ভ্রমণ পিপাসু :- জানেন কি উত্তর দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে পুরোনো স্কুল কোনটি, না তার অবস্থান, রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইসলামপুরের মত বড় কোনো শহরে নয়, স্কুলটি অবস্থিত মফস্বল শহর ইটাহার ব্লকের অন্তর্গত কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মহানন্দা নদী তীরবর্তী চূড়ামনে।চূড়ামন প্রহ্লাদ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়। এ বছর 157 তম বর্ষে পদার্পণ করলো ব্রিটিশ আমলের এই স্কুল যার সাথে চূড়ামণ জমিদারবাড়ীর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে।
চূড়ামনের প্রহ্লাদ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় । |
চূড়ামনের জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র রায়চৌধুরী একটু অন্য ধরনের মানুষ ছিলেন, তিনি সবসময় চেয়েছিলেন তার এলাকার মানুষের মধ্যে যেনো শিক্ষার প্রসার ঘটে, সেই উদ্দেশ্যেই 1864 খ্রিস্টাব্দে চূড়ামনে তিনি একটি মিডল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন । তখন এখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো। স্কুলের নাম রাখা হয়েছিলো কে সি ইন্সটিটিউট, জমিদার কৃষ্ণচন্দ্রের নামে।তখন ওই গোটা এলাকায় এবং আশেপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় সুদূর চাঁচল মহকুমা, ইটাহার, গুলন্দর, মারনাই থেকেও ছাত্র ছাত্রীরা এখানে পড়াশুনার জন্য আসতো।
স্কুল মঞ্চ। প্রহ্লাদ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় । |
ভ্রমণ পিপাসু টিম |
1953 সালে স্কুলটি জুনিয়র হাই স্কুলে উত্তীর্ণ হয় এবং 1964 সালে হাই স্কুলে। স্কুল প্রাঙ্গণে অবস্থিত স্কুলের খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর গুলি একবার আগুন লেগে পুড়ে যায়, তাতে স্কুলের বহু সম্পত্তি, এবং মূল্যবান কাগজপত্রও পুড়ে গিয়ে নষ্ট হয়।
এরপর রামজীবন সরকার নামে স্থানীয় একজন স্কুলের জন্য 10 হাজার টাকা দান করেন, এবং উনাকে এই জন্য স্কুলের আজীবন সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়। তাঁর বাবা প্রহ্লাদ চন্দ্রের নামে স্কুলের নামকরণ করা হয় প্রহ্লাদ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় বা চূড়ামন পি সি হাইস্কুল। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা এবং সরকারের আর্থিক অনুদানে কয়েক একর জায়গায় বিদ্যালয়ের দ্বিতল বাড়ীঘর , সাংস্কৃতিক মঞ্চ যার নাম রবীন্দ্র নজরুল মঞ্চ এবং মূল প্রবেশপথ গড়ে ওঠে। স্কুলের খুব কাছেই চূড়ামন জমিদারবাড়ি পাশেই রয়েছে স্কুলের নিজস্ব খেলার মাঠ, সেই মাঠে জমিদারি আমল থেকেই প্রতি বছর ফুটবল খেলার আয়োজন হয়ে আসছে, যা এখনো চলে আসছে।
2015 সালে এই স্কুলটি তাদের সার্ধশতবর্ষ পার করেছে, সেই উপলক্ষে 2015 ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ আমলের এই স্কুলে সার্ধশতবর্ষ খুব স্বাড়ম্বরে পালিত হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে, বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল এই উপলক্ষে। এই বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম, স্থানীয় অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে এই বিদ্যালয়ের নাম, এই সমস্ত কিছুরই রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী। এই বিদ্যালয়ের সাথে ওতপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে চূড়ামন জমিদারবাড়ির নাম, সেই জমিদারবাড়ি নিয়ে পরবর্তীতে এক পোস্টে বিস্তারিতভাবে লেখা বের হবে আমাদের এই ভ্রমণ পিপাসু ব্লগিং সাইটে, অবশ্যই নজর রাখবেন আমাদের এই সাইটে, কারণ এই চূড়ামন জমিদারবাড়ি ছিলো উত্তর দিনাজপুর জেলার আয়তনে সবচেয়ে বড় জমিদারবাড়ি।
সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের ছবি |
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন