ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা মোতি ঝর্ণা। Jharkhand's Most Beautiful Waterfall Moti Jharna. All information About Moti Jharna.

 ভ্রমণ পিপাসু :- আপনি যদি গুগলে গিয়ে ঝাড়খণ্ডের সেরা ১০টি ঝর্ণা বা ওয়াটারফলস্ সার্চ করেন, তাহলে আমি হলফ করে বলতে পারি, কোনো লিস্টেই এই ঝর্ণাটি আপনারা পাবেন না, আজ আমি যে সুন্দর ঝর্ণা-টির কথা বলবো তা একদমই হিডেন, অফবিট জায়গা। ঝর্ণাটির নাম হচ্ছে মোতি ঝর্ণা। যার অবস্থান ঝাড়খণ্ডের সাহিবগঞ্জ জেলায়।সাহিবগঞ্জ জেলার রাজমহল সাবডিভিসনের তালঝারি ব্লকের রাজমহল পর্বতের কোলে। মোটামোটি প্রায় ৬০ ফিট উচু এই ঝর্ণা গিয়ে মিশেছে পার্শ্ববর্তী গঙ্গা নদীতে। মনে করা হয় রাজা মান সিং তার সৈন্যদল নিয়ে যাওয়ায় সময়ে এই ঝর্ণা টি প্রথম লক্ষ্য করেন, তারপর বহুবছর এই ঝর্ণাটি পাহাড়ের মাঝে জঙ্গল দ্বারা ঢাকা ছিল। এই ঝর্ণাটির পাশেই আছে শিব মন্দির, কে বা কারা এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে ব্যাপারে কেউ কিছুই বলতে পারেনা। 



এই মোতি ঝর্ণা নাম কিন্তু অনেকের কাছেই অজানা, পৌঁছতে যদিও আপনাকে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না, কিন্তু এই ঝর্ণাটি দেখার পর আপনি বলতে বাধ্য হবেন, সত্যি কিছুনা কিছু দেখলাম। যার সৌন্দর্য ঝাড়খণ্ডের বাকি যে সব জনপ্রিয় ঝর্ণা গুলো আছে, যেমন হুড্রু, জোনা, দশম তাদের কাছে কোনো অংশে কম নয়। তবে এই ঝর্ণাকে যদি আপনি ভালো করে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বর্ষাকালে যেতে হবে। কারণ বাকি সময়ে এই ঝর্ণার জলের ধারা একদমই কম থাকে, ঝাড়খণ্ডের বাকি ঝর্ণা গুলোর মত। আর আপনি বছরের অন্য সময়ে আসলে এই ঝর্ণার সৌন্দর্যকে উপভোগই করতে পারবেন না। এই ঝর্ণা তিনটি ধাপে বিশিষ্ট যা এদিককার ঝর্ণাতে খুব কমই দেখা যায়, যা এই ঝর্ণার অন্যতম আকর্ষণ, আর এর পাশাপাশি এর উচ্চতাও যথেষ্ট বেশি। সরকারের পক্ষ থেকেও অনেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে এই জায়গাটিকে আরো সুন্দর ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। যেমন দু-পাশের পার গুলো বাধিয়ে দেওয়া, চলাচলের জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ নির্মাণ, মানুষের স্নানের ব্যবস্থা এইসব আরো অনেক কিছু।

Moti Jharna. 

মোতি ঝর্ণার পাশেই আছে শিব মন্দির। 
কেমন করে পৌঁছোবেন :- এই মোতি ঝর্ণা আপনি যেকোন জায়গা থেকে পৌছোতে পারেন, আমাদের রাজ্য বাদে বাইরের যেকোনো রাজ্য থেকে আপনি এখানে আসতে পারবেন ট্রেন পথে বা সড়কপথে। প্রথমত আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো আপনাকে বাই-রোড বা ট্রেনে আসতে হবে ঝাড়খণ্ডের সাহিবগঞ্জে, মোতি ঝর্ণার সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন হলো মহারাজগঞ্জ মাত্র ৫ কি.মি দূরে। কিন্তু এখানে খুব কম ট্রেনেরই স্টপেজ আছে, তাই ১৪ কি.মি দূরের সাহিবগঞ্জে নামাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, সাহিবগঞ্জ খুব বড় স্টেশন, বড় শহর, এখান থেকে মোতি ঝর্ণা আসার যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব ভালো। যাইহোক সাহিবগঞ্জ পৌঁছে আপনাকে করতে হবে অটো ভাড়া , রিজার্ভ ও করতে পারেন, আবার শেয়ার ও যেতে পারেন, শেয়ার ভাতা ৫০ টাকা এবং রিজার্ভের ভাড়া ৩০০ মত নিতে পারে, আমরা অটো রিজার্ভ করিনি শেয়ারে গিয়েছিলাম। মোতি ঝর্ণার গেটে পৌঁছে আপনাকে আরো ১.৫ কি.মি রাস্তা হেঁটে যেতে হবে নাহলে রিজার্ভ গাড়ি বা অটো থাকলে চিন্তা নেই, আমরা যদিও হেঁটেই গিয়েছিলাম। অনেক দূর থেকেই আপনি এই মোতি ঝর্ণার সুন্দর দৃশ্যটি দেখতে পাবেন। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ দু জায়গার মানুষেরাই এখানে অতি সহজে পৌঁছতে পারেন।কলকাতা থেকে সরাসরি আপনারা যদি আসতে চান তাহলে কলকাতা থেকে সরাসরি ২ ৩ টে ট্রেন আপনারা পাবেন। সবচেয়ে ভালো হবে আপনারা ট্রেনে করে সরাসরি চলে আসুন রামপুরহাট বা ফারাক্কা বা মালদা। রামপুরহাট বা ফারাক্কায় একবার পৌঁছে গেলে আপনি সাহিবগঞ্জ যাওয়ায় জন্য অনেক ট্রেনের অপশন পেয়ে যাবেন। তার মধ্যে এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রেন ও আপনারা পেয়ে যাবেন। হাওড়া থেকে আপনারা সরাসরি সাহিবগঞ্জ আসার জন্য যেকটি ট্রেনের অপশন আপনারা পেতে পারেন তার একটা লিস্ট আমি নিচে দিয়ে দিলাম আপনারা দেখে নিতে পারেন। 


আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন, তাদের কাছে বেস্ট অপশন হবে ফারাক্কা বা মালদায় চলে আসা,মালদা ও ফারাক্কা থেকে ট্রেনের কোনো অভাব হবে না। মালদা থেকেও দুটি ট্রেন আছে, এক - সকাল ৯.০৫ এর আনন্দবিহার এক্সপ্রেস এবং বিকেল ৫.৪০ এর কিউল এক্সপ্রেস। আমি যেহেতু নর্থ বেঙ্গলে থাকি তাই আমিও বাসে ফারাক্কা তারপর ট্রেন করে ওই দিনেই দুপুর দুপুর পৌঁছে গিয়েছিলাম মোতি ঝর্ণা, খুব কম সময়ে। ফারাক্কা এবং রামপুরহাট থেকে কিছু ট্রেনের লিস্ট আপনাদের দিলাম। দেখে নেবেন....


এবার আসি যারা ট্রেনে না গিয়ে সড়ক পথে যেতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলবো ট্রেনে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে কারণ রাস্তা যতোটুকু দেখলাম যথেষ্ট খারাপ। তাও যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে এবং যারা নিজেদের গাড়ি নিয়ে যেতে চান মোতি ঝর্ণা, তারা যদি উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা হোন তাহলে ফারাক্কা পর্যন্ত এসে ফারাক্কার NTPC মোড় থেকে হাতের ডান দিয়ে বারহাওয়া, রাজমহল হয়ে সোজা চলে আসতে পারবেন এখানে দূরত্ব ৯৪ কি.মি। আর যারা দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসবেন তারা রামপুরহাট হয়ে, নলহাটি, মুরারই হয়ে যার দূরত্ব পড়বে ১৬১ কি.মি ।

Moti Jharna. মোতি ঝর্ণার সামনে আমি। 


রাজমহল সার্কিট ভ্রমণ :- মোতি ঝর্ণা দেখা ছাড়াও আপনারা এই এলাকা মানে রাজমহল-সাহিবগঞ্জ গোটা সার্কিট ও একসাথে ভ্রমণ করতে পারেন দেখার মত এখানে প্রচুর জায়গা আছে যার জন্য আরো দু-দিন লেগে যাবে। আপনি আর কোন কোন জায়গায় ঘুরতে পারেন।

১. বারহাওয়ার বিন্দু বাসিনী মন্দির, পাশেই আছে বিরাট এক হনুমান মূর্তি।

২. সাহিবগঞ্জের গঙ্গার ধারে আছে সিংহী দালান।

৩. বারোদুয়ারী মসজিদ ।

৪. চিনামাটির খনি।

৫. তিনপাহার

আমি রাজমহল-সাহিবগঞ্জ সার্কিট নিয়ে যে সমস্ত পর্যটনস্থল আছে সেগুলো নিয়ে আলাদা একটা ব্লগ বিস্তারিত ভাবে নিয়ে আসবো আর কয়দিনের মধ্যেই তাই এখানে আর বিস্তারিত ভাবে কিছু বললাম না।

হোটেল :- শাহিবগঞ্জে থাকার মতো কিছু ভালো হোটেল সন্ধান দিলাম সাথে ফোন নম্বর আপনাকে দেখে ফোন করে বুক করে নিতে পারেন -

১। Hotel Abhinav Shree-084643 54650

২।Hotel Kalinga International-06436 222 857

৩। HOTEL WHITE HOUSE-06436 358 284

৪।Hotel celebration palace-076458 64869

৫। Hotel Atithi Palace-077660 20492

৬।Priya Hotel-06436 223 369

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন