দিনাজপুরের নদীকথা। দ্বিতীয় পর্ব - 'টাঙ্গন নদী', পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদী।
|
Tangan River / টাঙ্গন নদী । |
ভ্রমণ পিপাসু:- বাংলাদেশ এবং ভারতের আন্তসীমান্ত নদী এই টাঙ্গন। টংগন বা টাঙন নামেও ডাকা হয় এই নদীকে। ভারত থেকেও বাংলাদেশের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই নদী, সেটা কেনো পুরোটা পড়লেই বুঝতে পারবেন। মঙ্গলকাব্য চন্ডীমঙ্গলেও উল্লেখ আছে এই নদীর নাম। মালদা জেলার ভাটরা, যাত্রাডাঙ্গা মত বড়ো বড়ো বিল গুলো এই নদীর জলেই বর্ষাকালে ফুলে ফেঁপে ওঠে। এই নদীর তীরেই ছোট বড়ো অনেক মন্দির ও মাজার গড়ে উঠেছিলো তার মধ্যে অন্যতম কুশমুন্ডী ব্লকের নড়বরিয়া শিব মন্দির । টাঙ্গন মহানন্দার একটি উপনদী। এই নদীটি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার মাগুরা ইউনিয়নের এক বিল থেকে উৎপত্তি হয়ে মতান্তরে বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে মালদা জেলার বাংলাদেশ বর্ডার লাগোয়া আইহো নামক স্থানে এসে মহানন্দা নদীতে পতিত হয়েছে।
আরো পড়ুন = প্রথম পর্ব - রায়গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া কাঞ্চন নদী ও তার ইতিহাস ।
প্রবাহপথ:- বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা হয়ে এই নদী ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুর জেলা হয়ে ভারতের চাঁদগাঁও এ এসে উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে, তারপর উদগ্রাম, রাধিকাপুর, ফরিদপুর হয়ে প্রায় 15 কি.মি পথ অতিক্রম করে এই নদী দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডী ব্লকে প্রবেশ করেছে ।দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডী,বংশীহারি হয়ে এই নদী মালদা জেলায় প্রবেশ করেছে, মালদা জেলার নালাগোলা, বামনগোলা বুলবুলচন্ডী হয়ে আইহো নামক স্থানে এসে মহানন্দা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটির বাংলাদেশের অংশে দৈর্ঘ্য 123 কি.মি এবং ভারতের অংশে দৈর্ঘ্য 144 কি.মি।
|
রাধিকাপুরের ফরিদপুর বর্ডার ব্রিজ । |
টাঙ্গন নামকরণ :- বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল এক জমিদার টংকনাথ, সেই নাম থেকেই এই নদীকে টংকন, টঙন অপ্রভ্রংশ হয়ে আজকের টাঙ্গন নামটি এসেছে, তাছাড়া এই নদীর নামকরণ নিয়ে একটা পৌরাণিক কাহিনী ও আছে যার কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ছিলনা বলে আমি সেটা উল্লেখ করিনি।
টাঙ্গন নদী ও উত্তর দিনাজপুর:- উত্তর দিনাজপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী এই টাঙ্গন। উত্তর দিনাজপুরের চাঁদগাঁও কাছে এসে এই নদী ভারতে প্রবেশ করেছে। রাধিকাপুরের প্রাচীন উদগ্রামে এই টাঙ্গন নদীর পাশেই অবস্থিত। এই উদগ্রামের দুর্গাপূজা তো প্রায় ৫০০বছরের পুরোনো।
|
কাঁশফুলের শোভা । টাঙ্গন নদী।ফরিদপুর । |
রাধিকাপুরে টাঙ্গন নদীর ওপরে দুটি ব্রিজ অবস্থিত একটু সড়ক এবং অন্যটি রেলব্রিজ। এই রেল ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারি সেতু হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন প্রায় 1 থেকে ২টি মালগাড়ি রায়গঞ্জ কালিয়াগঞ্জ হয়ে এই পথেই বাংলাদেশ যাচ্ছে। তাছাড়া রাধিকাপুরের ফরিদপুরে টাঙ্গন নদীর ওপরে ২টো বর্ডার ব্রিজ অবস্থিত । এই ব্রিজ দুটি বিএসএফ কর্তৃক নির্মিত এবং যথেষ্ট সুন্দর। শরৎকালে এই ব্রিজদুটি থেকে কাঁশফুলের শোভা সত্যি অসাধারণ লাগে, যারা এখনো যাননি অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গাটি থেকে।
|
Radhikapur Rail Brige. Courtesy - mounabrata Mondal |
|
Radhikapur Road bridge Tangan. |
টাঙ্গন নদী ও দক্ষিণ দিনাজপুর:- উত্তর দিনাজপুরের ফরিদপুর হয়ে এই নদী দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডী ব্লকে প্রবেশ করেছে। কুশমুন্ডী ব্লকের নড়বড়িয়াতে টাঙ্গন নদীর পাড়ে গড়ে উঠে নড়বড়িয়া শিব মন্দির। শ্রাবণ মাস, চৈত্র সংক্রান্তি এবং শিব রাত্রিতে এখানে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয় এবং মেলা ও বসে । দক্ষিণ দিনাজপুর বংশীহারি, নড়বরিয়া, এবং কুশমুন্ডী-মহিপাল রোড তিনটে বড় সেতু আছে টাঙ্গন নদীর ওপরে।
|
Tangan Bridge Tangan River, Thakurgaon / collected picture |
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন