পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত সমস্ত প্রোডাক্ট। All The Product Of West Bengal Got GI Tag.

।।পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত সমস্ত প্রোডাক্ট।।

ভ্রমণ পিপাসু :- GI ট্যাগ পুরো কথাটি হলো Geographical Indication. এর অর্থ হলো কোনো অঞ্চলের উৎপাদিত বা পাওয়া যায় এমন কোনো প্রোডাক্ট যেটি ওই অঞ্চলের পরিচয় বহন করে, তাকে স্পেশাল ব্যাবসায়িক নাম বা ট্যাগ দেওয়া ওই অঞ্চলের সাথে। এর ফলে উক্ত প্রোডাক্টটির পরিচিতি এবং ব্যাবসা আরো বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর TRIPS চুক্তি অনুসারে GI ট্যাগ সম্পর্কে সমস্ত নীতি নির্ধারণ হয়েছিলো। আমাদের দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী GI ট্যাগ প্রাপ্ত রাজ্য হলো কর্নাটক যাদের ৪২টি দ্রব্য এই ট্যাগ পেয়েছে। আর আমাদের রাজ্যের অনেকগুলো প্রোডাক্ট এই লিস্টে আছে এই ব্লগে সেই প্রোডাক্ট গুলো নিয়েই আলোচনা করবো... 

GI Tag products Of West Bengal 

বর্ধমানের মিহিদানা ও সিতাভোগ :- আমাদের রাজ্য থেকে যেকয়েকটি মিষ্টান্ন জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেসন (GI) ট্যাগ পেয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বর্ধমান মিহিদানা এবং সীতাভোগ। এ দুটি মিষ্টান্নের জন্য বর্ধমান শহর রাজ্য তথা গোটা ভারতে পরিচিত। বর্ধমানের মহারাজ মেহতাব চাঁদ বাহাদুরের রষকে পরিবেশনের জন্য এই দুই মিষ্টান্ন তৈরি করছিলেন বর্ধমান শহরের এক ময়রা ক্ষেত্রনাথ নাগ। লর্ড কার্জন যখন ১৯০৪ সালে এই বর্ধমান শহরে এসেছিলেন তখন তাকেও এই দুটি মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হয়েছিলো। তিনি ও e দুটি খাওয়ার খেয়ে যথেষ্ট প্রশংসা করেছিলেন, ২০১৭ সালে এ দুটি মিষ্টান্ন GI ট্যাগ পেয়েছে।


এই মিহিদানা এবং সীতাভোগ তৈরি করতে কি কি উপকরন লাগে সেগুলো একটু জেনে নি। বুঁদিয়ার আরো অংশ গুলোকে মিহিদানা বলে যা তৈরী করতে গোবিন্দভোগ চালের গুড়ো ব্যাবহার করা হয়। এছাড়াও বেসন, ঘি এবং সিরা, বর্তমানে শীতকালে নলেন গুড়ের ফ্লেভারেরও মিহিদানা পাওয়া যাচ্ছে।

প্রায় শতবর্ষ পুরনো সীতাভোগ তৈরিতেও কিন্তু গোবিন্দভোগ চালের ব্যাবহার করা তবে যেখানে যেখানে এই চাল পাওয়া যায়না সেখানে বাসমতী চালের ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সিরা, ঘি, কাজু কিসমিসের পাশাপাশি ছোটো সাইজের নিখুতি দিয়ে পরিবেশন করা হয় এই সীতাভোগ।


বর্ধমান শহরের মিহিদানা ও সিতাভোগের কয়েকটি বিখ্যাত দোকান হলো একটি গণেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এবং দেশবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, সৌদামিনি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, রাধাবল্লভ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এছাড়াও আরো এরকম অনেক দোকান আছে, যা শহরের খুঁজলে পেয়ে যাবেন। দাম মোটামোটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন, স্পেশাল টার দাম একটু বেশি।

শান্তিপুরি তাঁত :- কলকাতা শহর থেকে প্রায় ১০০ কি.মি উত্তরে নদীয়া জেলার একটি শহর এই শান্তিপুর। বৈষ্ণব সংস্কৃতির কেন্দ্র এই শান্তিপুর ও আসে পাশের অঞ্চলে বহু প্রাচীনকাল থেকেই বহু তাঁতকল ছিলো যা থেকেই জন্ম নেয় জগৎ বিখ্যাত শান্তিপুরি তাঁত। তারপর স্বাধীনতার সময়ে দেশভাগের ফলে বহু গুণী তাঁতশিল্পী এসে এখানে বসবাস শুরু করে ফলে এই তাঁতের কাপড়ের গুণগত মান আরো বৃদ্ধি পায়।


এই শান্তিপুরি তাঁতের শাড়ির এত খ্যাতির কারণ অনেক আছে যেমনি উন্নত টেকনিকের ব্যবহার, উন্নত মানের উপাদান তার সাথে তাঁত শিল্পীদের কঠর পরিশ্রম। এই শাড়ি তৈরিতে তসর ও মুগা সিল্কের পাশাপাশি, ১০০ এবং ২০০ হুকের ক্ষমতা যুক্ত মেশিনের ব্যাবহার যা খুব কম জায়গাতেই ব্যাবহার করা হয়। বিভিন্ন ডিজাইনের এবং ভ্যারাইটি ও নামের শান্তিপুরি তাঁত শাড়ি আপনারা পেয়ে যাবেন, যেমনটা আপনি ভোমরা, তেরছি, গঙ্গা যমুনা, চাঁদমালা, রাজমহল প্রভৃতি।

রায়গঞ্জের মোহিনীগঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল :- বাঙালিকে সবসময় ভেতো বাঙালি বলা হয়, তাই এই ভেতো বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় চাল নিয়ে এবার এই পয়েন্টে আলোচনা করবো। আমাদের রাজ্য থেকে যেদুটো সুগন্ধি চাল GI ট্যাগ পেয়েছে তার মধ্যে একটি হলো এই তুলাইপাঞ্জি চাল। এই তুলাইপাঞ্জি চালের চালের সুখ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে শুরু করে অলিম্পিকের মত বড় আসরেও এই চাল পৌঁছে গেছে। 


এই চালের চাষ প্রধানত হয় রায়গঞ্জ ব্লকের রুনিয়া, হালালপুর জাউনিয়া, ভাটগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায়, এখন বর্তমানে অনেক জায়গাতেই চাষ হচ্ছে। শীতকালে রায়গঞ্জের দুটি খাওয়ারের খুব চল আছে ঘি দিয়ে তুলাইপাঞ্জি চালের গরম গরম ভাত আর সাথে রায়গঞ্জের বিঘোরের বেগুন ভাজা, আহা সত্যি অমৃত। এই বিঘোরের বেগুন সম্পর্কে অনেকে হয়তো জানেন না, ৫০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কিলো পর্যন্ত ওজনের এই বিচি ছাড়া বিঘোরের বেগুন যার স্বাদ অতুলনীয়। শীতকালে কেউ যদি রায়গঞ্জ আসে তাহলে এই দুটি জিনিস কিন্তু একদমই নিয়ে যেতে ভুলে না। তার ওপর উপরি পাওনা কুলিক পক্ষীনিবাসের পাখি।

এবার আসি তুলাইপাঞ্জি চালের কথায় - এই ধানের ওপরে সাদা সাদা সুঙ থাকে দূর থেকে দেখতে তুলোর মত লাগে যা থেকেই নাম হয়েছে তুলাইপাঞ্জি এছাড়াও আরো অনেক এরকম কথা প্রচলিত আছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করার পর ২০১৮ সালে এই চালকে GI ট্যাগের তকমা দেওয়া হয়েছে। যার জন্য রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর জেলার পাশাপাশি গোটা উত্তরবঙ্গের গৌরব কিন্তু অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কলকাতার রসগোল্লা :- বাঙালিকে গোটা বিশ্ব তথা ভারতবাসি যদি কয়েকটি কারণে চিনে থাকে তার মধ্যে একটি এই রসগোল্লা। বাইরের রাজ্য থেকে কেউ যদি কলকাতায় আসে তাহলে কিন্তু রসগোল্লা ও মিষ্টি দই খেতে একদমই ভুলে না। বাঙালি চির কালই মিষ্টি তৈরিতে এবং খেতে ওস্তাদ। সেইজন্য পশ্চিমবঙ্গের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকমই প্রচুর দোকান সেরকমই এক ময়রার দোকান থেকে উদ্ভব হয়েছিল বাংলার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন রসগোল্লা। যার উৎপত্তি ও তৈরির ইতিহাস নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। সেই বিতর্ক পৌঁছে যায় দুটি রাজ্যের মধ্যে। বাংলা না ওড়িশা কে এই রসগোল্লার প্রকৃত স্বত্বাধিকারী যা নিয়ে  লড়াই কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা GI ট্যাগ কমিটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দাবি গুলো মেনে ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বরে কলকাতার রসগোল্লাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।


 নকসীকাঁথা :- নকসীকাঁথা হলো সুতোর সাহায্যে বিভিন্ন কাপড়ের ওপরে বিভিন্ন ডিজাইনের এমব্রয়ডারি কাজ। এটি বাংলার একদম নিজস্ব হাতের কাজ, যার কাজ খুবই সুক্ষ্য ও নিপুণ। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশ এবং আসামের কিছু অঞ্চলে এই কাজ হয়ে থাকে।


নকসী কথাটি এসেছে বাংলা শব্দ নকসা থেকে, কোনো কাপড় বা শাড়ির ওপরে বিভিন্ন রঙ বেরঙের সুতো দিয়ে বিভিন্ন কারুকাজ ফুটিয়ে তোলা হয়। এই সমস্ত কাজে বাড়ির মহিলাদেরই বেশি মাত্রায় দেখা যায়। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে কৃষ্ণ দাস কবিরাজের লেখা চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে এই নকসীকাঁথার উল্লেখ পাওয়া যায়। বিখ্যাত কবি জসীমুদ্দিন নকসীকাঁথা নিয়ে লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা নকসীকাঁথার মাঠ সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। ২০০৮ সালে আমাদের রাজ্যের এই নকসীকাঁথারকে GI ট্যাগ দেওয়া হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে এই ১৪ই নভেম্বর দিনটিকে রসগোল্লা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। আবার ১৪ নমস্কার তারিখই কিন্তু ডায়াবেটিস দিবস, শুনে হয়তো অবাক হয়েছেন তাই না? কিন্তু এটাই কিন্তু সত্যি। এই রসগোল্লা তৈরি প্রথম কার হাত দিয়ে এবং কোথায় হয়েছিলো তা নিয়েও লোকটি বিভিন্ন মতামত আছে। বেশিরভাগ মানুষের মতে কলকাতার বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাসই এই রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা। আবার অনেকের মতে নদিয়ার ফুলিয়ার হারাধন ময়রা আদি রসগোল্লার আবিষ্করতা। আবার কারো কারো মতে রসগোল্লার আদি উৎসস্থল বাংলাদেশের বরিশাল। তবে বিতর্ক যায় থাক না কেনো এই রসগোল্লা যে চীরকালই বাংলার এবং বাঙালির সেটা নিশ্চিত ভাবে বলাই যায়।

বালুচুরী শাড়ি :- ভারতে তাঁতের শাড়ির যদি নাম নেওয়া যায় সেই লিস্টে একদম প্রথমের দিকে থাকবে এই বালুচুরী শাড়ি। বালুচুরী শাড়িকে বলা হয় - "Most Loveliest and Most Charming of All Silk Of India" এই শাড়ির উৎপত্তি মুর্শিদাবাদে নবাবী আমলে হলেও এর বর্তমানে কেন্দ্র বীরভূমের বিষ্ণুপুর শহর।



প্রায় ৩৫০ বছর পূর্বে মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ তার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করলে তিনি পূর্ব বঙ্গের ঢাকা থেকে কয়েকজন গুণী তাঁত শিল্পীকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসেন। তাঁত শিল্পকে উন্নত আর দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই মুর্শিদাবাদের ভাগীরথীর তীরে বালুচর নামক গ্রামে তাদের বসবাস স্থাপন করেন, সেই থেকেই এই শাড়ির নাম এসে বালুচুরী। পরবর্তীতে ভাগীরথীর বন্যাতে এই গ্রাম নদীর গর্ভে তলিয়ে গেলে তখন এই শিল্পীরা মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূমের বিষ্ণুপুর চলে আসেন, তখন বিষ্ণুপুর ছিল মল্ল রাজাদের রাজধানী। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই তাঁত শিল্পী আরো সমৃদ্ধি লাভ করে। ব্রিটিশ আমলে এই শিল্পের প্রসার অনেকটা কমে যায়। বিখ্যাত কয়েকজন বালুচুরী শিল্পী যাদের হাতে এই শিল্প আরো গুণগত দিক আরো উৎকৃষ্ট হয় তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন - শুভ ঠাকুর, অক্ষয় কুমার দাস, প্রমুখ।

স্বাধীনতার পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগে এবং নিখিল ভারত খাদি দফতরের উদ্যোগে এই শিল্পের উন্নতিতে আরো বড় ভূমিকা পালন করে। নতুন নতুন আধুনিক টেকনিকের উদ্ভাবন হয়, আধুনিক যন্ত্রের আবিষ্কার এই শিল্পের উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১১ ভারত সরকার এই বালুচুরী শাড়িকে GI ট্যাগ ও দিয়েছে। এই শাড়ির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ই হচ্ছে পাল্লু আর উন্নত টেকনিক জালা। একটি ভালো মানের বালুচুরী শাড়ি তৈরি করতে প্রায় ২০ দিনের মতো সময় লেগে যায় কিন্তু বর্তমান আধুনিক টেকনলজির ব্যাবহারে তা এখন ৭-১০ দিনেই হয়ে যাচ্ছে।

বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা :- বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি হেরিটেজের প্রধান কেন্দ্র এবং প্রাচীন শহর। মল্লভূম রাজাদের রাজধানী ছিল বাঁকুড়া জেলার এই শহর। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গোটা বিষ্ণুপুর জুড়ে গড়ে প্রচুর টেরাকোটার মন্দির । ধীরে ধীরে এই বিষ্ণুপুর শহর টেরাকোটার প্রধান হাবে পরিণত হয়।


বিষ্ণুপুর থেকে মাত্র ১৩ কি.মি দূরে ছোট্টো একটি গ্রাম পাঁচমুড়া যা টেরাকোটার সামগ্রী তৈরীর জন্য সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। গোটা বিষ্ণুপুর জুড়ে টেরাকোটার বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি হলেও এই পাঁচমুড়া গ্রামের তৈরি পোড়া মাটির ঘোড়া সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। বাঁকুড়ার ঘোড়া হিসেবে এটি বেশি পরিচিত। এই নামে GI ট্যাগ ও পেয়েছে ২০১৮ সালে। এই বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের এই ঘোড়াটি বর্তমানে জাতীয় এবং রাজ্যের Handicrafts লোগো তে পরিনত হয়েছে। রাজ্য বা কেন্দ্রের Handicrafts দফতরের সরকারি সাইট থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় আপনি এই ঘোড়াটি কে দেখতে পাবেন। এক সময়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের আচার অনুষ্ঠানের অংশ এই ঘোড়াটি বর্তমানে সরাসরি দফতরে সাইট থেকে শুরু করে মানুষের ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়তা করছে।

বিষ্ণুপুরে যদি আপনারা যদি ঘুরতে আসেন তাহলে এখানে দেখার মত প্রচুর টেরাকোটার মন্দির আপনারা পেয়ে যাবেন যা দেখে শেষ করতে পারবেন না, তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য মন্দিরের নাম আমি বলে দিচ্ছি অনেক হয়তো জানেন ও, শ্যামরাই মন্দির, রাসমঞ্চ, রাধেশ্যাম মন্দির, নন্দলাল মন্দির, জোড় বাংলা মন্দির, মদন মোহন মন্দির আরো অনেক, বিষ্ণুপুর ট্যুর নিয়ে আমি আলাদা একটা ব্লগ লেখার চেষ্টা করবো। আর হ্যাঁ বিষ্ণুপুরে আসলে টেরাকোটার বিভিন্ন সামগ্রী কিন্তু বাড়ি নিয়ে যেতে ভুলবেন না। বিভিন্ন মেলায় এইসব সামগ্রীর দাম কিন্তু অত্যধিক হয়।

ধনিয়াখালি বা ধনেখালি শাড়ি :- বাংলার যে তিনটে শাড়ি GI ট্যাগ পেয়েছে তারমধ্যে দুটি সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি। এবার আলোচনা করবো তৃতীয় শাড়িটি নিয়ে যেটা ধনিয়াখালি বা ধনেখালি শাড়ি নামে পরিচিত। ধনেখালি হুগলির জেলার চুঁচুড়া মহকুমার অন্তর্গত। শাড়ির জগতে সোনালী শস্য হিসেবে পরিচিত এই শাড়ি ২০১১ সালে GI ট্যাগ পেয়েছে।




মালদার আম :- মালদা যে আমের জন্য গোটা পৃথিবীতে বিখ্যাত, সেটা জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। মালদা জেলা জুড়ে প্রতিটি কোনায় এই আমের চাষ হয়ে, থাকে। মহানন্দা, কালিন্দী, টাঙ্গন প্রভৃতি নদীর ফলে সৃষ্ট উর্বর পলিমাটি এই আম চাষের পক্ষে উপযুক্ত। দেশ ভাগের ফলে মালদা বাংলাদেশের মধ্যে চলে গিয়েছে যা বর্তমানে ওই দেশের চাপাঁই নবাবগঞ্জ জেলা হিসেবে পরিচিত, এই নবাবগঞ্জ জেলাতে প্রচুর পরিমাণ আম উৎপাদন হওয়ার জন্য একে বাংলাদেশের আমের রাজধানী বলা হয়ে থাকে।


গোটা মালদা জেলা জুড়েই বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন নামের আম উৎপাদন হলেও এই জেলার প্রধান তিনটে আম GI ট্যাগ পেয়েছে। এগুলো হলো - ফজলী, হিমসাগর, লক্ষন ভোগ এই তিন প্রজাতির আম ২০০৮ সালে সরকারি ভাবে জিআই ট্যাগ পেয়েছে। এই তিনটে আম ছাড়াও ল্যাংড়া, গোপাল ভোগ, বোম্বাই কালাপাহাড়ের মত প্রচুর আম চাষ হচ্ছে। 

লক্ষন ভোগ আমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল খুবই রসালো, সুমিষ্ট মুখে দিলেই মিলিয়ে যাওয়া, এই জন্য এই আমকে মালদার আমের জগতে গলার হারের সমতুল্য। ফজলি আম যাকে ফজলি বাবু হিসেবেও ডাকা হয়, এই নামটি সম্ভবত এসেছে মালদার আরাপুর গ্রামের ফজল বিবির থেকে। ei আমের আকার অন্য যেকোনো আম থেকে একটু বৃহৎ হয়। তাই পাকতেও একটু সময় কম লাগে। মিষ্টির পরিমাণের দিক থেকে মালদা কোনো আমকে যদি সবার আগে রাখা যায় তাহলে হিমসাগর আম সবার আগে থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই আমকে ক্ষীরসপাটি বলে ডেকে থাকে।

জয়নগরের মোয়া :- এবার আসি আমাদের রাজ্য থেকে GI ট্যাগ পাওয়া আরো একটি মিষ্টান্ন জয়নগরের মোয়া নিয়ে। জয়নগরের মোয়া, নামটা শুনলেই জিভে জল চলে আসতে বাধ্য প্রত্যেক বাঙালির। দেশ বা বিদেশের যে কোনও প্রান্তের বাঙালি, এক নামেই সে চিনে নিতে পারে এই সুস্বাদু মিষ্টি কে। অবশ্য যারা মিষ্টি খেতে ভাল না বাসেন তাদের এই মোয়া ভালো না ও লাগতে পারে। আপনারা যদি খাঁটি মোয়া পেতে চান তাহলে আপনাকে আসতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর এবং তার পাশের স্টেশন বহড়ুতে। তাছাড়া আপনারা অনলাইন বা ফোনেও অর্ডার করতে পারেন 


            এই মোয়ার সাথে জয়নগর নামটি যুক্ত থাকলেও আসলে এই মোয়ার উৎপত্তি কিন্তু বহড়ু গ্রামেই। বহড়ু গ্রামেরই যামিনি বুড়োর হাত ধরে প্রথম তৈরি হয় এই মোয়া। তিনি একদিন তার নিজের জমির কনকচূড় ধানের খই এর সাথে নলেন গুড় মিশিয়ে এক মণ্ড বানিয়ে পাড়ার এক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেন যার স্বাদ সকলের খুবই পছন্দ হয় আর এইভাবেই যামিনি বুড়োর হাত দিয়ে প্রথমবারের জন্য জন্ম নেয় জয়নগরের মোয়া বহড়ুতে, পরবর্তীতে জয়নগর নামটি যুক্ত হয়ে যায় কারণ জয়নগর ছিলো সবচেয়ে বড় শহর এবং বাণিজ্য এবং বিক্রয়কেন্দ্র। 2015 তে এই মোয়া GI ট্যাগ ও পেয়েছে।


     ভিডিও লিঙ্ক - জয়নগরের মোয়া

      জয়নগরের মোয়ার প্রধান উপকরণ হলো কনকচূড় ধানের খই, খাঁটি নলেন গুড় খোয়া খির, গাওয়া ঘি, কাজু, কিসমিস,এলাচ গুড়ো,পেস্তা। তার মধ্যে প্রধান কনকচূড় ধানের খই, এবং খাঁটি নলেন গুড় যেটা জয়নগরের আসে পাশে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলায় খুব ভালো ভাবে পাওয়া যায়, যার জন্যই এই মোয়া এতটা সুস্বাদু হয়।

  

         বহরু'র সবচেয়ে জনপ্রিয় যে দোকানটি সেটা হলো সেটি শ্যাম সুন্দর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এই দোকানের খ্যাতি বাইরেও, প্রচুর নামী দামী মানুষেরা এই দোকানের মোয়ার প্রশংসা করে গেছেন।  দাদাগিরি থেকে দিদি নাম্বার 1 অনুষ্ঠানেও এই দোকানের মোয়া গিয়েছে। আর জয়নগরের সবচেয়ে পুরোনো যে দোকান সেটা হলো শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার যাকে একডাকে সবাই বুচকি বাবুর দোকান বলেই চেনে, বুচকি বাবু বা পূর্ণচন্দ্র ঘোষের হাত দিয়েই সর্বপ্রথম জয়নগরের মোয়ার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু যাই বলুক এই মোয়ার প্রধান কেন্দ্র কিন্তু বহড়ুই। বহড়ুর মোয়াই বাইরে জয়নগরের মোয়ার নামে বিক্রি হয়।

পিংলার পটচিত্র :- মেদিনীপুর জেলার একমাত্র একমাত্র জিনিস যেটি GI ট্যাগ পেয়েছে সেটা হলো পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের পটচিত্র, যার খ্যাতি কিন্তু জগৎ জোড়া। পিংলার নয়া গ্রাম যেই গ্রামে বসবাস করে 80 টি মুসলিম পরিবারের বাস পশ্চিম তারাই যুগের পর যুগ ধরে রং ও তুলির সাহায্যে ফুটিয়ে তুলছেন রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, দুর্গা - কালি এবং তার সমন্ধে ও নানা ধরনের কাহিনী। এই সুন্দর চিত্র গুলো তৈরি করতে ব্যবহৃত রংগুলি কিন্তু সব গুলোই বিভিন্ন ভেষজ রং যা তারা নিজেদের বাড়িতেই বিভিন্ন জিনিসের সাহায্যে তৈরি করে থাকে, কোনো কেমিক্যাল রং এর ব্যবহার করা হয়না। এই পটচিত্র যা,২০১৮ সালে GI ট্যাগও পেয়েছে।


এখন কিন্তু বর্তমান যুগে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জামা কাপড়, শাড়ি, গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রীর ওপরে এই কাজ গুলো ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে, এদের প্রত্যেকের পদবী চিত্রকর, আপনারা হয়তো জানেন না প্রতিটি পটচিত্রের সঙ্গে যুক্ত আছে একটি করে গান ও গল্প। প্রতি বছর জানুয়ারি মাঝামাঝি এখানে সরকারি উদ্যোগে মেলার আয়োজন করা হয় যাকে পটমায়া বলে। আসলে অবশ্যই এই মেলায় আসবেন সত্যি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

এবার আসা যাক আপনারা এখানে কেমন করে পৌঁছোবেন - যদি লোকাল ট্রেনে আসতে চান তাহলে হাওড়া থেকে মেদিনীপুর বা খরগপুর গামি যেকোনো লোকাল ট্রেন ধরে নেমে পড়ুন বালিচক স্টেশনে সেখান থেকে ছোটো গাড়ি বা ট্রেকার পেয়ে যাবেন। আর যারা বাস বা গাড়িতে আসবেন তারা ডেবরা তে নামবেন মোড় থেকে গাড়ি পেয়ে যাবেন এখানে আসার বাঁ দিক দিয়ে বালিচক হয়ে পৌঁছে যান নয়া গ্রামে।

পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ :- বাংলার হস্তশিল্পের আরো একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল এই ছৌ মুখোশ তৈরি শিল্প। এই ছৌ নাচ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা, ওড়িশার ময়ুরভুঞ্জ এবং ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা এলাকায় প্রধানত দেখা যায়। এই তিন রাজ্যেই এই নৃত্য ছৌ নৃত্য নামে পরিচিত হলেও, এই তিন জায়গার ছৌ নাচের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, পার্থক্যটা প্রধানত হয় নাচের মুখোসে।


পুরুলিয়ার এই ছৌ নাচের মুখোশ শিল্প নিয়ে এই পয়েন্টে আলোচনা করবো যা ২০১৮ সালে GI ট্যাগ অর্জনও করেছে। পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ তৈরির সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বাঘমুন্ডি ব্লকের চড়িদা গ্রাম। এই চড়িদা গ্রামের প্রায় ৪০ টির ওপরে সূত্রধর পরিবার এই ছৌ মুখোশ তৈরি করার কাজের সাথে যুক্ত। চড়িদা গ্রাম ছাড়াও এই জেলায়। আরো ২-৩ টি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে এই মুখোশ তৈরি হয়ে থাকলেও এই চড়িদা গ্রামই সবচেয়ে বড় কেন্দ্র এবং দেশ বিশেষে সর্বাধিক পরিচিত। বাঘমুন্ডির রাজ বংশের দ্বারা বর্ধমান জেলা থেকে কিছু সূত্রধর পরিবারকে এখানে এনে ছৌ মুখোশ তৈরি করার কাজের সূত্রপাত করানো হয়। ছৌ নৃত্য এই জেলার এক প্রাচীন নৃত্য যা বহু বছর ধরে চলে আসছে। ছৌ মুখোশ তৈরিতে প্রথমদিকে পাখির পালকের ব্যবহার করা হতো, এর ফলে এর ওজন এবং দাম অনেকটাই বেশি হয়ে যেতো, পরিবর্তীতে এর বদলে মাটি ও কাগজের ব্যাবহার শুরু হওয়ায় যথেষ্ট ভালভাবে ব্যাবহার যোগ্য এবং সহজলভ্য হয়েছে।

এই চড়িদা গ্রামে আসলেই আপনি দেখতে পাবেন রাস্তার দুপাশেই বিভিন্ন ছৌ মুখোশ শিল্পীদের মুখোস তৈরির কারখানা এবং দোকান। আপনি চাইলে এখান থেকে কিনে ও নিয়ে যেতে পারবেন। এখানে আসবেন কেমন করে, যারা পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় ট্যুর করবেন এই ট্যুরের মধ্যেই এই চড়িদা গ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকে, অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই গ্রাম চড়িদা। পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড এখান থেকে খুব একটা দূরে না। পুরুলিয়া আসলে এখানে তো অবশ্যই আপনাকে আসতে হবে।

দার্জিলিং এর চা :- পশ্চিমবঙ্গের সর্বপ্রথম যে দ্রব্যটিকে GI ট্যাগ দেওয়া হয়েছে সেটা হলো বিশ্ব বিখ্যাত দার্জিলিং এর চা। যে চা স্বাদে গন্ধে গোটা পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ। ২০০৪ সালে দার্জিলিং চা এই স্বীকৃতি পায়।


চা-শিল্প বিকাশের শুরু হতে আজ পর্যন্ত অনেক গবেষণা, অনেক প্রতিযোগিতা হয়েছে, কিন্তু দার্জিলিং চায়ের মতো চা তৈরি করা দূরে থাক, সৌরভে গুণগত উৎকর্ষতায় এর ধারে কাছেও আসতে পারেনি কোনো চা-উৎপাদনকারী। জিওগ্রাফিকাল ইনটেকশন অব গুডস (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৯৯) ২০০৩ সালে দার্জিলিং চা ভারতের ভারতীয় পেটেন্ট অফিসের মাধ্যমে ভারতের প্রথম পণ্য হিসাবে ২০০৪ -২০০৫ সালে জিআই ট্যাগ লাভ করে।সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে ২০০০ মিটার উচ্চতায় চীনা বীজ দিয়ে দাজির্লিং চা চাষ হয়। ভারতের মোট উৎপাদনের ৩% চা দার্জিলিং-চা। দার্জিলিংয়ে মোট ৮৩টি চা-বাগানে ২০,০০০ হেক্টর জমিতে বছরে গড়ে ১২ মিলিয়ন (এক কোটি বিশ লক্ষ) কেজি দার্জিলিং-চা উৎপাদিত হয়। শুধুমাত্র দার্জিলিং উপত্যকায় চীনা জাতের গাছ দিয়ে উঁচু পাহাড়ে চাষ করলে শারদীয় চয়নে সুমিষ্ট ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়।

বাঁকুড়ার ডোকরা শিল্প:- ডোকরা শিল্প বাঁকুড়া সহ পুরো পশ্চিম বাংলার গর্ব । ডোকরার নাম শুনলেই সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে বাঁকুড়া শহরের কাছেই অবস্থিত বিকনা গ্রাম, যেই গ্রামের খ্যাতি ডোকরা গ্রাম হিসেবে, এই গ্রামের প্রায় ১০০টি ওপরে পরিবার এই হস্তশিল্পের সাথে যুক্ত। বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে এই গ্রাম আপনি টোটো করে অথবা বাসে ও এখানে চলে আসতে পারবেন ।ডোকরা শিল্প কেন্দ্র হিসেবে বাঁকুড়া জেলার বিকনা গ্রাম বিখ্যাত হলেও আরো একটি জায়গা এই কাজের জন্য সুপ্রসিদ্ধ সেটি হলো বর্ধমান জেলার গুসকরা। গ্রাম গ্রামাঞ্চল থেকে, দেশ দেশান্তর সর্বত্র এই ডোকরা শিল্পের চাহিদা তুঙ্গে।


ডোকরা শিল্প পদ্ধতি একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ, সূক্ষ্য শিল্প কর্ম। প্রথমে শিল্পীরা পুকুর থেকে লাল বা সাদা মাটি সংগ্রহ করে ও মাটির মণ্ড তৈরি করে; এর পর মাটি দিয়ে হাতে করে একটি অবয়ব তৈরি করে। অবয়বটির উপর মোম, তেল এর প্রলেপ দেওয়া হয় । শেষে নরম মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়। এর পর এটিকে পোড়ানো হয়। ফলে মোম গলে একটি ছিদ্র দিয়ে বাইড়ে বেরিয়ে আসে ।এর পর ওই ছিদ্র দিয়ে গলানো পিতল ঢালা হয় এবং শক্ত হলে মূর্তিটি সংগ্রহ করা হয়। মূর্তিটি এর পর শিরিষ কাগজ দ্বারা ঘষে উজ্জ্বল করা হয়।

এই শিল্পের ইতিহাস প্রায় ৪০০০ বছরের পুরোনো মনে করা হয় ছত্রিশগড়ের বস্তার এলাকা থেকে শিল্পীরা এসে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। সিন্ধু সভ্যতার মহেন্জোদারোতে যে প্রাপ্ত Dancing Girl এর যে মূর্তিটি পাওয়া যায় যেটা ডোকরা শিল্পের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন। বাঁকুড়ার বিকনা এবং বর্ধমানের গুসকরা ছাড়াও মেদিনীপুর পুরুলিয়ার কিছু জায়গায় এই শিল্প আপনারা দেখতে পাবেন।

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডীর মুখোস শিল্প:- দুই দিনাজপুরের কিছু অংশে প্রায় ২৫০ বছর ধরে চলে আসা গমিরা নাচের প্রচলন আছে যাকে 'মুখা নাচ বা মুখা খেল ও বলে থাকে। সেই মুখা নাচের মুখোস তৈরির Tradition কে এখনো বজায় রেখেছে মহীষবাথানের খুনিয়াডাঙ্গি গ্রামের প্রায় কয়েকশো লোক। যদিও এই নাচ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তা সত্ত্বেও দুই দিনাজপুর জেলার কিছু অংশে এখনো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন এলাকায় এই গমীরা নাচের আসর বসে। এখানকার বিশেষ করে কালি ঠাকুরের মাস্ক গুলো খুবই প্রসিদ্ধ যেমন আমাত কালি, ঝুমুর কালি চামার কালি ।

এই মুখোস তৈরির শিল্প ২০১৮ সালে GI ট্যাগও পেয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে কয়েকশো নিপুণ শিল্পী দ্বারা এই মুখোশ তৈরি শিল্প এখনো চলে আসছে। গ্রামে আসলেই দেখতে পাবেন রাস্তার দু ধারের কয়েকটি বাড়িতে কাঠের ওপরে সুদক্ষ্য শিল্পী এই বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন আকারের মুখোখ তৈরি চলছে। প্রধানত ট্র্যাডিশন অনুযায়ী নিম কাঠ দিয়ে এই কাজ করার নিয়ম হলেও,, এখন বিভিন্ন ধরণের গাছের কাঠ দিয়েও এই কাজ হচ্ছে আপনি চাইলে তাদের কাছ থেকে কিনে নিতেও পারেন। বর্তমানে এখানে UNESCO এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এখানে 'মহীষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্প সমবায় সমিতি' গঠন করা হয়েছে এই সমিতি এখানে একটি Craft Centre ও গড়ে তুলেছে এই শিল্পকে দেশ ও বিদেশের দরবার তুলে ধরার জন্য, এখানে আসলে মুখোস তৈরির পুরো পদ্ধতি এখানে দেখতে পাবেন, তার পাশাপাশি এখানে বিপণন কেন্দ্র ও গড়ে তোলা হয়েছে। 

যোগাযোগ করতে পারেন - পরেশ চন্দ্র সরকার - 8637535554।

 শঙ্কর দাস - 9593358360

শান্তিনিকেতন চর্মজাত শিল্প :- প্রায় শতবর্ষ পুরোনো শান্তিনিকেতন এই চামড়ার শিল্পকে ২০০৮ GI তকমা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই শিল্পের উন্নতির জন্য গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। লেদারের বিভিন্ন ব্যাগ, পার্স এই শিল্পের প্রধান আকর্ষন। লেদারের জিনিসের ওপরে শিল্পীদের দ্বারা বিভিন্ন ভেষজ রং এর ডিজাইন এই শিল্পকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। 




পশ্চিম মেদিনীপুরের মাদুর শিল্প :- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং জুড়ে এই মাদুর শিল্পের প্রচলন আছে যা বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মানও পেয়েছে। এর প্রচলন মুর্শিদকুলি খাঁ আমল থেকে ধরা হয়, সেই সময় মাদুর ও ম্যাটের চাহিদার শিল্প আরো ফুলে ফেঁপে ওঠে। 2018 তে এই শিল্প Gig ট্যাগ পায় ।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন