শিমলা কুল্লু মানালি ভ্রমণের A টু Z, হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণ। A to Z for Simla kullu Manali Tour, Himachal Pradesh.

 শিমলা কুল্লু মানালি

ভ্রমণ পিপাসু :- হিমাচল প্রদেশ, বরফ, পাহাড়, ঝর্ণা, জঙ্গল, নদ-নদী দ্বারা ঘেরা এক স্বর্গপুরি। এই হিমাচল প্রদেশের দুটি প্রসিদ্ধ পর্যটনস্থল রাজধানী শহর শিমলা এবং শিমলা থেকে ২৪০ কি.মি উত্তর অবস্থিত ছোট্ট শহর মানালি। শিমলা হিমাচল প্রদেশের রাজধানী হওয়ার আগে স্বাধীনতার পূর্বে এটি ছিল ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। ব্রিটিশ সরকারের গ্রীষ্মকালীন আবাসস্থল হয়ে ওঠে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই শহর। সেই কারণে ব্রিটিশ সরকার তাদের নিজের মনের মত করে এই শহরকে সাজিয়ে গিয়েছে, যা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। আর হিমাচলের উত্তরে কুল্লু জেলার চারদিক দিকে উচু পাহাড় দ্বারা ঘেরা ছোট্ট শহর মানালি।যার জনসংখ্যা মাত্র ৮০০০। এবং সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা - ২০৫০ মিটার। মানালি বিখ্যাত বরফ snowfall এর জন্য, সেইজন্য এই জায়গা বর্তমানে হানিমুন Destination হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আরো একটি কারণে মানালি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেটা হলো এর লোকেশন, আসেপাশের কিছু ভ্যালি যাওয়ার জন্য যে মাউটেন্ট হাই পাস গুলো আছে সেগুলো যাওয়ার রাস্তা মানালি হয়েই। যেমন লাদাখ, স্পিতি ভ্যালি, লাহুল ভ্যালি প্রভৃতি।


আজকের এই ব্লগে আমি তুলে ধরবো শিমলা,মানালি ভ্রমণের A to Z. তার সাথে শিমলা,মানালি বাদে আসে পাশের কিছু জায়গা যেমন কাসল, মনিকরন, ধর্মশালা, ডালহৌসি এবং কল্পা, কিন্নর। অনেকের প্ল্যান থাকে একটু বেশি দিনের, তাতে শিমলা,মানালি ঘুরে ও হিমাচলের আরো কিছু এলাকা কভার করার। তাই সবার কথা ভেবে এই ব্লগ। এই ব্লগটা পড়ে ফেললেই আপনার নিজেদের পছন্দমত দিন অনুযায়ী আমাদের প্ল্যান বানাতে পারবেন, এখানে সমস্ত ধরনের তথ্য দেওয়া থাকবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক ।

Simla. 

শিমলা মানালি সফরের বেস্ট টাইম :- আপনি সারাবছরই শিমলা মানালি সফরে যেতে পারেন। তবে সবচেয়ে সেরা সময় হল শীতকাল। কারণ এখানকার প্রধান আকর্ষন বরফ এবং স্নোফল। শীতের মজা উপভোগ করার জন্য তাহলে অবশ্যই আপনাকে আসতে হবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে, তবে ডিসেম্বরের লাস্ট উইক এবং জানুয়ারি মাসের 1st উইক একটু অ্যাভয়েড/Avoid করাই উচিৎ, কারণ এই সময় প্রচণ্ড ভিড়, তার সাথে সাথে সমস্ত কিছুর রেটও খুব বেশি থাকে। আর তাছাড়া আপনারা যদি এত ঠান্ডা মোটামোটি মাইনাসের নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে না পারেন, তাহলে শীতকাল বাদ দিয়ে সারাবছরই আসতে পারেন। মানালির রোহতাং পাসে আসলে আপনি মোটামোটি সারা বছরই বরফ পাবেন।

Manali


এখানে পৌঁছোনোর সহজ উপায় :- শিমলা আপনারা ভায়া ট্রেন এবং এবং সড়কপথ দু ভাবেই আসতে পারেন। সেইজন্য অবশ্যই আপনাকে ভারতের যে কোনো প্রান্ত থেকে আসতে হবে দিল্লী। দিল্লীর কাশ্মীরী গেট বাস স্ট্যান্ড থেকে দিন ও রাতের সাধারণ, ভলভো স্লিপার, সিটার সকল ধরনের বাস পেয়ে যাবেন শিমলা ও মানালি আসার জন্য। আর দিল্লী থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিলে তো আরো ভালো আরো কম সময়ে পৌঁছে যাবেন। আর যারা টয় ট্রেনে আসতে চান তাদের কালকা পৌঁছে শিমলার টয় ট্রেন ধরতে হবে। কালকা-শিমলা টয় ট্রেনের ওপরে আমার একটা সম্পূর্ন আলাদা ব্লগ আছে ওটা পড়ে নিলেই সমস্ত তথ্য জেনে যাবেন নিচে লিঙ্ক থাকছে।

 হিমাচলে ফ্লাইটে আসার অপশন খুব কম এবং একটু ব্যায় সাপেক্ষ। একটাই এয়ারপোর্ট আছে যেটা কুল্লু তে অবস্থিত, কিন্তু খুব শহরের সাথেই এই এয়ারপোর্টের যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।

কতো দিনের এই ট্যুর হতে পারে :- আপনারা যদি শুধু হিমাচল প্রদেশের প্রধান দুই আকর্ষন শিমলা ও মানালি সফরে যেতে চান তাহলে ৫ দিন এই সফরের জন্য যথেষ্ট। এরপর আপনারা যদি ৮, ৯ দিনের সময় নিয়ে আসেন তাহলে ভালো মত শিমলা - মানালি বাদে হিমাচলের আরো কয়েকটি সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখে নিতে পারবেন। পরের পয়েন্টে আমি এই ট্যুর প্ল্যান গুলো নিয়ে আলোচনা করছি, আপনারা আপনাদের পছন্দমত, সময়মত প্ল্যানটি সিলেক্ট করে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে আসতে পারেন। আমি এতক্ষন যা কিছু বললাম সব-ই আপনাদের আসা যাওয়ার দিন বাদে আসা যাওয়ার জন্য আপনাদের হাতে আরো ২-৩ দিন রাখতে হবে।

ট্যুর প্ল্যান :- আমি দিন অনুযায়ী শিমলা ও মানালি ট্যুর প্ল্যান আপনাদের সামনে তুলে ধরছি....

প্রথম দিন :- আপনাদের সফরের প্রথম দিন শুরু হবে শিমলা থেকে। আপনারা যদি নাইট বাসে আসেন তাহলে সকালের দিকে শিমলা ঢুকে যেতে পারবেন। আর টয় ট্রেনে আসলে শিমলা পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর হয়ে যাবে। তাই সে দিন শিমলা শহর ও শহরের মধ্যে কিছু এলাকা আমরা ঘুরে নেবো আর বাকি সময় রেস্ট নিয়ে নেবো। প্রথম দিনের শিমলা ভ্রমণে আমরা যে সব জায়গা গুলো দেখে নেবো সেগুলো হলো শিমলা মল রোড, ক্লাব হাউস, রিজ, শিমলা চার্চ, এবং কালিবাড়ি জায়গা গুলো একদম পাশাপাশিই, তাই আপনারা পায়ে হেঁটে এই জায়গা গুলো দেখে নিতে পারেন। শীতকালে বা snowfall এর সময়ে এই জায়গা গুলো আরো ভালো মত এনজয় করা যায় ।

দ্বিতীয় দিন : - দ্বিতীয় দিনের সফরের জন্য আপনাদের গাড়ি ভাড়া করা জরুরি। কারণ আজকে থেকে আপনাদের গাড়ির দরকার পড়বে তাই পুরো ট্যুরের জন্য একবারে গাড়ি বুক করে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কেমন করে কত দিনের জন্য বুক করবেন সেটা আমি অন্য পয়েন্টে আপনাদের বলে দেবো। আজকের দিনে আমরা প্রথমে যাবো ১৫ কি.মি দূরে অবস্থিত শিমলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা কুফরি। এই জায়গা বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে ফেমাস holiday এর জায়গা হিসেবে তার পরিচিত লাভ করেছে। রাস্তা মাত্র ১৫ কিমি হলেও যেতে আপনাদের জ্যামের জন্য একটু টাইম আপনাদের লাগবেই। আর ছুটির দিন আর সিজনের টাইমেও আরো অনেকটা টাইম আপনাদের লেগে যাবে, আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন কুফরি পর্যন্ত পৌঁছতেই পারিনি, জ্যাম আর বরফের জন্য। আপনি শিমলাতে বরফ না পেলেও এখানে অবশ্যই বরফ পাবেন শীতকালে। আর যাওয়ার রাস্তাতেও পেয়ে যাবেন ।কুফরিতে কত গুলো Activity আছে বড়দের এবং বাচ্চাদের জন্য সেগুলো করতে পারেন। এছাড়া আর তেমন কিছু নেই। এরপর কুফরি থেকে আবার শহরের দিকে ফিরবো এবং রাস্তায় দুপুরের লাঞ্চটা করে নিয়ে আমরা যাবো জাখু মন্দিরের দিকে, এটি শিমলার সবচেয়ে উচ্চতম স্থান উচ্চতা - ২৬২২ মিটার। এই মন্দিরটি ভগবান হনুমানের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত। এখানে লর্ড হনুমানের এক বিরাট মূর্তি আছে, এখান থেকে ভিউ টাও খুবই দেখার মত। জাখু মন্দির দেখে আমরা ফিরে চলে আসবো আবার হোটেলে। একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধেটা মল রোড মার্কেটে কাটাতে পারেন এবং কেনা কাটাও চাইলে কিছু করে নিতে পারেন। এভাবেই শিমলা সফরের মোটামোটি শেষে পৌঁছে যাবেন, পরের দিন সকালে আমরা যাবো মানালির উদ্দেশ্যে।

Kufri, Shimla

Kurfi, shimla 

তৃতীয় দিন : - তৃতীয় দিন শিমলা থেকে আমরা ২৮০ কিমি যাত্রা করে পৌঁছব মানালি। কুল্লু জেলার বিয়াস নদীর তিরে আমরা তিন দিন থেকে দেখে নেবো আসে পাসের সমস্ত জায়গা। মানালিকে সেন্টার করে প্রচুর জায়গা আছে, সেদিকে আমরা যাবো না এসব জায়গার জন্য আলাদা প্ল্যান করতে হয় । আপনাদের লক্ষ্য যখন থাকবে শিমলা মানালি তখন এদিকেই মনযোগ দেওয়া উচিত।

Bias River way to Manali. 

শিমলা থেকে এই দিনের যাত্রা আপনাদের একটু সকাল সকাল শুরু করতে হবে, কারণ ২৪০ কিমি রাস্তায় অনেকগুলো সাইটসিং পয়েন্ট গুলো দেখে মানালি পৌঁছতে সারাদিন লেগে যাবে। মানালির রাস্তাতেই যেতে যেতে আমরা সকালের খাওয়ার ও দুপুরের খাওয়ার করে নেবো। রাস্তায় যেতে যেতে দু পাশের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা ছাড়াও আমরা দেখে নেবো কুল্লু ভ্যালি, রাস্তার দু পাশের আপেল বাগান, (এটা একমাত্র সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবর মাসে আসলেই আপনি দেখতে পাবেন)। সুন্দরগড় লেক, পানডোহ ড্যাম, বৈষ্ণবদেবী মন্দির প্রভৃতি। শিমলা থেকে রওনা দিয়ে আমরা প্রথম যে বড় শহরে এসে পৌঁছবো সেটা হচ্ছে বিলাসপুর, এখানে হিমাচল প্রদেশের হাইকোর্ট ও আছে। এরপর আমরা পৌঁছবো নামের মধ্যেই যার সব কিছু বলা আছে সেই সুন্দরনগর, এই সুন্দরনগর শহর এই শিমলা - মানালি রাস্তার মিডল পয়েন্ট বলতে গেলে। এই সুন্দরনগর শহর থেকে একটু এগিয়েই আপনারা পাবেন সুন্দরনগর লেক, এটি একটি কৃত্রিম লেক কিন্তু যথেষ্ঠ সুন্দর। এই সুন্দরগড়ে আপনারা কিছু চাইলে অবশ্যই খেয়ে নিতে পারেন। এর পরেই আসবে মান্ডি শহর, লাঞ্চ টা এখান থেকে করাটাই ভালো হবে , এখান থেকে মানালি আরো ১০০ কিমি। মান্ডি থেকে আমরা রাস্তার পাশে বিয়াস নদীকে পাশে পাবো, রাস্তার যে সৌন্দর্য আপনাকে বোর হতে একদমই দেবে না। এরপর কিছুদূর যাওয়ার পরই আসবে পানডোহ ড্যাম।পানডোহ নামক জায়গায় বিয়াস নদীর ওপরে ১৯৭২ সালে এই এই ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছিলো, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। অক্টোবর মাসে আপনারা যদি আসেন তখন গাড়ির ড্রাইভারকে বলে রাস্তার পাশের যেকোনো একটি আপেল বাগানে অবশ্যই দাঁড়াবেন এদিকে প্রচুর আপেল বাগান, যাইহোক মোটামোটি ৭-৮ ঘণ্টার জার্নি শেষে আপনি পৌঁছে যাবেন মানালি। হোটেল পৌঁছে একদমই রেস্ট, দেখবেন আপনাদের হোটেলটা যেনো মানালির মল রোডের বেশি দূরে না হয়। এবার পরের দিনের অপেক্ষা।

Manali Mall Road market. 

মানালি ভ্রমণ :- মানালি ভ্রমনের জন্য তিন দিন যথেষ্ট। অনেকে দু দিনেও করে। তার মধ্যে একদিন আমাদের বরাদ্দ থাকবে মানালি লোকালের জন্য এবং একদিন সোলাং ভ্যালি আর গুলাবা। এবং পারমিশন যদি পেয়ে যান তাহলে তৃতীয় দিন যেতে পারেন রোহতাং পাস, কিন্তু এখানে পারমিশন পাওয়া এতোটা সহজ না, এটা নিয়ে বিস্তারিত পরে বলছি, চলুন তাহলে এক এক করে দিন অনুযায়ী মানালি ভ্রমণ নিয়ে আলোচনার করা যাক..

চতুর্থ দিন :- চতুর্থ দিন অর্থাৎ লোকাল সাইটসিং। তাই এদিন একদম ব্রেকফাস্ট করে আপনাদের নির্দিষ্ট ভাড়া করা গাড়ি করে বেরিয়ে পড়ুন - প্রথমে দেখে নেবো হিডিম্বা দেবী মন্দিরে খুবই প্রাচীন এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিলো ১৫৫৩ সালে, যা উৎসর্গিত মহাভারতের ভীমের স্ত্রী হিডিম্বাকে, পাশেই আছে হিডিম্বা ও ভীমের পুত্র ঘটোৎকচের মন্দির। জঙ্গল দিয়ে ঘেরা খুবই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে এই মন্দিরটি অবস্থিত, বরফ আবৃত যখন থাকে তখন তো এই মন্দির ও আশেপাশের এলাকা আরোই সুন্দর হয়ে ওঠে। এরপর একে একে দেখে নেবো মনু মন্দির, যার থেকেই এই শহরের নাম হয়েছে মানালি । এরপর আবার শহরের দিকে ফিরে এসে আবার দেখে নেবো ক্লাব হাউস, তিব্বতি মনাস্ট্রি, এবং বনবিহার, এই জায়গাটি ও অনেকটা হিডিম্বা দেবী মন্দিরের চার পাশের এলাকার মত। এই মধ্যেই আপনাদের হয়তো অবশ্যই খিদে পেয়ে যাবে তাই ভালো একটা হোটেল দেখে লাঞ্চ করে নিয়ে আমরা আবারও বেরিয়ে পরবো আজকের শেষ গন্তব্যস্থল বশিষ্ট মন্দিরের উদ্দেশ্যে, মানালি শহর থেকে মাত্র ৩ কি.মি দূরে বিয়াস নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরের পাশেই অবস্থিত Hot spring উষ্ণ প্রশ্রবন। মানালি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই মন্দির দেখে আপনি সোজা চলে আসবেন হোটেল, সন্ধ্যেবেলা তে হেঁটে যেতে পারেন মল রোড দেখার জন্য।

Basisth Temple. 

Ghototkoch temple, beside of Hidimba Temple

পঞ্চম দিন :- শিমলা মানালি সফরের পঞ্চম দিনে আমরা আজ যাবো মানালির আরো একটি উল্লেখযোগ্যস্থল সোলাং ভ্যালির উদ্দেশ্যে এবং তার সাথে সাথে দেখে নেবো ভারতের ইনজিনিয়ারিং এর এক অদ্ভূত নিদর্শন রোহতাং টানেল বা অটল টানেল দেখতে। ৯ কিমি দীর্ঘ এই টানেল ভারতের দীর্ঘতম টানেল। মানালি থেকে এর দূরত্ব ২৮ কি.মি কিন্তু যেতে আপনাদের লেগে যেতে পারে প্রায় ১ ঘন্টা, তার বেশিও লাগতে পারে। অটল টানেল যাওয়ার পথেই আপনারা সোলাং ভ্যালি পেয়ে যাবেন যার দূরত্ব ১৬ কি.মি। মানালি থেকে সোলাং পর্যন্ত এসে দুটি রাস্তা কেটে গেছে। ডান দিকের রাস্তাটি সোজা চলে গেছে রোহতাং পাস হয়ে লেহ লাদাখের দিকে। আর বাম দিকের রাস্তাটি সোলাং ভ্যালি ও অটল টানেলের দিকে। দুটো রাস্তায় যাচ্ছে লাদাখের দিকে, পূর্বতন রোহতাং পাস হয়ে লেহ - মানালি হাইওয়ে হয়ে রাস্তায় অত্যধিক জ্যাম এবং শীতকালে যোগাযোগ একদম বন্ধ হয়ে যাওয়া জনিত কারণে এই দীর্ঘ অটল টানেল টি নির্মাণ হয়েছে, লে-লাদাখের সাথে সারাবছর এবং অনেক কম সময়ে যোগাযোগ করা যায়।

Solang Valley in Summer. 

Solang Vellay in Winter. 


আজ পাঁচ নম্বর দিনে আমরা যাবো সোলাং এবং অটল টানেলের উদ্দেশ্যে। সোলাং ভ্যালি বিখ্যাত তার বরফে ঢাকা পুরো এলাকা ন্যাচারাল সিনিক ভিউ, এবং এখান থেকে সুউচ্চ পর্বতমালা গুলো স্বচখ্য চাক্ষুষ করা, এবং বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যারাগ্লাইডিং। এখানে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো শীতকালে, কারন এক এই সময়ে পুরো এলাকাকে বরফাবৃত পাবেন, এবং বরফে বিভিন্ন স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি করতে পাবেন যেটা আপনি অন্য সময়ে পাবেন না। বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির বিভিন্ন দাম আছে ১০০,২০০ থেকে শুরু করে ৫০০ এছাড়া প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য গুনতে হতে পারে ৩-৩.৫k। এরপর আমরা যাবো অটল টানেলের দিকে, টানেলের সাউথ গেট পর্যন্তই আপনাদের যাওয়ার পারমিশন থাকবে। গেটের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছবি ও ভিডিওগ্রাফি করে আবার ফিরে আসতে হবে মানালি। তাছাড়া বর্তমানে ডিফেন্স Ministry থেকে পর্যটক বিশেষ করে স্টুডেন্টদের এই টানলেকে সামনে থেকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারা ভারতের ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি এই মহান স্ট্রাকচার কে সামনে দেখা এবং গঠন সমন্ধে বুঝতে পারে, এর টিকিট মুল্য ১০০ নিচের লিঙ্ক টিকিট এবং যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।

Activity at Solang velley. 

ষষ্ঠ দিন :- শিমলা মানালি সফরের ষষ্ঠ দিনটা অনেকটা নির্ভর করবে আপনাদের পারমিশনের ওপরে। কারণ এই দিনে আমরা যাবো রোহতাং পাসে যেখানে যেতে আপনাদের পারমিটের প্রয়োজন। মানালির কোথাও বরফ পান বা না পান, কিন্তু রোহতাং পাসে আপনি বরফ পাবেনই পাবেন, সেই জন্যই এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। প্রচুর ভিড়, যানবাহনের জন্য পথ একবারে অবরুদ্ধ হয়ে যায়, পরিবেশের ওপরে ও এর প্রভাব পড়ে। এর জনই ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে এখানে পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন এবং এই সমন্ধে আরো কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। তারপর সরকারি ভাবে এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়িকে যাওয়ায় পারমিশন দেয় এখন ডেইলি ১২০০ গাড়ি যাওয়ার পারমিশন আছে, যা ডিমান্ডের তুলনায় অনেক কম, সেই জন্য আপনাদের আগে থেকে অনলাইনে পারমিটের জন্য অ্যাপ্লাই করে দিতে হবে আপনাদের যাওয়ার ডেট অনুযায়ী, লিঙ্ক নিচে দেওয়া হল। পারমিশন হয়তো সেদিন আপনারা নাও পেতে পারেন, নাহলে একবার আপনাদের বুক করা গাড়ির ড্রাইভারকে বলে রাখবেন পারমিট এর ব্যবস্থা করার জন্য। পারমিট না পেলে আপনারা বিকল্প কিছু ভেবে দেখতে পারেন অথবা সেদিন ই মানালি থেকে ব্যাক করে আসতে পারেন, ৫ দিনের ট্যুর শিমলা মানালি জন্য যথেষ্ট অনেকে আছে যারা ৫ দিনের ট্যুর করেই ফিরে আসে, তবে আপনাদের যদি ৬ দিনের প্ল্যান থাকে, সেই দিন তো আর নষ্ট করা যাবে না, তাই সেদিন আপনারা যদি পারমিশন না পান রোহতাং এর তাহলে কুল্লু চলে আসতে পারেন মানালি থেকে, কুল্লু তে এসে রিভার রাফটিং টা করা ভালো অপশন, যাওয়ার সময় রাস্তার দু ধারে প্রচুর এরকম রাফটিং পয়েন্ট দেখতে পাবেন তাদের বোর্ড লাগানো আছে, কুল্লুর বিয়াস নদীতে রাফটিং রাফটিং খুব বিখ্যাত ভারতে আরো একটি এরকম জায়গা হলো ঋষিকেশ। আপনারা দরদাম করে ঠিক করে নেবেন। জীবনে কিন্তু একবার হলেও এ জিনিস গুলো করা উচিত, মানালি যখন আসবেন তখন সোলাং ভ্যালির প্যারাগলাডিং এবং বিয়াস নদীর রিভার রাফটিং একদমই মিস করা উচিত না। এই দিনের রাত টা কুল্লুতে থাকতে পারেন আবার মানলিতে ও ফিরে গিয়ে স্টে করতে পারেন। কুল্লুতে থাকলে পরের দিনের জন্য অনেকটা এগিয়ে থাকবেন এটুকুই, কারণ পরের দিন এই কুল্লু. হয়েই ফিরতে হবে আপনাদের। তাহলে মোটামোটি আপনাদের ৫-৬ দিনের শিমলা-মানালি সফরের মোটামুটি ইতি ঘটলো এই সফরের আরো কিছু দিন বা জায়গা যদি অ্যাড করতে চান তাহলে নিচের পয়েন্ট গুলো ফলো করতে পারেন।

বিনা পারমিটে রোহতাং পাস : - হ্যাঁ বিনা পারমিটেও আপনারা রোহতাং পাস যেতে পারেন। তবে যেতে হবে আমাকে বাসে। বাস পরিষেবা ও খুব ভালো। HRTC বাসে আপনারা সারাদিনে রোহতাং পাসে সাথে সাথে অটল টানেল এবং সোলাং ভ্যালিও ঘুরে নিতে পারেন। এই জন্য আপনাকে মানালির মল রোডের HRTC কাউন্টার থেকে ঠিক একদিন আগে থেকে এই বাসের টিকিট কেটে নিতে হবে, কারণ ওইদিন গেলে টিকিট হয়তো আপনি নাও পেতে পারেন চাহিদা বেশি থাকার জন্য। টিকিট মুল্য ৬০০ টাকা। সকাল ৯.৩০ টায় এই বাস ছাড়ে মানালির মল রোড থেকে। 


Rohtang pass parmit link

Marhi, On the way to Rohtang Pass. 

Rohtang pass. 

মানালি থেকে কাসল, মণিকরন ক্ষীরগঙ্গা :- আমি আগেই বলেছিলাম যে আপনারা শিমলা বা মানালিকে সেন্টার করে আরো কয়েকটি সাইডে ঘুরতে যেতে পারেন, সেরকম একটি হল মানালি থেকে কাসল - মণিকরন- ক্ষীরগঙ্গা- তোস।


এই কাসল এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি Thrilling Adventure এর পাশাপাশি, নদীর ধারে শান্ত প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিতে পারেন। কাসল অবস্থিত পার্বতী ভ্যালির ওপরে, পার্বতী নদীর তীরে, এখানে ট্যুরের কোনো নির্দিষ্ট দিন হয়না, আপনি দু-দিন থেকে সাত দিন আরামে কাটিয়ে দিতে পারেন এখানে, তাছাড়া এখান থেকে কয়েকটি ট্রেকরুট ও আছে যেমন তারমধ্যে - ক্ষীরগঙ্গা, তোস, মালানা, চালাল। কাসল আসা টাও সহজ বাস পেয়ে যাবেন, শিমলা মানালি এবং কুল্লু থেকে, রাস্তা খুব ভালো গাড়ি বুক করেও চলে আসতে পারেন।

ট্যুর প্ল্যান :- ট্যুরের প্রথম দিনে আপনারা কাসলের লোকাল কিছু জায়গা এবং পার্বতী নদীর পাশ বরাবর জায়গা গুলো দেখে নিতে পারেন পায়ে হেঁটে এবং গাড়িতে। তারমধ্যে চালাল ব্রিজ, এখান থেকে পার্বতী নদীর ভিউ টা খুবই সুন্দর, এখান থেকে ট্রেক করে আপনি চালাল গ্রামে ও যেতে পারেন, ২ থেকে ৩ কি.মি ট্রেক। বিকেল টা লোকাল মার্কেট কাটাতে পারেন, কাসলে লোকাল ফুড অবশ্যই ট্রাই করবেন এছাড়া কাসলের ইজরায়েলি খাওয়ার খুবই বিখ্যাত। থাকার জন্য নদীর ধারে কোনো হোটেল বা টেন্টে থাকলে ভালো।

দ্বিতীয় দিন আপনারা মনিকরন যেতে পারেন। কাসল থেকে দূরত্ব খুব একটা বেশী না বাস ও পেয়ে যাবেন তাছাড়া নিজেদের ভাড়া গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই। মনিকরন হিন্দু এবং শিখদের কাছে পবিত্র ধর্মস্থান। এখানে শিবের মন্দির এবং গুরুদোয়ারা আছে তাছাড়া এই জায়গা বিখ্যাত তার Hot-spring বা উষ্ণ প্রশ্রবনের জন্য।

তৃতীয় দিন আপনারা যেতে পারেন ক্ষীরগঙ্গা ট্রেকে কাসলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। ট্রেক রুট মাত্র ৫ কি.মি। এখানে এসে শান্ত সবুজ গালিচার মধ্যে নদীর ধারে একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্যাম্পিং করার মজাই আলাদা। এছাড়া এখানে আরো কয়েকটি ট্রেকরুট ও আছে হতে সময় থাকলে এগুলোও করতে পারেন।

মানালি থেকে ধর্মশালা ডালহৌসি খাজ্জিয়ার ট্যুর :- মানালি থেকে এবার অন্যদিকে আরো একটা সুন্দর ২-৩ দিনের ট্যুর প্ল্যান আপনারা সাজাতে পারেন, সেক্ষেত্রে হাতে সময় নিয়ে আসতে হবে।


ট্যুর প্ল্যান :- মানালি থেকে ধর্মশালা যাওয়ার নাইট এবং ডে বাস ও পেয়ে যাবেন। মাঝ রাস্তায় আরো একটি সুন্দর জায়গা পালামপুর পড়বে। ধর্মশালা হল দলাই লামার বাসভূমি। ধর্মশালা শহর দু ভাগে বিভক্ত, আপার কে প্রপার ধর্মশালা বলে নিচের অংশকে ম্যাকলয়েডগঞ্জ বলে। ধর্মশালা একটা দিনে সারাদিন ঘুরার জন্য যথেষ্ট। যে সব জায়গা গুলো আপনারা দেখতে পারেন সেগুলো হলো - দলাই লামা মন্দির, ডাল লেক, সানসেট পয়েন্ট, ভাগসু ওয়াটারফলস্, HPCA ক্রিকেট স্টেডিয়াম, কাংরা আর্ট মিউজিয়াম। রাতে ধর্মশালা য় থেকে পরের দিন বেরিয়ে পড়ুন ডালহৌসির উদ্দেশ্যে। ধর্মশালা থেকে রওনা দিলে ৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন। ডালহৌসিতে দেখার মত যে জায়গা গুলো পেয়ে যাবেন - জানধ্রিঘাট প্যালেস, সুভাষ বাউলি, সাতধারা, পুরোনো চার্চ, GPO প্রভৃতি।

পরের দিন ডালহৌসিতে ঘুরে নেবেন ভারতের সুইজারল্যান্ড নামে খ্যাত খাজ্জিয়ার থেকে, ডালহৌসি থেকে যার দূরত্ব ২১ কি.মি। খাজ্জিয়ার লেক ও আসে পাশের এলাকা দেখে কালাটপ স্যাঞ্চুয়ারি ও ভিজিট করতে পারেন। নেক্সট দিন ব্যাক করবেন চন্ডীগড় বা শিমলার উদ্দেশে।

মানালি থেকে লাহুল ভ্যালি :- মানালি থেকে আপনারা ২-৩ দিনের জন্য লাহুল ভ্যালি ঘুরে আসতে পারেন, লাদাখ যাওয়ার কারো স্বপ্ন যদি অধরা থেকে যায় তাহলে সেটা অনেকটা পূরণ হবে। মানালি থেকে লে লাদাখের রাস্তা এই লাহুল হয়েই যায়, লাহুল স্পিতির ওপরে আমার আরো একটা সম্পূর্ন আলাদা ব্লগ আছে ওটা আপনারা দেখে নিতে পারেন। মানালি থেকে অটল টানেল পার করার পরই আপনারা লাহুল ভ্যালিতে প্রবেশ করে যাবেন।

লাহুল ভ্যালিতে দেখার মত অনেক জায়গা আছে, সবচেয়ে সুন্দর বলতে গেলে লেহ-মানালি রোড, সিসসু, কেলং, জিসপা, দারচা, সারচু, সুরজতাল লেক, বারলাচলা পাস প্রভৃতি ।

শিমলা থেকে কিন্নর ভ্যালি : - মানালি থেকে কয়েকটা রুট দেখার পর চলুন এবার শিমলা থেকে আরো একটা সুন্দর ভ্যালির সন্ধান দেই। সেটা হলো কিন্নর ভ্যালি। আপনি যখন শিমলা থেকে স্পিতি ভ্যালির দিকে যাবেন তখন এই কিন্নর ভ্যালি। হয়েই যাবেন তখন আপনারা সেটা দেখে নিতে পারেন, যারা আলাদা করে প্ল্যান করবেন এখানে আসার তারা আমার নিচের ব্লগ টা পড়ে নেবেন, সমস্ত ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন ।

কিন্নর ভ্যালির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হল এর রাস্তা, এই কিন্নর রোড পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর রাস্তা গুলির মধ্যে একটি, adventure প্রিয়দের খুবই পছন্দ হবে, এছাড়া কিন্নর কৈলাস পর্বত, কল্প শহর, রেকংপীও, সাংলা, ছিটকূল প্রভৃতি ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন