ঘুরে আসুন উত্তর দিনাজপুর জেলার তিন হেরিটেজ মন্দির, রায়গঞ্জের খুব কাছেই...

 ভ্রমণ পিপাসু:- জানেন কি উত্তর দিনাজপুর জেলার তিন তিনটি হেরিটেজ মন্দির বিদ্যমান প্রতিটি মন্দিরই খুব প্রাচীন ও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম এবং তা রায়গঞ্জের খুব কাছাকাছিই অবস্থিত।

তিন হেরিটেজ মন্দির ।

১. ইটাহারের মারনাই এর প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির:- রায়গঞ্জ শহর 35 কি.মি এবং ইটাহার থেকে 17 কি.মি দূরে অবস্থিত সুই নদীর তীরে মারনাই খুব প্রাচীন এবং বর্ধিষ্ণু এলাকা। এই মারনাই অঞ্চলের জমিদারি ছিল পাল চৌধুরী বংশের হাতে। এই জমিদার বংশের শশীভূষন পাল চৌধুরী 1919 সালে দক্ষিণবঙ্গ থেকে কারিগর এনে দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের আদলে এই মন্দিরটি তৈরী করেন, প্রায় 80 হাজার টাকা ব্যয় করে।


          জমিদারি চলে যাওয়ার পর সেভাবে এই মন্দির সংস্কার না হওয়ায় মন্দিরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় চলে যায়। এই অবস্থায় 2 বার হেরিটেজ কমিশন কাছে আবেদন করা হয় এই প্রাচীন মন্দির টি সংস্কার করার জন্য। শেষপর্যন্ত 2010 সালে আবেদন মঞ্জুর হয় এবং কমিশন থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, 2020 সালে 80 লক্ষ টাকা খরচা করে নবরূপে সংস্কার হওয়া এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়।


কেমন করে পৌঁছোবেন এখানে:- ইটাহার NH ধরে গেলে 11,12 কি.মি এগিয়ে মারনাই মোড় পড়বে, সেখান থেকে ডানদিকে 5 থেকে 6 কি.মি গেলেই মারনাই। রায়গঞ্জ পাবলিক বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বাস ও চলে।

মারনাই এর প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির 

২.হেমতাবাদের বামোরের তারাসুন্দরী মন্দির :- হেমতাবাদের বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বামোর গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন তারাসুন্দরী মন্দির যা বর্তমানে হেরিটেজ মন্দির। 

    

                     মুঘল যুগের সময়কার এই মন্দিরের অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও প্রচারে অভাবে তা অনেকের কাছেই অজানা। মন্দিরের আরেক নাম রানী ভবানীর মন্দির এবং কাশি ঠাকুরের মন্দির ও বলা হয়। প্রতিবছর দীপ্নানিতা অমাবস্যায় কালি মূর্তি গড়ে এখানে কালী পূজার আয়োজন করা হয়।

কেমন করে পৌঁছোবেন এখানে:- হেমতাবাদ থেকে 17 কি.মি দূরে এই মন্দির । হেমতাবাদের বিষ্ণুপুর হাটের খুব কাছেই এই মন্দির ওখানে গিয়ে যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে। আবার কেউ কেউ চাইলে সমাসপুর হয়েও যেতে পারেন একটু দূর বেশি হবে কিন্তু রাস্তা খুব ভালো পাবেন। আবার কেউ কেউ চাইলে বিন্দোল হয়েও যেতে পারেন, বিন্দোলের ভৈরবী মন্দির দেখে এটাও সাথে দেখে নিতে পারেন।

বামোরের তারাসুন্দরী মন্দির ।

৩.বিন্দোলের ভৈরবী মন্দির:- রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় 20-21 কি.মি দূরে 4নং বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অধুনা কাঞ্চন নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সময়কাল সঠিকভাবে জানা যায়না। তবে বর্তমান যেই মন্দিরটি আমরা দেখতে পায় তার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দিনাজপুরের জমিদার প্রাননাথ রায় ।

প্রাচীন কালে কাঞ্চন নদীর তীরে বড় জনপদ ছিলো এই বিন্দোল। কাঞ্চন নদী থেকে তুলে এই ভৈরবী মুর্তিটিকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভালভাবে কেউ যদি লক্ষ্য করে তাহলে বুঝতে পারবে এটা কোনো ভৈরবী বা কোনো নারী মূর্তি নয়, আসলে এটা দেব মূর্তি বা ভৈরব এর মূর্তি। তারাসুন্দরী মন্দিরের মতোই এই মন্দিরটি কেও হেরিটেজ কমিশন থেকে সংস্কার করা হয়েছে।

কেমন করে পৌঁছোবেন এখানে:- তিনটে মন্দিরের মধ্যে এই মন্দিরে পৌঁছনো সবচেয়ে সোজা। রায়গঞ্জ পাবলিক, স্টেট 2 টি বাস স্ট্যান্ড থেকেই গাড়ি পেয়ে যাবেন এখানে আসার। কেউ কেউ চাইলে এই ভৈরবী মন্দির দেখার সাথে সাথে বামোরের তারাসুন্দরী মন্দির টি ও একদিনে দেখে আসতে পারেন।

বিন্দোলের ভৈরবী মন্দির 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন