টাকি ভ্রমন গাইড :-
ভ্রমণ পিপাসু :- কলকাতা থেকে কাছে পিঠে এক বা দুদিনের ঘোরার জন্য টাকি কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে আদর্শ। বাংলাদেশ বর্ডারের একদম কাছে ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত টাকি কিন্তু এখন কলকাতা থেকে ট্যুরের আসার জন্য একটি বেস্ট উইকেন্ড ডেসটিনেসনে পরিণত হয়েছে। শুধু কলকাতা কেনো বলবো আপনি রাজ্যের যেকোনো প্রান্ত থেকে এখানে এসে দুদিন অনায়াসে এখানে থেকে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করে যেতে পারেন, আর উপরি পাওনা এই ইছামতী নদীর অপরূপ সৌন্দর্য এবং নৌকা ভ্রমন। বর্তমানে কিন্তু টাকিতে বেশ কয়েকটি নতুন নতুন ট্যুরিস্ট স্পট ওপেন হয়েছে, বেশ কিছু সিনেমাও শুটিং হয়েছে, তাই এখানে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো বিভিন্নতায় ভরা, আর এখানে আসলে আপনাদের থাকার একদমই অভাব হবে, প্রচুর মাঝারি ও ভালো মাপের হোটেল এবং কিছু সরকারি গেস্ট হাউস ও এখানে খুলেছে। তাই বেশ কিছু বছর ধরে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে এই টাকী।
Taki Tour Guide. |
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ থানার অন্তর্গত টাকি একটি খুবই সাজানো গোছানো, ছোট্টো একটি শহর, যে শহরের গা ঘেঁষে প্রভাবিত হয়েছে ইছামতী নদী, এই ইছামতী নদীর ওপারেই আছে বাংলাদেশ। তাই এই ইছামতী নদীতে নৌকা ভ্রমণ এবং তার সাথে দুর্গাপূজার দশমীতে ভারত বাংলাদেশ দুই দেশের প্রতিমা বিসর্জন খুবই জনপ্রিয় রাজ্য জুড়ে, এর সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু নতুন ট্যুরিস্ট স্পট, যার জন্য টাকি পৌরসভার অবদান অসাধারণ। এ ছাড়াও টাকির নিজস্ব কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আছেই, এই ব্লগে আপনি টাকি ভ্রমণের প্রায় ১৫ টি স্থান আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, তার সাথে সাথে টাকি কেমন করে আসবেন, কোথায় থাকবেন, কেমন করে ঘুরবেন, সমস্ত কিছুই তুলে ধরবো.....
টাকি কেমন করে পৌঁছোবেন :- টাকি পৌঁছানো খুবই সহজ। আপনারা যদি কলকাতা থেকে আসতে চান তাহলে ট্রেন বা সড়কপথে খুবই সহজে এখানে চলে আসতে পারেন। আর যারা কলকাতার বাইরে থেকে আসবেন তাদের কলকাতা বা বারাসতে সর্ব প্রথম পৌঁছতে হবে। আপনারা যদি বাইরোড বাসে টাকি আসতে চান তাহলে কলকাতা বা বারাসত থেকে হাসনাবাদের বাস পেয়ে যাবেন, হাসনাবাদের প্রায় ৫ কি.মি আগেই এই টাকি। হাসনাবাদের বাস না পেলে বসিরহাট নেমে, বসিরহাট থেকে গাড়ি পেয়ে যাবেন টাকি আসার জন্য। আর নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে টাকি আসার জন্য দু তিনটি রাস্তা আছে, এক বারাসাত বেড়াঁচাপা হয়ে টাকি রোড ধরে, দুই রাজারহাট মেন রোড ধরে হাড়োয়া হয়ে। তিন মালঞ্চা রোড ধরে ভাঙ্গর, মালঞ্চা হয়েও এই টাকি পৌঁছানো যায়।
সবচেয়ে কম সময়ে এখানে আসার সহজ উপায় হলো ট্রেন। লোকাল ট্রেন করে শিয়ালদহ বা বারাসত থেকে হাসনাবাদ লোকাল করে ২.১৫ ঘন্টাতেই পৌঁছে যেতে পারবেন ভাড়া মাত্র ২০ টাকা।
টাকি কেমন করে ঘুরবেন কত দিন সময় লাগবে টাকি ঘুরতে : - আপনারা টাকি দু ভাবেই ঘুরতে পারেন, এক একদিনেই সারাদিন ঘুরে আবার বিকেলের ট্রেনে ফিরে যেতে পারেন, এটাও ও কিন্তু খুবই জনপ্রিয় আর আপনি টাকিতে এক বা দু দিন থেকে পুরো টাকিটা এক্সপ্লোর করতে পারেন, ধরে নিলাম আপনারা ট্রেনেই পৌঁছোবেন টাকিতে। আপনারা একদিনের জন্য ডে ট্যুর করতে চান তাহলে টাকি রোড স্টেশনে নেমেই স্টেশনের সামনেই প্রচুর টোটো পেয়ে যাবেন। টাকিতে ঘোরার জন্য বেস্ট অপশন এই টোটো তাছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় ভ্যান রিক্সাও চলাচল করে। যেকোনো টোটোওয়ালার সাথে দরদাম করে একটি টোটো রিজার্ভ করে নেন সারাদিনের জন্য। ভাড়া নিতে পারে ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। এই টোটোওয়ালাই আপনাকে সারাদিন টাকির সমস্ত স্পটগুলি ঘুরিয়ে দেবে যদি ও স্পট গুলোর নাম আমি আপনাদের সুবিধার্থে দিয়ে দেবো। তাছাড়াও আপনারা স্টেশন থেকে টাকি রাজবাড়ি ঘাট গিয়ে ওখান থেকেও বিভিন্ন দিকে যাওয়ার টোটো প্রচুর পেয়ে যাবেন ।আর আপনাদের যদি থাকার প্ল্যান থাকে তাহলে রাজবাড়ি ঘাটে নেমে হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে তারপর বেড়াতে পারেন। রাজবাড়ি ঘাট হল মেন জায়গা টাকি শহরের।
টাকি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় :- টাকি আপনি সারাবছর আসলেও এই গরমের টাইম টা Avoid করেই আসা উচিত । টাকি ভ্রমনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। শীতকাল ট্যুরিস্টদের পক্ষে আদর্শ হলেও সবচেয়ে বেস্ট টাইম দুর্গাপূজার দশমির দিন। এই টাকিতে দুই বাংলার দুর্গা প্রতিমা ইছামতি নদীতে নৌকা করে নিয়ে বিসর্জন দেখতে সত্যি আলাদাই লাগে। যা দেখতে দূর দুরান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসে। দুই দেশের ঠাকুর এক জায়গায় বিসর্জন এটা দেশে আর কোথাও পাবেন না। তাই এই সময়ে আসলে আপনাদের টাকি ভ্রমণ পুরোপুরি সফল বলা যেতে পারে।
টাকি ভ্রমণের কিছু দর্শনীয় স্থান :- এমনিতেই টাকি শহরে প্রচুর জায়গায় টাকি ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানগুলি নিয়ে বোর্ড দেওয়া থাকবে, তাছাড়া ও আপনাদের টোটোওয়ালাই আপনাদের সমস্ত জায়গা গুলো খুব সুন্দরভাবে ঘুরিয়ে দেবে এবং গাইড করে দেবে, তবুও আপনাদের সুবিধার্থে আমি আপনাদের টাকির প্রায় ১৪ টি মত জায়গার নাম এবং কেমন করে ঘুরবেন সেটা তুলে ধরবো। কোনো জায়গায় যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানা থাকলে খুবই সুবিধা হয় প্ল্যান করতে এবং তাতে কোনো জায়গাই ছাড়া পড়ে যায়না,
১. টাকি রাজবাড়ি ঘাট।
২. ইছামতী নদীতে নৌকা বিহার।
৩. টাকি রাজবাড়ি ( পূবের বাড়ি)
৪. টাকি তিন নদীর মোহনা।
৫. রাজবাড়ি দুর্গাদালান ।
৬. টাকি পিকনিক স্পট।
৭. মিনি সুন্দরবন ( গোলপাতার ফরেস্ট)
৮. রায়চৌধুরী জমিদার বাড়ি।
৯. গয়নার বাক্স সিনেমার শুটিং স্পট।
১০. বিসর্জন সিনেমার শুটিং স্পট।
১১. জোড়া শিব মন্দির।
১২. প্রাচীন ব্রিটিশ আমলের জলের ট্যাঙ্ক।
১৩. কুলেশ্বরী কালিবাড়ি।
১৪. ইছামতি রিভারসাইড।
১৫. ইকোপার্ক।
১. টাকি রাজবাড়ি ঘাট :- টাকি ভ্রমনের সেন্টার প্লেস বলতে পারেন এই টাকি রাজবাড়ি ঘাটকে। কারণ এই রাজবাড়ি ঘাটেই আপনি থাকার মতো ছোটো বড় অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন, আবার এখান থেকেই টাকির যেকোনো দিকেই সাইটসিং যাওয়ার জন্য টোটো পেয়ে যাবেন। এই ঘাটে বসেই দু দেশের মাঝে অবস্থিত ইছামতি নদী মনোরম দৃশ্য এবং সূর্যোদয় সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া টাকি ভ্রমনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় যেটি, ইছামতি নদীতে নৌকা ভ্রমন সেটাও এই রাজবাড়ি ঘাট থেকেই আপনাকে শুরু করতে হবে। তাই যাই হোক আপনাকে এই ঘাটে আসতেই হবে, বর্তমানে পুরসভা থেকে এই ঘাটের সৌন্দর্যায়ন করা ছাড়াও পর্যটকদের বসার জায়গা থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিং এর সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Taki Rajbari Ghat. |
ইছামতি নদীতে বোটিং :- আমি আগের পয়েন্টেই বলেছি যে টাকি ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় যেটা, যার টানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এখানে ছুটে আসে সেটা হলো এই ইছামতি নদীতে বোটিং। ইছামতি নদী এমন একটি দারুণ পজিশনে আছে যে, যার এক প্রান্তে বাংলাদেশ এবং এক প্রান্তে ভারত। বোট বা নৌকা গুলোতে ও দেখতে পাবেন ওই দেশের পতাকা লাগানো, তাই এই বোটিং করার সময়ে দারুণ একটা ফিলিং আসবে।
Ichamati River. |
তবে দুর্গাপূজার সময়ে অর্থাৎ দশমীর দিন এই মজা আরো দ্বিগুণ হয়ে ওঠে, দুদেশের প্রতিমা নৌকা করে মাঝ নদীতে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে এই সময়ে কিন্তু সবকিছুর রেটই একটু বেড়ে যায়। আপনি যদি এক বা দুজনে এখানে আসেন তাহলে কিন্তু বোটিং এর খরচা একটু বেশি ই পরে যাবে। ৩ থেকে ৪ জন বা তার বেশি হলে তো আরোই ভালো, সিঙ্গেল বা দুজন থাকলে আপনাকে অন্য কোনো ট্যুরিস্ট খুঁজতে হবে নয়তো বেশি টাকায় বোট ভাড়া করতে হবে। বিভিন্ন রকম বোট আছে ছোটো বোট ৬০০ - ৮০০ টাকা এবং এর চেয়ে আরো বেশি ভাড়া যুক্ত বোটও এখানে পেয়ে যাবেন।
টাকি রাজবাড়ি :- টাকি রাজবাড়ি টাকির জনপ্রিয় পর্যটনস্থল গুলো মধ্যে একটি। আপনি যদি প্যাকেজ বুকিং না করে থাকেন তাহলে টাকি রোড স্টেশন থেকে রাজবাড়ি ঘাট যাওয়ার পথেই এই রাজবাড়ি পড়বে, আপনি যাওয়ার পথেই দেখে নিতে পারেন অথবা রাজবাড়ি ঘাট থেকে হেঁটে ও এখানে চলে আসতে পারেন মাত্র 900 মিটার। টাকি রাজবাড়ি ঘাট থেকে তিন দিকে আপনি টোটো করে সাইটসিং করতে পারবেন, যেদিকেই যান টোটো রিজার্ভ ভাড়া ৩০০ টাকা।
Taki Rajbari. |
টাকি রাজবাড়ির একটি নাম পূবের বাড়ি। উত্তর, দক্ষিন, পূর্ব এবং পশ্চিম এই চারটি বাড়ির মধ্যে এখন কেবল মাত্র এই পূবের বাড়িটিই টিকে আছে। এখানে ১০ টাকা প্রবেশ মুল্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। বাড়ি টি খুব বড় নয়, বেশিক্ষণ সময় আপনাদের লাগবে না, পেছনে একটি দুর্গা দালান আছ, যেখানে এখনো পুজোর সময়ে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে ।
মিনি সুন্দরবন :- আমি বলবো টাকি তে যদি কোনো একটা জায়গা আপনাদের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে সেটা হলো এই মিনি সুন্দরবন যার প্রকৃত নাম গোলপাতার ফরেস্ট। নারকেল গাছের মত আকারে অনেকটা ছোট এই ম্যানগ্রোভ গাছের পাতা গুলো কিন্তু গোল নয়, এই গাছের ফলটি গোলাকৃতির হয় বলে এই নাম। এই জায়গাটিতে প্রচুর পরিমাণে এই গোলপাতার গাছ একসাথে দেখতে পাবেন একদমই ইছামতি নদীর ধারে এবং বাংলাদেশ বর্ডারের খুবই কাছে। বর্তমানে জায়গাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
Mini Sundarban, Taki. |
আপনি টাকি রাজবাড়ি ঘাট থেকেই এই গোলপাতার জঙ্গলে আসার জন্য টোটো পেয়ে যাবেন ভাড়া ৩০০ টাকা, রাস্তায় আরো কিছু স্পট আপনারা দেখে নিতে পারবেন। এই জায়গার আসার অনেক নিয়ম আছে এবং নির্দিষ্ট টাইম আছে, যেহেতু এটি একটি বর্ডার এলাকা। বিএসএফ চেক পোস্টে আধার কার্ড জমা রেখেই তবেই আপনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। রাজবাড়ি ঘাট থেকে নন্দদুলাল মন্দির পর্যন্ত আপনাদের টোটো যাবে তারপর বাকি পথ আপনাকে ভ্যানে বা হেঁটে যেতে হবে। ভেতরে প্রবেশ মুল্য ১০ টাকা, কিছু watch টাওয়ার আছে, বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট আছে, এছাড়াও গোলপাতা ছাড়াও আরো কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ এখানে দেখতে পাবেন।
Mini Sundarban, Taki. |
টাকি তিন নদীর মোহনা :- টাকি শহরের খুব কাছেই আছে এই মোহনা পয়েন্ট। টাকি শহর থেকে মাত্র দু কি.মি দূরে এই জায়গা। এখানে আসার জন্য আপনাকে টোটোওয়ালার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে হবে।
তিনটি নদী ইছামতি, বিদ্যাধরী এবং কালিন্দী নদীর মিলনস্থল। এখান থেকে বাংলাদেশ বর্ডার খুব কাছ থেকে দেখা যায়। বিদ্যাধরী নদীর ওপাশেই আছে হাসনাবাদ। খুবই অপূর্ব, শান্ত একটি জায়গা আপনাদের বেশ ভালোই লাগবে।
টাকি রাজবাড়ি দুর্গাদালান :- টাকি রাজবাড়ি ঘাটের একদমই কাছে এই টাকি রাজবাড়ির দুর্গাদালান। এই দুর্গামন্ডপের অল্প কিছুই এখন অবশিষ্ট আছে। আপনি রাজবাড়ি ঘাটে নেমেই পায়ে হেঁটেই এই জায়গাটি দেখে নিতে পারবেন।
Rajbari Durga Dalan taki. |
রায়চৌধুরী বাড়ি :- গোলপাতার ফরেস্ট যাওয়ার পথেই আপনি পেয়ে যাবেন রায়চৌধুরী পরিবারের জমিদারবাড়ি। এটি প্রাক্তন সেনাকর্তা জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর পৌত্রিক বাড়ি। উনার নাম হয়তো সকলেই শুনেছেন। উনি এমনিতে কলকাতায় থাকেন কিন্তু পূজার সময়ে এবং বছরের কয়েকবার তিনি এই বাড়িতে এসে থাকেন। এখানে একটি দুর্গা মন্দিরও আছে যেখানে প্রতিবছর পুজো হয়। এই জায়গাটিকে বর্তমানে একটি ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
Taki Roy Chowdhury Bari. |
গয়নার বাক্স সিনেমার শুটিং স্পট :- জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরীর বাড়ির ঠিক পাশেই অবস্থিত একটি পুরোনো বাড়ি, বাড়িটির কাদের বা এর ইতিহাস নিয়ে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই, কিন্তু এই বাড়িতেই গয়নার বাক্স সিনেমা শুটিং হয়েছিলো। যদিও বাড়িটির প্রধানগেট প্রায় বন্ধই থাকে এখন আপনাকে বাইরে থেকে বাড়িটিকে দেখতে হবে।
বিসর্জন সিনেমার শুটিং স্পট :- এই গয়নার বাক্স সিনেমার শুটিং স্পটটি দেখে ইছামতী নদী বরাবর আরো একটু এগলেই আরো একটি স্পট পাবেন যেখানে বিখ্যাত ডিরেক্টর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তার সিনেমা বিসর্জনের শুটিং করেছিলেন। ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার মূল বিষয় ছিলো ইছামতী নদী।
Bisarjon Movie shooting Spot. |
এখানে পুরো সিনেমা নয় কিছু দৃশ্যেরই শুটিং হয়েছিলো। ছোট্ট একটি টালিরঘর এখনো যদিও ঘুর্নি ঝড়ের কারণে ভেঙে যাওয়ার নতুন ভাবে নির্মিত হয়েছে তাই সিনেমার সেই ঘরটির সাথে একদমই মিল পাবেন না এখন।
জোড়া শিব মন্দির :- প্রাচীন এই শহর টাকি যার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে বহু পুরনো ইতিহাস। সেরকমই একটি পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে টাকির জোড়া শিবমন্দির। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই শিব মন্দির দুটোর হয়তো যোগ আছে টাকি রাজবাড়ির। পৃথ্বীরাজ নামক এক শাসক এই মন্দির দুটি নির্মাণ করেন। মন্দিরদুটির সামনে আছে একটি বিরাট পুস্করিনী, যার ঘাট ও সেই আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। দূর থেকে এই মন্দির দুটি দেখতে কিন্তু বেশ ভালোই লাগে।
আমি আগেই বলেছিলাম আপনি টাকি রাজবাড়ি ঘাট থেকে তিন দিকে সাইটসিং যেতে পারের এই জোড়া শিব মন্দিরটি কিন্তু একটি ভিন্ন দিকে। এই রুটে আরো ২, ৩ টি স্পট আছে।
কুলেশ্বরী কালী মন্দির :- জোড়া শিব মন্দিরের রুটেই আরো একটু এগলেই এই কুলেশ্বরী কালী মন্দির টি অবস্থিত। প্রায় ৪৫০ বছরের পুরনো এই কালি মন্দিরের নির্মাণ করেন তৎকালীন টাকির জমিদাররা। এক সময় মাছ ধরার জেলেদের জালে ইছামতী নদীতে ধরা পড়ে একটা ঘট, এরপর তৎকালীন জমিদার দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই ঘট দিয়ে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন তারপর থেকে চলেই আসছে এখনো এই পূজা। মন্দিরের পূজার দিন এখনো পাঁঠাবলি দেওয়া হয়।
প্রাচীন জলের ট্যাঙ্ক :- প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি জলের ট্যাঙ্ক এখনো টাকিতে আসলে দেখতে পাবেন। মিনি সুন্দরবনের রুটেই এই ট্যাঙ্কটি অবস্থিত। ব্রিটিশরা সেই সময়ে নিজেদের সুবিধার জন্য এই জলের ট্যাঙ্কটি নির্মাণ করেছিলেন। যদিও এটি এখন আর চালু অবস্থায় নেই, কিন্তু বর্তমানে এই জায়গাটিকে একটি ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
এই জায়গা গুলো ছাড়াও আরো কিছু স্পট আপনারা টাকি আসে পাশে প্রচুর পেয়ে যাবেন, যার মধ্যে একটি হল ইছামতী নদীর ধারেই ইকোপার্ক, ইছামতি ভিউ পয়েন্ট প্রভৃতি । টাকি বর্তমানে ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং তার সাথে সাথেই এখানে নতুন নতুন স্পট হোটেল গড়ে উঠছে তাই আমাদের একবার অবশ্যই টাকি ঘুরে যাওয়া উচিত আমার এই ব্লগটা ফলো করলে আপনারা আপনাদের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।
টাকি ভ্রমনের খরচা :- টাকি ভ্রমনের জন্য আপনাদের খুব কম টাকাই খরচ হবে। আর আপনি যদি একদিনের জন্য ডে ট্যুর করতে চান তাহলে তো খরচা একদমই কমে যাবে। আমি একটা আপনাদের সুবিধার্থে রাফ হিসেব দিচ্ছি। আপনারা যদি ট্রেনে টাকি আসেন তাহলে ট্রেন ভাড়া বাবদ ২০ টাকা। টোটো রিজার্ভ করে পুরো টাকি ঘোরার জন্য ৫০০ - ৮০০ টাকা। আর খাওয়ার জন্য সকালের ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ বাবদ ২০০ টাকা কম বেশি হতে পারে। আর আপনাদের যদি একদিন থাকার পরিকল্পনা থাকে তাহলে রাজবাড়ি ঘাটের কাছে প্রচুর ভালো মাঝারি মাপের হোটেল পেয়ে যাবেন। ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সরকারি গেস্ট হাউস নিতে চাইলে ইছামতীর তীরে হোটেল সোনার বাংলা অথবা একটু কম দামের মধ্যে নিতে চাইলে পৌরসভার গেস্ট হাউস আছে।
ধন্যবাদ তাহলে সবাইকে আজকের ব্লগটি এখানেই শেষ করছি।
বিশ্বজ্যোতি ভৌমিক।
Khub bhalo...sundar...
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন