যে রেল স্টেশন দুটি দেশের মাঝে অবস্থিত। a station Situated between two Nation

 ।। যে রেল স্টেশন দুটি দেশের মাঝে অবস্থিত।। 


ভ্রমণ পিপাসু :- দুটি রাজ্যের মাঝে অবস্থিত এরকম অনেক স্টেশন আছে, এরকম অনেক স্টেশন আপনারা দেখেছেন। কিন্তু এরকম স্টেশন দেখেছেন কি যেটা দুটি রাজ্য না বরং দুটি দেশের মধ্যে অবস্থিত, যেই স্টেশন কে পরিচালনা করে দুটি দেশের রেলওয়ে। যদি এরকম না শুনে থাকেন তাহলে আজকের ব্লগটি এই স্টেশন কে নিয়েই। আর যদি শুনে থাকেন তাহলে এই জায়গা নিয়ে এবং এই স্টেশনের রেল পরিচালনার সমস্ত তথ্য এই লেখায় পেয়ে যাবেন। আমি কথা বলছি বিহারের নেপাল বর্ডার লাগোয়া স্টেশন জয়নগর নিয়ে। যেই স্টেশন হয়ে আপনি এখন রেলপথে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন নেপালে। 


জয়নগর স্টেশন :- জয়নগর বিহারের মধুবনী জেলার এবং মধ্য-পূর্ব রেলের অন্তর্গত একটি প্রান্তিয় স্টেশন। এই পুরো এলাকাটি কে মিথিলা অঞ্চল বলে যার মধ্যে বিহার ও নেপালের কয়েকটি জেলা পড়ছে যাদের ভাষা মৈথিলী। এই এলাকা রামায়ণে বর্ণিত পৌরাণিক মিথিলা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত যার রাজধানী ছিল জনকপুর যেখানে সীতা মায়ের জন্ম হয়েছিল। যে জনকপুর এখন নেপালের মধ্যে পড়ছে। এই জনকপুর যেতে হলে আপনাকে জয়নগর হয়েই যেতে হবে। এই জয়নগরের সাথে ভারতের বিভিন্ন ছোটো বড় শহরের সাথে যোগাযোগ আছে ট্রেন লাইনের মাধ্যমে। এই জয়নগর স্টেশনের দুটি ভাগ একটি ইন্ডিয়ান রেলওয়ের আন্ডারে এবং একটি নেপাল রেলওয়ের। নেপালি জয়নগর স্টেশনে যেতে হলে আপনাকে ওভারব্রিজ পার হয়ে চেকিং প্রসেস complete করে যেতে হবে।

জয়নগর স্টেশন 

জয়নগর - কুরথা রেল লাইন :- ভারত ও নেপালের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ব্রডগ্রেজ এই লাইনের শুভ উদ্বোধন হয় এ বছর এপ্রিল মাসে ভারত ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীদের দ্বারা। এর আগে ও এই লাইন দিয়ে মিটারগ্রেজে মাধ্যমে ট্রেন চলতো এরপর ২০০২ সালের পর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় কারণ ভারতের ট্রেন লাইন সব ব্রডগেজ হয়ে যায়। এরপর নেপাল সাইডে রেললাইন রেললাইন ব্রডগেজে সম্প্রসারিত হয়ে যাওয়ার পর এ বছর টা উদ্বোধন হয়। যে দুটি ট্রেন এখন চলাচল করে জয়নগর থেকে কুরথার মধ্যে সেই ট্রেন দুটিও ভারতেই তৈরি। চেন্নাই এর Imtrigal কোচ ফ্যাক্টরি থেকে এটি তৈরি হয়ে এসেছে। জয়নগর থেকে কুরথা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিমি দীর্ঘ এই লাইনের প্রথম পর্যায় এর কাজ শেষ হয়েছে, এর পরের কাজ এখন চলছে। ৩৫ কিমি বিশিষ্ট এই লাইনে মোট ৭টি স্টেশন আছে। তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং বড় স্টেশন হল জনকপুর সীতা মায়ের জন্মস্থান। এই জনকপুরের মন্দিরে প্রচুর যাত্রীরা যায় ভিড় সারা বছরই লেগে থাকে, এই ট্রেন লাইন করার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ছিল এই ব্যাপারটা।


জয়নগর স্টেশনের ৪.৫ কি.মি পরেই চলে আসবে নেপালের প্রথম স্টেশন ইনর্বা, ৮.৫ কিমি পর খজুরি, ১৪ কিমি পর মহিনাথপুর, ১৯ কিমি পর বেদেহী, ২২ কিমি পর পরবাহা, ২৯.৫ কিমি পর জনকপুর, এবং ৩৫ কিমি পর কুর্থা। সর্বমোট এই সাতটি স্টেশন এখন বর্তমানে চালু আছে, বাকি কাজ এখনো চলছে, যা সম্পূর্ন হয়ে গেলে আপনি খুব সহজে ভারত থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যেতে পারবেন। এই লাইন হয়ে যাওয়ার পরও রাজধানী শহর কাঠমান্ডু যাওয়া অনেক সহজতর হয়ে গেছে। জনকপুরে বড় বাস স্ট্যান্ড আছে এর পাশাপাশি এয়ারপোর্টও আছে আপনি চাইলে জনকপুরে নেমে বাসে বা ফ্লাইটে কাঠমান্ডু চলে আসতে পারবেন। এই লাইন চালু হয়ে যাওয়ার ধর্মীয় তীর্থ যাত্রীদের খুবই সুবিধে হয়েছে, কারণ জনকপুরে ধাম হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র জায়গা, এখানে সীতা জন্মস্থানে এক বিরাট মন্দির আছে তা ছাড়াও আশেপাশে আরো কিছু মন্দির এখানে আছে, ফলে অনেক কম টাকায় আপনি এখন আরামদায়ক যাত্রার মাধ্যমে এখানে পৌঁছে যেতে পারবেন, এক বা দুটা দিন এখানে ঘুরার জন্য যথেষ্ঠ।

জনকপুর সীতার মার জন্মস্থান। 

জনকপুর জানকী মন্দির ।

ভাড়া :- এই লাইনের ভাড়া একদমই কম এত কম টাকা আপনি সেটা চিন্তা করতে পারবেন না। প্রতিদিন এখানে দুটি ট্রেন চলাচল করে একটা সকাল ৮.১৫ তে যা আপনাকে কুর্থা পৌঁছে দেবে সকাল ১০ টায় এবং একটি দুপুর ৩ টায় যা আপনাকে বিকেল ৫ তাঁর মধ্যে পৌঁছে দেবে। মোটামোটি ২ ঘণ্টার জার্নি । ভাড়ার হিসাব টা আমি নিচে আপনাদের জন্য দিয়ে দিচ্ছি, এই লাইনে দু ধরণের কম্পার্টমেন্ট আছে,এসি কোচের ভাড়া কুর্থা পর্যন্ত পড়বে ২৬৪ ইন্ডিয়ান টাকায়, এবং জনকপুরে ভাড়া ২০১ টাকা। সেরকমই জয়নগর থেকে কুর্থার মধ্যে নন এসি জেনারেল কামরার ভাড়া পড়বে ৫৬ টাকা এবং জনকপুরের - ৪৪ টাকা।

কুর্থা স্টেশন, এই লাইনের লাস্ট স্টেশন ।

ভাড়া একদমই নগন্য তাই যাবেন নাকি একবার নেপালে তাও আবার ট্রেন, একদমই কম খরচে। আসার জন্য আপনাকে জয়নগর পৌঁছতে হবে সর্বপ্রথম, ভারতের যেকোনো বড় শহর থেকে জয়নগরের ট্রেন আপনারা পেয়ে যাবেন । এই ব্লগটি তাহলে এখানেই শেষ করছি, ধন্যবাদ সকলকে।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন