গোয়ালিয়র ফোর্ট । Gwalior fort tour guide all information & History.

।। গোয়ালিওর ফোর্ট ।।

ভ্রমণ পিপাসু :- ভারতবর্ষে এমনিতো প্রচুর ফোর্ট আছে, প্রাচীন রাজা রাজরা তাদের সুরক্ষা এবং চারপাশের পুরো এরিয়ার নিয়ন্ত্রণের জন্য এই সব ফোর্ট বা দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আজ আমি আলোচনা করবো মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র ফোর্ট নিয়ে। এই গোয়ালিয়র ফোর্টকে বেছে নেওয়ার পেছনে আছে অনেক কারণ, এই ফোর্ট কিন্তু ভারতের পাঁচটি বৃহত্তম ফোর্ট গুলির মধ্যে না হওয়া সত্ত্বেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ভারতের যে কোনো ফোর্টের থেকে কয়েকগুণ বেশী। ঐতিহাসিক দিক থেকে এত সমৃদ্ধ এই জায়গাকে নিয়ে একটা পুরো বই লেখে ফেলা যায়। তাই একবারের জন্য এখান থেকে ঘুরে যেতে পারেন, আর আপনি ইতিহাস বা ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি আপনার যদি ভালোবাসা থাকে তাহলে তো কোনো কথাই নেই, পুরো একটা দিন আপনার কেমন করে চলে যাবে আপনি সেটা টেরই পাবেন না।


গোয়ালিয়র ফোর্টে আপনি কেনো আসবেন :- ঐতিহাসিক দিক থেকে গোয়ালিয়র ফোর্ট যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি আগেই বলেছি। তাছাড়া এই গোয়ালিয়র ফোর্টে এতো বিভিন্নতা আছে যেটা আপনারা অন্য কোথাও পাবেন না, কারণ এই ফোর্ট এত রাজবংশের শাসকেরা শাসন করেছে তা শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। রাজপুত থেকে শুরু করে সুলতানি আমলের বিভিন্ন বংশ, এরপর মোঘল, মারাঠা হয়ে সবশেষে ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হয় এই দুর্গ, সেইজন্য বিভিন্ন বংশের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন স্থাপত্য, আপনারা দুর্গের ভিতরে গেলেই দেখতে পাবেন।

একাধারে এই দুর্গেই আপনারা পাবেন ভারতের প্রাচীনতম শূন্যের নিদর্শন, এই দুর্গেই হয়েছিলো দেশের প্রথম জোহর, ইলতুৎমিসের আক্রমনের সময়ে, এই দুর্গেই ভারতের প্রাচীনতম টেলিফোন যোগাযোগের নিদর্শন পাওয়া যায়,(গ্রাহামবেল টেলিফোন আবিষ্কার করার আগেই), আবার এই দুর্গই ছিল মোঘল আমলে দেশের বৃহত্তম কারাগার, যেখানে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, বর্তমানে এখানে দাতা বন্দিছোড় গুরুদোয়ারা অবস্থিত, এছাড়া আরো অনেক কিছু।

 গোয়ালিয়র ফোর্ট ।

ফোর্টের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং ইতিহাস :- গোয়ালিয়র এলাকাটি এমন একটি উচু সুরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত যা এখানে এই ফোর্ট তৈরি করার পেছনে প্রধান কারন বলে মনে করা হয়। গোয়ালিয়র একদিকে আছে আরাবলী পর্বতমালা এবং একদিনে বিন্ধাঞ্চল পর্বতমালা। গোয়ালিয়র শহরের পাশেই অবস্থিত গোপগড় পাহাড়ের ওপরে এই বিরাট দুর্গের নির্মান করা হয়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২.৪ কি.মি এবং প্রস্থে ১ কি.মি, খাড়া পাহাড়ের চারদিকে প্রায় ১২ কি.মি দীর্ঘ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই দুর্গ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বংশের আক্রমণ দেখা এই দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে কয়েক কি.মি পথ এবং চারটে গেট পেরিয়ে ওপরে ভেতরে ঢুখতে হবে, প্রথমে আসবে শাহজাহান গেট, এরপর একে একে বাদল গেট, লক্ষণ গেট এবং সবশেষে গণেশ গেট। গোয়ালিয়র ফোর্টের ভেতরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো প্রতিষ্ঠাতা মানসিং মহল বা মান মন্দির।

গোয়ালিয়র ফোর্টের ইতিহাস বহু পুরনো। এই ফোর্ট কবে তৈরি করা হয়েছিলো তার কোনো সঠিক উত্তর ঠিক মত কেউই দিতে পারেন নি, এই ফোর্ট তৈরি করা আগে এই জায়গাটি জৈন ধর্মস্থান ছিল এখানে প্রচুর জৈন গুহা, এবং জৈনদের প্রথম তীর্থঙ্কর আদিনাথের কিছু বড় বড় মূর্তি দেখা যায়। মোটামোটি ইতিহাস থেকে যা জানা যায় রাজপুত বংশীরঐতিহাসিক কিছু দলিল দেখে যা মনে করা হয় এর প্রাচীনত্তব মোটামোটি ১৩০০ বছরের সপ্তম সতকে হুন থেকে শুরু করে প্রতিহার বংশের শাসকরা এই ফোর্টের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরিবর্তীতে আধুনিক যে ফোর্ট আমরা এখন দেখতে পাই সেটা তৈরি করান রাজপুত তোমর বংশীয় রাজা মান সিং তোমর পঞ্চদশ শতকে। তিনি দুর্গের ভেতরে তার জন্য তৈরি করান মানসিং মহল বা মান মন্দির এবং রানীর মৃগনয়নীর জন্য তৈরি করেন গুজরীমহল যেহেতু তিনি গুর্জর বংশের রানী ছিলেন। রাজা মান সিংহের মোট আটজন রানী ছিলো। গোটা গোয়ালিয়র ফোর্টকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা যায় - উর্বশী, নর্থ ওয়েস্ট, নর্থ ইস্ট, সাউথ ওয়েস্ট, সাউথ ইস্ট। এখানে আসার আগে এই পাঁচটি এলাকার কোথায় কি কি অবস্থিত সেটা একটু ভালো করে দেখে আসলে (যদিও আমি সেটা পরের পয়েন্ট গুলোতে বলে দেবো) ভালো হবে। যদিও মুঘল আমলে এর দুর্গের অনেক কাজ ও স্থাপত্য নস্ট ও ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মারাঠা সিন্ধিয়া বংশের হাতে যখন এই দুর্গ আসে তারা অনেকটা সংস্কারের কাজ করান। পুরো ফোর্টটি তৈরি করতে লাল বেলে পাথরের ব্যবহার করা হয়েছিলো তার সাথে সাথে নীল রঙের টাইলস্ এর ব্যবহার হয়েছিলো। যা তখন দেখতে অপূর্ব লাগতো, যদিও এর সৌন্দর্য অনেকটাই এখন ফিকে হয়ে গেছে, তা সত্বেও বলতে পারি এটা দেখলে আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে তোমর রাজ মান সিং তোমর এই ফোর্টের নির্মাণ করান।

ফোর্টকে ওঠার রাস্তা। 

কেমন করে যাবেন এবং কখন আসবেন :- গোয়ালিয়র আপনি কলকাতা থেকে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন ট্রেন। ফ্লাইটে আসলে আপনি গোয়ালিয়রে এয়ারপোর্ট আছে অথবা দিল্লী, আগরা, ইন্দোর যেকোনো এয়ারপোর্টে নেমে ট্রেনে চলে আসতে পারেন গোয়ালিয়র। কলকাতা থেকে একটি সরাসরি ট্রেন আছে চম্বল এক্সপ্রেস। এই ট্রেন না পেলে আগরা পর্যন্ত ট্রেনে এসে, আগরা থেকে ট্রেন পাল্টে গোয়ালিয়র চলে আসতে পারেন। সময় লাগবে মাত্র ২ ঘন্টা। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে অটো ও টোটো পেয়ে যাবেন এখানে আসার। আর তাছাড়া গোয়ালিয়র ফোর্ট গেট থেকে এখন ভিতরে পয়েন্ট টোটো চলে, আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন হেঁটেই পুরো ফোর্ট টা ঘুরে দেখতে হয়েছিলো। আপনাদের যদি প্ল্যান থাকে ২, ৩ দিন থাকার প্ল্যান থাকে তাহলে সবার আগে একটা হোটেল নিয়ে নেবেন এখানে কিন্তু অনেক জায়গা আছে ২,৩ দিন থেকে ঘুরার মত। 

গোয়ালিয়র কখন আসবেন, গোয়ালিয়র আসলে অবশ্যই সেটা যেনো হয় শীতকালে। কারণ এই গোয়ালিয়র চম্বল এলাকার মধ্যে পড়ছে, সেই জন্য এই সব এলাকায় প্রচন্ড গরম পরে তার ওপর আদ্রতা তাই শীতকাল সবচেয়ে উপযুক্ত। গোয়ালিয়র ফোর্টে আপনি যদি প্রবেশ করতে চান তাহলে আপনি দু দিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারেন একটা ইস্ট সাইড গেট একটা ওয়েস্ট সাইড গেট। ওয়েস্ট সাইড গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে আপনি একটি গেট ই পাবেন যেটা উরভই গেট এবং আপনাকে খাড়া পথ হেঁটে ওপরে উঠতে হবে না আপনি চাইলে শহর যেকোনো স্থান থেকে অটো বা টোটো ভাড়া করে এই গেট দিয়ে ঢুকে আসে পাশের স্থান গুলি দেখে নিতে পারেন।


এবার আসি ওয়েস্ট সাইড গেটের কথায় এদিক দিয়ে প্রবেশ করতে হলে আপনি মোটামোটি ৫টি গেট (অনেকে বলে৭ টি গেট) পাবেন একদম ফোর্টের ভেতরে যেতে হলে, এবং এদিক দিয়ে আপনাকে হেঁটেই খাড়া রাস্তা দিয়ে ওপরে উঠতে হবে, মোটামোটি ১ কি.মি মতো। প্রথমেই আসবে... 

১.গোয়ালিয়র গেট বা আলমগীর গেট

২. বাদলগড় বাদল গেট বা হিন্দোলা গেট এই গেটের পাশেই আছে গুজরীমহল 

৩. গণেশ গেট

৪. লক্ষণ গেট

৫. শেষ গেটটি হল হাতিপুল গেট বা Elephant gate এই দিয়েই ঢুকেই আপনি একদম সরাসরি প্রধান মহল মান সিং মহল ঢুকে যেতে পারেন।

(কিছু এদিক ওদিক হলেও হতে পারে)

হাতিপুল গেট।

গোয়ালিয়র ফোর্টে কি কি দেখবেন :- আমি প্রথমেই আপনাদের বলেছিলাম যে ফোর্টের ভেতরে দেখার মত প্রচুর জায়গা আছে, এতো বিভিন্নতা এত দেখার জায়গা আপনারা কিন্তু অন্য কোনো ফোর্টে গেলে দেখতে পাবেন না, আপনাদের একটা পুরো দিন লেগে যাবে, যদিও এখন ভেতরে টোটো সার্ভিস শুরু হয়ে গেছে তাতে আপনাদের সময়টা কে অনেকটাই বাঁচিয়ে দেবে। এখানে আসলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ভেতরে অবস্থিত সবগুলি স্থানকে পুরো কভার করার, আমাদের ট্রেন থাকায় আমরাও সময়ের অভাবে কিছু জায়গা মিস করে গিয়েছিলাম আপনার আসলে হতে সময় নিয়ে আসবেন অন্তত দুটো দিন, এখানে ফোর্ট ছাড়াও আরও কিছু জায়গা আছে যেগুলোতে আপনারা যেতে পারেন আমি এক এক করে সবগুলি জায়গা ও তাদের ইতিহাস আপনাদের সামনে তুলে ধরছি......

 সিদ্ধাচল মন্দির এবং গোপাচল মন্দির :- এই দুটি জায়গা একসাথে দেওয়ার কারণ এই দুটি জায়গায় অনেকটা একই, এখানে আপনি জৈনদের পাহাড় কেটে বিভিন্ন মন্দির এবং বড় বড় মূর্তি দেখতে পাবেন, জৈন ধর্মের সঙ্গে যুক্ত এরকম বড় বড় মূর্তি খুব কম জায়গায় এখন অবশিষ্ট আছে। মোঘল সম্রাট বাবরের আক্রমনের সময়ে অনেক মূর্তিগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়।

ফোর্টের পশ্চিম গেট উরভহি গেট দিয়ে ঢোকার পরই সিদ্ধাচল জৈন মন্দির গুলো একসাথে দেখতে পাবেন। মোটামোটি সপ্তম শতক থেকে পঞ্চদশ শতকের মধ্যে এই গুহা মন্দির গুলো দেখতে পাবেন। প্রায় ২১ টি মত জৈন মন্দির এখানে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে যা জৈন তীর্থঙ্করদের উদ্দেশে সমর্পিত করা হয়েছে। গুহা মন্দির গুলো ভেতরে পাহাড় কেটে বিভিন্ন জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তি খোদাই করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উচু ৫৮ ফিটের প্রথম তীর্থঙ্কর আদিনাথের মূর্তি।

সিদ্ধাচল থেকে প্রায় ১ কি.মি দূরে গোপাচল পাহাড়ের ওপরে পাহাড় কেটে প্রায় ১৫০০ মত মূর্তি তৈরি করা হয়েছিলো রাজপুত তোমর বংশের আমলে। এখানে তীর্থঙ্কর ভগবান পার্শ্বনাথের 41 ফিট উচু একটি বিরাট মূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে।

মান সিং মহল ও গুজরীমহল :- এমনিতে গোয়ালিয়র ফোর্টের ইতিহাস বহু পুরনো হুন আমল থেকে এই দুর্গের ভিত জড়িয়ে আছে। কিন্তু যদি বলতে চান এই দুর্গের আধুনিক রূপ কে দিয়েছেন তাহলে নিশ্চিত ভাবে রাজপুত তোমর মানসিং এর নাম বলা যায়। তিনি এই দুর্গের আধুনিক রূপ দান করেন। দুর্গের ভেতর প্রধান দুটো মহল এবং বলতে গেলে এই দুর্গের প্রধান আকর্ষন একটি মান সিং মহল বা যাকে মান মন্দির ও বলা হয়ে থাকে এবং দ্বিতীয়টি গুজরীমহল যেটা রাজা মানসিং তার রানী মৃগনয়নীর জন্য তৈরি করান। মহারানী মৃগনয়নী দেবী গুর্জর প্রতিহার বংশের কন্যা ছিলেন সেই থেকেই এই মহলের নাম গুজরীমহল দেওয়া হয়েছে। এমনিতেও এই দুর্গের অধিকার হুনদের হাত থেকে গুর্জর প্রতিহার হাতে এসেছিল। প্রতিহার রাজা মিহিরভোজ এখানে তেলি কা মন্দিরের নির্মাণ কাজ করান।

গুজরীমহল বর্তমানে State Archeological Meuseum হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে শাহজাহান গেট দিয়ে দুর্গে ঢোকার মুখেই এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত। ইব্রাহিম লোদী যখন গোয়ালিয়র ফোর্ট আক্রমনে করেন তখন এই গুজরীমহল এই আক্রমনের শিকার হয়েছিলো।

মান মন্দির বা মান সিং মহল ফোর্টের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। বেলে পাথরের ওপরে বিভিন্ন দারুণ দারুণ কাজ এবং তার সাথে সাথে নীল টাইলস্ এর নকশা সত্যি অবাক করে দেওয়ার মতো। মান মন্দিরের নিচে কিছু সুরঙ্গ পথ আছে যা আপনাকে নিয়ে যাবে নিচে রানীদের জন্য তৈরি গুপ্ত মহলগুলতে এগুলি অনেক ভুল ভুলাইয়ার মত। রাজা মান সিং এর আটজন রানী ছিল যাদের জন্য এই সব গুপ্ত ঘর গুলো নির্মাণ করা হয়েছিলো। এই সব ঘর গুলোতে সেই সময়ে কথা বার্তা আদান প্রদানের ব্যবস্থা আলোর আসার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এই গুপ্তঘর গুলি মুঘল আমলে কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছিলো। মানসিং মহল এবং গুজরীমহলের জন্য আপনাকে আলাদা করে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।

সাস বহু মন্দির :- সাস বহু মন্দির। মন্দিরটির প্রকৃত নাম কিন্তু আলাদা। এই মন্দির টির প্রকৃত নাম সশস্ত্রবাহু মন্দির অপভ্রংশ হয়ে এই নামটি হয়েছে সাস বহু। যেহেতু ব্রিটিশ রা সশস্ত্রবাহু নামটি ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারতো না, বিকৃত উচ্চারন থেকেই এই নামটি এসেছে। ১০৯৩ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি তৈরী করেন কাচাপাঘাতা বংশীয় রাজপূত রাজা মহিপাল।

সাশ বহু মন্দির। 

কর্ণ মহল ও বিক্রম মহল :- কর্ণ মহলের নির্মাণ তোমর রাজ কীর্তি সিং দ্বারা ১৪৮০-৮৬ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিলো। কীর্তি সিং এর আরেক নাম ছিল কর্ণ সিং সেই থেকেই এই মহলের নাম কর্ণ মহল হয়ে যায়। হিন্দু স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এই ভবন দোতলা বিশিষ্ট। এবং আকার একদম আয়তকার। মহলের মাঝে আয়তকার একটি বিরাট হলঘর আছে যেখানে রাজার আমলে রাজদরবার লাগতো।

বিক্রম সিং মহল বা বিক্রম মন্দির তোমর রাজ বিক্রমাদিত্য সিং এর আমলে তৈরি করা হয়েছিলো। এই বিক্রমাদিত্য সিং হলেন রাজা মান সিং তোমরের জেষ্ঠ পুত্র যিনি রাজা মান সিং এর পর সিংহাসনে বসেছিলেন এবং ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে তিনি বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। যুদ্ধের পর পুরো গোয়ালিয়র ফোর্ট বাবরের অধিকারে এসেছিলো, তখন এই মহলটিকে অনেকাংশেই নষ্ট করা হয়েছিলো পরবর্তীতে সিন্ধিয়া আমলে কিছু মাত্রায় এর সংস্কার করা হয়।

চতুর্ভূজ মন্দির এবং বিশ্বের প্রাচীনতম শূন্যের উল্লেখ :- গোয়ালিয়র ফোর্টের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করার পর কিছুদুর এগোনোর পরই আপনারা চতুর্ভূজ মন্দির পাবেন। যেখানেই বলা হয় বিশ্বের প্রাচীনত জিরোর উল্লেখ পাওয়া গেছে, রাস্তায় দুপাশে সেটা উল্লেখ করা ও আছে সেটা দেখতে পাবেন। এ ব্যাপারে বিতর্ক থাকতেই পারে আমি সেদিকে যাচ্ছি না যেটা উল্লেখ আছে সেটাই আমি আলোচনা করবো। এই মন্দিরটি খুবই প্রাচীন। প্রতিষ্ঠাকাল মোটামোটি ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে। মন্দির টি যেহেতু চারটে স্তম্ভের ওপরে নির্মিত হয়েছে সেই থেকেই নামটি এসেছে চতুর্ভূজ মন্দির। মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।

চতুর্ভূজ মন্দির ।

আমরা সকলের জানি যে শূন্যের আবিষ্কর্তা ছিলেন ভারতীয় জ্যোতিবিজ্ঞানী আর্যভট্ট। কিন্তু উল্লেখ সর্বপ্রথম বলা করা হয় এখানেই পাওয়া যায়। মন্দিরের দেওয়ালে একটা শিলালিপির মধ্যে এর উল্লেখ অনেকবার হয়েছে আমিও সেটা লক্ষ্য করেছি। অনেকের মতে বিশ্বের প্রাচীনতম শূন্যের উল্লেখ পাওয়া যায় বাখসালি পাণ্ডুলিপিতে যেটি বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত কিন্তু পাণ্ডুলিপি টি লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই বাখসালি পান্ডুলিপিটি আরো প্রাচীন ৩৮৩ খ্রিস্টাব্দের সময়ের, সেই দিক থেকে গোয়ালিয়র ফোর্টে পাওয়া শূন্যের উল্লেখ টি দ্বিতীয় প্রাচীনতম বলা যেতে পারে।

তেলি কা মন্দির :- ফোর্টের ভেতরে অবস্থিত অসাধারণ কাজের আরো একটি মন্দির হল তেলি কা মন্দির। নাগর শৈলীতে তৈরি এই মন্দিরটি তৈরী করা হয়েছিলো আনুমানিক অষ্টম থেকে নবম শতকের মধ্যে। গুর্জর প্রতিহার রাজ মিহির ভোজ এই মন্দিরটি তৈরী করান। এই দুর্গ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ বংশের দ্বারা শাসিত হয়েছিলো, তাই বিভিন্ন বংশের আমলে তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য এখানে আসলে দেখতে পাবেন।

দাতা বন্দিছোড় গুরুদোয়ারা :- গোয়ালিয়র ফোর্টের ভেতরে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাতা বন্দিছোড় গুরুদোয়ারা যার পর থেকেই শিখদের আনন্দের উৎসব বন্দিছোড় দিবসের সুচনা হয়। জানেন কি সেই ইতিহাস? দীপাবলীর রাতে শিখরা কেনো পালন করে বন্দিছোড় দিবস, চলুন তাহলে সেটা আমরা জেনে নি...

দীপাবলি রাতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র ভারতবাসি আলোর উৎসবে মেতে ওঠে। তেমনি সারা বিশ্ব জুড়ে শিখ ধর্মের মানুষেরা এই দিকটিকে বন্দি ছোর দিবস বা দীপমালা দিবস হিসেবে একটু আলাদা ভাবে পালন করে। এই বন্দি ছোর দিবস পালনের পিছনে আছে এক ইতিহাস, সেইজন্য আমাদেরকে যেতে হবে ষোলোশো শতকে।

শিখদের পঞ্চম গুরু গুরু অর্জুনকে তৎকালীন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আদেশে হত্যা করা হয়। গুরু অর্জুনের পর তার পুত্র গুরু হরগোবিন্দ শিখদের ষষ্ঠ গুরু হোন মাত্র ১১ বছর বয়েসে। গুরুপদে বসার পরই তিনি শক্তিশালী এক সেনাবাহিনী গঠনে মনোনিবেশ করেন তিনি মনে করতেন শক্তিশালী সেনাবাহিনী ছাড়া ধর্মরক্ষা ও মুঘল বাহিনীর সাথে কোনো মতেই মোকাবিলা করা যাবে না। এর পাশাপাশি তিনি অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরের অকাল তখত্ এর প্রতিষ্ঠা করেন। গুরু হরগোবিন্দের এইসব কার্যকলাপ সম্রাট জাহাঙ্গীরের কানে এসে পৌঁছায় তিনি, তিনি কোন মতেই এইসব কার্যকলাপ মেনে নিতে পারছিলেন না। তার আদেশে দুজন মুঘল সেনাপতি ওয়াজির খান ও গুঁচা বেগকে পাঠান অমৃতসরে। তারাই গুরু হরগোবিন্দ সাহেবকে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র ফোর্টের ভেতরে।

গুরু হরগোবিন্দ সাহেবকে প্রায় কয়েক বছর এখানে বন্দি করে রাখা হয়। এই গোয়ালিয়র ফোর্টে সেই সময়ে উত্তর পশ্চিম ভারতের প্রায় ৫২ জন রাজাকেও বন্দি করে রাখা হয়েছিলো। এই ৫২ জন রাজ রাজারা গুরু কে তাদের সাথে পেয়ে খুবই উৎসাহিত হয়ে উঠেছিলেন তিনি প্রতিদিন সন্ধে বেলায় তাদের গুরুবচন দিতেন এবং তাদেরকে আশ্বস্থ করেন যে তাদের এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি করবেনই। এদিকে গুরু হরগোবিন্দ সাহেব কে বন্দি করার পর থেকেই সম্রাট জাহাঙ্গীর নানান মানসিক ও শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, কোনো ওষুধই এই রোগের উপচার করতে পারছিলো না, শেষ পর্যন্ত তিনি সুফি সাধন মিয়া মীরের শরণাপন্ন হোন, সুফি সাধকের আদেশ মত তিনি গুরু হরগোবিন্দ জিকে মুক্তি দিতে সম্মতি হোন। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের আদেশ মত গুরু হরগোবিন্দকে গোয়ালিয়র ফোর্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গুরু হরগোবিন্দ মুক্তির আগে এক শর্ত রাখেন যে তাকে মুক্তির পাশাপাশি সেখানে বন্দি ৫২ জন রাজাকেও তার সাথে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিতে হবে। জাহাঙ্গীরের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তিনি এটা করতে বাধ্য হলেন। কিন্তু সম্রাট জাহাঙ্গীর একটা শর্ত আরোপ করেন তিনি সবাইকে একসাথে মুক্তি দিতে পারবেন না কিন্তু যারা যারা গুরুর চোলা ( যেই বস্ত্র শিখ গুরুরা পরিধান করতো) ধরে বেরিয়ে আসতে পারবেন তারাই মুক্তি পাবেন, এরপর গুরুর আদেশে তার জন্য এক বিরাট চোলা নির্মাণ করা হলো তাতে ৫২ জন রাজাই সেই চোলা ধরে দুর্গের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারলেন। 

শেষ পর্যন্ত ১৬১৯ সাথে গুরু হরগোবিন্দ সমেত ৫২ জন রাজা ও বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। গুরু হরগোবিন্দ ৫২ রাজাকে দেওয়া তার কথা রাখেন। এবং তিনি বন্দি ছোড় দাতা হিসাবে পরিচিত লাভ করেন। এরপর তিনি গোয়ালিয়র ফোর্ট থেকে অমৃতসরে ফিরে আসেন এই আনন্দে পাঞ্জাব তথা গোটা উত্তর পশ্চিম ভারত জুড়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে বন্দি ছোড় দাতা গুরু হরগোবিন্দকে স্বাগত জানানো হয়। এই দিনটি ছিল দীপাবলির দিন। তাই তারপর থেকে এই দিনই শিখরা গুরু হরগোবিন্দ সাহেবের বন্দি থেকে ঘরে ফিরে আসার স্মৃতি হিসেবে বন্দি ছোড় দিবস পালন করে থাকে। এই দিন প্রদীপ জ্বালিয়ে, লঙ্গরখানা চালিয়ে নগর কীর্তন করে দিনটি পুরো আনন্দের সাথে পালন করা হয়। সবচেয়ে জাকঁজমক ভাবে পালন করা হয় অমৃতসরে। দেখবে আলোর রোসনাই এ ছেয়ে পরে স্বর্ণ মন্দির সহ পুরো শহর। গোয়ালিয়র ফোর্টে যেখানে গুরু কে বন্দি করে রাখা হয়েছিলো সেখানে গুরু দাতা বন্দিছোড় গুরুদোয়ারা নির্মাণ করা হয়, গোয়ালিয়র ফোর্ট গেলেই সেটা আপনারা দেখতে পাবেন।

রানা ভীম সিং এর ছত্রী :- রাজা ভীম সিং ছিলেন মধ্যপ্রদেশ গোহদ নামক একটি ছোট্ট রাজ্যের আধিপতি, তিনি গোয়ালিয়র ফোর্ট অধিকার করেছিলেন। ফোর্টের ভেতরে তিনি একটি লেকও খনন করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র তার স্মৃতিতে এই ছত্রী নির্মাণ করান। ছত্রী হল হিন্দু - ইসলামিক মিশ্র স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এক প্রকার ডোম, ছাতা মত দেখতে বলে এই নামটি এসেছে।

80 খাম্বা কা বাওড়ি :- বাওড়ি অর্থাৎ স্থানাগার। প্রধানত রাজার রানীদের জন্য নির্মাণ করা হতো। এই গোয়ালিয়র ফোর্টের ভেতরেও এরকম একটা বাওড়ি নির্মাণ করা হয়েছিলো যা ৮০ টা খাম্বার ওপরে দাঁড়িয়ে যা থেকেই এই নামটি এসেছে। আপনি ওপরে থেকে ভালো ভাবে যদি লক্ষ্য করেন এটি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের পার্লামেন্টের মত। বাওড়ি টি মধ্যে সিরি করা ছিল যা করা হয়েছিলো ভেতরে তৈরি রানীদের ঘর গুলোতে যাওয়ার জন্য।

80 খাম্বা কা বাওড়ি। 

জহর কুণ্ড :- রাজপুত জোহরের রীতি প্রচলিত ছিল সেটা আমরা সকলেই জানি সেরকমই গোয়ালিয়র ফোর্টের ভেতরেই একটা জহর কুণ্ড অবস্থিত আছে। এবং বলা হয় এটাই নাকি দেশের ইতিহাসে প্রথম জহর কুণ্ড। মনে করা হয় ইলতুৎমিস যখন গোয়ালিয়র ফোর্টে আক্রমন করছিলেন তখন রাজপুত মহিলারা এখানে জহর করেছিলেন। (ঠিক ভুল সেটা আমি বলতে পারব না)

জহরকুণ্ড। 

শাহজাহান মহল জাহাঙ্গীর মহল :- বিভিন্ন বংশের শাসন দেখেছে এই ফোর্ট। দেখেছে বিভিন্ন বংশের উত্থান পতন। তেমনি মোঘলরা যখন এই দুর্গের দখল তারাও তো কিচ্ছু নির্মাণ করবে সেটা স্বাভাবিক। দুর্গের ভেতরে হিন্দু স্থাপত্যের পাশাপাশি মুসলিম স্থাপত্য লক্ষ্য করবেন, তার মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য হল শাহজাহান মহল এবং জাহাঙ্গীর মহল। এই স্থাপত্য গুলোতে সম্রাট জাহাঙ্গীর বা শাহজাহান এসে কোনদিনই ছিলেন না, কেবল মাত্র তাদের নামেই এই নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু তারা ভারতের সম্রাট ছিলেন। এই মহল মুঘল সেনাপতি o সেনাবাহিনীর থাকার কাজে ব্যবহার হতো।

জাহাঙ্গীর মহল টি সর্ব প্রথম তৈরি করা হয়েছিলো শেরশাহের আমলে সেইজন্য একে শের মন্দির ও বলা হতো, পরবর্তী কালে জাহাঙ্গীরের আমলে এটি তার নামে করে দেওয়া হয়। এই জাহাঙ্গীর মহলের উত্তর পূর্বে দিকে আছে আরো একটি মহল যাকে শাহজাহান মহল বলা হয়। এই দুটি মহল একই পরিসরেই তৈরি গড়ে তোলা হয়েছিলো। এটি সম্রাট শাহজাহানের সময়ে তৈরি করা হয় তাই এর নাম শাহজাহান মহল হয়ে যায়।

গোয়ালিয়রের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান :- গোয়ালিয়রে ফোর্ট ছাড়াও আরো কিছু দর্শনীয় স্থান আছে যেগুলো আপনারা দেখতে নিতে পারেন -

১. তানসেনের সমাধি :- ভারতের হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন মিয়া তানসেন যার প্রকৃত নাম রামতনু পাণ্ডে। তানসেনের জন্ম কিন্তু গোয়ালিয়রেই। তিনি বিভিন্ন রাজার রাজসভার সদস্য হিসেবে ছিলেন তারমধ্যে মধ্যপ্রদেশের রেওয়ার রাজা রামচন্দ্র সিং তোমর রাজ মান সিং থেকে শুরু করে মোগল সম্রাট আকবরের রাজসভা। তার মৃত্যুর পর তাকে গোয়ালিয়রেই সুফি শন্ত শেখ মহম্মদ গাউসের সমাধিস্থলেই সমাধি দেওয়া হয়। প্রতি বছর এখানে ডিসেম্বর তানসেন সমারোহের আয়োজন করা হয়। গোয়ালিয়র স্টেশন থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪ কি.মি।

তানসেন নগরী গোয়ালিয়র। 

২. রাণী লক্ষীবাই এর সমাধি :- গোয়ালিয়র শহরের অবস্থিত ঝাঁসির রানী লক্ষীবাই এর সমাধি। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে রানী লক্ষীবাই এই গোয়ালিয়র ফোর্টের দখল করেন, কিন্তু ব্রিটিশদের আশ্রিত সিন্ধিয়া রাজাদের বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি ফোর্ট থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হোন এবং যুদ্ধে তিনি শেষ পর্যন্ত নিহত হয়েছিলেন। তাকে গোয়ালিয়র ফোর্টের পাশেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। রানি লক্ষীবাই মার্গের পাশেই তার এই সমাধি ক্ষেত্রটি অবস্থিত।

৩. এছাড়া আপনারা গোয়ালিয়র থেকে একদিনের জন্য চম্বল নদীর তীরে বিহর সাফারির মজা নিতে পারেন। পুরো চম্বল এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় শহর এই গোয়ালিয়র। চম্বলের বিহরের নামতো অনেকেই শুনেছেন ডাকুদের আতুরঘর ছিল একসময় এই এলাকা যদি এখন কিছুই তেমন নেই। এই চম্বল নদী মধ্যপ্রদেশ কে উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান থেকে পৃথক করেছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন