দিনাজপুরের নদীকথা। প্রথমপর্ব-রায়গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া "কাঞ্চন নদী"।
ভ্রমণ পিপাসু:- যে নদীর বুকে একসময় পাল তুলে ভেসে বেড়াতো বড়ো বড়ো নৌকা, সেই নদীই আজ কালের কড়াল গ্রাসে তার আগের রূপ হারিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আমরা আজ কথা বলছি রায়গঞ্জ ব্লকের কাঞ্চন নদী নিয়ে।
Kanchan River/কাঞ্চন নদী। |
নদীর উৎস বা উৎপত্তিস্থল:- কাঞ্চন নদী বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিলাঞ্চলের এক বিল থেকে উৎপত্তি হয়ে রায়গঞ্জ ব্লকের কৈলাডাঙ্গীতে, ভারতীয় ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে এবং তা শীতগ্রামের কাছে মহীগ্রামে এসে নাগরের সাথে মিলিত হয়েছে।
নদী অববাহিকা ও গতিপথ:- কাঞ্চন নদীর উৎপত্তি দিনাজপুরের এক বিল থেকে, রায়গঞ্জ ব্লকের কৈলাডাঙ্গী গ্রামে এই নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করার পর থেকে মহীগ্রামের কাছে নাগরের সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত এই নদীর প্রবাহপথ প্রায় 30 থেকে 35 কি.মি। বাংলাদেশের দিকেও দৈর্ঘ্য প্রায় মোটামুটি প্রায় একই। কৈলাডাঙ্গী থেকে এই নদী বহর, বিন্দোল, লক্ষনীয়া, মহারাজা, পানিশালা, শীতগ্রাম হয়ে বিহার লাগোয়া মহীগ্রামের কাছে এসে এই নদী নাগরে পতিত হয়েছে। বর্তমানে মৃতপ্রায় এই নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াও মুস্কিল, নদীর বেশিরভাগ অংশই আজ কৃষিজমি নতুবা খালবিলে পরিণত হয়ে গেছে, প্রাচীনকালের স্রোতস্বিনী ও কল্লোলিনী রূপের আর কোনো অংশই আজ আর অবস্থিত নেই। শীতগ্রাম হাইস্কুলের আগে, মহারাজা, এবং বিন্দোলে এই নদীর ওপরে তিনটে ব্রিজ অবস্থিত, মহারাজা হাট যাওয়ার পথে অবস্থিত কাঞ্চন নদীর ওপরে ব্রিটিশ আমলের তৈরি লোহার সরু ব্রিজের পরিবর্তে এখানে 2019 থেকে এখানে পাকা কংক্রিটের বড় সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে, যা এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো।
অতীত গৌরব ও মিথ:- প্রাচীনকালে কাঞ্চনের বুকে পাল তুলে ভেসে বেড়াতো বড় বড় বজরা। তখন নদীর নাব্যতা ও স্রোত ছিল যথেষ্টই বেশি, সেইজন্য বড় বড় নৌকা করে বনিকরা বাণিজ্য করার জন্য এই নদীতে আসতো, বণিকদের বিশ্রামের জন্য নদীর দুপাশে ছোটো বড়, জনপদ গড়ে ওঠে, তার মধ্যে একটি হল বিন্দোল, মনে করা হয়, বন্দর থেকেই বিন্দোল নামের উৎপত্তি ঘটে। ধীরে ধীরে বণিকদের দ্বারাই বিন্দোল যথেষ্ট বড় জনপদ এবং বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। সুলতানী আমলে এই কাঞ্চন নদীর পাশেই গড়ে তোলা হয় ভৈরবী মন্দির, কাঞ্চন নদীতেই মন্দিরের এই বিগ্রহটিকে পাওয়া যায়, তারপর সেটিকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। হিন্দু, মুসলিম মিশ্র সংমিশ্রণে সুলতানী আমলে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। শোনা যায় কাঞ্চন নদীপথেই এক সময়ে দেবী চৌধুরানী তার বজরা নিয়ে যাতায়াত করতেন এবং বিন্দোলে এসে মা ভৈরবীর পুজো দিতেন। এই কাঞ্চন নদীর তীরেই গড়ে ওঠে পানিশালার শীতগ্রাম হাইস্কুল, বিদ্যালয়ে কাঞ্চন নামে একটি দেওয়াল পত্রিকাও আছে। কাঞ্চন নদীকে নিয়ে বিন্দোলের. অশোক কুমার রায় "কবিতা কাঞ্চন" নামে একটি পত্রিকা এবং "কাঁইচ" নামে একটি গান ও রচনা করেন, লক্ষনীয়াতে কাঞ্চন নদীর এক তীরে ঝুপরি কালি মন্দির এবং কাইচপাড়া নামে এক বসতি গড়ে ওঠে।
মানবজীবনে নদীর অবদান অনস্বীকার্য, এই কাঞ্চন নদী, তা কোন অংশে কম ছিলোনা, কিন্তু এই মানবজাতির দোষেই এবং সংস্কারের অভাব এই নদীর আজ শেষ অংশটুকুও নিশ্চিন্নের পথে।
Bah
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন