স্বপ্নের লাদাখ ট্যুর প্ল্যান। লাদাখ ট্যুর প্ল্যানের সমস্ত খুঁটিনাটি বাংলায় । All information about Ladakh trip in bengali

 ভ্রমণ পিপাসু :- লাদাখ খালি একটা ট্যুরিস্ট প্লেস না বেশিরভাগ মানুষের কাছে একটা স্বপ্ন। ঘন নীল আকাশ, মাঝে সাদা মেঘের ভেলা, রুক্ষ উষর এলাকা, লাল হলুদ, বাদামী রঙের ন্যাড়া পর্বতের সারি, নীল জলের বিশাল মায়াবী হ্রদ, সহজ সরল মানুষ, ও সুন্দর আথিথেয়তা, বৌদ্ধধর্ম, অসাধারণ এবং ভয়ঙ্কর সব রাস্তা, পৃথিবীর কিছু উচ্চতম পার্বত্য গিরিপথ এসব নিয়েই লাদাখ, এসবই লাদাখকে আমাদের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরেছে, আর লাদাখ পর্যটনকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে বলিউড, আরো বলতে গেলে ২০০৯ সালের একটি সিনেমা, আমাদের সকলের পরিচিত "থ্রি ইডিয়টস্"।


লাদাখ যাওয়া অনেকের কাছেই স্বপ্ন থাকে, কিছু কিছু মানুষের স্বপ্ন থাকে লাদাখ বাইক ট্রিপ করা, কিন্তু ব্যাপারটা এত সোজা না। লাদাখ ভ্রমণ অন্য অন্য জায়গার মতো না, যে আপনি ঝটপট প্ল্যান করলেন, ট্রেনের টিকিট কাটলেন আর চলে গেলেন, না সেটা করলে হবে না, লাদাখ ভ্রমণের জন্য অনেকদিন আগে থেকে প্রচুর প্রচুর পরিকল্পনার প্রয়োজন।লাদাখ কিন্তু সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৪-১৫ হাজার ফিট উচ্চতায় তাই পরিকল্পনা ছাড়া গেলে কিন্তু সমস্যা পড়তে হতে পারে। আর আপনারা যদি কোনো ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে যান তাহলে কিছুরই প্রয়োজন নেই, আর এই পোস্টটা আপনার জন্য না ও। এই পোস্টটা তাদের জন্য যারা নিজেরাই নিজেদের সঠিক পরিকল্পনায় লাদাখ যেতে চান। শুনে রাখুন নিজেদের প্ল্যানে লাদাখ যাওয়া এমন কোনো কঠিন ব্যাপার না, আর নিজেদের প্ল্যানে ঘোরাতে আলাদা একটা স্বাধীনতা আছে, আপনি যেখানে নিজেই রাজা, এবং অনেক কম খরচে জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারবেন, আমি নিজে ও যতোবার কোনো জায়গায় গিয়েছি নিজেদের প্ল্যানেই। এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাবো কিভাবে কম খরচে আপনারা লাদাখ ঘুরে আসতে পারবেন।

আরো পড়ুন - কেদারনাথ যাত্রার সম্পূর্ণ তথ্য

লাদাখ নিয়ে অনেকের মনে কিছু প্রশ্ন আছে আমি কয়েকটি পয়েন্টে এইসব কিছুর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এর বাইরে ও কিছু যদি বাদ পরে যায়, হয়তো যাবেনা, এবং আপনাদের যদি আরো কিছু প্রশ্ন থাকে এর বাইরে কমেন্ট করে জানাবেন আমি যথাযত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

লাদাখ কোন সময়ে প্ল্যান করবেন:- লাদাখ কিন্তু এখন সারা বছরই যাওয়া যাচ্ছে। বাই-রোড না যাওয়া গেলেও ফ্লাইটে যাওয়া যাচ্ছে। এখন অনেকে শীতে ও লাদাখ যাচ্ছে ফ্লাইটের Availability এখন খুব বেশি হওয়ার জন্য। তাছাড়া শীতে জাঁস্কার নদীতে চাদর ট্রেকে প্রচুর ট্রেকাররা যাচ্ছে। বাই-রোড শ্রীনগর হয়ে রাস্তা কিন্তু প্রায় নভেম্বর পর্যন্ত খোলা থাকে কিন্তু মানালি হয়ে রাস্তা কিন্তু আগেই অক্টোবরেই বন্ধ হয়ে যায়। আবার শ্রীনগর হয়ে রাস্তা কিন্তু এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এবং মে মাসের প্রথম দিকে ওপেন হয়ে যায় একটা লেন দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু মানালি হয়ে রাস্তা কিন্তু খুলতে আরো লেট হয়। এবার আপনি কোন সময়ে প্ল্যান করতে পারেন লাদাখের জন্য, কোন সময়ে যাওয়া বেস্ট হবে আপনার জন্য? লাদাখ যাওয়ায় জন্য বেস্ট টাইম হবে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাস আবার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। নভেম্বর ও যেতে পারেন কিন্তু সেটা আবহাওয়া বা snowfall এর ওপরে অনেকটা নির্ভরশীল। জুলাই আগস্ট এই দুই মাস বর্ষা থাকে রাস্তায় রাস্তায় ওয়াটার ক্রসিং পাবেন যা আপনাদের লাদাখ ট্যুরের কিছুটা হলেও অসুবিধা হতে পারে কিন্তু পুরোটাই নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপরে, আপনি যে সময় গেলেন ওই সময়ে হয়তো আবহাওয়া একদম পরিষ্কার। সেই জন্য সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর আপনার জন্য ভালো হবে কিন্তু ওই সময়ে একদম পরিষ্কার আবহাওয়া থাকে নীল আকাশ, কিন্তু এই সময়ে বরফ একদমই পাবেন না, কয়েকটা বিশেষ জায়গা বাদে।অক্টোবর এর শেষে গেলে আরো আলাদা ধরনের ভিউ আপনারা পাবেন, সেই সময় Autumn Season পুরো লাদাখ এলাকা হলুদ, লাল রঙের বাহারি পাতায় ভরে থাকে কি দারুণ লাগে আপনি না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। আমার নিজের এই সময় টা খুবই ভালো লাগে।

লাদাখ ট্যুরে যে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম তার লিস্ট 

লাদাখ পারমিট:- লাদাখে ঘোরার জন্য পারমিট এর প্রয়োজন যাকে ILP বলে বা inner line parmit বিদেশীদের ক্ষেত্রে PAP বা protected Area parmit। শ্রীনগর থেকে লেহ বা মানালি থেকে লেহ আসার ক্ষেত্রে কোন পারমিট এর প্রয়োজন নেই। পারমিট এর প্রয়োজন নুবরা ভ্যালি, খারদুংলা, প্যাংগং, সোমোরিরি, হানলে প্রভৃতি জায়গায় ।পারমিট জন্য অনলাইন apply করতে পারেন নিচের লিঙ্কে - 

নাহলে লেহ DC অফিসে গিয়ে offline এ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যেই ড্রাইভার কে বুক করবেন তাকে দিয়েই করিয়ে নিন। ভোটার কার্ড whatsapp পাঠিয়ে দিলে তারাই করে দেবে। কিছু একটা বেশি টাকা ওনারা নিবে। সেটা কথা বলে নিবেন কিন্তু আপনি অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন। 

লাদাখ ট্যুর কি কি সমস্যা হতে পারে :- আপনি যদি লাদাখ যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে যেনে রাখুন লাদাখে আসলে প্রধান যে সমস্যার আপনারা সম্মুখীন হবেন সেটা হলো Altitude Sickness বা যাকে আমরা AMS বলি পুরো কথাটি হলো Acute Mountain Sickness । কারণ আমরা যে উচ্চতায় থাকি এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় 100% কিন্তু আপনাকে যেতে হবে লাদাখ যার উচ্চতা ১৪-১৫ হাজার ফিট সেখানে কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ ৫০%, সেই জন্য আপনাদের মাথা ধরা, মাথা ঘুরা অজ্ঞান, জ্বর, শ্বাস প্রস্বাসের সমস্যা এই সব হতে পারে যেগুলোকে আমরা এককথায় AMS বলি। এই AMS থেকে বাঁচার উপায় কি। আপনি যদি লাদাখ যাচ্ছেন তাহলে আপনার সাথে অবশ্যই কর্পূর, কোকা-30(হোমিওপ্যাথি), Diamox ওষুধ গুলো রাখা অত্যন্ত জরুরি।এবং পুরো ট্যুরে  লাদাখ যাওয়ার 2 দিন আগে থেকে এই ওষুধ গুলো খাওয়া জরুরি তাহলে আপনারা আগে থেকেই অনেকটা সক্ষম হবে AMS কে প্রতিহত করতে। আপনাদের সাথে গাড়িতে যদি ছোটো একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার রেখে দেন তাহলে জরুরী ভিত্তিতে কাজে লাগতে পারে দাম বেশি না ৩০০-৪০০ টাকার মতো। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেতে এই সমস্যা টা বেশি হয় তাই বলে কম বয়সীদের হবে না এটা বলা যাবে না। সমতল থেকে গাড়ি ওপরের দিকে ওঠার সময়ে আপনার শরীরকে যতটা বেশি সংখ্যক ঠান্ডা উপভোগ করতে দিন। বেশী করে জল খান বেশী দৌড়াদৌড়ি বা জোরে হাঁটাচলা বেশি করবেন না বিশেষ করে খারদুংলা তে। আর আপনি যদি ফ্লাইটে আসেন তাহলে ওই দিন টা পুরো হোটেলে রেস্ট নেবেন, সাথে সাথে বাইরে বেরোলেই কিন্তু সমস্যা হতে পারে, এই সমস্ত কিছু যদি আপনি ফলো করেন তাহলে অনেকখানি সেফ থাকবেন।

খাওয়া দাওয়া এবং হোটেল :- লাদাখে খাওয়া দাওয়ার দাম কিন্তু প্রচন্ড বেশি। তাই বলে তো না খেয়ে থাকা যাবে না। আমরা খাওয়া দাওয়ার কিছু সরঞ্জাম নিয়ে ইলেকট্রিট কেটলি তে সেগুলো রান্না করে খেয়েছিলাম অনেকটা সেভ হয়েছিলো। তাছাড়া আপনারা যদি কোনো হোটেলে খান তাহলে অবশ্যই দেখবেন যাতে সেগুলো পাঞ্জাবি ধাবা হয়। এই ধাবা গুলোতে নর্থ ইন্ডিয়ান খাওয়ার গুলো পাবেন এবং দাম ও হবে সাধ্যের মধ্যে। আমরা যে সব হোটেল বা ক্যাম্প গুলোতে ছিলাম তার লিস্ট টা নিচে দিয়ে দিয়েছি দেখে নিতে পারেন।

হোটেল লিস্ট ও তাদের খরচা 

নুবরা ভ্যালি তে আমাদের ক্যাম্প। 

প্যাংগং লেকের শেষ গ্রামে আমাদের হোমস্টে। 

লাদাখ পৌঁছোবেন কেমন করে :- প্রথমত লাদাখ পৌঁছনোর দুটি উপায় আছে এক ফ্লাইটে, দুই - বাই-রোড। আপনারা ভারতের যেই শহরেই থাকেন না কোনো, আপনাকে সবার আগে পৌঁছতে হবে দিল্লী বা শ্রীনগর। কেন্দ্রশাষিত অঞ্চল লাদাখে একটি মাত্রই এয়ারপোর্ট যা লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে অবস্থিত, যার নাম কুশক বকুলা রিমপোছে এয়ারপোর্ট, যেটা একটি সামরিক এয়ারপোর্ট হলেও সামরিক, অসামরিক দুধরণের বিমানই ওঠানামা করে, শ্রীনগর বা দিল্লী দুটো জায়গা থেকেই আপনারা একটু পরপর লেহ এর ফ্লাইট পেয়ে যাবেন আসার ফ্লাইট ও একই ভাবে পেয়ে যাবেন।

এবার আসি বাই-রোড আপনারা কেমন করে পৌঁছোবেন লাদাখ আমার মতে লাদাখ আসার ক্ষেত্রে বাই রোড আসাই সঠিক হবে এবং বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কেনো? তার কারণ হচ্ছে রাস্তা দিয়ে এসে যখন আপনি লাদাখ পৌঁছোবেন তাতেই আপনার অর্ধেক লাদাখ দেখা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

লাদাখ পৌঁছোনোর দুটি রাস্তা আছে এক শ্রীনগর হয়ে দুই মানালি হয়ে। শ্রীনগর হয়ে গেলে দূরত্ব ৪১৮কি.মি এবং মানালি হয়ে গেলে প্রায় ৪৪০কি.মি, সময় আরো 2 ঘন্টা বেশি লাগবে । শ্রীনগর হয়ে গেলে ৩ টে মাউনটেন্ট পাস (বাংলায় যাদের আমরা গিরিপথ বলি এবং তিব্বতী ভাষায় 'লা') পেরোতে হবে আর মানালি হয়ে গেলে ৫ টে পাস পেরোতে হবে। শ্রীনগর হয়ে গেলে রাস্তায় আপনারা পাবেন জোজিলা, (যা ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের প্রধান কারণ), নামিকা-লা, ফটুলা পাস। ফটুলা টপ শ্রীনগর-লেহ হাইওয়ে (NH-1) এর সর্বোচ্চ স্থান উচ্চতা ১৩৪৭৮ ফিট। আর মানালি হয়ে যদি আপনারা যান তাহলে রোহতাং পাস তারপর বারালাচলা, নাকিলা (সর্বোচ্চ স্থান মানালি-লেহ হাইওয়ের) লাচুংলা, টাংলাংলা। আমার মতে শ্রীনগর হয়ে গিয়ে মানালি হয়ে ফিরে আসা লাদাখ ভ্রমনের ক্ষেত্রে আদর্শ হবে, বেশিরভাগ পর্যটকরাই তাই করে। অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য ১টা দিক ফ্লাইটে করে। কারণ শ্রীনগর থেকে মানালি এই গোটা সার্কিটটা কভার করতে আপনাদের ১০-১১ দিন সময় লেগে যাবে, তার ওপরে এতদিন ধরে এত হাইটে গাড়ি তে জার্নি করা শরীরের ওপরের ও যথেষ্ট চাপ পড়ে সেই জন্যই অনেকে এটা করে। বেশিরভাগ পর্যটকরাই শ্রীনগর হয়ে গিয়ে মানালি হয়ে ফিরে আসে এর পেছনেও একটা বড় কারণ আছে। লাদাখ বা লেহ সমুদ্রতল থেকে ১১০০০-১৫০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত, আর আমরা প্রায় সমভূমি এলাকা থেকে এত উচ্চতায় যখন যাবো, তখন শরীরের একটা ভারসাম্য বা উচ্চতাকে মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন নাহলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিবে সেগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করছি। 

যদি আপনি শ্রীনগর হয়ে যান তাহলে সেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। কেমন করে? প্রথম দিন শ্রীনগর থাকবেন যার উচ্চতা ৫২০০ ফিট, পরের দিন কার্গিলে যার উচ্চতা ৮৭০০ ফিট এবং পরে দিন লেহ - ১১৫০০ ফিট। এই ভাবে চললে আপনার শরীর উচ্চতাকে অনেকটা মানিয়ে নেবে। কিন্তু মানালি হয়ে গেলে এটা সম্ভব না, আপনি হঠাৎ করে অনেকটা হাইটে পৌঁছে যাবেন, তাছাড়া মানালি হয়ে গেলে ৫টা হাই-পাস আপনাকে অতিক্রম করতে হবে কিন্তু শ্রীনগর হয়ে গেলে ৩টে। আর রাস্তা ও কিছুটা কম পড়বে। এটাই পার্থক্য। এবার আলোচনা করা যাক আপনারা লাদাখ প্ল্যান কিভাবে সাজাবেন।

 লাদাখ ট্যুর প্ল্যান :- প্রথমত আপনাকে ভারতের যে কোনো জায়গায় থাকেন না কেনো আপনাকে পৌঁছতে হবে দিল্লী, শ্রীনগর বা মানালি। লাদাখ প্ল্যান কয়েকভাবে করা যায় আমি সবগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

প্রথম প্ল্যান, আপনি ফ্লাইটে শ্রীনগর পৌঁছে ওইদিন শ্রীনগর হোটেলে রেস্ট ।গাড়ি আপনার আগে থেকেই বুক, পরের দিন লাদাখের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করতে পারেন। দ্বিতীয় প্ল্যান আপনি ফ্লাইটে সরাসরি লেহ পৌঁছে ওই দিনটা হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন থেকে আপনার ট্যুর প্ল্যান সাজাতে পারেন। তৃতীয় প্ল্যান আপনি মানালি পৌঁছে মানালি থেকে যাত্রা শুরু করতে পারেন। প্রথম প্ল্যান টাই বিস্তারিত ভাবে বলছি, শ্রীনগর পৌঁছে কেউ কেউ চাইলে পরের দিন টা লাদাখ না গিয়ে শ্রীনগর এবং আসে পাশের কিছু এলাকা ঘুরে নিতে পারেন আমরাও তাই করেছিলাম যদি আপনার আগে ঘোরা না হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি শ্রীনগর থেকে ২ ঘন্টার রাস্তাতেই আছে দুধপাথরী, খুবই সুন্দর অফবিট জায়গা। দুপুরে মুঘল দরবার, সামিয়ানা, বা Ahdoos তে কাশ্মীরি ওয়াজবান ট্রাই করতে পারেন বিকেলটা ডাল লেকে শিকারায় কাটিয়ে হোটেলে রেস্ট। আগেই বলেছিলাম যারা কাশ্মীর আগে আসেননি তাদের জন্য। 

তৃতীয় দিন- সকালে বেরিয়ে পড়ুন লাদাখের উদ্দেশ্যে এইদিন আপনার রাত্রিবাস হবে কার্গিলে, শ্রীনগর থেকে যার দূরত্ব ২০২ কিমি, সময় লাগবে প্রায় ৬ ঘন্টা। কারণ রাস্তায় আপনাকে অনেক কিছু দেখতে হবে বা দেখার আছে, আগেই বলেছিলাম যে বাই-রোড গেলে আপনার অর্ধেক লাদাখ দর্শন সম্পূর্ন হয়ে যাবে। প্রথমে আসবে শোনমার্গ, শ্রীনগর থেকে যার দূরত্ব কি.মি । সেখানে হালকা কিছু একটা খেয়ে সিন্ধ নদীকে পাশে নিয়ে আবার চলুন কার্গিলের উদ্দেশ্যে, নেক্সট আসবে বালটাল যেটা অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প । সেখানে কিছুক্ষন কাটিয়ে আবার চলা। বালটালের পর থেকেই জোজিলা পাসের চড়াই সুরু হয়ে যায়, তার মানে আপনি জোজিলা পাসে ঢুকে পড়েছেন, যে জোজিলা পাস(NH-1) ছিল 1999 সালের কার্গিল যুদ্ধের প্রধান কারণ। এই জোজিলা পাসে মাঝে মধ্যেই খুবই যানজট লাগে সেই জন্য শুনছি দুপুর 1 টা পর থেকে শ্রীনগর থেকে গাড়ি যাওয়ার permission দেয়না। এরপর আপনি জোজিলা টপে পৌঁছোবেন সেখানে বোর্ডের সামনে ছবি তোলা তো আবশ্যিক। এখন থেকে দেখতে পাবেন যে পাহাড়ের গঠন ও রঙ পরিবর্তন হচ্ছে তার মানে আপনি লাদাখে প্রবেশ করছেন। মীনামার্গ চেকপোস্ট যাকে লাদাখের প্রবেশদ্বার বলে থেকে পারমিট চেক করিয়ে আমাদের সময়ে RTPCR রিপোর্ট লেগেছিলো দেখিয়ে সোজা চলে আসুন দ্রাস, পৃথিবীর দ্বিতীয় শীতলতম স্থান। কারগিলের যুদ্ধ অনেকটা এখানকার টলোলিং পাহাড়ের হয়েছিলো তাই এখানে কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল তৈরি করা হয়েছে, এই মেমোরিয়াল টা দেখতে একটু টাইম লাগবে। এরপর একদম সোজা কার্গিল। সেদিনকার মত কার্গিলেই স্টে।

কার্গিলে আমাদের হোটেল। 

চতুর্থ দিন - আবার কার্গিল থেকে আবার যাত্রা শুরু দেখার মত এখানে পাবেন কার্গিল ভিউ পয়েন্ট এবং সুরু নদী। কেউ কেউ সুরু ভ্যালি ট্যুর একদিনের জন্য প্যাকেজে রাখে। কার্গিল থেকেই চার দিকের লাল বাদামী হলুদ রঙের পাহাড় যা আপনাকে পাগল করে দেবে কি অদ্ভূত সব গঠন, সত্যি অবাক করার মতো। চতুর্থ দিনে দেখার মত স্পট বলতে, লামায়ুরুর মুনল্যান্ড এখানে আসলে আপনার মনে হবে আপনি অন্য জগতে আছেন, একদম চাঁদের পাহাড়, এরপর এক জায়গায় আসবেন যেখানে রাস্তা একদম সোজা, ছবি তোলার পক্ষে আদর্শ জায়গা। তারপর পথর শাহিব গুরুদোয়ারা, ম্যাগনেটিক হিল, নিম্মোর সিন্ধু ও জাঁস্কার নদীর সংগমস্থল দেখে আপনারা লেহ শহরে ঢুকে পড়বেন। পথর শাহিব গুরুদোয়ারার একটা ইতিহাস আছে, এক পাথরের ওপরে গুরু নানকের পায়ের ছাপ আছে। ম্যাগনেটিক হিলে শোনা যায় গাড়ি নাকি স্টার্ট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ওপরের দিকে চলতে থাকে কিন্তু আমরা এরকম কিছু দেখি নি। এখানে করার মতো অনেক activity আছে চাইলে আপনারা করতে পারেন। সেদিনকার মত লেহ তে বিশ্রাম, পরের দিন লেহ লোকাল সাইটসিং।

কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল ।

পঞ্চম দিন - পঞ্চম দিন লোকাল সাইটসিং এর মধ্যে থাকছে লেহ মার্কেট, মল রোড, লেহ প্যালেস, শান্তি স্তূপা লেহ ওয়ার মেমোরিয়াল। শান্তি স্তূপা, লেহ প্যালেসে বিকেলের দিকে গেলে ভালো কারণ এখান থেকে সানসেট টা দারুন লাগে। যারা ফ্লাইটে আসবেন তাদের সাইটসিং এর মধ্যে নিম্মোর সঙ্গম পয়েন্ট, ম্যাগনেটিক হিল গুরুদোয়ারা এসব ও থাকে, তাই আগেই বলেছিলাম আমি বাই রোড আসার সুবিধা।


ষষ্ঠ দিন:- ষষ্ঠ দিন থেকে আপনাদের লাদাখ ট্যুরের সবচেয়ে কঠিন কষ্টকর এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় জার্নি হতে চলেছে। কারণ আপনাকে এদিন পৃথিবীর সবচেয়ে উচু রাস্তার ওপর দিয়ে ট্রাভেল করতে হবে। শরীরের খুব একটা একটা সমস্যা হবে না কারন আপনার শরীর এতোদিনে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে, যারা ফ্লাইটে আসবেন তাদের একটু প্রব্লেম হলেও হতে পারে। ষষ্ঠদিন আপনাদের গন্তব্যস্থল হবে নুবরা ভ্যালি যাকে শীতলতম সাদা বালির মরুভূমিও বলে। নুবরা যেতে হলে আপনাদের পার করতে হবে খারদুংলা পাস, যা পৃথিবীর উচ্চতম হাইওয়ে উচ্চতা 18000 ফিট। এই এলাকাটি পুরোটায় ইন্ডিয়ান আর্মির সিয়াচেন ওয়ারিওস্ এর কন্ট্রোলে, এই রাস্তায় যাচ্ছে নুব্রা হয়ে সিয়াচেন বেসক্যাম্পে। খারদুংলা পাসের আগেই একটি চেকপোস্ট পড়বে নাম নর্থ পুলু। এখানে আপনাদের খারদুংলার পারমিট চেক হবে, এখানে আর্মি ক্যাম্প এবং কিছু খাওয়ার রেস্টুরেন্ট ও আছে। খারদুংলা টপে পৌঁছে চেষ্টা করবেন বেশিক্ষণ এখানে না থাকার 15 মিনিট যথেষ্ট নাহলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। সমস্যা বেশি কিছু নাহলে আরো একটু সময় কাটাতে পারেন, বেশি হাঁটাহাটি না করাই ভালো এখানে একটা ক্যাফে আছে যেটা বিশ্বের উচ্চতম ক্যাফে। SBI এটিএম ও পেয়ে যাবেন। এরপর আবার যাত্রা শুরু নিচে নামার পরের স্টপেজ আসবে সাউথ পুলু যেখানে আপনাদের নুব্রার পারমিট চেক হবে। এর পরের স্টপেজ আসবে খালসার যেখানে যেখানে খাওয়ার মতো কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন লাঞ্চটা এখানেই সেরে নিতে পারেন। লাঞ্চ সেরেই চলে আসুন ডিস্কিটে, ডিস্কিট মনাস্ট্রি এবং ভগবান বুদ্ধের বিরাট মূর্তি টা দেখতে যেটা এখানকার প্রধান আকর্ষন। 30 টাকা এন্টি ফি। ডিস্কিট মনাস্ট্রির ওপর থেকে পাশের শায়ক নদী দৃশ্য অপরূপ লাগে। এরপর আজকের শেষ গন্তব্যস্থল হলো হুন্ডার যেখানে সাদা বালিয়ারির মরুভূমি পাবেন যেখানে আপনারা অনেকটা সময় কাটাতে পারবেন এবং সূর্যাস্ত টা উপভোগ করতে পারেন। এখানে করার মত প্রচুর activity আছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দু-কুচ যুক্ত ব্যাকট্রিয়ান উট সাফারি। এরকম ধরণের উট আপনি আর কোথাও পাবেন না। সুদূর চিনের গোবি মরুভূমি থেকে এই উট গুলো এসেছিল যখন প্রাচীনকালে এই এলাকা ওল্ড সিল্ক রুটের অংশ ছিলো।মাত্র ১৫ মিনিটের সাফারি চার্জ নেয় ৩৫০ টাকা। ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই করুন। সেদিনকার মত হুন্ডারেই একটা ক্যাম্পে থেকে যান খুব সুন্দর সুন্দর ক্যাম্প এখানে পেয়ে যাবেন যা ১০০০ থেকে শুরু। পরের দিন আপনাদের গন্তব্য তুরতুক। 

খারদুংলা পাস ।

সপ্তম দিন:- সপ্তম দিনের ট্যুরটা অনেকের ইচ্ছা সময় আর খরচার ওপরে নির্ভরশীল আপনি যদি টাকা, সময় বাচাতে চান তাহলে এই দিনটার ট্যুরটা কে স্কিপ করে যেতে পারেন। কিন্তু একবার যখন লাদাখ আসবেন ই তখন আমি বলবো এটা করেই নেবেন। এই দিনে আমাদের ট্যুরে থাকছে পাকিস্তান LOC লাগোয়া কারাকোরাম পর্বতের কোলে ভারতের তিনটে গ্রাম দেখতে। সেগুলো হলো তুরতুক, ইয়াকসি এবং থাং। তারমধ্যে থাং হলো ভারতের উত্তরতম শেষ গ্রাম। এই তিনটে গ্রামই কিন্তু বালতিস্তানের অংশ, বালটি মানুষদের বাস, 1971 সালের আগে এই তিনটি গ্রামই পাকিস্তানের অংশ ছিল। 1971 যুদ্ধে ভারত এই তিনটি গ্রামকে পাকিস্তানের থেকে দখল করেছে। এর মধ্যে তুরতুক সবচেয়ে সুন্দর ২০০০ সালের পর থেকে ইন্ডিয়ান আর্মি পক্ষ থেকে এখানে পর্যটন শুরু হয়েছে । বেশিরভাগ পর্যটকই তুরতুক দেখে ফিরে চলে যান, থাং ভিলেজ যান না / যেতে পারেন না। থাং যাওয়ায় সবসময় permissions ও পাওয়া যায়না, আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো যে আমরা permission পেয়ে গিয়েছিলাম। ইয়াকসি গ্রাম দেখার মত তেমন কিছু নেই এখানে কেবলমাত্র আর্মি ক্যাম্প আর অল্প কিছু বাড়ি আছে এখানে থাং যাওয়ায় permission চেক হয় আপনাকে আধার কার্ড জমা রেখে তারপর থাং উদ্দেশে যেতে হবে। মোটামুটি ৩০,৪০ খানা বাড়ি আছে এই গ্রামে মোটামোটি এরা কৃষিকাজ ও পর্যটনের ওপরে নির্ভরশীল এখানে দেখার মতো আছে একটি মিউজিয়াম আর LOC ভিউ পয়েন্ট। এটা ভারতের উত্তরতম শেষ গ্রাম, ভিউ পয়েন্ট থেকে আপনি দূর্বিন দিয়ে পাকিস্তানের দুটি গ্রামকে খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখতে পাবেন। ভিউ পয়েন্টে 2,3 তে রেস্টুরেন্ট আছে তারাই আমাদের ওখানে বসিয়ে দেখার ব্যবস্থা করে দেবে খুব হেল্পফুল তারা। থাঙ থেকে ফেরার পথে আধার কার্ড সংগ্রহ করে আমরা এবার যাবো তুরতুকে, কেউ কেউ চাইলে আগে তুরতুক ঘুরে তারপর থাঙ যেতে পারেন একটাই রাস্তা। তুরতুক হলো অপূর্ব এক গ্রাম দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এখানেই দেখার মত কি কি পাবেন আপনারা?, একটি সুন্দর ব্রিজ, বালটি মিউজিয়াম, বালটি কালচার, হেরিটেজ, ফুড, তুরতুকের সুন্দর সুন্দর কৃষিজমি, তাদের বাড়ি ঘর, ন্যাচারাল কোল্ড স্টোরেজ, যেটা এখানকার প্রধান আকর্ষন, আর প্রচুর apricot ফলের গাছ, এই এলাকা গুলো apricot এর জন্যই বিখ্যাত। রাস্তার ধারে ধারে দেখতে পাবেন আর্মি পক্ষ থেকে apricot shop খুলে রেখেছে । এখান থেকে ও পাকিস্তান LOC দেখতে পাবেন কিন্তু থাঙের মতো এতো ভালো ভাবে নয়। আর আমাদের উপরি পাওনা ছিল তুরতুক ফেস্টিভ্যাল, ১৯৭১ যুদ্ধের 50 বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে আসার রাস্তা ও খুবই সুন্দর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শায়ক নদী। তুরতুক দেখে নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসুন আমাদের ক্যাম্পে, পরের দিন আপনাকে যেতে হবে লাদাখের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থল ।

অষ্টম দিন - সপ্তম দিনে আপনাদের যাত্রাস্থল লাদাখের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থল, যেখানে না গেলে আপনার লাদাখ ভ্রমণ প্রায় অসম্পূর্ণ, বুঝতে পেরেছেন আমি কোন জায়গার কথা বলছি। হ্যাঁ প্যাংগং লেক থ্রি ইডিয়টস্ সিনেমা আসার আগে পর্যন্ত যে জায়গা বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অজানা ছিল আজ বর্তমানে most visited place in ladakh. হুন্ডার থেকে প্যাংগং এর দূরত্ব প্রায় ২৪০ কি.মি, সময় লাগবে প্রায় ৭ ঘন্টা। খালসার, শায়ক, দুরবুক, টাংসে হয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন প্যাংগং, এখানে আসার পথে দুরবুকে লাঞ্চ টা সেরে নেবেন খুব ভালো জায়গা অনেক হোটেল আপনার পেয়ে যাবেন। দুরবুক থেকে একটি রাস্তা চলে গেছে প্যাংগং এবং একটি রাস্তা গেছে যেটা দিয়ে আপনি মানালি বা লেহ যেতে পারবেন। ফেরার পথে এই রাস্তা দিয়ে। রাস্তায় যদি ও দেখার মত কোনো স্পট নাই কিন্তু আপনি যে কোনো জায়গা তেই নামতে চাইলে দাঁড়াতে পারবেন ফটোগ্রাফি করার জন্য। এতো সুন্দর রাস্তা আর পাহাড়ের রং এর গঠন এতো বার বদল হবে আপনি জাস্ট পাগল হয়ে যাবেন, শুধু না ঘুমোলেই হল। যাইহোক প্যাংগং পৌঁছে ঘন্টা দেরেক ছবি তুলে নিয়ে আপনাদের বুক করা ক্যাম্পে চলে আসুন প্রি বুকিং না থাকলে কিন্তু অসুবিধায় পড়বেন। প্যাংগং এ সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা মানে যেখানে বেশিরভাগ লোকই থাকে সেটা হলো Spangmik যেখানে ক্যাম্পের রেট ও খুব হাই। আপনারা চাইলে আরো একটু এগিয়ে একটু নিরিবিলি জায়গায় থাকতে পারেন। আমরা কিন্তু এই Spangmik এ ছিলাম না সামনে আরো 2,3 তে গ্রাম পরে যেমন একটি মান এবং তারপর আসে মেরেক/Merek. আমরা ছিলাম এই Merek গ্রামে একদমই offbeat জায়গা।এটাই চীনা বর্ডার এর আগে ভারতের মোটামোটি শেষ গ্রাম, মাত্র 4 তে homestay এই গ্রামে, সামনেই প্যাংগং লেক নেই কোনো ভিড়ভাড়, আর কি চাই নিজের ইচ্ছা মত enjoy করতে পারবেন। একদম ছবির মত সুন্দর গ্রাম। নাম্বার দিয়ে দেবো বুক করতে পারেন চাইলে। ওখানে একদমই নেটওয়ার্ক থাকে না তাই ফোন করলে লেহ একজন দালাল আছে তিনি ধরবেন। ১০০০ টাকা পার হেড থাকা খাওয়া দিয়ে। হোমস্টের লোকগুলো ও খুব ভালো আমরা নিজেরাই রান্না করছিলাম বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া আমাদের রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল আর ডিমের কারি।

Merak Village, Pangong Lake. 

নবম দিন:- নবম দিন ফেরার পালা ট্যুরের শেষদিন। এ দিন খুব সকালে উঠলে খুব ভালো কারণ এদিন আমাকে ফিরতে হবে লেহ তার আগে যতো পারুন প্যাংগং লেক কে উপভোগ করে নিন, এবং লাদাখকে শেষ বারের মতো উপভোগ করে নিন। তাছাড়া সকাল সকাল আবহাওয়া একদম ক্লিয়ার থাকে সেই জন্য প্যাংগং লেকের যে জন্য বিখ্যাত সেই ঘন নীল জল পরিষ্কার দেখতে পাবেন, আবহাওয়া মেঘলা থাকলে সেই কালার পাবেন না। চটপট কিছু ভালো ভালো ছবি তুলে হোমস্টে থেকে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন লেহ উদ্দেশ্যে। পথে দুরবুক, চাংলা পাস( যেটা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম রোড), কারু হয়ে লেহ। এদিন ও দেখার মত কিছু স্পট আছে তার মধ্যে চাংলা পাস, এখানে আমরা প্রচুর বরফ পেয়েছিলেন। আর লেহ শহর ঢোকার আগে দুটি স্পট, এক থিকসে মনাস্ট্রি এবং থ্রি ইডিয়টস্ স্কুল বা Rancho's School, যেখানে এই মুভির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিলো। এবার লেহ শহর যাওয়ার পালা, সেদিনের মত লেহ তেই হোটেলে রেস্ট ।

Rancho's School, Leh, Ladakh. 

সোমোরিরি লেক হানলে :- প্যাংগং লেক দেখার সাথে যারা যারা তাদের প্ল্যানে সোমোরিরি লেক কেও রেখেছেন তাদের জন্য কিন্তু সময় আরো দু থেকে তিন দিন বাড়াতে হবে। প্যাংগং লেক এবং সোমোরিরি দুটোই কিন্তু নীল জলের লেক কিন্তু দুটোর মধ্যে একটু পার্থক্য আছে প্যাংগং কিন্তু নোনা জলের লেক কিন্তু সোমোরিরি মিষ্টি, প্যাংগং লেকের বেশিরভাগটাই কিন্তু চিনের দখলে, কিন্তু সোমোরিরি পুরো অংশই ভারতের ভূখন্ডে। সোমোরিরি লেকের রঙ কিন্তু আরো ঘন নীল, তাই রাখতেই পারেন আপনাদের প্ল্যানে। কিন্তু আপনি যদি প্যাংগং লেক দেখে নেন তাহলে এটা না দেখলেও চলবে। আর যদি আপনি মানালি হয়ে ফিরতেই চান তাহলে এই সোমোরিরি দেখেই ফিরতে পারেন। সোমোরিরি দেখার সাথে সাথে আপনি রাস্তায় পেয়ে যাবেন চুমাথাঙ উষ্ণ প্রশ্রোবন এবং চমাথাঙ গোমপা, সোমোরিরি লেক  দেখার পাশাপাশি আপনি পাশেই আরো একটা ছোট্ট লেক সোকার(Tsokar) লেকটিও দেখে নিতে পারেন। সোমোরিরি তে কিন্তু থাকার অপশন কিন্তু খুব কম কয়েকটি টেন্ট, পেয়ে যাবেন এবং কিছু হোমস্টে ভাড়া ১০০০-১২০০ থেকে শুরু পারহেড। এবং সব হোটেলই কারজক বলে একটা জায়গা আছে ওখানেই পাবেন আর কোথাও কোনো কিছুই পাবেন না। কিছু ক্যাম্পের নাম আমি দিয়ে দিলাম আপনার গুগল থেকে সার্চ করে বুক করে নিতে পারেন - 1Normadic Life camp 

2. Crane Guesthouse 

3. Goose homestay 

4. Lakeview guesthouse 

5. Tso Moriri camp & resort 

আপনারা আরো একটা দিন হানলের প্ল্যান করতে পারেন। একই জায়গা মাহে তে আপনাদের পারমিট চেক হয়ে আপনারা হানলের দিকে যাবেন, ভিউ নিয়ে তো কোনো কথাই হবে না। আরো একটা উপরি পাওনা Indian Astronomical observatory center. হানলে তে বেশিরভাগ ফটোগ্রাফার রা অ্যাস্ত্রো- ফটোগ্রাফি করার জন্য যায়। আপনার ও যদি সেই শখ থাকে তাহলে এই জায়গা বেস্ট। আপনারা যদি হানলে, সোমোরিরি প্ল্যান করেন তাহলে হতে আরো ৩টা দিন রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রথমে প্যাংগং থেকে চুমাথাং হয়ে হানলে পৌঁছোবেন সেখানে একদিন থেকে পরের দিন আপনাকে যেতে হবে সোমোরিরি। হানলে থেকে সোমোরিরি যাওয়ার ও তিনটি

 পরের দিন আপনারা Jispa তে স্টে করে মানালি চলে আসতে পারেন নাহলে ওই দিন মানালি আসতে চাইলে আসতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে জার্নি বেশি হয়ে যাবে। এই ১২ দিনের মতো ট্যুর প্ল্যান আপনাদের দিলাম যেটা শ্রীনগর থেকে শুরু হয়ে মানালি তে এসে শেষ হচ্ছে। এবার আপনারা আপনাদের নিজেদের মতো প্ল্যান করে নিতে পারেন, কোন জায়গা বাদ দিতে চান কোনটা রাখতে চান। মনেহয় না কোনো অসুবিধা হবে।


16 মন্তব্যসমূহ

  1. খুব সুন্দর গুছিয়ে লেখা।খুব ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  2. লাদাখ ট‍্যুরের খুঁটিনাটি তথ‍্য জেনে ঋদ্ধ হলাম।

    উত্তরমুছুন
  3. দারুন।প্লিজ একটু আমার w, app এ যদি পাঠান।7003027017

    উত্তরমুছুন
  4. খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখা লাদাখ ট্যুর সম্বন্ধে,অনেকের উপকারে আসবে ৷ আপনার w.app no যদি দেওয়া থাকতো আরও উপকার হতো ৷

    উত্তরমুছুন
  5. খুব সুন্দর মনোগ্রাহী বর্ননা। আপনার What's Aap no জানাবেন প্লিজ।

    উত্তরমুছুন
  6. পরিপূর্ণ ট্যুর প্লান। ধন্যবাদ।
    বাংলাদেশ থেকে যেতে চাই সরকারি চাকরি করি। অফিসিয়াল পাসপোর্ট। অনুমতি আছে কি? পার্মিসন কি ভাবে পেতে পারি। হেল্প প্লিজ।

    উত্তরমুছুন
  7. খুব সুন্দর, তবে পুগা ভ্যালি বললেন না!

    উত্তরমুছুন
  8. একদুটো প্রশ্ন, নিতান্তই ছোট : ষষ্ঠ, ও সপ্তম দিনে গ্রামে ঘোরার কথাটা যেটা বললেন, সেটা কি বাই কার নাকি এগারো নম্বর ধরে।
    আর দুই: গাড়ি ভাড়ার ব্যাপারটা একটু যদি বলেন, কি ভাবে করবো? কত দিনের জন্যে করবো? এছাড়া গাড়ি ভাড়া করতে কোনো ফোন নম্বর থাকলে, আর গাড়ি ভাড়ার আনুমানিক খরচা কেমন পড়বে ইত্যাদি।

    উত্তরমুছুন
  9. খুব সুন্দর ভাবে বলেছেন।🙏

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন