স্পিতি ভ্যালি ভ্রমণের সমস্ত খুঁটিনাটি বাংলায়। লাহুল ও স্পিতি ট্যুর। All Information about Spiti Valley Tour, Lahul & Spiti

 স্পিতি ভ্যালি ভ্রমণের সমস্ত খুঁটিনাটি

ভ্রমণ পিপাসু :- স্পিতি ভ্যালি জায়গাটি কয়েকবছর আগেও এতটা জনপ্রিয় ছিল না, বেশ কয়েকবছর হল দেশের পর্যটনের মানচিত্রে এই স্পিতি ভ্যালি লাদাখের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পর্যটনস্থল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। ' স্পিতি' কথার অর্থ মিডল পয়েন্ট। এই জায়গা ভারত ও তিব্বতের মধ্যে মিডল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করতো পূর্বে। এখানকার অধিবাসীরাও তিব্বতী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক, সংস্কৃতির দিক থেকে, ভৌগোলিক দিন থেকে প্রচুর মিল আছে এই এলাকার সাথে তিব্বত ও লাদাখের। স্পিতি ভ্যালির অবস্থান হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের লাহুল এবং স্পিতি জেলায়। এই জেলায় দুটি সাবডিভিসন আছে এক, লাহুল, যার সদর দফতর কেলং, এবং স্পিতি যার সদর শহর, কাজা, স্পিতি ঘুরতে হলে আপনাকে কাজা কে কেন্দ্র করেই ঘুরতে হবে। 


স্পিতি আপনারা কেমন করে পৌঁছবেন :- স্পিতি ভ্যালি হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত। স্পিতি আপনারা দু জায়গা দিয়ে আসতে পারবেন, এক শিমলা হয়ে দুই মানালি হয়ে। সেইজন্য আপনাকে প্রথমত শিমলা বা মানালি পৌঁছতে হবে, যেটা আপনারা দিল্লী পৌঁছে দিল্লী থেকে বাস বা প্রাইভেট গাড়ি বুক করে আসতে পারেন, যাদের শিমলা আগেই ঘোরা তারা তাদের জার্নি সরাসরি দিল্লী থেকে গাড়ি বুক করে শুরু করতে পারেন, সেক্ষেত্রে তারা নাইটস্টে শিমলা না করে আরো একটু এগিয়ে নারকান্ডা বলে একটি সুন্দর জায়গা আছে সেখানে করেন।তাহলে পরের দিন আপনারা অনেকটা এগিয়ে থেকে শুরু করবেন। দিল্লীর ISBT বাস স্ট্যান্ড থেকে শিমলা ও মানালির দিনের রাতের সাধারন এবং ভলভো বাস প্রচুর পেয়ে যাবেন আর যারা টয় ট্রেনে শিমলা পৌঁছতে চান তাদের জন্য নিচের ব্লগটি। সাধারণত স্পিতি জার্নি শিমলা থেকে শুরু করে মানালি হয়ে শেষ করলে ভালো এতে হাইট সংক্রান্ত AMS এর কোনো সমস্যা হয় না, কিন্তু মানালি হয়ে গেলে, প্রথমেই আপনারা রোহতাং পাস পার করে high altitude পৌঁছে যাবেন তাতে কারো কারো এই সমস্যা হলেও হতে পারে।

Chndratal lake. 


 

স্পিতি যাওয়ার উপযুক্ত সময়:- লাদাখের মত স্পিতিও আপনি সারাবছর যেতে পারবেন না । শীতে স্পিতির রাস্তা একদমই বন্ধ হয়ে যায়, কারণ এই এলাকা সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৩-১৪ হাজার উচ্চতায় অবস্থিত। স্পিতিতে আসার উপযুক্ত সময় মে মাস থেকে অক্টোবর, যদিও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির পর থেকেই স্পিতিতে মানালি হয়ে আসার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু শিমলা হয়ে আপনি আসতে যেতে কোনো অসুবিধা নেই এমনকি শীতে আবহাওয়া ভালো থাকলে যাওয়া যায়, লোকাল লোকেরা শীতেও এই রাস্তা হয়েই যাতায়াত করে। এমনকি শীতকালে পর্যটকদের মধ্যে Spiti Winter Expedition পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে কারণ বরফের সাদা চাদরে ঢেকে থাকা স্পিতি ভ্যালির অদ্ভূত সৌন্দর্য দেখার জন্য।


স্পিতি সফরের আগে কি কি সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন :- আপনি যদি স্পিতি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে যেনে রাখুন স্পিতি তে আসলে প্রধান যে দুটো সমস্যার আপনারা সম্মুখীন হবেন সেটা হলো Altitude Sickness বা যাকে আমরা AMS বলি, আর ৯,১০ দিনের এতো উচ্চতায়, খারাপ, ভালো মিশিয়ে জার্নিগত সমস্যা। AMS, এর পুরো কথাটি হলো Acute Mountain Sickness । কারণ আমরা যে উচ্চতায় থাকি এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় 100% কিন্তু আপনাকে যেতে হবে স্পিতি যার উচ্চতা ১১-১৫ হাজার ফিট সেখানে কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ ৫০%কোথাও তারও কম , সেই জন্য আপনাদের মাথা ধরা, মাথা ঘুরা অজ্ঞান, জ্বর, শ্বাস প্রস্বাসের সমস্যা এই সব হতে পারে যেগুলোকে আমরা এককথায় AMS বলি। এই AMS থেকে বাঁচার উপায় কি। আপনি যদি স্পিতি যাচ্ছেন তাহলে আপনার সাথে অবশ্যই কর্পূর, কোকা-30(হোমিওপ্যাথি), Diamox ওষুধ গুলো রাখা অত্যন্ত জরুরি।এবং পুরো ট্যুরে স্পিতি যাওয়ার 2 দিন আগে থেকে এই ওষুধ গুলো খাওয়া জরুরি তাহলে আপনারা আগে থেকেই অনেকটা সক্ষম হবে AMS কে প্রতিহত করতে। আপনাদের সাথে গাড়িতে যদি ছোটো একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার রেখে দেন তাহলে জরুরী ভিত্তিতে কাজে লাগতে পারে দাম বেশি না ৩০০-৪০০ টাকার মতো। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেতে এই সমস্যা টা বেশি হয় তাই বলে কম বয়সীদের হবে না এটা বলা যাবে না। সমতল থেকে গাড়ি ওপরের দিকে ওঠার সময়ে আপনার শরীরকে যতটা বেশি সংখ্যক ঠান্ডা উপভোগ করতে দিন। বেশী করে জল খান বেশী দৌড়াদৌড়ি বা জোরে হাঁটাচলা বেশি করাই ভালো। আর মানালি না হয়ে না গিয়ে শিমলা হয়ে যাবেন, এই সমস্ত কিছু যদি আপনি ফলো করেন তাহলে অনেকখানি সেফ থাকবেন।

স্পিতি ভ্যালি কদিনের ট্যুর হতে পারে :- স্পিতি ভ্যালি ঘুরতে যদি আসতে চান তাহলে সেটা কিন্তু কোনোমতেই তিন, চার দিনের ট্যুরে আপনারা শেষ করতে পারবেন না। দুর্গম স্পিতি ভ্যালি এবং তার সাথে কিন্নর ভ্যালি যেটা আপনারা রাস্তায় যেতেই পাবেন, সম্পূর্ন মোটামোটি ১১ দিন সময় লেগে যাবে। আর শুধু পুরো স্পিতি ভ্যালি সার্কিট সাথে চন্দ্রতাল লেক দিয়ে মোটামোটি 9-10 দিন সময় লাগবে। এত দূরে এত দুর্গম এলাকায় যখন আসবেন, দ্বিতীয়বার না আসার সম্ভাবনাই বেশি তাহলে সম্পূর্ন সার্কিটটা শেষ করে যাওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

স্পিতি ভ্যালির প্রধান প্রধান আকর্ষন কি কি :- প্রথমত স্পিতি ভ্যালি আসলে আপনার মনে হবে আপনি লাদাখে চলে এসেছেন, লাদাখের সাথে কোনোদিক থেকেই কোনো ভিন্নতা পাবেন না। দ্বিতীয়ত আকর্ষন তো এখানে প্রচুর আছে, এখানে যা কিছু পাবেন ধরে নেবেন সমস্ত কিছুই পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায়, এখানে একাধারে পাবেন - পৃথিবীর সর্বোচ্চ পেট্রোলপাম্প- কাজা, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস- হিকিম, পৃথিবীর সর্বোচ্চ গ্রাম - কমিক, পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেস্টুরেন্ট, দেশের লাস্ট রেস্টুরেন্ট, এশিয়ার সর্বোচ্চ ব্রিজ - ছিচাম, দেশের একমাত্র মমি-গিউ মনাস্ট্রি ,পৃথিবীর প্রাচীনতম কয়েকটি মনাস্ট্রি, আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় চন্দ্রতাল লেক।

স্পিতি ট্যুর প্ল্যান :- আমি আগেই বলেছি যাদের আগে শিমলা, মানালি করা তাদের এই স্পিতি পর্বে শিমলা, মানালি কে যতোটা সম্ভব বাদ রাখলেই ভালো, এমনিতেই এই গোটা সার্কিট complete করতে ১০-১১ দিন লেগে যাচ্ছে তাই আর না বাড়ানোই ভালো। শিমলা, মানালি ট্যুরের ওপরে আমার একটা আলাদা ব্লগ আছে ওটা দেখে নিতে পারেন নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে ।ধরে নিলাম আমাদের যাত্রা দিল্লী থেকে শুরু করছেন, দিল্লী থেকে আপনাদের ভাড়া গাড়ি করে স্পিতি যাত্রা শুরু করতে পারেন নাহলে বাসে শিমলা পৌঁছে রাতটা হোটেলে রেস্ট নিয়ে, পরের দিন আপনাদের যাত্রা শুরু করতে পারেন।

Key monastery. 

Key Monastery, largest in Spiti valley 

দ্বিতীয় দিন :- দ্বিতীয় দিন শিমলা হোটেল থেকে আপনাদের যাত্রা শুরু হবে, আর যারা দিল্লী থেকে সরাসরি আসবেন তাদের শুরু হবে, শিমলা থেকে কি.মি এগিয়ে নারকান্ডার হোটেল থেকে, আজকের গন্তব্যস্থল কিন্নর জেলার সাংলাতে, যার দুরত্ব শিমলা থেকে ২২০কিমি, সময় লাগতে পারে ৭ ঘন্টা। যাইহোক রাস্তা এবং দু পাশের সৌন্দর্য দেখা ছাড়া এই দিন তেমন কিছুই আর দেখার নেই, কিন্নরের রাস্তা যেমন সুন্দর তার থেকে বেশি ভয়ংকর, ভারতের most Dengarous road গুলোর মধ্যে একটি তার সাথে সাথে খুবই Adventures, রাস্তা গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন কিভাবে পুরো পাহাড় কেটে এই ভয়ংকর রাস্তা গুলোকে তৈরি করা হয়েছে। মাঝে রামপুর-বুসাহারে দুপুরের খাওয়ার খেয়ে আবার আপনারা বেরিয়ে পড়বেন আপনাদের গন্তব্যস্থল সাংলার উদ্দেশ্যে। বিকেলের মধ্যেই আপনি সাংলা পৌঁছে যাবেন।

তৃতীয় দিন :- তৃতীয় দিন আবার আপনাদের যাত্রা শুরু হবে সাংলা থেকে। বাসপা নদীর তীরে অবস্থিত সাংলা ভ্যালি Amazing একটা জায়গা। হোটেল থেকে বেরিয়ে আমরা এবার যাবো এই ভ্যালি তথা ভারতের শেষ গ্রাম চিটকূলে। চীনা বর্ডারের আগে এটাই ভারতের শেষ গ্রাম একদম ছবির মত সুন্দর। বাসপা নদীকে পাশে রেখে দু পাশে দেখতে পাবেন, সাংলার মানুষের নদীর দু ধারের আপেল, আলু, অ্যাপ্রিকট, ওয়ালনাট প্রভৃতি ফসলের চাষ, এবং সেখানকার ধাপ চাষের অসাধারণ সৌন্দর্য। এই সব জায়গা গুলো ফটোগ্রাফি করার জন্য একদম পারফেক্ট। চিটকূলে এসে বাসপা নদীর ধারে বসে অনেকটা সময় কাটাতে পারেন, সৌন্দর্য নিয়ে তো কোনো কথাই হবে না। গ্রামের মধ্যেই এক দেবী মন্দির আছে সেটা দর্শন করে, ভারতের শেষ ধাবা বা রেস্টুরেন্টে খেতে কিন্তু ভুলবেন না। চিটকূলে এটাও একটা আকর্ষন। চিটকূলের পরে রাস্তা আছে কিন্তু যাওয়ার কোন অনুমতি নেই, পুরোটা ITBP আন্ডারে। এবার আবার সেই আগের রাস্তা করছম, সাংলা, রখছম হয়ে আমাদের আজকের নাইটস্টে হবে কল্পাতে, রাস্তাতে যাওয়ার পথে দেখে নেবো রোঘির সুইসাইড পয়েন্ট, এটা দেখে বিকেলে একদম পৌঁছে যাবো কল্পাতে, কারণ এখান থেকে সূর্যাস্ত টা অবশ্যই দেখতে হবে। কল্পার পাশেই আছে রেকংপিও শহর যা কিন্নর জেলার সদর শহর। রাতে কল্পার হোটেলে রেস্ট।

চতুর্থ দিন :- চতুর্থ দিন আমরা সতলুজ নদীকে পাশে রেখে ব্রেকফাস্ট করে আবার ও বেরিয়ে পড়লাম আজকে আমাদের গন্তব্যস্থল তাবো উদ্দেশ্যে। যাত্রাপথের দুরত্ব ১৭০ কি.মি। আজকের যাত্রাপথে আমরা কত গুলো স্পট দেখবো। আপনি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন মনে রাখবেন এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্গমতম রাস্তা গুলোর মধ্যে একটি, পুহ পার করেই ৮৩কিমি পথ অতিক্রম করে আপনারা পৌঁছবেন খাব নামক জায়গায়। এই খাবে আপনারা কিছুক্ষন দাঁড়াবেন কারন এখানেই আছে শতদ্রু ও স্পিতি নদীর সঙ্গম। এখান থেকে দুটো রাস্তা চলে গেছে একটা শতদ্রু নদী বরাবর চলে গেছে চীনা বর্ডার, আর আপনারা যাবেন স্পিতি নদী বরাবর স্পিতি ভ্যালির দিকে, এই খাবের পর থেকেই আপনারা শতদ্রু নদীকে বিদায় জানিয়ে স্পিতি ভ্যালিতে প্রবেশ করবেন। এরপর নাকো গ্রাম, এখানকার নাকো লেকটি খুবই সুন্দর, এটা দেখে লাঞ্চ এখান থেকেই করে নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়বো সামনের দিকে, নাকো কিন্নর জেলার শেষ বর্ডার, এরপর থেকেই আপনি অফিসিয়ালি লাহুল স্পিতি জেলায় প্রবেশ করবেন। যাইহোক তাবো যাওয়ার পূর্বে আপনারা যে জায়গায় দাঁড়াবেন, একদম অবশ্যই অবশ্যই দাঁড়াবেন সেটা হলো গিউ মনাস্ট্রিতে, এখানেই আছে ৫০০ বছরের পুরোনো এক বৌদ্ধ সাধুর মমি যা দেশের একমাত্র মমি। এর রাস্তা প্রধান হাইওয়ে থেকে একটু ভিতরে ঢুকতে হয়, কিন্তু বেশী পথ না, ভেতরে ঢুকে ছবি তুলে আবার বেরিয়ে পড়ুন এবং চলে আসুন আজকের গন্তব্যস্থলে অর্থাৎ তাবো ভিলেজে।

Nako lake, Nako. 

পঞ্চম দিন :- পঞ্চম দিন আমাদের ট্যুর যথেষ্ট হেক্টিক হতে চলেছে কারণ আজকে আমরা তাবো মনাস্ট্রি ঘুরে যাবো ধানকারের উদ্দেশ্যে, শেখান থেকে পিন ভ্যালি, মুঢ ভিলেজ হয়ে, কাজাতে গিয়ে নাইটস্টে। আপনারা কেউ চাইলে সেদিন কাজা না গিয়ে মুঢ ভিলেজেই থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন, হোমস্টে পেয়ে যাবেন, খুবই সুন্দর একটা গ্রাম কিন্তু কাজাতে আসলে বিভিন্ন ধরনের থাকার ব্যবস্থা আপনারা পেয়ে যাবেন। একটু সকাল সকাল আজ বেরোতে হবে, প্রথমে যাবো স্পিতি ভ্যালির সবচেয়ে পুরোনো তাবো মনাস্ট্রিতে যার প্রতিষ্ঠাকাল ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে, এখানে দুটো মনাস্ট্রি আছে একটা পুরোনো এবং একটি নতুন। তাবো কে বিদায় জানিয়ে আমরা এবার যাবো ধানকারের উদ্দেশ্যে, এখানে এসেও আমরা ধানকার গোমপা বা মনাস্ট্রি দেখবো এর সাথে সাথে এখানে আরো একটা জিনিস অবশ্যই দেখবেন বিভিন্ন অদ্ভূত গঠনের ভৌগলিক আকৃতির পাহাড়, সত্যি সামনে থেকে এগুলোকে দেখে মনে হবে আপনি হয়তো পৃথিবীতে নয় চাঁদে আছেন। এটা দেখে আমরা যাবো পিন ভ্যালির উদ্দেশে, যাকে ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল পার্কের তকমা দেওয়া হয়েছে, এখানে এই জায়গাটি বিশেষ করে Snow Leopard জন্য বিখ্যাত। পিন ভ্যালিতে পর্যটকরা আসে অ্যাডভেঞ্চার, হাইকিং এবং ট্রেকের জন্য, আরো একটি জায়গা মুঢ ভিলেজ যাকে পিন ভ্যালির হার্ট ও বলা হয়ে থাকে, এটা পিন ভ্যালির শেষ গ্রাম। প্রচুর পরিমাণে গ্রিনারি এখানে দেখতে পাবেন, স্পিতিতে আরো কোথাও এত পরিমাণে সবুজ এলাকা এবং কৃষিজমি আর কোথাও পাবেন না, ফটোগ্রাফি করার ভালো জায়গা, সাথে লাঞ্চটাও আপনারা এখান থেকে করে নেবেন, এবার রাতে থাকার সিদ্ধান্ত আপনাদের নিতে হবে আপনারা কাজাতে থাকবেন না এই গ্রামের কোনো হোমস্টেতে থাকবেন, আমি বলবো এই গ্রামে যদি ভালো অপশন পেয়ে যান তাহলে এই মুঢ ভিলেজেই থেকে যাওয়া ভালো হবে। কারণ এত সৌন্দর্য আপনি কাজাতে গেলে পাবেন না। এভাবেই আপনাদের পঞ্চম দিনের ইতি ঘটবে।

Dhankhar

Dhankhar Monastery. 

ষষ্ঠ দিন :- ষষ্ঠ দিন মুঢ ভিলেজ থেকে আমরা প্রথমে যাবো কাজাতে, প্রায় দেড় ঘণ্টার রাস্তা, কাজা পৌঁছে একটা ভালো হোটেল আপনারা দু দিনের জন্য বুক করে নেবেন, এখানে দুদিন থেকে আমরা লোকাল আসেপাশের কয়েকটা জায়গা ঘুরে নেবো। কাজার হোটেল আপনারা অনলাইনেও অনেক পেয়ে যাবেন, কাজা স্পিতির বড় শহর তাই এখানে হোটেলের কোনো অভাব হবে না। কাজা হোটেলে পৌঁছে স্নান ব্রেকফাস্ট করে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়েও আজ বের হতে পারবেন কারণ আজকে যে সমস্ত জায়গায় আপনারা যাবেন, কমিক, লাংজা, হিকিম এই জায়গা গুলো মোটামোটি পাশাপাশি এবং কাজা শহর থেকেও বেশি দূর না। যাওয়ার পথে আপনারা কাজাতে অবস্থিত বিশ্বের উচ্চতম পেট্রোল পাম্প অবশ্যই দেখে নেবেন। প্রথমে আপনারা যাবেন কমিক ভিলেজে, ৪৫১৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রাম যা পৃথিবীর উচ্চতম গ্রাম, মাত্র ১০০ জন লোকের বাস এই গ্রামে শীতে বাকি জায়গার সাথে যোগাযোগ একদমই বন্ধ হয়ে যায় এই গ্রামের। এই গ্রামেই আছে পৃথিবীর উচ্চতম রেস্টুরেন্ট, এখানে ইচ্ছা করলে খেতে পারেন কিছু কিন্তু মনে রাখেন এখানে খাওয়ার জিনিসের দাম কিন্তু একটু বেশিই। কমিক দেখে এরপর আপনারা যাবেন লাংজা ভিলেজে এই গ্রামটি বিখ্যাত বিভিন্ন ধরণের ফসিলস্ এর জন্য, আর এখানেই আছে স্পিতির সবচেয়ে উচু বুদ্ধের মূর্তি, এরপর আপনারা যাবেন আজকের শেষ গন্তব্যস্থল হিকিম ভিলেজে, এই গ্রামেই আছে পৃথিবীর উচ্চতম পোস্ট অফিস, আপনারা চাইলে এই পোস্ট অফিস থেকে আপনাদের পরিচিত লোকদের চিঠি ও পাঠাতে পারেন, তারপর আবার কাজা হোটেলে ব্যাক।

সপ্তম দিন :- আজকেও আমরা কাজা থেকে আসে পাশের কয়েকটি জায়গা ঘুরে নেবো তারপর কাজাতে এসে আবার স্টে করবো। প্রথমে আমরা যাবো কি মনাস্ট্রি, শেখান থেকে কিববের গ্রাম, তারপর ছিছাম ব্রিজ হয়ে কাজা। কাজা থেকে মাত্র ১৮ কি.মি দূরে অবস্থিত কি মনাস্ট্রি, যা স্পিতির বৃহত্তম মনাস্ট্রি। একটা উচু পাহাড়ে ওপরে তৈরি এই মনাস্ট্রি প্রায় ১০০০ বছরের পুরোনো। এখান থেকে ভিউ সত্যি অসাধারণ। কি দেখে আমরা এবার যাবো কিববের গ্রামের উদ্দেশ্যে, যা একসময় পৃথিবীর সর্বোচ্চ গ্রাম ছিল। এই গ্রামে ও আপনি ইচ্ছে করলে একদিন থাকতে পারেন, একটু হাইটে এই গ্রামটি অবস্থিত অনেক হোমস্টে ও পেয়ে যাবেন। এরপর আমরা যাবো ছিছাম ব্রিজের উদ্দেশ্যে, এই ব্রিজ বর্তমানে এশিয়ার উচ্চতম ঝুলন্ত সেতু, বেশিদিন হয়নি ব্রিজ টি উদ্বোধন হওয়ার, আগে ব্রিজের দুপাশের দু গ্রাম kibber এবং ছিছামের মানুষরা মালপত্র এবং নিজেরা নদী পারাপার করতো ট্রলির মাধ্যমে, ব্রিজটি উদ্বোধন হওয়ার পর খুবই সুবিধে হয়েছে দু গ্রামের মানুষের। এরপর আজকে আমাদের আর কিছু দেখার নেই, আমরা এবার কাজা ফিরে যাব এবং বিকেল এবং সন্ধ্যাটা কাজা লোকাল মার্কেটে কাটাবো।

অষ্টম দিন :- আমাদের কাজা পর্ব মোটামুটি শেষ, স্পিতিতে আজকেই আমাদের শেষদিন। আজ আমরা যাবো স্পিতির সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পট চন্দ্রতালে, যা না দেখলে আপনার স্পিতি ভ্রমণ অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ। এখানে আসার সময় সারা বছরে খুব অল্পই আপনারা পাবেন, সেপ্টেম্বরে মাঝামাঝি পর থেকে snowfall এর কারণে এখানে আসার দুটো উচ্চ পার্বত্যপাস কুনজুম পাস এবং রোহতাং পাস বন্ধ হয়ে যায়। তাই এটা দেখতে হলে আপনাকে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আসতে হবে। কাজা থেকে ৬০ কিমি এগিয়ে আমরা প্রথমে দাঁড়াবো লোসারে, এই লোসারে আপনারা কিছু একটা খেয়ে এগিয়ে যাবেন চন্দ্রতালের উদ্দেশ্যে, লোসার থেকে এগিয়ে তেমন আর কোনো খাওয়ার হোটেল পাবেন না। তারপর আসবে কুনজুম পাস, ১৫০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এই পাস লাহুল ভ্যালির সাথে স্পিতি ভ্যালির যোগাযোগ স্থাপন করেছে, কুনজুম পাস টপে কুনজুম মাতার মন্দির আছে সেখানে কিছুক্ষন কাটিয়ে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবো এরপর বাটালের কিছু আগে ডানদিকে চন্দ্রতাল রোড ধরে পৌঁছে যাব চন্দ্রতাল ক্যাম্পসাইট,যার দুরত্ব কাজা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি, এখানে থেকে লেক কিন্তু প্রায় দু কি.মি দূরে । যেটা আপনাকে ট্রেক করে যেতে হবে। এখানে অনেকগুলো ক্যাম্প আপনারা পেয়ে যাবেন যাদের অনলাইন বুকিং ও করতে পারেন আপনারা, মোটামোটি ১৫০০ থেকে ভালো ক্যাম্প আপনারা পেয়ে যাবেন।সেদিন ক্যাম্পেই আপনাদের রাত্রি বাস।

Kunzum Pass. 

Chandratal Lake. 

নবম দিন :- নবম দিনের সকাল টা কিন্তু খুব দারুণ হতে চলেছে এদিন আপনাদের সবাইকে খুব সকাল সকাল উঠতে হবে কারণ আপনাদের সবাইকে যেতে দু কি.মি পায়ে হেঁটে চন্দ্রতাল লেকে, সকাল ৬ টার মধ্যে বের হলে ভালো। এই লেক তার নীল রঙের জলের জন্য বিখ্যাত, দিনের বিভিন্ন সময়ে এই লেকের জলের রং চেঞ্জ হয়। অর্ধচন্দ্রাকৃতির জন্য এই লেকের নাম হয়েছে চন্দ্রতাল, এই লেকের জল থেকেই চন্দ্রভাগা বা চেনাব নদীর উৎপত্তি। এখানে অনেকটা সময় আপনারা কাটাতে পারেন, এতো সুন্দর লাগবে সত্যি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যাইহোক সকাল সকাল বের হলে ১০-১০.৩০ মধ্যে আবার ক্যাম্পে ফেরৎ চলে আসতে পারবেন। এরপর ফ্রেশ হয়ে , ব্রেকফাস্ট করে স্পিতি ভ্যালিকে বিদায় জানিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়বো মানালির দিকে, এখান থেকে মানালির দূরত্ব ১ ১১ কি.মি হলেও রাস্তা কিন্তু খুবই খারাপ মাঝে মাঝে ছোট বড়ো বোল্ডারের রাস্তা এবং ওয়াটার ক্রসিং পাবেন, কিন্তু এই রাস্তা adventure প্রেমীদের খুবই প্রিয় হবে। যাইহোক রাস্তায় যেতে যেতে আসবে বাটাল এখানে চাচা চাচির ধাবা খুবই বিখ্যাত, তার পর আসবে ছটরু এখানে আপনারা লাঞ্চ করে নেবেন। এরপর আসবে রোহতাং পাস, এখানে কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে আমরা স্পিতি ভ্যালিকে শেষ বারের মতো বিদায় জানিয়েঢুকে যাবো মানালি তে, রাতে আমরা মানালি তেই থাকবো পরের দিন বাসে করে দিল্লী এবং দিল্লী থেকে যে যার বাড়ির উদ্দেশে।

Rohtang Pass


Chandratal Campsite. 


স্পিতি ভ্যালি ভ্রমণের জন্য কিছু ড্রাইভার ও তাদের ফোন নম্বর : - স্পিতি ভ্যালি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল গাড়ি এবং একজন ভালো মাপের ড্রাইভার, এবং এই নির্জন, রুক্ষ এলাকায় আপনার একমাত্র সহযোগি বলতে গেলে আপনাদের এই ড্রাইভার, যদিও স্পিতি এলাকার লোকজন খুবই ভালো, কিন্তু এই জনবিরল এলাকায় সবসময় আপনাকে সাহায্য করার মত কাউকে পাবেন এরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমি নিচে কিছু ভালো গাড়ির ড্রাইভারের নাম এবং তাদের Contact নাম্বার দিলাম আপনারা স্পিতির প্ল্যান করলে এদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন -

1. অরুণ নেগি/ 8219209660, 8988044493.

2. অরবীন্দ্র নেগি/ 07018198609, 09805114609.

3. দিলীপ /09816003815

4. তেনজিং/ 09418433973

5. তাসি / 09418501644


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন