শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সমন্ধে সমস্ত তথ্য ও ভ্রমণ প্ল্যান।

 শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ

ভ্রমণ পিপাসু :- প্রাচীনত্ত এর দিক থেকে হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ধর্ম। ধর্মের দেশ ভারতে প্রাচীন যুগ থেকেই দেব দেবীর পুজো হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মে ৩৩ কোটি(প্রকার) দেবদেবীর অস্তিত্ব থাকলো তাদের মধ্যে দেবাধিদেব মহাদেব শিব অন্যতম। হিন্দু ধর্মে দেবাধিদেব মহাদেব মূর্তি এবং লিঙ্গ দুরূপেই পূজিত হোন। এই লিঙ্গের মধ্যে আবার জ্যোতির্লিঙ্গ এবং সাধারণ শিবলিঙ্গ এই দুটি ভাগ লক্ষ্য করা যায়। গোটা ভারতে এরকম ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ আছে যাদের একসাথে "দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ" বলা হয়। 


শিবলিঙ্গ এবং জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য :- বেশিরভাগ মানুষের কাছেই শিবলিঙ্গ এবং জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রাকৃতিগত কোনো ফারাক নেই। কিন্তু সাধারণ শিবলিঙ্গ এবং জ্যোতির্লিঙ্গ এক জিনিস নয়। ভারত তথা পৃথিবী জুড়ে এরকম হাজার হাজার শিবলিঙ্গ আছে কিন্তু শাস্ত্রমতে এই শিবলিঙ্গ গুলি মানব নির্মিত। কিন্তু কিছু কিছু শিবলিঙ্গ আছে যা স্বয়ম্ভু। জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি শিবের জ্যোতি রুপে প্রকট হওয়া, এগুলি মানব নির্মিত না। তাই গোটা দেশে প্রচুর শিবলিঙ্গ থাকলেও জ্যোতির্লিঙ্গ আছে কিন্তু মাত্র ১২ টি। এই জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি স্বয়ম্ভু মহাদেবের অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছে, এটাই সাধনার মানুষের প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গের সাথে জ্যোতির্লিঙ্গের পার্থক্য।

জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টির পৌরাণিক কাহিনী : - শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি সম্পর্কে শিব পুরাণে বিস্তারিত ভাবে বলা আছে। শিবপুরানের সেই কাহিনী অনুসারে একদা, ভগবান বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাজীর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। এই দুই দেবতাই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য সমস্ত পন্থা অবলম্বন করতে থাকে। এই যুদ্ধে ভগবান শিব মধ্যস্থতাকারী বিচারক রুপে আবির্ভূত হোন। তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং রক্ষাকর্তার মাঝে আলোক জ্যোতির স্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হোন, এই স্তম্ভ রুপী জ্যোতির্লিঙ্গের কোনো আদি ও অন্ত ছিলনা, বলতে গেলে এটি ছিল অনন্ত। তিনি দুজনকেই এই জ্যোতির্লিঙ্গের শুরু এবং শেষ খুঁজে বের করতে বললেন, সেই কথামত দুজনই এই জ্যোতির্লিঙ্গের দুদিক থেকে শুরু এবং শেষ অংশ খোঁজা শুরু করেন কিন্তু ব্যার্থ হোন এবং তাদের ভ্রম দূর হয়। কিন্তু ব্রহ্মাজী মিথ্যা কথা বলার জন্য ভগবান শিব তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, যে সমাজে কোনো অনুষ্ঠানেই তার কোনো আর স্থান থাকবে না। যে ১২টি জায়গায় এই জ্যোতির্লিঙ্গ আছে সেই জায়গা গুলিতে দেবাধিদেব মহাদেব স্বয়ম্ভু আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রতিটি জ্যোতির্লিঙ্গেরই আলাদা নাম আছে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও অস্তিত্ব আছে।

ভারতের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ :- জ্যোতির্লিঙ্গ স্তুতি মন্ত্র

সৌরাষ্ট্রে সৌমনাথং চ শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুনম। উজ্জয়িন্যাং মহাকালমোংকারং পরমেশ্বরম্।।

কেদারং হিমবত্পৃষ্ঠে ডাকিয়াং ভীমশঙ্করম্। বারাণস্যাংচ বিশ্বেশং ত্রয়ম্বকম গীতমীতটে।।

বৈদ্যনাথং চিতাভূমৌ নাগেশং দারুকাবনে। সেতূবন্ধে চ রামেশং ঘুশ্মেশংচ শিবালয়ে।।

দ্বাদশৈতানি নামানি প্রাতরূত্থায় য়ঃ পঠেৎ। সপ্তজন্মকৃতং পাপং সম্পণেন বিনশ্যতি।।

য়ং য়ং কামমপেক্ষ্যৈব পঠিষ্যন্তি নরোত্তমাঃ। তস্য তস্য ফলপ্রাপ্তির্ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ।।

দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে শিবের এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ। আসুন এক এক করে জেনে নেই এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের নাম -

১. শ্রী সোমনাথ মন্দির, এটি প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ যার অবস্থান গুজরাটের সৌরাষ্টের প্রভাস ক্ষেত্র এলাকায়।

২. শ্রী মল্লিকার্জুন এটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ, যার অবস্থান অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার শ্রীশৈলম এলাকায়।

৩. শ্রী মহাকালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত এই মহাকাল মন্দির একমাত্র দক্ষিণমুখী জ্যোতির্লিঙ্গ ।

৪. শ্রী ওমকারেশ্বর :- এটি মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের কাছে নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী ওমকারেশ্বর দ্বীপে এই জ্যোতির্লিঙ্গ টি অবস্থিত।

৫. শ্রী কেদারনাথ :- উত্তরাখন্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার ৩৫৮৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পঞ্চম জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী কেদারনাথ ধাম ।

৬. শ্রী ভীমাশঙ্কর :- ষষ্ঠ জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী ভীমাশঙ্করের অবস্থান মহারাষ্ট্রের পুণের কাছে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ওপরে কৃষ্ণা নদীর শাখা নদী ভীমা নদীর তীরে।

. শ্রী বিশ্বনাথ :- শ্রী বিশ্বনাথ মন্দিরটি অবস্থিত কাশি অর্থাৎ বারানসীতে গঙ্গা নদীর ধারে।

৮. শ্রী বৈদ্যনাথ :- বাবা বৈদ্যনাথের মন্দিরটি অবস্থিত ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে । যেটি বাবাধাম হিসেবেও পরিচিত।

৯. শ্রী নাগেশ্বর :- শ্রী নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ টি অবস্থিত গুজরাটে দ্বারকার কাছে। দ্বারকা থেকে ওখা যাওয়ার পথে।

১০. শ্রী ত্র্যম্বকেশ্বর :- মহারাষ্ট্রে অবস্থিত দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ এই ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির, যা অবস্থিত নাসিকের কাছে, মাত্র ৫০ কি.মি দূরে।

১১.শ্রী রামেশ্বরম : - দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর একদম দক্ষিণ প্রান্তে রামেশ্বরমে এই জ্যোতির্লিঙ্গটি অবস্থিত। শ্রী রামচন্দ্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির।

১২. শ্রী ঘৃষনেশ্বর :- দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে শেষ জ্যোতির্লিঙ্গ এই ঘৃষনেশ্বর। যা অবস্থিত মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে ২৮ কি.মি দূরে।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গে কেমন করে যাবেন :- অনেকেরই ইচ্ছা থাকে দেবাধিদেব মহাদেবের এই ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করা। কারণ এই জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি হল স্বয়ম্ভু, দেবাধিদেব মহাদেব সাক্ষাত বিরাজ করেন এই শিবলিঙ্গ গুলোতে, তাই এই শিবলিঙ্গ গুলিকে দর্শন করে জল ঢালা যথেষ্ঠ পূর্ণের কাজ। কিন্তু সবগুলো জ্যোতির্লিঙ্গ একসাথে দর্শন করা যথেষ্ঠ কঠিন ব্যাপার, কিন্তু আপনি একবারে না করতে পারলেও ৩,৪ বারে সবগুলি জ্যোতির্লিঙ্গ গুলিকে কভার করে দর্শন করতে পারবেন। যেমন আপনি দক্ষিণ ভারত সফরে গেলে রামেশ্বরম্ এবং শ্রী মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে ফেলতে পারেন। এবার কেদারনাথ গেলে ফেরার সময়ে বেনারস হয়ে ফিরতে পারেন, তেমনি মধ্যপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রে গেলে আপনারা একসাথে ৫ টি জ্যোতির্লিঙ্গ দেখে ফেলতে পারেন তেমনি ভাবে, গুজরাতে ঘুরতে আসলে সোমনাথ এবং নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে নিতে পারবেন। আর আমাদের রাজ্য থেকে তো বৈদ্যনাথ ধাম অর্থাৎ বাবাধাম খুব কাছেই। তাই আমি শুরুটা এই বৈদ্যনাথ ধাম থেকেই শুরু করছি....

১. বৈদ্যনাথ ধাম :- আমাদের রাজ্য থেকে সবচেয়ে কাছের জ্যোতির্লিঙ্গ হল এই বৈদ্যনাথ ধাম যা বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলায় অবস্থিত। সারা বছরই এখানে ভক্তদের ঢল থাকে কিন্তু শ্রাবণ মাসে এখানে পা ফেলার জায়গা একদমই থাকে না।


এই দেওঘরে আসার জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল ট্রেন। আপনি দেওঘর স্টেশন বা দেওঘরের কাছেই জসিডি জংশনে আসার জন্য প্রচুর ট্রেন পেয়ে যাবেন। প্রচুর লোক আছে শ্রাবণ মাসে নিজস্ব গাড়ি রিজার্ভ করে সুলতানগঞ্জ থেকে গঙ্গাজল নিয়ে বাবাধমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

এই জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টির পেছনে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক কাহিনী। এই কাহিনী হয়তো অনেকেই জানেন, যে এই জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টির সাথে যুক্ত আছে রাবণের নাম। তাই সেদিকে আর গেলাম না। এরপর নেক্সট জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা যাক।


২. বাবা বিশ্বনাথ : - শিব নগরী বারানসীতে অবস্থিত বাবা বিশ্বনাথের মন্দির। বারানসী কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম নগর গুলোর মধ্যে একটি। প্রাচীন মন্দিরটি ইন্দোরের মহারানী অহল্যাবাঈ হোলকার তৈরী করান ।মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে এই মন্দিরের ধ্বংসসাধন করা হয়েছিলো যার পাশেই গড়ে তোলা হয় জ্ঞানবাপী মসজিদ। বর্তমানে এখানে বাবা বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণ করা হয়েছে যাতে, খুব সহজে গঙ্গার ঘাট থেকে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে।


বারানসী আসা খুব সহজ আপনি কলকাতা থেকে যদি এখানে আসতে চান তবে সড়কপথে, রেল, এবং বিমানেও এখানে আসতে পারেন। দ্বশাস্বমেধ ঘাটের খুব কাছেই এই মন্দিরটি অবস্থিত, আপনি এই মন্দির দর্শন করে পায়ে হেটে ঘাটে চলে আসতে পারবেন রাস্তা মাত্র ৬০০ মিটার।


৩.কেদারনাথ ধাম :- এবার চলে আসি উত্তর ভারতের আরো একটি জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী কেদারনাথ ধাম নিয়ে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শিব ভক্তদের কাছে সবচেয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা হলো এই কেদারনাথ ধাম। যার অবস্থান উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল রিজিয়নের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় প্রায় ১২০০০ ফিট উচ্চতায়, এই কেদারনাথ ভ্যালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা আরো বেশি করে পর্যটকদের এখানে টানে।


কেদারনাথ আসা কিন্তু এতটা সহজ না, যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার, আপনি কেদারনাথের ব্যাপারে সমস্ত কিছু জানতে চাইলে নিচে আমার লেখা ব্লগটি পড়তে পারেন, সমস্ত কিছু বিস্তারিত ভাবে বলা আছে -


৪.ওমকারেশ্বর :- মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ হলো এই ওঁমকারেশ্বর মন্দির, যা অবস্থিত ইন্দোর থেকে ৮৪ কি.মি দূরে নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী ওঁম আকৃতির একটি দ্বীপে যা থেকেই জায়গাটির নাম হয়েছে ওঁমকারেশ্বর ধাম। মন্দিরের যাওয়ার জন্য একটি ব্রিজ ও আছে আপনি বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে এই ব্রিজ হয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন তাছাড়া আরো একটি উপায় ঘাট থেকে নৌকা করে ওপারে পৌঁছোনো, আমার মতে নৌকা করেই পৌঁছোনো সবচেয়ে বেস্ট হবে, আপনি আরো সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।



আপনি যদি ওঁমকারেশ্বর যেতে চান তাহলে আমাদের রাজ্য থেকে এখানে আসার সরাসরি কোনো ট্রেন নেই, আপনাকে হয় ইন্দোরে নামতে হবে নয়তো, খাণ্ডোয়া রোড স্টেশনে নামতে হবে, তারপর এখানে আসার জন্য বাস আপনারা পেয়ে যাবেন। আপনি যদি মধ্যপ্রদেশ ঘুরতে আসার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে আপনি ইন্দোরকে কেন্দ্র করেই এই দুটি জ্যোতির্লিঙ্গ সাথে আরো কিছু মন্দির দেখে নিতে পারেন। 

৫. শ্রী মহাকালেশ্বর :-  উত্তর ভারত থেকে এবার আসা যাক মধ্যপ্রদেশে। মধ্যপ্রদেশে আছে শিবের দুটি জ্যোতির্লিঙ্গ। সেদুটির মধ্যে উজ্জয়িনীতে অবস্থিত শ্রী মহাকাল মন্দির নিয়ে আলোচনা করবো। উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই মহাকাল মন্দির, যা জ্যোতির্লিঙ্গ গুলোর মধ্যে একমাত্র দক্ষিণমুখী। পৃথিবীতে একমাত্র এই মন্দিরেই শিবলিঙ্গের ভষ্ম আরতী হয়ে থাকে। যেটি দেখার জন্য আপনাকে অনলাইন বা অফলাইন বুকিং করতে হবে। প্রচুর মন্দির নিয়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন এই শহর উজ্জয়িনী, যেখানে শিপ্রার তীরে কুম্ভ মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।



আপনি যদি মধ্যপ্রদেশ আসার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে ইন্দোরকে কেন্দ্র করে মহাকালেশ্বর এবং ওঁমকারেশ্বর একসাথে দেখে নিতে পারবেন। মহাকালেশ্বর বা ইন্দোর আসার জন্য একটি মাত্র সরাসরি ট্রেন আছে যেটি শিপ্রা এক্সপ্রেস। যেটি সপ্তাহে তিনদিন হাওড়া স্টেশন থেকে ছাড়ে। এছাড়াও ট্রেন পরিবর্তন করে আপনি অনেক ট্রেন এখানে আসার পেয়ে যাবেন ।

৬. নাগেশ্বর :- গুজরাটের সৌরাষ্ট এলাকায় অবস্থিত এই নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি। সৌরাষ্টের দ্বারকা নগরীর খুব কাছেই এই নাগেশ্বর ধাম অবস্থিত, দ্বারকা থেকে যার দূরত্ব ২২-২৩ কি.মি । দ্বারকা থেকে বেট দ্বারকা বা ওখা যাওয়ার পথে আপনি এই মন্দিরটি পেয়ে যাবেন।



এবার আসি আপনি কেমন করে এখানে পৌঁছবেন, প্রথমত আপনাকে ভারতের যে কোনো প্রান্ত থেকে আহমেদাবাদ পৌঁছতে হবে আহমেদাবাদ থেকে ওখা গামী যেকোনো ট্রেনে আপনাকে নামতে হবে দ্বারকা স্টেশনে, দ্বারকা থেকে এখানে আসার জন্য আপনি গাড়ি, অটো বা বাসে ও চলে আসতে পারেন, নাগেশ্বর সহ পুরো দ্বারকা ভ্রমণের জন্য গুজরাট ট্যুরের ওপরে করা আমার এই ব্লগ টা পড়ে নিতে পারেন -

৭. সোমনাথ :- গুজরাটে অবস্থিত দুটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি যার অবস্থান গুজরাটের সৌরাষ্টের প্রভাস ক্ষেত্র এলাকায়, একদম আরব সাগরের তীরে। এটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ। প্রাচীনকাল থেকে এই মন্দির বহুবার বিদেশী শক্তির দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে। এই মন্দিরকে প্রায় ৫ বার ধংস করা হয় এবং ছয়বার পুনর্নিমিত হয়। এই মন্দির এতবার আক্রমনের প্রধান কারণ হল, এই মন্দিরের ধন সম্পদ ঐশ্বর্য। স্বাধীনতার পর ভারত সরকারের উদ্যোগে এই মন্দিরটি পুনর্নিমান করা হয় বর্তমানে যেটি আমরা দেখতে পায়, উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল। প্রতিদিন এখানে দর্শনের জন্য ভক্তদের ঢল নামে পাশেই আছে একটি বিচ যেটিও খুবই সুন্দর ।


সোমনাথ পৌঁছতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম আহমেদাবাদ পৌঁছতে হবে, আহমেদাবাদ ভারতের যেকোনো ছোটো বড় শহর থেকে বিমান, সড়ক, ও রেলপথে যুক্ত । আহমেদাবাদ থেকে সোমনাথের দূরত্ব ৪০০ কি.মি, প্রচুর ট্রেন বা বাস এখানে আসার জন্য পেয়ে যাবেন। এখানে থাকার ও প্রচুর অপশন আছে। আমার গুজরাট ওপরে লেখা এই ব্লগ টায় সোমনাথের পাশাপাশি গুজরাটের ভ্রমনের সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে যার লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম আপনারা চাইলে দেখে নিতে পারেন -

৮. ত্র্যম্বকেশ্বর :- মধ্যপ্রদেশের পাশের রাজ্য মহারাষ্ট্র যেই রাজ্যে বিদ্যমান মহাদেবের তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গ। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রের নাসিকে অবস্থিত ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ। নাসিকে গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল ব্রহ্মগিরির খুব কাছেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। মারাঠা বংশীয় পেশোয়া নানাসাহেব এই মন্দিরটির পূননির্মাণ করেন। ভারতের চার জায়গায় যে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় নাসিক তার মধ্যে একটি। আপনি নাসিকে আসলে বিভিন্ন মন্দির দেখা ছাড়াও কিছু দূরেই গোদাবরী নদীর উৎসস্থল ব্রহ্মগিরিতে যেতে পারেন এখানে হাঁটা পথে আসতে হয়।


আপনি হাওড়া থেকে নাসিকে আসার জন্য অনেক গুলি ট্রেন পেয়ে যাবেন। আপনাকে নামতে হবে নাসিক রোড স্টেশনে সেখান থেকে এই ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের দুরত্ব ৪৮ কি.মি, যা আপনি বাস কিংবা ভাড়া গাড়িতে সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়া মুম্বই হয়েও এই নাসিকে আসতে পারবেন একদম কাছেই। অথবা আপনারা ইন্দোর কে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রদেশের দুটি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে, ইন্দোর থেকে সোজা নাসিক চলে আসতে পারেন আসার জন্য প্রচুর বাস এবং কিছু ট্রেন ও পেয়ে যাবেন। শুধু জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের ইচ্ছা থাকলেই আপনি এই প্ল্যান টা করে নিতে পারেন।

৯. ভীমাশঙ্কর :- নাসিক থেকে ৫ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পুণে। এই ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গটি পুণে শহরের কাছেই অবস্থিত। আপনি পুণেতে এসে ভীমাশঙ্কর যাওয়ার জন্য বাস পেয়ে যাবেন যার দুরত্ব ১১৫ কি.মি। একদম পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে কৃষ্ণা নদীর উপনদী ভীমা নদীর পারে এই জ্যোতির্লিঙ্গটি অবস্থিত। এই ভীমাশঙ্কর এলাকাটি যেহেতু পশ্চিমঘাটের ওপরে অবস্থিত হওয়ার জন্য খুব মনোরম এলাকা এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যও অসাধারণ। 

আপনি পুণে ভারতের যে কোনো শহর থেকেই আসতে পারেন, মুম্বই, কলকাতা হায়দরাবাদ, নাসিক। আপনি নাসিক থেকে ট্রেন অথবা বাসে পুণে এসে একসাথে মহারাষ্ট্রের তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গ কভার করে ফেলতে পারেন যদি শুধুমাত্র জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের ইচ্ছে থাকে। মহারাষ্ট্র ঘুরতে আসলে এই নাসিক পুণে ঔরঙ্গাবাদ সার্কিটে অনেক গুলো জায়গা আপনি একসাথে দেখে নিতে পারেন, যার ট্যুর প্ল্যান আমি কয়দিনের মধ্যেই হয়তো দিয়ে দেবো।

১০. শ্রী ঘৃষনেশ্বর :- মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের কাছে অবস্থিত রাজ্যের তৃতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী ঘৃষনেশ্বর মন্দির। ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে মাত্র ৩০ কি.মি দূরে ইলোরা গুহার খুব কাছেই অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির। মন্দির টি দেখেই মনে হবে খুব প্রাচীন মন্দিরের ওপরে পাঁচটি চূড়া আছে।

হাওড়া থেকে এখানে আসার ১,২ টি ট্রেন পেয়ে যাবেন এছাড়াও ট্রেন চেঞ্জ করে এই ঔরঙ্গাবাদ আসতে পারেন ।এছাড়াও মুম্বই থেকে আসা আরো সহজ। আপনি পুণে না নাসিক থেকেও ঔরঙ্গাবাদ খুব সহজে চলে আসতে পারেন।

১১. শ্রী মল্লিকার্জুন :- দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কুর্নুল জেলায় শ্রীশৈলম পাহাড়ের কোলে অবস্থিত শ্রী মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ। হায়দরাবাদ থেকে যার দূরত্ব ২১৩ কি.মি যেতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টার মত।


দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গের দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ এই মল্লিকার্জুন মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত আছে আরো একটি পৌরাণিক কাহিনী - শিব পার্বতীর দুই ছেলে কার্তিক ও গণেশের বিয়ে নিয়ে একবার কথা হচ্ছিল, সেই সময় শিব তার পুত্রদ্বয়কে বলেন যে, যে আগে বিশ্ব পরিভ্রমণ করে আসতে পারবে তার বিয়ে আগে দেওয়া হবে, চালাক গণেশ শাস্ত্র অনুযায়ী তার পিতা মাতার প্রদক্ষিন বিশ্ব ভ্রমনের শর্ত আগে পূরণ করে, এরফলে রিদ্ধি ও সিদ্ধির সাথে গণেশের বিবাহ দেন, যেটা কার্তিক বিশ্ব ভ্রমণ শেষ করে ফিরে আসার পর লক্ষ্য করেন এবং খুবই ক্রুদ্ধ হোন এবং শ্রীশৈলম নামক পাহাড়ের কাছে এসে থাকতে শুরু করেন, যেখানে তাকে দেখার জন্য শিব পার্বতী এখানে নিয়মিত আসতেন, সেই থেকে এখানেই এই মন্দিরটি অবস্থিত।


এই মল্লিকার্জুন মন্দিরটি তিন দিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটি অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত, পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণা নদী। আপনি এখানে হায়দ্রাবাদ , চেন্নাই, বা ব্যাঙ্গালোর থেকে ও আসতে পারেন আবার তিরূপতি দেখেও এখানে চলে আসতে পারেন, আসার জন্য ট্রেন এবং বাস দুটোই পেয়ে যাবেন।

১২. রামেশ্বরম্ :- এবার চলে আসুন দক্ষিণ ভারতের একদম শেষ প্রান্তে এখানেই অবস্থিত রামেশ্বরম্ মন্দিরে।

রামেশ্বরম্ একদিকে শিবের জ্যোতির্লিঙ্গ এবং তার সাথে সাথে ভারতের চার প্রান্তের চার ধামের মধ্যে একটি। এখানে বিষ্ণু এবং শিব দুজনই পূজিত হোন। মনে করা হয় শ্রীরাম এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই এলাকার সাথে শ্রীলঙ্কার উত্তর ভূখন্ডের এলাকা গুলি খুব একটা দূরে না।

রামেশ্বরম্ আসা খুব সহজ হাওড়া থেকে এখানে আসার জন্য ট্রেন পেয়ে যাবেন তাছাড়া ও চেন্নাই থেকে ও অনেক ট্রেনের অপশন আছে, এখানে আসার ট্রেন জার্নিটা সত্যিই খুবই আকর্ষনীয় যারা দেখেছেন তারা জানেন। আপনি রামেশ্বরম্ এর সাথে কন্যাকুমারি, মাদুরাই কোয়েম্বটুর প্রভৃতি জায়গা গুলো দেখে ফেলতে পারবে একসাথে।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন