বিনা ভিসা পাসপোর্টে ঘুরে আসুন প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার থেকে
ভ্রমণ পিপাসু :- বিনা ভিসা পাসপোর্টে ঘুরে আসতে পারবেন এই দেশটি থেকে। দেশটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার যার পূর্ব নাম ছিল বার্মাদেশ ।স্বাধীনতার পূর্বে এই বার্মা এবং ইন্ডিয়া একই সাথে সাথে যুক্ত ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া হিসেবে। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটিশদের থেকে। ১৯৯০ সাল থেকে দেশটি নাম হয় মিয়ানমার। মিয়ানমারের সাথে ভারতের চারটি রাজ্যের বর্ডার আছে মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যাল্ড, এবং অরুণাচল প্রদেশ। কিন্তু আমি যে বর্ডার দিয়ে মিয়ানমার বিনা ভিসা পাসপোর্টে ঘুরে আসতে পারবেন সেটা অবস্থিত মণিপুরে। সেটা আপনি পারবেন মাত্র এক দিনের জন্য। একদিনের বেশি থাকতে চাইলে আপনার ভিসার প্রয়োজন হবে থাকতে হবে পাসপোর্টও। একইরকম ভাবে আমি একটা ব্লগে আলোচনা করেছিলাম আপনি একদিনের জন্য বিনা ভিসাতে ঘুরে আসতে পারবেন পাকিস্তান থেকে সেই ব্লগটি না দেখে থাকলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে পড়ে ফেলতে পারেন....
কোথায় অবস্থিত এই বর্ডার :- আমি আগের পয়েন্টে বলেছিলাম যে আপনি যদি বিনা ভিসাতে এই মিয়ানমার আসতে চান তাহলে আপনাকে মণিপুর হয়েই আসতে হবে, মণিপুরের মোরেহ বর্ডারের। মণিপুরের রাজধানী শহর ইম্ফল থেকে প্রায় ১১০ কি.মি দূরে অবস্থিত এই সীমান্ত শহর মোরে বা মোরেহ। বর্ডারের উল্টো দিকেই আছে মিয়ানমারের টামু শহর।সেইজন্য এই বর্ডারকে মোরেহ বর্ডার বা মোরেহ টামু বর্ডার ও বলা হয়ে থাকে।
মোরে টাউন :- মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ১১০ কি.মি দূরে অবস্থিত এই মোরেহ শহরকে মিনি ইন্ডিয়া ও বলা হয়ে থাকে। শহরটি ছোট্টো হলেও আপনি এখানে সমস্ত কিছু পাবেন, ভারতের প্রায় সমস্ত অঞ্চলের মানুষদের এখানে দেখতে পাবেন। এই শহরটি সীমান্ত শহর হওয়ার জন্য বড় ব্যাবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে তার সাথে চোরাই মালের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। এই মোরেহ শহরের মার্কেট থেকে আপনি চীনা, বার্মী থাইল্যান্ডের বিভিন্ন সামগ্রী খুব কম দামে পেয়ে যাবেন, যা চোরাই পথে এই মোরেহ শহরে এসে থাকে। এই জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তার মধ্যে মারোয়ারী, পাঞ্জাবি, বিহারী, তামিল বাঙালি রাজস্থানী লোকেদের এখানে পেয়ে যাবেন, এবং সেই জন্য, বিভিন্ন রাজ্যের খাওয়ার এখানে পেতে আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। অনেকে আছে যারা একসময় মিয়ানমারে থাকতো, সেনা শাসনের সময়ে তারা ওই দেশ ছেড়ে এই মোরে তে এসে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করে। মোরেতে আপনি সাধারণ মানের, মাঝারি মানের অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন রাতে থাকার জন্য। মোরেতে আসলে আরো একটি জিনিস খুব লক্ষ্য করবেন সেটা হলো নাম্বারপ্লেট বিহীন এক ধরনের বাইক, যাদের কেনবো বাইক বলে, এগুলো আসলে মিয়ানমারের বাইক যা খুব কম দামে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে এই মোরে এবং আসে পাশের এলাকায় নিয়ে আসা হয়। দাম কম সাথে নাম্বার প্লেট লাগানোর খরচা ও অনেকটা বেঁচে যায়, সেইজন্য ভারতীয় বাইক থেকে এই কেনবো বাইক বেশি মাত্রায় দেখতে পাবেন।
টামু- মিয়ানমার :- ভারতের মোরে বর্ডার থেকে উল্টো দিকেই আছে এই টামু শহর। আপনি যদি বাই রোড মিয়ানমার আসতে চান তাহলে আপনাকে এই টামু শহর হয়েই যেতে হবে মিয়ানমারের বাকি অংশে। টামু থেকে মান্দালয় বা রাজধানী নাইপিতাও যাওয়ার জন্য বাস পেয়ে যাবেন। মোরেহ থেকে টামু শহরের দূরত্ব মাত্র ৩ কি.মি। বর্ডার ক্রস করেই অটো বা যে কাউকে পেয়ে যাবেন তবে একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখবেন যদি আপনারা নিজস্ব গাড়ি বা বাইক নিয়ে আসেন সেটা হলো, মিয়ানমারে কিন্তু ড্রাইভিং করার ক্ষেত্রে আমেরিকার রুলস্ ফলো করে মানে ডান সাইড হয়ে ড্রাইভিং, রাস্তায় এরকম অনেক বোর্ড ও দেওয়া থাকবে। গাড়ি চালানোর সময়ে এটা আপনাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। টামু শহরের আগেই অবস্থিত একটি বড় মার্কেট যার নাম নাফালং মার্কেট, এই মার্কেট তেই একমাত্র আপনি বিনা ভিসাতে যেতে পারবেন, মিয়ানমারের এই নাফালং মার্কেটের বাইরে আপনার যাওয়ার কোন পারমিশন নেই, এখানে খুব কম দামে জিনিস কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া চাইলে করে নিতে পারেন। সস্তাতে শপিং করতে হলে এই মার্কেট থেকে করতে পারেন।
আসবেন কেমন করে :- এখানে আসার জন্য প্রথমত আপনাকে ফ্লাইটে বা সড়কপথে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে পৌঁছতে হবে। বাইরোড পৌঁছতে হলে আপনাকে গৌহাটি, ডিমাপুর বা শিলচর থেকে ডেইলি বাস পেয়ে যাবেন। গৌহাটি, ডিমাপুর, এবং শিলচর আসার জন্য আপনি ট্রেন পেয়ে যাবেন, বাকিপথ আপনাকে বাস কিংবা ভাড়া গাড়িতে করতে হবে। শুধুতো আপনারা এই বর্ডার দেখার জন্য আসবেন না, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডের এরকম অনেক জায়গা আছে যেগুলো একসাথে দেখে নিতে পারবেন, নর্থইস্ট ইন্ডিয়াতে এমনিতেই মানুষে ঘুরতে কম আসে, কিন্তু এই নর্থইস্ট ইন্ডিয়াতে দেখার মত এত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, যেগুলো সত্যি কল্পনার বাইরে, নর্থ ইস্ট ট্যুর নিয়ে আমার লেখা একটি আর কয়দিনের মধ্যেই আমার এই সাইটে আপলোড করবো সেটা আপনারা দেখে নিতে পারেন...
যাইহোক আপনারা ইম্ফল থেকে এই মোরে বর্ডার আসার আপনি এক বাসে আসতে পারেন ভাড়া ১৫০ টাকার মতো নিতে পারে। অথবা আপনি শেয়ার গাড়ি গুলোতে ও এখানে আসতে পারেন সময় অনেক কম লাগবে এবং ভাড়া নেবে ৩০০ টাকা। বাস স্ট্যান্ডে নামার পর যেকোনো অটোতে বর্ডার চলে আসবেন।
ভারত থেকে মিয়ানমার যাওয়ার পুরো প্রসেস :- বিনা ভিসায় ও পাসপোর্টে আপনি যদি মিয়ানমার যেতে চান তাহলে আপনার ভারতীয় যেকোনো একটি আইডেন্টিটি কার্ড লাগবে, আধার কার্ড বেশী প্রযোজ্য। আধার কার্ডটি রাখার চেষ্টা করবেন সব সময়ে। এই কার্ড দেখিয়ে আমি একদিনের জন্য মিয়ানমার যেতে পারবেন।
মোরে তে মিয়ানমার বর্ডারে দু দেশের মধ্যে দুটি গেট আছে একটি গেট নাম্বার এক, এবং একটি গেট নাম্বার দুই। আপনি ভিসা পাসপোর্ট নিয়ে কয়েকদিনের জন্য মিয়ানমার যেতে চান তাহলে আপনাকে গেট নাম্বার এক দিয়ে যেতে হবে, এখানে ইমিগ্রেশন সেন্টারও আছে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে একটি ইন্দো - মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ ক্রস করেই ওপারেই মিয়ানমার। আপনি এখানে এসে অটো একবার ঘুরে যেতে পারেন। আর আপনি আধার কার্ড দিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে গেট নাম্বার দুই দিয়ে যেতে হবে এখানে ফ্রেন্ডশিপ গেটও আছে, এখানে আধার কার্ড দেখিয়ে ওপারে অবস্থিত নাফালং মার্কেট আসে পাশে কিছু এলাকা ঘুরে নিতে পারেন। সাথে এই মার্কেট থেকে খুব কম দামে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ও করতে পারবেন, যেগুলো ইন্ডিয়ান মার্কেটে দাম টা একটু বেশি, মোর থেকে অনেকেই এই মার্কেট থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়, এমন কি আপনার প্রায় গোটা মণিপুরেই এই নাফালং মার্কেটের বিভিন্ন জিনিস পেয়ে যাবেন। এর সাথে সাথে আপনারা খাওয়ার দাওয়ার করতে চাইলেও করতে পারবেন, তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, আপনাকে কিন্তু বিকেল ৪টা মধ্যে বর্ডার ক্রস করে আবার মোরে ফিরে আসতে হবে। নাহলে কিন্তু সমস্যা ও কিছুটা হলে ও হতে পারে।
আজকের এই ব্লগটি এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ, বাকি ব্লগ গুলো দেখার জন্য অবশ্যই সাইট টা ফলো করতে রাখতে পারেন।
বিশ্বজ্যোতি ভৌমিক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন