ভাইজাগ ট্যুর প্ল্যান
ভ্রমণ পিপাসু : - ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির কারো পছন্দ সমুদ্র কারো আবার পছন্দ পাহাড়, এই পাহাড় আর সমুদ্র কে নিয়ে গোটা বাঙালি সমাজ দুভাগে বিভক্ত। কিন্তু পাহাড়, সমুদ্র এদুটির হাতছানি ও অনুভূতি এক সঙ্গে পেতে চাইলে আপনাকে এই জায়গায় তেই আসতে হবে। তাই আজকের ব্লগে আমাদের আলোচনা ভাইজ্যাগকে নিয়ে যার অপর নাম আমরা প্রায় সকলেই জানি বিশাখাপটনম্। এই পাহাড় এবং সমুদ্রকে একসাথে উপভোগ করার সবচেয়ে সেরা জায়গা কিন্তু এই ভাইজ্যাগই, ছাড়াও এরকম জায়গা আপনি কেরালাতেও পেয়ে যাবেন, কিন্তু ভ্রমণ প্রেম বাঙালির কাছে কম দুরত্বের এবং কম খরচের জায়গা বলতে এই ভাইজ্যাগই প্রথম পছন্দ।
দিঘা, পুরি, দার্জিলিং এর পর বাঙালির কাছে সবচেয়ে কাছের জায়গা কিন্তু এই ভাইজ্যাগই। বাঙালি নির্ভরশীলতার জন্য এখানে পুরির মতো বাঙালি হোটেল, রেস্টুরেন্ট আপনারা পেয়ে যাবেন, কিন্তু পুরির মতো এতটা পাবেন না। এই ভাইজ্যাগে ঘুরতে আসলে পর্যটকরা যেমন অনেক বিভিন্নতা পান, তাই প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে পর্যটক এখানে ছুটে আসে। আর বাঙালিদের এই শহরের প্রতি আলাদা কিন্তু একটা টান আছেই, তাই এই ব্লগে ভাইজ্যাগ ভ্রমন নিয়ে আপনাদের যাবতীয় প্রশ্নের একটা complete প্যাকেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি, ব্লগটা পুরো পড়ুন, আসা করছি ভাইজ্যাগ নিয়ে আপনাদের মনে যে সমস্ত প্রশ্নের উদ্রেক হয় তার সমস্ত কিছুই এই ব্লগে পেয়ে যাবেন ।
কেমন করে পৌঁছবেন ভাইজ্যাগ :- ভাইজ্যাগ আপনি অনেক ভাবেই পৌঁছতে পারেন, ভাইজ্যাগ পৌঁছনো খুবই সহজ। সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল ট্রেন। আপনি হাওড়া, শালিমার বা সাতরাগাছি থেকে প্রচুর ট্রেন পেয়ে যাবেন, এই ট্রেন গুলো পৌঁছতে সময় নেয় প্রায় ১৩ থেকে ১৬ ঘণ্টার মত। কিন্তু আপনি এমন ট্রেন গুলোই বেছে নেবেন যেগুলো সকালের মধ্যেই আপনাকে বিশাখাপটনম্ স্টেশনে পৌঁছে দেয়, তাহলে আপনি ওই দিন টাও ঘুরার জন্য পেয়ে যাবেন। তার মধ্যে - তিরুচিরাপল্লী সুপারফাস্ট, ফলকনামা এক্সপ্রেস, মাইসোর সুপারফাস্ট প্রভৃতি, এর বাইরেও আপনি নিজের জার্নি ডেট অনুযায়ী IRCTC থেকে ট্রেন গুলো দেখে নিতে পারেন, স্লিপার ক্লাসের ভাড়া ৫০০ মধ্যেই হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় যে অপশন টা আছে সেটা হল ফ্লাইট, আপনি যদি কিছু মাস আগে টিকিট কেটে নিতে পারেন তাহলে ৪ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় টিকিট পেয়ে যাবেন। তবে একটা কথা বলে রাখি বেশিরভাগ ফ্লাইট কিন্তু ভায়া হায়দাবাদ হয়ে যায়। তাছাড়া আপনি নিজস্ব গাড়ি করেও যেতে পারেন, সুন্দর রাস্তা, জার্নিতে তেমন কোনো অসুবিধে হবে না।
কোন সময়ে ভাইজ্যাগ আসবেন : - গরমের সময়টা কে একটু avoid করেই ভাইজ্যাগ আসলে আমার মতে ভালো। কারণ এমনিতেই এ জায়গা খুব গরমপ্রবন এলাকা। ভাইজ্যাগে আসতে হলে সবচেয়ে দারুণ সময় হলো, শীতে এবং বর্ষার সিজনে, বর্ষাতে সত্যি আলাদাই রূপ ধরা পড়ে। সবচেয়ে ভালো হয় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসলে। ডিসেম্বরে এখানে বিশাখা ফেস্টিভ্যালও চলে। দুর্গাপূজা এবং খ্রিস্টমাসের সময়ে এখানে খুবই ভিড় হয়,এবং সব কিছুরই রেট খুব বেড়ে যায় তাই এই সময়টা Avoid করে আসলেই ভালো।
ভাইজ্যাগ ভ্রমণে কত দিনের ট্যুর প্ল্যান করবেন :- ভাইজ্যাগ সম্পূর্ন রূপে ভ্রমণ করতে কিন্তু খুব বেশিদিন লাগে না। খুব কম সময়ে আপনি ভাইজ্যাগ - আরাকু ও আসেপাশের ভ্রমণস্থান গুলি দেখে ফেলতে পারেন। ২ রাত ৩ দিন এবং ৩ রাত ৪ দিনের ট্যুর এই দু ধরণের হতে পারে, তবে সবচেয়ে আদর্শ ৩ রাত ৪ দিনের। কিন্তু আপনি চাইলে ৫ দিনও থাকতে পারেন, কিন্তু এর থেকে বেশী থাকা আমার মতে উচিত নয়। আর আসা যাওয়ার পেছনে আরো দের থেকে দুদিন ধরে রাখেন, তাহলে মোটামোটি ৭ দিনের মধ্যে একদম ট্যুরটা সম্পূর্ণ করে ফেলতে পারবেন।
ভাইজ্যাগ গিয়ে কোথায় থাকবেন :- ভাইজ্যাগ আসলে প্রধানত আপনারা দু জায়গায় থাকতে পারেন। এক ভাইজ্যাগ স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়, দুই RK বিচ অর্থাৎ রামকৃষ্ণ বিচ সংলগ্ন এলাকায়। এর বাইরেও আপনি আরো কিছু জায়গায় থাকার মতো হোটেল পেয়ে যাবেন কিন্তু এ দুজায়গায় থাকলে আপনারা সবসময় অটো বা ভাড়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন, সবচেয়ে ভালো হয় RK বিচ এলাকায় থাকা, এখানেই ট্যুরিস্টরা বেশিরভাগ ওঠে, আর এখানে সবসময় ভাড়ার জন্য গাড়ি বা অটো পেয়ে যাবেন, ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য। কিন্তু এখানে হোটেলের রেট একটু বেশী স্টেশন সংলগ্ন এলাকার তুলনায়। কিছু হোটেলের নাম আর contact নাম্বার আমি নিচে দিয়ে দেবো আপনাদের সুবিধার জন্য -
1. Beach Guest house - 7947145609
2. Beach view Guest House - 6304786886
3. Balaji Goust House - 9347261816
4.Feel Like Home - 8897467074
5. Hotel gateway - 8916623670
6. New Sonar Bangla Guest House - 9849372847/8976622003
এছাড়া হোটেল আপনারা অনলাইন বুক করে নিতে পারেন অনেক হোটেল অনলাইনে ভাড়া কম পড়ে, এর জন্য booking.com, Agoda সাইট গুলো দেখতে পারেন।
ভাইজ্যাগের কিছু দর্শনীয় স্থান :- ভাইজ্যাগে দেখার মত প্রচুর জায়গা আছে, সব জায়গা তো আর একবারে দেখা সম্ভব না, তবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিখ্যাত কিছু জায়গা আছে যেগুলো কে কোনো মতেই বাদ দেওয়া উচিৎ না সেইসব জায়গারই একটা লিস্ট আমি নিচে দিয়ে দিচ্ছি আপনাদের সুবিধার্থে। ভাইজ্যাগ ভ্রমণের ক্ষেত্রে RK বিচকে মিডল পয়েন্ট করে পুরো ভাইজ্যাগকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় -
উত্তর ভাইজ্যাগ:-
1. রামকৃষ্ণ বিচ বা RK Beach.
2. সাবমেরিন মিউজিয়াম।
3. এয়ারক্যাফট মিউজিয়াম।
4. থোতলাকোকোণ্ডা বিচ, ন্যাচারাল আর্ক,বৌদ্ধ মনাস্ট্রি।
5. ভিমলি বিচ।
6. ঋষিকোণ্ডা বিচ।
7. লুম্বিনী পার্ক।
8. বুধা পার্ক ।
9. ভাইজ্যাগ লাইট হাউস।
10. ভিশাখা মিউজিয়াম ।
11. কৈলাস গিরি।
12. রামানাইডু স্টুডিও।
দক্ষিণ ভাইজ্যাগ :-
1. ফিশিং হারবার।
2. রস হিল চার্চ ।
3. ডলফিন নোস লাইট হাউস।
4. ইয়ারদা বিচ।
৫. সিমাচলম মন্দির ।
আরাকু ভ্যালি :-
1.বোরা কেভ।
2. কালিঝোরা ফলস্।
3. গালিকোকোণ্ডা ভিউ পয়েন্ট।
4. অনন্তগিরি কফি গার্ডেন।
5. ট্রাইবাল মিউজিয়াম।
6. পদ্মপুরান গার্ডেন ।
এর মধ্যে বেশিরভাগ ট্যুরিস্টদের ঝোঁক থাকে উত্তর ভাইজ্যাগ এবং আরাকু ভ্যালির ওপরে। দক্ষিণ ভাইজ্যাগে ট্যুরিস্ট প্লেসের সংখ্যা একটু কম, তা হলেও এই জায়গা গুলি একদমই অফবিট এবং কোলাহলহীন। আমি পরের পয়েন্টে ভাইজ্যাগ ট্যুর প্ল্যান নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো, সেটা পড়ে নিয়ে আপনারা নিজেদের প্ল্যান বানাতে পারেন।
ভাইজ্যাগের কিছু বিখ্যাত বিচ এবং পার্ক :- আসলে ভাইজ্যাগে দেখার মত প্রচুর বিচ আছে তার সাথে এখানে আসলে পার্কের কোনো অভাব নেই। একটু পর পর আপনি অনেক পার্ক পেয়ে যাবেন। সব তো আর দেখা সম্ভব না, তবে বেছে বেছে কিছু ভালো বিচ ও পার্ক আপনারা অবশ্যই দেখে নেবেন, কেমন করে কি ভাবে দেখবেন বিস্তারিত ভাবে নিচে আমি বলে দেবো দেখে নেবেন।
। বিচ ।
২. গঙ্গাভরম বিচ
৩. দুর্গা বিচ।
৪. রামকৃষ্ণ বিচ।
৫. ট্রিনেটি পার্ক বিচ।
৬. যদুগুল্লা বিচ ।
৭. সাগর নগর বিচ।
৮. ঋষিকোণ্ডা বিচ।
৯. থোতলাকোণ্ডা বিচ।
১০. ভিমলি বিচ।
। পার্ক ।
১. ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্ক।
২. শিবাজী পার্ক ।
৩. টেনেটি পার্ক ।
৪. ভুদা পার্ক ।
৫. গোকুল পার্ক ।
৬. লুম্বিনী পার্ক ।
৭.মৎস্য দর্শীনি পার্ক
ভাইজ্যাগ ট্যুর প্ল্যান :- আমি আগের পয়েন্টে বলেছি ভাইজ্যাগ ঘোরার জন্য ৩ রাত্রি ৪ সবচেয়ে উপযুক্ত, কিন্তু কেউ কেউ সেটা ২ রাত্রি ৩ দিনেও করে ফেলতে পারেন, আবার কেউ চাইল ৫ দিনও কাটাতে পারেন। কিন্তু ৫ দিনের বেশি এখানে না থাকাই ভালো, আমার মতে টাকা এবং সময় 2 টাই নষ্ট। আমি দিন অনুযায়ী ভাইজ্যাগ ট্যুর প্ল্যান আপনাদের জন্য দিচ্ছি, তারপর আপনারা আপনাদের পছন্দ ২,৩,৪ দিনের প্ল্যান সাজাতে পারেন।
প্রথম দিন :- প্রথম দিন আপনারা উত্তর ভাইজ্যাগের দর্শনীয়স্থান গুলি দেখে নেবেন, যেগুলি ভাইজ্যাগের আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। ধরে নিলাম আপনারা RK বিচ অর্থাৎ রামকৃষ্ণ বিচেই থাকার ব্যবস্থা করেছেন, আর RK বিচের থাকার সুবিধা হল আপনি পায়ে হেঁটে ২,৩ টি স্পট ঘুরে নিতে পারেন।
হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে, ব্রেকফাস্ট করে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে আপনি বেরিয়ে পড়তে পারেন। অনেক প্রথম দিনটা প্রায় অর্ধেক টা রেস্ট করে কাটিয়ে দেয়, কারণ ট্রেন জার্নি করে আসার পর শরীরের ওপরে একটা ধকল থেকেই যায়। যদি আপনাদের কাছে সময় না থাকে তাহলে কিছুটা রেস্ট নিয়ে প্রথম দিনটাকেই ভালো মত কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারেন। এবার আসি আপনি কেমন আমাদের প্ল্যান সাজাবেন, কিসে ঘুরলে আপনাদের পক্ষে বেস্ট হবে। প্রথমত RK বিচ থেকে পায়ে হেঁটে ঘুরে নিন INS Kursura সাবমেরিন মিউজিয়াম, পায়ে হেঁটে পৌঁছতে ৫-৭ মিনিট লাগবে মাত্র। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই সাবমেরিন ব্যবহার হয়েছিলো, বর্তমানে এটিকে মিউজিয়ামে পরিণত করা হয়েছে, ভেতরে ঢোকার প্রবেশমূল্য ৪০ টাকা তার সাথে ভিডিওগ্রাফির জন্য আলাদা চার্জ লাগবে। ভেতরে একজন গাইড আছে যিনি পুরো সাবমেরিন পরিচালন পদ্ধতি, এবং ১৯৭১ যুদ্ধের পুরো বিবরণ আপনাকে দিয়ে দেবে। এটি দেখেই উলটো দিকে চলে আসুন TU 142 - Aircraft মিউজিয়ামে এখানে ফটো ও ভিডিও জন্য এক্সট্রা কোনো টাকা লাগবে না। এরপর ৫০০ মিটার দূরেই আছে বিশাখা মিউজিয়াম, ইন্ডিয়ান নেভির সাথে যুক্ত অনেক কিছুই এখানে দেখতে পাবেন, তবে আগের দুটি মিউজিয়াম দেখে নিলে এটি না দেখলেও চলবে। তাই সোজা মেরিন ড্রাইভ ধরে চলে আসুন RK বিচের মেন জায়গায়, এখান থেকে আপনারা ঘুরার জন্য অটো বা গাড়ি বুক কর নেবেন। অটো ভাড়া করলে সারাদিনের জন্য নিতে পারে ১৫০০ টাকার মতো, আর গাড়ি ভাড়া করলে ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। আপনারা যদি ৩ জন থাকেন তাহলে অটো সবচেয়ে বেস্ট হবে। প্রথমে আপনারা গাড়ি করে সোজা চলে যাবেন ভাইজ্যাগের একদম উত্তর প্রান্তে ভীমলি বিচে যার দূরত্ব ২৫ কি.মি। এই বিচে প্রচুর মূর্তি আর ভাস্কর্য করা আছে যা আপনাদের ভালোই লাগবে। এই বিচ স্নান করার জন্য একদমই অনুপযুক্ত কারণ পুরো বিচই পাথুরে। কিন্তু একদমই নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। তার ধীরে ভাইজ্যাগে দিকে আসতে আসতে বাকি জায়গাগুলো দেখে ফেলুন। এরপর ঘুরে নেবেন থোতলাকোণ্ডা বিচ, এই বিচের প্রধান আকর্ষণ ন্যাচারাল আর্ক, যা প্রাকৃতিক উপায়ে ক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়েছে, ফটো তোলার পক্ষে খুবই উপযোগী জায়গা। থোতলাকোণ্ডাতে আপনি বিচ ছাড়াও থোতলাকোণ্ডা বৌদ্ধ মনাস্ট্রি টাও ঘুরে নিতে পারেন। তারপর সোজা চলে আসুন ভাইজ্যাগের আরো একটি খুবই পরিচিত বিচ ঋষিকোণ্ডা বিচে। এখানে বিভিন্ন ধরণের ওয়াটার স্পোর্টস্ এবং অ্যাক্টিভিটি, স্নান করতে পারেন APTDC বা বিভিন্ন প্রাইভেট সংস্থার কাউন্টার এখানে আছে। এখানে চাইলে আপনি লাঞ্চ ও করে নিতে পারেন। এরপর পড়বে ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্ক, সেটা আপনার দেখতে পারেন না ও দেখতে পারেন কারণ একদিনে সব কিছু দেখা তো আর সম্ভব না। এরপর যে জায়গা টায় অবশ্যই যাবেন সেটা হলো কৈলাসগিরি টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে রোপওয়ে দিয়ে আপনাকে কৈলাসগিরির ওপরে উঠতে হবে। টিকিট মুল্য ১০০ এবং বাচ্চাদের ৬০ টাকা, এই টিকিট টা কিন্তু আসার সময়ে আপনাদের কাজে লাগবে তাই এটা হারাবেন না, নাহলে আবার টিকিট কাটতে হবে। রোপওয়ে দিয়ে ওঠার সময় রোপওয়ে পুরো ভাইজ্যাগ শহরের দৃশ্য এবং সমুদ্র দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। কৈলাসগিরির ওপরে শিব পার্বতীর একটি সুন্দর মূর্তি, পার্ক এবং পুরো এলাকা ঘোরার জন্য আছে একটি টয় ট্রেন। যার ভাড়া এসি - ১৪০ এবং নন এসি ৮০ টাকা। পুরো এলাকা ঘুরে দের ঘণ্টার মধ্যে নিচে চলে আসুন এরচেয়ে বেশি সময় এখানে লাগে না। এরপর ঘুরে নিতে পারেন লুম্বিনি পার্কে। তারপর সোজা চলে আসুন বিশাখাপটনম লাইটহাউসে বিকেল টা এখানেই কাটান, ভিউ উপভোগ করুন, পাশেই আছে বুধা পার্ক। চাইলেই যেতে পারেন হাতে সময় থাকলে। তারপর গাড়ি আপনাকে ছেড়ে দেবে সেই RK বিচের সামনে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে খুব ভিড়, পর্যটকরা এই সময়ে এখানে ভিড় করে। প্রচুর খাওয়ার দোকান পাবেন, ইচ্ছা করলে অবশ্যই ট্রাই করে দেখবেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে কাটিয়ে আবার হোটেল ফিরে যেতে পারেন। এই হলো প্রথম দিকের ট্যুর প্ল্যান। এগুলো সবই আপনাদের গাড়ি ড্রাইভারের সাথে কথা বলে রাখতে হবে,কোন কোন জায়গা আপনি দেখতে চান নাহলে পরে ঝামেলা করবে।
দ্বিতীয় দিন :- দ্বিতীয় দিন আপনারা রাখবেন আরাকু ভ্যালির জন্য, কারণ তৃতীয় দিন যদি আপনাদের বিকেল বা রাতের দিকে ট্রেন থাকে ফেরার তাহলে একটু হলেও সমস্যা হয়ে যাবে, কারণ আরাকুর দূরত্ব প্রায় ১৪০ কি.মি। ভাইজ্যাগ আসবেন আর আরাকু যাবেন না এটা তো হতেই পারে না।
এবার আসি আরাকু যাবেন কেমন করে, আরাকু আপনি তিন ভাবে পৌঁছোতে পারেন, পার্সোনাল গাড়ি ভাড়া করে যার জন্য ভাড়া একটু বেশি পড়ে যাবে, দ্বিতীয় অপশন হল বাসে এতে আপনার ভাড়া কম লাগবে কিন্তু যাত্রাতে সময় অনেক বেশি লাগবে এবং বাস জার্নিতে অনেককেরই অসুবিধে হয়। তাই সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম হল ট্রেন,যাতে আপনার যাত্রা ও আরামদায়ক হবে এবং ভাড়ার টাকা ও কম গুনতে হবে। সকাল ৬.৪৫ একটি ট্রেন(০৮৫৫১) ছাড়ে আরাকুর উদ্দেশ্যে, এই ট্রেনের একটি বিশেষত্ব হল এই ট্রেনে একটি ভিসটাডোম কোচ ও থাকে যার ভাড়া ৮০০ টাকা, যা আপনাকে ১১ টা মধ্যে আরাকু পৌঁছে দেবে, কিন্তু আপনি আরাকু স্টেশনে নামবেন না আরাকু স্টেশনের দুটি স্টেশন আগে Bora Gahelu স্টেশনে আপনি নামবেন, তারপর, এখান থেকে ছোটো বা বড় গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে ফেলুন গোটা আরাকু ভ্যালি আপনি চাইলে অটো ভাড়া ও করতে পারেন বা শেয়ারে যেতে পারেন শেয়ার অটো ভাড়া ৫০০ করে নিতে পারে , তারপর বিকেলে গাড়ি আপনাকে আবার আরাকু স্টেশনে ড্রপ করে দেবে, তারপর ট্রেন ধরে ফিরে চলে আসুন ভাইজ্যাগে।
এবার আসি আরাকু ভ্যালিতে আপনি কি কি দেখবেন, কেমন করে দেখবেন। আপনি প্রথমে যে জায়গাটি তে যাবেন সেটা বোরা গুহা, বাড়ি পার্কিং এরিয়া থেকে মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ। এখানে ঢোকার প্রবেশমূল্য হল ৭০ টাকা বাচ্চাদের ৫০ টাকা। এই কেভ টি ভালো ভাবে ঘুরতে আপনাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। এই বোরা কেভ এর সামনেই পেয়ে যাবেন আরাকুর বিখ্যাত বাম্বু চিকেন, এবং বাম্বু চিকেন বিরিয়ানি, অবশই এটা পারলে খেয়ে দেখতে পারেন, তবে ঝালের পরিণাম একটু বেশিই থাকে। এরপরে যে জায়গাটিতে আপনারা যাবেন সেটা হলো অনন্তগিরি জলপ্রপাত। সিরি বেয়ে আপনাদের একটু নিচে নামতে হবে কিন্তু নিচে নামার পর সত্যি খুশি হয়ে যাবেন, যদিও বলে রাখি বর্ষাকাল বাদ দিয়ে এখানে অন্য সময় জলের পরিমাণ কিন্তু কমই থাকে। এরপর চলে আসুন অনন্তগিরি কফি গার্ডেনে কফি প্ল্যান্টেসন দেখতে এই কফি প্ল্যান্টেসন দেখতে আপনাদের বেশি টাইম লাগবে না এবং আপনারা চেষ্টা করবেন একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে। এরপরে আপনাদের গন্তব্যস্থল হবে গালিকোণ্ডা ভিউ পয়েন্ট, এখান থেকে ভিউ সত্যই অসাধারন। তারপরেই চলে আসুন ট্রাইবাল মিউজিয়াম দেখতে, এই মিউজিয়াম সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে আর প্রবেশমূল্য - ৪০ বাচ্চাদের ২০ টাকা। এই ট্রাইবাল মিউজিয়াম দেখে হতে যদি সময় থাকে তাহলে ঘুরে দেখতে পারেন বোটানিক্যাল গার্ডেন, আর সময় না থাকলে সোজা চলে আসুন আরাকু স্টেশনে। সুন্দর ছোট্ট সাজানো পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই আরাকু স্টেশন সত্যি আপনাদের মন কাড়বে। মোটামোটি আপনাদের দ্বিতীয় দিনের আপনাদের ট্যুরের পরিসমাপ্তি ঘটল, এরপর তৃতীয় দিনের অপেক্ষা ।
তৃতীয় দিন : - তৃতীয় দিনটা আপনারা রাখবেন ভাইজ্যাগের লোকাল সাইটসিং জন্য। প্রথম দিন আপনারা করেছিলেন ভাইজ্যাগের উত্তরের যে সাইটসিং গুলো আছে সেগুলো আর তৃতীয় দিন আপনারা করে নেবেন ভাইজ্যাগের শহরের দক্ষিণের যে সাইটসিং গুলো আছে সেগুলো, তৃতীয় দিনে এটা রাখার তাৎপর্য হচ্ছে আপনাদের যদি ফেরার ট্রেন থাকে বিকেল বা রাতে তাহলে আপনি ফ্রি মাইন্ডে অনেক সময় হাতে নিয়ে ট্রেন ধরতে পারবেন কারণ এদিকে সাইটসিং সংখ্যা এতো নেই। এই জায়গা গুলো ঘোরার জন্যেও আপনারা অটো বা গাড়ি ভাড়া করতে পারেন অটো হলে ১০০০-১২০০ টাকা এবং গাড়ি - ৩০০০-৩৫০০ টাকা মধ্যে নেবে। চলুন তাহলে আপনাদের ভ্রমন প্ল্যান টা বলা যাক।
প্রথমে দেখে নেবেন সিমাচলম মন্দির, এটি ভাইজ্যাগের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির, তাই এটা একদমই বাদ দেওয়া যাবে না, এটা যদিও ভাইজ্যাগের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত না, এটি আরাকু যাওয়ার রাস্তাতেই পরে, তাই এই মন্দিরে আপনি ট্রেনেও যেতে পারেন বা বাসেও। এই মন্দির ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গীকৃত এখানে বিষ্ণুর দুটি অবতার নৃশংস এবং বরাহ অবতারের পূজা হয়। এখানে মন্দিরে প্রবেশের তিন ধরণের লাইন আছে ফ্রি, ১০০ এবং ৩০০ টাকা। আর আপনারা যদি সকাল সকাল আসেন তাহলে তাহলে ভিড় কম থাকার জন্য ফ্রি লাইনে দাঁড়িয়েও খুবই তাড়াতাড়ি দর্শন করতে পারবেন, তাই সর্বপ্রথম জায়গা হিসেবে এই জায়গাটিকে রাখলাম। এই সিমাচলম মন্দির দেখে তারপর চলে আসুন ভাইজ্যাগের ইয়ারদা বিচে, সিমাচলম মন্দির থেকে এখানে পৌঁছতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে যাবে। ইয়ারদা বিচ কিন্তু খুবই সুন্দর একটা বিচ কিন্তু খুব কম লোক এখানে আসে তাই অনেকটা সময় এখানে কাটাতে পারেন এখানে আসলে আপনি পাহাড় এবং সমুদ্রকে একসাথে দেখতে পাবেন । এরপর চলে আসুন ভাইজ্যাগের আরো একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্পট ডলফিন নোস বা ডলফিনের নাক এই পুরো পাহাড়ি এলাকাটি ভাইজ্যাগ বন্দরকে ঝড় ঝঞ্জার হাত থেকে রক্ষা করছে দেখতে অনেকটা ডলফিনের নাকের মত বলে এর এরকম নাম, এখানে সমুদ্রে পাশে একটি লাইট হাউস ও আছে, যেটির ওপরে উঠতে হলে আপনাকে ৩-৫ টা মধ্যে আসতে হবে তখন এটি ওপেন হয় আপনারা যদি লাইট হাউসের ওপরে উঠতে চান তাহলে সব দেখে বিকেলে এখানে আসতে পারেন । এটা দেখে আপনি মূল শহরের দিকে আপনি চলে আসুন, দেখে নিন রোজহিল। রোজহিল পাহাড়ের ওপরে একটি সুন্দর চার্চ আছে যা দেখার জন্যই সবাই এখানে আসে, এখানে আসলে আপনি মন্দির, মসজিদ এবং চার্চ এক সাথে দেখতে পাবেন, যা খুবই কম জায়গায় দেখা যায়। রোজহিল দেখে চলে আসুন আজকের শেষ স্পটে ফিশিং হারবারে। এই জায়গাটি হল দক্ষিণ ভারতের বড় মাছের বন্দর। মাছ ধরে ট্রলার গুলো এখানে এসে নোঙ্গর করে তারপর এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়, এত বড় মাছের বন্দর এবং আরৎ খুব কম দেখবেন। এবার সব দেখা মোটামোটি শেষ গাড়ি করে সোজা চলে আসুন আপনাদের হোটেলে ব্যাগ পত্র নিয়ে স্টেশন জন্য বেরিয়ে পড়ুন যার যেসময় ট্রেন থাকবে। তার আগে সময় করে দুপুরের লাঞ্চ টা করে নেবেন আর আপনাদের ট্রেন যদি পরের দিন থাকে তাহলে হোটেলে কিছুটা সময়ে রেস্ট নিয়ে RK বিচ এবং মেরিন ড্রাইভ থেকে ঘুরে আসুন থেকে কিছু পার্ক দেখা যদি বাদ থেকে যায় সেটাও করে নিতে পারেন, আসলে ভাইজ্যাগে পার্কের কোনো অভাব নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন