-: আদি কৈলাস ও ওম পর্বত যাত্রা :-
ভ্রমণ পিপাসু :- দেবাধিদেব মহাদেবের সাথে জড়িত পঞ্চ কৈলাস পর্বতের অন্যতম আদি কৈলাস এবং সাথে পার্শ্ববর্তী ওম পর্বত যাত্রা নিয়ে যাত্রার সমস্ত তথ্য নিয়ে থাকছে এই ব্লগ। ভগবান শিবের নিজস্ব বাসস্থান বলা হয়ে থাকে এই কৈলাস পর্বত কে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আছে পাঁচটি কৈলাস পর্বত যাদের একত্রে পঞ্চ কৈলাস বলা হয়ে থাকে, এই পঞ্চ কৈলাস নিয়ে পরের ব্লগে নিশ্চয়ই আলোচনা করবো, এই ব্লগটি শুধুমাত্র পঞ্চ কৈলাসের অন্যতম আদি কৈলাস যাত্রা নিয়ে, যা অবস্থিত উত্তরাখন্ড রাজ্যের পিথোরাগড় জেলায়।
পৌরাণিক মত অনুসারে ভগবান শিব এই আদি কৈলাসে ধ্যান করার জন্য এসে থাকতেন, সেই কারনে হিন্দুদের এই পর্বতের আলাদা একটা আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য আছে। এর পাশেই অবস্থিত ওম পর্বত যেটি ও উত্তরাখন্ডের ভারত - নেপাল - চীন সীমান্তে অবস্থিত। এটি পৃথক একটি পর্বতমালা, যার ওপরে বরফের ওম আকৃতির জন্য এটিও ধার্মিক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই এই ব্লগে আদি কৈলাস এবং ওম পর্বত যাত্রা নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ থাকছে।
কোথায় অবস্থিত এই আদি কৈলাস এবং ওম পর্বত :- ভারতের উত্তরাখন্ডের রাজ্যের যে দুটি বিভাগ আছে, তার মধ্যে কুমায়ুন বিভাগের পিথোরাগড় জেলার একদম চীন - ভারত এবং নেপালের বর্ডারে অবস্থিত এই আদি কৈলাস এবং ওম পর্বত। যথেষ্ট দুর্গম এই এলাকার রাস্তাঘাটও খুবই খারাপ, কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার চিহ্নমাত্র নেই। কিন্তু এই রুট মানস সরোবর যাত্রা রুটের অংশ হওয়ার এবং দু দেশের বর্ডারের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় নিরাপত্তা জনিত কারণে এখানে রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়েছে BRO উদ্যোগে। আর এক দু বছরের মধ্যে খুবই সহজে আসা যাবে এখানে। জেলা সদর পিথোরাগড় থেকে এখানে পৌঁছতে প্রায় ৪ দিন লেগে যাবে। উত্তরে আছে লিপুলেখ পাস এবং চীনা বর্ডার এবং পূর্বে আছে কালাপানি এবং নেপাল বর্ডার। তার মধ্যবর্তী এই এলাকা তিন দেশের কাছেই যথেষ্ঠ বিতর্কিত।
এই যাত্রাপথে যেসব জায়গা গুলো আপনারা ভিজিট করবেন :- এই যাত্রাতে আপনারা আদি কৈলাস ওম পর্বত বাদেও আরো প্রায় ১০টি মত জায়গা আছে যেগুলো আপনাদের অবশ্যই যাওয়া উচিৎ। আপনাদের যাতে বাদ না যায় সেজন্যই এটি লেখা। চলুন জায়গা গুলো নিয়ে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক...
পাণ্ডব পর্বত, পাণ্ডব ফোর্ট, কুন্তি পর্বত, পার্বতী সরোবর, শিব মন্দির, পার্বতী মুকুট প্রভৃতি। এছাড়াও এখানে আসার পথে রাস্তায় দেখে ফেলতে পারেন ভীমতাল, কারোলি বাবা আশ্রম, কেনচি ধাম, ব্যাস গুহা, যোগেশ্বর মন্দির এবং নাগ পর্বত গলু মন্দির প্রমুখ। এই সমস্ত জায়গা একসাথে দেখতে আপনাদের প্রায় ৭-৮ দিন লেগেই যাবে।
কতো দিন লাগে :- আদি কৈলাস যাত্রা আপনারা চাইলে বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করতে পারেন, যেহেতু এটি একটি প্যাকেজ ট্যুর তাই আপনি আপনার প্যাকেজ কোম্পানির সাথে কথা বলে আপনাদের পছন্দ মত যেকোনো জায়গা যেমন দিল্লী, কাঠগোদাম, বা ধারচুলা থেকে শুরু করতে পারেন। প্রধানত বেশিরভাগ পর্যটকই তাদের যাত্রা কাঠগোদাম থেকেই শুরু করে থাকে। কাঠগোদাম থেকে কাঠগোদাম আপনাদের আসা যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ৮ দিন লেগেই যাবে। তারপর কাঠগোদাম ট্রেনে আসা ও যাওয়া মিলিয়ে আরো দুদিন ধরে নিতে হবে। ভারতের যেকোনো বড় শহর থেকেই কাঠগোদাম আসার জন্য ট্রেন পেয়ে যাবেন, না পেলে দিল্লী পর্যন্ত ট্রেন বা ফ্লাইটে এসে তারপর বাসে বা ট্রেনে কাঠগোদাম পৌঁছতে পারেন। মোটামুটি ১২-১৩ দিন আপনাদের ধরে রাখতেই হবে এই ট্যুরের জন্য।
ট্যুর আইটেনারি :- চলুন এবার এই আদি কৈলাস যাত্রার ট্যুর আইটেনারি দিন অনুযায়ী একটু details এ আলোচনা করা যাক। ধরে নিলাম আপনাদের ট্যুর শুরু হচ্ছে কাঠগোদাম থেকে।
- KMVN-ওয়েবসাইট লিঙ্ক
প্রথম দিন কাঠগোদাম থেকে আপনাদের বাইরোড যেতে হবে পিথোরাগড় দূরত্ব ১৯৬ কি.মি এবং সময় লাগবে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা। পথে পিথোরাগড় যেতে যেতে আপনার রাস্তায় দেখে নেবেন ভীমতাল, কারোলি বাবার মন্দির, যোগেশ্বর মন্দির, গোলু দেবতার মন্দির প্রভৃতি। রাতে স্টে এই পিথোরাগড়েই।
দ্বিতীয় দিন আপনাদের যেতে হবে প্রায় ১০০ কি.মি দূরে অবস্থিত ভারত নেপাল সীমান্তে অবস্থিত ছোট্ট একটি শহর ধারচুলা। সময় লাগবে প্রায় ৩.৩০ ঘন্টা। এই ধারচুলাতে কালি নদী / সারদা নদী ক্রস করলেই ওপারে নেপাল, নেপালী ধারচুলা। ভারতের অংশের নাম ও ধারচুলা, একটি শহরে দু ভাগে বিভক্ত। মাঝে কালি /সারদা নদীর ওপরে একটি ব্রিজ আছে সেই ব্রিজ পেরিয়ে আপনি নেপাল থেকেও ঘুরে আসতে পারবেন। এই ধারচুলা তেই আপনাদের আদি কৈলাস যাত্রার জন্য পারমিট বানানো হবে প্যাকেজ ট্যুরে আসলে আমাদের প্যাকেজ ট্যুর কম্পানিই সেই পারমিট আপনাদের বের করে দেবে। সেদিনকার মত ধারচুলাতে রাত্রিবাস।
পরের দিন আপনাদের যাত্রা শুরু হবে ধারচুলা থেকে গুন্জি পর্যন্ত। মাত্র ৭০ কি.মি এই পথ হলেও যাত্রা পথে কিন্তু আপনাদের বেশ সময় লেগে যাবে। রাস্তা খারাপ থাকার জন্য আপনাদের প্রায় ৩ ঘন্টা লেগে যাবে গুন্জি পৌঁছতে পৌঁছতে।এই গুন্জি বলতে পারেন আদি কৈলাস এবং ওম পর্বত যাত্রার বেশক্যাম্প।
পরের দিন এই গুন্জি থেকে আপনাদের ইচ্ছা মত যেকোনো একদিকে যেতে পারেন হয় আদি কৈলাস নয়তো ওম পর্বত। আমার মতে প্রথম দিন আদি কৈলাস দেখে আসাই বেটার। গুন্জি থেকে জ্যোলিংকঙ হয়ে আদি কৈলাস দেখে ফিরে আসতে আপনাদের ৩-৪ ঘন্টা লেগে যাবে। এখানে দেখার মত আরো কিছু জায়গা আছে সাথে ট্রেক ও আছে কিছুটা পথ সেইজন্য সময় কিছুটা কম বেশী লাগতেই পারে। এই দিন আপনারা আপনাদের বহু প্রতীক্ষিত আদি কৈলাস দর্শনের পাশাপাশি দেখে নেবেন কুন্তি পর্বত, পাণ্ডব ফোর্ট, ব্রহ্ম পর্বত, পার্বতী সরোবর, পার্বতী মুকুট প্রভৃতি । এগুলো দেখে আবার ফিরে আসুন গুন্জিতে।
এর পরের দিন গুন্জি থেকে সকাল সকাল আপনাদের যাত্রা শুরু করতে হবে ওম পর্বতের উদ্দেশ্যে। ওম পর্বত যেতে আপনাদের খুব কম সময় লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টার মত, এবং দূরত্ব মাত্র ২২ কিমি। এই ওম পর্বত ছাড়াও আপনি এদিন দেখে নেবেন নাগ পর্বত, ব্যাস গুহা, কালি মন্দির। এছাড়াও যদি ITBP থেকে যদি পারমিশন দেয় তাহলে চীনা বর্ডারে মাউন্ট কৈলাস ভিউ পয়েন্ট পর্যন্ত। ওই দিনই আপনাদের ফিরে যেতে হবে গুন্জি হয়ে ধারচুলাতে। পরের দিন ধারচুলা থেকে পিথোরাগড় এবং সেখান থেকে কাঠগোদাম। এভাবেই আমাদের মোটামোটি আপনাদের আদি কৈলাস যাত্রার ইতি ঘটবে। এবং সুন্দর মধুর স্মৃতি নিয়ে আপনারা যে যার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিবেন।
আদি কৈলাস যাত্রার জন্য কি কি প্রয়োজন :- আদি কৈলাস যাওয়ার কথা ভেবেছেন তাহলে অবশ্যই জেনে রাখা দরকার, এই যাত্রায় যেতে আপনার কি কি প্রয়োজন - প্রথমত পাসপোর্ট থাকলে খুবই ভালো নাহলে দ্বিতীয় চয়েস আধার কার্ড।
দ্বিতীয়ত- ফিজিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। যেকোনো MBBS ডক্টরের থেকে যাত্রা ডেটের এক মাসের মধ্যে করা ফিটনেস সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে ( এক কপি অরিজিনাল এবং দু কপি self Attested জেরক্স)
তৃতীয়ত - ৩০ টাকার Affidavit স্ট্যাম্প পেপার।
চতুর্থত - একদম প্রথমে করা অফেরৎ যোগ্য টাকা পাঠানোর রিসিপ কপি।
পঞ্চমত- আপনাদের লোকাল পুলিশ স্টেশন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম যদি আপনার পাসপোর্ট থাকে তাহলে এটির দরকার পড়বে না।
মোটামোটি ধরে রাখুন একটি জিনিসই আপনাদের লাগবে, তবে সাথে আধার কার্ডের কয়েক কপি Xerox এবং নিজের কয়েককপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি অবশ্যই সাথে রাখবেন।
আদি কৈলাস যাত্রার পুরো প্রসেস :- আদি কৈলাস যাত্রার কি কি প্রয়োজন সেটা আমি আগের পয়েন্টে বলেছি আর এই পয়েন্টে আমি আলোচনা করবো, এই যাত্রার জন্য আপনাদের কি কি করনীয়, তাহলেই মোটামোটি এই আদি কৈলাস যাত্রা যাওয়ার জন্য আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
আরো একটা কথা আপনাদের জানিয়ে রাখা ভাল যে - এই আদি কৈলাস যাত্রা কিন্তু একটি প্যাকেজ ট্যুর। KMVN এই যাত্রার সমস্ত কিছু ব্যাবস্থাপনা করে থাকে, থাকা, খাওয়ার জন্য আপনারা KMVN গেস্ট হাউস গুলোতে হবে। আর এর বাইরে আপনি যদি নিজের প্ল্যানে এই আদি কৈলাস যাত্রায় যদি যান তাহলে কিন্তু অনেক সমস্যায় পড়তে পারেন, কারণ এই রুটে সব জায়গায় বাস চলে না, এছাড়াও পারমিশন থেকে শুরু করে দুর্গম রাস্তাঘাট এ বিষয় গুলি যদি নিজেই করতে চান তাহলে কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় Harrasmenrmt শিকার হতে পারেন। সমস্ত কিছু নিজে করে ফেললেও গাড়ি ভাড়া করে হোটেল বুকিং এ আপনাদের খরচা অনেকটাই বেশি পড়ে যাবে, তাই সবচেয়ে বেস্ট হচ্ছে প্যাকেজ ট্যুর। এই কথা আমি একাই বলছি না শুধু সমস্ত জায়গায় এই একই কথা বলবে। এখন KMVN এর সাথে এক দুটি প্যাকেজ ট্যুর কম্পানি চুক্তি করেছে, তারাই এখন KMVN এর সাথে এই যাত্রা পরিচালনা করে আসছে, তাদের নাম্বার আমি দিয়ে দেবো।
এবার আসি আপনাদের কি কি করনীয় এবং এই যাত্রায় কি প্রসেস আছে। প্যাকেজ বুকিং কিন্তু আপনাদের অনেক কাজই এই ট্যুর কম্পানি গুলো করে দেয়, আপনাকে সবার আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তার আগে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে, সেই টাকা পাঠানো প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক চালান ফ্রমের সাথে অ্যাটাচ করে একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং আধার বা পাসপোর্টের দুকপি জেরক্স একসাথে করে পাঠিয়ে দিতে হবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়, অথবা আপনি স্ক্যান করে মেলও করতে পারবেন, আপনাদের ট্যুর এজেন্সির মেইল এড্রেসে।
এরপর আপনাকে যাত্রা ডেটের একমাস আগে প্রধানত তিনটি জিনিস আপনাদের পাঠাতে হবে, এক পুলিশ ভেরিফিকেসন কপি, ফিটনেস সার্টিফিকেট, এবং ৩০ টাকার স্ট্যাম্প পেপার আদি কৈলাস যাত্রার নোটারি Afiidevit ফ্রম। মোটামোটি এটুকু করলেই আপনার কাজ মোটামোটি complete। বাকি পারমিশন থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ ট্যুর এজেন্সির। টাকা পাঠানোর ব্যাপারটা উনারাই বলে দেবে আপনাদের।
ট্যুর এজেন্সির নাম্বার - Trip to temple - 9911937751 / 7065577751 / 8800884914
KMVN - 8650002515 ।
Emil - crckmvn@gmail.com
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন