দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান

 দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান 

ভ্রমণ পিপাসু :- স্বাধীনতার সময়ে পূর্বতন দিনাজপুর বলে একটি জেলাই ছিল। দেশভাগের সাথে এই দিনাজপুর জেলা কেও দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, ভারতের অংশে থাকে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার যার সদর দফতর করা হয় বালুরঘাট শহরকে। ১৯৯২ সালের ১লা এপ্রিল এই পশ্চিম দিনাজপুর জেলাকে আবারও দুভাগে বিভক্ত করে উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর নামে দুটি জেলার সৃষ্টি করা হয়, এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিছু পর্যটনস্থল আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু।


ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ জেলা এই দক্ষিণ দিনাজপুর। আয়তনে খুব ছোটো হলেও এই জেলা ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের আকরভূমি বলা যায়। প্রাচীনকালে বিভিন্ন নামে এই জেলা পরিচিত ছিল, যেমন পুন্ড্রবর্ধন, কোটিবর্ষ, দেবকোট বা দেবীকোট এরকম বিভিন্ন নামে এই জেলা পরিচিত ছিল। প্রাচীন কালে একদম শুঙ্গ যুগ থেকে শুরু মৌর্য,পাল, সেন হয়ে একদম মুলতানি আমল পর্যন্ত এক দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এই জেলা। ইতিহাস সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এই জেলার পর্যটনস্থল গুলোকে সবার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই ব্লগ, এই ব্লগে দক্ষিণ দিনাজপুরের এমন কিছুই অজানা জায়গার সন্ধান আপনাকে দেবো, যার সাথে বেশিরভাগ মানুষই পরিচিত নন, তার সাথে সাথে ঐতিহ্যমন্ডিত বিভিন্ন স্থান গুলোর অজানা ইতিহাস কে এখানে তুলে ধরবো, এবং সেইসব জায়গা গুলো কোথায় অবস্থিত এবং কেমন করে পৌঁছোবেন তার একটা ধারণা আপনাদের দেওয়ার চেষ্টা করবো, যাতে আপনাদের এই জায়গা গুলোতে পৌঁছোতে বিশেষ কোনো অসুবিধার সম্মুখীন না হয় , দক্ষিণ দিনাজপুর নিয়ে এরকম complete ব্লগ আপনারা মনেহয় খুবই কম পাবেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ রইলো ব্লগটা পুরো পড়বার।

১. মনহোলি জমিদার বাড়ি :- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জমিদারবাড়ি বলতে একটি জমিদার বাড়ির নামই সবার প্রথমে আসবে সেটি হল মনহোলি জমিদারবাড়ি। যেটি তপন ব্লকে অন্তর্গত। এর বাইরে আর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য জমিদারবাড়ি এই জেলায় পাবেন না। আপনি গঙ্গারামপুর বলেন কিংবা বালুরঘাট, বা তপন যেকোনো জায়গা থেকেই খুব সহজে এখানে চলে আসতে পড়বেন। প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়ি এখনো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

Monohali Jamidarbari. 

মনহোলি জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্বর্গীয় তাঁরাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায় তারা ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমান জেলার লোক। জমিদারবাড়ির সামনে আসলে দেখতে পাবেন জমিদারবাড়ির সামনে একটি পুকুর। পুকুরের মাঝ বরাবর রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সামনে যে বিল্ডিং টি পাবেন সেটাকে বলা হয় দেউড়ি, আগে এখানে বাড়ির পাহারাদারদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। এই দেউড়ির দুদিকে দুটো বাড়ি আছে, বা দিকে ছোটো তরফ এবং ডানদিকে বড় তরফ। এছাড়াও এখানে একটি দুর্গা দালানও দেখতে পাবেন। যদিও জমিদার বাড়ির অনেক অংশই ভেঙে গেছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, তবে কিছু অংশে এখনো জমিদার বাড়ির বংশধররা বসবাস করছেন। তাদের উদ্যোগে কিছু অংশ সংস্কারও হয়েছে। আমি বলবো এখানে আসুন অবশ্যই খুব নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ আপনাদের খুবই ভালো লাগবে।

কেমন করে যাবেন :- গঙ্গারামপুর থেকে এই জমিদার বাড়ির দূরত্ব ১২ কি.মি আপনি গঙ্গারামপুর থেকে নয়াবাজার মোড়ে এসে দুটি রাস্তা দু দিকে চলে গেছে একটি তপন এবং ডান দিকের রাস্তাটি সোজা চলে এসেছে এই জমিদার বাড়িতে। তপন থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৯ কি.মি ।বালুরঘাট থেকে তপন হয়ে এই জমিদার বাড়ির দূরত্ব ৩৪ কি.মি।

২. বালুরঘাটের খাঁপুরের শহিদ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মা সিংহ বাহিনী মন্দির : - বালুরঘাটের কাছে অবস্থিত খাঁপুর গ্রামের নামতো অনেকেই হয়তো শুনেছেন? হ্যাঁ এই খাঁপুর গ্রাম যেখানে তেভাগা আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিসের গুলিতে ২২ জন ভাগ চাষি শহীদ হয়েছিলেন ।বালুরঘাট এলাকাটি অনেক আন্দোলনের সাক্ষী। তার মধ্যে একটি হলো এই তেভাগা আন্দোলন। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে পুরো উত্তরবঙ্গ জুড়ে জমির মালিক অর্থাৎ জোৎদারদের প্রাধান্য ছিল। তাদের অধীনে যেসব ভাগ চাষিরা কাজ করতো তারা উৎপন্ন ফসলের দু ভাগ পেতেন। কিন্তু কৃষকদের দাবি ছিল তিনভাগ, যা থেকেই আন্দোলনকে সূত্রপাত। তিন ভাগ থেকেই এই আন্দোলনের নাম হয়েছে তেভাগা আন্দোলন।

Khanpur Tebhaga Movement Memorial 

বর্তমানে এই গ্রামে আসলে এই আন্দোলনের শহীদের স্মৃতিতে তৈরি স্মৃতি স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই তেমন চোখে পড়বে না। পাশেই অবস্থিত আন্দোলনে শহীদ পরিবারে বাড়ি দুটির অবস্থাও খুব সঙ্গিন। বালুরঘাট থেকে কলকাতার মধ্যে যাতায়াত করা ট্রেনটির নামও এই তেভাগা আন্দোলন স্মৃতিতে করা হয়েছে। আপনি চাইলে তেভাগা আন্দোলনের ওপরে করা আমার এই details ভিডিও টি দেখে নিতে পারেন.... 

খাঁপুরের তেভাগা স্মৃতি স্তম্ভের ঠিক পাশেই অবস্থিত এই প্রাচীন জরাজীর্ণ মা সিংহ বাহিনীর মন্দির অর্থাৎ দেবী দুর্গার মন্দির। মন্দিরটি টেরাকোটার কাজে সজ্জিত এবং দেখেই খুব প্রাচীন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু মন্দিরটির যা পরিস্থিতি দেখলাম তাতে যদি সংরক্ষন না করা হয় তাহলে বেশ কিছু বছরপর হয়তো এর অস্তিত্ব না ও থাকতে পারে। তাই খাঁ পুরে আসলে এই মন্দিরটি একবারের জন্য দেখে যেতে পারেন।

Singhabahini Temple khanpur. 


কেমন করে যাবেন :- পতিরাম থেকে হিলি যাওয়ার রোডের ওপরেই এই খাঁপুর পরে। তাছাড়া বালুরঘাট শহর থেকে যেতে চাইলে মালঞ্চা বাস স্ট্যান্ড মোড় থেকে বাঁ দিকে সোজা রাস্তা আপনাকে একদম খাঁপুরে পৌঁছে দেবে।

৩. বালুরঘাট মিউজিয়াম এবং ভারতছাড়ো আন্দোলন স্মৃতি স্মারক :- বালুরঘাটের এদিকে কেউ যদি ঘুরতে আসেন তাহলে কোনো জায়গা যাতে মিস হয়ে না যায় সেই উদ্দেশেই আমার এই ব্লগ, অনেক জায়গার আসে পাশে কিছু অজানা জায়গা থাকে যেগুলো সমন্ধে আমরা হয়তো জানতে পারি না সেই জন্য এই জায়গা গুলি বাদ চলে যায়, তাই এই ব্লগে আমি পাশাপাশি অবস্থিত জায়গা গুলোকে এক জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করছি যাতে আপনাদের সুবিধে হয়, যেমন ধরুন আপনি আপনি বালুরঘাট শহরের মধ্যেই কিছু জায়গা বেড়াতে যেতে চান তাহলে শহরের পার্কগুলো, সিটি সেন্টার এবং ট্যাঙ্ক মোড়ের ট্যাঙ্ক বাদ দিয়েও আপনার যদি ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে বালুরঘাট মিউজিয়াম এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্মৃতি স্নারকটি দেখে নিতে পারেন।

South Dinajpur Museum 

এখন কেনো এই দুটি জায়গা আপনারা দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে আপনাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। আমি আগে একটি পয়েন্টে বলেছিলাম যে এই বালুরঘাট বহু আন্দোলনের সাক্ষী তার মধ্যে একটি হলো ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন, যেটি আমাদের রাজ্যে মেদিনীপুর জেলা বাদেও এই বালুরঘাটে ও কিছুটা হয়েছিলো। ১৯৪২ এর ১৪ই সেপ্টেম্বর বালুরঘাটে ডাঙ্গী এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হয়ে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয় যাতে ব্রিটিশ পুলিশ সেখানে না পৌঁছতে পারে। তাই প্রতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর দিনটি বালুরঘাট দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে, এখানে আন্দোলনের জায়গায় একটি স্মৃতি স্মারক ও নির্মান করা ছাড়া আর তেমন কিছুই হয়নি।

ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জেলায় মিউজিয়ামে নিশ্চয়ই ইতিহাসের আরো অবাক করা অজানা বিষয় আপনারা জানতে ও দেখতে পাবেন এটাই স্বাভাবিক, সেই উদ্দেশ্যেই আপনাকে যেতে হবে বালুরঘাট দক্ষিণ দিনাজপুরে মিউজিয়ামে। এই জেলায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন আপনি মিউজিয়ামে অবশ্যই দেখতে পাবেন।

৪. গঙ্গারামপুরের পীরপাল গ্রাম :- গঙ্গারামপুর শহর থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত প্রাচীন পীরপাল গ্রাম। মনে করা হয় এই গ্রামের শায়িত আছে বাংলা বিজয়ী প্রথম তুর্কি সুলতান বখ্তিয়ার খলজী। এ নিয়ে বিতর্ক ও আছে। সামনে একটি বোর্ড ও দেওয়া আছে। কিন্তু অনেকের মতে এটি বখ্তিয়ার খলজীর সমাধি না এটি পীর বাহা উদ্দিনের সমাধি। যেই পীরের নামেই এই গ্রামের নামকরণ হয়েছে পীরপাল। এই গ্রামেই একটা রীতি প্রচলিত আছে যে এই গ্রামের মানুষ নাকি পীরের জন্য কেউ খাটে ঘুমন না, মাটিতে বা মাটি এবং কংক্রিটের তৈরি বিছানায়, যেহেতু পীর এখানে মাটিতে শায়িত। যদিও এই সব জিনিস এখন খুবই কমে গেছে। এখানে একটি দীঘি ও আছে যাকে পীরপাল দীঘি বলা হয়।

পিরপাল

১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেনের আমলে বাংলা আক্রমণ করেন। ঐতিহাসিক দের দাবি অনুযায়ী ভয়ে লক্ষণ সেন পূর্ব বঙ্গে পালিয়ে যান। তারপর থেকে তিনি গৌড়ের সুলতান হিসেবে পরিচিত হোন। তিব্বতের ব্যার্থ অভিযান থেকে তিনি রাজধানী দেবকোটে ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এখন মনে করা হয় অসুস্থ থাকাকালীন আলী মর্দান খলজী কর্তৃক ছুরিকাঘাতে নিহত হোন। গ্রামে আসলে অনেক প্রাচীন স্থাপত্যের ধংসাবশেষের অংশ এবং অনেক পুরোনো পাথর দেখতে পাবেন। গ্রামটি কিন্তু পুরোপুরি হিন্দু অধ্যুষিত। পীরপালের ওপরে করা আমার এই ইউটিউব ভিডিও টি আপনারা চাইলে দেখতে পারেন নিচে লিঙ্ক দিলাম.. 

সমাধি ।


কেমন করে যাবেন :- এই পীরপাল গ্রামের অবস্থান গঙ্গারামপুরের নারায়ণপুর গ্রামে, শহর থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৬ কি.মি। গঙ্গারামপুরের রূপকথা সিনেমা হল মোড় থেকে ডান দিকে গেলে সোজা রাস্তা আপনাকে পৌঁছে দেবে এই পীরপাল গ্রামে।

৫. হস্তশিল্প কেন্দ্র মহীষবাথান এবং উষাহরন :- এই জেলা কিন্তু হস্তশিল্পে পিছিয়ে নেই। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি জায়গা কুশমুন্ডী ব্লকের মহীষবাথান এবং উষাহরন। দুটি জায়গার অবস্থান খুব পাশাপাশি তাই আপনারা একই দিনে এসে দুটি জায়গাতে ভিজিট করে নিতে পারেন।

Mukha Dance musk, Mahisbathan. 

প্রথমে আসি মহীষবাথানে, দুই দিনাজপুরের কিছু অংশে প্রায় ২৫০ বছর ধরে চলে আসা গমিরা নাচের প্রচলন আছে যাকে 'মুখা নাচ বা মুখা খেল ও বলে থাকে। সেই মুখা নাচের মুখোস তৈরির tradition কে এখনো বজায় রেখেছে মহীষবাথানের খুনিয়াডাঙ্গি গ্রামের প্রায় কয়েকশো লোক। যদিও এই নাচ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তা সত্ত্বেও দুই দিনাজপুর জেলার কিছু অংশে এখনো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন এলাকায় এই গমীরা নাচের আসর বসে।

এই মুখোস তৈরির শিল্প বর্তমানে GI ট্যাগ ও পেয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে কয়েকশো নিপুণ শিল্পী দ্বারা এই মুখোশ তৈরি শিল্প এখনো চলে আসছে। গ্রামে আসলেই দেখতে পাবেন রাস্তার দু ধারের কয়েকটি বাড়িতে কাঠের ওপরে সুদক্ষ্য শিল্পী এই বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন আকারের মুখোখ তৈরি চলছে। প্রধানত ট্র্যাডিশন অনুযায়ী নিম কাঠ দিয়ে এই কাজ করার নিয়ম হলেও,, এখন বিভিন্ন ধরণের গাছের কাঠ দিয়েও এই কাজ হচ্ছে আপনি চাইলে তাদের কাছ থেকে কিনে নিতেও পারেন। বর্তমানে এখানে UNESCO এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এখানে 'মহীষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্প সমবায় সমিতি' গঠন করা হয়েছে এই সমিতি এখানে একটি Craft Centre ও গড়ে তুলেছে এই শিল্পকে দেশ ও বিদেশের দরবার তুলে ধরার জন্য, এখানে আসলে মুখোস তৈরির পুরো পদ্ধতি  দেখতে পাবেন, তার পাশাপাশি এখানে বিপণন কেন্দ্র ও গড়ে তোলা হয়েছে। 

এবার আসি ঊষাহরনে। জায়গার নামের পেছনে আছে এক পৌরাণিক কাহিনী, ঊষা হলো বাণ রাজার কন্যা, তাকে শ্রী কৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধ হরন নিয়ে যাচ্ছিলেন যেই রাস্তা দিয়ে তাকেই ঊষাহরন রোড, বর্তমানে ঊষাহরন হয়ে যায় জায়গাটির নাম। মহীষবাথান থেকে খুব কাছেই এই ঊষাহরন গ্রাম। 

Ushaharan. 

কুশমুন্ডী ব্লকের এই ঊষাহরন বিখ্যাত বাঁশের কাজের জন্য। যদিও এখনও হাতে গুনে মাত্র কয়েকটি বাড়িতেই এই কাজ হচ্ছে। বাঁশের ওপরে বিভিন্ন আকৃতির কারুকাজ, তার সাথে সাথে আপনাদের গৃহস্থালী সাজানোর বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ আপনারা এই গ্রামে আসলে পেয়ে যাবেন, আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলাতেও হয়তো আপনারা এই কাজ গুলো হয়তো লক্ষ্য করেছেন। এদের কাছ থেকে আপনি যদি সরাসরি এই জিনিস গুলো কিনে নিতে পারেন তাহলে মেলা অপেক্ষা অনেক কম দামে পেতে পারেন। 

কেমন করে যাবেন :- আপনি ঊষাহরন ও মহীষবাথান বিভিন্ন ভাবে আসতে পারেন বাইক অথবা যারা বাইরে বাইরে থেকে আসবেন তারা পার্সোনাল কার বা গাড়ি ভাড়া করেও চলে আসতে, রাস্তা খুব ভালো, আপনি বিভিন্ন দিক থেকে এখানে আসতে পারেন। ধরেন যারা বালুরঘাট বা গঙ্গারামপুরের দিক থেকে আসবেন তারা কুশমুন্ডী হয়ে প্রথমে ঊষাহরন, এবং ৩ কি.মি পরেই মহীষবাথান পড়বে। আর যারা রায়গঞ্জের দিক থেকে আসবেন তারা কালিয়াগঞ্জ, ফতেপুর হয়ে অথবা ইটাহার হয়ে এখানে চলে আসতে পারেন।

৬. মহিপালদিঘী ও নীলকুঠি, কুশমুন্ডী :- আমি এই পোস্টটি এমন ভাবেই করেছি, পাশাপাশি অবস্থিত জায়গা গুলিকে একসাথে দেখে নিতে পারেন, কোনো জায়গা যাতে বাদ না যায়। আমি আগের পয়েন্টেই বলেছিলাম দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলায় বেশ কিছু দিঘি খনন করা হয়েছিলো পাল ও সেন যুগে, সেরকমই একটি হল কুশমুন্ডীর মহিপালদিঘী। পাল রাজা মহিপালের আমলে এই দিঘী খনন করা হয়েছিলো বলে এর নাম মহিপালদিঘী হয়ে যায়, তারপর ধীরে ধীরে এই এলাকার নামই হয়ে যায় দিঘির নামে অর্থাৎ মহীপাল, এই দিঘির পাশে কিছু কটেজ ও নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে তা অব্যাবহত অবস্থায় পড়ে আছে। এই দিঘির যা অবস্থা দেখলাম খুব খারাপ, এই অবস্থায় শুধু কটেজ নির্মাণ করে খুব একটা লাভ হবে বলে আমার মনে হয়না। অতিসত্তর এই দিঘির সংস্কার প্রয়োজন।

Mahipaldighi. 

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি হল মহিপালের নীলকুঠি বা যাকে টমাস সাহেবের কুঠিও বলে। এই টমাস সাহেব ছিলেন শ্রীরামপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম কেরীর বাল্যবন্ধু। মহিপালদিঘীর একদম পাশেই এটি অবস্থিত, যদিও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই কুঠির অবস্থাও খুব সঙ্গিন, আগাছা ও জঞ্জালে পুরো জায়গা একদম ভরে উঠেছে।

কুশমুন্ডীর মহিপাল কিন্তু একটা ভালো পিকনিক স্পট ও শীতকালে এখানকার আরিয়া ফরেস্টে পিকনিকের জন্য প্রচুর ভিড় হয়। 

Nilkuthi, Kushmundi. 

কেমন করে যাবেন :- যারা যারা রায়গঞ্জ বা কালিয়াগঞ্জের দিক থেকে আসবেন তাদের কুশমুন্ডী হয়ে এই মহিপাল পৌঁছতে হবে। কুশমুন্ডী থেকে মহিপালের দূরত্ব ১৪ কি.মি ।আর গঙ্গারামপুর বা বালুরঘাট থেকে আসলে কুশমুন্ডী আসার কোনো দরকার নেই, অনেকগুলো রাস্তা আছে এখানে আসার।

৭. হরিরামপুরের তিন দিঘি ও শমীবৃক্ষ :- দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলার হরিরামপুর ব্লকের হাতিডুবা গ্রাম, এই গ্রাম তথা পুরো হরিরামপুর ব্লকের সাথে পৌরাণিক মহাভারতের যুগের অনেক জায়গার মিল আছে। এই জায়গাটিই পূর্বে মহাভারত যুগের বিরাট দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, সেই সূত্রেই হাতিডুবা গ্রামেই আছে মহাভারত যুগের প্রাচীন শমীবৃক্ষ। শমীবৃক্ষের সমন্ধে আমরা অনেকেই জানি, যে অজ্ঞাতবাসের সময়ে পঞ্চপাণ্ডব তাদের পরিচয় লুকিয়ে বিরাট দেশে থাকা শুরু করেছিলেন তখন এই শমীবৃক্ষের কঠুরীতেই তাদের সমস্ত অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন, মহাভারত অনুসারে এটাই প্রচলিত, এখন হাতিডুবা গ্রামে অবস্থিত এই বৃক্ষকে প্রাচীন শমীবৃক্ষ বলা হয়। নিচে বোর্ড ও দেওয়া আছে।


এই শমীবৃক্ষ ছাড়াও এই হাতিডুবা গ্রামে আছে তিনটে বড়ো বড়ো প্রাচীন দিঘী। শমীবৃক্ষের পাশেই আছে আলতাদিঘী, এছাড়াও আছে মালিয়ানদিঘী, এবং গৌরগিঘি। পুরো দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা জুড়েই বেশ কয়েকটি আয়তকার আকৃতির বেশ কয়েকটি দিঘী খনন করা হয় পাল ও সেন আমলে, হরিরামপুরের হাতিডুবার এই দিঘি গুলোও হয়তো সেই সময়েই খনন করা হয়েছিল, বর্তমানে এই দিঘিগুলিতে মৎসজীবিদের দ্বারা মাছচাষ হচ্ছে। তার মধ্যে এই এলাকার পর্যটনের বিকাশের জন্য সরকারি উদ্যোগে গৌরগিঘীকে কেন্দ্র করে পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে, খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে এখানে কিছু কটেজ ও গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে থাকা খাওয়া এবং পিকনিকের ব্যবস্থা আছে, খুব সুন্দরভাবে একটা দিন এখানে কাটাতে পারবেন।

Gourdighi Park 

কেমন করে যাবেন :- এখানে আসার জন্য আপনাদের হরিরামপুর পৌঁছতে হবে। হরিরামপুর থেকে এই হাতিডুবার দূরত্ব মাত্র ১৩ কি.মি। যারা মালদা বা বালুরঘাট দিক থেকে আসবেন তারা হরিরামপুর না গিয়েও বনিয়াদপুর কুশকারী হয়ে এখানে চলে আসতে পারেন।

৮. বানগড় :- গঙ্গারামপুর তথা দক্ষিণ দিনাজপুরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থান হল এই বানগড়। পুর্নভবা নদীর তীরে অবস্থিত কোটিবর্ষ এবং বলি রাজার পুত্র বানাসুরের কন্যা উষা এবং শ্রী কৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধকে নিয়ে তৈরি মিথ পুরান ও তাদের স্মৃতি বিজরিত প্রাচীন বানপুরই হলো বর্তমানের বানগড়। পৌরাণিক কাহিনী থেকে শুরু করে,শুঙ্গ, পাল সেন এবং সুলতানী যুগের ইতিহাসকে বহন করে বেড়ানো এই বানগড়, আজ সঠিক সংরক্ষনের অভাবে ধুকছে। বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই প্রাচীন নগরীতে বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। 


বানগড়ের গঠন দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রাচীন নগরী ছিল। নগরীরটির পশ্চিম দিকে ছিল পূর্নভবা নদী। এবং উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব দিক পরীখা দ্বারা বেস্তিত ছিলো। চারপাশেই ওয়াচ টাওয়ারের মতো করা ছিলো সৈন্যদের আস্তানার জন্য। কয়েক দফায় এখানে খনন কার্য করা হয়েছিলো, ১৯৩৮ সালে প্রথম এখানে খনন কার্য শুরু হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইতিহাসবিদ কুঞ্জ গোবিন্দ দাসের উদ্দগে এখানে খনন কাজ চলে। তার ফলে প্রচুর প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী, শশ্যাগার স্নানাগার, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী একটি জায়গায় চারটি পিলার বিশিষ্ট বিয়ের ছাদনাতলা মত একটা জায়গা পাওয়া গেছে যাকে অনেকে বান রাজার কন্যা উষা এবং অনিরুদ্ধের বিয়ের ছাদনাতলা বলে থাকে।

কেমন করে যাবেন : বানগড়ে আসা খুব সহজ, আপনি গঙ্গারামপুরের বিশ্ববাংলা মোড় থেকে যদি বালুরঘাটের দিক থেকে আসেন তাহলে ডান দিকে যেতে হবে, আর যারা রায়গঞ্জের দিক থেকে আসবেন তাদের বা দিকে ১ কি.মি গেলেই বানগড় Archeological সাইট দেখতে পাবেন।


৯. হিলি সীমান্ত :- দেশভাগের সেই জ্বালা এখনো বয়ে চলেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি। কারণ দেশভাগের সময়ে এই হিলি শহরকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছিলো, ওপারের হিলিকে বাংলা হিলি নামে ডাকা হয়, যা বাংলাদেশের হাকিমপুর উপজেলার অংশ এবং এপারের হিলি, শুধু হিলি। রেল লাইন বরাবর হিলিকে দুভাগে বিভক্ত হয়, যার ফলে অদ্ভূত সীমান্তে পরিনত হয় এই হিল, যার ফলে কিছু ছিটমহলের সৃষ্টি হয় এই সীমান্ত এলাকায়। রেল স্টেশন টি বাংলাদেশ অংশে পড়লেও বাস স্ট্যান্ড, বাজার এপারে পরে, এতো কাছে থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত খুব কম জায়গা থেকেই দেখা যায়, এখানে আসলে বাংলাদেশের হিলি স্টেশনটিকেও দেখতে পাবেন, তার সাথে সাথে বাংলাদেশের ট্রেন রেল লাইন মাত্র কয়েক গজ দূরে।

হিলি শহরে ঢোকার মুখেই পড়বে ছোটো যমুনা নদী ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে সোজা চলে আসুন হিলি চেকপোস্ট, হিলি কিন্তু একটি স্থলবন্দর ও। এই চেকপোস্ট ও বর্ডারই এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা, যা দেখার জন্য প্রচুর লোক এসে থাকে। হিলি চেক পোস্ট দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বানিজ্য চলে, এবং প্রচুর লোক দুপাশ থেকেই এই চেকপোস্ট হয়েই যাতায়াত করে। এখান থেকে খুব কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষজনকে দেখতে পাবেন। হিলি তে দর্শনীয় স্থান :- 

হাড়িপুকুর গ্রাম - এই চেকপোস্ট ছাড়াও এখানে দেখার আরো কিছু জায়গা আছে যেমন পারমিট পেলে যেতে পারেন একদম বর্ডার লাগোয়া হাড়িপুকুর গ্রামে।, দু দেশের মাঝে অবস্থিত এই গ্রাম। 


১৪ হাত কালি - ১৯৭১ ভারত পাক যুদ্ধের সময়ে এই পূজা এবং মেলা শুরু হয়। হিলি শহরের খুব কাছেই, এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়, রাস পূর্ণিমার ঠিক পরের অমাবস্যায়। 

14 hat kali Hili 

বিনশিরা জমিদার বাড়ি :- জমিদার ঠিক বলা যাবে না, জোতদার বলতে পারেন। রায় বাহাদুর কুমুদ নাথ দাসের ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। জমিদার বাড়ির ভিতরে তার একটি আবক্ষ মূর্তি ও আছে, এছাড়া ভুবনেশ্বরী হাসপাতাল ও জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠিত চামুন্ডেশ্বরী মন্দির দেখে নিতে পারেন। এছাড়া ১৯৭১ যুদ্ধের স্মৃতি সৌধ এছাড়া হিলির সবচেয়ে বিখ্যাত হল দুর্গাপূজার প্যানডেল যা দেখার জন্য দূর দুর্দান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসে।

১০. তপনের তপনদিঘি ও রাধাগোবিন্দ মন্দির :- দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন, পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই জায়গাটির নাম এসেছে এখানে অবস্থিত তপনদিঘি থেকে, এই দিঘীকে চার দিকে গড়ে উঠেছে পুরো তপন শহর। এটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে বড় দিঘী। এই তপন দিঘী তৈরি ও নামকরন নিয়ে বহু পৌরাণিক কাহিনী, মিথ প্রচলিত আছে, তার মধ্যে কোনটি সঠিক তা নিয়ে বহু বিতর্ক আছে।

এক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই তপনদিঘি সৃষ্টির পেছনে আছে বাণ রাজা। তিনি এই দিঘীটি খনন করেছিলেন পূর্বপুরুষ অথবা কারো কারো মতে শিবের উদ্দেশে তর্পণ করার জন্য। যেহেতু তিনি এই দিঘী তর্পণের উদ্দেশে খনন করেছিলেন তাই এই তর্পণ থেকেই এই দিঘী ও পুরো এলাকার নাম হয়ে যায় তপন। আবার কারো কারো মতে বাণ রাজা বা বাণাসুর এই দিঘীর পশ্চিম পারে তপ করার জন্য একটি বনের(তপবন) নির্মাণ করেছিলেন এই তপবন থেকেই এই দীঘির নাম তপন হয়ে থাকতে পারে। যেই তপবনের কোনো অস্তিত্বই বর্তমানে নেই। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন রাজা কর্ণ এই দীঘিতে তর্পণ করতেন।

TAPAN DIGHI 

ঐতিহাসিক দিক থেকে যদি বলা যায়, তাহলে মনে করা হয় এই দীঘি সেন আমলের তৈরি। রাজা লক্ষন সেনের আমলে এই দীঘি খনন করা হয়েছিলো। কারণ এই জেলার বেশিরভাগ দীঘি হয় পাল নয়তো সেন আমলে তৈরি, তাই এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে।

বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটনের বিকাশের জন্য অনেক কর্মকান্ড চলছে এই দীঘিকে ঘিরে। তপন দীঘির পূর্ব পারে পার্ক, কটেজ, সুইমিং পুল প্রভৃতির নির্মাণ কাজ চলছে সম্পূর্ন হতে হতে আরো বেশ কিছু বছর সময় লেগে যাবে, তবে সবার আগে যেটা করা দরকার সেটা হলো এই দীঘির সংস্কার সাধন, এতো বড় একটি দীঘি কিন্তু প্রায় অনেকটাই আবর্জনা এবং কচুরিপানায় ঢেকে আছে। সরকারের এদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া উচিত। 

রাধা গোবিন্দ মন্দির :- তপনে যখন আপনারা আসবেন তখন শুধু শুধু তো এই মজে যাওয়া দীঘি দেখার জন্য শুধু শুধু আসবেন না, সেইজন্য তপন দীঘির পাশেই এই বৃহৎ রাধা গোবিন্দ মন্দিরটি অবশ্যই দেখে যেতে পারেন। যদিও এর নির্মাণ কাজ এখনো পুরোপুরি সম্পূর্ন হয়নি, তা সত্বেও বলবো এখানে আসলে আপনাদের খারাপ লাগবে না, খুবই সুন্দর এই মন্দিরটি। রথ যাত্রা উপলক্ষে এখানে বিরাট মেলার আসর বসে যা পুরো দুই দিনাজপুর জেলার মধ্যে বৃহত্তম।

কেমন করে যাবেন : তপন পৌঁছানো খুব সোজা। গঙ্গারামপুর থেকে তপন খুবই কাছে। গঙ্গারামপুর থেকে নয়াবাজার হয়ে তপন চলে আসা যায়। অথবা বালুরঘাট থেকে চকভৃগু তপন বাইপাস হয়ে তপন চলে আসতে পারেন। একবার তপন পৌঁছে গেলে দীঘি আর রাধা গোবিন্দ মন্দিরে আসা কোনো ব্যাপারই না।

Radha Gobinda Temple. 

১১. গঙ্গারামপুরের দুই দীঘি এবং আতা শাহ দরগা :- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৭ টি দীঘির নাম আমি প্রথমে বলেছিলাম তার মধ্যে দুটি অবস্থিত এই গঙ্গারামপুর শহরে, একটি কালদীঘি এবং অন্যটি ধলদীঘি। এবং এই ধলদীঘির উত্তর পাড়েই অবস্থিত শা আতা শাহের দরগা। গঙ্গারামপুরের এরকম প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে যা ঘোরার জন্য আপনাদের একদিন লেগে যাবে, গঙ্গারামপুর নিয়ে আমার এই ভিডিও টি তে সমস্ত জায়গার details পেয়ে যাবেন...

Dhaldighi. 


গঙ্গারামপুরের কালদীঘি ও ধলদীঘি যার সময়কাল ধরা হয় পাল আমলে। অনেকের মতে এগুলি পূর্ণভবা নদীর পরিত্যক্ত অংশ। পাল আমলে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মোকাবিলায় সামরিক প্রয়োজনের কথা পরিত্যক্ত নদীখাত দুটোকে দীঘিতে রূপান্তরিত করা হয়। ধলদীঘির পারে কিছু সুরঙ্গ আজও দেখতে পাবেন যেগুলো ছিল সমর উপকরন নিয়ে সামরিক বাহিনী যাতায়াতের পথ। কালদীঘিকে বর্তমানে সুন্দর একটি পার্কে রূপান্তরিত করা হয়েছে মনোরঞ্জনের জন্য। এই দুটো দীঘি বর্তমানে মৎসজীবিদের দ্বারা মাছ চাষ করা হয়।

Kaldighi, Gangarampur. 

ধলদীঘির উত্তর পারেই অবস্থিত ছিল প্রাচীন দেবকোটে মহাবিহার, যেটি বর্তমানে আতা শাহের দরগা হিসেবে পরিচিত। মনে করা হয় পাল রাজা ধর্মপালের আমলে এই বিহারটি নির্মাণ করা হয়। এখানে তুর্কীবীর বখ্তিয়ার খলজী বিজয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, তারপর এটিকে মাদ্রাসায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। ৬৯০ হিজরী বংশে মৌলানা আতা শাহ এখানে এসেছিলেন তার মৃত্যুর পর তাকে এই দরগার মধ্যেই সমাধিস্থ করা হয়। এটি যে প্রাচীন কালে একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল তার বহু প্রমাণ আপনারা নিচের এই ভিডিও টি দেখলেই পেয়ে যাবেন, আতা শাহের দরগার ওপরে আমার করা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন...


Ata Shah Darga, Gangarampur. 


কেমন করে যাবেন :- গঙ্গারামপুরের এই দুই দীঘির ঠিকানা দেওয়ার প্রয়োজন মনেহয় না আছে দুটি দীঘিই শহরের এক থেকে দেড় কি.মি মধ্যেই অবস্থিত। এবং শাহ আতা শাহের দরগা ধলদীঘির পারেই একদম অবস্থিত। ধলদীঘির উত্তর পারে।

১২. দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলার কয়েকটি প্রাচীন মন্দির :- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন ব্লকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কয়েকটি প্রাচীন মন্দির, এই মন্দির গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ খুবই রুগ্ন ও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় চলে গিয়েছে, কিছু কিছু টেরাকোটার মন্দির ও আছে, সব মন্দিরগুলি একসাথে এক পয়েন্টে দিলাম তার মানে এই নয় যে মন্দির গুলির সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, না নেই এই মন্দির গুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আমলে তৈরি...

১. তপন ব্লকের অন্তর্গত তিনটি মন্দির এই লিস্টে আছে একটি হল তপনের পোড়াগাছির শিব মন্দির এবং করদহের শিব মন্দির এবং ভিকাহারের মন্দির বাসিনী মন্দির। 

Tapan 

২. গঙ্গারামপুর ব্লকের অন্তর্গত দুটি মন্দির এই লিস্টে আছে একটি মহুরি কিসমত গ্রামের পঞ্চরত্ন বিষ্ণু মন্দির, এটি টেরাকোটার কাজে সজ্জিত। আরো একটি মন্দির হল প্রাণসাগর শিব মন্দির।

Gangarampur 

৩. এই লিস্টে জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের দুটি মন্দির আছে একটি হল - নদীপুরের ভগবতী মন্দির একটি হল দেবগ্রামের প্রাচীন মন্দির ।

৪. এছাড়াও আপনারা কুশমুন্ডী ব্লকের অন্তর্গত আমিনপুরে অবস্থিত পঞ্চমুখী শিব মন্দিরটি অবশ্যই দর্শন করে আসতে পারেন, হাইস্কুলের একদম নিকটবর্তী এই মন্দির, এরকম পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ কিন্তু খুবই কম দেখা যায়।

আমিনপুর পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন