ভারতবর্ষে কেবলমাত্র দুটি ১০৮ শিবমন্দির আছে, আচার্যজনক ভাবে দুটি পূর্ব বর্ধমানে অবস্থিত। There are only two 108 Shiv Mandirs in India & both are in Purba Bardhaman District.

ভ্রমণ পিপাসু:- গোটা ভারতবর্ষ বা গোটা বিশ্বজুড়ে যদি  খোঁজ করা হয় তাহলে দুটি ১০৮ শিবমন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে, এবং আচার্যজনক ভাবে এই দুটি ১০৮ শিবমন্দিরই অবস্থিত আমাদের রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলায়, এবং এই দুটি মন্দিরের নির্মাণের সাথে বর্ধমান রাজবাড়ি যুক্ত ছিলো। একটি অবস্থিত বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনা শহরে এবং অপরটি বর্ধমান শহরের কাছেই নবাবহাটে। এই দুটি শিব মন্দিরের খ্যাতি কিন্তু ভারত জুড়ে, আমাদের রাজ্যের পাশাপাশি বাইরের রাজ্যে থেকেও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে এই দুই মন্দিরে।        

আরো পড়ুন:- মন্দিরের শহর অম্বিকা কালনা ভ্রমন 1 দিনে।

108 Shiv Mandir, Ambika Kalna & Burdwan. 

কালনা ১০৮ শিবমন্দির:- বর্ধমান শহর থেকে ৬০ কি.মি দূরে ভাগীরথীর পশ্চিম পারে অবস্থিত অম্বিকা কালনা বা কালনা শহর যা খুব প্রাচীন শহর। এই শহরেরই মা অম্বিকা মন্দির থেকে এই শহরে নামকরণ হয়েছে অম্বিকা কালনা। এই কালনা শহরের রাজবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণের ঠিক উল্টোদিকে অবস্থিত কালনা ১০৮ শিবমন্দির যা নব কৈলাস মন্দির হিসেবে পরিচিত। ১৮০৯ সালে আটচালা বিশিষ্ট এই মন্দিরগুলিকে প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমান রাজবাড়ির রাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর। মন্দিরের গঠনশৈলী যদি বলতে চান তাহলে দেখা যাবে মন্দিরটি অদ্ভুত ভাবে এক জ্যামিতিক বিন্যাসে তৈরি করা হয়েছে তাও প্রায় ২০০ বছর আগে, যা দেখে সত্যি অবাক লাগে। মন্দিরটি ২টি বৃত্তের আকারে বিন্যস্ত। বহিবৃত্তে আছে ৭৪টি শিব মন্দির এবং অন্তবৃত্তে আছে ৩৪ টি মন্দির। এবং মন্দির গুলির মাঝে অবস্থিত একটি বড় কুয়ো, এই কুয়োটিকে শূন্য অর্থাৎ নিরাকার ব্রহ্ম স্বরূপ শিবের প্রতীক হিসাবে মানা হয়। মনে করা হয় মন্দিরের জলের চাহিদা মেটানোর জন্যই হয়তো এই কূপটি খনন করা হয়েছিল।প্রতিটি মন্দিরের শিবলিঙ্গ গুলিই উত্তরমুখী। বহিবৃত্তের ৭৪টি শিবলিঙ্গের মধ্যে একটি শুক্লবর্ণের অর্থাৎ সাদা এবং একটি কৃষ্ণ বর্ণের অর্থাৎ কালো রঙের। কিন্তু অন্ত বৃত্তের ৩৪টি শিব লিঙ্গই সাদা রঙের। মন্দিরের সাদা শিব লিঙ্গগুলো সদাশিবের প্রতীক যার অর্থ চৈতন্য ও জ্ঞান। এবং কালো বর্ণের শিবলিঙ্গ গুলি রুদ্রের প্রতীক। মন্দিরের প্রতিটি বৃত্তের দুটি করে দরজা বাইরের বৃত্তের দরজা গুলি একটি উত্তরে এবং একটি দক্ষিণে এবং ভিতরের বৃত্তের দরজা গুলি পূর্ব, পশ্চিমে। মন্দিরে দেওয়াল গুলিতে পূরান ও রামায়ণ, মহাভারত কাহিনী খুব ই সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ২০০ বছরের পুরোনো এই মন্দিরের টেরাকোটা কাজের পাশাপাশি বাংলার নিজস্ব মন্দির রীতি আট চালা রীতি লক্ষ করা যায়।

মন্দিরের মাঝে অবস্থিত কূপ। 


 কেমন করে পৌঁছোবেন এখানে :- কালনা পৌঁছতে গেলে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো ট্রেন। ব্যান্ডেল-কাটোয়া লোকাল লাইনে এই কালনা স্টেশনটি পড়ে। কালনা দেখার মত বহু জায়গা আছে, স্টেশন থেকে টোটো ভাড়া করে চলে আসুন রাজবাড়ি মন্দির চত্বর বা ১০৮ মন্দির, ভাড়া পড়বে 10 টাকা, কালনার বাকি দর্শনীয় স্থান গুলি নিয়ে পরের একটা ব্লগে আলোচনা করবো। 

পড়ে ফেলুন:- 1 দিনে কি ভাবে কালনা ঘুরে আসবেন


বর্ধমান ১০৮ শিবমন্দির:- বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দিরটি বর্ধমানের নবাবহাট বাস স্ট্যান্ডে একদম পাশেই অবস্থিত এবং বর্ধমান স্টেশন থেকে মাত্র ৫ কি.মি দূরে অবস্থিত ।বর্ধমান এর মহারানি কৃষ্ণ কুমারি দেবী এক স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৭৮৮ সালে এই মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই মন্দির কে ১০৮ শিব মন্দির বলা হলেও আদতে এখানে আছে ১০৯ টি শিব মন্দির। ১০৮ টি পাশাপাশি সারিবদ্ধ ভাবে এবং একটি মন্দির একদম আলাদা জায়গা তৈরি ।মন্দির গুলোকে ওপরে থেকে দেখলে জপমালার মত দেখতে মনে হয়।

নবাবহাটে 108 শিব মন্দির, বর্ধমান। Bardhaman 108 Shiv Mandir. 

রায়গুনাকর ভারত চন্দ্র রায়ের আইহাট শোরগোল বত্রিশ বাজারের অন্যতম, বর্ধমানের নবাবহাট একসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষে জনশূন্য হয়ে পড়েছিলো, সেই সময় রাজা তিলক চাঁদের মৃত্যুর পর তার বিধবা রানী কৃষ্ণ কুমারী দেবীর সাথে ইংরেজদের প্রচন্ড বিরোধ বাধে। মহরানীর বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা রকম চক্রান্ত। বিরোধ মিটে গেলে ভক্তিমতী মহারানী দৈব স্বপ্নাদেশ পেয়ে নবাবহাটেই এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। জপমালার ১০৮ টি ফুলের ১০৮টি স্থাপত্যকে গেঁথে এই মন্দিরমালা নির্মাণ এক অনন্য সাধারণ শিল্পশৈলী। এখানে ১০৮ ঘন্টা ও দেখা যায়। শিব রাত্রি এবং চৈত্র সংক্রান্তির সময়ে এখানে বিরাট মেলা বসে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় তখন। মন্দিরের পিছনে একটি বড় মাঠ আছে শেখানেই মেলা বসে, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা চলে সাত দিন ধরে। যদিও শেষ ২ বছর ধরে কোভিডের কারণে মেলা সেরকম ভাবে হয়নি।

পিছন থেকে ১০৮ শিবমন্দির, বর্ধমানে। 

 কিন্তু বহুদিন অবহেলায় এবং কালের নিয়মে এই মন্দিরের অনেকটায় ক্ষতিসাধন হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৫ সালে বিড়লা জনকল্যান ট্রাস্টের উদ্যোগে এই মন্দিরের সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা উদয়চাঁদ মাহাতার গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড বর্তমানে মন্দিরে দেখাশোনা, মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ, নিত্যপূজার ব্যবস্থা করে থাকে ইতিমধ্যে তাদের উদ্যোগে অতিথিনিবাস যজ্ঞস্থান, স্থানঘর, পুকুর সংস্কার, ঘাটের উন্নয়ন, উদ্যান তৈরি প্রভৃতি কাজ হয়েছে। 

কেমন করে পৌঁছোবেন :- বর্ধমান ১০৮ শিবমন্দির শহরের একদম উপকণ্ঠেই অবস্থিত, নবাবহাট বাস স্ট্যান্ডের একদম পাশেই। আপনি চাইলে বর্ধমান স্টেশন থেকেই টোটো ভাড়া করে যেতে পারেন বা টাউন সার্ভিস বাস ও পেয়ে যাবেন।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন