উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন স্কুল নিয়ে আলোচনায় আজ দ্বিতীয় পর্ব।
ভ্রমণ পিপাসু :- উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার স্কুল নিয়ে আলোচনার আজ দ্বিতীয় কিস্তি। প্রথম কিস্তিতে আমরা আলোচনা করেছিলাম উত্তর দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে পুরোনো স্কুল চূড়ামনের প্রহ্লাদ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে। আজ সেই মোতাবেক আমরা আলোচনা করবো উত্তর দিনাজপুর জেলারই দ্বিতীয় সবচেয়ে পুরোনো স্কুল ।
Marnai Saratchandra high school |
প্রথম পর্বে আমরা হয়তো জেনে গেছি উত্তর দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে পুরোনো স্কুল কোনটি?না পড়ে থাকলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে জেনে নিন এর ইতিহাস।
উত্তর দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে পুরোনো স্কুল সমন্ধে জানলেও আমরা কি জানি জেলার দ্বিতীয় প্রাচীন স্কুলের অবস্থান সেই ইটাহার ব্লকেই। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন এই স্কুলের অবস্থান ইটাহারের মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মারনাই শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। যার প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৯৯ সালে। এবং তার সাথে সাথে এই বিদ্যালয়ের সাথেও জড়িয়ে আছে মারনাই জমিদারবাড়ির নাম। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে ইটাহার জেলার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এবং বধিষ্ণু এলাকা গুলির মধ্যে অন্যতম। জমিদার মহেন্দ্র নারায়ণ পালচৌধুরী ছিলেন মারনাই জমিদারীর প্রতিষ্ঠাতা, তার ছেলে ছিলেন জমিদার উপেন্দ্র নারায়ণ পালচৌধুরী। তার উদ্যোগেই এই স্কুলের পথচলা শুরু। তার প্রচেষ্টায় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মারনাইতে একটি মিডল স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি মারনাই এর উপেন্দ্র কিশোর নন্দী কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন। উপেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারের জন্য যে জমি তা তিনিই দান করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ই পরবর্তীকালে শরৎচন্দ্র হাই স্কুল নামে পরিচিতি লাভ করে। জমিদার উপেন্দ্র নারায়ণ পাল চৌধুরীর পর জমিদার শশীভূষন পাল চৌধুরী ও গ্রামের শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ নজর দেন। তিনি নিজে মারনাই মিডল স্কুল পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার উদ্যোগে চাঁচলের মহারাজা হাইস্কুলের শিক্ষক রসময় কুণ্ডু মারনাই হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।
- আরো পড়ুন - রাজা গণেশের ঢিপি।ভাতুরা, হেমতাবাদ
শতবর্ষ পেরোনো এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়েছিলো একসময় জমিদার বাড়ির হাতিশালা থেকে । মারনাই এর সাথে জড়িয়ে আছে জমিদার "পালচৌধুরী বংশ" এবং জোতদার দে বাড়ি বা "নুনিয়া বাড়ি" । জমিদার শশীভূষন পাল চৌধুরী উদ্যোগে এই স্কুল জমিদারদের হাতিশালা থেকে কাছারী বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৮ সালে এই স্কুল সপ্তম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হয়। ১৯৫৩ অ্যাডভোকেট দুর্গাপদ সরকারের উদ্যোগে এই স্কুল জুনিয়র হাই স্কুলে উন্নীত হয়। সেই সময়ে গ্রামের বিভিন্ন ধনী পরিবার গুলোর পক্ষ থেকে জমিদান ও অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে নুনিয়া বাড়ি বলে পরিচিত দে বাড়ির শরৎচন্দ্র দে স্কুলের উন্নতির জন্য ১০ হাজার রৌপ্য মুদ্রা দান করেন সেই কারণেই এই স্কুলের নাম মারনাই শরৎচন্দ্র হাইস্কুল পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬২ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক এবং ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয়। ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়ে শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করা হয়। শতবর্ষ উপলক্ষে বিদ্যালয়ে শতবার্ষিকী ভবনের উদ্বোধন হয়। স্কুলের কিছু নিজস্ব কৃষিজমি ও রয়েছে। কৃষিজমি থেকে বাৎসরিক যা কিছু আয় হয় তা স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এই স্কুল বিভিন্ন প্রধান শিক্ষক উদ্যোগ, গ্রামের বিভিন্ন মানুষ জনের সার্বিক সহযোগিতায় এই স্কুল আজ এই বড় উচ্চতায় পৌঁছেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন