ভ্রমণ পিপাসু:- স্বামীনাথ মন্দির ও মেলার সাথে জড়িয়ে আছে চূড়ামন জমিদারবাড়ির নাম, যাদের বংশধরেরাই দুর্গাপুরের ভূপালপূর রাজবাড়িতে বসবাস করছে। যে চূড়ামন জমিদারবাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে বড় জমিদারি ছিল। যাতায়াতের সুবিধার জন্য উত্তর দিনাজপুর জেলার দুটি জমিদারিবাড়ি নদীর তীরে তৈরি করা হয়েছিল,-
এক - বাহিনের নাগর নদীর তীরে তৈরি করা হয় বাহিন জমিদারবাড়ি, যারাও চূড়ামন জমিদারবাড়িরই বংশধর।
দুই - ইটাহারের চূড়ামনের মহানন্দা তীরে চূড়ামন জমিদারবাড়ি।
মহানন্দার তীরে চূড়ামন জমিদারবাড়ির ধংসস্তূপ । |
মহানন্দা নদীর তীরে এক বিশাল জমিদারবাড়ি তৈরি করা হয়। সেই সময়ে মহানন্দা বেশ উত্তাল ছিলো এবং মহানন্দার জল প্রবল বেগে তীরে আছড়ে পড়তো। তার ফলেই জমিদারবাড়ি ধীরে ধীরে মহানন্দার গর্ভে পতিত হতে থাকে। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সেটা রোধ করা যায়নি। জমিদারবাড়ি বেশিরভাগ ধ্বংসাবশেষই মহানন্দার তলে চলে গিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো নদী তীরবর্তী জঙ্গলাকীর্ন উচু ঢিপির মধ্যে দেখা যায়। এই জমিদারবাড়িটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেলে,তারপর তারা ভূপালপূরে চলে আসেন। জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র রায়চৌধুরী মারা যাওয়ার পর তার নাবালক পুত্র ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী উত্তরাধিকারীরা হোন। ভূপালচন্দ্রের নামেই এই এলাকাটি নাম হয় ভূপালপূর। ভূপালপূরের পাশেই আছে দুর্গাপূর, যার নাম হয় ভূপালচন্দ্রের মা দুর্গাময়ী রায় চৌধুরীর নামে।
স্বামীনাথের মন্দির ও মেলার ইতিহাস। |
দুর্গাপুরের ভূপালপূর রাজবাড়ি :- ১২০০ বঙ্গাব্দের শেষের দিকে চূড়ামন জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র রায় চৌধুরী মারা যান। তার মৃত্যুর পর, এবং মহানন্দার জলে জমিদারবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমিদারবাড়ির লোকেরা ভূপালপূরে চলে আসে। জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র সেইসময়ে নাবালক ছিল তাই ব্রিটিশ সরকার তার দেখাশোনার ভার গ্রহণ করে। এই সময়ে ব্রিটিশ সরকার এই রাজবাড়ীর একতলাটি তার থাকার জন্য তৈরি করে দেয়। আর বাড়ির দোতলাটি জমিদার ভূপালচন্দ্র তৈরি করেন। এই বাড়ির বংশধরেরা এখনো বাড়ির দোতলা তে বসবাস করছেন। জমিদার ভূপালচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে ও সরল প্রকৃতির মানুষ। ব্রিটিশ সরকার তাকে অর্থের বিনিময়ে 'রাজ' উপাধি গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলো কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। সাধারণ মানুষ উনাকে রাজা হিসেবেই জানতো এবং মানতো। সেই সূত্রে এই জমিদারবাড়ি রাজবাড়ি রূপে পরিচিত লাভ করে।
ভূপালপূর রাজবাড়ি। দুর্গাপুর, ইটাহার। |
স্বামীনাথ মন্দির :- জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরীর মা দুর্গাময়ী চৌধুরী তার স্বর্গীয় শ্বাশুরীর পদ্মাবতী দেবীর শুভ সংকল্প অনুসারে 1321 বঙ্গাব্দে 25 শে বৈশাখ ইংরেজির 1914 সালে স্বামীনাথের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন হাসুয়া নামক স্থানে কারন এখানেই এই মূর্তিটি পাওয়া যায়। দুর্গাময়ী চৌধুরী তার স্বর্গীয় শ্বাশুরীর উদ্দেশ্যে এক কবিতা লিখেছিলেন, কবিতাটি মন্দিরের কালো পাথরের গায়ে খোদাই করা আছে। জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী স্বামীনাথের স্বপ্নাদেশ পেয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন তার পুজো শুরু করেন। এই দিন জমিদার বাড়ির বংশধরেরা হাসুয়ায় গিয়ে স্বামীনাথ ও সীতাকে স্বর্ণলঙ্কারে ভূসিত করেন। তারপরই মন্দিরে পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এই দিনে মন্দিরে বিশেষ পূজার ব্যবস্থা করা হয়। তাই এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পূজা চলতে থাকে। মেলার দিন থেকে জমিদারবাড়ির বংশধরেরা প্রায় সবাই এখানে উপস্থিত থাকে। মন্দিরের কারুকাজ একদম দেখার মত। বর্তমানে মন্দিরের সেবাইত শিবপ্রসাদ রায়চৌধুরী, তার উদ্যোগে মন্দিরে নিত্য পূজাপাট করা হয়।
স্বামীনাথের মন্দির । |
স্বামীনাথের মূর্তি :- স্বামীনাথের মন্দিরের ভিতরে যে কালো কোষ্টিপাথরের যে মূর্তিটি বিদ্যমান সেটি আসলে বিষ্ণুমূর্তি। মন্দিরের ভিতরে যতো গুলো মূর্তি আছে তারমধ্যে এই মূর্তিটি সবচেয়ে সুন্দর। তাই এই মূর্তিটি মন্দিরের একদম মাঝখানে অবস্থিত। মূর্তিটির উচ্চতা সাড়ে চারফুট, চওড়ায় দুই ফুট। রূপার বালা পরিহিত, চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম। কপালে সোনার টিপ, গলাতে সোনার হার, পরনে শুভ্র বসন। মাঝে মধ্যে ঘি মাখনের জন্য মূর্তিটি খুব উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করেছে। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মূর্তি টিকে রূপালি অলঙ্কার দ্বারা সজ্জিত করে তোলা হয়। মূর্তিটি সাতদিন এভাবেই থাকে। এই সময়ে ভক্তবৃন্দ মূর্তিটির পা-দুখানি দেখতে পায়। বছরের অন্যদিন গুলিতে সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে। কেবলমাত্র মুখটি বেরিয়ে থাকে। মন্দিরের পাশেই আছে জোড়া শিব মন্দির। কথিত আছে নাকি যে স্বামীনাথের শিব বেলতলার নিচে মাটি থেকেই উঠে এসেছে। জমিদার ভূপালচন্দ্র রায়চৌধুরী উদ্যোগেই ওখানে শিব মন্দির নির্মাণ করা হয়। শিবরাত্রির দিন এখানে প্রচুর ভিড় হয়। স্বামীনাথের মন্দিরে স্বামীনাথের মূর্তিটি ছাড়াও আরও কিছু মূর্তি দেখতে পাবেন, যেমন কালোপাথরের মনসা,রাধা কৃষ্ণ, গণেশ, একুশটি সালগ্রাম শিলা, জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা মূর্তি দেখা যায়।
স্বামীনাথের মেলা :- উত্তর দিনাজপুর জেলায় বহু বড় বড় মেলা হয়। আকারের দিক থেকে এই স্বামীনাথের মেলাটি উত্তর দিনাজপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা। প্রথমে আছে করনদিঘীর শিরুয়ার মেলা। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ থেকে এই মেলা বসে। নিচে ভিডিও লিঙ্ক দিলাম দেখে নিতে পারেন এর ইতিহাস...
- আরো দেখুন - রাজা কর্ণের স্মৃতি বিজরিত করনদিঘীর মেলা
স্বামীনাথের মেলাটি হাসুয়ার স্বামীনাথ মন্দিরের সামনের মাঠে বহু পূর্ব থেকেই বসছে, প্রথমে এই মেলাটি একমাস ধরে চলতো। ১৯৭০ সাল থেকে মেলাটিকে তিন দিনের জন্য করা হয়। তবে বর্তমানে মেলাটি সাত দিন ধরে চলে। মুলত এই মেলাটি বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়ে, তার পরে ও আরও ৩,৪ দিন চলে। প্রথম দু- তিন দিন প্রচুর ভিড় হয়। দর্শনার্থীদর সুবিধার জন্য মেলার কয়দিন হাসুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মেলা প্রাঙ্গন পর্যন্ত রাস্তায় কোন বাস, অটো ট্রেকার চলতে দেওয়া হয়না। এ বছর আবার মেলা হচ্ছে দীর্ঘ দুবছর মেলা বন্ধ থাকার পর। আসাকরি সবাই অবশ্যই আসবেন।
তথ্য সংগ্রহ সহযোগীতায় - বৃন্দাবন ঘোষ।
আসবো ❤️
উত্তরমুছুনবিকেলে আসলে ভালো হবে
মুছুনDefinitely
উত্তরমুছুনOK
মুছুনJabo
উত্তরমুছুনচলে আসুন
মুছুনখুব সুন্দর লালো
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন