।।কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা।।
ভ্রমণ পিপাসু:- হিন্দুদের কাছে পবিত্র ধর্মীয়যাত্রা গুলোর মধ্যে যেমন আছে, চারধাম, অমরনাথ, পঞ্চকেদার যাত্রা আছে, এই যাত্রা গুলো যেমন, হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে অনেকটা পবিত্র এবং কষ্টসাধ্য এবং অনেক দিন সাপেক্ষ ব্যাপার। এই চারধাম, কেদারনাথ, পঞ্চকেদার নিয়ে আমার লেখা ব্লগ গুলো আছে আমার এই সাইটে, আমি নিচে লিঙ্ক দিয়ে দেবো আপনারা দেখে নিতে পারেন।
আমি যেটা বলছিলাম এই যাত্রা গুলো যথেষ্টই কষ্টসাধ্য এবং দিন সংখ্যাও অনেকটা লাগে। কিন্তু এখন যেই যাত্রা নিয়ে আলোচনা করবো এই কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা কিন্তু ওপরের যে যাত্রা গুলো থেকে সব কিছুর দিক থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে। এই যাত্রা পথে আপনাকে অনেকটা পথই ট্রেক করে যেতে হবে তার সাথে সাথে এই যাত্রায়, যাত্রার দিন সংখ্যা এবং খরচা ও অনেকটাই পড়ে যাবে। এসবের পরে এই যাত্রায় অনেক প্রসেস, অনেক নিয়ম, স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তবেই আপনি এখানে যাওয়ার পারমিশন পাবেন, এই ব্লগে এই যাত্রা সম্বন্ধে সমস্ত কিছুই পুংখানুপুমখ৷ ভাবে বলে দেওয়ার চেষ্টা করবো, যাতে আপনাদের মনে অন্য কোনো প্রশ্ন না থাকে, আর অন্য কোনো ব্লগ বা ভিডিও দেখার প্রয়োজন হয়।
হিন্দু, এবং বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র এই মানস সরোবর। হিন্দুদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের মানুষেরাও এখানে এসে থাকেন। ধর্মীয় কারণেই চীন সরকারের পক্ষ থেকে এই কৈলাস পর্বতে পর্বতাহন করতে অনুমতি দেয়না,তাছাড়া এই যথেষ্টই খাড়া সেই জন্য মাউন্ট এভারেস্ট থেকে উচ্চতায় অনেকটাই কম হওয়া সত্ত্বেও এই কৈলাস পর্বত জয় করতে আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি। হিন্দুরা যেমন একাধারে এই জায়গাকে দেবাধিদেব মহাদেব দেবী এবং পার্বতীর নিজস্ব বাসস্থান বলে মনে করে তেমনি বৌদ্ধরা ও তাদের গুরু রিম্পোছে পদ্মসম্ভবা সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে মনে করে তেমনি জৈনদের মতে তাদের প্রথম তীর্থঙ্কর এই কৈলাস পর্বতের কোলে মোক্ষ লাভ করেছিলেন, তাহলে হিন্দু থেকে শুরু করে বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের মানুষের কাছেই এই জায়গা খুবই পবিত্র এখানে পৌঁছোনো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও এখানে আসা তাদের কাছে পূন্যের কাজ।
কৈলাস মানস সরোবর কোথায় অবস্থিত :- অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই জায়গাটি বর্তমানে চিনের অধিকার কাছে। মুলত এই জায়গাটি তিব্বতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিব্বত চিনের অধিকারে আসার পর থেকে এটি চিনের একটি স্বায়তশাসিত প্রদেশের পরিনত হয়েছে। চিনের দখলের পূর্বে ভারতীদের মানস সরোবরে আসা খুবই সহজ ছিল, কিন্তু চিনের তিব্বত দখলের পর থেকেই এই যাত্রা অনেক আইন কানুন ও নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়েছে।
Rakshas Tal and Mansarovar Lake. |
কৈলাস পর্বত তিব্বত অটোনোমাস রিজিয়নের বুরাং কান্ট্রির অন্তর্গত এর উচ্চতা ৬৭১৪ মিটার। এই কৈলাস পর্বত এবং মানস সরোবর আমরা এই নামে ডাকলেও তিব্বতি এবং চৈনিক ভাষায় এর নাম ভিন্ন।এই মাউন্ট কৈলাসের বরফগলা জলে সৃষ্টি হয়েছে পবিত্র লেক মানস সরোবর। মানস সরোবর ছাড়াও পাশে আরো একটি লেক অবস্থিত যার নাম রাক্ষসতাল, যেটিও কৈলাস পর্বতের হিমবাহ গলা জলেই তৈরি। এই অঞ্চল থেকেই কিন্তু এশিয়ার তিনটি বড় বড় নদীর উৎপত্তি, সিন্ধু, শতদ্রু এবং ব্রহ্মপুত্র।
কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পথ :- কৈলাস মানস সরোবর আপনি তিন দিক দিয়ে যেতে পারেন। ভারত হয়ে গেলে দুটি রাস্তা আছে একটি উত্তরাখন্ড ধারচুলা লিপুলেখ পাস হয়ে, দ্বিতীয়টি সিকিমের নাথুলা পাস হয়ে, এই রুটটি নতুন খুলেছে, সবচেয়ে প্রাচীন রুট এই লিপুলেখ পাস হয়েই। আপনি যদি লিপুলেখ পাস হয়ে যেতে চান তাহলে রাস্তা একটু কম হবে, কিন্তু ট্রেক করার পরিণাম একটু বেশি। আর নাথুলা পাস হয়ে গেলে ট্রেক রুট কম, রাস্তাও খুব ভালো, কিন্তু রাস্তার দৈর্ঘ্য অনেক বেশি, পুরো যাত্রা পথে সময় অনেক বেশি লেগে যাবে।
আর তৃতীয় রাস্তাটি হল নেপাল হয়ে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে রসুয়াগড়ি বর্ডার হয়ে আপনাদের যাত্রা শুরু হবে। নেপালের অনেক ট্রাভেল কোম্পানী এই কৈলাস যাত্রা করে থাকে তাদের সাথে গেলে আপনাদের ট্রাভেল খরচা অনেকটাই কমে যেতে পারে।
কৈলাশ মানস সরোবর যাত্রা কত দিনের হয় :- আমি আগের পয়েন্টে বলেছিলাম এই যাত্রার তিনটি রুট আছে, প্রথমে আসি আমাদের দেশের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দুটি রুট নিয়ে, আপনি যদি লিপুলেখ পাস হয়ে যান তাহলে এই রুটে ট্রেকিং পরিমাণ একটি বেশি প্রায় ২০০ কি.মি মতো। এই রুট হয়ে গেলে আপনাদের পুরো যাত্রায় প্রায় ১ মাস সময় লেগে যাবে। অপরদিকে নাথুলা পাস হয়ে গেলে ট্রেক তুলনামূলক ভাবে অনেক কম এবং এই রুটে সময় লাগবে প্রায় ২১ দিন, রাস্তার দুরত্ব বেশী হওয়া সত্ত্বেও এই রুটে রাস্তা একদমই দুর্দান্ত থাকার দরুন সময় অনেক কম লাগে, সেইজন্য বয়স্কদের এই রুট দিয়েই যাওয়ার পারমিশন দেওয়া হয়। আর আপনি যদি নেপাল হয়ে যান তাহলে কাঠমান্ডু থেকে কাঠমান্ডু আপনার ১৪ দিন সময় লেগে যাবে, এর সাথে কাঠমান্ডু যাওয়া আসা টাও আমাদের অ্যাড করে নিতে হবে।
এই যাত্রায় আসার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজন :- কৈলাস পর্বত যেহেতু চিনে অবস্থিত সেহেতু এই যাত্রায় যাওয়ার জন্য আপনার সর্বপ্রথম যে জিনিসটা লাগবে সেটা হলো পাসপোর্ট, ও ভিসা যদিও ভিসা আপনাকে করার দরকার নেই। এছাড়া লাগবে মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেট, যার জন্য আপনাকে দুদিন আগেই দিল্লী আসতে হবে, এই ফিট সার্টিফিকেট পেলে তবেই আপনি এই যাত্রায় যাওয়ার পারমিশন পাবেন। এছাড়াও ৬ কপি ছবি, আইডেন্টিটি বন্ড ১০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে, কোনো 1st ক্লাস সরকারি অফিসার অনুমতি পত্র, এবং আপনার Concent letter লাগবে, অপমান যদি যাত্রায় গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা বা কোনো হয়ে যায়, তার দায় আপনার। মোটামুটি এই জিনিস গুলো আপনাদের লাগবে কৈলাস যাত্রাতে।
যাত্রার ব্যাবস্থাপনা কারা করে থাকে :- একক ভাবে কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার এই ট্যুর করে না, এটি একটি মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সরকারি ভাবে এই যাত্রার ব্যবস্থা করে থাকে ভারত সরকার। ভারত সরকারের বিদেশ দফতর এবং তাকে সাহায্য করে ITBP জওয়ানরা এবং BRO। ITBP ( indo-Tibetan Bordar Police) যেহেতু চীনা বর্ডার দেখভালের দায়িত্বে আছে সেহেতু সিকিউরিটির ব্যাপারটা তাদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া।
এছাড়াও ট্যুর করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি ট্যুর এজেন্সির সাহায্য নিতে হবে, আপনারা নিজের প্ল্যানে এই যাত্রায় যেতে পারবেন না। সরকারি হলে KMVM ( Kumayun Mandal Vikas Nigam), এবং বেসরকারি ও বহু ট্রাভেল কোম্পানি পেয়ে যাবেন যারা কৈলাস মানস সরোবর প্যাকেজ ট্যুর করে থাকে, আপনি KMVM সাইটে গিয়ে সমস্ত details পেয়ে যাবেন, আমি লিঙ্ক দিয়ে দেবো।
যাত্রাপথের বিবরন :- কৈলাস মানস সরোবর যাত্রার যে তিনটে রুট আছে, এই রুটেরই যাত্রা পথের বিবরণ দিন অনুসারে আমি পয়েন্টে তুলে ধরবো, প্রথমে নেপাল হয়ে যাত্রার যে রুট আছে সেটা আলোচনা করবো শেষে ইন্ডিয়ার দুটি রুট......
নেপাল হয়ে - নেপাল হয়ে যাত্রা পথের বিবরণ আমি কাঠমান্ডু থেকে শুরু করছি আপনারা কাঠমান্ডু যেকোনো উপায়ে বাই রোড বা ফ্লাইটে পৌঁছতে পারেন তারপর একদিন আপনাকে কাঠমান্ডুতে রেস্ট নিয়ে পরেরদিন থেকে যাত্রা শুরু হবে আপনাদের।
দ্বিতীয় দিনে আপনাকে বাসে করে যেতে হবে, আপনার স্টপেজ হবে, প্রায় ৬,৭ ঘন্টা দূরে অবস্থিত ধুনচে তে। এখানেই আপনাদের আজকের রাত্রিবাস হবে।
পরের দিন খুব সকাল সকাল যাত্রা শুরু হবে তিব্বতের কেরুং এ, যাত্রা পথ প্রায় ১২৫ কি.মি মতো, তার আগে রাসুয়াগাধি বর্ডারে আপনার ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস্ এর কাজ সম্পন্ন করতে হবে। নেক্সট দিন কেরুং থেকে বেরিয়ে নাইট স্টে সাগাতে।
এরপর সাগা তে সকালে ব্রেকফাস্ট করে আপনাকে বেরিয়ে পড়তে হবে একদম মানস সরোবরের উদ্দেশ্যে, সেদিন নাইট হল্ট মানস সরোবরের কাছেই কোনো টেন্টে। এইদিনের জার্নি একটু অন্য দিনের থেকে বেশী হবে, প্রায় ৭-৮ ঘন্টা ।
পরের দিন সকালে উঠেই মানস সরোবরে স্নান সেরে নিতে পারেন চাইলে পূজা ও দিতে পারেন, পুরোহিতের ও ব্যবস্থা থাকে। এরপর দারচেনের উদ্দেশে যাত্রা, রাত্রিবাস এখানেই।
যাত্রার নেক্সট দিন আপনাদের বহু প্রতিক্ষিত কৈলাস পর্বতের দর্শনের সৌভাগ্য হবে। এদিন আপনি কৈলাস দর্শনের পাশাপাশি কৈলাস পরিক্রমাও করতে পারেন প্রায় ১০০ কি.মি মতো যাত্রা ৩ ঘণ্টার মত লাগে। রাত্রিবাস আপনাদের দারচেনে।
Kailash Porikroma. |
পরের দিনের যাত্রায় আপনাকে ট্রেক করতে হবে ২২ কিমি মত রাস্তা, এই ট্রেক করে আপনি পৌঁছোবেন জুথুলফুকে। নাইট স্টে এখানেই। এরপরের দিনেও আপনাদের কিছুটা পথ ট্রেক করতে হবে বাকি অংশ গাড়ি করে পৌঁছোবেন সাগাতে।
সাগা থেকে নেক্সট মর্নিং কেরুং এর উদ্দেশ্য যাত্রা, এবং তারপরের দিন কেরুং থেকে কাঠমান্ডু। এভাবেই আপনাদের কৈলাস মানস সরোবর যাত্রার ইতি ঘটবে। এই পুরো যাত্রাপথে প্রায় ১৩-১৪ দিন লেগে যাবে।
লিপুলেখ পাস হয়ে - এবার আসি আমাদের দেশের মধ্যে দিয়ে অর্থাৎ উত্তরাখন্ডের লিপুলেখ পাস হয়ে কৈলাস যাত্রা নিয়ে। এই যাত্রা আপনাদের শুরু হবে দিল্লী থেকে তার আগে আপনাদের মেডিকেলের টেস্ট ছাড়াও অনেক প্রসেস আছে সেগুলো পরের পয়েন্টে আলোচনা করবো। এই যাত্রার পুরো ব্যবস্থাই করবে KMVN। দিল্লী থেকে বাসে আলমোরা হয়ে আপনি পৌঁছোবেন ধারচুলাতে এই পুরো যাত্রাপথ অতিক্রম করতে আপনাদের ৩ দিন লেগে যাবে। পরের দিন আপনারা ধারচুলা থেকে পৌঁছোবেন গাড়ি করে পাংলা, এই পাংলা পর্যন্তই আপনারা গাড়ি যেতে পারবেন, এরপর থেকেই আপনাদের হাঁটা পথে যাত্রা শুরু হবে।
পাংলা থেকে আপনাদের ৩ দিনের ট্রেক করতে হবে, এই তিনদিনে আপনি নাভিদাং হয়ে পৌঁছোবেন চীনা বর্ডার লিপুলেখ পাস। মাঝে আপনাদের রাত্রি বিশ্রাম হবে, বুড়ি, কালাপানি এবং নাভিদাং, এখানকার উচ্চতা প্রায় ১৪-১৫০০০ হওয়ার এখানে ট্রেক করতে আপনাদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
Mansasarovar Yatra Lipulekh Pass. |
লিপুলেখ বর্ডারে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে আপনি পৌঁছোবেন তিব্বতের তাকলাকোট, যাত্রা আবার আপনাদের গাড়িতে শুরু হবে, এখন থেকে রাস্তা ও ভালো আপনাদের খুব একটা অসুবিধা হবে না। তাকলাকোট থেকে পরের দিন গাড়িতে আপনাদের নিয়ে যাওয়া হবে মানস সরোবর। পাশেই আছে রাক্ষসতাল লেক। এই রাক্ষসতাল লেকের জল লবনাক্ত হলেও মানস সরোবরের জল কিন্তু একদমই স্বাদু। এখানে আপনি স্নান পূজা সম্পন্ন করে দারচেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন কারণ এদিন আপনাদের দারচেনেই থাকতে হবে। দারচেন থেকেই পরের দিন আপনাকে যেতে দারাফুক, দারাফুক থেকেই আপনাদের ১০০ কি.মি কৈলাস পরিক্রমা শুরু হবে যা এসে দারাফুকেই শেষ হবে। একইরকম ভাবেই আপনারা আমার সেম রুট হয়ে ফিরে আসবেন।
নাথুলা পাস হয়ে - এবার আসা যাক নাথুলা পাস হয়ে এই মানস সরোবর যাত্রার বিবরণ । এই নাথুলা পাস হয়ে রুটটা কিন্তু নতুন ওপেন হয়েছে, প্রাচীন কাল থেকে এই লিপুলেখ পাস হয়েই যাত্রীরা কৈলাস পৌঁছতো। আপনাদের নাথুলা পাস হয়ে যাত্রাও শুরু হবে দিল্লী থেকে সেইজন্য প্রায় ৩ দিন আগেই আপনাকে দিল্লী পৌঁছে যেতে হবে।
Nathula Pass. |
যাত্রার প্রথম দিন আপনাকে ফ্লাইটে নিয়ে যাওয়া হবে বাগডোগরা, সেখান থেকে বাইরোড আপনি পৌঁছোবেন সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে, যাত্রাপথ প্রায় ১৬০ কি.মি।
যাত্রার দ্বিতীয় দিন গ্যাংটক থেকে ১৫ মাইল, তৃতীয় দিন ১৫ মাইল থেকে সারাথাং, চতুর্থ দিন সারাথাং থেকে নাথুলা বর্ডার। আপনাদের High Altitude(AMS) সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য খুব ধীরে ব্রেক জার্নি করে আপনাদের High Altitude এলাকার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
ওই দিনই বর্ডারের প্রসেস শেষ করার পর অপনাদের নিয়ে যাওয়া হবে তিব্বতের লাজিতে এখানেই আপনাদের নাইটস্টে। পরের দিন লাজি থেকে ৪৭০ কি.মি পথ অতিক্রম করে আপনি পৌঁছোবেন তিব্বতের ডোংবাতে। এখানেই আপনাদের রাত্রিযাপন।
পরেরদিন আপনি পৌঁছোবেন ডোংবা থেকে দারচেন, পথে আপনি মানস সরোবর লেকের দর্শনও করে নেবেন, রাত্রিবাস দারচেনে। পরের দিন আপনি দারচেন থেকে আসবেন দেরাফুকে, এখানেই আপনারা কৈলাস দর্শন এবং পরিক্রমা করতে পারবেন। দেরাফুক থেকে এবার আপনাদের ফেরার পালা, ফিরবেন সেই একইরকম ভাবে এবং একই রুটে। এই পুরো যাত্রা পথে দিল্লী থেকে দিল্লী আপনাদের প্রায় ২১ দিন লেগে যাবে। কিন্তু এই পথে ট্রেকের পরিমানটা অনেকটাই কম এবং যাত্রাপথ ও সহজ।
যাত্রার পুরো পুরো প্রসেস :- সাধারণত ১৮ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত যেকোনো ভারতীয় এই যাত্রাতে যেতে পারে তার আগে আপনাকে মেডিকেল টেস্টের ওপর দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সবার প্রথমে আপনাকে KMVN এর অফিসিয়াল সাইটে আপনাকে অ্যাপ্লাই করতে হবে সাথে জমা করতে হবে ৫০০০ টাকা যেটা সম্পূর্ন অফেরৎ যোগ্য। আপনি যদি যাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন সেটা আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে এরপর বাকি টাকাটা আপনাকে জমা করতে হবে KMVN এর ব্যাংক একাউন্টে। যাত্রা ডেটের মোটামোটি ৩,৪ দিন আগে আপনাকে দিল্লী চলে আসতে হবে, যাত্রা ডেট আপনাকে আগেই জানিয়ে দেবে তারা।
দিল্লীতে পৌঁছানোর পর আপনারা শুরু হবে মেডিকেল টেস্ট এবং ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপার। মেডিকেল টেস্টের পুরো ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রন করে ITBP এবং DHLI(Delhi Heart and Lung Institute), বিভিন্ন ধরনের টেস্ট আপনাকে তারা করাবে যেমন, ব্লাড সুগার, প্রেসার, হিমগ্লোবিন আরো অনেক। এই টেস্ট গুলোতে পাস করলেই আপনি এই যাত্রায় যাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন, নাহলে বাড়ি ফেরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, ৫০০০ টাকা বাদ রেখে আপনার পুরো টাকা ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
মানস সরোবর যাত্রার কত খরচা হতে পারে :- কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুরোপুরি একটা প্যাকেজ ট্যুর। এই যাত্রায় আপনি নিজে থেকে কোন কিছু বুক করার দরকার নেই, সমস্ত কিছুই আপনার প্যাকেজ ট্যুরে ধরা থাকবে, যার মধ্যে include থাকে যাতায়াত, খাওয়া দাওয়া, থাকার ব্যবস্থা ভিসা সমস্ত কিছু। কিছু কিছু জিনিস আপনাকে নিজেই ব্যবস্থা করতে হবে যার জন্য কিছু খরচা আপনাদের এক্সট্রা লাগবে ।যার জন্য বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ট্যুর এজেন্সি আছে। ভারত ও নেপালের বিভিন্ন ট্যুর এজেন্সি এই মানস সরোবর যাত্রার ব্যবস্থা করে থাকে।
New Route Mansarovar. |
আপনারা যদি লিপুলেখ পাস হয়ে যান তাহলে আপনাদের খরচা প্রায় ১৯০০০০ টাকার মতো লাগবে আর আপনি যদি নাথুলা পাস হয়ে যান সেটায় খরচা আরো একটু বেশি পড়বে প্রায় ২৫০০০০ টাকা। যাত্রীদের কয়েকটা দলে বিভক্ত করে তাদের ডেট অনুযায়ী পাঠানো হয় প্রতি দলে প্রায় ৫০-৬০ জন থাকে। লিপুলেখ পাস হয়ে প্রায় ১৮টা মত দল এবং নাথুলা পাস হয়ে ১০ টা করে দল প্রতি বছর যায়, এগুলো বছর অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন