ্টই কঠিন হয়ে গেছে।
মানস সরোবরের সাথে সাথে এই কৈলাস পর্বত বর্তমানে চিন অধিকৃত তিব্বতে অবস্থিত। চীনা অধিকারের পূর্বে ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা অনায়াসেই যাত্রায় যেতে পারতো, চীনা অধিকারের পারমিশন থেকে শুরু করে খরচা ও অনেকটা বেড়ে গেছে। এই কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর লেক হিন্দুদের পাশাপাশি বৌদ্ধ, জৈনদের কাছেও এই জায়গা খুবই পবিত্র। যার মধ্যে আছে মানস সরোবর লেকের পরিক্রমা। আপনি মানস সরোবর কৈলাস যাত্রা তিনদিক দিয়ে করতে পারেন এক উত্তরাখন্ডের লিপুলেখ পাস হয়ে, এটাই হচ্ছে প্রাচীন রুট, দ্বিতীয় নাথুলা পাস হয়ে, এবং তৃতীয় নেপাল হয়ে। এটি একটি প্যাকেজ ট্যুর। এই যাত্রার রুট, খরচা, পারমিশন সহ সমস্ত তথ্য পেতে আমার লেখা কৈলাস মানস সরোবর নিয়ে এই ব্লগটি পড়ে নিতে পারেন, এখানে সমস্ত কিছু বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা আছে এবং আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন, তাই এই ব্লগটি আর দীর্ঘায়িত না করে এখানেই শেষ করছি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন