নীল সরস্বতী মন্দির। মহাকবি কালিদাস যেখানে মা সরস্বতীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলেন।

 ভ্রমণ পিপাসু :- মহাকবি কালিদাস যে মন্দিরে বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর সাধনা করেছিলেন এবং বাগদেবীর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন, আজ বসন্ত পশ্চমীর দিন সেই প্রাচীন সরস্বতী মন্দির নিয়েই আলোচনা করবো, যার উল্লেখ কালিদাস উপাখ্যানে পাওয়া যায়। উত্তর দিনাজপুরের সদর শহর রায়গঞ্জ থেকে 22 কি.মি দূরে এবং মালদা জেলার চাঁচল থেকে 24 কি.মি দূরে বাংলা বিহার সীমান্তে অবস্থিত বেলুয়া( Belwa) গ্রামে স্থিত। যা বিহারের কাটিহারের বারসই ব্লকে অবস্থিত।

নীল সরস্বতী মন্দির। 
        স্থানীয় মানুষের কাছে এই মন্দিরের ওপর অসীম আস্থা আছে, সেই জন্য সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এখানে বিরাট মেলা বসে যে মেলা বহু প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে । ভোর থেকেই পূজো দেওয়ায় জন্য এখানে লাইন পরে যায় যা সারাদিন ধরেই চলে, কূপন কেটে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়ায় নিয়ম এখানে চালু। যদিও এ বছর Covid এর কারনে মেলা বন্ধ থাকছে, কিন্তু পুজো আগের মতই হচ্ছে। মন্দিরটি বিহারে অবস্থিত হলেও পশ্চিমবঙ্গের থেকে শ্রদ্ধালু কোনো অংশে কম আসে না, যেহেতু মন্দির টি একদম 2 রাজ্যের সীমানায় অবস্থিত, আর 2 কি.মি গেলেই মালদার চাঁচল মহকুমা, সেইজন্য বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড থেকেও প্রচুর মানুষ এবং দর্শনার্থী এই বিশেষ দিনে এখানে এসে জড়ো হয়। এর সাথে সাথে এই মন্দির এবং এই অঞ্চলের পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ব ও অপরিসীম। কয়েকবছর আগেই এখানে কিছু পুরোনো মূর্তি উদ্ধার হয়েছিলো যা পাটনার বিহার মিউজিয়ামে সংরক্ষন করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
মা সরস্বতী। 

            এখানে মা সরস্বতী মন্দির ছাড়াও আরও মন্দির বিদ্যমান। যেমন বজরংবলী, মা কালীর মন্দির এখানে দেখতে পাবেন। 1983 সালে এই মন্দিরে একটি চুরির ঘটনা ঘটে যার ফলে খুব দামী প্রাচীন তিনটি বিগ্রহ এই মন্দির থেকে চুরি যায়, তার পরেই মন্দির পরিচালন সমিতি থেকে নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠাপনের  ব্যবস্থা করা হয়, মন্দিরে মূল প্রাচীন বিগ্রহটি চুরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এই মন্দিরকে নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কোনো অংশে কমেনি, কথাটি বলেন মন্দিরের বর্তমান পূজারি রাজীব চক্রবর্তী। মন্দিরটি বর্তমানে ISKCON এর হাতে থাকায় তারই এখন গোটা মন্দির পরিসরটি দেখাশোনা করে, এখানে তাদের একটি অফিস আছে। 



ISKCON এর বোর্ড

পথনির্দেশ:-
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, মালদার চাঁচল, হরিশচন্দ্রপুর, বা কাটিহারের বারসই এই তিন জায়গা থেকেই এখানে আসা যায়, এবং বেশী দূর ও না। রায়গঞ্জ থেকে 22 কি.মি বেলুয়ার এই নীল সরস্বতী মন্দির। রায়গঞ্জ থেকে শ্যামপুর মোড় হয়ে গোরাহার ঘাট পার হয়ে কুশিদা রোড হয়ে গেলে খুব সহজেই এখানে পৌঁছে যেতে পারেন সময় লাগবে 45 মিনিট, রাস্তাও খুব ভালো। মালদার চাঁচল বা হরিশচন্দ্রপুর পুর থেকে ও এখানে আসা যায়। তুলসিহাটা হয়ে কুশিদা হাট হয়েও এখানে চলে আসতে পারেন, দূরত্ব প্রায় ওইরকমই, 24,25 কি.মি। আর বারসই হয়ে যারা আসবেন তাদের আসা আরো সহজ, বারসই-কুশিদা রোডেই এই মন্দির পড়বে। সরস্বতী পূজার দিন খুব বিরাট আকারের মেলা বসে এখানে, তাই একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন সাথে পুজোও এই ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন এই মন্দির থেকে, এ বছর যদি ও মেলা হচ্ছে না কিন্তু পরের বছর সব ঠিকঠাক থাকলে মেলা নিশ্চয়ই হবে।
মেলার ছবি। picture credit-Youtube. 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন