মধ্যবিত্তের কাশ্মীর বাজেট ট্যুর প্ল্যান
ভ্রমণ পিপাসু :- কাশ্মীর এই নামটাই যথেষ্ট। ভূস্বর্গ, ভারতের সুইজারল্যান্ড বিভিন্ন উপমায় সমাদৃত কাশ্মীর সত্যিই যেনো এক স্বর্গপুরি। কাশ্মীর ভ্রমনের ইচ্ছে নেই এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যি মুস্কিল। কাশ্মীর যাওয়ার ইচ্ছা টা থাকলেও, সময়, পরিকল্পনা, বাজেটের অভাবে অনেকের হয়ে ওঠে না, তাই এই পোস্টে খুব কম খরচে কেমন করে কাশ্মীর ঘুরে আসতে পারেন তারই একটা সুপরিকল্পিত কাশ্মীর প্ল্যান দেওয়ায় চেষ্টা করেছি, কাশ্মীর নিয়ে আপনাদের মনে যে সমস্ত প্রশ্নের উদ্রেক হয় তার সমস্ত কিছুই থাকছে এই ব্লগে, ব্লগ টা পুরো পড়বেন আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।
কাশ্মীর কেমন করে পৌঁছবেন :- কাশ্মীরে পৌঁছোনোর সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম হল ট্রেন বা ফ্লাইটে। ফ্লাইটে আসা অনেকটা সহজ। ফ্লাইটে আসলে আপনাদের সামনে দুটো অপশন আছে শ্রীনগর এয়ারপোর্ট ও জম্মু এয়ারপোর্ট। তবে শ্রীনগর এয়ারপোর্টে নামাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কিন্তু আপনাদের যদি বৈষ্ণবদেবী দর্শনের প্ল্যান থাকে, তাহলে জম্মুতেই নামা ভালো হবে, জম্মু থেকে উধমপুর হয়ে আপনারা কাটরা বৈষ্ণবদেবী যাওয়ার ট্রেন পেয়ে যাবেন। তবে বলতে চাই জম্মু অপেক্ষা শ্রীনগর এয়ারপোর্টের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ খুব ভালো।
এবার আসি ট্রেনে কথায়। কলকাতা থেকে যদি আসতে চান তাহলে তিনটে ট্রেন আপনারা পেয়ে যাবেন কাশ্মীরের, মানে জম্মু পর্যন্ত আসার জন্য। একটি হাওড়া থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেস, কলকাতা স্টেশন থেকে জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস, এবং শিয়ালদহ থেকে হামসাফার এক্সপ্রেস। তবে জম্মু পৌঁছোনোর ক্ষেত্রে হিমগিরি বা হামসাফার এক্সপ্রেসে যাওয়াই বেস্ট হবে। জম্মু পৌঁছে গিয়ে আপনাদের সামনে বিভিন্ন রকম অপশন থাকবে, এবং সবারই প্ল্যান বিভিন্নরকম হয়। যাদের কাটরা বৈষ্ণবদেবী যাওয়ার প্ল্যান আছে তারা তো আগে বৈষ্ণবদেবী দর্শন করে তারপর বাই রোড আপনাকে উধমপুর বা জম্মু থেকে শ্রীনগর বা প্যাহেলগাম যেতে হবে। যাওয়ার জন্য সরাসরি, বে-সরকারি বাস পেয়ে যাবেন, ১২-১৩ ঘণ্টার জার্নি। আর নিজস্ব চারচাকা গাড়ি ভাড়া করলে আরো একটু কম সময় লাগবে। ভাড়ার ব্যাপার গুলো পড়ে বলছি।
- আরো পড়ুন - কেদারনাথ যাত্রার সম্পূর্ণ তথ্য
Beauty of Kashmir. |
আর যারা সরাসরি একদম শ্রীনগর বা প্যাহেলগাম যেতে চান তাদের জন্য গাড়ি বুক করে নেওয়াই ভালো হবে। কিন্তু শ্রীনগর যেতে হলে আপনি ট্রেনেও যেতে পারেন কিন্তু ট্রেন লাইন কিছু জায়গায় নেই, কাজ হচ্ছে কিছু বছরের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। আপনারা যদি ট্রেনে আসতে চান তাহলে আপনাকে বাইরোড জম্মু বা উধমপুর থেকে বানিহাল পৌঁছতে হবে( ট্রেন লাইন উধমপুর থেকে বানিহাল পর্যন্ত কাজ চলছে) বানিহাল পর্যন্ত বাইরোড এসে বানিহাল স্টেশন থেকে শ্রীনগর সরাসরি চলে আসতে পারেন ভাড়াও খুব কম। কিছুক্ষন পর পরই ডেমু ট্রেন আপনারা পেয়ে যাবেন লাস্ট ট্রেন বিকেল ৪টে।
এই ট্রেন জার্নির অনেক গুলো সুবিধা আছে। এক ১২-১৫ ঘণ্টার এক ঘেঁয়ে অসহ্যকর জার্নির হাত থেকে মুক্তি পাবেন, এবং তার সাথে জ্যামের হাত থেকে বেঁচে যাবেন, এবং খরচা ও অনেকটা কম পড়বে। এই বিভিন্নভাবে আপনারা শ্রীনগর পৌঁছতে পারেন।
আরো পড়ুন - কম খরচে লাদাখ ট্যুর প্ল্যান
Dal Lake Sikara Ride |
কাশ্মীর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়:- কাশ্মীর ভ্রমনের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। কাশ্মীর আপনি সারা বছরই যেতে পারেন। কাশ্মীর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম। বিভিন্ন রূপ এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কাশ্মীরে কোন রূপটি দেখতে চান। বছরের কোনো সময়েই কাশ্মীর আপনাকে নিরাস করবে না। চলুন তাহলে দেখে নি কোন সময়ে আসলে আপনি কাশ্মীরের কোন সৌন্দর্য দেখতে পাবেন..
আপনি যদি বরফ দেখতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। আপেল দেখতে চাইলে আপেলের সিজন অর্থাৎ অক্টোবর মাসে। জাফরান বা কেশর দেখতে চাইলে অক্টোবরের লাস্ট থেকে নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত। ফল সিজন বা পাতা ঝরা মরসুম উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে নভেম্বরে এই সময়ে কাশ্মীর সত্যি আলাদাই লাগে আমার খুব প্রিয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টিউলিপ ফুলের সিজন দেখতে চাইলে মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিল মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আসতে হবে । সবুজ কাশ্মীর দেখতে চাইলে আগস্ট, সেপ্টেম্বর। বেশীরভাগ পর্যটকরাই এপ্রিল মাস, আর বরফে ঢাকা সাদা কাশ্মীর দেখার জন্য শীতকালে আসে।
কাশ্মীরে গিয়ে কোন কোন জায়গায় যাবেন কি কি দেখাবেন :- প্রথমে আসি কাশ্মীরের খুবই পরিচিত জায়গা গুলো নিয়ে, কাশ্মীর আসলে কেউ যে জায়গা গুলো মিস করতে চায় না। প্রথমত শ্রীনগর লোকাল ও ডাল লেক, দ্বিতীয়ত শোনমার্গ, এরপর গুলমার্গ এবং সবশেষে প্যাহেলগাম এই জায়গা গুলোর আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আছে আলাদা আলাদা বিশেষত্ব আছে, অবশ্যই সময় অনুযায়ী। কাশ্মীরে কেউ যদি আসতে চান অথবা কাশ্মীরের প্ল্যান করা শুরু করেছেন তাহলে এই জায়গা গুলো অবশ্যই আপনাদের লিস্টে রাখবেন তাহলে অনেকটা মিস করে যাবেন।
কাশ্মীরের এই কয়েকটি জনপ্রিয় জায়গা ছাড়াও আরো কিছু অফবিট জায়গা আছে যেগুলোও কম সুন্দর না। এই জায়গা গুলোতে এখনো পর্যটকদের আনাগোনা তেমন ভাবে না হওয়ায় অনেকটা ভিড়ভাড় থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছন্দে ঘোরা যায় এবং তার সাথে অনেকটা কম খরচে, এই ব্লগে তেমনি কিছু অফবিট জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে ৮০% পর্যটকই যেতে চায় না। তেমনই কয়েকটি জায়গা হলো, শ্রীনগরের কাছেই দুধপাথরি, বন্দিপোতা জেলার গুরেজ ভ্যালি, শোনমার্গের কাছেই বিষ্ণুসার, কৃষ্ণসার ও গডসার লেক শোপিয়ান জেলার অহরবাল, প্যাহেলগামের কাছেই অবস্থিত Warwan ভ্যালি প্রভৃতি।
Kashmiri Apple |
এছাড়া যারা ঘোরার থেকে ট্রেক করতে বেশী ভালবাসেন তাদের জন্য প্রচুর অসম্ভব সুন্দর কিছু ট্রেক রুট আছে, কিন্তু সেগুলো এখনো সে ভাবে জনপ্রিয় হয়নি। কাশ্মীরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেক রুট হল কাশ্মীর গ্রেট লেকস্ বা KGL ট্রেক এছাড়া বারামুলা ভিজ টপ ট্রেক, বাডগামের তোসা-ময়দান ট্রেক, কুলগামের কৌনসারাং ট্রেক, শোপিয়ানের সানসেট পিক ট্রেক। এর বাদে অমরনাথ যাত্রা মা বৈষ্ণদেবী যাত্রা তো আছে, এই যাত্রা গুলোতে হাজার হাজার দর্শনার্থী তাদের পা মেলান প্রতি বছর।
কাশ্মীর কত দিনের ট্যুর প্ল্যান করা উচিৎ : - কাশ্মীরের প্রধান জনপ্রিয় জায়গা গুলো যেমন শ্রীনগর( ২দিন), গুলমার্গ (১দিন), শোনমার্গ সাথে কার্গিল (২দিন), এবং প্যাহেলগাম (২ দিন), মোটামোটি ৭-৮ দিন লাগবেই, এর সাথে যাওয়া আসার সময়টা অ্যাড করে নিতে হবে, ট্রেনে গেলে ৫ দিন যাতায়াতে লাগবেই। মোট ১২ থেকে ১৩ দিন। ফ্লাইটে আসলে আপনাদের আরো ৩ দিনের মতো সময় সাশ্রয় হবে, এই সময়টা আপনারা কাশ্মীরের আরো কিছু অফবিট জায়গাগুলো এক্সফ্লোর করে নিতে পারেন, জায়গা গুলোর নাম আমি আগের পয়েন্টে উল্লেখ করেছি, সেই জায়গার গুলোর ট্রাভেল প্ল্যান ও আমি এই পোস্টেই আপনাদের জন্য দিয়ে দেবো।
- ভিডিও টি দেখুন - প্রাচ্যের ভেনিসও আলেপ্পি, কেরালা
কাশ্মীর ট্যুর প্ল্যান :- আমি আগের পয়েন্টে বলেছি কাশ্মীর ট্যুর প্ল্যান কত দিনের হতে পারে, সেই ব্যপারে আপনারা একটা আন্দাজ পেয়েছেন। এবার এই পয়েন্টে দিন অনুযায়ী কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় একটা ট্যুর প্ল্যান আপনাদের দেওয়ার চেষ্টা করছি যাতে আপনাদের নিজেদের প্ল্যান করতে সুবিধা হয়। আমার এই ট্যুর প্ল্যান টা দেখে নিলে আপনারা নিজেদের পছন্দমতো দিন কম বেশি করে কোন কোন জায়গা অ্যাড করতে বা বাদ দিতে চান সেটা ঠিক করতে পারবেন। চলুন তাহলে কাশ্মীরের ট্যুর প্ল্যান নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
আপনারা যদি ট্রেনে জম্মু হয়ে শ্রীনগরে আসেন অথবা বৈষ্ণদেবী দর্শন করে তারপর শ্রীনগর আসেন তাহলে কিন্তু আপনাদের ১,২ দিন এখানে চলে যাবে। আমি যে প্ল্যান টা দিচ্ছি সেটা হলো শ্রীনগর থেকে শ্রীনগর এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।
প্রথম দিন :- ধরে নিলাম আপনারা শ্রীনগর পৌঁছে গিয়েছেন, প্রথম দিন আপনারা করে নেবেন শ্রীনগর লোকাল যতো সাইটসিং আছে সেগুলো। এই জায়গা গুলো দেখার জন্য মোটামোটি এক থেকে দুদিন লাগে, সেটা আপনারা এক দিনেও করে নিতে পারেন। আর ফ্লাইটে শ্রীনগর দিনে দিনে পৌঁছে যেতে পারলে ওই দিনটাও আপনারা পেয়ে যাবেন শ্রীনগরের জন্য। ওই দিন বিকেলটা ডাল লেকে ঘুরে নিতে পারেন, সূর্যাস্তের সময় অপূর্ব লাগে এই জায়গা।
শ্রীনগর লোকালে ঘোরার জন্য আপনারা সবসময় ছোটো গাড়ি ভাড়া করবেন। সবচেয়ে ভালো হবে অটো ভাড়া করা ৮০০-১০০০ টাকার মতো নেবে। বড় গাড়ি করলে একটা অসুবিধা হলো আপনাদের অনেক আগে নামিয়ে দেবে বাকিটা পথ আপনাকে হেঁটে যেতে হবে।
Dal Lake, Srinagar. |
শ্রীনগরের আসে পাশে কি কি দেখার জায়গা আছে:- ডাল লেক, যাকে কাশ্মীর তথা শ্রীনগরের হার্ট বলা হয় যাকে কেন্দ্র করে আপনি শ্রীনগর ঘুরবেন।
মুঘল গার্ডেন( কাশ্মীরে ৬ টি মুঘল গার্ডেন আছে এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ টা দেখলেই যথেষ্ঠ)।
হজরত বাল দরগা।
শঙ্করাচার্যের মন্দির।
হরি পর্বত।
বাদামবাড়ি।
প্রথমে আসি ডাল লেকের কথায়। শ্রীনগর আসবেন আর ডাল লেকে শিকার ভ্রমন করবেন না এটা হয় নাকি, কিন্তু একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন যেটা হলো শিকারা সবসময় হয়তো তো খুব সকালে নাহয় বিকেল এবং সন্ধ্যার টাইমে করার চেষ্টা করবেন, ভালো ভিউ উপভোগ করার জন্য। আর খুব সকালে না গেলে ভাসমান সব্জি ও ফলের মার্কেট টা আপনারা দেখতে পাবেন না। ভাড়া নিয়ে আপনাদের একটা আইডিয়া দিতে পারি ১ ঘণ্টার জন্য ৪০০-৫০০ টাকা 2 ঘন্টার জন্য ৮০০ টাকা। আর ভাসমান মার্কেট যেতে হলে একটু বেশি নেবে ১০০০ টাকার বেশি, সময় লাগে এখানে যেতে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সেটা দরদাম করে ঠিক করে নেবেন।
Night View, Dal Lake. |
এবার আসি মুঘল গার্ডেনের কথায়, কাশ্মীরের বললাম ৬টা মুঘল গার্ডেন আছে তার মধ্যে শালিমার বাগ, নিশাত বাগ, চশমেশাহী বাগ, এছাড়া পরী মহল এগুলোই বিখ্যাত। এই চারটে মুঘল গার্ডেন দেখলেই আপ্নার অনেক কিছু দেখা হয়ে যাবে, অনেকের সময় কম থাকে বলে ২-৩ টা দেখেই চলে যায়। এই সব গুলো মুঘল গার্ডেনই ভারতের মুঘল সম্রাটরা ও তাদের আত্মীয়দের দ্বারা নির্মিত, এর ইতিহাসে আর গেলাম না আপনি ইতিহাস জানতে চাইলে গুগল বা ইউটিউব থেকে সার্চ করলে পেয়ে যাবেন। প্রতিটি মুঘল গার্ডেনই ডাল লেকের একদম ধারে আপনি অটো রিজার্ভ করে একে একে দেখে নিতে পারেন। প্রতিটি মুঘল গার্ডেনেরই প্রবেশমূল্য -২৪ টাকা।
Lal Chowk Ghanta Ghar |
শঙ্করাচার্যের মন্দির :- শ্রীনগরের ডাল লেক থেকে খুব একটা দূরে না অটো আপনাকে ছেড়ে দেবে, বাকি পথ আপনাকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে, প্রায় ২৫০সিড়ি ভেঙে আপনাকে এই প্রাচীন মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে। একটু কষ্ট হবে কিন্তু ওপরে ওঠার পর আপনাদের সমস্ত কষ্টই দূর হয়ে যাবে। এটি আসলে একটি শিব মন্দিরে। খ্রিস্টের জন্মের পূর্ব থেকেই আছে এই মন্দির, ৮০০ শতকের দিকে জগৎগুরু শঙ্করাচার্য এই মন্দিরে এসেছিলেন, তার পর থেকেই এই মন্দিরের নাম হয়ে গেছে শঙ্করাচার্যে মন্দির।
হরিপর্বত :- হরিপর্বত টি ও শ্রীনগর শহরের মধ্যেই অবস্থিত। এখানে আপনি মুঘল /আফগান আমলের একটি প্রাচীন দুর্গ দেখতে পাবেন। শ্রীনগর আসলে এই দুটো জায়গা অবশ্যই ভিজিট করবেন।
আর শেষে একটা কথা শ্রীনগর আসলে কাশ্মীরের বিখ্যাত খাওয়ার ওয়াজবান খেতে ভুলবেন না। লাঞ্চ টা আপনারা শ্রীনগরের বিখ্যাত কিছু রেস্টুরেন্ট থেকে ওয়াজবান টা টেস্ট করে দেখবেন। কাশ্মীরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা বিয়ের সময় এই খাওয়ার পরিবেশন করা হয়। কয়েকটি রেস্টুরেন্টের নাম আমি দিলাম -
১। মুঘল দরবার।
২। আহদুস রেস্টুরেন্ট।
৩। সাফা'স কাশ্মীরী ওয়াজবান।
৪। করীমা রেস্টুরেন্ট ।
Kashmiri Wazwan at Mughol Darbar. |
দ্বিতীয় দিন-গুলমার্গ: - গুলমার্গ এই নামটা শুনলেই সবার মধ্যেই একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। বলিউড সিনেমাই এই গুলমার্গ পর্যটকদের কাছে এতো জনপ্রিয় করেছে কত সিনেমারই সুটিং হয়েছে এখানে তা গুনে বলা অসম্ভব কাশ্মীরের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় স্থান এই গুলমার্গ। গুলমার্গ সকলে আসে মুলত বরফ দেখার জন্য, প্রায় ১২০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত গুলমার্গে আপনি কিন্তু সারাবছর বরফ পাবেন না। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বরফ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম তাই এটা জেনেই আপনারা প্ল্যান করবেন।
গুলমার্গ বরফ ছাড়াও আরো কয়েকটি জিনিসের জন্য বিখ্যাত। এক গুলমার্গেই আছে ওয়ার্ল্ড এর সর্বোচ্চ গল্ফ কোর্স, এশিয়ার প্রথম এবং দ্বিতীয় উচ্চতম রোপওয়ে, এছাড়াও গন্ডোলা রাইড এবং স্কির জন্য গোটা পৃথিবীতে বিখ্যাত এই গুলমার্গ। এছাড়া একটি মন্দির ও হরি সিং এর প্রাসাদ প্রভৃতি।
গুলমার্গ এসে কি কি করবেন :- গুলমার্গে করার মত প্রচুর adventure activity আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গন্ডোলা রাইড। শীতকালে আসলে বিভিন্ন winter activity ও Sports। এছাড়া ও আপনারা পাবেন পনি রাইড বা ঘোড়ায় চড়ে গুলমার্গকে এক্সফ্লোর করা।
গন্ডোলা রাইড করে বরফের আসায় সকলে 1st ফেজ এবং তারপর 2nd ফেজে যায়, জায়গা গুলোর মধ্যে প্রায় ২.৫ কি.মি দূরত্ব। আপনি যদি শীতকালে আসেন তাহলে হয়তো নিচেই বরফ পেয়ে যাবেন পরের ফেজ গুলোতে হয়তো যাওয়ার দরকার পড়বে না।
এ বছর মার্চ মাস থেকে গন্ডোলা বুকিং অনলাইনে শুরু হয়ে গেছে আপনারা অবশ্যই টিকিট অনলাইনে বুক করে আসার চেষ্টা করবেন, যদিও দালালের জন্য অনেক টিকিট আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। টিকিট অনলাইনে কাটলেও গুলমার্গ পৌঁছে আপনাকে গন্ডোলাতে ওঠার জন্য আপনাকে ঘন্টা দেরেক লাইনে দাঁড়াতে হতে পারে তার বেশি ও হতে পারে। এই লাইন ও অনেক দালালের উৎপাত থাকে। প্রথমে ফেজ-১ এবং তারপর টিকিট দেখিয়ে ফেজ-২ তে তারপর আবার একই ভাবে গুলমার্গে ফেরত।
শ্রীনগর থেকে দ্বিতীয় দিন একটু সকাল সকাল বেরোতে হবে আপনাদের গুলমার্গের উদ্দেশ্যে। শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ যা দূরত্ব তাতে আপনারা প্রায় দু ঘন্টাতেই পৌঁছে যাবেন। কিন্তু আপনাদের যদি প্ল্যান থাকে সেই দিনই শ্রীনগরে ব্যাক করবেন তাহলে একটু সকাল সকাল ই বের হতে হবে। কারো কারো প্ল্যান থাকে সেই রাত টা গুলমার্গে স্টে করার, তাহলে একটু দেরি করে বের হলে ক্ষতি নেই, আমার মনে হয় একদিন ওখানে না থাকাই ভালো হবে একটা দিন নষ্ট করার কোনো দরকার নেই, গুলমার্গে থাকার কিছু ভালো ব্যবস্থা যুক্ত হোটেলের নাম ও নাম্বার আমি নিচে দিয়ে দেবো আপনারা দেখে নেবেন। গুলমার্গের আগেই পড়বে ট্যানমার্গ বলে একটি জায়গা। এখান থেকেই গুলমার্গ যাওয়ার আসল রাস্তা শুরু হয়, ট্যানমার্গ থেকে গুলমার্গ যাওয়ার প্রায় ১০-১২ কি.মি রাস্তা খুবই সুন্দর, আপনাদের যথেষ্ট উপভোগ্য হবে এই রাস্তা টুকু।
গুলমার্গ পৌঁছে গাড়ি আপনাকে প্রায় ১ কি.মি আগে নামিয়ে দেবে স্ট্যান্ডে যেখানে আই লাভ গুলমার্গ লেখা আছে, সেখান থেকে গন্ডোলা টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত প্রায় ১ কি.মি রাস্তা আপনি হেঁটেই যেতে পারেন নাহলে তো ঘোড়া আছেই। আবার গুলমার্গ থেকে ফেজ - ১ পর্যন্ত অনেকে হেঁটে বা ঘোড়ায় যেতে চায় আবার আপনাদের যদি টিকিট ফেজ - ২ এর করা থাকে তাহলে ফেজ - ১ পর্যন্ত রাস্তা টুকু কিন্তু আপনাকে হেঁটে বা ঘোড়া তেই যেতে হবে এটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। সমস্ত কিছুর রেট আমি নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য দিয়ে দেবো।
গুলমার্গ 1st ফেজ( Kongdori Station) এর ভাড়া ৭৪০। 2এন্ড ফেজ ( Apharwat) এর ভাড়া ৯৫০। গুলমার্গ গন্ডোলা বুকিং লিঙ্ক -
তৃতীয় দিন - শোনমার্গ :- আগেই বলে রাখি শোনমার্গে যদি আপনারা একদিন থাকতে চান তাহলে একটু দেরি করে বেরোলেও হবে কিন্তু আপনি যদি ওইদিনই শ্রীনগর ফেরত আসতে চান তাহলে সকাল ৭টা মধ্যেই বেড়িয়ে পড়ুন, কারণ শোনমার্গের দূরত্ব কিন্তু প্রায় ৮০ কিমি, এবং আপনাদের পৌঁছতে প্রায় ২.৩০ ঘন্টা বা তার বেশি ও লেগে যেতে পারে, আর আমি বলবো আপনারা একটা দিন অন্তত শোনমার্গে থাকুন তাহলে আপনারা অনেকটা ভালো করে শোনমার্গের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারবেন এবং তার সাথে সাথে জোজিলা পাস, জিরো পয়েন্ট এবং কার্গিলের আসে পাশের এলাকাকে ভালো ভাবে এক্সফ্লোর করতে পারবেন এবং শরীরের ওপরের চাপও পড়বে না। শোনমার্গে থাকার মতো কিছু ভালো জায়গার খোঁজ আপনাদের আমি নিচে দিয়ে দেবো।
Sind River |
শোনমার্গে পৌঁছে যাওয়ার পর আপনাদের গাড়ি স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেবে। এখান থেকে আপনারা বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারেন যেমন জোজিলা পাস, জিরো পয়েন্ট, বালটাল, অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প, দ্রাসের কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল, এবং কার্গিল শহর প্রভৃতি জায়গা গুলো দেখার জন্য আপনাকে এখানে থেকে আলাদা গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে জোজিলার জন্য ভাড়া ৩৫০০ টাকার কমবেশি, এবং দ্রাস, কার্গিল গেলে ৫০০০-৫৫০০ মত নেবে। আর আপনারা যদি আগে থেকেই দ্রাস, কার্গিল যাওয়ার জন্য ড্রাইভারের সাথে কথা বলে রাখেন তাহলে আর আলাদা করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে না।
শোনমার্গে পৌঁছে আপনি কি কি করবেন, শোনমার্গে পৌঁছে আপনাকে লোকাল কিচ্ছু পয়েন্ট ঘোরার জন্য ঘোড়া ভাড়া করতে হবে। শীতকালে আসলে বিভিন্ন winter activities আছে এখানে গুলমার্গের মত। ঘোড়া আপনাকে নিয়ে যাবে একদম হাইটে Glacier পয়েন্ট পর্যন্ত যাকে থাজিবাস Glacier বলে, আরো এক দুটো একরকম স্পট আছে, আর বিভিন্ন সিনেমার যে শুটিং স্পট যেগুলো ঘোড়াওয়ালা আপনাদের বলতে বলতে যাবে, রাস্তায় ছোটো নদীর ধারা গুলো পাবেন আর অসাধারন সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আপনাকে সময় কখন কেটে যাবে আপনি টেরই পাবেন না। glacire এ ভালো বরফ থাকলে আপনি ওখানে ও activity করতে পারেন ২০০-৩০০ টাকার বিনিময়ে। পুরো যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ৩.৩০ ঘণ্টার মত সময় লাগবে। এবার ফিরে এসে লাঞ্চ করে নেবেন ওখানে কিছু খাওয়ার রেস্টুরেন্ট আছে, খেয়ে নিয়ে আপনারা শ্রীনগর ফিরে যেতে পারেন নাহলে জোজিলা পাস ঘুরে এসে শ্রীনগর যেতে পারেন।
Way to Somamarg |
এবার আপনারা যদি শোনমার্গে থাকার প্ল্যান করে থাকেন তাহলে তাহলে পরের দিন আপনারা যেতে পারেন প্রথমে জোজিলা পাস যা কাশ্মীরে ভ্যালি কে লাদাখের সাথে সংযোগ করেছে। এরপর পাবেন জোজিলা পাস জিরো পয়েন্ট, বালটাল, অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প, পাস দিয়েই আপনাদের বয়ে যেতে দেখবেন সিন্ধ নদী। এরপর আপনারা আসতে আসতে কার্গিলের দিকে অগ্রসর হবেন, জোজিলা পাস পার করলেই আপনি পাহাড়ের গঠন ও রঙে অনেক পরিবর্তন দেখবেন তার মানেই আপনি লাদাখে ঢুকছেন, মীনামার্গ চেক পোস্ট ক্রস করার পরই আপনি লাদাখে প্রবেশ করে গেছেন এরপর আসবে দ্রাস ভ্যালি এবং দ্রাসের কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল, এখানেই কার্গিল যুদ্ধের বেশিরভাগটা সংঘটিত হয়েছিলো। কার্গিল এখান থেকে ৫৪ কি.মি। কার্গিল অবস্থিত সুরু নদীর তীরে, কার্গিলে শহরের দেখার মত তেমন কিছু নেই একটা ভিউ পয়েন্ট ছাড়া, শুরু ভ্যালিতে দেখার মত অনেক কিছু আছে কিন্তু সেইজন্য আপনাকে কার্গিলে একদিন থাকতে হবে। এরপর আবার আপনাদের শ্রীনগর ব্যাক।
ভিডিও টি দেখুন - কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল
পঞ্চম দিন পহেলগাম :- প্রকৃত কাশ্মীর বা কাশ্মীরের সৌন্দর্যকে যদি উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে পহেলগাম আসতেই হবে। লিডার নদীর তীরবর্তী পহেলগাম সত্যি আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। চতুর্থ দিন শোনমার্গ থেকে সোজা চলে আসুন পহেলগাম, দুরত্ব ১৭০ কি.মি। আপনাদের আসতে সময় লাগবে প্রায় ৪.৩০ ঘন্টা। আর আপনারা যদি কার্গিল দেখে ব্যাক করেন তাহলে সেদিন শ্রীনগরে থাকাই বেস্ট হবে, শ্রীনগর থেকে পরের দিন সকালে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন প্যাহেলগাম। প্যাহেলগাম যাওয়ার দুটি জায়গায় আপনারা দাঁড়াবেন এক পম্পোর নামক জায়গায় অবশ্যই দাঁড়াবেন এই পম্পোর হল কাশ্মীরের জাফরান বা Saffron এর রাজধানী, অরিজিনাল কেশর বা জাফরান নিতে হলে আপনি এখান থেকেই নিবেন, বিভিন্ন দামের জাফরান পেয়ে যাবেন। পাশেই ফিল্ড আছে এবং রাস্তার ধারে প্রচুর দোকান, আপনি না দাঁড়ালেও আপনাদের ড্রাইভার আপনাদের দাঁড় করাবেই কারণ তাদের কিছু তো কমিশন থাকে এরমধ্যে। আরো একটি জায়গা আছে সেটা হল কাশ্মীরের উইলো ব্যাট তৈরীর কারখানা, এই দোকান গুলোতে ও আপনারা দাঁড়াতে পারেন।
Saffron Field |
প্যাহেলগাম আপনারা কি কি দেখবেন, কেমন করে দেখবেন, কয়দিন থাকবেন, প্যাহেলগামে ঘোরার জন্য আপনাকে দুটো দিন আপনাকে দিতেই হবে, প্রকৃতি কাশ্মীরের রূপ আপনি এখানেই পাবেন, আর দুটো দিন অন্তত আপনারা এই প্যাহেলগামে না দিলে কাশ্মীরের আসল সৌন্দর্যকে দেখা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন। প্রথম দিন আপনারা প্যাহেলগামের দুটো জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন, একটা আরু ভ্যালি এবং দ্বিতীয় বেতাব ভ্যালি। এবং সময়ে থাকলে চন্দনবাড়ি। এই জায়গা গুলো ঘুরার জন্য আপনাকে taxy প্যাহেলগাম থেকেই বুক করতে হবে এখানে আলাদা taxy ইউনিয়ন আছে রেট একদম ফিক্স, আমি নিচে রেট চার্ট দিয়ে দেবো। থাকার জন্য বেস্ট হবে আরু ভ্যালি, সেখানে না পেলে প্যাহেলগামে অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন।
প্রথম দিন আপনারা বেতাব ভ্যালি দিয়ে আপনারা আপনাদের যাত্রা শুরু করতে পারেন সেটা গাড়ির ড্রাইভারের সাথে কথা বলে ঠিক করে নেবেন কোনটা আগে,পরে করবেন। বেতাব ভ্যালির নামকরণ হয়েছে সানি দেওল ও অমৃতা সিং এর ১৯৮৩ সিনেমা বেতাবের জন্য। আর আগে এই ভ্যালি অন্য নামে ডাকা হতো। এখানে প্রবেশ মুল্য ১০০ টাকা। খুবই সুন্দর জায়গা পাশেই বয়ে চলেছে লিডার নদী, এক দের ঘন্টা দেখতে দেখতেই আপনাদের কেটে যাবে। নেক্সট আপনারা যাবেন আরু ভ্যালিতে। এটি ও লিডার নদীর পাশে একদম স্বর্গপুরি। এই আরু ভ্যালির বিভিন্ন স্পট ঘুরার জন্য আপনাকে ঘোড়া ভাড়া করতে হবে, এখানে সব জায়গায় তেই দরদাম ভালো মত না করলে পারলে আপনি কি একদমই ঠকে যেতে পারেন। রাতে থাকার হোটেল টা কিন্তু আপনারা আরু ভ্যালিতে করতে পারলে ভালো। প্যাহেলগাম শহর থেকে কিন্তু প্রকৃতিকে আরো ভালো ভাবে এনজয় করতে পারবেন। এবার আপনাদের হাতে যদি সময় থাকে তাহলে চন্দনবাড়িটা ঘুরে নিতে পারেন, এই চন্দনবাড়ি হল অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প যদিও এখানে খুব একটা দেখার কিছু নেই।
Kashmiri Kawa. |
প্যাহেলগামে দ্বিতীয় দিন :- দ্বিতীয় দিন আপনারা সকালে উঠে প্যাহেলগামের আসে পাশে থাকলে পায়ে হেঁটে প্যাহেলগাম টা ঘুরে নিতে পারেন। তারপর ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন বাইশরন ভ্যালি দেখার উদ্দেশ্যে, খুব বেশি দিন হয়নি এই জায়গা ফেমাস হয়েছে, একে কাশ্মীরের মিনি সুইজারল্যান্ড ও বলে। গাড়ি থেকে নেমে আপনাকে এখানে যাওয়ার জন্য বাকিটা পথ হয় ট্রেক করে যেতে হব নয়তো ঘোড়াতে, হেঁটে গেলে ৪০ মিনিটের মত রাস্তা, আমার মতে হেঁটে আসাই বেস্ট হবে, বয়স্ক বা বাচ্চা থাকলে ঘোড়াতে আসুন, ভাড়া নিতে পারে ৭০০-৮০০ টাকার মতো। এখানে পৌঁছনোর পর ৩০ টাকার টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলে আপনার মনে হবে সত্যিই যেনো সুইজারল্যান্ডে চলে এসেছেন, বিশাল এলাকা জুড়ে সবুজে মোড়া এলাকা, চারপাশে হাজার হাজার পাইন গাছের সারি, আর ওপরে তুষারে ঢাকা সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি। এখানে ঘন্টা খানেক কাটিয়ে চলে আসুন নিচে।
এবার আপনাদের ফিরে যাওয়ার পালা এখান থেকে গাড়ি করে সোজা চলে আসুন জম্মু বা শ্রীনগরে। ফ্লাইটে ফেরার থাকলে শ্রীনগর আর ট্রেনে হলে আপনাদের জম্মু আসতে হবে। এই ভাবেই আপনাদের মোটামুটি ৭ দিনের কাশ্মীর ট্যুরের সমাপ্তি ঘটবে। এর বাইরেও আপনারা যদি কিছু এক্সট্রা জায়গা কিছু অফবিট জায়গায় যেতে চান তাহলে নিচের পয়েন্টে কিছু অফবিট জায়গার বিবরণ থাকবে।
হোটেল ও গাড়ি :- কাশ্মীরে থাকার হোটেলের কোনো অভাব নেই, অনলাইন প্রচুর হোটেল পেয়ে যাবেন এবং ওখানে পৌঁছেও প্রচুর অপশন পেয়ে যাবেন, তবে এবছর লকডাউনের পর কাশ্মীরে যা ভিড় হচ্ছে তাতে আপনাদের আগে থেকে হোটেল বুক করে যাওয়ায় ভালো হবে, এই ভিড় আমার মতে আরো দুবছর তো থাকবেই। আমি কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা অনুযায়ী কিছু ভালো হোটেলের খোঁজ দিচ্ছি, আমরা যেসব হোটেলে ছিলাম সেগুলো বাদেও কিছু ভালো হোটেল ও তাদের কনট্যাকট নাম্বার নিচে দিলাম, তাছাড়া আপনারা অনলাইন বিভিন্ন অ্যাপ থেকেও সার্চ করে দেখে নিতে পারেন...
হোটেল খরচা শ্রীনগরে একটু কমে আপনারা পাবেন, বাজেট হোটেল ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে পাবেন। কিন্তু শ্রীনগরের বাইরে হোটেল রেট শুরু ১২০০ থেকে, ভাগ্য ভালো থাকলে ১০০০ এ পেয়ে যেতে পারেন। বাজেট হাউসবোট আপনারা ২০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এই হাউসবোট গুলোর একটা সুবিধা হল শিকারা রাইড ফ্রি পাবেন।
এরপর আছে খাওয়ার খরচা, দিন হিসাবে একজনের সারাদিনে খাওয়ার পিছনে ৬০০-৭০০ টাকা টা লাগবেই। এ ছাড়াও কিছু এক্সট্রা খরচা এবং কাশ্মীরে আসলে এই খরচ যেটা সবারই হয় সেটা হলো কেনাকাটা, বিভিন্ন ধরনের, পশমিনা, শাল, কার্পেট, জামা কাপড়, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাশ্মীরের জাফরান আরো অন্যান্য এগুলোর পেছনে আপনাদের খরচা হবেই। যদি আপনাদের টীমে তিন থেকে চার জন থাকে তাহলে ১৬০০ টাকা করে আপনাদের এই ট্রিপের পেছনে খরচা হতে পারে। শ্রীনগরে সবাই ডাল লেকের আসেপাশে হোটেলে থাকার চেষ্টা করে, ডাল লেকে ১ থেকে ৩ নাম্বার গেট বাদ দিয়ে একটু পরের গেট গুলোর পাশে এবং, লাল চক বা ঘন্টাঘরের আসে পাশে হোটেল নিলে একটু বাজেট হোটেল পাবেন, কিন্তু এ বছর প্রচুর ভিড় থাকার জন্য হোটেলের রেট খুব চড়া ছিল।
শ্রীনগর হোটেল :-
1. Hotel Hill Top - 09469696922
2. Chinar guest house - 09797229400
3. Hotel Snowland Srinagar - 09419515284
4. Hotel JH Bazaz - 09622424355
5. Hotel Kashmir Inn - 078896 82277
6. Houseboat- (yousuf) - 7889664858
7. Best View Resort Houseboat - 09906
528181/09419018846
গুলমার্গ হোটেল :-
1. Hotel pine Spring - 09906512140
2. Rosewood Hut- 01954254448
3. Gulmarg Inn - 01244588630
4. Green Park - 9622441518
শোনমার্গ হোটেল : -
1. Hotel Glacier heights - 09419903357
2. Hotel Divine Inn - 09419031381
3. Hotel Village walk - 06005211180
4. Hotel Sunshine - 9419629229/941978106
প্যাহেলগাম হোটেল
1. Hotel Shepherd - 088993 33993
2. Hotel noor Mahal - 09906886742
3. Wood Resort - 096970 81489
4. Pine view resort - 094190 45146
5. Friends Guest house Aru Velley - 01936 210 928
6. Rohella Guest house - 09411555625
গাড়ি জন্য বুকিং আপনারা যদি একবারে বুক করে নিতে পারেন তাহলে ভাড়া আপনাদের কিছুটা হলেও কম হবে। কিন্তু বিশেষ কিছু জায়গার জন্য আপনাকে ওখানকার লোকাল ইউনিয়নের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকেই গাড়ি বুক করতে হবে। সেটা ওখানে গিয়ে বুক করতে পারবেন যেমনটা প্যাহেলগাম লোকাল,( আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, চন্দনবাড়ি), শোনমার্গ থেকে ( জিরো পয়েন্ট, জোজিলা পাস, বালতাল)। জম্মু থেকে যে গাড়ি করে আপনারা শ্রীনগর পৌঁছোবেন সেই গাড়ি আপনাকে শ্রীনগর পর্যন্তই নিয়ে যেতে পারবে তারপর আপনাকে বাকি জায়গা ঘুরার জন্য শ্রীনগরের গাড়ি বুক করতে হবে। জম্মু স্টেশন থেকে বাস স্ট্যান্ডের দূরত্ব ৪ কি.মি এখান থেকেই আপনারা শ্রীনগর যাওয়ার বিভিন্ন ধরণের বাস, ছোটো গাড়ি পেয়ে যাবেন। আর শ্রীনগরের লোকাল ঘোরার জন্য চেষ্টা করবেন একটা অটো রিজার্ভ করে নিতে সারাদিনের জন্য, গাড়ি থেকে অটো রিজার্ভ করলে অনেক সুবিধা আছে। আমি হোটেলের মতই কিছু গাড়ির ড্রাইভারের নাম ও নাম্বার আপনাদের দিয়ে দিচ্ছি আপনারা ফোন করে কথা বলে নিতে পারেন, আপনারা কোন কোন জায়গা ভিজিট করতে চান সেই অনুযায়ী।
1. আশিক - 07051820911
2. উমর - 07006765957
2. মূর্তাজা পান দুই ভাই - 6005381930/9419840627 আমাদের ড্রাইভার, কার্গিল লাদাখ যেতে চাইলে ইনি বেস্ট।
3. Sunway Kashmir - 9469150408/9018284105
4. Govt tourist Taxy stand dal lake gate - 9419077544/01942501776।
কাশ্মীর ভ্রমণের খরচ :- ঘোরার জন্য খরচা কত হতে পারে, এটা বলা খুব কঠিন কাজ, খরচা অনেকটা নির্ভর করে আপনি কোন সময় যাচ্ছেন কেমন ব্যবস্থায় থাকছেন। তাছাড়া খরচাটা বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম হতে পারে তারা বিভিন্ন রকম ভাবে খরচা করতে পারে।
যাতায়াত বাবদ খরচ :-
ফ্লাইট খরচ - ৫০০০-৬০০০ টাকা।
ট্রেন এসি থ্রি টায়ার- ৩০০ টাকা
জম্মু থেকে শ্রীনগর গাড়ি রিজার্ভ করলে - ৭০০০-৮০০০ ছোটো গাড়ি করলে একটু কম হবে, শেয়ারে গেলে ১০০০-১২০০
বাস বিভিন্ন ধরনের আছে ৬০০-১২০০ মধ্যে। এয়ারপোর্ট বা স্টেশন থেকে হোটেল ড্রপ এর জন্য ৮০০-১০০০ টাকা।
শ্রীনগর লোকাল ঘুরতে অটো ভাড়া করলে ৮০০-১২০০ গুলমার্গ শোনমার্গ বা প্যাহেলগাম যাওয়া দিন হিসেবে ২২০০-২৫০০ টাকার মধ্যে নিবে, পিক সিজনে দাম একটু বাড়বে। আবার শোনমার্গ থেকে আপনি যদি জোজিলা পাস বা কার্গিল যেতে চান সেটার জন্য আলাদা খরচা, একইরকম প্যাহেলগামের সাইটসিং জন্য আলাদা গাড়ি আলাদা আলাদা চার্জ আছে। আরু ভ্যালি, চন্দনবাড়ি, বেতাব ভ্যালির জন্য চার্জ - ৭০০*৩ - ২১০০।
ঘোড়া বা পোনি চার্জ :-
গুলমার্গে ঘোড়া করার দরকার নেই, যদি আপনারা গন্ডোলার ফেজ-১ এর টিকিট না থাকে তাহলে ওটুকু যেতে ঘোড়া করতে পারেন বা হেঁটে যেতে পারেন, ঘোড়া - ৭০০-৮০০ টাকা নেবে।
শোনমার্গে আপনাদের ঘোড়া লাগবেই glacier point যেতে আপনাদের অনেক চাবে কিন্তু আপনারা ১৩০০ বেশি দিবেন না এবং আরো কিছু পয়েন্ট আছে এখানে বারগেনিং করতে হবে প্রচুর।
এবার আসি প্যাহেলগামে এখানে আরু ভ্যালি থেকে তুলিয়ান লেক যেতে আপনাদের ২৫০০ টাকার মতো নিবে বাইসারান ভ্যালি যেতে আপনারা ৮০০ বেশী দেবেন না।
কাশ্মীরের কিছু অদেখা অফবিট জায়গা :- কাশ্মীর কে যে জন্নত বলা হয় সেটা একদমই সত্যি। কাশ্মীরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন সুন্দর সুন্দর জায়গা যার সৌন্দর্যকে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কাশ্মীরের এরকম কিছু ভার্জিন এবং লুকিয়ে থাকা জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো এই ব্লগে, যে জায়গা গুলো এখনো পর্যটনদের পা সেভাবে পড়ে নি, আসুন তাহলে জেনে নি ভূস্বর্গের সেইসব অজানা জায়গা গুলো....
১. লোলাব ভ্যালি ও কালারুশ দুর্গ :- কাশ্মীরের কূপওয়ারা জেলায় অবস্থিত কাশ্মীরের অন্যতম সুন্দর জায়গা অঞ্চল এই লোলাব ভ্যালি যাকে স্থানীয়রা বাদি-এ-লোলাব বলে থাকে।
লোলাব ভ্যালি বিখ্যাত তার সুন্দর সুন্দর সবুজ তৃণভূমি অঞ্চল, বিভিন্ন ঝিল (উলার হৃদ ট্রেক) এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছের জন্য বিখ্যাত। এই ভ্যালিতে আরু, খোয়ানী, চেরি, আপেল, আখরোটের মত ফলের গাছ খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ঘাঁটি চারিদিক প্রাকৃতিক আকর্ষন দ্বারা ঘেরা, তাই আপনি ভিড়ভাড় থেকে মুক্ত হয়ে শান্ত পরিবেশে এক থেকে দু দিন কাটাতে পারবেন।
লোলাব ভ্যালির আরো একটি আকর্ষণীয় জায়গা হলো কালারুশ গুহা। কুপওয়ারা জেলার মাধমাদু গ্রামের কাছে অবস্থিত একটি বিশাল পাথরের অংশ আসলে এটি গুহা। গুহায় সাতটি দরজা থেকেই এর নাম হয়েছে 'সাতবারন' এর ওখানকার মানুষের বিশ্বাস ও দাবি যে এই সাতটি পথই গিয়ে শেষ হয়েছে রাশিয়ায়, সেই বিশ্বাস থেকেই এর নাম দেওয়া হয়েছে কিলা-ই-রুস বা কালারুশ। একটু ট্রেক করে আপনাদের এই গুহার মুখ পর্যন্ত যেতে হবে।
শ্রীনগর থেকে প্রায় ৮৫ কি.মি দূরে অবস্থিত এই কূপওয়ারা, আর কূপওয়ারা থেকে ৮-৯ কি.মি দূরে এই লোলাব ভ্যালি। আপনি চাইলে শ্রীনগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোপোর হয়ে এখানে পৌঁছে যেতে পারেন খুব সহজে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টার কিছু বেশি। এছাড়া আপনি চাইলে বাসে ও আসতে পারেন কূপওয়ারা, তারপর কূপওয়ারা শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসে পাশে ঘুরে নিতে পারেন। থাকার অপশন খুব কম এখানে। যদিও J&K সরকারের ট্যুরিস্ট বাংলো এবং এক দুটো আরো বাংলো থাকার জন্য আপনারা পেয়ে যাবেন, এ ছাড়াও গ্রাম গুলিতে জিজ্ঞেস করলে হোমস্টে পেয়ে যেতে পারেন।
2. দুধপাথরী :- পর্যটকরা কাশ্মীরে এসে গুলমার্গ, শোনমার্গ থেকে প্যাহেলগাম গেলেও এই জায়গাটিকে কেনো বাদ দেয় সেটা আমিও বুঝলাম না। এই সুন্দর জায়গাটির নাম হলো দুধপাথরী বা দ্যা ভ্যালি অফ মিল্ক বলে। এই জায়গার সৌন্দর্য কিন্তু কোনো মতেই বাকি জায়গা গুলো থেকে কম না। চারদিক দিয়ে পাহাড় ও পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা বিশাল বিস্তৃত সবুজের গালিচা, এবং তার মধ্যেই শয়ে শয়ে ভেড়ার পাল সত্যি দেখে অবাক হয়ে যাবেন। আপনি এখানে পৌঁছনোর পর আরো কিছু স্পটে ঘুরে নিতে পারেন কিন্তু তার জন্য আপনাকে হেঁটে অথবা ঘোড়া ভাড়া করতে হবে। ঘোড়াওয়ালা সাথে একটু ভালো মতোই দরদাম করতে হবে এবং কিছুটা সময় অপেক্ষা করলেই দেখতে পাবেন ঘোড়াওয়ালা আপনাকে ৮০০ টাকাতেই আপনাদের নিয়ে যাবে কারণ পর্যটক এখানে একটু কম, যদিও এখন অনেকেই আসছে এখানে। দেখার মত কিছু ঝর্ণা, দুধগঙ্গা নদী প্রভৃতি দেখতে পাবেন।
Dudhpathri |
শ্রীনগর থেকে এখানে আসা খুব সোজা মাত্র ৪০ কি.মি দূরে এই জায়গাটি, খালি একটি গাড়ি ভাড়া করতে হবে আপনাদের তাহলেই হল।
3.ইউসমার্গ :- ইউসমার্গ/Yusmarg, যার অর্থ হলো The Meadow Of Jesus, ইউসমার্গ নামটা এসেছে যীশু খ্রিস্টের প্রকৃত নাম Yashua থেকে। যার অবস্থান কাশ্মীরের বডগাম জেলায়, কাশ্মীরের আরো একটি সুন্দরতম অফবিট জায়গা।
ইউসমার্গ এমন একটা জায়গা যেখানে না আছে কোনো কোলাহল, না যানবাহনের শব্দ। শুধু আছে নিস্তব্ধতা, শান্তির পরিবেশ। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সবুজ চারনভূমিতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারেন। ইউসমার্গ থেকে কয়েকটি ছোটো এবং বড় ট্রেক রুটও আছে। একটি হল দুধগঙ্গা ট্রেক, মোটামোটি দুঘন্টা সময় লাগে, এবং নীলনাগ ট্রেক যেটি করতে মোটামোটি ৩-৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই দুটি ট্রেক ছাড়া বাকি ট্রেকগুলি করতে আপনাকে এখানে থাকতে হবে, কিন্তু এখানে থাকার অপশন একদমই নেই, একটি খালি JKTDC গেস্ট হাউস আছে।
ইউসমার্গ হল একদিনের ডে ট্যুর জন্য ঠিক আছে, এখানে রাত্রিবাসের একদমই প্রয়োজন নেই। শ্রীনগর থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে দিনে দিনে ঘুরে নিতে পারেন, শ্রীনগর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৫০ কি.মি। সবচেয়ে বেস্ট সময় এখানে আসার এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর।
4.গুরেজ ভ্যালি :- কাশ্মীরের আরো একটা অজানা, অদেখা জায়গা নিয়ে এবার আলোচনা করবো যার নাম হলো গুরেজ ভ্যালি, যা অবস্থিত বন্দিপোতা জেলার একদম LOC লাগোয়া বর্ডার এলাকায় ৮০০০ ফিট উচ্চতায়। এই গুরেজ একদমই Untouch, মোটামোটি বিচ্ছিন্ন একটা এলাকা, নভেম্বর মাস থেকে একদমই বিভিন্ন হয়ে যায় এই এলাকা। মাত্র কয়েকবছর আগেও এই এলাকার নাম ও কাশ্মীরের বাইরের কেউই জানতো না, বর্তমানে কিছু কিছু ট্যুরিস্ট এখানে আসা শুরু করেছে। সরকার থেকেও এই এলাকার পর্যটনের বিকাশের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই এলাকাকে প্রমোট করার জন্য সরকার থেকে বর্তমানে Go-Gurez ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান আর্মি থেকেও আগে গুরেজ আসার জন্য অনেক পারমিট চেকপোস্টের ব্যাপার ছিল এখন সব উঠিয়ে আরো আসা সহজ করে দিয়েছে। আপনাকে এখন মাত্র ৩টে চেকপোস্ট অতিক্রম করতে হবে এখানে আসার জন্য, কারণ এখানকার সৌন্দর্য এতোটাই একবার আসলে ফিরে যেতে সত্যিই ইচ্ছে করবে না।
গুরেজ আসলে আপনি একদিনের জন্য ডে ট্যুর করতে পারবেন না, কারণ এই গুরেজ ভ্যালি শ্রীনগর শহর থেকে প্রায় ১৪০ কি.মি দূরে, শ্রীনগর থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে এখানে পৌঁছতে প্রায় ৫ ঘন্টা লেগে যাবে কারণ রাস্তা সব জায়গায় এতোটা ভালো অবস্থায় নেই।যদিও রাস্তা তৈরি হচ্ছে রাস্তায় যেতে যেতে দেখে নেবেন কাশ্মীরের বিখ্যাত উলার লেক।এখানে আপনারা ২-৩ দিন কাটাতে পারেন। আপনাকে গুরেজ আসতে হলে রাজদান পাস অতিক্রম করতে হবে যা শ্রীনগর - গুরেজ রোডের সর্বোচ্চ স্থান, এই রাজদান পাস শীতে বরফের জন্য একদমই বন্ধ হয়ে যায়, যারফলে গুরেজের সাথে যোগাযোগ একদমই বিচ্ছিন্ন থাকে। রাজদান পাস অতিক্রম করে আপনি পৌঁছে যাবেন গুরেজ ভ্যালিতে।গুরেজ ভ্যালির প্রধান শহর বা মেন এরিয়া যাই বলুন না কেনো সেটা হলো ডেবর/Dewar, এই ডেবরকে কেন্দ্র করেই এবং থেকে আপনাকে গোটা ভ্যালিটা ঘুরতে হবে, গুরেজ ভ্যালি অবস্থিত কিশনগঙ্গা নদীর পাশে এই কিশনগঙ্গা নদীই পাকিস্তানে নীলম নদী নামে পরিচিত, কিছুদূর এগিয়ে এই নদী POK এবং কাশ্মীরের মধ্যে LOC হিসেবে কাজ করছে, পাকিস্তানে নীলম নামে একটি জেলার আছে। এই কিশনগঙ্গা নদীই এই ভ্যালির সৌন্দর্যকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই গুরেজ ভ্যালি কিন্তু POK গিলগিট থেকে বেশী দূরে না, তাই গিলগিট অঞ্চলের ভাষা, পোষাক, সংস্কৃতির সাথে এই অঞ্চলের অনেক মিল আছে।
গুরেজ ভ্যালিতে কি কি দেখবেন? এই অঞ্চলকে ভালো করে এক্সফ্লোর করতে আপনাকে আপনাকে এই অঞ্চলে দুটো দিন ভালো করে দিতে হবে। প্রথমত এখানে ১৪-১৫ টি গ্রাম আছে গোটা ভ্যালিতে, সব গ্রামতো আর দেখা সম্ভব না, প্রথমত কিশনগঙ্গা নদী ও দুপাশের এলাকা এখানকার প্রধান আকর্ষন, এছাড়াও আপনি এখানকার বিখ্যাত হাব্বা খাতুন নামে একটি খুবই আলাদা পাহাড় আছে ওটা দেখতে পারেন, হাব্বা খাতুন একজন কাশ্মীরের কবি, এর একটা আলাদা ইতিহাস আছে। এই হাব্বা খাতুন পাহাড়ের পাশেই আছে হাব্বা খাতুন ঝর্ণা যেটা খুবই সুন্দর, এবং এটি গিয়ে মিশেছে পার্শ্ববর্তী কিশনগঙ্গা নদীতে, এছাড়া আপনারা যদি আরো একদিন থাকতে চান তাহলে এখান থেকে তুলেল ভ্যালি যেতে পারেন এবং শেষে বাদোয়াব পর্যন্ত পারেন, বর্ডারের খুব কাছে যাওয়া যায় যার জন্য আর্মির পারমিশন নিতে হবে।
গুরেজ ঘুরতে হলে দেবর হল প্রধান জায়গা, এখানে JKTDC গেস্টহাউস, কিছু হোটেল এবং হোমস্টে পেয়ে যাবেন, অগ্রিম বুকিং কোনো দরকার নেই, যদিও আপনারা ফোন করে শুনে নিতে পারেন আমি কিছু হোটেল নাম্বার নীচে দিয়ে দিচ্ছি -
1. হাজী গেস্টহাউস রেস্টুরেন্ট - 07006797703
2.Disson ECO lodge, mastan road, dewar.
3.কাকা প্যালেস গেস্ট হাউস।
4. Friends Enclave Residential Hut- 08825009298
5. Wood vibes - 09103365551.
5.দাচিগাম ন্যাশনাল পার্ক : - শ্রীনগরের খুব কাছেই কাশ্মীরের আরো একটি অদেখা জায়গা হলো এই দাচিগাম ন্যাশনাল পার্ক। এই ন্যাশনাল পার্ক প্রধানত বিখ্যাত হাঙ্গুল বা কাশ্মীরী হরিন এর জন্য, এবং হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার এছাড়াও এখানে ৫০০ ধরণের Specis পেয়ে যাবেন। এখানে আসার সবচেয়ে ভালো সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট এমনি আপনি সারাবছরই এখানে আসতে পারেন। শ্রীনগর থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সোজা এখানে চলে আসতে পারেন।
Darun information..Thank u..
উত্তরমুছুনWelcome
মুছুনঅসাধারণ। ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনWellcome
মুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন