ভ্রমণ পিপাসু:- ভ্রমণ পিপাসুর আজকের ব্লগে আমি আলোচনা করবো ঝাড়খণ্ডের সেরা ১০টি জলপ্রপাত নিয়ে। ঝাড়খণ্ডে কিন্তু দেখার মত প্রচুর জলপ্রপাত আছে খালি আমরা নাম জানি ২ থেকে ৩ টে বা ৩ থেকে ৪টা। সেইজন্যই এই ব্লগ যাতে আমরা বাধা ধরা কয়েকটি ওয়াটারফলস্ বাদে আরো কিছু অফবিট সুন্দর ফলস্ সম্বন্ধে জানতে পারি এবং ঘুরে আসতে পারি। এই ব্লগে আমি সমস্ত কিছু আপনাদের details এ বলে দেবো কি ভাবে দেখবেন, কেমন করে যাবেন, কোথায় থাকবেন সমস্ত কিছু চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
Top 10 Waterfalls Of Jharkhand |
দশম ফলস্- ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি শহর থেকে ৪৪ কি.মি দূরে একদম ফরেস্টের মাঝে অবস্থিত এই ফলস্। যার অবস্থান রাঁচি জেলার বুন্দু থানার তাইমারা গ্রামে। দশম কথাটি এসেছে ঝাড়খণ্ডের এক লোকাল ভাষা থেকে যার অর্থ পরিশ্রুত জল। খুবই দেখার মত এই ঝর্ণাটি, কিন্তু একে ভালো ভাবে উপভোগ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বর্ষাকালে আসতে হবে, শুধু এই ঝর্ণাটির ক্ষেত্রে না ঝাড়খণ্ডের সব ঝর্ণা ই ভালো ভাবে দেখতে হলে বর্ষাতেই যেতে হবে।
এই ঝর্ণাটি যেহেতু রাঁচি থেকে কাছেই মাত্র ৪৪ কিমি তাই থাকার কোনো অসুবিধা হবে না। আপনি রাঁচি তে প্রচুর হোটেটের অপশন পেয়ে যাবেন, তাছাড়া আপনারা যদি আলাদা হবে রাঁচি ট্যুর বা পত্রাতু ভ্যালি ট্যুর করেন তাহলে এই ঝর্ণাটি ও সাথে দেখে নেবেন।
জোনা ফলস্ :- সিটি অফ ওয়াটারফলস্ - রাঁচি এর কাছাকাছি আরো একটা ফলস্ হলো জোনা ফলস্ যার অন্য নাম গৌতমধারা ফলস্। রাঁচি শহর থেকে যার দুরত্ব ৩৮ কি.মি। ৮০০ খানা সিরি পেরিয়ে নিচে নামার পর আপনি এই ফলসের দেখা পাবেন, তাই বয়স্কদের জন্য একটু কঠিনই হবে এখানে আসা।
যেহেতু এই ফলস্ টাও রাঁচি শহর থেকে বেশী দূরে না তাই আপনি শহর থেকে দেড় ঘণ্টার জার্নি তে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন। ট্রেন, সড়ক দু-মাধ্যমেই আপনি এখানে পৌঁছতে পারেন জোনা ফলস্ থেকে স্টেশনের দূরত্ব ১.৫ কি.মি। আর সড়কপথে গেলে রাঁচি-পুরুলিয়া রোডের ওপরেই এর অবস্থান। থাকার জন্য রাঁচি শহরই বেস্ট হবে ।
হুড্রু ফলস্ :- ঝাড়খণ্ড তথা রাঁচির সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলস্ হলো হুড্রু। এটি ঝাড়খণ্ডের উচ্চতম জলপ্রপাত। যার উচ্চতা ৯৮ মিটার / ৩২২ ফিট। এটি সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে অবস্থিত। এটি রাঁচি থেকে একদমই কাছে অবস্থিত মাত্র ২১ কি.মি। রাঁচি-পুরুলিয়া রোডে। এটি খুবই জনপ্রিয় পিকনিক স্পট শীতকালে, তাই এই সময়ে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। এই ফলস্ দেখার উচিত সময় বর্ষাকাল, অন্য সময়ে আসলে এর আসল রূপ আপনারা দেখতে পাবেন না। এর পাশেই আছে সুবর্ণরেখা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
রাঁচি তে এসে দিনে দিনেই আপনারা এই জায়গাটি ঘুরে যেতে পারেন, তাছাড়া কেউ কেউ যদি রাঁচি-পত্রতু ভ্যালি ট্যুর করলে এটা ও একসাথে করে নিতে পারেন। থাকবেন আপনি রাঁচিতেই এটা ছাড়াও আরো কয়েকটি ওয়াটারফলস্ আপনারা দেখে নিতে পারেন সাথে একটা গাড়ি বুক করে। কি কি আর আছে পুরো ব্লগ টা পড়লেই জেনে যাবেন।
মোতি ঝর্ণা :- আপনি যদি গুগলে গিয়ে ঝাড়খণ্ডের সেরা ১০টি ঝর্ণা বা ওয়াটারফলস্ সার্চ করেন, তাহলে আমি হলফ করে বলতে পারি আমি যে সুন্দর ঝর্ণা টির কথা বলবো, সেটা কোনো লিস্টেই আপনারা পাবেন না, একদমই হিডেন, অফবিট জায়গা এই ঝর্ণাটি। নাম হচ্ছে মোতি ঝর্ণা। যার অবস্থান ঝাড়খণ্ডের সাহিবগঞ্জ জেলায়।
এই মোতি ঝর্ণা নাম কিন্তু অনেকের কাছেই অজানা, পৌঁছতে যদিও আপনাকে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না, কিন্তু এই ঝর্ণাটি দেখার পর আপনি বলতে বাধ্য হবেন, সত্যি কিছুনা কিছু দেখলাম। যার সৌন্দর্য ঝাড়খণ্ডের বাকি যে সব জনপ্রিয় ঝর্ণা গুলো আছে, যেমন হুড্রু, জোনা, দশম তাদের কাছে কোনো অংশে কম নয়। তবে এই ঝর্ণাকে যদি আপনি ভালো করে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বর্ষাকালে যেতে হবে। কারণ বাকি সময়ে এই ঝর্ণার জলের ধারা একদমই কম থাকে, ঝাড়খণ্ডের বাকি ঝর্ণা গুলোর মত। আর আপনি বছরের অন্য সময়ে আসলে এই ঝর্ণার সৌন্দর্যকে উপভোগই করতে পারবেন না। এই ঝর্ণা তিনটি ধাপে বিশিষ্ট যা এদিকে ঝর্ণাতে খুব কমই দেখা যায়, যা এই ঝর্ণার অন্যতম আকর্ষণ, আর এর পাশাপাশি এর উচ্চতাও যথেষ্ট বেশি। সরকারের পক্ষ থেকেও অনেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে এই জায়গাটিকে আরো সুন্দর ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। যেমন দু পাশের পার গুলো বাধিয়ে দেওয়ায়, চলাচলের জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ নির্মাণ, মানুষের স্নানের ব্যবস্থা এইসব আরো অনেক কিছু।
- মোতি ঝর্ণা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এই লিঙ্কে - মোতি ঝর্ণা ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা
ভাটিন্দা ফলস্ :- ঝাড়খণ্ডের আরো একটি সুন্দর ফলস্ ভাটিন্দা ফলস্ যা অবস্থিত দামোদরের উপনদী খাতরির ওপরে। একদম দামোদর ও খাতরি নদীর সঙ্গমস্থলের পাশে। এটি ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি শহর থেকে একটু দূরেই অবস্থিত যার দুরত্ব ১৪৬ কি.মি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের আরো একটি বড় শহর ধানবাদের খুব কাছেই মাত্র ১৫ কি.মি দূরে। তাই ভালো হবে আপনাদের যদি এই ফলসটি দেখতে চান ভালো হবে ধানবাদ চলে আসুন।
উসরি ফলস্- উসরি ফলস্ এর অবস্থান ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলার উসরি নদীর ওপরে। উসরি নদী বরাকর নদীর উপনদী।উসরি ফলস্ গিরিডি শহর থেকে ১৫ কি.মি দূরে এবং ধানবাদ শহর থেকে ৪৮ কি.মি দূরে। সবচেয়ে ভালো হবে আপনারা ধানবাদ শহরে থাকুন সাথে ভাটিন্দা ফলস্ টি ও দেখে নিতে পারবেন যেটা ও ধানবাদ শহর থেকেও খুব কাছে আর ধানবাদে থাকার ব্যবস্থা ও ভালো পাবেন গিরিডি থেকে। তাতে আপনার একবারে দুটি জায়গা দেখা হয়ে যাচ্ছে একই দিনে।
Usri falls |
পঞ্চঘাঘ ফলস্ :- রাঁচি কে যেহেতু ওয়াটারফলস্ এর দেশ বলা হয় তাই এখানে দেখার মত প্রচুর ফলস্ আপনারা পেয়ে যাবেন সেরকম আরো একটি ফলস্ হলো পঞ্চঘাঘ ফলস্। এটির অবস্থান খুঁটি জেলায় হলেও রাজধানী রাঁচি থেকে মাত্র ৫১ কি.মি দূরে। তাই আপনারা খুব অল্প সময়েই রাঁচিকে বেস করে এইসব ওয়াটারফলস্ গুলোর পাশাপাশি এটি ও সাথে দেখে নিতে পারেন। এই ফলস্ এর নামের উৎপত্তি এসেছে পঞ্চ অর্থাৎ পাঁচ থেকে, বনাই নদীর পাঁচটি প্রবাহ এখানে এসে এই ঝর্ণার সৃষ্টি করেছে। এছাড়া এটি একটি খুবই ভালো পিকনিক স্পটও, শীতকালে যখন জল কমে যায় তখন প্রচুর মানুষ এখানে পিকনিকের জন্য আসে।
এই ফলস্ ও রাঁচি থেকে কাছে হওয়ার জন্য আপনি রাঁচি থেকেই গাড়ি বুক করে ঘুরে আসতে পারবেন আর থাকা ব্যবস্থা সব রাঁচি তে করলেই উপযুক্ত কাজ হবে।
পেরবাঘাঘ ফলস্ :- ওয়াটারফলস্ এর দেশ রাঁচি এর আসেপাশের যেকটি ফলস্ নিয়ে আমি আলোচনা করলাম তার মধ্যে এখন যেটি নিয়ে আলোচনা করছি সেটা এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হিডেন, এবং মানুষের ছোঁয়া না লাগা জায়গা। একদম জঙ্গল ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই ফলসে এখনো তেমন ভাবে পর্যটকদের সামনে সেভাবে আসেনি কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আবশ্যই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আমি এখন আলোচনা করছি পেরবাঘাঘ ফলস্ নিয়ে যার অবস্থান ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলার ছাতা নদীর ওপরে। পেরবাঘাঘ এই নামটা এসেছে দুটি শব্দ থেকে একটা পেরবা আর একটা ঘাঘ পেরবা কথার অর্থ পায়রা আর ঘাখ কথার অর্থ বাসা যার অর্থ দাঁড়ায় পায়রার-বাসা।
হিরনী ফলস্ :- ঝাড়খণ্ডের আরো একটি সুন্দর ফলস্ হলো হিরনি ফলস্ যার অবস্থান রামঘারা নদীর ওপরে ।রাঁচি মালভূমির একদম শেষ প্রান্তে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সি্ংভূম জেলায় অবস্থিত এই ঝর্ণা। রাঁচি শহর থেকে ৭০ কিমি এবং খুঁটি শহর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি দূরে অবস্থিত এটি। রাঁচি মালভূমির একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত হলেও শহর থেকে কিন্তু বেশি দূরে না। রাঁচি মালভূমির জঙ্গলঘেরা একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে মধ্যে অবস্থিত এই ঝর্ণা উচ্চতা ১২১ ফিট।
এই হিরনী ফলস্ এর অবস্থান রাঁচি - চাইবাসা রোড এর ওপরে তাই আপনারা অনায়াসে রাঁচি থেকে এখানে আসতে পারবেন। খুঁটি শহর থেকেও কিন্তু খুব কাছে ই মাত্র ২০ কি.
লোধ ফলস্ :- ঝাড়খণ্ডের যতগুলো ফলস্ নিয়ে আমি এতক্ষণ আলোচনা করলাম সেগুলো সবই রাজধানী রাঁচি থেকে খুব বেশি দূরে না, কিন্তু এখন যেই ওয়াটারফলস্ নিয়ে আলোচনা করবো সেটি কিন্তু রাজধানী রাঁচি থেকে একটু দূরেই, যার দুরত্ব মোটামুটি ২০০ কি.মি। এটি একদম ঝাড়খণ্ডের শেষপ্রান্ত ঝাড়খণ্ড-ছত্রিসগড় বর্ডারে লাতেহার জেলার পালামৌ ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে অবস্থিত। এই ফলস্ এর অবস্থান বুড়া নদীর ওপরে। উচ্চতা ৪৭৯ ফিট।
এই ফলস্ রাঁচি তে থেকে দেখে ঘুরে আসা প্রায় অসম্ভব, তার মানে আপনি এটি ছেড়ে দেবেন এটা হতে পারেনা, মনে আছে তো এটি ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে উচ্চতম জলপ্রপাত। তাই এটি বাদ চলে গেলে কিন্তু অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে। এই লোধ ফলস্ দেখার জন্য আপনাকে আলাদা ভাবে একটা রাত একটা দিন দিতে হবে লাতেহারে, তাতে আপনি এই ফলস্ টি দেখা ছাড়াও আরো অনেক কিছু দেখতে পাবেন যেমন সুন্দরী নেতারহাট পাশেই পাবেন, তার সাথে সাথে উপরি পাওনা পালামৌ টাইগার রিজার্ভ বা ন্যাশনাল পার্ক। এই সমস্ত কিছু দেখতে আপনারা পুরো একটা দিন লেগে যাবে, নেতারহাটের সৌন্দর্য সম্পর্কে কিন্তু কিছু বলারই নেই তাই এই ট্যুর টা আপনারা আলাদা ভাবে করতেই পারেন নিরাস হবেন না।
হোটেল :- রাঁচির কিছু হোটেল নাম তাদের contact নাম্বার দিলাম আপনারা দেখে বুক করে নিতে পারেন...
1.Pratap Inn-012462016171
2. Hotel Accord-0124 620 1617
3.Hotel Mayuri - 0651 233 2144
4.Hotel Abhishek(HOME AWAY FROM HOME)-097719 78185
5. Hotel Sunny - 0124 620 1617
6.Hotel Akashdeep-082520 06001
7. Hotel Apsara-090971 36856
8. Konark Hotel-094311 76162
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন