কালকা শিমলা টয় ট্রেন
কিছু জরুরী কথা :- ৯৬ কি.মি দীর্ঘ এই কালকা-শিমলা রেলপথ যা বর্তমান হরিয়ানার কালকা থেকে ব্রিটিশ আমলের ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শিমলা পর্যন্ত বিস্তৃত । এই কালকা শিমলা রেলপথ একটি UNESCO স্বীকৃতি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত, এই হেরিটেজ সাইটের লিস্টে এই রেলপথ ছাড়াও আরো দুটো রেলপথ অন্তর্ভুক্ত আছে একটি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে এবং অন্যটি উটির নীলগিরী রেলওয়ে, এই তিনটি রেলপথই ন্যারোগেজ লাইন এবং খুবই প্রাচীন এবং ঐতিহ্যমন্ডিত। শিমলা পর্যন্ত এই রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনেক আগে থেকেই ছিল, কারন তখনকার ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শিমলা পৌঁছতে অনেক অসুবিধায় পড়তে হত, তাই ট্রেনব্যবস্থা চালু হলে অনেকে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যেতো। সেই সন্ধিক্ষণ এসে উপস্থিত হয় ১৮৯৮ সালে, কাজ চলে প্রায় ৫ বছর, শেষে ১৯০৩ সালে এই লাইনের উদ্বোধন হয় লর্ড কার্জনের সময়ে। এই ন্যারোগেজ লাইনে টোটাল স্টেশন আছে ১৮ টি, বাক আছে ৯১২ টি, ব্রিজ - ৯৬৯টি এবং টানেল - ১০৩টি। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম টানেল বরোগ স্টেশনের বরোগ টানেল - ১১৪৩ মি। এই লাইনে জার্নিতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা ।
- আরো পড়ুন - লাহুল ও স্পিতি ভ্রমণের সমস্ত খুঁটিনাটি
কেন এই ট্রেনে ভ্রমণ করবেন আর কেমন করে কালকা এসে পৌঁছবেন:- আমি আগের পয়েন্টে বলেছি এই লাইন UNESCO এর হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে, দ্বিতীয়ত এই ট্রেন জার্নির দু পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ, এই উপভোগ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায় যখন শীতকালে সাদা বরফে ঢাকা পাহাড়ের উপর দিয়ে আপনাদের ট্রেন শিমলার পথে অগ্রসর হতে থাকে। তৃতীয়ত, শিমলা পর্যন্ত এক আরামদায়ক, সুন্দর এবং খুবই কম খরচের জার্নি।
Kalka station. |
এবার আসি আপনারা কেমন করে পৌঁছোবেন, আপনারা যদি কলকাতা থেকে সরাসরি কালকা আসতে চান তাহলে ৩,৪টি ট্রেন আপনারা পাবেন এক হাওড়া থেকে নেতাজি এক্সপ্রেস, কলকাতা স্টেশন থেকে কলকাতা - কালকা উইকলি এক্সপ্রেস প্রভৃতি.....
সরাসরি ট্রেন না পেলেও দিল্লী বা চন্ডীগড় থেকে অনেক ট্রেন পেয়ে যাবেন কালকা আসার, ট্রেনের টাইম গুলো এমন ভাবেই তৈরি করা যাতে আপনি স্টেশনে নেমে টয় ট্রেন গুলো ধরতে পারেন।
ট্রেন সময়সূচি, বুকিং পদ্ধতি এবং ভাড়া :- কালকা থেকে শিমলা এই ন্যারোগেজ রুটে সর্বমোট ৬টি ট্রেন চলাচল করে,যা ডেইলি যাতায়াত করে দুটো স্টেশনের মধ্যে ভোর ৫.২৫ থেকে শুরু করে বিকেল ৩.৩০ টা পর্যন্ত লাস্ট ট্রেন। নিচে ট্রেন লিস্ট এবং তার সময়সারনী দেওয়া হলো....
Kalka - Simla toy train time table |
এই ট্রেনের টিকিট কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, এবং ছুটির মরসুম গুলোতে একদম মিনিটে শেষ হয়ে যায়। এই লাইনের টিকিট ঠিক এক মাস আগে ওপেন হয়, অন্য টিকেটের মত ১২০ দিন আগে না। অনলাইনেই মোটামোটি ৯৫% টিকিট শেষ হয়ে যায় সরাসরি স্টেশনে গিয়ে কিছু জেনারেল টিকিট পেয়ে যাবে। তাই আপনারা কালকা পৌঁছোনোর ট্রেনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে IRCTC একাউন্ট থেকে আপনাদের পছন্দ মত ৬ টি ট্রেনের মধ্য থেকে টিকিট কেটে নিবেন। টিকিটের দাম বিভিন্ন রকম আছে বিভিন্ন ক্লাস অনুযায়ী, জেনারেল ক্লাস থেকে শুরু করে AC চেয়ারকার, কেবিন বিভিন্ন ক্লাসের টিকিট আছে মোটামোটি ৬৫ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকার মধ্যে। এই লাইনে টিকিটের দাম কিন্তু বাকি অন্য দুটি লাইন যেমন দার্জিলিং আর উটি থেকে খুব কমই আছে তার একটাই কারণ, এই লাইনে stream ইঞ্জিন চলে না সব লোকমোটিম। দার্জিলিং টয় ট্রেনের টিকিটের দাম তো অত্যধিক তার তুলনায় এখানে যথেষ্ঠ কম, আপনার টিকিটে দাম গুলো IRCTC অ্যাপ থেকে দেখে নেবেন।
কালকা-শিমলা টয় ট্রেন স্টেশন :- ৯৬ কি.মি দীর্ঘ এই লাইনে সর্বমোট ১৮ টি স্টেশন আছে, প্রতিটি স্টেশনই টয় ট্রেনের জন্য নির্মিত তাই প্রতিটি স্টেশনই, আকারে ছোট, স্টেশন গুলো ছোটো হলেও প্রতিটি স্টেশন-ই খুবই সুন্দর, এগুলো থেকে ভিউ গুলোও দেখার মত, প্রায় প্রতিটি স্টেশনে অবশ্যই আপনি নামতে বাধ্য হবেন, যদি আপনি প্রকৃতি প্রেমী বা ছবি প্রেমী বা ফটোগ্রাফার হোন। আর প্রতিটি স্টেশনেই আপনারা চা থেকে শুরু করে ছোটোখাটো খাওয়ার আপনারা পেয়ে যাবেন, বিশেষ কিছু অসুবিধা হবে না। চলুন তাহলে এক এক করে দেখেনি শিমলা যেতে কোন কোন স্টেশন আমরা পাবো..
Borog Station, most beautiful station in this line |
Dharmapur-Himachal station |
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন সব ট্রেন কিন্তু সব স্টেশনে স্টপেজ দেয়না। হরিয়ানার কালকা থেকে ট্রেন ছাড়ার পর হিমাচলের প্রথম যে স্টেশন পড়বে সেটি হল টাঁকসাল দুরত্ব কালকা থেকে মাত্র ৬ কি.মি, এই নাম হওয়ার কারণ এখানে ব্রিটিশ আমলে নোট প্রিন্টিং প্রেস ছিল, তারপর একে গুমন, কোটি হয়ে ট্রেন আসবে সোনওয়ারা স্টেশনে, এই সোনওয়ারাতে ট্রেন ন্যাশনাল হাইওয়ে ২২ কে ক্রস করবে। এরপরের স্টেশন যেখানে স্টপেজ টাইম একটু বেশি পাবেন সেটি ধর্মপুর-হিমাচল এরপর কুমারহাটটি-ডগসাই, যেই জায়গা হিমাচল প্রদেশের প্রাচীনতম ক্যান্টনমেন্ট। এরপর যে স্টেশনটি আসবে যার একটু বড় ইতিহাস আছে এবং এই লাইনের সবচেয়ে সুন্দর স্টেশন এটি নাম বরোগ। এই বরগ স্টেশনেই অবস্থিত এই লাইনের দীর্ঘতম টানেল যার দৈর্ঘ্য ১১৪৩ মিটার।
Borog tunnel. |
এই বরোগ স্টেশনের নাম এসেছে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার স্যার বরোগের থেকে। তিনি স্টেশনের পাশেই অবস্থিত দীর্ঘতম টানেল নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন, দুদিক থেকে টানেল নির্মাণের জন্য ড্রিল করা শুরু করলেও, মাঝে এসে দুটো প্রান্তকে কিছুতেই মিলাতে পারছিলেন না, এরজন্য তাকে ফাইন ও করা হয়, এবং লজ্জা ও অভিমানে তিনি স্টেশনের পাশেই আত্মহত্যা করেন, পরে তার ছেড়ে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ যখন সম্পূর্ণ হল তখন তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই স্টেশন এবং টানেলের নাম রাখা হয় তার নামে। এরপর নেক্সট যে স্টেশন আসবে সেটি হলো সোলন, হিমাচলের সোলন জেলার সদর শহর, এরপর একে একে আসবে সালোগরা, কন্ডাঘাট, কানোহ, কাইথলিঘাট, যেটা সোলন জেলার লাস্ট স্টেশন, এরপর যে নেক্সট স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে তা শিমলা জেলার প্রথম স্টেশন নাম সোঘি এরপর তারাদেবী, যা তারাদেবী মন্দিরের জন্য বিখ্যাত, এরপর যুতোগ এবং তারপর সামারহিল, এখানে আসা মানেই আপনি মোটামুটি শিমলা পৌঁছে গেছেন, সামারহিল থেকে শিমলা স্টেশন মাত্র ৩ কি.মি দূরে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন