।। অমরনাথ যাত্রা।।
ভ্রমণ পিপাসু :- প্রত্যেকটা শিব ভক্তের কাছে একটা স্বপ্ন থাকে অমরনাথ যাত্রা করার এবং এক বারের জন্য বাবা বর্ফানির দর্শন করার, কারন এই যাত্রার আলাদাই একটা মহাত্মা আছে, কিন্তু একটা জিনিস আপনাদের সবাইকে মাথায় রাখতে হবে, যে এই যাত্রা এতটা সহজ নয়, যথেষ্ট কঠিনীয়তায় ভরা,এবং এই যাত্রার পুরো Process টা একদমই জটিল। এইজন্য সরকার থেকে পুরো যাত্রা পরিচালনা করার জন্য শ্রী অমরনাথ জি স্রাইন বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যারা এই যাত্রার পুরো দায়িত্বে থাকে। এই ব্লগে আমি আপনাদের এই অমরনাথ যাত্রা সমন্ধে সমস্ত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো, এই যাত্রা একদম শুরু হওয়ার আগে থেকে একদম শেষ পর্যন্ত অনেক ধাপ আছে, অনেক প্রসেস আছে, অনেক নিয়ম আছে, যা আপনারা সম্পূর্নভাবে ঠিকঠাক পালন করতে পারলেই এই যাত্রা সম্পূর্ন করতে পারবেন তাই এই ব্লগ টা পুরোটা দেখবেন, তাতে এই যাত্রা সমন্ধে সমস্ত কিছুই আপনাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- আরো পড়ুন - কেদারনাথ যাত্রার সম্পূর্ণ তথ্য
অমরনাথ যাত্রার সময় : - অমরনাথ যাত্রার সময় খুব সংক্ষিপ্ত, মোটামোটি ৪৫-৫৪ দিনের মধ্যেই এই যাত্রা শেষ হয়ে যায়। ইংরেজির জুন মাসের শেষ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই যাত্রা চলে, কারণ এরপর থেকেই পবিত্র গুহার মধ্যে তৈরি হওয়ার শিবলিঙ্গ একটু করে গলে যেতে থাকে। সাধারণত স্কন্ধ ষষ্ঠী দিন থেকে এই যাত্রা শুরু হয়,এবং রাখীপূর্ণিমার দিনে এসে শেষ হয়। এবছর যাত্রা শুরু হয়েছে 30 জুন থেকে এবং শেষ হবে 11ই আগস্ট।
Picture credit - Google map |
অমরনাথ গুহার পৌরাণিক মাহাত্ম্য ও ইতিহাস ঃ- ভগবান শিবের পাঁচটি প্রধান তীর্থস্থানের একটি হল অমরনাথ, এগুলি হল - কৈলাস পর্বত, অমরনাথ, বিশ্বনাথ, কেদারনাথ, পশুপতিনাথ। অমরনাথ গুহাতে দেবাধিদেব মহাদেব দেবী পার্বতীকে মোক্ষ লাভের পাঠ দিয়েছিলেন, যাকে অমরকথা বলে সেই থেকেই এই পবিত্র গুহার নাম হয়েছে অমরনাথ গুহা। এই অমরকথা অনেকটা শ্রীকৃষ্ণ এবং অভিমন্যুর মধ্যে পারস্পরিক আলাপচারিতা হয়েছিলো সেটার মত। এই গুহাতেই ভগবান শিব কয়েকবছর ধরে তপস্যা করেছিলেন। শাস্ত্র অনুযায়ী ভগবান শিব এই গুহাতেই মাতা পার্বতিকে অমরত্ম লাভের জ্ঞান দিয়েছিলাম। ভগবান শিব যখন মাতা পার্বতিকে অমরকথা শোনানার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি ছোটো ছোটো অনন্তনাগ কে অনন্তনাগে ছেড়ে এসেছিলেন, মাথার চন্দন কে চন্দনবাড়িতে রেখেছিলেন, পিসসু গুলোকে পিসসু টপে এবং গলার শেষনাগকে শেষনাগে রেখে, এবং গণেশজি কে গণেশ টপে সমস্ত কিছুকে রেখে তিনি এই নির্জন গুহায় প্রবেশ করেছিলেন। অমরনাথ যাত্রার সময় এই জায়গা গুলো এখনো আমরা দেখতে পাই।
অমরনাথ গুহা ও বুটা মালিকের বর্তমান বংশধর। pictures source - Facebook. |
বিভিন্ন দস্তাবেজ এবং অমর নাথ বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় এই অমরনাথ যাত্রার ইতিহাস ১৫০ বছরের পুরোনো। স্থানীয় এক পশুপালক বুটা মালিক পশু চড়াতে গিয়ে প্রথম এই গুহার খোঁজ পান। কিন্তু বলতে গেলে এই গুহা এবং যাত্রার ইতিহাস কিন্তু বহু পুরোনো, প্রায় ৫০০০ হাজার বছরের। মনে করা হয় ভৃগু মুনি সর্ব প্রথম এই গুহার খোঁজ পান। হিন্দু পুরাণ থেকে শুরু করে, কলহনের রাজতরঙ্গিনীতে এই যাত্রার কথা উল্লেখ আছে, তাই কোনো মতেই এই অমরনাথ যাত্রার ইতিহাস মাত্র ১৫০ বছরের পুরনো হতেই পারে না। এই বুটা মালিক ও তার পরিবার ১৮৫০ সাল থেকে এই যাত্রার সমস্ত কিছু পরিচালনা করে আসছিলো, যতদিন না অমরনাথ সাইন বোর্ড গঠিত হয়। তারা মন্দিরে দেওয়া মোট দক্ষিণার তিন ভাগের এক ভাগ পেয়ে আসছিলেন।
- আরো পড়ুন - কম খরচে গুজরাট ট্যুরে সমস্ত ইনফরমেশন
অমরনাথ যাত্রা কতটা কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এবং কি কি পরিকল্পনা করা প্রয়োজন :- অমরনাথ যাত্রা কিন্তু আমাদের দেশের কঠিনতম যাত্রা গুলোর মধ্যে অন্যতম। কারণ এক এই যাত্রাতে আপনাকে অনেকটা উচ্চতায় পায়ে হেঁটে এই যাত্রা সম্পূর্ন করতে হবে এবং অনেকটা পথ আপনাদের অতিক্রম করতে হবে, রাস্তাও খুব একটা ভালো না, তার ওপর এখানে আবহাওয়া প্রায় কিছুক্ষন পরপরই পরিবর্তন হয়, কোনো সময় দেখবেন পরিষ্কার আকাশ, কিছুক্ষনের মধ্যেই মেঘে ঢেকে গিয়ে বরফ পড়তে পারে আবার মুসুলধারে বৃষ্টি হতে পারে, এই সময় পাহাড়ি এলাকায় হরপা বানে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আর এর বাইরে এই যাত্রার ওপরে আতঙ্কি হামলার একটা ভয় থেকে যায়, কয়েকবার হয়েছেও এরকম ঘটনা, কিন্তু এখন সেনা, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিসের এতো কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকে যে, ব্যাপারে খুবই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আপনি যদি পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে যাত্রার কিছু মাস আগে থেকেই একটু হাঁটাহাটির অভ্যাস করতে হবে, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে আপনাকে কিন্তু যথেষ্ট হাই অলটিটিউড দিয়ে যথেষ্ট খারাপ রাস্তা দিয়ে চড়াই উতরাই পেরিয়ে আপনাকে পৌঁছতে হবে, সেইজন্য মনকে আগে প্রস্তুত করতে হবে, বাবা বর্ফানির নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে, আর হ্যাঁ উচ্চতাজনিত নমস্কার সমস্যার জন্য Diamox এর মতো কিছু ওষুধ আপনাদের সাথে রাখতে পারেন।
অমরনাথ যাত্রা 1945 সালে। Picture credit - Nostalgic Kashmir. |
শ্রী অমরনাথ জি স্রাইন বোর্ড :- শ্রী অমরনাথ জি স্রাইন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো ২০০০ সালে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় এক আইন পাসের মাধ্যমে। ২০০০ সালে পাস হওয়া এই আইনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপালকে এই বোর্ডের আজীবন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। আমি আগের পয়েন্ট বলেছিলাম যে এতো দিন ধরে বুটা মালিক ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই গোটা যাত্রার ব্যবস্থা করে আসছিলো, কিন্তু যাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায়, এবং যাত্রীদের অধিক পরিমাণে সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে ২০০০ সাল থেকে সমস্ত যাত্রা পরিচালনা দায়িত্ব বুটা মালিকের পরিবারের হাত থেকে সরাসরি রাজ্য সরকারের হাতে অর্থাৎ শ্রী অমরনাথ জি স্রাইন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়ন্ত্রণে আসে। যাত্রা এই বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে আসায় যাত্রীদের যাত্রাপথের স্বাচ্ছন্দ্যের অনেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, এবং এই দূর্গম যাত্রা অনেকটা সুগমও হয়েছে।
অমরনাথ গুহা 1951 সালে। picture Credit - Nostalgic Kashmir. |
অমরনাথ হেলিকপ্টার সার্ভিস :- অমরনাথ যাত্রা আপনি হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও করতে পারেন। আপ-ডাউন এবং ওয়ানওয়ে দুটিরই ব্যবস্থা আছে। বালতাল বেসক্যাম্প থেকে পঞ্চতরনী আপডাউন- ২৮৯০ এবং ওয়ানওয়ে- ১৪৪৫।
প্যাহেলগাম থেকে ভাড়া - ৪৭১০, এবং ওয়ানওয়ে- ২৩৫৫।টিকিট অনলাইন নীচের লিঙ্কে সমস্ত Details পেয়ে যাবেন ।
শিবলিঙ্গ তৈরি হওয়ার রহস্য :- কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত এই পবিত্র অমর নাথ গুহা, সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৩০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। প্রতি বছর এই গুহার ওপর থেকে জলকনা নিচে জমে জমে এই ১০ ফিট উচ্চতার শিব লিঙ্গ তৈরি হয়। এই শিবলিঙ্গ তৈরি হওয়ার ব্যাপারটা অনেকটা রহস্যময়, কারণ এখানে আসে পাশে আরো এরকম কয়েকটি গুহা, এই গুহা গুলোতেও জলকনা নিচের দিকে জমা হয় কিন্তু কোনো গুহাতেই এরকম আশ্চর্য শিব লিঙ্গ তৈরি হয়না। আপনি অমরনাথ যেতে যেতেই এরকম কয়েকটি গুহা দেখতে পাবেন। যদিও এই শিব লিঙ্গের আয়ু এক থেকে দেড় মাসই থাকে। বর্তমানে যাত্রা শেষ হওয়ার আগেই এই শিবলিঙ্গ গলে যাচ্ছে, তার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় গ্লোবাল ওয়ারমিং কে এবং অত্যধিক হারে দর্শনার্থীদের এখানে আসা। এই পবিত্র গুহাতে আরো দুটি ছোটো শিব লিঙ্গ তৈরি হয় যাদের দেবী পার্বতী এবং গণেশের সাথে তুলনা করা হয়।
কেমন করে অমরনাথ পৌঁছোবেন : - অমরনাথ আপনারা অনেক ভাবেই ভাবেই আসতে পারেন। প্রথমত আপনাকে ভারতের যে কোনো প্রান্ত থেকে জম্মু পৌঁছতে হবে। যদি ফ্লাইটে আসতে চান তাহলে জম্মু এয়ারপোর্ট বা শ্রীনগর এয়ারপোর্টে নামতে হবে, জম্মুতে নামাই বেশি সুবিধাজনক। তাছাড়া আপনারা বাসে বা ট্রেনে ও আসতে পারেন জম্মু তাওয়াই রেলস্টেশন পর্যন্ত। ভারতের বেশীরভাগ শহর থেকেই এখানে আসার ট্রেন পেয়ে যাবেন। এবার জম্মু থেকে অটো করে আপনাকে যেতে হবে ৩ কি.মি দূরে ভগবতীনগর অমরনা যাত্রীনিবাস। অমরনাথ গুহাতে পৌঁছনোর জন্য দুটো রাস্তা আছে একটি পহেলগাম হয়ে এবং অপরটি বালতাল হয়ে। পহেলগাম হয়ে গেলে যেতে হবে প্রায় ৩২ কিমি পথে পায়ে হেঁটে কিন্তু বালতাল হয়ে গেলে যেতে হবে মাত্র ১৪ কি.মি। বালতাল হয়ে গেলে পথ অনেকটা কম মনে হলেও এই রাস্তা পহেলগাম থেকে অনেক খাঁড়া এবং অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আপনাকে পৌঁছতে হবে, লোকটি পহেলগামের হয়ে রাস্তা এতোটা খাড়া না, এবং আপনারা অনেকটা সহজে পৌঁছতে পারবেন। বেশিরভাগ তীর্থযাত্রী পহেলগাম হয়ে গিয়ে বালতাল হয়ে ফিরে আসে।
বালতাল বেসক্যাম্প । |
- আরো পড়ুন - কেরালা ভ্রমণের সমস্ত তথ্য ।
অমরনাথ যাত্রার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পারমিট এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট :- অমরনাথ যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার যাত্রা পারমিট বের করা, এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট বের করে তা জমা করা। মেডিকেল সার্টিফিকেট বের করা ছাড়া আপনারা যাত্রা পারমিট হবে না। এই মেডিকেল সার্টিফিকেট আপনি নিজের ইচ্ছা মত যে কোনো জায়গা থেকে বের করতে পারবেন না শ্রী অমরনাথ জি স্রাইনবোর্ডের গোটা দেশে নির্দিষ্ট করে দেওয়া কয়েকটি হাসপাতাল থেকেই আপনারা করতে পারবেন, সেই হাসপাতাল গুলোর লিস্ট আপনারা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। আপনারা যেই শহরের বাসিন্দা হোন না কেনো সাইট দেখে আপনার শহরের যদি কোনো হাসপাতাল লিস্টে না থাকে তাহলে পার্শ্ববর্তী কোনো শহরে যেতে হবে, মোটামোটি বড় বড় সব শহরেই এবং জেলা সদর শহর গুলিতে আপনারা এই লিস্টের হাসপাতাল পেয়ে যাবেন।👇
- স্রাইন বোর্ডের - ওয়েবসাইট
এর পরের প্রসেস হল পারমিট আদায় করা। আপনি পারমিট অফলাইন করতে পারেন জম্মুতে গিয়ে, অনলাইনেও করে নিতে পারেন। আমি বলবো সবসময় অনলাইনেই এটা করা উচিৎ হবে, এবং নিজের ইচ্ছেমত ডেট অনুযায়ী আপনারা যেতে পারবেন। অফলাইনে করলে আপনাকে জম্মুতে গিয়ে কয়েকদিন ওয়েট করতে হবে ডেট এর জন্য। এবার আসি পুরো অনলাইন প্রসেসে। প্রথমত আপনাকে বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ফ্রম ডাউনলোড করে তা ফিলআপ করে নিতে হবে, এরপর অমরনাথ স্রাইনবোর্ডের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ব্যাংক এ গিয়ে ৫০ টাকার চালান কেটে, মেডিকেল সার্টিফিকেট attach করে, সাথে ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ জমা করতে হবে, মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো ফর্মই কিন্তু জমা হবে না। এবং অবশ্যই আপনাকে উল্লেখ করে দিতে হবে আপনি কোন রুট দিয়ে এই যাত্রা শুরু করতে চান, অমরনাথে আসার দুটো রুট আছে আমি আগেই বলেছি। এরপর আপনার জন্য পারমিট ব্যাংক থেকে ইস্যু করবে। আমি আগেই বললাম সমস্ত ব্যাংকে এই কাজ হবে না কেবলমাত্র বোর্ডের লিস্টে থাকা কয়েকটি ব্যাংক থেকেই (যেমন J&K ব্যাংক, PNB ব্যাংক ইয়েস ব্যাংক) আপনি এই পারমিট পাবেন। তার মানে এই নয় যে আপনারা এলাকায় এইসব ব্যাংক এর শাখা আছে মানেই আপনি এখান থেকে পারমিট পাবেন, না এটা না। ব্যাংকটি বোর্ডে লিস্টে আছে নাকি সেটা দেখে নেবেন ওয়েবসাইট থেকে আমি তাও আমাদের রাজ্যের সব গুলি শহরের ব্যাংকের নাম নিচে দিয়ে দেবো আপনারা চাইলে দেখে নিতে পারেন নাহলে তো ওয়েবসাইট আছেই।
আমাদের রাজ্যের হাস্পাতালের লিস্ট। |
এই বারে ভাবতে পারেন আপনি পারমিট পেয়ে গেছেন সমস্ত প্রসেস শেষ এবার আপনি দর্শন করতে পারবেন। আজ্ঞে না এটা কেবল শুরু, আরো বহুত কিছু আছে এই পারমিট দেখিয়ে আপনাকে আই কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এর পরের সমস্ত প্রসেস জম্মুতে নামার পর শুরুহবে, এখান থেকে মানে জম্মুতে পৌঁছে শুরু হবে আপনাদের আসল কাজ, সমস্ত কিছুই এখন আপনাকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সম্পন্ন করতে হবে এরপরের সমস্ত কিছুই আমি পরের পয়েন্ট বলবো।
অমরনাথ যাত্রার তাবু, 1915 সালের। Picture Credit - Nostalgic Kashmir. |
জম্মু থেকে অমরনাথ যাত্রা :- এই পয়েন্ট আমি আপনাদের জানাবো জম্মু থেকে কি ভাবে ধাপে ধাপে সমস্ত প্রসেস শেষ করে আপনি বাবা বর্ফানির দর্শন করবেন। আগের পয়েন্টে আমি আপনাদের বলেছিলাম জম্মু পৌঁছে আপনাকে ভগবতীনগর অমরনাথ যাত্রী নিবাস পৌঁছতে হবে। ভগবতীনগর পৌঁছেই আপনাদের প্রধান কাজ হবে পারমিটের কাগজ আর আধার কার্ড দিয়ে আই কার্ড সংগ্রহ করা বা যাকে RFID ট্যাগ বলে, যেটা এ বছরের অমরনাথ যাত্রার নবতম সংযোজন, এতা আসলে একটা ট্র্যাকিং ডিভাইস আপনি কোথায় থাকছেন সেটা ট্রাক করে স্রাইন বোর্ড জেনে যাবে, এজন্যই এ ব্যবস্থা। আপনি চাইলে এই ট্যাগ বেসক্যাম্পে গিয়েও করতে পারেন, যারা নিজেদের গাড়ি নিয়ে আসবেন তারা সরাসরি বালতাল বাংলা পহেলগাম বেসক্যাম্প গিয়েও করতে পারেন । এর জন্য লম্বা লাইন দিতে হবে, এই আই কার্ড ছাড়া আপনি এক-পা ও আগে যেতে পারবেন না। এটা মাথায় রাখবেন এই কার্ড কিন্তু আপনারা যাত্রা ডেটের এক বা দু-দিন আগেই ইস্যু হয়, এর আগে আসলে আপনি কার্ড পাবেন না, আর যাদের পারমিট করা নেই তারা মেডিকেল ফিট সার্টিফিকেটের বিনিময়ে পারমিট করে নেবেন, তার জন্য কয়েকদিন আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। এর পরে আপনাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কাজটি হবে রাতের থাকার ব্যবস্থা করা। এবং পরের দিনের পহেলগাম বা বালতালের জন্য বাসের টিকিট কেটে রাখা। ভগবতীনগরের ক্যাম্প থেকে কিন্তু খুব ভোরে যাত্রার বাস এবং ছোটো শেয়ার গাড়ি গুলি ছেড়ে দেয় বেসক্যাম্পের উদ্দেশ্যে, তাই আপনি যদি টিকিট বুক আগের দিন করে না রাখেন তাহলে পরের দিন যাওয়ার টিকিট পাবেন না। বাস ভাড়ার লিস্ট আমি নিচে দিয়ে দিলাম আপনাদের সুবিধার্থে, আর যারা নিজেদের পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে আসবেন তারা অবশ্যই এখান থেকে আর্মির স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে নেবেন এটা ছাড়া সামনে এগনোর পারমিশন পাবেন না। এবার আপনাদের থাকার ব্যবস্থা করা জরুরি। ভগবতীনগরের এখানে থাকার অনেক ব্যবস্থা আছে, ডরমিটরি রুম পেয়ে যাবেন এসি এবং নন-এসি। এসি - ৫০ টাকা এবং নন এসি - ১০ ঘুমানো জন্য বেড রোল বালিস এসব কিছুই ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে পেয়ে যাবেন, কিন্তু এইসব কিছুই জন্য আবার আপনাকে দীর্ঘ লাইন দিতে হবে। এছাড়া আসে পাশে হোমস্টে ও হোটেল ও পেয়ে যাবেন। যাই হোক শোয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর, এবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা। একটা জিনিস আপনাদের বলে রাখি যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে একদম শেষ দিন পর্যন্ত আপনাদের খাওয়ার পিছনে এক টাকাও খরচা হবে না, প্রতিটি ক্যাম্পের সামনেই দিন রাত ধরে চলা ভাণ্ডারা বা লংগর গুলি থেকে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাওয়ার আপনারা পেয়ে যাবেন সাথে জলের ব্যবস্থা ও পেয়ে যাবেন, তাই আপনাদের খাওয়ার পেছনে কোনো টাকা-ই লাগবে না।
বাস রেট - ২০২২ |
দ্বিতীয় দিন আপনাদের যাত্রা শুরু হবে যাত্রী নিবাস থেকে খুব ভোরে পহেলগাম বা বালতালের উদ্দেশ্যে। পহেলগামের নুনওয়ান বেসক্যাম্পের দূরত্ব ২৪৫ কি.মি, যেতে সময়ে লাগবে ৮-৯ ঘন্টা। এবং বালতাল বেসক্যাম্পের দূরত্ব ৩৫৬ কি.মি, যেতে সময় লাগতে পারে ১২-১৩ ঘন্টা। আপনারা বাসে না আসতে চাইলে ধকল কমানোর জন্য শেয়ার গাড়িতে ও আসতে পারেন, ভাড়া পহেলগামের জন্য ১৫০০ টাকার মতো এবং বালতালের ১৮০০ টাকার মত। রাস্তায় কয়েক জায়গায় আপনাদের পুরো কয়েকশো গাড়ির কনভয় চলবে আর্মির সতর্ক প্রহরায় । কিছু জায়গায় ভাণ্ডারার জন্য আপনাদের এই কনভয় দাঁড়াবে, সেখান থেকে আপনারা আপনাদের খাওয়ার খেয়ে নিতে পারেন, খাওয়ার নিয়ে এই যাত্রায় কোনো চিন্তের কারণ নেই, বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে আপনারা বিনামূল্যে খাওয়ার পেয়ে যাবেন। যাইহোক বেসক্যাম্পের কাছে পৌঁছে পার্কিং থেকে কিছুটা দূর পায়ে হেঁটে আপনি পৌঁছবেন বেসক্যাম্প এর একদম সামনে এখানে আপনাদের আই কার্ড স্ক্যান করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। আর যাদের এই কার্ড করা নেই তারা এখানে এসেও কার্ড করিয়ে নিতে পারেন। বেসক্যাম্পে ভিতরে ঢুকে থাকার জন্য বিভিন্ন টেন্ট পেয়ে যাবেন ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে, খাওয়ার ব্যবস্থা ও ভিতরেই থাকবে। একবারে এন্ট্রি হয়ে গেছে আর বাইরে বের হতে পারবেন না। যায়হোক রাতের খাওয়ার খেয়ে রেস্ট নিয়ে নেবেন। যেহেতু প্যাহেলগামের রুটটা বেশি জনপ্রিয় তাই এই রুটের বিবরণ টাই আগে দিচ্ছি।
অমরনাথ যাত্রা-1955. Picture credit- nostalgic kashmir. |
তৃতীয় দিনের আপনাদের যাত্রা শুরু হবে সকাল প্রায় ৪ টা থেকে, আপনাদের যেতে হবে শেয়ার গাড়ি করে বেসক্যাম্প থেকে চন্দনবাড়ি। শেয়ার গাড়ি - ১৫০ টাকা। চন্দনবাড়ি পৌঁছে আবার আই কার্ড স্ক্যান করে পৌঁছে যান চন্দনবাড়ি বেসক্যাম্প। এই চন্দনবাড়ি বেসক্যাম্প থেকেই আপনাদের আসল যাত্রা শুরু হবে অমরনাথের উদ্দেশ্যে হাঁটা পথে। একটা লাঠি এবং জয় ভোলের নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, যারা ঘোরা, পালকি বা পিঠঠু তে যেতে চান তাদের ভাড়ার লিস্ট আমি নিচে দিয়ে দিলাম। চন্দনবাড়ি বেসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করার পর প্রথমে আসবে পিসসু টপ, এরপর ১৬ কি.মি যাত্রা শেষ করার পর আসবে আজকের বেসক্যাম্প শেষনাগ। শেষনাগ পৌঁছে আই কার্ড আবার স্ক্যান করে বেসক্যাম্পের ভিতরে প্রবেশ করুন এখানে তাবু ছাড়া থাকার আরো কোনো ব্যবস্থা নেই, এখানে টেন্ট আপনারা পেয়ে যাবেন ৪৫০ টাকার মধ্যে। ভাণ্ডারা খেয়ে সেদিনের মত বিশ্রাম। এরপর শুরু হবে আপনাদের চতুর্থ দিনের যাত্রা।
চতুর্থ দিনের যাত্রা অনেকটা দীর্ঘ হবে কারণ এদিন যেতে হবে প্রায় ২০ কি.মি পথ অতিক্রম করে পঞ্চতরনী বেসক্যাম্প, এবং এখান থেকে অমরনাথ গুহা। প্রথমেই আসবে গণেশ টপ, শেষনাগ বেসক্যাম্প থেকে এই গণেশটপের রাস্তা যথেষ্ট খাড়া, গণেশটপে পৌঁছে গেলে তারপর রাস্তা এতোটা খাঁড়া নেই। গণেশটপের পর আসবে পোশপথথর এবং শেষে পঞ্চতরনী ক্যাম্প, রাস্তায় এই সমস্ত ক্যাম্প গুলোতেই ভাণ্ডারার ব্যবস্থা থাকবে। সবসময় চেষ্টা করবেন দুপুর ২টা মধ্যে পঞ্চতরনী ক্যাম্পে পৌঁছে যাওয়ার কারণ ৩টে থেকে গুহার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় । নাহলে পরের দিন দর্শন করতে হবে। পঞ্চতরনী ক্যাম্প থেকে পবিত্র গুহার রাস্তা প্রায় ৬ কি.মি। কিন্তু এরমধ্যে সঙ্গম পয়েন্ট পর্যন্ত ১.৫ কি.মি রাস্তা খুবই খাড়া, এবং তারপর থেকে রাস্তা ঠিকঠাক, কিন্তু এই রাস্তাতে ঘোড়া ও পালকির জন্য জ্যাম কিন্তু লাগবেই। সে যাই হোক পবিত্র গুহায় ঢুকে প্রাণ ভোরে বাবা অমরনাথের দর্শন করুন তারপর আবার পঞ্চতরনী ক্যাম্পে ফিরে আসুন। গুহার ভিতরে কিন্তু মোবাইল ফোন allow না, গুহার পাশেই দোকান গুলিতে মোবাইল ফোন জুতা জিনিসপত্র জমা রেখে ভিতরে যেতে হবে। এই ক্যাম্পে ও থাকার মতো প্রচুর তাঁবু আছে মোটামুটি ৫০০ টাকার মধ্যে। এবার আবার পরের দিনের অপেক্ষা আপনাকে পরেরদিন ফিরে যেতে হবে বালতাল হয়ে।
Amarnath yatra - 1898. Picture credit - nostalgic kashmir. |
অমরনাথ হেলিকপ্টার সার্ভিস :- অমরনাথ যাত্রা আপনি হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও করতে পারেন। আপ-ডাউন এবং ওয়ানওয়ে দুটিরই ব্যবস্থা আছে। বালতাল বেসক্যাম্প থেকে পঞ্চতরনী আপডাউন- ২৮৯০ এবং ওয়ানওয়ে- ১৪৪৫।
প্যাহেলগাম থেকে ভাড়া - ৪৭১০, এবং ওয়ানওয়ে- ২৩৫৫।টিকিট অনলাইন নীচের লিঙ্কে সমস্ত Details পেয়ে যাবেন ।
- এখানে ক্লিক করুন - হেলিকপ্টার সার্ভিস
বালতাল রুট :- প্যাহেলগামের রুটে ব্যাপারে এতক্ষন আপনাদের জানালাম এবার আসি বালতাল রুট নিয়ে, যারা প্যাহেলগামের রুট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তারা বালতাল রুট হয়েই ফিরে যান। বালতাল বেসক্যাম্প থেকে ডোমেইল, বারারি হয়ে সঙ্গম পয়েন্ট, যার দূরত্ব ১১ কি.মি। এবং সঙ্গম পয়েন্ট থেকে পবিত্র গুহা মাত্র ৩ কি.মি। এই রুটের দূরত্ব কিন্তু তুলনামূলকভাবে অনেক কম, কিন্তু এই রুটে পুরো রাস্তা চড়াই উতরাই পাবেন এবং রাস্তাও যথেষ্ট সরু, প্যাহেলগামের রাস্তার তুলনায়। কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে একদিনে গিয়েই আবার বালতাল বেসক্যাম্পে ফিরে আসতে পারেন, যারা সক্ষম তারা এই রুটটা এই জন্যই বেছে নেন।
Baltal Basecamp. |
অমরনাথ যাত্রার খরচ :- আমি পুরো পোস্টে সব কিছুর খরচা গুলো উল্লেখ করে দিয়েছি। খরচা কত হতে পারে? এটা কিন্তু বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে, তাই ওই ভাবে পুরো খরচা বলা যায়না। অমরনাথ যাত্রার খরচা বলতে শুধু যাতায়াত এবং থাকার, খাওয়ার পেছনে আপনাদের এক পয়সাও লাগবে না। আপনি যদি টেন্টে থাকেন তাহলে থাকার জন্য পুরো খরচা হতে পারে ১৫০০ টাকার মতো।
Accomodation/ তাবু রেট। |
যাতায়াত বাবদ খরচ হতে পারে - ১৫০০(প্যাহেলগাম) ২০০০( বালতাল) আরো এক্সট্রা কিছু ধরে রাখবেন, আর আপনি যদি হেলিকপ্টারে যান তার জন্য আরো এক্সট্রা টাকা গুনতে হবে। আমি যে হিসেব টা দিলাম সেটা কিন্তু জম্মু থেকে জম্মুর হিসেব।
ধন্যবাদ সবার কেমন লাগলো কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।
খুব সুন্দর লেখা।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনHnmmloy
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন