।।বান্দরবান ভ্রমণ গাইড ।।
ভ্রমণ পিপাসু:- দিগন্ত জুড়ে সবুজের সমারোহ, আর মেঘ ছুয়ে দেখার অপার সুযোগ কিংবা পাহাড়ি সরু রাস্তা, দারুণ দারুণ সব পাহাড়ি ঝর্ণা, প্রকৃতি তার কোনোটার ই কার্পণ্য রাখেনি পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানের জন্য। প্রকৃতি বান্দরবানকে সাজিয়েছে আপনমনে। মেঘ কে খুব কাছ থেকে দেখতে চাইলে, সেই সাথে পাহাড়ি রাস্তা এবং মনমুগ্ধকর ঝর্ণার কলতান পেতে চাইলে আপনাকে আসতেই হবে পাহাড়িকন্যা বান্দরবানে। তাই এই ব্লগে আজ আলোচনা করবো বান্দরবানের সেরা ১০ টি ঘোরার জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলা তে অবশ্যই যেতে হবে এখানে আসলে চলুন তাহলে শুরু করি...
১.নীলগিরি :- বান্দরবান জেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৫০ কি.মি দূরে অবস্থিত বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত এই নীলগিরি। নীলগিরি পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আপনার যেদিকে চোখ যাবে শুধু সবুজ আর সবুজ আর মেঘের হাতছানি। এই দুই মিলিয়ে আপনার মনে হবে আপনি কোনো রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছেন। সকাল ও বিকেলে সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত, জ্যোৎস্নাময় আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
২.বগা লেক :- বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার এই স্বাদু পানির এই লেক ভ্রমণ পিপাসু বাঙ্গালির কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা গুলির মধ্যে অন্যতম। এর উচ্চতা ১২৪৬ ফিট। বগা লেকের অবস্থান, বান্দরবানের রূমা উপজেলায় । প্রতি বছরই রহস্যময় ভাবে এই লেক তার পানির রং প্রায় কয়েকবার পরিবর্তন করে। হয়তো কোনো রাসায়নিকের জন্য হতে পারে, তাই এই লেকের পানিতে নামা বা সাঁতার কাটা একদমই নিষেধ। রূমা থেকে এই বগা লেকের দুরত্ব মাত্র ১৭ কি.মি।
৩.দেবতাখুম :- বান্দরবান শহর এই দেবতাখুমের দূরত্ব মাত্র ২৬ কি.মি। যার অবস্থান বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায়। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি হয়ে যেতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টার মত। বিশাল দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা এক সরু জলপথ। বিশাল দুই পাহাড়ের মাঝে এই খুম বা গর্ত। সূর্যের আলো খুব কম পৌঁছায় এখানে। এই খুমের গভীরতা প্রায় ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট । খুবই শান্ত এই জায়গাটি এক নীরবতা বিরাজ করে এখানে। বাঁশের তৈরি ভেলায় চরে পর্যটকরা এই পুরো ট্রেইলটি পার হোন, অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।
বান্দরবান থেকে আপনাকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে সেক্ষেত্রে আপনি মাহিনদ্রা গাড়ি ও ভাড়া করতে পারেন, এবং চান্দের গাড়ি ও ভাড়া করতে পারবেন, মাহিনদ্রার ভাড়া নিতে পারে ২০০০-২৫০০ টাকা আর চান্দের গাড়ির ভাড়া ৩৫০০-৪০০০ টাকা। এছাড়া অটো ও বাস ও পেয়ে যাবেন। রোয়াংছড়ি পৌঁছে আপনাকে গাইড ভাড়া করতে হবে দিনপ্রতি - ১০০০ টাকা, তারপর পারমিট থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবস্থা আপনার গাইড ই করে দেবে।
৪. নীলচল :- নীলাচল, বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত। এটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২০০০ ফিট উচ্চতায় বান্দরবানের টাইগার পাড়ায় অবস্থিত। যদি পুরোপুরি মেঘমুক্ত আকাশ থাকে তাহলে গোটা বান্দরবান শহরটি তো দেখতে পাবেনই সাথে দূরের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও দেখা যাবে। নীলচলে বর্ষা ও শরৎ কালে হাতের কাছে মেঘের খেলা করে, এখানে আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারবেন, যদিও এখন রাতযাপন করার জন্য কিছু কিছু resort ও তৈরি হয়েছে। তবে আকাশের মেঘকে ভালো ভাবে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে খুব সকালে যেতে হবে এখানে।
৫.কেওক্রাডং :- কেওক্রাডং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। ৩১৭২ মিটার উচু এই পর্বতশৃঙ্গকে এক সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে ধরা হতো। কিন্তু বর্তমানের উন্নত প্রযুক্তি আসার পর এটি এখন বাংলাদেশের পঞ্চম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সাকা হাফং। তা সত্ত্বেও কেওক্রাডং কে বাংলাদেশের ছাদ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে এখনো। এই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনার যেদিকে চোখ যাবে শুধু পাহাড়ের স্রোত দেখতে পাবেন।
৬. সাঙ্গু নদী :-বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম সাঙ্গু নদী ২৭০ কি.মি পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে প্রবাহিত এই নদী বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা ও থানচি উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। বর্ষাকালে আসলেই এই নদীর আসল রূপ আপনারা দেখতে পাবেন। সাঙ্গু নদীর দুই পাশের পাহাড়, জঙ্গল ঝর্ণা যেকোনো পর্যটককে মোহিত করবেই। বান্দরবান শহর থেকে লোকাল বাসে আপনি রেমাক্রি ইউনিয়নে আসতে পারেন সেখান থেকে আপনি এই সুন্দর নদীটি দেখতে পাবেন।
৭. গোল্ডেন টেম্পল :- বান্দরবান শহরের কাছেই খুব জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হল এই গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণ মন্দির যার প্রকৃত নাম Boudha Dhatu Jadi। যা বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত । গাড়ি নিয়েও এখানে যাওয়া যাবে, গাড়ি পার্কিং মুল্য ৫০ টাকা। তারপর আপনাকে কিছুটা ওপরে ওঠে টিকিট কাউন্টার থেকে মন্দিরে প্রবেশের টিকিট কাটতে হবে যার মুল্যও ৫০ টাকা। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির যা এই মন্দিরটি স্থাপত্যে তৈরি করা হয় ২০০০ সালে। বান্দরবান প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী মার্মা জাতি দ্বারা তৈরি ও পরিচালিত হয়ে আসছে। মন্দিরটি বেশ সুন্দর তাই প্রচুর পর্যটক আসে এই মন্দিরটি দেখতে।
৮. নাফাখুম ঝর্ণা :- বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৮০ কি.মি দূরে অবস্থিত থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি বাংলাদেশে সবচেয়ে সুন্দর এই নাফাখুম ঝর্ণা। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ পাক খেয়ে হঠাৎ নেমে গেছে প্রায় ৩৫ ফুট আর সৃষ্টি হয়েছে এই অপূর্ব ঝর্ণা।
৯.আমিয়াখুম জলপ্রপাত :- খুমের স্বর্গরাজ্য বান্দরবানের আরো একটি সুন্দর ঝর্ণা হলো আমিয়াখুম জলপ্রপাত, যার অবস্থানও বান্দরবানের থানচি উপজেলায় একদম মায়ানমার বর্ডার লাগোয়া এলাকার দূর্গম নাখ্যিয়াম নামক জায়গায়। পাহাড়ি সাঙ্গু নদী তার প্রবাহপথে অনেকগুলো ঝর্ণার সৃষ্টি করেছে আমিয়াখুম তার মধ্যে একটি। বর্ষায় টগবগে যৌবন ফিরে পায় এই জলপ্রপাত অন্য সময়ে তেমন কোনো পানি থাকে না এতে, প্রবল বেগে জলধারা তীব্র গতিতে নেমে আসে এখান থেকে।
বান্দরবান থেকে এই জলপ্রপাতের দূরত্ব মাত্র ৭৬ কি.মি হলেও, বান্দরবানের সবচেয়ে দূর্গম এলাকায় এর অবস্থান, বান্দরবান থেকে থানচি হয়ে রেমাক্রি, নাফাখুম, ধুইসাপাড়া, দেবতাখুম হয়ে এই স্থানে পৌঁছতে হয়, অনেকটা পথ আপনাকে ট্রেক ও নৌকা পথে আপনাকে এখানে পৌঁছতে হবে।
১০. শৈলপ্রপাত ঝর্ণা :- বান্দরবান শহর থেকে ৮ কিমি দূরে বান্দরবান - থানচি রোডের ধারে স্বচ্ছ পানির জলধারার নাম হলো এই শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। এই ঝর্ণার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বহমান হিমশীতল পানির ঝর্ণা যা একে বান্দরবানের প্রধান পর্যটনস্থল গুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। এছাড়া এই শৈলপ্রপাত ঝর্ণার পাশেই আছে মিলনছড়ি পর্যটনস্থল সেটি ও সাথে আপনারা দেখে নিতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন